তুমি এলে তাই পর্ব-০৫

0
321

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৫

কিছুক্ষন পর চৈতি গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো।তখনও হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে।দেখতে ভালোই লাগছে।হঠাত চোখের সামনে আশরাফকে দেখল।সেও তার গাড়ি নিয়েই ওদের পাশে আসছে।চৈতি ভ্রু কুচকে ফেলল।উনি আবার কখন ওদের সাথে আসছে সেটা ও এতক্ষন দেখতেই পায়।নাই।আশরাফকে মনযোগ দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে দেখে চৈতি ভাবল হয়তবা উনি উনার গন্তব্যেই যাচ্ছে।কাকতালীয়ভাবে মনে হয়ে দেখা হয়ে গেছে।চৈতি জানলা থেকে মুখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই আশরাফ আড়চোখে চৈতির দিকে তাকালো। গাড়ির জানলা খোলা রাখায় স্পষ্ট চৈতিকে দেখা আছে।সামনের দিকে তাকিয়ে আছে ও।আশরাফের মাথায় একটা কথা কিছুতেই আসছেনা।চৈতির সাথের ছেলেটা যদি ওর বাসার প্রতিবেশি হয় তাহলে চৈতিকে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে কেন?কই ওর বাসার প্রতিবেশী তো ওরে গাড়ি করে কোন জায়গায় ড্রপ করে দেয় না বা হঠাত করে দেখা হয়ে গেলেও গাড়ি করে তো বাসায় নামিয়ে দেয় না।তাহলে চৈতির বেলাতেই অই ছেলে ওকে গাড়ি করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে কেন?এই সম্পর্ক কোন পাড়া-প্রতিবেশীর সম্পর্ক হতে পারে না।নিশ্চয়ই কিছু না কিছু তো আছে ওদের মাঝে।কিন্তু কি সম্পর্ক আছে ওদের আছে মাঝে?প্রেমেরে সম্পর্ক কি?
এটা ভেবেই আশরাফের রাগ হলো চৈতির উপর খুব।চৈতি মেয়েটাই বা কেমন?একটা ছেলের সাথে গাড়িতে উঠে গেল?পাড়া প্রতিবেশীই হোক তাই বলে গাড়িতে উঠে যাবে?যা ইচ্ছা তাই করুক।তাতে ওর কি?ওর এত হিংসে হচ্ছে কেন?চৈতি যার তার সাথে প্রেম করুক ওর কোন আসে যায় না।ভেবেই গাড়ির স্পিড বারিয়ে দিয়ে সামনে চলে গেল।
কিছুক্ষন পর,
চৈতি ওর বাসায় সামনে এসে পরল।গাড়ি থেকে নেমেই চৈতি ধন্যবাদ জানালো শুভ্রকে।শুভ্র মাথা নেড়ে বলল,

“ইট’স ওকে।”
.
.
“ছেলেটা কেরে?আগে তো কোনদিন দেখিনি।”

হাত পা ধুয়ে ঘরের ফ্যান চালিয়ে বিছানায় বসেছে কেবল চৈতি।সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে তার উপর।পায়ের ব্যাথাটা এতক্ষন কমে থাকলেও হুট করে যেন এখন বেরে উঠেছে।বিছানায় পা টা তুলে দেখছিল। এমন সময় মা এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে উপরোক্ত কথাটা বলল। চৈতি বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে খাতায় লিখে বলল,

“কোন ছেলের কথা বলছ?”

“আরে যার সাথে গাড়ি করে তুই আসলি।নিশ্চয়ই ছেলেটা অনেক বড়লোক।দেখতেও তো মাশাল্লাহ রাজপুত্রের থেকে কম না।কে এই ছেলে?”

চৈতি বিরক্ত হয়ে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে খাতায় লিখে দেখালো।

“এই ছেলেটা তেমন কেও না আম্মু।আমাদের বাসার উপরে থাকেন।একদিন হঠাত উনার সাথে আমার পরিচয়। আজকে আসার সময় বাইরে বৃষ্টি পরছিল।আমি দাঁড়িয়েছিলাম। তাই জাস্ট ভদ্রতার খাতিরে উনি আমাকে গাড়িতে করে ড্রপ করে দিয়েছেন।যেহেতু উনিও এখানে থাকেন।এর বেশি কিচ্ছু না।প্লিজ মাথা ঘামিও না উনাকে নিয়ে। তোমার তো আবার যেকোন ছেলেকে দেখলেই বিয়ের জন্য তোড়পাড় শুরু করা লাগে।আল্লাহর রহমতে এমন কিছু করো না।উনি খারাপ ভাববেন।”

“এহ,বললেই হলো নাকি!এত সুন্দর,বড়লোক,ভালো ছেলে পেয়ে আমি হাতছাড়া করব?”

চৈতি বিরক্ত হয়ে বলল,

“উনি যে ভালো তুমি বুঝলে কি করে?”

“আমার চোখ যে কাওকে দেখলেই বুঝে ফেলে সে কেমন।তাছাড়া ও ভালো না হলে কি তোকে ড্রপ করে দিত নাকি?নিশ্চয়ই অই ছেলে তোরে ভালোবাসে ”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“আম্মু!”

নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“মানে,তুমি কিভাবে এক কথায় বলে দিলে যে উনি আমাকে ভালোবাসেন?একদিনের পরিচয়ে কেও কাওকে ভালোবেসে ফেলে?প্লিজ!এসব চিন্তা বাদ দাও।আর এখান গেলে আমি এখন খুশি হবো।একটু রেস্ট নিব আমি।”

“পরেরটা পরে দেখা যাবে।কিছু খাবি এখন?”

“নাহ, আমার কোন খিদে নেই।”

.
.
শুভ্র ফ্রেশ হয়ে বসতে যাবে এমন সময় কলিং বেল শুনে মনে মনে ভাবল এখন আবার কে আসল?এমন সময় তো কেও আসার কথা না।দরজা খুলতেই চৈতির মা হেসে বললেন,

“ভালো আছো বাবা?”

শুভ্র কোনরকম হেসে বলল,

“জ্বি আন্টি। কিন্তু আপনাকে কে তো ঠিক চিনলাম না। ”

“চৈতি কে চিনো?”

“হ্যা হ্যা আন্টি৷ ”

”আমি ওর মা।”

“সরি আন্টি।আগে চিনতে পারি নি।কিছু মনে করবেন না।”

“সমস্যা নাই।এটাই স্বাভাবিক।তুমি তো আমাকে আর আগে দেখো নাই।”

“ভেতরে আসুন না।”

চৈতির মা ঘরের ভেতর ঢুকেই আশেপাশে এক নজর তাকালো।নাহ,ছেলে বেশ গোছগাছই আছে।চৈতির সাথে খুব ভালো মানাবে।এর মধ্যেই একটা চেয়ার এনে শুভ্র বসতে বলল।চৈতির মা বসে হেসে হাতে থাকা টিফিন বক্সটা বারিয়ে দিয়ে বললেন,

“নাও বাবা।সন্ধার ইফিতারি।তোমার জন্য নিয়ে আসলাম।”

“এত কষ্ট করার কি দরকার ছিল?আমি বাইরে থেকে খেয়ে নিতাম।”

“না না বাবা।বাইরে খাবার আনহাইজেনিক জানো তো।শরীর খারাপ করবে তোমার।এর থেকে বাসার তৈরি খাবার হাজার গুনে ভালো। স্বাস্থ্যসম্মত।

” তা তো জানি।কিন্তু ঘরে কে বানাবে বলুন?আব্বু আম্মু দুজনেই অন্য জায়গায় থাকেন।একটু দুরেই থাকেন তারা।বানিয়ে দেবার মতো কেও তো নেই।তাই বাইরের খাবার খাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।”

“সমস্যা নেই বাবা।তোমাকে আমি প্রতিদিন ইফতার বানিয়ে দিয়ে যাব।এতে তোমার ও সুবিধা আমারও সুবিধা।”

শুভ্র অবাক হয়ে বলল,

“আপনার সুবিধা মানে?”

“না ইয়ে মানে আমার ডায়াবেটিস তো।কিন্তু বাইরে বেশি একটা যাওয়া হয় না।তোমাকে খাবার দেওয়ার উছিলায় একটু হাটাও হবে আমার।”

“কিন্তু আপনি এত কষ্ট করবেন কেন আমার জন্য?”

“কষ্ট কই বাবা?তুমি তো আমার ছেলেরই মতো।নিজের ছেলেকে ইফতারি বানিয়ে দিতে কি কষ্ট লাগে নাকি কারোর?আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“জ্বি বলুন না!”

“চৈতিকে তোমার কেমন লাগে?”

“চৈতিকে আমার কেমন লাগে মানে?”

“না ইয়ে মানে আমার মেয়েটা কারোর সাথে মিশে না তো।ফাস্ট দেখলাম তোমার সাথে কথা বলছে।তাই জিজ্ঞেস করলাম। ”

“না না আন্টি ও তো অনেক ভালো।”

এই তো ছেলে ভালো বলেছে। তারমানে চৈতিকে ওর পছন্দ হয়েছে।

“আচ্ছা তাহলে এবার আসি হ্যা।আমাদের বাসায় একবার বেড়াতে এসো।”

” দুঃখিত আন্টি আপনাকে কিছু খাওয়াতে পারলাম না!”

“আরে কিছু হবে না।তুমি ছেলে মানুষ!তুমি কি খাওয়াবে?”

“তাও আন্টি।”

“বাদ দাও তো।আমি গেলাম।”

“আচ্ছা,আবার আসবেন। ”

“তা তো অবশ্যই! ”

“জ্বি কিছু বললেন?”

“না না বাবা।আচ্ছা চেষ্টা করব।ভালো থাকবেন।”

“তুমিও।”

বাসায় আসতেই চৈতি খাতায় লিখে বলল,

“কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”

“তেমন কোথাও না। ভালো লাগছিল না তাই এক ভাবির ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম।”

“অহ আচ্ছা।”

চৈতির মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।যাক বাবা চৈতি কিছু বুঝতে পারে নাই। উনি তো চৈতির ভালোর জন্যই এমনটা করছেন।এতে মিথ্যা বললে কিছু হবে না।বরং এতে যদি উনার মেয়ের লাভ হয় তাহলে ক্ষতি কোথায় মিথ্যা বলতে?এসব ভেবেই নিজেকে শান্ত করলেন তিনি।
.
.
“মিস চৈতি ছুটি শেষে আমার সাথে দেখা করবেন।”

আরশি চৈতিকে খোচা মেরে বলল,

“কিরে তোর সাথে স্যার দেখা করতে চাইছে কেন তাও আবার পারসোনালি?”

“জানি না।”

“আচ্ছা তুই স্যারের সাথে দেখা করিস।আমি তোর জন্য নাহয় বাইরে ওয়েট করব।”

“তুই কেন আবার ওয়েট করবি?”

“আরে কিছু হবে না।আমার এমনেও কলেজ শেষে কোন কাজ থাকে না।আজাইরা বইসাই থাকি।”

চৈতি আরশির কথায় হেসে বলল,

“আচ্ছা। তুই বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার জন্য ওয়েট করিস আর মশার কামড় খাস কেমন?”
#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে