কে কোথায় যায়? পর্ব ২৩

0
570

কে কোথায় যায়? পর্ব ২৩
শুভা একটু দূরে অবস্থান করল তামিমের থেকে।তারপর ঢোক গিললো,ধীরে সুস্থে বলল,
——–‘ভুটান একটুও ভালো লাগতেছে আমার!ইন্ডিয়া তো পাশের দেশ’ই,চল ওখানে যাই।’
তামিম আড়ষ্ট ভাব নিয়ে বলল,
——–‘টাকা তো সীমার মাঝে আবদ্ধ।এত টাকা কই পামু?’
শুভা খানিক ভাবলো,খানিক না অনেক ভাবলো।তারপর নির্বিকার গলায় বলল,
——–‘ভুটান ঘুরে দেখার জন্য চার দিনের যে বাজেট এনেছি সবাই তা দিয়ে তো যাওয়া যায়।’
তামিম লাফ দিয়ে নিজ হাতে তালি দিয়ে বলল,
——–‘হোয়াট এ আইডিয়া মাই ডিয়ার!’
কথাটা বলেই তামিমের মুখের ভাবভঙ্গি পাল্টে গেল।শুভার পাশে এসে বলল,
——–‘তুই একটু আমার দিকটা দেখিস দোস্ত!’
শুভা চুপ।হোটেলের দেয়ালে ঝুলে থাকা ফ্রেমটার উপর যেন এখন সে পিএইচডি করতেছে।তামিম বসলো।
নীহারিকা দৌড়ে এসে শুভার পাশে বসল।জোরে জোরে নিশ্বাস নিল।পাশে রাখা জগ থেকে পানি খেল।কপালে থাকা ঘামের বিন্দুগুলো মুছলো।তারপর বলল,
——-‘তোদের এখানেই পাইলাম।সবাই কই?কই বলতো?রাফির সাথে রাজ্যের ঋণ শোধ কইরা আসলাম।জানিস,সে বলে আমার থেকে ও আমাকে বেশি ভালোবাসে,কিভাবে?’
তামিম জোরপুর্বক হাসলো।আড়চোখে শুভার দিকে তাকিয়ে বলল,
——-‘ভালোবাসা তো একেই বলে পাগলী,একটু অনুভব করে দেখ।’
নীহারিকা ধারালো কন্ঠে বলল,
——–‘আরে রাখ তোর অনুভব টনুভব!’
শুভা গিয়ে নীহারিকার গ্রীবা ধরলো।হাসিমুখে বলল,
———‘আচ্ছা ওসব কি আর ধরে রাখা যায়?যা,রাফির কাছে যা।’
রাফি ততক্ষণে শুভার রুমে প্রবেশ করলো।হাপাতে হাপাতে বলল,
——–‘সে আর কই এল?আমি’ই চলে এলাম বাপু,রাগিনীর এত রাগ তা পরখ করতে করতে গায়েল আমি।’
তামিম হাসলো আয়েশ করে।
নীহারিকা চটপটাং করে বলল,
——–‘তুমি আমারে কই ভালোবাসো?রুদ্র কেমন করে ভোরকে নিয়ে বেড়ায়,আর তুমি?কচু আমার!’
শুভা চোখ কপালে উঠালো।ভ্রু কুচকিয়ে বলল,
———‘এত কিছু কবে থেকে ঘটছে ওদের?’
নীহারিকা মুখ ভেঙচিয়ে বলল,
———‘এটার খবর তুই আর কখন রাখবি?তোরটা নিয়েই আছিস প্যাঁচালে!’
শুভা হতচকিত!হতচকানো কন্ঠে বলল,
——–‘কিসব বলিস রে?আমার কি?’
তামিম কথা আটকালো।নির্বিকার গলায় বলল,
———‘শুন তোরা,আমি আর শুভা কলকাতায় যাচ্ছি। শুভা কলকাতা ঘুরবে,ভুটান সে আরেকবার নাকি ঘুরেছে ফুফির সাথে এসে,এবার কলকাতা যাবে।তোরা যাবি?’
রাফি হ্যাঁ বলতে যাবে, ঠিক তখনই নীহারিকা নাকোচ করলো।বলল,
———‘না বাপু,এখানেই থাকি।তোরা যা,ইনজয় কর।’
শুভা নাছোড়বান্দা।বলল,
———‘আমিও যাবো না তাইলে।কাল সকালে যাবার প্লান ছিল।’
রাফি কিছু আচ করে বলল,
——–‘না শুভা,ভুটান ঘুরব মোরা।তুই কলকাতায় ইনজয় কর।’
শুভা তামিমকে বলল,
——–‘বল না ওদের,আমাদের সাথে যেতে হবে ওদের!’
তামিম চোখ দিয়ে ইশারা করল নীহারিকাকে। নীহারিকা চট করে উত্তর দিল,
———‘ওকে মা আমার!’
—————————————
আগের দিনের ভ্রমন ক্লান্তিতে সকালে ঘুম ভাঙ্গতে একটু লেট হয়ে যায় রুদ্র ও ভোরের। ঘুম থেকে উঠেই তারপর হোটেলের নিচেই নাস্তা সেরে ফেলে।
প্রথমে ভোর একা এত লম্বা জার্নি করতে না চাইলেও রুদ্র থাকে বুঝায়।ভোর বলে,
———‘সবাই না গেলে কেমন লাগে?একসাথে এলাম আর যাব একা?’
রুদ্র হাসলো।বলল,
——–‘আসুন তো,ওরা ওদের মতো বেড়াক।’
নাস্তা করার পর তাসি নামক একটি অপারেটরের সিম কিনে।সিম কিনার জন্য পাসপোর্টের এর কপি লাগে। তারপর বেরিয়ে পুনাখা ও হা ভ্যালির জন্য পারমিশন নিতে। পারমিশনের জন্য পাসপোর্টের কপি আর ভুটান ভিসার কপি সহ একটি ফরম ফিলাপ করে জমা দেই। ১ ঘন্টা পর পারমিশন দিবে। ওরা কাগজপত্র জমা দিয়ে ১ঘন্টা সময় নষ্ট না করে বেড়িয়ে পড়ে বুদ্ধা পয়েন্ট এর উদ্যোশ্য।
বুদ্ধা পয়েন্ট যাওয়ার আগে ওরা একটি ভিউ পয়েন্টে নামে। সেখান থেকে পুরো থিম্ফু শহরটা দেখা যায়।
ভোর উৎসাহ নিয়ে বলল,
———‘এখানে একটু থাকি?’
রুদ্র স্লান হেসে বলল,
——–‘ওকে!’
ভোর লাফাতে লাফাতে বলল,
——-থ্যাংক ইয়ু!’
ওরা সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত করে চলে যাই বুদ্ধা পয়েন্ট। বুদ্ধা পয়েন্ট একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত।তাই অনেকগুলো সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। বুদ্ধা পয়েন্টে কিছু সময় কাটিয়েও ছবি তোলে ওরা ফিরে আসে। আসার সময় ওরা আপেল বাগানের সামনে নামে।
রুদ্র আপেল খায়।ভোর নাক ছিটকিয়ে বলে,
———‘আপেল খান?মজা নাই একটুও।কালো বিচি থাকে ভিতরে,দেখলেই বমি আসে।’
রুদ্র নির্বিকার গলায় বলল,
———‘নেন, খাবেন?আমার সাথে থাকলে সব খাওয়া শিখবেন।’
বাগানের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ। তাই বাইরে থেকেই দেখে নিল দুজন। আপেল তখনো পরিপক্ক হয়নি।দু’একটা যা পেকেছে, মালি রুদ্রকে দেখে একটা আপেল দিয়েছিল। তারপর ওরা ইমিগ্রেশন অফিসে চলে যায় এবং পারমিশন পেপার নিয়ে হোটেল এ ফিরে আসে। বিকেলে আমরা একটি মনেস্ট্রি ঘুরে দেখে। এরপর যায় হেরিটেজ মিউজিয়াম।
তারপর আমরা চলে যায়, ওয়াকিং বুদ্ধা দেখতে। এটি একটি পার্ক এর ভিতরে অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে থিম্ফু চু। ভুটানিজ ভাষায় চু মানে হল নদী। নদীর তীরে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে চলে যাই আর্চারী গ্রাউন্ড।
সেখানে তীরন্দাজদের হাতের নৈপুন্য দেখে চলে আসলাম ক্লক টাওয়ার। এই ক্লক টাওয়ার জায়গাটা ভাল লাগার মত একটা যায়গা। এখানে কেউ গান গাইছে। কেউ ডান্স করছে। কেউ উদ্ভ্রান্ত হয়ে বসে আছে। কেউবা বই পড়ছে। কেউ আড্ডা দিচ্ছে। এর আশেপাশে খাবারের দোকান আছে।
ভোর বাচ্চা কন্ঠ এনে বলল,
——–‘আপনার খিদে নেই?আমার তো ভীষণ পেটে লেগেছে।’
রুদ্র চারদিক দেখে একটা হোটেল দেখল। সেখান থেকে কিছু ফুড টেস্ট করল।
সন্ধার পর লোকাল ফ্রুটস খুজতে লাগল রুদ্র । কিছুক্ষন খোজার পর সবজি মার্কেটে কিছু ফ্রুটস পেল । ভুটানে সবচেয়ে বেশী যে ফলটি পাওয়া যায় সেটি হল ‘পিচ’। তারপর ভুটানের মার্কেটে ঘুরল দু’জন। একটা জিনিস খুব ভাল লেগেছে ভুটানে, বাংলাদেশের অনেক প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। বিশেষ করে প্রানের প্রডাক্ট।
সবশেষে ভোর লাফাতে লাফাতে বলল,
———‘আপনি আজ যা যা দেখালেন,সবটার জন্য ধন্যবাদ!’
চলবে…..
©ইভা আহমেদ চৌধুরী
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে