“জ্যোৎস্নার ছল”পর্ব ১৫.

0
998

“জ্যোৎস্নার ছল”পর্ব ১৫.

স্বপ্না তুষারের ছবি নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ চুপ করে আছে।
‘কিছু বল স্বপ্না।’
‘আমি কী বলব? ওয়াও, তুষার। তুই এমন অ্যাটিটিউডের একটা হ্যান্ডসাম লোকের সাথে সংসার করেছিস?’
ওর কাছে আর কীই বা আশা করা যায়।
‘স্বপ্না, মজা করিস না।’
‘ওকে করছি না। তাহলে তুই সাদিককে বিয়ে করবি?’
‘হ্যাঁ।’
‘কিছু মনে করিস না। একটা কথা বলি, তোর বাবার কাছে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তুই তুষারকে বিয়ে করে ফেলেছিস। চেয়েছিস, তুষারের অবাধ্য হয়ে বাবাকে কষ্ট দিবি। কিন্তু পারিসনি, উল্টো তার মায়ায় পড়েছিস। এখন তুষারকে ভুলতে তুই সাদিকের আশ্রয় নিবি? একদিন আবার আরেকটা কিছুর সম্মুখীন হবি। এভাবে লাইফের সাথে জুয়া খেলিস না। আরেকজনকে দেখাতে গিয়ে তুই নিজেই হাস্যকর হয়ে দাঁড়াবি।’
‘আমি লাইফের সাথে খেলছি না। লাইফ আমার সাথে খেলছে। তাছাড়া আমি আর তুষার একে অপরকে ত্যাগ করেছি। তুষার এখন আমার জন্য কেউ না। আমি স্বেচ্ছায় অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারি।’
‘তা ঠিক। কিন্তু একবার ভেবে দেখ, সাদিক ভাইয়ের কথা। তার ভেতরটা কি এখনও দেখতে পারছিস না? নাকি দেখতে চাস না? সাদিক ভাই এমন এক লোক, যিনি তার প্রেমিকাকে আরেকটি লোকের হাতে তুলে দিয়েছে, যতই ওই লোকটি তাকে কথা দিক। তিনি একসময় তোকে ভালোবাসলেও এখন তোকে আত্মসাৎ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।’
‘অন্তত সে তুষারের মতো খারাপ না।’
‘তাহলে তোকে খুশি দেখাচ্ছে না কেন?’
আমি তার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না।
‘শোন, আমার কথা। সুখকে খুঁজতে গিয়ে তুই সুখকে অতিক্রম করে ফেলছিস। সত্যটা তোর মন জানে। কারও তাতে পৌঁছিয়ে দেওয়ার দেরি। কারণ সবাই সবকিছু উপলব্ধি করতে পারে না। ওইজন আমি হতে পারছি না। কাল শুক্রবার। তুই কাল সকালে আরসিতে যাবি। ফরহাদ ভাই কতটা ফেমাস হয়েছে বলার মতো নয়। তিনিই তোকে পথ দেখাবেন। তোর মনের রোগটা ধরিয়ে দেবেন। যদি কিছু না হয়, তবে যতক্ষণ গন্তব্য পাবি না, ততক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যাবি।’
উচিত একটি কথা বলেছে সে। কিন্তু আমার চোখের পর্দায় ভাসছে ফরহাদ ভাইয়া নয়, জ্যোতির্ময় দুটি চোখ।
আমি পরদিন অনিচ্ছাসত্ত্বেও জোহরা টেইলার্সের উপরের তলায় যাওয়ার কথা ভাবলাম। জায়গাটি আরেকটু উন্নত হয়েছে। আরসি-এর সাইনবোর্ডের নিচে আরও দুটি লাইন সংযোজিত হয়েছে। নিশ্চয় ফরহাদ ভাইয়ার কারসাজি। আমি ঢুকে প্রথমে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখানে ফরহাদ ভাইয়া আছেন? আমি একটি সমস্যা নিয়ে এসেছি।’
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

‘জ্বি, জ্বি ভেতরে আসুন।’
ভাইয়া আমাকে দেখে চমকে গেছেন।
‘বসো চেয়ারে।’
তার চেয়ারের সামনে একটি টেবিল। টেবিলের এধারের চেয়ারে আমি বসলাম।
‘কেমন আছ অনন্যা?’
আমার মাঝে হঠাৎই দারুণ অপরাধ বোধ কাজ করছে। সেদিন ভাইয়ার কারণে না হলেও বাবা অন্য কারও কাছে শীঘ্রই আমার আর সাদিকের সম্বন্ধে জানতে পেতেন।
‘ইটস ওকে অনন্যা। সে সময় যে কারও খারাপ লাগত। আমারও উচিত ছিল, এসব ভুলে গিয়ে তোমায় বিদায় দিতে আসা। তাহলে বলো, আমি তোমার কী কাজে আসতে পারি?’
‘আমি খুব খারাপ একটি পরিস্থিতিতে পড়েছি। মাথা ঠিক কাজ করছে না। মনে হয়েছিল, পথ দেখানোর জন্য কেউ একজনের প্রয়োজন।’
‘আর তুমি কি মনে করো সেটা আমি?’
আমি তার দিকে তাকালাম। কিন্তু কিছু বললাম না।
‘আই সি। তাহলে তোমার তার কাছেই যাওয়া উচিত। কারণ আমি যতই ভালো কিছু বলি না কেন তোমার মনের চিকিৎসা সেই ভালোভাবে করতে পারবে। যাও তার কাছে।’
ফরহাদ ভাইয়া আমাকে তার নিজ বাসারই পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, যেখানে একসময় আমিও থাকতাম। ছোট মা আমাকে দেখে চোখ ছোট করে তাকালেন। কিছু বলেননি। বাবা সোফায় বসেছিলেন। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন। আমি ভাবছি, তাঁর মাঝে যদি আবেগ আসে, তবে আবেগটা কেমন দেখাবে? তা কি বড্ড বেমানান দেখাবে?
বাবা আর ছোট মায়ের নজরকে উপেক্ষা করে আমি আমার ঘরে চলে আসি। জায়গাটি এখনও তেমনই আছে। কেবল পড়ার টেবিলে সালমার বইয়ের ছড়াছড়ি। আমি সেই প্রিয় শেলফটির কাছে দাঁড়ালাম। এটি কিন্তু আগের মতো হয়ে গেছে, বইয়ে ভর্তি। আমার পছন্দের বইয়ে ভর্তি। বাবাই নিশ্চয় করেছেন। উপরের তাকে এখনও সাদা কাপড়ে মোড়ানো কোরআন শরীফটি আছে।
শাহনাজ আপা পেছন থেকে বললেন, ‘এখনও বাবাকে ক্ষমা করছ না?’
‘আমার জীবনের সাথে তিনি..’
‘হায় তোমার জীবন! এরচেয়ে ভালো ভালো মানুষের জীবন নরকে পরিণত হয়েছে। তারা তবু জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে। তাছাড়া তোমার কিন্তু এখনও সুযোগ আছে সব শুধরে নেয়ার। এই তো সময় তোমার বাবার ঘনিষ্ঠ হওয়ার। যদি হও, তবে তোমার ছোট মা এই সম্পর্কে আসতে পারবে না। আরেকটি কথা বলো, নিজেকে তোমার মা-বাবার চেয়ে আলাদা ভাবতে ভাবতে তুমি কি নিজের চরিত্রকে তাদের চরিত্রে পরিণত করছ না? তুমি দেখতে সুন্দর, এটা শুনতে শুনতে কি তোমার মায়ের মতোই তোমার মাঝে অহংকার আসেনি? তোমার বাবা তোমার মাকে যেমন যান্ত্রিকভাবে ভালোবেসে এসেছে, তুমিও কি সাদিককে তদ্রূপ ভালোবাসতে যাচ্ছ না?’
‘মা-বাবার খারাপ গুণগুলো আমার মাঝে আসার জন্য তো আমি দায়ি নই। এটাই সিস্টেম।’
‘সিস্টেমকে দৃঢ় মনোবল নিয়ে পাল্টানো যায়। আমরা ভালোমন্দের সংমিশ্রণে তৈরি হবই। পরেরটা আমাদেরই দায়িত্ব, নিজের মধ্য থেকে মন্দকে সরিয়ে দেওয়া। যদি করতে পার, তবে কেউ তোমাকে বলতে আসবে না তুমি বাবামায়ের মতো হয়েছ। তুমি যদি ভিন্ন কিছু করে দেখাতে পার, তবে দেখবে তোমার আপন একটি গুণ আছে।’
‘সবকিছু আমারই কেন করতে হবে? আমার কী দোষ? পরিস্থিতি আর আশেপাশের মানুষ কি দায়ি নয়?’
‘শোন, আগে এটা শোন। একপ্রকার মেয়ের বৈশিষ্ট আমি বলি। এমন মেয়ে অনেক পাওয়া যাবে, তারা আপন জগতের সর্দার। তারা কারও বাধা মানে না। কারও বাধ্য হওয়াকে ছোট মনে করে। তাই কারও আশীর্বাদও পায় না। ব্যস, হেয়ালিপনা করে যায়। যে সম্পর্ক ছেঁড়ার পথে, তা জোড়া লাগানোর ক্ষমতা তাদের নেই, বা ক্ষমতাটি দেখাতে চায় না। এক অপ্রীতিকর সত্য কী জানো, এমন মেয়েরাই অশান্তি সৃষ্টি করে, একের অধিক জীবন নষ্ট করে। আধুনিক সমাজে এইরকম মেয়ের কমতি নেই। অনুর কমতি নেই। কিন্তু পরিস্থিতি আর মানুষ যেমনই হোক, এই ধরনের মেয়েরা একটু চেষ্টা করলেই সঠিক-ভুল নির্ধারণ করে চলতে পারে। আফসোস, তারা সময় থাকতে করে না। এখন যাও। এখন তুমি যে পথে যাবে, সে পথই নির্ধারণ করবে তুমি কোন অনন্যা হতে চাও। সত্যিই অনন্য হতে চাও কিনা।’
(চলবে..)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে