“জ্যোৎস্নার ছল”পর্ব ১১.

0
967

“জ্যোৎস্নার ছল”পর্ব ১১.

রাতে খাবার খাওয়ার সময় নীরবতা ভাঙল সালমা। আবারও তার মাথায় এসেছে উদ্ভট কোনো প্রশ্ন।
‘মাহিন ভাইয়া, একটা কথা বলো তো। আমরা নিজেদেরকে সুড়সুড়ি দিলে সুড়সুড়ি লাগে না। অন্যজন দিলেই কেন লাগে? আমরা তখনই কেন হাসি?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো ইচ্ছা আমাদের কারও মাঝে ছিল না। ছোট মা অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে উঠলেন।
‘বারবার তো রঙধনু রঙধনু করো। ওখানে তোমার কী কাজ অনু?’
‘এই ক্লাবটি খোলার আইডিয়া আমার ছিল। আর তাছাড়া ওখানে গেলে আমি এখানের চেয়ে বেশি ভালো থাকি।’
বাবাকে দেখে মনে হলো, তিনি এই সম্বন্ধে কিছু জানতে চাইছেন, কিন্তু বলতে পারছেন না। আমার সাথে তিনি কথা বলেন না। বই পুড়ে দেওয়ার কারণে আমার বাইরে সময় কাটানো নিয়ে তার মনে হয়তো আমাকে নিয়ে করুণা জাগছে। জাগুক। কোনো কোনো সময় করুণা বাড়তে দেওয়া ভালো।
খাবার সারার পর কলিং বেল বাজল। এই সময় কেউ আসে না বলে অবাকই হচ্ছি। ভাইয়া দরজা খুলে দিলে এক গুরুগম্ভীর আওয়াজ বলল, ইদ্রিস সাহেব, ভেতরে এসে কি দুটো কথা বলতে পারি?
বাবা সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। আমি ভয়ে বরফের ন্যায় জমে গেছি। লোকটি ভেতরে ঢুকে বাবার সাথে সোফায় বসলেন।
‘জ্বি আমি সাদিকের চাচা। চেনেন?
বাবার আমার দিকে অস্বস্তি নিয়ে তাকানো দেখে লোকটি উত্তরটি বুঝে নিলেন।
‘আমি কাউকে এখানে ভয় দেখানোর জন্য আসিনি। একটি কথা বলতে এসেছি। যদি কথাটি রাখেন তো ভালো। না রাখলে আমাদেরই কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে।’

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

‘কিছু বুঝলাম না আমি।’
‘জ্বি কাল আপনার মেয়ে আমাদের বাসায় গিয়েছিল।’
‘কিন্তু সে তো রঙধনু নামের একটি ক্লাবে যায়।’
‘মেয়ের খোঁজখবর না রাখলে কীভাবে জানবেন সে সত্য বলেছে কী মিথ্যা? যাক ওকথা। আমাদের ছেলের বিয়ে এখন দিব না। আর ওর জন্য আমরা মেয়েও ঠিক করে রেখেছি। এজন্য আমি চাই না, আপনার মেয়ে সাদিকের পিছু পিছু ঘুরুক। বুঝতে পারছেন আমার কথা?’
মিথ্যে। সম্পূর্ণই মিথ্যে। এমনটা হলে সাদিক আমাকে জানাত না?
‘আপনার কোনো ভুল হয়েছে। অনু এমনটা নয়। সে হয়তো বান্ধবীর বাসায় যায় নয়তো রঙধনু নামের ক্লাবটিতে।’
তিনি খুব শীতলভাবে হাসলেন।
‘ওই জায়গায় সাদিক কিছু বাচ্চাদের পড়ায়। রঙধনু ক্লাবটি হয়েছে মাত্র এক বছর আগে। আপনার মেয়ে সাদিককে কাজে লাগিয়ে এটি খুলেছে।’
বাবার শক্ত চোয়াল দেখে লাগছে, বারবার ‘আপনার মেয়ে’ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন।
‘তাহলে কি এটা বুঝাতে চাচ্ছেন, আপনাদের ছেলের কোনোকিছুতে হাত নেই?’
‘আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে বাধ্য সন্তান হওয়ার মতো করে বড় করি। এই ধরনের ছেলেরা কাউকে টোকা দিলেও কাচুমাচু করে এসে মাকে জানায়। আবার এমন ছেলেকেই কিছু মেয়ে ভুলিয়ে বিপথে নিয়ে যেতে পারে। এর জন্য আমাদের ছেলে দায়ি নয়। কেউ রূপ দিয়ে তীর ছুঁড়লে পুরুষেরা ঘায়েল না হয়ে থাকতে পারে না।’
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, প্রসঙ্গটা বাবার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
আমি বলে উঠলাম, ‘বাধ্য সন্তান বানাতে পেরে এতটা গর্ব করবেন না আঙ্কেল। আপনাদের সে সন্তান এতোই বাধ্য হয়ে যায় যে, কোনো দোষ করে ফেললে কাউকে জানাতে পর্যন্ত ভয় পায়। বাধ্য হয়ে ওই কথা লুকিয়ে রাখে। সাদিক খুব সহজেই মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে প্রেম করা শুরু করতে পারত। কিন্তু আপনি এটিকে বিপথে যাওয়ার নাম দেওয়ায় ও কিছুই জানানোর সাহস পায়নি। নইলে তাকে আমি প্রথমদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম তার মা কেমন। সে বলেছিল খুব ফ্রেন্ডলি। সেই ফ্রেন্ডলি মাকেই সে জানাতো না?’
লোকটি তড়িৎ গতীতে উঠে দাঁড়ালেন। বাবাকে বললেন, ‘আমি আপনাকে বুঝাতে এসেছিলাম। কারণ আপনার মেয়েকে বুঝিয়েছি সে আমার কথা শুনেনি। যাইহোক, আশা করছি এখন থেকে মেয়েকে আপনারা বুঝাবেন।’
তিনি যাওয়ার পর বাবা কিছুক্ষণ নীরবে পায়চারি করলেন।
সোফায় বসে পড়ে ছোট মা বললেন, ‘আমি তোমাকে বলেছিলাম, মেয়ের দিকে নজর রাখ। অন্তত সেদিন যা শুনলে তার পর থেকে তো তাকে ছাড় দেওয়া একদমই যায় না। কে জানে, মিথ্যা বলে কালরাত সে সাদিকের সাথে থেকেছে কিনা।’
‘ছোট মা..’ বাবার দিকে অসহায় হয়ে তাকালাম, ‘বাবা, আমি এতোটা নীচ নই। আমি স্বপ্নার বাসায়ই গিয়েছিলাম।’
‘তাই বুঝি?’ ছোট মা বললেন, ‘তাহলে দেখি তো মেয়েটিকে ফোন দাও।’
আমি একরাশ ঘৃণা নিয়ে স্বপ্নার বাসায় ফোন দিলাম। ওর মা-বাবা হয়তো এখনও ফেরেনি। স্বপ্না ফোন রিসিভ করেছে।
ফোন লাউড স্পীকারে রেখে ছোট মা বললেন, ‘স্বপ্না, কাল কি অনু তোমার বাসায় ছিল?’
সে ইতস্তত করে বলল, ‘হ্যাঁ। কেন?’
বাবাকে ছোট মা বললেন, ‘আমার লাগছে বান্ধবীর সাইড নিচ্ছে। নইলে লোকটি এভাবে সিরিয়াস হয়ে বাসায় চলে আসবে কেন?’
আমাকে বাবার সামনে খারাপ করার জন্য তিনি এতো কিছু বলছেন, বাবা বিরোধ করছেন না দেখে আমার তামাশা চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।
ছোট মা সীমাই অতিক্রম করে বললেন, ‘স্বপ্না ফোনটা তোমার ভাইয়াকে দাও তো।’
নাহিদ ভাইয়াকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, ‘কই, সে তো এখানে আসেনি। আর অসময়ে যে কারও বাসায় ফোন করবেন না।’
আমি ওখানে বজ্রাহতের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম। বাবা আবার পায়চারি শুরু করেছেন। এইবার তো পোড়ার মতো কিছু নেই। তিনি এখন কী করবেন? কথাটি ভাবতেই উত্তর এসে গেল ছোট মায়ের কাছ থেকে।
‘এই ধরনের মেয়েদের বেশিদিন বাসায় রাখা যায় না বুঝলে? ওকে বিয়ে দিয়ে দাও।’
‘বাবা প্রসঙ্গটা কোথায় এগুচ্ছে বলুন তো?’
তিনি নিজ ঘরের দিকে চলে গেলেন।
‘বাবা..’ তিনি ফিরে তাকালেন না। ছোট মাও তাঁর পিছুপিছু চলে গেলেন। ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজ ঘরে চলে গেছে। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম, এতক্ষণ যা হলো তা কি কোনো দুঃস্বপ্ন? তাই হয়তো হবে।
আমি নিজ ঘরে গেলাম না। শাহনাজ আপার একগাদা কথা শোনার চেয়ে ভালো সোফায় ঘুমিয়ে পড়া। এতকিছুর পরও আমার খুব তাড়াতাড়ি ঘুম চলে এসেছে।

কয়টি দিন এবং কয়টি রাত আমার এক ঘরে বদ্ধ থেকেই পেরিয়ে গেছে হিসেবটা এখনও ক্লিয়ার হচ্ছে না। হতে পারে এক সপ্তাহ। কিংবা তারও বেশি। ছাদে দাঁড়িয়ে কালো আকাশ দেখে ব্যর্থ হিসেব করতে লাগলাম। এভাবে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো জীবন করলেও আমি এখনও উপলব্ধি করতে পারছি না বন্দি পাখিদের দুঃখ কেমন হয়। জীবনের কিছু পর্যায়ে হয়তো দুই স্তরের লোকে খুব মিল এসে যায়, কিন্তু তাদের ভাবনার মিল হয় না। আমার ক্ষেত্রে হয়তো মিল হয়নি সাদিকের কারণেই। তার মুখটি দেখার প্রত্যাশা আমার মনে এতোই জায়গা দখল করে রেখেছে যে, অন্য কোনো দুঃখ তেমন আমল পায়নি।
গানের আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলাম। সেই পরিচিত সুর ফরহাদ ভাইয়ার! আজ প্রথম আমার ওখানে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। গেলে হয়তো কোনো এক সাথী নামের মেয়েকে দেখব না। সে হয়তো এখন সংসার করছে। আমার ক্ষেত্রেও কি অমন হবে?
আজ বাসায় অনেকদিন পর হলঘর খালি থাকায় আমি সোফায় পা তুলে বসে পড়লাম। আমার খুব করে পালাতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু আমি কোথায় যাব? বর্তমান থেকে পালাতে তো পারব। কিন্তু ভবিষ্যৎ আমাকে পিছু ছাড়বে না। আমি হয়তোবা স্বপ্নার বাসায় আশ্রয় নিতে পারি। কিন্তু এতটা নির্লজ্জ হওয়ার কথা ভাবতে পারছি না। যে লোক আমাকে আত্মসাৎ করতে না পেরে মিথ্যে বলতে পারে তার মুখও আমি দেখতে চাই না।
আজ আবার ওঁদের কী হয়েছে? নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার পর ওদের কথা আমি শুনতে পেলাম। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই আমার সম্বন্ধেই কথা বলছে।
‘ছেলেটি দেখতে-শুনতে খারাপ নয়। আমি বলি ওকে বিয়ে দিয়ে ফেল। অনু ওর মায়ের জেদ পেয়েছে। এমন জেদি মেয়েদের জীবনে চাপ না পড়লে তাদের শিক্ষা হয় না।’
‘ছেলেটি কেমন?’
‘আমার এক খালুর দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয় ওয়াজেদ এখানে থাকে। এই দুই বছর আগে এখানে এসেছে। ছেলেটি দেখতে খারাপ নয়। অবিবাহিত ছিল জেনে অনুর কথা তাকে বলে দেখি। কিন্তু ছেলেটি বিয়ে করে ফেলেছে। তবে সেই ওই ছেলেটির কথা বলেছে। ওর নাম তুষার। এখানে থাকে না। ছেলেটির ছবি দেখিয়েছে আমাকে। দেখতে-শুনতে ভালো। সে বলেছে তুষার যেমন-তেমন কোনো লোক না। তার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পর্যন্ত সাহস পায় না। আমি বলি, এমন লোকের কাছেই অনুকে দেওয়া উচিত। তুমি নরম হওয়ায় দেখলে তো ওর মা কীভাবে তোমার মুখের উপর কথা বলে চলে গেছে। মেয়েটিও যা তা করার সাহস পেয়ে গেছে। এমন লোকের কাছে তুমি ওর বিয়ে দাও, উল্টাপাল্টা কিছু করার সাহস পাবে না। আর যাও, ও বাসায় আছে কিনা দেখে আসো।’
‘আরমিন, আমি আর কিছু শুনতে চাই না। বাকি যা করার আমি করব।’
ছোট মা কি এখন জয়ের হাসি হাসছেন? তিনি এভাবে বাবার মাধ্যমে আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবেন না।
এক সপ্তাহ পর। সাদিক আমার বাসার সামনে এসেছে। এই খবর আমাকে রুবী ভাবি নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়ার ভান করে নিচে নিয়ে জানালেন। আমি সাদিককে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের মাঝেই আর রইলাম। আজ কতদিন পর! কতদিন পর আমি আপন বলতে পারব এমন কাউকে পেলাম। ভাবি বলল, ‘কেঁদো না। যাও ওর কাছে যাও। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ আসবে না।’
আমি যাওয়ার পর সাদিক আমার হাতগুলো ধরল। আমার বাকরোধ হয়ে যাওয়ায় কিছু বলতে পারছি না।
সে বলল, ‘আরও দুইবার এসেছি। তোমাকে দেখতে না পেয়ে আর আমাকে কেউ দেখবে ফেলার ভয়ে চলে গিয়েছি। বলো, কেমন আছ তুমি?’
‘ভালো।’
‘মিথ্যা বলো না। নইলে ভাবি তোমাকে লুকিয়ে আনতেন না।’
‘কীভাবে দেখিয়ে আনবেন? এইমাত্র আমাকে না জানিয়ে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমাকে কি অন্য কোনো ছেলের সাথে দেখা করতে দেওয়া ঠিক হবে?’
‘বিয়ে? এটা সম্ভব নয়। আমি তোমায় ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারব না অনু। এই কথা কখনও ভেবেও দেখিনি।’
‘আমি পালিয়ে বিয়ে করতে চাই না। তোমার মা-বাবা আমার কারণে কষ্ট পাক আমি তা চাই না।’
‘আর চাচু যতদিন আছেন, তোমাকে তিনি মেনে নেবেন না। এখানে তাঁর আসার পর থেকে তো একদমই না।’
‘তিনি ভেবে বসেছেন, আমি আমার মায়ের মতো হব। একদিন তোমায় ছেড়ে দেবো।’
‘শুনো, আর মাত্র একটি মাস অপেক্ষা করো। চাচু নিজ বাড়িতে ফিরে যাবেন। এখানে আর কখনও আসবেন না। তাকে জানাতেও হবে না, আমি কাকে বিয়ে করেছি..’
‘আমার দুইদিন পর বিয়ে।’
সে বজ্রাহত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
‘জানো, আমি কিছু একটা করে ফেলব ভেবে চাচু আমার বিয়ে দিয়ে ফেলার কথা বলছেন? বাবা বেশিকিছু বলতে পারছেন না। কারণ.. আমরা চাচুর দেওয়া জমিতে থাকছি, যেটা বাবার জন্য নানুর শেষ স্মৃতি। চাচু ছলেবলে নিজের করেছিলেন। ওসব বাদ দাও। চল। আমরা বিয়ে করে ফেলি।’ সে আমার হাত টানল। আমি নড়লাম না।
‘সাদিক, নির্মম একটি সত্য এটাই, আমি তোমাকে আমার প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছি। কিন্তু আমি তোমাকে কম ভালোবাসিনি। তাই তোমার জীবনে আমি একটি দাগও লাগতে দিতে চাই না। আমাদের বিয়ে তোমার পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। হয়তোবা একদিন আমার কোনো কাজে তাঁরা মনে করতে পারে তোমার চাচুর কথা শোনা উচিত ছিল।’
‘আমি তোমাকে যেটুকু চিনি, সেটুকুই যথেষ্ট এটা বলার জন্য যে, তুমি আমার হাত কখনও ছাড়বে না।’ সে আমার হাত আরও চেপে ধরল। এমন সময় ভাবি আসায় সে আমাকে ছেড়ে দেয়।
আমি বাসায় ফিরে এলাম। পরদিন রুবী ভাবি আমাকে লুকিয়ে একটি চিঠি দিলেন। সাদিকের চিঠি।
অনু, তোমার এখন অজানা কাউকে বিয়ে করা ছাড়া পথই নেই। কিন্তু তোমাকে আমি একটি সুযোগ দিচ্ছি। তুমি একমাস পর বিবাহিতা কিংবা অবিবাহিতা যেভাবেই আসো না কেন আমি তোমাকে নিজের স্ত্রী করে নিব। কারণ ওই অ্যালবামটির পর এটিও তোমার পাওনা। তুমি আমাকে আমার পরিবারের জন্য যে বিসর্গ করে দিয়েছ।
কিন্তু আমি এতটা দয়ালু নই অনু। আমি সবসময় তোমাকেই আমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে দেখেছি। অন্য কারও কথা কল্পনা করিনি। তোমাকে আপন করার ইচ্ছেটা কবে এতটা প্রবল হয়েছে জানি না। তোমার ওই চোখগুলোকে না দেখে আমি থাকতে পারি না। অনু, আমি তোমাকে অন্য কারও হতে দিতে চাই না। তোমার চেয়ে মা-বাবাকে বেশি ভালোবাসি বলে আজ আমার হাত বাঁধা। তোমার মাধ্যমেই এটা হয়েছে। তোমাকে আমি যতবার দেখেছি, ততবার নিজেকে লাকি মনে করেছি এই ভেবে যে, আমার মা-বাবা নিষ্ঠুর না, আমাকে খুব ভালোবাসে।
আমি তোমার কথা ভেবেছি। কীভাবে তুমি অজানা এক লোককে বিয়ে করবে? আমি ব্যাপারটা ভাবতেই পারছি না। তোমার কথা ভেবেই বলছি, পরশু রাতে আমি তোমার বাসার নিচে অপেক্ষা করব। তুমি না এলে একটি মাস পর চাচু চলে গেলে তোমাকে আমি যেকোনো জায়গা হতে খুঁজে বের করব। এই আমার কথা রইল।
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, এটি সাদিকেরই লেখা। এ যেন নতুন কোনো সাদিক। আমার মনে হলো, আমিই যেন কোনো স্বপ্নে ভাসছি। আমি ফিরে যাব সাদিকের কাছে। খুব বড় একটি পাওনা আদায় করে আমি ওর কাছে ফিরে যাব।
‘জীবনটা জুয়াখেলা নয়। কয়টি জীবন নিয়ে খেলবে তুমি?’
শাহনাজ আপা মূর্তির মতো টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।
‘আমি খেলছি না। জীবন আমার সাথে খেলছে।’
‘তুমি এটুকু মনে রেখ, এখন তুমি যে পথে যাবে, সে পথই নির্ধারণ করবে তুমি কোন অনন্যা হতে চাও।’
(চলবে..)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে