#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি
২৫.
বিশাল ড্রয়িংরুমে আভিজাত্যের ছোঁয়া। বিলাসবহুল সকল চিত্রকর্ম দ্বারা আবদ্ধ দেয়াল। বাড়িটার প্রতিটা আসবাবপত্র যেন অত্যন্ত সৌখিন হাতে গঢ়ে তোলা হয়েছে। বলা চলে বাড়ির কর্ত্রী ও অত্যন্ত সৌখিন। তার সৌখিনতার উদাহরণ ছিমছাম পরিপাটি সবকিছু। অন্তি না চাইতেও মুগ্ধ হয়।
বসার ঘরটায় লাল নীল রঙের মৃদু আলো জ্বলছে। এই মৃদু আলোতে দেয়ালে টাঙানো চিত্রকর্মগুলো যেন আরো জীবিত হয়ে উঠেছে। লাল নীল রঙের ছোঁয়ায় তুলে ধরা নারীদেহটার চোখ দুটো যেন জ্বল জ্বল করছে। অন্তি অবাক হয়। বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রয়। কি ভয়ংকর সুন্দর শিল্পীর ভাবনা! কি সুন্দর তার হাতের সৃষ্টি!
অন্তির এই ভালোলাগার হ্রেস খানিকের মাঝেই বিলিন হলো। আরাব নামের লোকটাকে প্রথম দেখাতেই তার অতিব মাত্রায় অভদ্র বলে মনে হয়েছে। কিন্তু তার বাবা মা কিনা এই লোককে মাথায় তুলে নাচিয়ে চলছে। এ মানা যায়? অন্তির মনক্ষুণ্ণ হয়। তার বাবা সবসময় তার জন্য বেস্ট জিনিস এনে দিয়েছে তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে তার বাবা কেন ভুল কাউকে পছন্দ করলো? সবটাই কি কেবল বাহ্যিকতা? ভদ্রতার মুখোশ পরে থাকা আরাবের ভেতরের রূপটা যদি সে তাদের দেখাতে পারতো!
অন্তির বুক ভারি হয়ে আসে। হুট করেই বুকের ভেতর শূন্যতা আঁকড়ে ধরে। কাউকে না জানিয়েই সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে ছাদে। আজ আকাশে ঝলমলে চাঁদ উঠেছে। শীতের আমেজে পরিপূর্ণ প্রকৃতি। প্রকৃতির এমন সুন্দর রূপ তাকে মায়ায় জড়াতে পারলো না। প্রেমে ক্লান্ত হৃদয় তখন অগাধ জলে বাঁচার জন্য ছটফট করছে। প্রেমিক পুরুষটির কন্ঠস্বর শোনার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে হৃদয়। অন্তি তার ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দিলো। দিহানের প্রতি জমা ক্ষণিক অভিমান ভুলে সাদা রঙের ঝলমলে পার্স থেকে ফোন বের করে দ্রুত হাতে কল করে দিহানের নম্বরে। ছলছল চোখে বিরবির অরে আকুতি জানায়,
‘প্লিজ পিক দা ফোন দিহান। আমার দম বন্ধ লাগছে। একটু কথা বলেন আমার সাথে। শুধু একটু কথা বলেন। প্লিজ প্লিজ প্লিজ….’
অন্তির আকুতি ভরা চাপা কান্না হয়তো তার প্রেমিক পুরুষটি শুনলো না। নিষ্ঠুর প্রেমিকের মতো ফিরিয়ে দিলো তাকে। ফোনের ওপাশ থেকে রিনরিনে মেয়েলি গলায় প্রতিবারের ন্যায় জানালো সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রেমিকরা বুঝি এমন নিষ্ঠুর হয়? নিদারুণ কষ্ট অভিমানে চোখ ভরে ওঠে অন্তির। মনে আক্ষেপ জমে খুব। লাল হয়ে ওঠে নাক চোখ। সংযোগ বন্ধ জেনেও উম্মাদের মতো পরপর কল করতে থাকে দিহানের নম্বরে। যেন এভাবেই বিচ্ছিন্ন সংযোগ জোড়া লাগাতে চলছে সে। একসময় ক্লান্ত হয়ে হুঁ হাঁ করে কেঁদে ওঠে। তার কান্নার শব্দে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। উড়তে থাকা ঝিঁ ঝিঁ রাও নিরবতা বয়ে আনে। হয়তো তারাও তার দুঃখকে মন থেকে উপলব্ধি করতে পারছে। এসবের পাশাপাশি আরো একটি প্রাণ তার এই হৃদয়বিদারক কান্নার সাক্ষী হয়েছিলো। যা অন্তি বুঝতেও পারেনি।
‘কার জন্য এত আকুতি? জানতে পারি?’
ছাদ থেকে নামতে নিতেই হঠাৎ এমন প্রশ্নে থমকে দাঁড়ায় অন্তি। ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালে অন্ধকার চিঁড়ে বেরিয়ে আসে আরাব। গায়ে হাফ হাতার কালো রঙের একটা টি শার্ট। পরণের প্যান্টটাও হাফ। শীতের রাতে এমন অদ্ভূত পোশাক পরার মানে কি? অন্তি তা জানতে চাচ্ছে না আপাতত। তার প্রশ্ন লোকটা এখানে কি করছে? মনের প্রশ্ন চেপে রাখার স্বভাব না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সে প্রশ্ন করলো,
‘আপনি এখানে?’
‘আমার বাড়িতে আমার থাকাটাই স্বাভাবিক। নয় কি?’
‘তেমন না। আন্টি বললো আপনি অসুস্থ। রুমে ঘুমাচ্ছেন। তাই আর কি।’
‘বাহ! আসতে না আসতেই খোঁজ নিয়ে ফেলেছেন! ভেরি গুড। আই লাইক ইট! কিন্তু এই কান্নাকাটিটা কার জন্য রূপন্তি?’
আরাব কিছুটা সামনে এগিয়ে আসতেই অন্তি পিছিয়ে যায়। আরাবের শান্ত দৃষ্টি হঠাৎ করেই তার নার্ভাসনেস বাড়িয়ে দেয়। মন তাকে হুঁশিয়ারি জানায়। মস্তিষ্ক তাকে ছুটে পালাতে বলে। খারাপ কিছু না ঘটে!
ভয় মানুষকে কাবু করে নেয়। এ প্রবাদে পুরোপুরি ভাবে বিশ্বাসী অন্তি। সেই বিশ্বাস থেকেই সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। কড়া কিন্তু শান্ত গলায় জবাব দেয়,
‘সেটা আপনার না জানলেও চলবে।’
‘চলবে না। আমি সেই অধিকার দেইনি আপনাকে যেই অধিকারে আপনি অন্যকারো জন্য কাঁদবেন।’
অন্তি মুচকি হাসে। বলে,
‘আপনি অধিকার দেওয়ার কে?’
‘আপনার হবু বর।’
‘বিয়ে তো করছি না আপনায়।’
আরাব হাসে। অন্তির মনে হয় লোকটা পাগল। মানসিক ভাবে অসুস্থ। নয়তো এমন ভাবে কেউ হাসে? অন্তি উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে না। তার এই পাগল ধরণের মানুষটার সাথে কথা বলতে একদমই ভালো লাগছে না। লোহার দরজা ঠেলে দ্রুত সিড়ি বেয়ে নামতে নিলে পেছন থেকে আরাব বলে,
‘পালাচ্ছেন? ওকে যান। আপনাকে পালাতে দিলাম। কিন্তু এটাই শেষ। দ্বিতীয়বার আমার সামনে আসার আগে অন্যপুরুষের নাম মাথা থেকে মুছে ফেলে আসবেন। আপনার মুখে অন্যপুরুষের নাম পছন্দ হয়নি আমার। আর শুনুন, কাঁদবেন না। আপনার কান্না খুবই ভয়ংকর। আমাকেও দুঃখি করে তোলে।’
অন্তি পায়ের গতি বাড়িয়ে দেয়। তার ভিষণ কান্না পাচ্ছে। সবাই তাকে খেলনা মনে করছে। যার যেমন ইচ্ছা তেমন আচরণ করছে তার সাথে। সে আর নিতে পারছে না। বসার ঘরে সকলে মিলে গল্প করছিলো। ভেতরে তাদের আপ্পায়নের ব্যবস্থা হচ্ছে। অন্তি ছাদ থেকে নেমে সরাসরি সাহেদের সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। আশপাশে নজর না দিয়ে জোর গলায় বলে ওঠে,
‘বাসায় চলো বাবা।’
অন্তি সাধারণত বুঝদার সামাজিক ধরণের মেয়ে। চটপটে হলেও অবস্থান বুঝে আচরণ করে। নাহার রাগি চোখে মেয়ের দিকে তাকালেও সাহেদ শান্ত ভাবে জিজ্ঞাস করে,
‘কি হয়েছে মা? কোনো সমস্যা?’
অন্তির গলা কাঁপছে। চোখে পানি জমেছে। ভেজা গলায় সে বলে ওঠে,
‘আমি বাসায় যেতে চাচ্ছি বাবা।’
সাহেদ আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করেন না মেয়েকে। অত্যন্ত নম্র ভাষায় ক্ষমা চান আজিম সাহেবের কাছে। মিসেস আজিম কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছেন যেটা তার চুপসানো মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। সাহেদের কাছে ফাস্ট প্রেয়রিটি তার পরিবার। পরিবারের পর সকল সম্পর্ক। সে তার মেয়েকে জানে। তার মেয়েটা অকারণেই এমন বাচ্চামো করে না। এর পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
বাড়িতে ফেরার যাত্রাটা ছিলো অত্যন্ত নিরব। সাহেদ বা নাহার কেউ কোনোরূপ কথা বলেনি। এমনকি বাড়িতে ফিরেও সাহেদ অন্তিকে কিছু বলেনি। কেবল শান্ত গলায় বলেছিল,
‘নিজের ঘরে যাও। ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নাও। সকালে কথা হবে।’
অন্তি মাথা নাড়িয়ে নিজের রুমে ফিরে গেলো। ধরজা বন্ধ করে থম মেরে কিছুক্ষণ বসে রইল। তারপর হুট করেই কেঁদে উঠলো। গভীর রাত পর্যন্ত তার কান্নার পাট চললো। আজ রাতে তাকে খাওয়ার জন্য ডাকা হয়নি। হয়তো কেউ তাকে বিরক্ত করতে চায়নি বলেই।
খোলা আকাশের নিচে ছোট্ট একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছে অন্তি। মাথার উপর ঝকঝকে ফর্সা আকাশ। ঝলমল করছে রোদ। নরম সবুজ ঘাস বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে। অন্তি নগ্ন পায়ে নরম ঘাসে পা রেখে বসে আছে। জায়গাটা তার খুব চেনা। এখানে প্রায়ই দিহানের সাথে আসা হয়। কিছুটা দূরেই তিনতলা পুরোনোকলেজ ভবন। অন্তি যেখানে বসে আছে আছে এটা কলেজ মাঠ। যেখানে সে প্রথম দিহানকে দেখেছিলো। তার স্বপ্নের পুরুষ! অন্তির ঠোঁট ছুঁয়ে যায় মিষ্টি হাসি। অন্তির চোখ যায় কিছুটা দূরে। হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে তার পুরুষটি এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে তার পানে। হাতে হলুদ রঙের এক গুচ্ছ গোলাপ। অন্তির চোখ ঝলসে ওঠে। আনন্দে পানি জমে চোখে। প্রথমবারের মতো তার জন্য ফুল এনেছে দিহান। অন্তির মন চায় এক ছুটে গিয়ে দিহানকে আঁকড়ে ধরতে। লক্ষ কটিবার বলতে,
‘ভালোবাসি আপনাকে।’
কিন্তু সে ঠাঁয় বসে রয়। দিহান তার সামনে এসে দাঁড়ায়। মুচকি হেসে গোলাপ গুচ্ছ বাড়িয়ে ধরে। স্নিগ্ধ কন্ঠে বলে,
‘তোমার জন্য এনেছি।’
জমে থাকা অভিমান ঝড়ে গেল নিমিষেই। বসা থেকে উঠে মানুষটিকে আঁকড়ে ধরতে গেলেই সে পিছিয়ে যায়। অন্তি ছলছল হতভম্ব চোখে তাকিয়ে রয়। কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে,
‘দূরে যেতে চাচ্ছেন?’
দিহানের হাসি হাসি মুখটা হঠাৎ ই ভিষণ গম্ভীর হয়ে পড়ে। আকাশে জ্বলতে থাকা সূর্যটা হঠাৎ করেই অতল গভীরে হারিয়ে যায়। অন্ধকারে বুদ হয়ে আসে চারপাশ। মেঘ গর্জে ওঠে। মুশলধারে বৃষ্টি নামবে তার ই জানান দিচ্ছে যেন প্রকৃতি। অন্তি হঠাৎ করেই ভিষণ ভয় পায়। ভয় থেকে মুক্তি পেতে আশ্রয়ের জন্য দিহানের কাছে যেতে নিলে দিহান আবারো পিছিয়ে যায়। অন্তি থমকে দাঁড়ায়। কান্না ভেজা গলায় বলে ওঠে,
‘এমন করছেন কেন দিহান? আমি ভয় পাচ্ছি। আপনার কাছে একটু আশ্রয় দেন।’
দিহানকে ভিষণ শান্ত দেখালো। শীতল দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কেমন প্রাণহীন সে চাহনি। তেমনি প্রাণহীন গলায় জবাব দেয় দিহান।
‘আশ্রয় নেই রূপ। ফিরে যাও। আমার নিকট পা বাড়ালেই তুমি হারিয়ে যাবে। অতল গভীরে ডুবে নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমার দেওয়া এই এক গুচ্ছ গোলাপ আমাদের বিচ্ছেদের রং। আমাদের বিচ্ছেদটাই কেবল ঝলমলে ঠিক এই এক গুচ্ছ গোলাপের মতো।’
অন্তি চিৎকার করে প্রতিবাদ করে ওঠে।
‘আমি এই বিচ্ছেদ মানি না। আমি এমন রং চাই না। আমি রংহীন আপনাকেই চাই। আমি অন্ধকারকেই আপন করে চাই। প্লিজ আপনি দূরে যাবেন না।’
দিহান শুনলো না। একরাশ কালো ধোঁয়ার মাঝে হারিয়ে গেলো। তাকে ফেলে রেখে চলে গেলো সে। সে যেতেই আকাশ থেকে মেঘ কেটে গেলো। ঝলমল করে উঠলো রোদ। ফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠলো পরিবেশ। অন্তি হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। কিছুটা দূরেই পরে আছে দিহানের আনা এক গুচ্ছ ফুল। অন্তি চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
‘আমার রং চাই না দিহান। আমার আপনাকে চাই। শুধু আপনাকে।’
তীব্র ঝাঁকিতে অন্তি চোখ মেলে তাকায়। তার পাশে চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে নাহার। তাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখতেই সে উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলো,
‘খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস? উঠে পর। সব কিছু ঠিক আছে। তোর বাবা অপেক্ষা করছেন। জলদি উঠে ফ্রেশ হয়ে নে।’
_____________
বেশ কিছুদিন পর নুহাশের নম্বর থেকে কল পেয়ে ভিষণ অবাক হয়েছে তন্নি। সে তো ভেবেছিল লোকটা বোধহয় তাকে ভুলে গেছে। এ জন্য তার কিছুটা মন খারাপ ও হয়েছিলো বটে। এমন দাজরেল লোকের জন্য মন খারাপ হওয়ার কোনো কারণ নেই, তবুও তার মন খারপ হয়েছিলো। কেনো তার উত্তর অজানা। তন্নি কল রিসিভ করতে দেরি করে না। কানে ধরতেই ওপাশ থেকে নুহাশের ক্লান্ত গলা শোনা যায়।
‘বারান্দায় আসো।’
তন্নি কোনো প্রশ্ন ছাড়াই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। নুহাল এর আগে কখনো দিডনের বেলায় তার বারান্দার নিচে আসেনি। এটাই প্রথম। দিনের ঝলমলে আলোতে এই প্রথম তন্নি বারান্দা থেকে নুহাশের স্পষ্ট মুখ দেখতে পায়। কেমন মুর্ষে পরা অবস্থা মানুষটার। তন্নি তাকিয়ে থাকে নুহাশের ক্লান্ত চোখ জোড়ার দিকে। আজ যেন ভয় লাগছে না তার লোকটাকে দেখতে। বরং মায়া হচ্ছে। তন্নি কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে,
‘ঠিক আছেন?’
‘হুম।’
‘আপনাকে ক্লান্ত লাগছে।’
‘আচ্ছা।’
তন্নি বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না। নুহাশের নিরবতা তার কেন যেন পছন্দ হচ্ছে না। মন বলছে লোকটা তাকে বকুক। ধমক দিক। রাগি চোখে তাকাক তার দিকে। তবুও এমন নিরব না থাকুক। তন্নির আকুতি হয়তো শুনলো সে। নরম গলায় ডাকল,
‘তন্নি!’
‘হুম।’
নুহাশ খানিক থেমে বলে,
‘আমাদের আর কথা না হোক। ভালো থেকো। আমি চাই চাই তুমি ভালো থাকো। পারবে না ভালো থাকতে?’
অনাকাঙ্ক্ষিত এমন প্রশ্নে থমকে যায় তন্নি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্লান্ত চিত্তের মানুষটার পানে দৃষ্টি থমকে থাকে। পালাতে পালাতে আজ যখন সে ধরা দিতে চাইলো তখনই কিনা লোকটা সবকিছুর ইতি টানতে চাইছে! মন কেঁদে উঠলেও কঠোর মুখে শক্ত ভাবে সে জবাব দিলো,
‘তাই হোক। আর কথা না হোক।’
চলবে……
#তাহার_উম্মাদনায়_মত্ত
#লাবিবা_আল_তাসফি
২৬.
খবরের কাগজ পরতে পরতে চায়ে চুমুক বসাতেই নাক মুখ কুঁচকে ফেলল সাহেদ। অত্যন্ত তিক্ত স্বাদ যুক্ত এই চা তার স্ত্রী নিজ হাতে তার জন্য বানিয়েছে। সাহেদ বুঝতে পারেনা নাহার ভালোবেসে তার জন্য চা বানালেই কেন সেটা তিক্ত হয়! ভালোবাসা মিষ্টি হতে হয় কিন্তু তার স্ত্রীর ভালোবাসা তিক্ত। এতটাই তিক্ত যা মুখে তোলা ভার হয়ে যায়। হাত থেকে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে নাহারকে ডাকেন তিনি। নাহার তখন রান্নাঘরে পারুকে আজকের কাজ বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত। স্বামীর ডাক পেতেই শাড়ির আঁচল কোমর থেকে ছাড়িয়ে বসার রুমে পা বাড়ান। যেতে যেতে পারুকে হুঁশিয়ারি ভাবে বলেন,
‘আগ বাড়িয়ে কিছু করবি না। বাকিটা আমি এসে বুঝিয়ে দেব।’
পারু অসন্তোষ চিত্তে মাথা নাড়ায়। নাহারের এমন হুঁশিয়ারি বার্তা তার পছন্দ না। নাহার যেতেই মুখ বাঁকিয়ে বলে,
‘মায়ের প্যাটেত্তে পড়তেই কাজ শুরু করছি। এহন ও কাজ সেখন লাগবে নাকি!’
বিদ্ধস্ত মেজাজ নিয়ে সবজি ঝুড়িতে গোছাতে লাগলো। সাথে সমানভাবে বেজে চলছে তার একান্ত রেডিও। যা বর্তমানে নাহারের বিরুদ্ধে বাজছে।
শীতের সকালের রোদটা ভিষণ মিষ্টি। অন্তিদের লিভিংরুমের বড় জানালাটা থেকে সরাসরি রোদ এসে সোফায় পড়ে। হাল্কা ঠান্ডা সকালে এমন রোদে বসে চা খেতে ভারী আনন্দ। সাহেদ সেই রোদ গায়ে মাখতেই এখানে বসেছে। নাহার আসতেই সে ভিষণ আফসোসের সুরে বললেন,
‘চা টা ঠান্ডা হয়ে গেছে নাহার। বেশি চিনি দিয়ে আর এক কাপ চা হবে?’
‘চা থেকে যে ধোঁয়া উঠছে?’
‘ওটুকু গরম কিছুনা। আর এক কাপ চা করে দাও না! সাথে মেয়েকেও ডেকে দাও।’
ততক্ষণে অন্তিও ফ্রেস হয়ে চলে এসেছে। বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাকে বলে,
‘আমাকে এক মগ কফি।’
টেবিল থেকে চায়ের কাপ তুলে নাহার মেকি হেসে বলে,
‘আর কিছু লাগবেনা তোমাদের? আমিতো সকাল সকাল এ বাড়িতে হোটেল খুলে বসেছি! আর কি কি লাগবে বলো, এনে দেই!’
সাহেদ চুপ করে থাকেন। গত রাগ থেকেই নাহারের মেজাজ ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। এখন জবাব দেওয়া মানেই অথৈ সাগরে ঝাঁপ দেওয়া। নাহার থমথমে মুখ নিয়ে রুম ছাড়তেই সাহেদ আয়েশ করে বসেন। খবরের কাগজটা মেয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলেন,
‘দেখো তো রাশি চিহ্ন আছে নাকি এটায়। আমি আমার রাশিটা চেক করতে চাই।’
অন্তি বাবার উপহাস বুঝতে পেরে খিলখিল করে হেসে ফেলে। বাবা মেয়ের হাসির পর্ব শেষ হতে সাহেদ কিছুটা সিরিয়াস ভাবে নড়েচড়ে বসেন। গতরাতের ব্যাপারটা নিয়ে মেয়ের সাথে সরাসরি আলোচনায় বসার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিভাবে কথা শুরু করবেন খুঁজে না পেলে মেয়ের দিকে ফিরে অগোছালো ভাবেই বলেন,
‘গতরাতের ব্যাপারে কিছু বলো? তোমার সমস্যাটা আমাদের জানাতে হবে তো মা। না বললে বুঝে নেওয়ার মতো ক্ষমতা পৃথিবীর কারোর নেই। আমাদের বললে তবেই আমরা বুঝবো।’
অন্তি চুপ হয়ে যায়। হাতের পেপারটা সুন্দর করে ভাঁজ করে টেবিলের নিচের তাকে রাখে। সেখানে এমন ভাঁজ করা আরো অনেক পেপার জমে আছে। গত মাসের পেপারগুলো এখনো এখান থেকে সরানো হয়নি। পেপার সরানোর কাজটা প্রতিমাসে পারু নিজ দায়িত্বে করে থাকে। সামনের মুদিদোকানে বিক্রি করে অতিক্ষুদ্র সংখ্যক টাকা পায় সে। তাতেই মহাখুশি মেয়েটা। এ মাসে হয়তো ভুলে গেছে!
‘কি ভাবছ?’
অন্তি সোজা হয়ে বসে। এবার সে কিছুতেই পূর্বের ন্যায় ভুল করবে না। কিছুটা সংকোচ নিয়েই সে বলে ওঠে,
‘বিয়েটা এখন না হলেই কি নয় বাবা? আমাকে কিছুদিন সময় দাও প্লিজ। আমি এখনি মানসিক ভাবে প্রস্তুত না।’
অন্তি এটুকু বলে থামে। টলমলে দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে। নাহার কখন দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে তা দুজনের কেউই টের পায়নি। গতরাতে মেয়ের আচরণে রেগে ছিলেন তিনি। এখন অন্তির মুখে এমন কথায় চেপে থাকা রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। দিক দিশা হারিয়ে ছুটে এসে মেয়েকে টেনে তুলে জোর হাতে থাপ্পর দেন। চিৎকার করে বলে ওঠেন,
‘বেশি বুঝতে শিখে গেছিস? এই বয়সেই এত বুঝতে শিখে গেছিস? সব ঐ বখাটেটার জন্য তাই না? আমি কিছু জানিনা ভেবেছিস? কাল কোথায় গিয়েছিলি সেটা আমি জানিনা ভেবেছিস। তোকে ভালো হতে সুযোগ দিয়েছি আমি। নিজের ভুল বোঝার সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু তুই? যে পথে ছিলি সে পথেই চলছিস।’
রাগে শ্বাস তুলতে পারছে না নাহার। গতকাল তন্নিদের বাড়িতে মেয়েকে না পেয়ে সে বাড়ি ফিরে এসেছে। সে গিয়েছিল এ ব্যাপারে তন্নিও জানেনা। তখন থেকেই মেয়ের উপর সন্দেহ ছিল তার। মেয়েটা এখন লুকিয়ে ঐ বখাটের সাথে দেখা করে। সাহস কত!
হঠাৎ এমন কিছু ঘটে যাবে সাহেদ বুঝতে পারেনি। আচানক ঘটনায় থমকে গেছিলো সে। সম্বিত ফিরে পেতেই কড়া গলায় স্ত্রীকে বলেন,
‘নাহার তুমি এখান থেকে যাও। মেয়ের সাথে আমি কথা বলছি।’
‘কি বলবে তুমি? জানোয়ার ধরেছি পেটে। আমাদের কথা বুঝবে না ও। ও ওর বোধ হারিয়ে ফেলেছে।’
সাহেদ চিৎকার করে ধমক দেন এবার।
‘সেটা বোঝার জন্য এখনো আমি বেঁচে আছি। তোমাকে বিচার করতে হবে না। ভেতরে যাও। দ্বিতীয়বার না বলতে হয়!’
স্বামীর কথার উপর কথা বলার সাহস পেল না নাহার। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরো একবার মেয়েকে দেখে নিয়ে রুম ছাড়লেন। অন্তি থম ধরে বসে আছে। চোখে পানি নেই তার। এসব কিছু যেন তাকে ছুঁতে পারেনি। পাথরের মতো হয়ে গেছে তার মন। আজ মায়ের কথার জবাব দিতেও তার ইচ্ছা হয়নি। সাহেদ চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না। নরম গরায় মেয়েকে রুমে যেতে বলে সে নিজেও নিজ রুমের দিকে অগ্রসর হলেন। অন্তি মুচকি হেসে বললো,
‘গতকাল আমি দিহানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম বাবা।’
সাহেদ দাঁড়িয়ে পড়ে। পেছন ফিরে মেয়ের দিকে তাকান। অন্তি খুব স্বাভাবিক ভাবে বলে ওঠে,
‘কিন্তু সে আসলো না বাবা। আমি অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরও সে আসলো না। কাল থেকে তাকে কল করছি, কিন্তু সে ফোন ধরছে না। ব্যাপারটা ভিষণ মজার তাই না? তোমরা সকলে একসাথে আমাকে ত্যাগ করার চিন্তা করছো! তোমরা চাচ্ছো আমায় বিয়ে দিয়ে দূরে সরাতে; দিহান ও হয়তো তাই চায়!’
অন্তির চোখ ছলছল করে ওঠে। সাহেদ মেয়ের মানষিক অবস্থা বুঝতে পেরে আহত হয়। তার চঞ্চল মেয়েটা কোথায়? কেমন করে কি হয়ে গেলো? বুক ধরে আসে। ফাঁকা ফাঁকা লাগে ভেতরটা। কোমল গলায় বলে,
‘রুমে যাও। বিশ্রাম নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।’
সব ঠিক হয়ে যাবে, এই কথাটা অন্তির কাছে কৌতুক ঠেকলো। আদেও কিছু ঠিক হওয়ার আছে?
______________
দিহানের জ্ঞান ফিরেছে। রেহানা সকাল সকাল চলে এসেছেন। তাকে না জানাতে চাইলেও ছেলের মায়ের কাছ থেকে এত বড় কথা লুকিয়ে যাওয়া অন্যায় হবে ভেবে পরে রেজওয়ান নিজেই জানান তাকে। ছেলের অবস্থা দেখে তিনবার জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। বর্তমানে দিহানের পাশের বেডে সেলাইন হাতে সুইয়ে রাখা হয়ে তাকে। রেজওয়ান মির্জার কপালে ভাঁজ সূক্ষ্ম হয়েছে। তাকে দেখে অত্যন্ত চিন্তিত মনে হচ্ছে। নাহারের পায়ের কাছে বসে মিণু নাহারের পায়ে তেল মালিশ করছে। সাথে বিলাপ করে গুণগুণ করে কাঁদছে।
‘স্যার ছোট সাহেব ডাকেন আপনাকে।’
মাহবুবের কথায় চেয়ার ছেড়ে উঠে কেবিনে প্রবেশ করেন রেজওয়ান মির্জা। দিহান পিঠে বালিশ ঠেস দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে। পাশে নুহাশ গ্লাসে করে বেদানার রস খাওয়াচ্ছে তাকে। এক হাতে সেলাইন অন্যহাতে চোট থাকায় নিজ হাতে খাবার তুলে খেতে অক্ষম সে। দিহানের এমন করুণ অবস্থা দেখে নুহাশ না চাইতেই চোখ থেকে দু ফোটা পানি ঝরিয়ে ফেলেছে। তা দেখে দিহান সময় ব্যায় না করেই ধমকে উঠে বলেছে,
‘মাইয়্যাদের মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করলে লাথি মাইরে কেবিনের বাইরে ফেলবো। তোর ঐ ফ্যাচকাদুনি গার্লফ্রেন্ডের স্বভাব পাইছো? কান্না থামা ডাফার।’
দিহানের ধমকে চোখের পানি থামলেও মুখে আঁধার নেমে আসে তার। গার্লফ্রেন্ডের কথা বলতেই তার তন্নির কথা মনে পড়ে। আজ সকালেই তো সে ইতি টেনে এলো সবকিছুর। গার্লফ্রেন্ড আর হলো কোথায়? তাদের সম্পরৃকের একটা নাম দেওয়ার আগেই সমাপ্তি ঘটেছে। মেয়েটার চাহনি কতটা নিথর হয়ে পড়েছিল ভাবতেই কষ্ট হয় তার। মুখে অন্যকথা বললেও তার চোখ নুহাশকে এভাবে যেতে না করছিলো। বোকা মেয়েটা বোধহয় এতদিনে তার অনুভূতি বুঝতে পেরেছিলো!
‘এভাবে মুর্তির মতো বসে আছো কেন? একটা কাজ অন্তত মন দিয়ে কর। কোনো কাজেই দেখছি তোমার মন নেই।’
রাশভারী গলার ধমকে নুহাশ নড়েচড়ে উঠে। রেজওয়ান মির্জাকে দেখা মাত্র চেড়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। তা দেখে তিনি কপালে ভাঁজ ফেলে বলেন,
‘স্কুলের হেডমাস্টার না আমি। বসো। নিঝের কাজে মন দাও।’
নুহাশ দাঁত চেপে স্বল্প হাসার চেষ্টা করে। দিহানের দিকে তাকালে দেখা যায় সে কিছু দেখেনি এমন ভাবে বসে আছে। কতবড় মিরজাফর হলে বন্ধুর সাথে এমন আচরণ করতে পারে? এই যে নিজে না খেয়ে বসে বসে খাওয়ায় দিচ্ছে এর জন্য সামান্যতম সিমপ্যাথি তো সে ডিজার্ভ করে! নুহাশ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে মুচকি হেসে বলে,
‘আঙ্কেল ওর পেট ফুল। এখন আর খাবেনা বলেছে। আপনারা কথা বলেন। ঘন্টাখানেক পর আবার কিছু খাওয়ায় দিবোনি।’
কথাটা বলে গ্লাসের বাকিটুকু জুস নিজে খেয়ে ফেলে দিহানকে চোখ টিপি দেয়। বিছানায় শুয়ে থেকে তার সাথে পাঙ্গা নিতে এলে এভাবেই না খাইয়ে সাস্থি দিবে সে। হাত পায়ের যে অবস্থা তাতে দিহান কেবল মুখের কথা দ্বারাই তাকে মারতে পারবে হাত পা চালানোর ক্ষমতা নেই। নুহাশ বুক ফুলিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। দিহান সূক্ষ্ম চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কি হলো? সে খাবেনা তা কখন বললো?
_______________
‘তোমার কারো উপর সন্দেহ আছে যারা এমন করতে পারে?’
‘না।’
‘যারা তোমাকে মেরেছে তাদের কাউকে চেনো?’
‘না।’
রেজওয়ান অধৈর্য হয়ে ওঠেন। ওকালতি জবটাকে তার এতদিন নিতান্ত আন্ডাররেটেড জব বলে মনে হতো। কিন্তু ছেলের থেকে তার দুর্ঘটনার কথা শুনতে যেয়ে তার মনে হচ্ছে ওকালতি আসলে উচ্চসম্মান যোগ্য একটা পেশা। এই পেশাধারী সকল পুরুষকে অস্কার প্রদান করা উচিত।
রেজওয়ান মির্জা ছেলের উপর চরম হতাশ হয়ে বলেন,
‘তোমার নিজের জীবনের চিন্তা না থাকতে পারে কিন্তু তোমার মায়ের চিন্তাটা একটু করো। তোমার মা কতটা নরম মনের সেটা তুমি জানো।’
দিহান সোজা গলায় উল্টো প্রশ্ন করে,
‘মাকে এখানে আনার মতো খাটো বুদ্ধিটা কে দিয়েছে আপনায়?’
রেজওয়ান মির্জার মুখ চুপসে যায়। এ বুদ্ধিটা তাকে কেউ দেয়নি। কিন্তু ছেলের অপমান জনক চাহনির শিকার হওয়ার ভয়ে তিনি চেপে গেলেন। তাকে বাঁচাতে মাহবুব প্রসঙ্গটাকে বদলাতে নিজ কদম এগিয়ে বললেন,
‘দিহান সাহেব আপনার উচিত কিছুটা সময় বাড়িতে কাটানো। সারাদিন বাড়ির বাহিরে থাকলে ম্যাডাম এমনিতেও আপনার চিন্তায় বুদ হয়ে থাকে।’
চতুর বুদ্ধিধারী দিহান মাহবুব সাহেবের কথাটাকে কাজে লাগিয়েই নিজ কার্য হাসিলের পথ বের করে নিলো। সময় এবং সুযোগ এর যথাযথ ব্যাবহারের দক্ষতাধারী দিহান বাঁকা হেসে রেজওয়ান মির্জার চোখে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে,
‘বাবা হয়ে ছেলেকে ঘরে আটকাতে পারছেন না? ব্যাপারটা হাস্যকর। আমাকে ঘরে আটকানোর ব্যবস্থা করুণ। সুযোগ কিন্তু বারবার আসবে না। লিমিটেড অফার।’
চলবে……….
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)