তোমাকেই ভালোবাসি সূচনা পর্ব

0
3803

#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#সূচনা_পর্ব❤
#Writer_Safan_Aara❤

-“অদিতি! এই অদিতি!”

-“হ্যা, মা। বলো।”

-“এদিকে আয় তো মা।”

নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এলো অদিতি।

-“কি মা?”

-“নে! এগুলো তোর। নিয়ে যা। গুছিয়ে ফেল।”

-“ওকে মা।”

বলে মায়ের দেয়া বক্সটা নিলো অদিতি। হেটে চললো নিজের রুমের দিকে। আজ তারা অন্য বাড়িতে সিফট হয়েছে। তাই নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে সবাই।

.
.
-“টিংটং টিংটং”

হঠাৎই বাড়ির দরজায় বেল পড়লো। অদিতি শুনতে পেয়ে হাতের নিজিস নিচে রেখে দড়জা খোলার জন্য পা বাড়াতেই মা তো দরজার কাছেই আছে ভেবে আবার নিজের কাজে মন দিলো সে। হঠাৎই মায়ের ডাক।

-“অদিতি! এদিকে আয় মা!”

-“আসছি মা।”

বলেই অদিতি মায়ের কাছে চলে গেলো। সোফার রুমে যেতেই সে দেখলো সোফায় একজন আন্টি বসে আছেন। তাকে দেখা মাত্রই অদিতি সালাম দিলো।

-“আসসালামু আলাইকুম।”

-“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো, মা?”

-“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আপনি কেমন আছেন?”

-“আলহামদুলিল্লাহ। কিরে তোর মেয়ে তো মাশাল্লাহ! সেই কবে দেখেছিলাম ওকে। ছোট্ট একটা বাবু ছিলো ও।আমাকে চিনতে পেরেছো?”

-“না আন্টি!”

মুখ গোমড়া করে বললো অদিতি। তার নেগেটিভ উত্তরের উত্তর দিলো তার মা।

-“এটা তোর সালেহা আন্টি!”

এবার তার গোমড়া মুখে হাসি ফুটে উঠলো আবার। যেনো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়া সূর্য আবারও কিরণ দিচ্ছে সবাইকে।

-“আরে! সালেহা আন্টি! তুমি! সরি, সরি! আমি তো প্রথমে চিনতেই পারি নি তোমাকে। ও এম এ! তুমি তো আমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না? মা তো তোমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছে আমাকে। তুমি ছোটবেলায় কত্তো আদর করতে আমায়। আর সেই আমিই কি না তোমাকে চিনতে ভুল করলাম।”

নিজের মাথায় নিজেই হালকা আঘাত করে বললো সে।এতোক্ষন মিসেস সালেহা বেগম অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো অদিতির দিকে। মেয়েটা এতো চটপটা! এক নিঃশ্বাসে কত কথা বলে ফেললো সে। অদিতির মা মিসেস রোকেয়া বেগমের ডাকে ঘোর কাটলো তার।

-“কিরে সালেহা! এভাবে কি দেখছিস?”

-“তোর মেয়েকে!”

-“মানে?”

-“কতো চঞ্চল হয়ে গেছে ও। আগে তো এমন ছিলো না!”

উত্তরে অদিতি বললো-

-“আরে আন্টি! তুমিও না! সময়ের সাথে সাথে মানুষও বদলে যায়। সাথে তাদের স্বভাব! আর আচার-আচরণও। আচ্ছা এগুলা বাদ দাও। বলো কি খাবে? চা না কফি?”

-“যেকোনো একটা হলেই হবে।”

-” না না। তা হবে না। তুমি বলো তুমি কোনটা খাবে।”

-“আচ্ছা চা করে নিয়ে আসো।”

-“আচ্ছা।”

বলেই দৌড় লাগালো সে রান্নাঘড়ে।

-“ভাগ্যিস সবার আগে এসে রান্নাঘরটা গুছিয়ে নিয়েছিলাম। না হলে কিভাবে আন্টিকে চা টা করে খাওয়াতাম!”

বলেই মুচকি হাসলো সে। আর চুলায় পানি বসিয়ে দিলো।

-“তোর মেয়েটা এতো চটপটা হয়ে যাবে আমি কখনও ভাবি নি রে! আচ্ছে একটা কথা বল!”

-“কি?”

-“তোদের এখানে সিফট করার কারন কি?”

-“অদিতি এবার অনার্সে। ও যে ভার্সিটিতে পড়তে চায় সেটা আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে হয়ে যায়।তাই ওর কথা ভেবে অদিতির বাবা এখানে সিফট হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”

-“ওহ! তা ভালোই হয়েছে। তোর সাথে এখন আবার আগের মতই কথা বলতে পারবো। ভালোই করেছিস এই বিল্ডিংয়ে এসে।”

-“হুম। তা মন্দ বলিস নি তুই।”

বলে দুজনেই হেসে দিলেন। প্রসঙ্গ পাল্টে মিসেস রোকেয়া বললেন-

-“তোর ছেলে, অননের কি খবর?”

-“ও তো ও-ই! সেই আগের মতই সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে পড়ে থাকে। বাড়িতে আসার সময় যে ভার্সিটিটা দেখছিলি না?”

-“হু”

-“ওখানেই পড়ে ও।”

-“তাই নাকি! অদিতিও তো ওখানেই এডমিশন নিয়েছে।”

-“বাহ! তাহলে তো ভালোই হলো।”

-“হুম। ও কি একটুও বদলায় নি?”

-“বদলেছে তো!তার রাগ! আগের তুলনায় আরো বেড়ে গেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই রাগি হয়ে উঠছে সে।”

-“হা হা হা। শুনেছিলাম তোর নাকি একটা মেয়েও আছে।”

-“হুম। আছে তো। সে-ও……..”

আর বলা হয়ে উঠলো না তার। দড়জায় আবার বেল পড়লো। মিসেস রোকেয়া উঠে গিয়ে দড়জা খুললেন। অদিতির বাবা জনাব আজাদ আর অদিতির ছোট ভাই রায়হান চলে এসেছে বাইরে থেকে। জনাব আজাদ মিসেস সালেহাকে দেখেই তাকে সালাম দিলেন। তারপর তারা কুশল বিনিময় করে কথা বলতে লাগলেন।

তাদের কথার ফাকেই চলে এলো অদিতি হাতে চায়ের কাপ এর ট্রে নিয়ে। সে বাবার আওয়াজ পেয়ে সবার জন্যই চা নিয়ে এসেছে। সবাই চা নিয়ে আবার কথা বলতে শুরু করলো। আর অদিতি চলে এলো নিজের ঘরে। সে আবার মনোযোগ দিলো নিজের ঘর গোছানোয়। তার এ কাজ শেষ হলে আজ আর কোনো কাজ নেই তেমন।

সব কাজ শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেছে। সে কাজ শেষ করে গোসল করতে চলে গেলো। গোসল শেষ করে এসে নামাজ পড়ে নিলো সে।

নামাজ শেষ করে হাত খোপা করা ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাড়ালো সে। চুলগুলো আচড়ে চিরুনিটা রাখতেই মা ডাকলেন খাওয়ার জন্য। অদিতি মায়ের ডাকে একপ্রকার দৌড়ে চলে গেলো খেতে।খুব খিদে পেয়েছিল তার। অনেক কাজ করেছে সে আজ।

-“অনন! নীড়! খাবার খেতে আয় তোরা।”

মিসেস সালেহা বাড়ি ফিরে দুপুরের খাবার রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন এতোক্ষণ। এখন রান্না শেষে খাবার টেবিলে সাজিয়েছে সে। অননের বাবা জনাব রফিক নামাজ পড়ে এসে ইজি চেয়ারে বসেছিলেন এতোক্ষণ। উঠে এসে খাবার টেবিলে বসলেন সে। অননও বাবার সাথেই নামাজ পড়ে এসে নিজের ঘরে গিয়েছিলো পাঞ্জাবি বদলে নরমাল টি-শার্ট পড়তে। টি-শার্ট পড়ে সে বিছানায় বসতেই নীড় গিয়েছিলো ওর চকলেট আনতে ভাইয়ার কাছ থেকে। মায়ের ডাকে দুজনে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে।

আজ শুক্রবার। তাই সবাই একসাথে দুপুরের খাবার খাচ্ছে। না হলে দুপুরে জনাব রফিক বাড়িতে খান না। তার অফিসেই খেয়ে নেন তিনি।

খাওয়ার টেবিলে বসে মিসেস সালেহা বললেন –

-“ওগো জানো। রোকেয়ারা আমাদের এই বিল্ডিংয়ের ৭ম তলার ফ্ল্যাটে সিফট করেছে।”

-“আরে বলো কি! তাহলে তো ভালোই হলো। কেমন আছেন তারা?”

-“এইতো দেখে এলাম। বেশ আছে। ছোট একটা ছেলেও আছে এখন।”

-“ভালোই তো। অদিতিকে দেখেছো?”

এতোক্ষণ চুপচাপ কথাগুলো শুনছিলো আর খাচ্ছিলো অনন। তবে অদিতি নামটা শুনতেই ভ্রুজোড়া কুচকে গেলো তার। খাওয়া থেকে মনোযোগ সরিয়ে অদিতি কে তা জানতে চাওয়া তার মনকে দমিয়ে
কান দিলো সে বাবা মায়ের কথোপকথনে।

-“আরে দেখেছি বৈকি কথাও হয়েছে ওর সাথে। মেয়েটা অনেক চঞ্চল হয়ে গেছে জানো! আগের তুলনায় অনেক বদলে গেছে ও।”

-“আরে! বলছো কি! তাহলে এক কাজ করো। একদিন দাওয়াত করো আমাদের বাড়িতে।”

-“আচ্ছা। আমিও তাই ভাবছিলাম।”

বাবা-মায়ের কথা শুনে সে আর প্রশ্নটা করলো না। ভাবলো খেতে আসলেই দেখে নিবে সে অদিতি নামক মানুষটা আসলে কে।আবার মনোযোগ দিলো সে খাবার খাওয়ায়।


পরেরদিন সকালে অনন ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হয়ে নিচে গ্যারেজে গেলো বাইক নিতে।

অদিতি ঘুম থেকে উঠেছে অনেক আগেই। রেডি হয়েছে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। ব্যাগটা কাধে নিতেই মনে পড়লো তার সে তার বেলকনিতে লাগানো গাছগুলোতে পানি দিতেই ভুলে গেছে। তাই ব্যাগটা রেখে ঝটপট পানি এনে গাছে দিতে লাগলো। তারাহুরো করতে গিয়ে একমগ পানি পড়ে গেলো নিচে। কেউ ওখানে থাকবে না ভেবে আবার গাছে পানি দিতে শুরু করলো।

আর ওদিকে অনন বাইক নিয়ে ওখানে এসে দাড়াতেই পানিগুলো সব ওর মাথায় পড়লো। সকাল সকাল এমন ঘটনায় মেজাজের তেরোটা বেজে গেলো ওর। উপরে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কাজটা কার। কিন্তু কোন বেলকনি থেকে পানি আসলো তা ই তো জানেনা সে। খুজে পাবে কি করে।ভেবে নিজের উপরই বিরক্ত হলো সে। বাইক সাইডে রেখে লিফটে উঠলো নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করবে ভেবে।

অদিতি গাছে পানি দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরলো। লিফট বিজি। তাই দাড়িয়ে রইলো সে কিছুক্ষণ। লিফট খালি পেয়ে উঠে পড়লো লিফটে।

ওদিকে অনন ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে গেলো। লিফটের বাটনে ক্লিক করে কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে থাকলো সে। মেজাজটা আরো বিগড়ে যাচ্ছে তার। লিফটের দড়জা খুলতেই ভেতরে অপরিচিত একটা মুখ দেখতে পেলো সে। সে যে-ই হোক তার তো আর কিছু আসে যায় না। ভিতরে ঢুকে ফার্স্ট ফ্লোরের বাটনে ক্লিক করলো সে।

লিফট থেকে বেরিয়ে বাইক যেখানে রেখেছিলো সেখান থেকে বাইক আনতে চলে গেলো অনন। অদিতি বাইরে এসে গেটের বাইরে দাড়ালো। রিকশা একটাও দেখা যাচ্ছে না। বাড়ি থেকে বেশি দুর না তার গন্তব্য। তাই ভাবলো হেটেই যাবে। তারাতারি যেতে হবে তার। প্রিন্সিপালের সাথে দেখাও করতে হবে তাকে।বাবা সাথে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু তার খুব জরুরি একটা কাজ চলে এসেছিলো। তাই যেতে পারে নি সাথে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কোনদিকে যেতে হবে তাই তো মনে নেই তার। গাড়িতে আসার সময় খেয়ালই করে নি সে।

-“ধুর! কোনদিকে যাবো এখন আমি! ওই মটু-পাতলুর সাথে কথা বলতে বলতে খেয়ালই করলাম না কোনদিক দিয়ে এসেছিলাম আমরা!”

অনন ওর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। অদিতি অননকে দেখে ভাবলো সে তো ওর সাথেই লিফট দিয়ে নিচে এসেছে। তাহলে ওদের বিল্ডিংয়েরই কেউ হবে। সেই ভেবে বললো-

-” এক্সকিউজ মি! এই যে! শুনছেন?”

অনন তার বিগড়ে যাওয়া মেজাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলো ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। পেছন থেকে কারো ডাক শুনে তার মেজাজের এবার তেরো থেকে চৌদ্দ টা বেজে গেলো। ভ্রু কুচকে পিছনে তাকালো সে।

-“আমাকে বললেন?”

-“এখানে আপনি আর আমি ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছেন? অবশ্যই আপনাকেই বলেছি।”

অদিতির কথায় অননের রাগ আরো বেড়ে গেলো। ভ্রুজোড়া আরো কুচকে দাতে দাত চেপে বলল-

-“বলেন কি বলবেন।”

-” আসলে বলছিলাম কি ভার্সিটি যাওয়ার রোড কোনটা?”

অদিতির প্রশ্নে এবার রাগ থেকে হাসি পেয়ে গেলো তার। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ভাবলো “ভার্সিটিতে পড়বে অথচ ভার্সিটির রাস্তাই চেনে না। আবার আমার সাথে ত্যাড়া-ব্যাকা কথাও বলে। একে মজা তো বোঝাতেই হবে।”

-“আপনি ডান দিকে সোজা হাটতে থাকবেন। কিছুদূর গেলেই পেয়ে যাবেন।”

বলে সে বাইক স্টার্ট করে বা দিকে চলে গেলো।

-“অনেক সময়তো হয়ে গেলো হাটছি ভার্সিটি এখনো পাচ্ছি না কেন? লোকটা কি আমায় মিথ্যা বললো তাহলে!”

বলে উল্টোদিকে হাটতে শুরু করলো ও। পেছন থেকে পরিচিত একটা কন্ঠের অধিকারী ব্যক্তির ডাকে দাড়ালো সে। রিকশা করে অদিতির বেস্টফ্রেন্ড মনিকা যাচ্ছিলো।

-“কি রে! এদিকে কই যাচ্ছিলি তুই? ওঠ রিকশায় ওঠ আগে।”

মনিকার কথায় রিকশায় উঠে বসলো অদিতি।

-“তুই ওদিকে যাচ্ছিলি কেনো রে?”

-“ওদিকে ভার্সিটি না?”

-“না তো! ভার্সিটি তো এদিকে। তুই তো উল্টো দিকে যাচ্ছিলি।”

-“কিহ! ওই লোকটা তাহলে মিথ্যা বলেছে আমাকে। লোকটার সাহস কি করে হলো! হাতের কাছে আরেকবার পাই লোকটাকে বুঝিয়ে দিবো কার সাথে পাংগা নিয়েছে সে।”

বলে রাগে হাত কচলাতে লাগলো অদিতি।

চলবে…….❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে