তোমাকেই_ভালোবাসি পর্বঃ_০২

0
2405

#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০২❤
#Writer_Safan_Aara❤

-“কার কথা বলছিস অদিতি?”

অদিতির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারলো মনিকা। উত্তরে ঠোট বাকালো অদিতি।

-“একটা ছেলে বুঝছিস! অভদ্র, অসভ্য ছেলে।খুব ভালোভাবে বলেছিলাম রাস্তাটা দেখিয়ে দিতে। আমায় ভুল রাস্তা দেখালো সে। এই রোদে হাটতে হাটতে মাথাটা আগুন হয়ে গেছে আমার।”

অদিতির মাথায় হাত রাখলো মনিকা।

-“তাই তো। সত্যি তো! গরম হয়েছে অনেক।গলাও শুকিয়েছে নিশ্চই। নে পানি খা।”

ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বললো সে। অদিতি বোতলে নিয়ে পানি খেয়ে আবার ফিরিয়ে দিলো ওকে।

.
.

ভার্সিটিতে ঢুকেই সে দেখা পেলো তার আরেকটা বেস্টি পুষ্পিতার। তিনজনে একসাথেই এডমিশন নিয়েছে এখানে। তারা প্রথমেই প্রিন্সিপালের কাছে গেলো। প্রয়োজনীয় সব ফর্মালিটিজ ফিল আপ করে বেড়িয়ে এলো। উদ্দেশ্য ক্লাসে গিয়ে ফ্যানের নিচে বসে আগে মাথা ঠান্ডা করবে।

হাটতে হাটতে তারা ক্লাসের দিকেই যাচ্ছিলো। বাট হঠাৎ চোখ পড়লো ক্যাম্পাসের মাঠে। কয়েকটা ছেলে কান ধরে উঠবোস করছে।সেদিকে চোখ যেতেই ফিক করে হেসে দিলো মনিকা আর পুষ্পিতা,অদিতির মটু-পাতলু ঝুটি। তবে সেদিকে খেয়াল নেই অদিতির।অদিতি খেয়াল করলো তাদের আড়ালে কাউকে দেখা যাচ্ছে যে উল্টোদিকে ঘুরে বসে আঙুল দিয়ে ইশারা করছে তাদের উঠতে বসতে। হাসি থামিয়ে পুষ্পিতা বলে উঠলো-

-“কিরে অদি!এভাবে কি দেখছিস ওদিকে?”

পুষ্পিতার প্রশ্নে হাতের আঙুলের ইশারায় তাকে দেখিয়ে বললো-

-“দেখ ওখানে কাওকে দেখা যাচ্ছে।”

-“হুম। দেখা তো যাচ্ছে।কে সে?”

-“জানি না তো। হবে কোনো গুন্ডা-মাওয়ালি। ছেলেগুলো মতো নে হয় নতুন এসছে।এসেই মনে হয় র‍্যাগিং এর শিকার হয়েছে। দাড়া দেখে আসি।”

-“আরে আরে। কই যাচ্ছিস তুই।অদিতি…..! যাস নে!”

কিন্তু কে শোনে কার কথা! অদিতি চলে গেলো ওখানে। যে ছেলেরা কান ধরে উঠবোস করছিলো তাদের ওঠানামা শেষ ততক্ষণে। তারা চলে গেলো যখন তখনই অদিতি সেখানে গেলো। সে দেখলো উল্টো দিকে ঘুরে থাকা লোকটা ওদের চলে যেতে ইশারা করলো আর এখনো ওভাবেই বসে আছে।

-“এক্সকিউজ মি!”

একটা মেয়েলি কন্ঠ শুনে অবাক হলো অনন।তবে কে ডেকেছে তাকে তা না দেখে উল্টো দিকে ঘুরেই উত্তর দিলো সে।

-“ইয়েস!”

তার এমন কাজে আরও রেগে গেলো
অদিতি।

-“আপনি আগে এদিকে ঘুরুন। কোনো ম্যানার শিখেননি আপনি? কেউ ডাকলে তার দিকে ঘুরে কথা বলতে হয় জানেন না আপনি?”

অদিতির এমন কথায় অবাক হলো অনন। ওর সাথে এই ভার্সিটির কেউ এভাবে রুডলি কথা বলার সাহস পায় নি কখনো।তাই এমন দুঃসাহসের অধিকারিণীকে দেখার জন্য অবাক চোখে ঘুরে দাড়ালো সে। কিন্তু অদিতিকে দেখে তার এই অবাক রাগে পরিনত হলো। আর অনন কে দেখে অদিতির রাগ এবার সপ্তম আকাশে উঠে গেলো। “আপনি…..!” বলে সজোরে চিৎকার করে উঠলো দুজনেই একসাথে।

-“আপনি এখানে কি করছেন? যাই করেন আমার কি তাতে! আগে বলেন ওই ছেলেগুলোকে এভাবে লজ্জা দিলেন কেন সবার সামনে? ওহ! বুঝেছি। র‍্যাগিং করছিলেন এতোক্ষণ। নতুন এসেছে বলে নরম পেয়ে গরম দেখাচ্ছেন! ওয়েট ওয়েট! তার আগে বলেন আমাকে মিথ্যা বলেছিলেন কেন? উল্টো রাস্তায় হাটালেন কেন আমায়? আপনাকে দেখেই আমার বোঝা উচিৎ ছিলো যে আপনি গুন্ডা টাইপ অসভ্যই হবেন।”

এতক্ষণ অদিতির কথা চুপচাপ শুনলেও ওর মুখে “গুন্ডা টাইপ অসভ্য” কথাটা শুনতেই এবার তারও রাগ পৌছে গেলো সপ্তম আকাশে। ভ্রু জোরা কুচকে দাতে দাত চেপে বলল –

-“কি বললেন আপনি! আমি গুন্ডা টাইপ অসভ্য ছেলে! ভালো বলেছেন। আমি গুন্ডাই ভালো। আপনার কি? কি করবেন আপনি? অন্যান্য ফিল্ম অর গল্পের নাইকাদের মতো থাপ্পর মারবেন আমায়?”

-“না আমি কোনো ফিল্মের নাইকা আর না গল্পের। সো আপনাকে থাপ্পর মারবো না দেখুন কি করি।”

বলেই ব্যাগের সাইড পকেট থেকে পানির ফ্লাস্কটা বের করে পুরো এক ফ্লাস্ক পানি ঢেলে দিলো অননের গায়ে। কাক ভেজা হয়ে অনন এখন অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।কিন্তু তার এ রাগি লুকের কোনো পরোয়া করলো না অদিতি। ফ্লাস্কটা ব্যাগে ঢুকিয়ে চলে যাচ্ছিলো অদিতি। আবার পেছনে ঘুরে বললো-

-“আজ সকালে এক মগ পানি আমার হাত থেকে বেলকনি দিয়ে পড়ে গিয়েছিলো। পানিগুলো আপনার মাথায় পড়লে বেশি খুশি হতাম আমি।”

বলে চলে গেলো অদিতি। গিয়ে মনিকা আর পুষ্পিতার সাথে বসলো সে।

আর ওদিকে অননের বেস্ট ফ্রেন্ড আকাশ আর আশিক দৌড়ে এলো অননের কাছে।

-“কিরে! মেয়েটা কে? তুই চিনিস?”

হকচকিয়ে বললো আকাশ।আকাশের সাথে তালে তাল মিলিয়ে আশিক বললো-

-“কিরে। কথা বলছিস না কেন? পুরো ভার্সিটির সামনে তোকে এভাবে অপমান করে চলে গেলো মেয়েটা৷ আর তুই এভাবে চুপ করে চেয়ে রইলি! এতো বড় সাহস হলো কি করে মেয়েটার।”

-“তুই শুধু একবার বল ওকে টাইট দিয়ে দিবো।”

অননের কাধে হাত রেখে বললো আকাশ।

-“না। তোদের কিছু করতে হবে না। মেয়েটা আজ আমায় দুবার ভিজিয়েছে। ওকে কিভাবে টাইট দিতে হবে তা আমি ভালো করেই জানি। আমি বাড়ি যাচ্ছি। আজ আর ক্লাস করবো না। বাই”

বলে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো অনন।

আকাশ আর আশিক ওর চলে যাওয়া দেখছে অবাক হয়ে। অননের অস্তিত্ব আর খুঁজে না পেয়ে আশিক বললো-

-“ছেলেটার কি হলো বলতো! মেয়েটা এতো অপমান করার পরও চুপ রইলো। আমরা বা অন্য কেউ হলে তো এতোক্ষণে হাত-পা কিছুই বাকি থাকতো না।”

-“হয়তো সঠিক সময় আর সুযোগের অপেক্ষায়!”

-“হয়তো!”

-“কিরে অদি! তুই চিনিস উনাকে? এমন করলি কেন উনার সাথে? দেখ ক্লাসের সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে তোর দিকে। যেন ভুত দেখছে সবাই।”

অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো মনিকা।

-“রিকশায় যার কথা বলেছিলাম না তোকে? এই সেই লোকটা। ইচ্ছেতো হচ্ছিলো ওকে ওখানেই পুতে ফেলি।কিন্তু ক্ষমতা নেই বলে পারলাম না।”

অবাক চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুষ্পিতা। ওরা কি নিয়ে কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর এমন চাহনি দেখে অদিতি ওদের দুজনকে সকাল থেকে যা যা হয়েছে সব বললো।

.
.

ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর তারা তিনজনই বাড়িতে ফিরে গেলো।

বিকেলে অদিতি মায়ের কাছে বলে তাদের ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে পড়লো ছাদে যাওয়ার জন্য। তাদের বিল্ডিংটা ১০ তলা। ৭ম তলা থেকে ছাদে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না তার। তাই লিফট রেখে সে সিড়িকেই বেছে নিলো। একধাপ দুধাপ পেরোতে পেরোতে পৌছে গেলো ছাদে।

ছাদের একদম শেষপ্রান্তে কারো উপস্থিতি টের পেলো অদিতি। এগিয়ে গেলো সেদিকে। একি! এতো ছোট্ট একটা মেয়ে। কি করছে ওখানে। কিছু নেয়ার চেষ্টা করছে বোধহয়। অদিতি সেখানে পৌছানোর একদমই আগমুহূর্তে ছাদ থেকে পড়ে যেতে লাগলো মেয়েটি। কিন্তু অদিতি থাকতে তা কি আর হয়!

-“আরে আরে! করছো কি তুমি?”

অস্ফুটস্বরে বললো অদিতি। নিচের দিকে হাতের ছোট্ট আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো-

-“দেখো না আপু। একটা টমি।”

বলেই কেঁদে দিলো সে।অদিতি দেখলো একটা ছোট্ট কুকুরছানা। অদিতি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো-

-“কেঁদো না বাবু। আমি এনে দিচ্ছি তো।”

বলে ছাদের দেয়ালের ওপার থেকে সেই কুকুরছানাটিকে তুলে আনার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু দেয়ালটা অনেক উচু। তাই হাজার চেষ্টা করেও সে ব্যার্থ প্রায়। সোজা হয়ে দাড়িয়ে আবার সে তাকালো মেয়েটির দিকে। মেয়েটির কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে এক আলাদা মায়া কাজ করলো। তাই ‘শেষ চেষ্টা’ ভেবে সে আবার হাত বাড়ালো কুকুরছানাটির দিকে। এবার হাতের নাগাল পাওয়া গেলো তাকে।অদিতি তুলে আনলো তাকে। টমিকে কোলে নিয়ে মেয়েটির দিকে ঘুরতেই মেয়েটির মুখ হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠলো। দৌড়ে এসে টমি কে অদিতির হাত থেকে নিয়ে নিলো সে।

-“থ্যাংক ইউ আপু।”

-“ওয়েলকাম। নাম কি তোমার?”

-“নীড়! তোমার নাম কি?”

-“অদিতি!”

নামটা শুনতেই চমকে উঠলো নীড়। গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো নামটা কোথায় যেনো শুনেছে সে।

-“অদিতি!নামটা কোথায় যেন শুনলাম! কোথায়! ও হ্যা! মনে পড়েছে। আজইতো খাবার টেবিলে মাম্মাম বললো তোমার নাম।”

-“কি বলো! তোমার মাম্মাম আমাকে চিনবে কি করে।”

-“তা তো জানি না!”

-“আচ্ছা তোমার টমি এখানো আসলো কি করে?”
-” জানি না আপু। আমি ছাদে খেলতে এসেছিলাম। এসে দেখি এটা ওখানে বসে আছে। মনে হচ্ছিলো কান্না করছিলো। খুব মায়া লাগছিলো জানো!”

এইটুকুনি মেয়ের মুখে এমন বড়দের মতো কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না অদিতি।

চলবে………..❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে