তুমি আমার পর্ব-১৩

0
964

#তুমি আমার (পর্ব ১৩)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান মেঘাকে বাড়িতে ছেড়ে ফিরছিলো বাইক নিয়ে। একটা পার্কের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো হঠাৎ চোখ পড়লো পার্কের গেটের দিকে। রুহি দাড়িয়ে আছে আর বার বার হাতের ঘড়ি দেখছে,হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে। রেহান কিছুটা দূরে বাইক নিয়ে দাড়ালো রুহি কার জন্য অপেক্ষা করছে এটা দেখার কৌতুহল চাপলো ওর মাথায়।
৫ মিনিটের মাথায় একটা কালো গাড়ি এসে দাড়ালো রুহির সামনে তারপর একটা ছেলে নামলো গাড়ি থেকে,ছেলেটি দেখতে খুবই সুন্দর আর হ্যান্ডসাম তবে রেহানের থেকে বেশি নয়।
ছেলেটি রুহির সামনে গিয়ে হেসে হেসে কিছু বলছে যা রেহান শুনতে পেলো না। রুহির ও হেসে ছেলেটির বাহুতে ধরে গায়ের সাথে মিশে গেলো তারপর দুজনে ভেততে চলে গেলো।

রেহান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলতে লাগলো…..রুহি যে এতটা বাজে একটি মেয়ে ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছে,আমি এই মেয়েটাকে নিজের জীবনে জড়িয়ে নিচ্ছিলাম!! যে কিনা লোভে পড়ে আমার মত ছেলেদেরকে বেছে নেয়!! তবে যাই হোক আল্লাহ যা করেন হয়তো ভালোর জন্যই করেন। মেঘার মত মেয়েকে পেয়েছি আমি। ওকে নিয়ে আমার কল্পনার জগৎ টাও অতুলনীয়,এখন শুধু অপেক্ষা কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেওয়া।

হঠাৎ রেহানের ফোনটা বেজে উঠলো ফোন পকেট থেকে বের করে দেখলো তানভির কল দিয়েছে,রেহান রিসিভ করলো
– হ্যালো তানভির বল।
– আমি কল দিয়েছি তারপরে হয়তো মনে পড়েছে তানভির নামেও কেউ আছে। শালা প্রেমে পড়ে কাছের বন্ধুকেও ভুলে গেলি!!
– ভুলি নি দোস্ত একটু বিজি ছিলাম আরকি। আচ্ছা তুই আমাকে শালা বললি কেনো হুম?আমার তো কোনো বোন নেই। ওপস সরি ভুল বলে ফেললাম একটা বোন আছে আমার বড় চাচ্চুর মেয়ে রাইসা।
– তাহলে তো আর কথাই নেই তোর বোনকে দিয়ে দে তাহলে শালা বলাটা সার্থক হবে।
– আমার চাঁদের মত বোনকে তোর মত বাদরকে দিবো কি করে ভাবলি হুম?
– এখন আমি বাদর তাইনা? আমার এত্ত কিউট বোনকে তোর করে দিলাম আর তুই আমাকে বাদর বললি,হারামি একটা।
– ওই তোর বোন কে!!
– কে আমার মেঘা আমার বোন।
দুই বন্ধু মিলে নানা রকম হাসি ঠাট্টা করে কথা বলতে লাগলো। বন্ধুত্ব তো এমনি হওয়া উচিৎ না থাকবে রাগ আর না থাকবে অহংকার। একে ওপরের পাশে সব সময় থাকবে তাহলেই না বন্ধুত্বর গভীরতা বাড়বে।
.
🌿
.
রাফিন শার্টের হাতা ফোন্ড করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছিলো মিথিলা নিচেই ছিলো তখন। মিথিলা রাফিনের সামনে এসে বললো
– রাফিন কোথাও যাচ্ছো?
– হুম ভাবি একটু বাইরে যাচ্ছি।
– জরুরী কোনো কাজে?
– না তেমন কোনো কাজ নেই,কেনো বলোতো?
– আমার ছোট বোন আসবে আজ অনেক দিন পর আসছে স্টেশন থেকে একা এতদূর আসবে তুমি যদি যেতে ওকে আনতে। তোমার ভাইয়া বা রেহান থাকলে তোমাকে বলতাম না। যাও না ভাই নিয়ে এসো ওকে।
রাফিন একটু ইতোস্তবোধ করছে ও চাইছে না আর কোনো মেয়ের ঝামেলায় পড়তে,তবে ভাবি যেভাবে বলছে না ও করতে পারছে না তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
– ঠিকআছে ভাবি আমি যাবো,কখন যেতে হবে?
– এখনি গেলে ভালো হয় ও হয়তো আধ ঘন্টার মধ্য পৌছে যাবে।
– আচ্ছা।
– আরে ওর নাম্বারটা তো নিয়ে যাও না হলে তো চিনবে না।

রাফিন স্টেশনে আসা মাত্রই ট্রেন এসে থামলো,সব যাত্রীরা একে একে নামছে। হঠাৎ রাফিনের চোখ পড়লো একটি মেয়ের দিকে মেয়েটি আকাশি আর সাদা মিশ্রণে চুড়িদার পড়া চুল গুলো হালকা কোকড়ানো ছাড়া থাকায় বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মুখেক গড়নটা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের। রাফিন একটু তাকিয়ে থেকে চোখটা নামিয়ে নিলো।
রাফিন মিথিলার বোনের নাম্বারে কল দিলো কোথায় আছে জানতে।
রাফিন দাড়িয়ে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছিলো তখন দেখলো একটু আগে দেখা মেয়েটি ওর দিকেই আসছে,মেয়েটি ওর সামনে এসে মিষ্টি হেসে বললো
– রাফিন রাইট?
– হুম, আপনি আমাকে চেনেন??
– আমি মিতু। আপনি আমাকেই নিতে এসেছেন।
– ওহ আপনি মিথিলা ভাবির বোন!!
– হ্যা।
– আমাকে কি করে চিনলেন?
– আপু ফোনে আপনার ডিটেলস বলে দিয়েছিলো।
– ও আচ্ছা ঠিকআছে চলুন যাওয়া যাক।

রাফিন মিতুকে নিয়ে সিএনজিতে উঠলো। দুজনেই চুপ,মিতু আর চুপ থাকতে পারলো না রাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো
– ছেলেরা এত চুপচাপ থাকে বুঝি!!
রাফিন সামনে তাকিয়ে আছে কিছুই বললো না,মিতু আবারো বলে উঠলো
– আজব লোক তো আপনি একটি মেয়ে পাশে বসে আছে আর আপনি চুপচাপ রাস্তা দেখছেন!
রাফিন মিতুর দিকে তাকালে এবারো কিছুই বললো না আবার নিজের মত বসে রইলো। মিতু ওর এমন কাজ দেখে বিরক্ত হচ্ছে বিড়বিড় করে বললো
– ছেলের ভাব দেখো যেনো মেয়েদের দিকে কখনো তাকিয়েও দেখে না,হুহ চেনা আছে সব ছেলেদের ওপরে ওপরে সাধু আর ভেতরে ভন্ডামিতে ভরা।
.
🌿
.
রাফিন রোজ রাতে ছাঁদে এসে সিগারেট খায় আজও ছাঁদের রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে। হঠাৎ ভেসে উঠলো মিতুর ট্রেন থেকে নামার দৃশ্যটা,ওর এক হাতে ছিলো ব্যাগ অন্য হাতে চুল ঠিক করছিলো। রাফিন চোখ খুলে ফেললো ও নিজেই অবাক হচ্ছে মেঘাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে তো ভাবেনি কখনো তাহলে মিতুর মুখটাই কেনো ভেসে উঠলো!! আরো একটা সিগারেট ধরিয়ে খেতে লাগলো রাফিন।

মিতুর ঘুম আসছিলো না তাই ছাঁদে আসলো,দরজায় দাড়িয়েই চোখ পড়লো ছাঁদের একপাশে কেউ দাড়িয়ে আছে। মিতু এগিয়ে গেলো অন্ধকারে মুখটা স্পষ্ট না দেখতে পেলেও সিগারেটের আলোটা চোখে পড়লো।
মিতু আরো একটু এগিয়ে রাফিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো কাছে থেকে বুঝতে পারলো এটা রাফিন। মিতু বলে উঠলো
– সিগারেট খাওয়া কিন্তু শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
রাফিন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো মিতুর কন্ঠ শুনে সামনে তাকালো কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললো
– আপনি! আপনি এত রাতে ছাঁদে কি করছেন??
– আপনি যেটা করছেন আমি তাই করছি তবে একটু ব্যতিক্রম আছে।
– মানে??
– আপনি এসেছে ছাঁদে হাওয়া খেতে+সিগারেট। আর আমি এসেছি হাওয়া খেতে।
– হাওয়া খেতে এসেছেন ভালো কথা ছাঁদে আরো অনেক জায়গা আছে সেখানে যান আমাকে একা থাকতে দিন।
মিতু সরে না গিয়ে রাফিনের পাশে এসে দাড়ালো,রাফিন ভারী গলায় বললো
– কি হলো শুনতে পাননি আপনি আপনাকে যেতে বলেছি তো।
– না যাবো না।
– ওকে ফাইন,আমি যাচ্ছি।
রাফিন সোজা নিচে চলে গেলো। মিতু হা করে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলতে লাগলো
– প্রবলেমটা কি এই ছেলের! দেখতে তো ভালোই কিন্তু কথা বলতে চায় না কেনো নাকি কম কথা বলে?? তবে আপুর থেকে শুনলাম ছেলেটি খুব ভালো আর কথা বলার স্টাইল ও নরমাল। তাহলে আমার সাথে কথা বলতে বিরক্তি দেখায় কেনো!
কি যেনো নাম ওর?? ও হ্যা রাফিন। আচ্ছা আমি কি দেখতে খারাপ যে রাফিন এমন করে? আমার তো প্রথম দেখাতেই ভালো লেগেছে ওকে। রাফিনের বিরক্তির কারন কি এমন বিষন্ন ভাবে সিগারেট খাচ্ছিলো কেনো এটাই জানতে হবে আগে।
·
·
·
চলবে………………………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে