তুমি এলে তাই পর্ব-১৩

0
114

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১৩

আজকে নিয়ে এক সপ্তাহ পুরন হবে।এই এক সপ্তাহে চৈতির সাথে আরশিও ভালোভাবে কথা বলেনি আর শুভ্রও।শুভ্র ওকে দেখলে আরশির মতোই এড়িয়ে যায়।কথা বলার যে সুযোগটুকু পাবে সেটাও সে পাচ্ছে না।আশরাফকে অইদিনের পর থেকে চৈতি আর কলেজে দেখেনি।শুনেছে সে নাকি রিজাইন দিয়ে চলে গিয়েছে।আর চাকরি করবে না।চৈতি বুঝতে পেরেছে তার জন্য আশরাফ স্যার চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।উনার জন্য মায়া লাগছে।ও তো চায়নি ওর জন্য কেও চাকরি ছেড়ে দিক।কিন্তু ক্ষমাও তো করা যায় না।উনি তার প্রতি যে অবিচার,অন্যায় ব্যবহার করেছে সেসব ভুলে যদি আশরাফকে সে ক্ষমা করে দেয় তবে তো নিজেকেজ অপমান করা বুঝায়।ছাদে বসে এসবই ভাবছিলো।হঠাত পাশে এসে কেও একজন দাঁড়ায়।পাশ ফিরে দেখার জন্যই তাকাতে দেখে শুভ্র। আজ টানা ৬ দিন পর নিজ থেকে এসেছে সে।

“আরশি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।”

“কোথায় ও?”

“আমি আপনাকে মেসেজ করে জায়গাটার নাম বলছি।বাই দা ওয়ে,আপনার ফোন নাম্বার টা?”

“আপনার মোবাইলটা দিন।আমি সেভ করে দিচ্ছি।”

শুভ্র পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে চৈতির দিকে বারিয়ে দিল।চৈতি শুভ্রের হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নিজের নাম্বার সেভ করে শুভ্রের হাতে দিল।শুভ্র ইতদস্ত করে বলল,

“কয়েকদিন আগে আপনার কলেজের স্যার এসেছিল এখানে!অইযে যার সাথে আপনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।কি যেন নাম? মনে পরেছে আশরাফ মেবি রাইট?”

“হুম।”

” এত রাতে কি কথা বলতে এসেছিলো?না মানে কোন স্যার তো তার স্টুডেন্টের সাথে দেখ করতে বাসার নিচ পর্যন্ত আসেনা।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“আমাকে ভালোবাসে উনি।সেটাই বলতে এসেছিল।আর বলেছেন আপনার সাথে যাতে না মিশি।উনার নাকি সহ্য হয় না।”

“অহ।”

“আপনি কি বললেন?মতামত জানিয়েছেন কিছু?”

“মানা করে দিয়েছি।”

“কিহ?কিন্তু কেন?”

“এমনি।”

কথাটা শুনে শুভ্র মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করল না।নিজের খুশির অনুভূতিটাকে নিজের মধ্যেই চেপে রাখলো।

“আচ্ছা,আপনি আর আরশি আমার সাথে এমন কেন করছেন?”

“কি করেছি?”

“এইযে দুজনেই আমাকে ইগনোর করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।আজ নিয়ে প্রায় ১ সপ্তাহ হবে আরশির সাথে কথা বলি না।আচ্ছা আমি কি কোন ভুল করেছি?কি ভুল করেছি?আরশি কিছু বলেছে আপনাকে?ও তো এমন ছিলো না।হঠাত এত পালটে গেল কেন?”

“আমি তো জানি না।আমাকে ও কিছুই বলেনি।আপনাদের মধ্যকার ব্যাপার!আপনারাই সল্ভ করে নিন।আমি আসছি।”

কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা সে।সবকিছু ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে।হঠাত এমন হয়ে গেল কেন সবকিছু?প্রশ্নের উত্তর খুজে পায় না সে।মনের মধ্যেই প্রশ্নগুলা জমাট রয়ে যায়।একটু পরেই মোবাইলে শুভ্র মেসেজ পাঠিয়ে জায়গার ঠিকানা পাঠিয়ে দিয়েছে।সাথে বলেছে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে যেন পৌছে যায়।
.
.
বাস থেকে নেমে শুভ্রের দেওয়া ঠিকানায় আসতে দেখলো মাঠের মতো একটা খালি জায়গা।এই খালি জায়গায় কেন আরশি দেখা করতে চেয়েছে?বাসাতে বললেও তো পারতো!আর নাহলে কলেজেই বলতো।তা না করে এই মাঠে নিয়ে আসছে কেন?আরশিকে তো দেখা দুরের কথা কাওকেই দেখতে পারছে না।পুরো মাঠটাই খালি।সন্ধ্যা হওয়ায় দিনের আলো আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসছে।একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে।এর মধ্যেই ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে আরশিকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিলো এখানে আসার কথা।আরশি মেসেজের রিপ্লাইয়ে সামনের দিকে হাটতে বলেছে।একটু সামনেই নাকি ও আছে।ফোন ব্যাগের মধ্যে রেখে আরেকটু আগাতেই চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল।চারপাশে তাকাতেই দেখল আশেপাশে গাছগুলোর সাথে লাইট বাধাই করা।একটু আগে যে জায়গাটা পুরো অন্ধকার ছিল এখন সেই জায়গাটা লাইটের আলোই জলমল করছে।চারদিকে চোখ বুলিয়ে সামনে তাকাতেই দেখল আরশি আর শুভ্র টেবিলে কেক রেখে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।চৈতিকে তাকাতে দেখেই দুজনে ইশারায় বলল,

“Happy Birthday to you.Happy Birthday to you.Happy birthday dear Chaiti.Happy Birthday to you!”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“এসব কি?”

“তোর জম্মদিনের কেক।আজকে তোর জম্মদিন তো!তাই তো এত আয়োজন করা।তোর বাসাতেও করতে পারতাম কিন্তু শুভ্র বললেন তোর আম্মু নাকি এসব পছন্দ করেন না। তাই এখানেই সেলিব্রেট করব তোর জম্মদিন।আয় আয়,কেক কাট!”

চৈতি এক পা এক পা করে এগিয়ে টেবিলের সামনে আসলো।অতঃপর কেক কেটে আরশিকে প্রথমে খাওয়ালো।আরশি একটু খেয়ে চৈতিকে বলল,

“তোর জম্মদিনের কেক তুই বেশি করে খা।আমি পরেও খেতে পারব।”

মাঝখান থেকে শুভ্র বলল,

“বাহ রে!শুধু তোরাই খাবি?আমি খাবো না?এতো কষ্ট করে সবকিছুর এরেন্জমেন্ট তো আমিই করলাম।এখন আমাকেই কেক দিচ্ছিস না!এটা কিন্তু ঠিক না।”

শুভ্রের কথা শুনে আরশি বলল,

“আপনি নিজে কেক নিয়ে খান না!মানা করছে কে?”

“তাই করতে হবে দেখছি।”

চৈতি শুভ্রের জন্য আলাদা করে কেক কেটে শুভ্রকে দিল।

.
.
“আপনি জানলেন কি করে আজকে যে আমার জম্মদিন?”

“অইযে আরশির জম্মদিনে বললেন। ”

“অহ,আপনি যে আমার কথা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছেন সেটা আমি ভাবতেও পারি নাই।আমি নিজেই তো ভুলেই গেছিলাম আমার জম্মদিনের কথা।”

“তা মিস চৈতি লাইফের ফাস্ট বার্থডে কেমন লাগলো?যদিও বেশি কিছু করতে পারি নি।তবে ইচ্ছা ছিল।”

“আমার লাইফের সেরা মুহূর্ত ছিল।এন্ড থ্যাংকস ফর দ্যাট!এজন্যই আরশি আর আপনি টানা ৬ টা দিন আমাকে ইগনোর করেছেন।”

“আরশি হয়তোবা আপনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এমনটা করেছে।বাট আমি একটু বিজি ছিলাম তার পাশাপাশি আপনার জম্মদিনের জন্য আয়োজন ও করতে হয়েছিলো। সময় পাচ্ছিলাম না একদম আপনার কলেজের সামনে যাবার।কালকে থেকে আমি একদম ফ্রি।যাইহোক,বাসায় চলুন!দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।”

চৈতি মাথা নাড়ালো।
.
.
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন?”

আশরাফকে দেখে চৈতির মা প্রথমে অবাক হলেন।অতঃপর নিজেকে সামলিয়ে বললেন,

“অলাইকুম আসসালাম।হ্যা ভালো আছি। কিন্তু তুমি হঠাত বাসাতে?”

“কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।অনেক আর্জেন্ট।”

“হ্যা বলো?”

“কথাটা বলা জানি আমার ঠিক হচ্ছে না….”

“আহা,বলেই ফেলো না?”

“আন্টি অইদিন আমি এবং আমার মা ভুল করেছিলাম। জানি এই ভুল ক্ষমার না।এটাকে ভুল বললেও অন্যায় হবে।আমি চাচ্ছি আমার করা অন্যায়টা সুধরে নিতে।”

চৈতির মা আশরাফের এমন প্যাচানো কথা শুনে বিরক্ত হলেন খুব।এত পেচিয়ে কথা বলার কি আছে বাপু?সোজা সাপ্টা বললেই তো পারে?নিজের বিরক্তটাকে সহ্য করে বললেন,

“একটু ক্লিয়ার করে বলো!তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি তা।যা করার তা তো করেই ফেলেছো!এখর সেটা কিভাবে সুধরাবে?”

আশরাফ একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

“আন্টি আমি চৈতিকে বিয়ে করতে চাই।”

আশরাফের কথা শুনে চৈতির রেগে গেলেন।

“বিয়েটাকে কি তুমি ছেলেখেলা পেয়েছো?একবার রিজেক্চ করবে,অপমান করবে আবার পরে এসে বলবে বিয়ে করবে এটা কেমন কথা?দেখো এটা এখন আর সম্ভব না।আমি অলরেডি চৈতির জন্য ছেলে দেখে ফেলেছি।ছেলে দেখতে যেমন সুন্দর তার আচার আচরনও মাশাআল্লাহ।আর যে ছেলে আমার মেয়েকে দেখতে এসে মানা করে দিতে পারে তার সাথে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না।”

“আন্টি, আমি মানছি আমি ভুল করে ফেলেছি। একটা সুযোগ দিন সেই ভুলটাকে সুধরাবার?চৈতিও আমাকে সুযোগ দিচ্ছে না।আপনিও না।এমনটা করবেন না প্লিজ। আমার কথা একটু ভাবুন!”

“আমার মেয়েকে রিজেক্ট করার আগে তো তুমি আর তোমার মা দুজনের একজনও ভাবেনি আমার মেয়ের কথা।আমি কেন ভাবব?আর চৈতিই যেহেতু রাজি না সেখানে আমি কি করে রাজি হবো?তুমি এখন যেতে পারো!”

“আন্টি এমন করবেন না প্লিজ!আমাকে একটা সুযোগ দিন।আমি কথা দিচ্ছি চৈতিকে কখনো দুঃখ দিব না।রাজরানীর মতো করে রাখব।”

“আমি আমার মতামত বলে দিয়েছি।এক পা ও নড়ব না আমার মতামত থেকে।”

.
.
চৈতি বাসায় এসে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের রুমে যেতে নিলেই চৈতির মা আসলো চৈতির সামনে।

“কিছু বলবে?”

“আশরাফ এসেছিলো।”

“উনি কেন এসেছিলেন?”

“তোকে বিয়ে করার জন্য অনুরোধ করছিলো।”

“অহ্,তুমি কি বললে?”

“আমি মানা করে দিয়েছি।এরকম ছেলের সাথে আমি আমার মেয়েকে তো আর বিয়ে দিতে পারি না!”

“অনেক ভালো করেছো।”

“হুম,আরেকটা কথা!”

“কিহ?”

“আমি ভেবেছি শুভ্রের সাথে কথা বলব।”

“কি কথা?”

“তোর সাথে বিয়ের কথা।ছেলেটা তোকে পছন্দ করে আমি সিউর।তোর কোন আপত্তি নেই তো?”

“তোমার যা ইচ্ছা করো।”

বলেই নিজের রুমের ভিতর চলে গেল।চৈতির বলা কথাটাকে চৈতির মা হ্যা ধরে নিলেন।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে