জন্মটা পতিতালয়ে Part 10 (last Part)

0
1936

জন্মটা পতিতালয়ে
লেখকঃ Arian Sumon..
Part 10 (last part)
..
দেখতে পেল তিন চার জন লোক একজন কে ধরার চেষ্টা করছে। ধরেও ফেলেছে।
আকাশ দৌড়ে সেখানে যায়। এবং দেখে একজনের হাতে ছুড়ি এবং একজনের হাতে পিস্তল। অন্য দুজন লোকটিকে ধরে রেখেছে।
আকাশঃ এই এই কি করছেন

বলতে বলতে লোকটির দিকে খেয়াল করে দেখে সে আর কেউ নয় সামিয়া।

আকাশঃ ম্যাম আপনি?
সামিয়াঃ আকাশ তুমি এখান থেকে চলে যাও প্লিজ।
আকাশঃ নাহ যেতে পারব না। মরলে একসাথেই মরব।

এই বলে আকাশ সামিয়াকে ছুটাইতে যায়। একজনকে লাথি মেরে ফেলে দেয়।
অন্য জন ছুড়ি দিয়ে আকাশের হাতে আঘাত করে। রক্ত বেড়িয়ে পড়ে।।
অন্যজন সামিয়াকে তাক গুলি করে। আকাশ কোনোরকমে নিজের উপর গুলি টা নিয়ে নেয়।।

আকাশ অজ্ঞান হয়ে যায়। আর গুন্ডা গুলো পালিয়ে যায়।


অপারেশন থিয়েটারের সামনের সামিয়া সামিয়ার আব্বু আম্মু।ভিতরে আকাশের অপারেশন চলছে।

সামিয়া কেদেই চলেছে।।

সামিয়ার আব্বুঃ কাঁদিস না মা। ও ভালো হয়ে যাবে।
সামিয়া কেঁদেই চলেছে।

সামিয়ার আব্বুঃ আজ এই তোমার জন্য ছেলেটার অবস্থা। ছেলেটাকে অপছন্দ তোমার। তাই বলে এত বড় মিথ্যা কথা বলবা ওর নামে। ছিহ মমতা ছিহ। ঘৃণা লাগছে তোমার উপর।
সামিয়ার আম্মুঃ i am sorry…প্লিজ মাফ করে দাও। আমি অনুতপ্ত।
সামিয়ার আব্বুঃ মাফ আমার কাছে না চেয়ে যার সাথে অপরাধ করছ তার কাছে গিয়ে চাও।

অন্যদিকে সামিয়া ভাবছে। আমার মা এত নিকৃষ্ট কাজ কি করে করল। ভেবেছিলাম আজকে আকাশ কে আপন করে নিব। কিন্তু মা এই মিথ্যে বানোয়াট কথা গুলো বলে দিলো সব নষ্ট করে।

আসলে সামিয়া আকাশ কে খুজতেই বেড় হয়েছিল।
খুলেই বলি।

আকাশ বাড়ি থেকে বেড় হয়ে আসার পরে। সামিয়া নিজের রুমে চলে যায়।

সামিয়ার আম্মুও নিজের ঘরে যায়। ওনাকে অনেক খুশি দেখাচ্ছিল।

খাবার টেবিলে সামিয়া নেই।
সামিয়ার আব্বু আর আম্মু খাবার খাচ্ছিল। তখন সামিয়ার আব্বু সামিয়ার মাকে খুশি দেখে। জিগাসা করে

সামিয়ার আব্বুঃ কি ব্যাপার আজ এত খুশি কেন?
সামিয়ার আম্মুঃ তা জেনে কি করবা?
সামিয়ার আব্বুঃ না বললে নাই। তবে আকাশ কোথায় দেখছিনা যে।
সামিয়ার আম্মুঃ বেড় করে দিছি।
সামিয়ার আব্বুঃ মানে
সামিয়ার আম্মুঃ বলছিলাম না ওরে আমার সহ্য হয়না। তাই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ওরে বাড়ি থেকে বেড় করে দিছি। আর আমি বেড় করিনি। সামিয়া নিজেই ওরে বেড় করে দিছে।
সামিয়ার আব্বুঃ ছিহ তুমি নিচু মাইন্ডের। লজ্জা লাগছে তুমি নাকি আমার স্ত্রী
সামিয়ার আম্মুঃ ঠিকই আছে । আমি মা হয়ে কিভাবে মেয়ের জামাই হিসেবে একটা পতিতার বাচ্চাকে সহ্য করব।
সামিয়ার আব্বুঃ আমি এখনি গিয়ে সব সামিয়াকে বলব।
সামিয়ার আম্মুঃ বললে তুমি আমার মরা মুখ দেখবে

এমন সময়েই,,
সামিয়াঃ বাহ মা বাহ মা। সেই বলছ।
সামিয়ার আম্মুঃ সামিয়া তুই…. আমি
সামিয়াঃ থাক মা আর কিছু বলতে হবেনা আমি শুনেছি। ছিহ মা ছিহ আমার লজ্জা লাগছে তুমি নাকি আমার মা। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তোমার এত সমস্যা কিসের আমি বুঝিনা। তোমার নজরে ঐ বড় লোকের বাজে লম্পট ছেলেটা আমার জামাই হতে পারে। কিন্তু আকাশ হতে পারেনা। কারন সে কি পতিতা নামক একটা নিকৃষ্ট নামের সাথে জড়িত বলে। আর তোমার ওই বড় লোকের ছেলে তো প্রতিদিনি এইসব পতিতার কাছেই যায়। সে আমার হাজবেন্ড হতে পারে। কিন্তু আকাশ হতে পারেনা। দুষ করলে করেছে আকাশ কে যে জন্ম দিয়েছে সে। কিন্তু ওই মহিলা তো এখন ঠিকই ভালো আছে শুধু ভালো নেই আকাশ। কারন সমাজ প্রতিনিয়ত তাকে পতিতার বাচ্চা বলে দূষে দিচ্ছে। লজ্জা লাগছে আমার খুব লজ্জা লাগছে।
এসব বলতে গিয়ে সামিয়া কেদে দিল
সামিয়ার আব্বুঃ আমার এই জীবনে অনেক ছেলে দেখেছি কিন্তু ওর মতো ভদ্র মার্জিত ছেলে একটাও দেখিনি। যদিও ও একটা খারাপ জগতে ছিল তবুও ও যথেষ্ট ভালো। আর ও সামিয়ার সান্নিধ্যে দিন দিন আরো বেশি ভালো হচ্ছিল। আর তুমি একজন মা হয়ে কি করে এত নিকৃষ্ট কাজ করতে পারলা।
সামিয়াঃ বাবা আমি আকাশ কে খুজতে যাচ্ছি। তারাতারি না করলে জানিনা ও আবার কোন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়বে।
সামিয়ার আব্বুঃ হ্যা মা যা। খুজ পাইলে সোজা বাড়িতে নিয়া আসবি।

এই ছিল কাহিনি। তারপর তো জানেনই।

এবার বাস্তবে ফিরি,,,,

বাহিরে সবাই আকাশের সুস্থতা কামনা করছে।

এমন সময় ডাক্তার বেড় হলো। সামিয়া এগিয়ে গেল।

সামিয়াঃ ডাক্তার ওর কি অবস্থা??
ডাক্তার সাহেবঃ আলহামদুলিল্লাহ। ওনি এখন সুস্থ্য। তবে জ্ঞান ফিরতে একটু দেড়ি হবে।
সামিয়ার আব্বুঃ আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ ডাক্তার।
সামিয়াঃআমরা কি ভিতরে যেতে পারি
ডাক্তারঃ না এখন না একটু পর ওনাকে কেবিনে শিফট করা হবে। তখন দেখা কইরেন। তবে একজন মাত্র
সামিয়াঃ ওকে ডক্টর।

কিছুক্ষন পরেই আকাশকে কেবিনে শিফট করা হলো।

সামিয়া আকাশের পাশে বসে আছে। সামিয়ার কেঁদেই চলেছে।

কারন সে জানে রহমান চাচার কাছ থেকে শুনেছে যে আকাশ তাকে অনেক ভালোবাসে। যার যাচাই করার জন্যই বাড়িতে এসেছিল খুশি মনে। কিন্তু তারপর যা হলো।।

যাহোক পরদিন সকালে আকাশ চোখ মেলে। চোখ খুলেই দেখে সামিয়া ওর পাশে বসে আকাশের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।

আকাশ বিশ্বাস করতে পারছেনা কি হচ্ছে। সামিয়া তার বুকে মাথা রেখেছে। ভাবতেই আনন্দ লাগছে।
আকাশ সামিয়ার চোখের দিকে খেয়াল করে দেখে চোখ ফুলা ফুলা। বুঝতে বাকি রইল না যে সামিয়া কাল অনেক কেঁদেছে।
সামিয়া তার জন্য কেঁদেছে। ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে।

আকাশ খেয়াল করে সামিয়ার মুখের সামনে কিছু চুল।
আকাশ হাত বাড়িয়ে দেয় চুল সড়াবে বলে। কিন্তু পরক্ষনেই আবার হাত সড়িয়ে আনে।

সামিয়াঃ কি হলো সড়িয়ে দাও
আকাশ অভাক হয়ে যায়।
আকাশঃ ম্যাম আপনি
সামিয়াঃ সড়িয়ে দাও আগে

আকাশ চুল গুলো সড়িয়ে দিল।

সামিয়াঃ কে বলেছিল আমার জন্য এসব করতে?
আকাশ ভাবল আজ আর কিছুই লুকাব না। যা সত্য তাই বলে দিব।
আকাশঃ যাকে ভালোবাসি তাকে কিভাবে মরতে দেখব বলেন
সামিয়াঃ ভালোবাসো কাকে??
আকাশঃ আপনাকে সেই প্রথমদিন থেকেই
সামিয়াঃ বলেছ কখনও?
আকাশঃ বলার মতো সাহস হয়নি।
সামিয়াঃ হুম ভিতুর ডিম। আমিও ভালোবাসি তোমাকে। কবে থেকে এই অনুভুতি নিজেও জানিনা। নিজেই অজান্তেই তোমার জন্য ছোট্ট মনে জায়গা হয়ে গেছে। ভালোবেসে ফেলছি তোমাকে।
আকাশঃ সত্যি??

সামিয়া আকাশ কে জড়িয়ে ধরে। আকাশ ও সামিয়াকে জড়িয়ে ধরে।

এর মধ্যেই সামিয়ার আব্বু আম্মু ভিতরে ডুকে যায়। সবাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায়।

যাহোক সবাই সামলে নিল।

সামিয়ার আম্মু এসে আকাশের পাশে বসল।

সামিয়ার আম্মুঃ বাবা আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। সব কিছুর জন্য আমি অনুতপ্ত। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আকাশঃ আহ কি করছেন মা। সন্তানের কাছে মা কখনো ক্ষমা চায় নাকি। আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।

সামিয়ার মায়ের চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে যায়। আকাশ হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দেয়।। সামিয়ার আম্মু আকাশের কপালে চুমু একে দেয়।



সামিয়া আর আকাশ বাসর ঘরে বসে আছে। হ্যা ঠিকই শুনেছেন। সামিয়ার আব্বু আম্মু আকাশ আর সামিয়াকে আবার বিয়ে দিয়েছে পারিবারিক ভাবে।

আকাশ বাসর ঘরে ডুকল। গিয়ে দেখে সামিয়া বসে আছে।

আকাশ গিয়ে বসল। তারপর সামিয়ার ঘুম টা উঠাল।
আকাশ বিশ্বাস করতে পারছেনা। তার স্বপ্ন রানীকে এখন থেকে সে নিয়মিত পাবে। আকাশ আস্তে করে সামিয়ার কপালে চুমু দিল।
সামিয়া লজ্জায় আকাশ কে জড়িয়ে ধরে।
আকাশঃ আচ্ছা আপনি ওইদিন এত রাতে বাহিরে কেন গিয়েছিলেন।
সামিয়াঃ আপনি?? আপনি করে কাকে বলছ?
আকাশঃ আপনাকে
সামিয়াঃ বউকে কেউ আপনি করে বলে??
আকাশঃ তাহলে??
সামিয়াঃ তুমি করে বলো গদ্দপ।
আকাশঃ ওহ আচ্ছা তুমি।
সামিয়াঃ ওইদিন তোমাকে খুজতেই গিয়েছিলাম।
আকাশঃ ওইলোক গুলো কারা জানো??
সামিয়াঃ কয়েকদিন আগে একটা গুন্ডাকে ধরেছিলাম। তার সাথের লোক।
আকাশঃ ওহ আচ্ছা।
সামিয়াঃ এখন কি আমরা এসব বলব নাকি কিছু করবা
আকাশঃ কি করব
সামিয়াঃ ন্যাকা কিচ্ছু জানেনা।
আকাশঃ জানি করব।

বাকিটা ইতিহাস।।।।

THE END..
সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে