তুমি এলে তাই পর্ব-০৪

0
129

#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৪

মিস চৈতি,আপনার পায়ে কি হয়েছে?এভাবে খুড়িয়ে হাটছেন কেন?”

চৈতি খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটছিল।হঠাত সামনে আশরাফকে দেখে থেমে গেল।আশরাফের কথা চৈতি বুঝেনি।তাই হা করে তাকিয়ে ছিল।আশরাফ বিরক্ত হয়ে বলল,

“আমিও না!আপনি তো শুনতেই পান না।কাকে কি বলছি।”

মোবাইল বের করে লিখে চৈতিকে দেখালো।চৈতিও লিখে বলল,

“তেমন কিছু না।জাস্ট আসার সময় একজনের সাথে ঢাক্কা খেয়ে পরে গিয়েছিলাম”

“আমার কেবিনে আসুন।”
বলেই আশরাফ চলে গেল।চৈতি আশরাফের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মনে মনে ভাবল তাকে ডাকছে কেন?ও কি কিছু অন্যায় করেছে নাকি?ওর যতদুর মনে পরে ও তো আজকে আশরাফের ক্লাসই করেনি।তবে কি আরশির সাথে কেন্টিনে গিয়েছে বলে কিছু বলবে?ভয়ে ভয়ে আশরাফের রুমে যেতেই আশরাফ চেয়ারে বসতে বলল।চৈতি চেয়ারে বসতেই আশরাফ বলল,

“পা টা দিন।”

চৈতি আশরাফের কথা বুঝে আশরাফের দিকে তাকাতেই আশরাফ বুঝল কি বলে ফেলেছে সে।টেবিলে থাকা ফাস্ট এইড বক্সটা চৈতির দিকে বারিয়ে দিয়ে বলল,

“এই নিন।আমি বাইরে যাচ্ছি।আপনি মেডিসিন লাগিয়ে নিন।নয়তো ইনফেকশন হবে।”

বলেই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।আশতাফেএ যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে রইল চৈতি।

“লোকটার আজ কি হলো?সকালে দেরি করে গেলাম বলে ধমক দিয়ে বাইরে দাড় করিয়ে রাখল।আর এখন ফাস্ট এইড বক্স দিয়ে সাহায্য করছে?”

ভাবতে ভাবতেই পায়ে বেন্ডেজ করে বাইরে বের হতেই দেখল আশরাফ দাঁড়িয়ে আছে।চৈতিকে বের হতে দেখেই আশরাফ বলল,

“মেডিসিন লাগিয়েছেন?”

চৈতি উপর নিচে মাথা নাড়ল।

“দেখুন,একজন শিক্ষক হিসেবে আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি।আপনি আবার অন্য কিছু ভেবে নিয়েন না।এখন বাসায় যান।”

বলেই কেবিনের ভিতরে চলে গেল।আশরাফের যাওয়ার দিকে চৈতি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকল।কারণ আশরাফের বলা কথা ও বুঝতে পারে নাই।লোকটা এত তাড়াতাড়ি বলল যে চৈতি লিপ রিডিং করতে পারে নাই। ও কি কেবিনে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে আশরাফ কি বলেছিল তখন?না থাক,পরেই নাহয় জিজ্ঞেস করবে।ভেবেই কলেজ থেকে বেরিয়ে গেল।কেবিনের জানলা দিয়ে আশরাফ বাইরেই তাকিয়ে ছিল।চৈতিকে খুঁড়িয়ে যেতে দেখে আশরাফ মনে মনে ভাবল,

“মেয়েটা এই পা নিয়ে যেতে পারবে তো?আমার তো উচিত ছিল ওকে বাসায় পৌছে দেওয়া।কেন যে তখন কিছু না শুনেই মেয়েটাকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলাম!এতক্ষন বাইরে দাঁড়ানোর কারনেই মনে হয় পায়ের ব্যাথাটা বেড়েছে।”

পরক্ষনেই নিজের ভাবনাকে দুরে ছুড়ে ফেলে দিল।চৈতিকে নিয়ে এত ভাবনা কবে থেকে ভাবছে ও?ওদের মধ্যে সম্পর্ক জাস্ট টিচার স্টুডেন্টের।একজন টিচার নিশ্চয়ই তার স্টুডেন্টকে নিয়ে এত ভাবে না।নাহ বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা।এই ব্যাপারটাকে আর ওগুতে দেওয়া যাবে না।মেয়েটার কাছ থেকে নিজেকে দুরে রাখতে হবে।ভেবেই বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
.
.
চৈতি কলেজ থেকে বেরিয়েই বাসস্টেশনে এসে দাঁড়ালো।বাসের অপেক্ষায়।কম ভীড় থাকলে তবেই ও বাসে উঠবে।নয়তো না।প্রায় অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও কম ভীড় বাস পেল না।এরমধ্যেই হঠাত বৃষ্টি নামা শুরু হয়ে গিয়েছে।চৈতি দৌড়ে গিয়ে একটা ছাউনির নিচে গিয়ে দাঁড়ালো।বৃষ্টি পড়ার আর টাইম পেলো না?এখনই বৃষ্টি পরা লাগলো।এখন নিজের উপরই রাগ লাগছে।কেন সে বাসে উঠলো না?উঠলে তো আর এভাবে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা লাগতো না।বাস কখন আসবে কে জানে?ভাবতে ভাবতে ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে হাত মুছতে লাগল।হাতে খানিকটা বৃষ্টির ফোটা পরেছে।বৃষ্টির ফোটা পরলেই ওর আবার জ্বর উঠে।সেই জ্বর চার পাঁচদিনের আগে ছাড়ে না।এসব ভাবতে ভাবতে হঠাত হাত থেকে রুমালটা নিচে পরে গেল।এখন রুমালটা তুলতে নিলেই সে বৃষ্টিতে ভিজে যাবে।কিন্তু রুমালটা তো ওকে তুলতেই হবে।আরশি দিয়েছে ওকে রুমালটা।।তাই বাধ্য হয়ে নিচু হযে রুমালটা তুলতেই যাবে এমন সময হটাত ও খেয়াল করল ওর মাথায় আর বৃষ্টি পরছে না।অবাক হযে উপরে তাকাতেই আশরাফকে দেখতে পেল। ওর মাথার উপর ছাতা ধরে আছে।মুখে কিছুটা গম্ভীর ভাব।
“এভাবে তাকিযে আছেন কেন?উঠুন!সবাই দেখছে।”

আশরাফের কথা বুঝে তাড়াতাড়ি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে টাইপ করে বলল,

“আপনি?”

আশরাফ আমতা আমতা করতে বলল,

“আব…ইয়ে মানে সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম।হঠাত আপনাকে দেখলাম।”

কিছুক্ষন থেমে আবার বলল,

“বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন?”

চৈতি উপর নিচ মাথা নাড়ালো।

আশরাফ কিছু বলতে যাবে হঠাত শুভ্র এসে চৈতির মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,

চৈতি!আপনি?আপনার দেখা পাব আশা করিনি।”

আশরাফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে শুভ্রর উপর।এই ছেলে আবার কই থেকে আসল?চৈতির নাম জানে কিভাবে?কে এই ছেলে?কি সম্পর্ক চৈতির সাথে?বয়ফ্রেন্ড নাকি ওর?এরকম হাজারটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে আশরাফের।শুভ্র আশরাফকে দেখিয়ে ইশারায় বলল,

উনি?

চৈতিও ইশারায় বলল,

আমার কলেজের স্যার।

আশরাফের দিকে তাকিয়ে মোবাইলে টাইপ করে লিখল,

“উনি আমাদের বাসার উপরে থাকেন।”

আশরাফ হাত বারিয়ে দিয়ে বলল,

হাই, আমি আশরাফ। আপনিও কি মিস চৈতির মতো কথা বলতে পারেন না?না মানে দেখছি উনার সাথে সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলছেন তো তাই।কিছু মনে করবেন না প্লিজ।”
আশরাফের কথা শুনে শুভ্রর মনে হলো চৈতিকে উনি ইচ্ছা করে খোচা মেরে কথা বলেছেন।পরক্ষনেই নিজের ভাবনাকে ভুল ভাবল। কারন একজন টিচার নিশ্চয়ই তার স্টুডেন্টকে খোচা মেরে কথা বলবেন না।
তাই হাসি মুখে বলল,

“আমি শুভ্র। আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।”

চৈতিকে উদ্দেশ্য করে ইশারায় বলল,

“চৈতি,চলুন আমরা বাসায় যাই।বৃষ্টি কমে এসেছে।”

চৈতিও উপর নিচ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

“আসি ভালো থাকবেন।আর চৈতির প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন।জানেনই তো ও অন্য স্বাভাবিক স্টুডেন্টের মতো না।”

বলেই শুভ্র চৈতিকে নিয়ে চলে গেল।আশরাফ ওদের যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।এই ছেলে চৈতির সাথে কেন এত কথা বলছে?অই মেয়ের জন্য ও সাইন ল্যাংগুয়েজও শিখেছে কিন্তু কেন?
.
.
“বাহ বেশ ভালোই সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে পারেন তো আপনি!”

চৈতির ইশারায় কথা বলা বুঝে শুভ্র মাথা নিচু করে হেসে বলল,

“অই আরকি।”

হাঁটতে হাঁটতে একটা গাড়ির সামনে এসে শুভ্র চৈতিকে ইশারায় বলল,

“উঠুন।”

চৈতি অবাক হয়ে বলল,

“আপনার গাড়ি আছে?”

“আগে তো ছিল না।আপনার জন্য আব্বুর থেকে আনা লাগল।”

শুভ্রের কথা না বুঝে চৈতি বলল,

“কি বললেন?আমি লিপ রিডিং করতে পারি নি।”

“আসলে আমি গাড়ি বেশি একটা ইউজ করি না তো।তাই দেখেন নি।”

“অহ আচ্ছা।”

“আমি আপনার কলেজের দিকটায় প্রতিদিনই আসি।তাই আপনি আসার সময় আমার সাথে আসতে পারেন।এতে করে আপনাকে আর ভীড় বাসে উঠতে হবে না।”

“কিন্তু….”

“আমি আপনাকে জোর করব না।জাস্ট বললাম।আমার কোন অসুবিধা হবে না।বরং আপনার আরও সুবিধা হবে অই ভীড় বাসে যাওয়ার থেকে।দেখলেনই তো আজ কি হলো। আমি তো আর সবসময় থাকব না।”

চৈতি কিছুক্ষন ভেবে রাজি হয়ে গাড়িতে উঠল।কিন্তু আপত্তি বাধল সিট বেল্ট বাধা নিয়ে। ও তো কোনদিন গাড়িতে উঠেনি।মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে সে।গাড়ি না থাকাটাই স্বাভাবিক।শুভ্রকে কিছু বলতেও পারছে না।কি না কি ভাববে!হটাত শুভ্র এগিয়ে এসে সিট বেল্ট বাধতে বাধতে চৈতির মুখের দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে আছে।মনে হচ্ছে এক্ষুনি চক্ষু কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।কিছুক্ষন তাকিয়ে নিজের সিটে এসে বসল।এতক্ষন জমে থাকা শ্বাস বের করে দিল।একটুর জন্য হৃদপিন্ডটা বেরিয়ে আসে নি।নিজেকে সামলিয়ে ধন্যবাদ দিল শুভ্রকে।শুভ্র কিছু না বলে হেসে গাড়ি চালানো তে মন দিল।কিছুক্ষন পর চৈতি গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো।তখনও হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে।দেখিতে ভালোই লাগছে।হঠাত চোখের সামনে…..
#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে