তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-০৬

0
2017

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-৬??
.
?
.
.
তিথীর এমন চিৎকার শুনে নিলয় খুব জোরে গাড়ির ব্রেক মারলো,,,তারপর তিথীর দিকে তাকাতেই তিথী খুশিতে গদগদ হয়ে বলল-;

-:ওই দেখুন…..ওই দেখুন হাওয়াই মিঠাই,,,,???একটা দিন না কিনে প্লিজজজজ।।আমার না হাওয়াই মিঠাই খেতে খুব ভালো লাগে।।

এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলার পর নিলয়ের দিকে তাকিয়েই তিথি কেঁপে উঠলো,,নিলয় দাঁতে দাঁত চেপে গাড়ির স্টিয়ারিং টাকে শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে,,,নিজেকে কন্ট্রোল করার জন্য।।। নিলয়ের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে তিথিকে গুনে গুনে দশ বারোটা চড় দিতে।। একেই রেস্টুরেন্টের ঘটনার জন্য নিলয় প্রচন্ড রেগে আছে তিথির উপর তার উপর আবার এই ফালতু বায়না।। নিলয় দাঁতে দাঁত চেপে তিথি কে বলল-;

-: হোয়াট ইজ হাওয়াই মিঠাই??

-: আরে হাওয়াই মিঠাই মানে জানেন না।। হাওয়াই মিঠাই,,,??? হুম হাওয়াই মিঠাই ইজ ওয়ান কাইন্ড অফ বুড়ির চুল।।???

-:তিথী….. প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে উঠলো নিলয়।।

-: আপনি ইংরেজিতে কটন ক্যান্ডি ও বলতে পারেন,, কেন আপনি কোনদিন খাননি।(ভয়ে কেঁপে কেঁপে বলল তিথি)

-:Shhhhhhut upppppp!!!!!! I say just shut up???????? অনেক বেশি বলে ফেলেছো তুমি সো now keep shut your mouth….

-: একটা দিন না কিনে,,,প্লিজজজজজ???

-:?????

-:???কিপটুস একটা।

-:কী বললা তুমি।।(চিৎকার করে)

নিলয়ের অমন চিৎকারে তিথি গাড়ির দরজার পাশে গা ঘেঁষে বসল,,আর দু তিনটে শুকনো ঢোক গিলে,,বলল-:

-:কিছু না,,সত্যি???

তারপর নিলয় আর কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।।

.
?
.
.
রাত নটা,,,তিথি ভাবছে কি করে নিলয় কে জব্দ করা যায়।।তিথি মনে মনে ভাবছে-;

-:শালা উগণ্ডা কে টাকার মাধ্যমে কোনোভাবেই জব্দ করা যাবে না।।কারণ একে ফকির বানাতে গিয়ে আমি নিজেই ফকির হয়ে যাব,,কারন এর বিশাল টাকা আছে।।।আর হবেনাই বা কেন কিডনাপিং করে করে এত বড়লোক হয়েছে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চাটা।।তাও যদি জানতাম যে কিডন্যাপিং টা অন্তত ভালো কোরে করে,,সেটাও তো পারে না ঠিক করে ইবলিশটা ,,,ভুলভাল মানুষকে তুলে আনে।।কে যে এনাকে অর্ডার দেয় কিডন্যাপিং করতে,,,বুঝে পায়না বাপু। ভাব তিথী ভাব,,, আরে উনি আজকে ফোনে বলছিলেন না কাকে,,, যে কালকে ওনার একটি ইম্পর্টেন্ট মিটিং আছে।।।ব্যাস পেয়ে গেছি আইডিয়া।।হুম এবার বুঝবে হারে হারে তিথী কি চিস,,,,আমাকে হাওয়াই মিঠাই না দেবার শাস্তি এবার আমি আপনাকে দেব।।?????
.
.
?
.
.
পরের দিন সকালবেলা তিথী উঠে রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো সার্ভেন্টসরা ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে।।এই বাড়িতে তিথী আসার পর থেকে দুইভাবে ব্রেকফাস্ট বানানো হয়।।একটা তিথীর জন্য পরোটা,,তরকারি,,,ভাজাভুজি আর একটা নিলয় এর জন্য,,,নর্মাল ব্রেকফাস্ট জুস,,স্যান্ডউইচ বাটার টোস্ট,,ফ্রুটস।।।রান্নাঘরে ঢুকে তিথী দেখলো সবাই যে যার মত কাজ করছে।।তিথি শেফালী কে ইশারায় তার কাছে আসতে বলল।। তারপর শেফালী তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই,,তিথি তাকে জিজ্ঞেস করল-;

-: এনেছ,,তোমাকে যা আনতে বলেছিলাম।। (ফিসফিসিয়ে তিথি বলল)

-:হ্যাঁ ম্যাম,,,আমি নিয়ে এসেছি কিন্তু আমার না খুব ভয় করতাছে। এগুলো করা কি ঠিক হচ্ছে ম্যাম।যদি স্যার জানতে পারে আমার চাকরিখানা আর থাকবে না।।

-:আরে তুমি বেশি কথা বল না তো।। তুমি চুপ করে থাকবে যা করার আমি করবো।।তুমি বেশি কথা বলবে না তাহলে তোমার চাকরি ও ঠিক থাকবে,,,আর তুমিও।।

-:ঠিক আছে ম্যাম এই নিন ধরেন।।(বলে তিথির হাতে কাগজে মোড়া একটা জিনিস দিল)

-:ওকে তুমি এবার যাও।

তারপর শেফালী চলে যাবার পর,,,তিথি জিনিসটাকে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করলো আর মুচকি মুচকি হেসে,,,মনে মনে বলল এবার আপনি কোথায় যাবেন।।

কিছুক্ষণ পর খাবারগুলো টেবিলের উপর সাজিয়ে দিয়ে,,,সবাই যে যার কাজে চলে গেল।। তিথি লুকিয়ে লুকিয়ে নিলয়ের খাবার যেখানে আছে সে গিয়ে খাবারের প্লেটটা তুলে,, খাবার গুলোতে পাউডাররের মতো কী যেন দিয়ে,,আবার প্লেটটা জায়গা মতো রেখে দিল।। তারপর নিজের ঘরে চলে গেল।।কিছুক্ষণ পর নিলয় অফিস ড্রেস পড়ে,,, ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে তিথিকে ডাক দিল,,তিথী ও চুপচাপ নিচে নেমে নিলয়ের পাশের টেবিলে বসে পড়ল এবং এমন ভাঙ করলো যেন কিছুই হয়নি।।ব্রেকফাস্ট করার মাঝখানে নিলয়ের ফোনে ফোন এলো,, নিলয় ফোনটা রিসিভ করে বলল-;

-:২০ মিনিটের মধ্যে আমি পৌঁছাচ্ছি।।বলে ফোনটা রেখে দিল।।

৫ মিনিট পর নিলয় খাওয়া বন্ধ করে,, নিজের পেটে হাত বুলাচ্ছে তারপর হঠাৎ ব্রেকফাস্ট ফেলে দৌড়ে উপরে উঠে গেল।। তিথি বুঝতে পারল যে সে সাকসেসফুল হয়েছে তাই সে মুচকি মুচকি হেসে খাওয়া কমপ্লিট করে উপরে চলে গেল।। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে নিলয় বাথরুমে বসে আছে যখনই উঠতে চাইছে তখনই পেটের ভিতর মচর দিয়ে উঠছে আর আবার বসে পড়ছে।।অনেক কষ্ট করে ঘর থেকে ফোনটা নিয়ে ম্যানেজারকে কল করে মিটিংটি ক্যানসেল করে দিল। তারপর ফ্যামিলি ডক্টর কে কল করল। কিছুক্ষণের মধ্যে ডক্টর চলে আসার পর,, নিলয় কি চেকআপ করে বলল-;

-: তুমি কি কোন উল্টোপাল্টা জিনিস খেয়েছো।।

-: না তো ডক্টর আঙ্কেল,,,সকালবেলা এমনি নরমাল ব্রেকফাস্ট করেছি।

-:হুম, তাহলে খাবারের মাধ্যমে হয়তো ভুলবশত কোন অপদ্রব্য জিনিস পেটের ভিতরে চলে গিয়েছে।। তাই এমন প্রবলেম হচ্ছে। ওকে চিন্তা করো না আমি মেডিসিন দিয়ে যাচ্ছি তুমি সময় মত খেয়ে নেবে,,, আর আজকের দিনটা একটু রেস্ট নাও।দেখবে কালকের মধ্যেই তুমি একদম ঠিক হয়ে গেছ।। আর আপাতত এই মেডিসিন টা খেয়ে নাও তাহলে তোমাকে আর ঘনঘন বাথরুমে যেতে হবে না।হা হা হা হা

-: ওকে আঙ্কেল।?????

আর এই দিকে তিথি তো ঘরের মধ্যে জোরে জোরে গান চালিয়ে,,,লুঙ্গি ড্যান্স দিচ্ছে;; ??????

-:ইয়ে জিঙ্গালালা হু হু,,জিঙ্গালালা হু হু??????

ঠিক তখনই শেফালী এসে দরজায় নক করল তিথি শেফালিকে এই সময় তার রুমে দেখে,,, কিছুটা কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।তারপর নিজেকে সামলিয়ে শেফালীকে ঘরে আসতে বলল।। শেফালী ঘরে ঢুকে,,,তিথী দুটো হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলল;

-:ওও….আপা মনি… আপা মনি গো ওওওও।।।?????

-:এই…এই শেফালী তুমি ওমন মরা কান্না কাঁদছো করছো কেন,,,কী হয়েছে তোমার।।????

-:আমাকে ক্ষমা করে দিন আপামনি,,,স্যার আমারে চাকরি ছাঁটাই দেওয়ার ভয় দেখিয়ে,, আমার পেট থেকে সব সত্যি কথা জেনে নিয়েছে।।???

-:এ্যা আর তুমি সব বলে দিলে।।????এই তোমার স্যার তোমাকে চাকরি কাঁটার ভয় দেখালো,,, আর তুমি ফুরুত করে আমার কথা সব বলে দিলে।।।এই তোমার পেট এতো পাতলা কেন গো।। হাই,,হাই এবার আমার কি হবে।।রাক্ষস টাতো এবার আমায় শুলে চড়াবে। ভাব তিথী কিছু একটা ভাব,,, কচুপোড়া বিপদের সময় সব বুদ্ধি কি লুঙ্গি গুটিয়ে শ্বশুরবাড়ি পালাই,,উফফফফ(দাঁতে নখ কাটতে কাটতে,,, বিড়বিড় করে বলছে তিথি)

-:আপা মনি….আপা মনি।।

-: আবার কি হলো।??? যা করার তা তো করেই দিয়েছে,,,এবার আমাকে কিছু ভাবতে সময় দাও।।

-:আপনারে স্যার ডাকতাছে,,আর এক্ষুনি স্যার তার রুমে যেতে কইল।।আর স্যার এও কইল যে স্যারের যদি উঠে আসতে হয়েছে তাহলে আপনার লগে খবর আছে।।

-:?????এক্ষুনি।।।

-:হুম,, তাহলে আমি যাই।।

-:এই তুমি যাও তো যাও,,,আমার চোখের সামনে থেকে এক্ষুনি যাও।।না হলে আমি নিজেই তোমার খবর করে ছেড়ে দেবো যত্তসব ঘুগনিব্যাপারি কোথাকার,,,???

-:?????

শেফালী আর কিছু না বলে চলে গেল। আসলে নিলয় সকল বেলা ফোনে কথা বলতে বলতে উপরে সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল,,,আর তখনই দেখতে পেয়েছিল যে শেফালী তিথির হাতে কি যেন একটা কাগজে মোড়া জিনিস দিচ্ছে।। নিলয় ভেবেছিল তিথির হয়তো কোন প্রয়োজনীয় জিনিস,,,তাই সে ওতটাও মাথা ঘামায় নি।।কিন্তু তার এই রকম অবস্থা হওয়ার পর তার একটু সন্দেহ হল,,, তাই সে শেফালীকে একটু ভয় দেখাতেই,,,শেফালী সব উগরে ফেলল ঝর ঝর করে।। যাই হোক তিথি এবার মনে মনে দোয়া পড়ে নিলয় রুমের দিকে যেতে লাগলো।।
.
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে