তুমি এলে তাই পর্ব-০৬

0
122

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৬

চৈতি আরশিকে বিদায় দিয়ে দরজায় নক করতেই আশরাফ সাথে সাথে দরজা খুলল যেন এতক্ষন ওর জন্যই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।প্রথমে চমকে উঠলেও নিজেকে শান্ত করে নোটে লিখে আশরাফকে দেখালো।

“আমায় দেখেছিলেন স্যার?”

“হ্যা, কেন আপনাকে ডাকতে পারি না আমি?একজন স্যার হিসেবে তার স্টুডেন্টকে ডাকার সম্পূর্ণ রাইট আছে আমার। নাকি আপনার থেকে পারমিশন নেওয়া লাগবে?”

আশরাফের বলা কথাগুলা শুনে চৈতি ভ্রু কুচকালো।সামান্য প্রশ্ন করার জন্য কেও এতগুলা কথা শুনায় তা চৈতির ধারনার বাইরে ছিল।সে তো ফর্মালিটির জন্য বলেছিল কথাটা।নাকি তার বলা উচিত ছিল,

“কেন ডেকেছিলেন আমায়?”

নাহ!এটা বড্ড বেয়াদবি হয়ে যেত।কিন্তু এই কথা বলেও তো কোন লাভ হলো না। সেই কথা শুনতে হলো।

“আমার কথা কি বুঝতে পেরেছেন?নাকি বুঝতে পারেন নি?এভাবে বলদের মতো তাকিয়ে আছেন কেন?কিছু তো বলুন।”

চৈতি বুঝতে পারল আশরাফ তার উপর রাগ দেখাচ্ছে।কিন্তু কিসের জন্য? সে কি কোন ভুল করেছে?

“না না স্যার।আমি তো জাস্ট এমনি বললাম।কিসের জন্য ডেকেছিলেন আমায় যদি বলতেন…….”

আশরাফ জিজ্ঞেস করতেই যাবে সে অই ছেলের সাথে কেন গাড়িতে উঠেছিল গতকাল।কিন্তু একজন শিক্ষক হিসেবে একজন ছাত্রীকে এই কতগা জিজ্ঞেস করা বেমানান।নিজের কাছে কেমন যেন লাগছে।চৈতি যদি খারাপ মনে করে?ও যদি ভাবে ওর ব্যাপারে সে কেন হস্তক্ষেপ করছে। যদি জিজ্ঞেসই করে তাহলে সে কি জবাব দিবে?চৈতির মুখের দিকে তাকাতেই দেখল চৈতি উত্তরের আশায় চেয়ে আছে তার দিকে। এখন কি বলবে সে?

“আব……ম্যাথের চ্যাপটার ৫ টা কালকে সম্পূর্ণ পড়ে আসবেন।ম্যাথ করতে দিব। ”

“এই কথা বলার জন্য আপনি আমায় ডেকেছেন?”

“হ্যা,ক্লাসে মনে ছিল না বলতে। আর এই পড়াটা শুধু আপনার জন্যই বরাদ্দ।”

” কেন স্যার?সবাই কি দোষ করেছে?আমিই শুধু একা একা পড়ব কেন?”

আশরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,

“গত সপ্তাহে যে মডেল টেস্ট নিয়েছিলাম মনে আছে আপনার?”

“এটা মনে থাকবে না কেন?অবশ্যই মনে আছে।”

“সেই পরীক্ষায় আপনি এত লো মার্ক পেয়েছেন যে আমার বলতেই লজ্জা লাগছে।আমার স্টুডোন্ট হয়ে ম্যাথে এত কম মার্ক পাবে সেটা আমি কোন আশা কেন কল্পনাও করেনি।এখন ক্লাসের সবার সামনে আপনার মার্ক বললে আমার নিজেরই লজ্জা লাগবে।সবাই ভাববে আমি কেমন শিক্ষক যে স্টুডেন্টকে সামান্য পাশও করাতে পারলাম না।আমারই অপমান হবে।আর সামনেই তো টেস্ট এক্সাম সেখানেও যদি আপনি এমন মার্ক পান তাহলে আপনাকে আর বোর্ড এক্সাম দেওয়া লাগবে না৷ পরের বছরও ইনশাল্লাহ এই কলেজেই থাকবেন।তাই যদি কলেজ পাশ করতে চান তাহলে আমার কথা আপনাকে মানতে হবে।”

আশরাফের বলা কথাগুলো বুঝে এখন চৈতিরই লজ্জা লাগছে। মাথা নিচু করা ফেলল সে।হ্যা মানছে সে অংকতে একটু কাঁচা।একটু না অনেকটা কাঁচা তাই বলে কলেজ লাইফে এসে কিনা সে ফেইল করবে?এটা শুনলে তো মানুষ হাসাহাসি করবে।

“কি হলো? কিছু বলছেন না কেন?আপনি কি পড়া শিখে আসবেন কালকে?নাকি আমি সবাইকে আপনার মার্কস বলে বেড়াতাম?”

“না না স্যার।আমি কালকে আপনার পড়া শিখে আসব। কিন্তু এক রাতে একটা চ্যাপ্টার….. ”

“পরিক্ষার আর বেশি দেরি নেই।তাই একটু প্রেসার নিতেই হবে।বাই দা ওয়ে,আমি আর কোন বাহানা শুনছি না। ভালো করে পড়ে আসবেন।আর যেটা বুঝবেন না সেটা রেড পেন দিয়ে মার্ক করে আমাকে বলবেন।আমি বুঝিয়ে দিব।”

“জ্বি স্যার।”

“আর কি?যান এবার।আমার কথা শেষ নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?”

“ভালো থাকবেন স্যার। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই সালাম দিয়ে চলে গেল।চৈতির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে জোরে একটা শ্বাস ফেলল।

.
.
“আজকে আসতে এত দেরি হলো যে?”

শুভ্রের কথা শুনে চৈতি ভ্রু কুচকে বলল,

“আপনি কি আমার জন্য ওয়েট করছিলেন?বেশিক্ষন ওয়েট করিয়ে ফেললাম আমি?”

চৈতির কথা শুনে ঘাবড়ে আমতা আমতা করতে করতে শুভ্র বলল,

“নাহ নাহ,আমি তো এই মাত্র আসলাম।সবাইকে বেরিয়ে যেতে দেখলাম কিন্তু আপনি বের হচ্ছেন না দেখে বললাম।আর তাছাড়া গতকাল তো আগেই বেরিয়েছিলেন।”

“হুম,আশরাফ স্যারের সাথে কিছু কথা ছিল।তাই দেরি হয়ে গেল।”

“আশরাফ স্যার কে?গতাকাল যার সাথে কথা হলো উনি?”

“হুম”

চৈতির উত্তর শুনে শুভ্রের মন খারাপ হয়ে গেল।কেন মন খারাপ হলো তা সে জানে না।তাই চুপচাপ গাড়ি চালাতে লাগল। বাকিটা সময় দুজনের মধ্যে কোন কথা হলো না। বাসার সামনে আসতেই শুভ্র ইশারায় বলল,

“তাহলে যান।আমার একটু কাজ আছে।একটা জায়গায় যাওয়া লাগবে।কালকে দেখা হচ্ছে।”

চৈতি মাথা নাড়িয়ে গেটের ভিতর ঢুকতেই শুভ্র ফুস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।আচ্ছা ওর এত মন খারাপ কেন হচ্ছে?আশরাফ চৈতির টিচার হয়।আর দরুন ওদের মধ্যে কথা হতেই পারে। ও কেন নেগেটিভ ভাবছে বিষয়টা?

“বি পজেটিভ শুভ্র।ওদের মধ্যে জাস্ট টিচার এন্ড স্টুডেন্টের সম্পর্ক। এর বেশি কিছু না।তুই কেন ওভারথিংকিং করছিস?এত ভাবার কিছুই নেই।নিজের কাজে ফোকাস দে।”

নিজেকে সামলিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে গাড়ি চালানোতে মন দিল।
বাসায় ফিরতেই,

‘শুভ্রের সাথে আসছিস?”

মার কথা শুনে ভ্রু কুচকে চৈতি জিজ্ঞেস করল,

“তুমি উনার নাম জানলে কি করে?”

“না মানে,গতকাল বললাম না এক ভাবীর ফ্লাটে গিয়েছিলাম?”

“হুম”

“তো উনি বললেন নতুন এক ভাড়াটিয়া উঠেছে তার নাম নাকি শুভ্র।তো আমি বুঝলাম তোর সাথে যেই ছেলেটাকে দেখেছিলাম ওর কথাই বলছে।”

“উনি ভাড়াটিয়া না আম্মু।এটা উনার নিজস্ব ফ্লাট।বলো নতুন ফ্লাটে যে উঠেছে। ”

“অই একই হলো।তুই কি প্রতিদিন ওর সাথেই আসবি?”

“হ্যা।কেন?”

“কেন আসবি?”

চৈতি বিরক্ত হয়ে বলল,

“এটা আবার কেমন প্রশ্ন মা?উনি কাজে আমার কলেজের সামনে দিয়ে যান।যেহেতু আসার সময় আমার কলেজ সামনে পরে আবার ছুটিও হয় অইসময় তাই উনি আমাকে ড্রপ করে দেন।”

“হুম, এতটুকুই জানার ছিল।আচ্ছা তুই রেস্ট নে।”

মার কথা চৈতি কিছুই বুঝল না।অবুঝের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মায়ের কথায়।
একটু রেস্ট নিয়ে ইফতার শেষ করে পড়তে বসলো সে।ফুল চ্যাপ্টার আজকে রাতের মধ্যে শেষ করতে হবে।যেখানে সে একটা চ্যাপটার ২ সপ্তাহ লাগায় পড়তে।তাও ভালো করে পড়া হয় না।এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে অংক করাতে মন দিল।কিছুক্ষন পড়ার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ১২টা ছুইছুই। তারমানে ৪ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে।অথচ সে এক পেজও শেষ করে নাই।মোট কথা তার মাথায় অংকের অ টাও ঢু*কতাছে না।সারাদিনের ক্লান্তিতে মাথা ঘুম এসে ভর করছে।এই পর্যন্ত ৫ কাপ চা খেয়ে ফেলেছে সে।তাও ঘুম যেন যাচ্ছেই না!চেয়ার থেকে উঠে কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করল।নাহ।এবার মনে হয় একটু ঘুমটা কমেছে।আবার চেয়ারে বসে অংক করাতে মনযোগ দিলো।চোখে মুখে আলোর ছোয়া পেতেই আড়মোড়া ভেংগে নিজের দিকে তাকাতেই দেখল সে চেয়ারে বসে আছে তার মানে সে কি ঘুমিয়ে পরেছিল?মোটামোটি অর্ধেক শেষ করতে পেরেছে।বাকিগুলা বুঝে নাই বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।পেন্সিল ব্যাগ থেকে লাল কলম বের করে বাকি অংকগুলা দাগিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল।

“লিপস্টিক লাগিয়ে যা।”

মার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলল,

“লিপস্টিক কেন লাগাব আম্মু?তুমি তো জানো আমি লিপস্টিক পরিনা ”

“চোখ মুখ ফ্যাকাশে লাগছে তোর।”

বলেই লাল লিপস্টিক ঠোটে লাগিয়ে দিল।চৈতি মুছতে গেলেই ওর মা হাত ধরে বাধা দিয়ে বলল,

“খবরদার,মুছবি না।এটা না মুছলে অনেকক্ষন থাকবে।কলেজ থেকে আসলে যেন আমি তোর ঠোটে লিপস্টিক দেখতে পাই।”

“আচ্ছা আচ্ছা,মুছব না।লেট যাচ্ছে আমার যাই?”

“হুম যাহ”

মার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে লিফট থেকে নেমে দৌড়াতে লাগল।আজকেও লেট হয়ে গেছে।সামনেই গাড়ির সামনে শুভ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পায়ের স্পিড আরও বারিয়ে দিল।আর মার দেওয়া হিল জুতা পরার ফলেই একটা অঘটন ঘটে গেল। তাড়াতাড়ি করে হাটতে গিয়ে চৈতি…..
#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে