এটা গল্প হলেও পারতো পর্ব-১৩+১৪

0
678

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ১৩+১৪
অর্ক কাল থেকেই একটু গম্ভীর হয়ে আছে, আজ ওই ছেলে মেয়েগুলোই আবার আসবে, অদিতির ওপর ঠিক ভরসা রাখতে পারছে না ও। একে তো কিভাবে কে জানে দিতির সন্দেহ বাতিক হওয়া নিয়ে কলেজে অনেকদিন আগে থেকেই একটা রটনা ছড়িয়েই আছে, তার মধ্যে যদি আজ আবার সবার সামনে কিছু করে বসে ও, তাহলে আর কলেজে মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না ওর। কিন্তু ওরও তো কোনো উপায় নেই, ওদের সিলেবাস টা তো শেষ করাতেই হবে ওকে। পরীক্ষার আগে ওদের কোনো ভাবেই বিপদে ফেলতে পারবে না ও।

সকাল থেকেই নিজের মনের ভেতরের ওঠা ঝড় টাকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিতি, কোনো মতেই আজ নিজেকে ওই সন্দেহর জালে জড়াতে দেবে না ও। অর্কর সম্মান ওর হাতে এখন, ওকে কোনো ভাবেই স্টুডেন্টদের সামনে ছোটো হতে দেওয়া যাবে না।

খাটে বসে ছেলে কে আদর করতে করতে অর্ক ওর দিকেই তাকিয়ে আছে লক্ষ্য করছিলো দিতি। ওর খুব খারাপ লাগছিলো, অর্ক কি ওকে একটুও বিশ্বাস করছে না! কাল ও ওরকম বলে ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু ওদের ঠোঁটের মুচকি হাসিটা ও কল্পনা করেছে, এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে ওর। কিন্তু ওকে কেউ বিশ্বাস করেনা এখন, এমন কি নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করেনা ও, তাই অর্ক যখন বললো ওটা ওর কল্পনা ও সেটা মেনে নেবার চেষ্টাই করলো তর্ক করে লাভ নেই! ওর কারোর কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই, শুধু একটাই চেষ্টা ওর সঙ্গে অর্কর যেনো আর কোনো সমস্যা তৈরি না হয়।

অর্ক তো নিজেও যে সরে যাচ্ছিলো এটা স্বীকার করলো না, কিন্তু ও তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলো ওটা, কিন্তু আর জটিলতা বাড়াতে চায়না ও। কিন্তু অর্কর ওর দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকা টা ওর খুব খারাপ লাগছে, সত্যিই নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে, এই অপমানটা ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না, নিজের কান্না লোকাতে ওখান থেকে উঠে গেলো দিতি।

আজ ছেলে কে ঘুম পাড়াতে এসেও কিছুতেই ওর নিজের ঘুম আসছে না আর, খাটে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে দিতি। ড্রইং রুম থেকে অর্কর পড়ানোর আওয়াজ ভেসে আসছে, বিকেল হয়ে এসেছে, চায়ের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আজ আর উঠলো না দিতি। ও যদি বেরিয়েই ওই রকম কিছু দেখে আবার! তার থেকে এই ভালো, অর্ক আগে উঠে এসে ডাকুক ওকে, তখন না হয় উঠবে ও।

উঠেছ ঘুম থেকে? চা করবে নাকি?

অর্কর গলার আওয়াজে উঠে বসলো ও,

হ্যাঁ করছি, যাও তুমি, আমি চা নিয়ে আসছি,

শান্ত মুখে কোনো দিকে আর না তাকিয়েই সোজা রান্না ঘরে ঢুকে গেলো দিতি। চা করে বেরিয়ে ওদের সামনে রাখতে গিয়ে দেখলো অর্ক আবার পড়াতে শুরু করেছে, এবার একটা আলাদা চেয়ারে একা বসে আছে ও। স্টুডেন্টরা সব সোফায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, ও কারো দিকে না তাকিয়েই চায়ের ট্রেটা রেখে ঘরে ঢুকে এলো।

অর্ক কে আলাদা চেয়ারে বসে থাকতে দেখে ভীষণ লজ্জা লাগছে ওর, ইস নিশ্চয়ই কাল ওর ঐ রকম কথার জন্যেই অর্ক আজ আর কারোর সঙ্গে সোফায় বসে নি। নিজের কাছে নিজেই ছোটো হয়ে যাচ্ছিলো ও, বড্ড নোংরা মন হয়ে গেছে ওর!

প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে, এই সময় প্রতিদিনই একটা ব্রেক দেয় অর্ক, একসঙ্গে বেশিক্ষন টানা পড়ানো স্টুডেন্টরাও নিতে পারেনা। এই সময় আরেক বার চা করতে হবে, ছেলে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে, ওকে কোলে নিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো দিতি। দু তিনটে ছেলে নিচে নেমে গেলো, বোধহয় একটু ঘুরে আসবে, কয়েকজন অর্কর সঙ্গে স্টাডি তে ঢুকেছে, তিনটে মেয়ে সোফায় বসে নিজেদের মোবাইল দেখতে ব্যস্ত।

ওকে ছেলে কে নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকতে দেখেই ওদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে উঠে এলো, মেয়েটা কে ও বোলপুর স্টেশনে দেখেছিলো মনে পড়লো দিতির,

ম্যাম, ওকে আমাকে দিন,

ছেলের দিকে হাত বাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসলো মেয়েটা, ওর সুবিধাই হলো, ছেলে কে নিয়ে চা করা একটু অসুবিধের, গরম সসপ্যানে হাত দিয়ে দেয় ও।

নাম কি তোমার?

চায়ের জল প্যানে ঢালতে ঢালতে ছেলে কে কোলে নিয়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা কে জিজ্ঞেস করলো ও।

তিয়াসা,

অদিতি একটু চমকে উঠে সামলে নিলো নিজেকে, এর কথাই না অর্ক বলেছিলো ওকে! এই তো গয়না কেনার সময় মতামত দিয়েছিলো। কিন্তু এই মেয়েটা তো সেই মেয়েটা নয়, যাকে ও নাম জিজ্ঞেস করেছিলো, সেতো অন্য মেয়ে ছিলো। কথা বলতে বলতে একটু পরেই বেশ ভালই লাগলো মেয়েটাকে, টুকটাক গল্প করছিলো ওর সঙ্গে, সেদিনের অর্কর ওপর সন্দেহের জন্যে লজ্জাই লাগছিলো একটু।

কথা বলতে বলতেই হটাৎ করে স্টাডি থেকে বেরিয়ে এসে অন্য একটা মেয়ে সরাসরি রান্না ঘরে ঢুকে এলো, এই মেয়েটাই তো ওকে নিজের নাম রিয়া বলেছিলো, মনে পড়লো অদিতির।

ম্যাম, আপনি ঘরে যান, আমি করে নিচ্ছি, আমরা কফি খাবো এবার,

ও কিছু বলার আগেই তাকের ওপর থেকে কফির কৌটো আর চিনির কৌটোটা নিয়ে নিলো মেয়েটা।

তুমি কফি কোথায় আছে জানলে কি করে?

অবাক গলায় বললো অদিতি, ও নিজের বিস্ময় আর চেপে রাখতে পারছিলো না, মেয়েটা ওর বাড়িতে কোথায় কি থাকে জানে সেটা!

আমি তো এখানে এলেই মাঝে মাঝেই কফি করে খাওয়াই ওকে,

কি বললো মেয়েটা? মাঝে মাঝেই খাওয়ায়? তাও আবার ওকে বললো? স্যার না বলে!

কয়েক সেকেন্ডের জন্যে স্তম্ভিত হয়ে গেলো দিতি, ওদের কথা বলতে দেখে আস্তে আস্তে করে বাইরে বেরিয়ে গেছে আগের মেয়েটা লক্ষ্য করলো ও। এই তবে সে যে ওর না থাকার সময়ে বাড়িতে আসে!

সেই সময় রান্নার দিদির কথা শুনে ওর মনে হয়েছিলো যে অর্ক কারোর জন্যে কফি করেছিলো, অর্ক কফি করা কবে শিখলো এটাই তো ও ভেবে গেছে এতোদিন! কিন্তু এখন বুঝতে পারছে আসলে অর্ক নয় কফি এই মেয়েটা বানিয়েছিল, যে কাপ রান্নার দিদি দেখেছিলো। এই মেয়েটাই তো গয়না পছন্দ করেছিলো ওর জন্য! সব পুরনো ঘটনাগুলো যেনো চোখের সামনে কেউ সাজিয়ে দিলো ওর! এতদিন ধরে কি সম্পূর্ন অন্ধকারে ছিলো ও!

ঠিক আছে, তুমি কফি করো তাহলে,

যা বলার ও অর্কর সঙ্গেই কথা বলবে, এখানে একটা কথাও বলবে না ও, আর কোনো কথা না বলে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে বাইরে বেরিয়ে আসা কান্নাটাকে গিলে নিয়ে,মেয়েটা কে রান্না ঘর ছেড়ে দিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে এলো অদিতি।

কফি খাওয়া পর্ব শেষ করে স্টুডেন্টরা আবার পড়তে শুরু করেছে, ঘর থেকে শুয়ে শুয়েই শুনতে পাচ্ছিলো দিতি। ওর ঘরে ঢুকে আসার কিছু পরেই ছেলে কে ওর কাছে ফেরত দিয়ে গিয়েছে তিয়াসা, হাতে ওর মোবাইলটা নিয়ে বসে আছে ছেলে, ওকে কোনো জ্বালাতন করছে না, চোখটা বন্ধ করে নিলো দিতি। এতদিন পরে ও সব কিছু পরিষ্কার বুঝতে পারছে, ওর রান্না ঘরে ঢুকে কি সুন্দর ওকেই বার করে দিলো মেয়েটা!

ও তো বিশ্বাসই করে নিয়েছিলো সব কিছু, অর্ক কে একটুও সন্দেহ করছিলো না, আজ যদি এই ঘটনা টা সামনে না আসতো তবে তো ও কোনোদিনও জানতে পারতো না এই ব্যাপার টা। অর্কও এক মুহূর্তের জন্যেও ওকে বুঝতে দেয়নি কিছু! কি সুন্দর অভিনয় করে গেছে আজ প্রায় বছর দেড়েক ধরে! আর ও ও নিজেকে পাগল ভেবে গেছে শুধু! ও রান্নার দিদির কাছে কফির কাপের গল্প শোনার পরেও কেনো জিজ্ঞেস করলো না অর্ক কে কিছু, এখন খুব আফসোস হচ্ছে!

স্টুডেন্ট দের ব্রেক দিয়ে স্টাডিতে এসে পরের দিনের জন্যে নোটসগুলো গুছিয়ে রাখছিলো অর্ক, কাল আবার একটা নতুন ব্যাচ আসবে, আজ এদের শেষ হলো। ওর পেছনে পেছনে কয়েকজন ঢুকে এসেছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিজেদের মতো বই দেখছিলো তারা।

আর চা খেতে ইচ্ছে করছে না, কফি খাবো এবার, তোরা খাবি কেউ,

অর্ক ঘুরে তাকিয়ে দেখলো, রিয়া কফি আনার জন্যে উঠে দাঁড়িয়েছে ততোক্ষনে।

কে করবে তুই? খাওয়া যাবে তো?

পেছন থেকে দীপের টিপ্পনির আওয়াজ ভেসে এলো, রিয়া কোমরে হাত দিয়ে অর্কর দিকে তাকিয়ে তৎক্ষণাৎ আবদারের গলায় বললো,

স্যার, আপনি বলুন আপনাকে আমি করে খাইয়েছি না কফি, ভালো করিনি?

অর্ক হেসে ফেললো,

হ্যাঁ, রিয়া ভালো কফি করে, খেয়ে দেখতেই পারো, সেদিন অনেকেই ওর কফির প্রশংসা করেছিলো,

কিন্তু রিয়া রান্না ঘরে ঢুকলে আবার বিরক্ত হবে না তো দিতি, মুখে হ্যাঁ বললেও মনে মনে একটু চিন্তায় পড়লো অর্ক। ও তো বোধহয় এতক্ষনে চা করতে শুরু করে দিয়েছে, এখন আবার কফি! রিয়া কে এখন ও আটকাতেও তো পারছে না আর, অন্যরাও কফি খেতে চাইছে! কি করবে না করবে ভেবে ওঠার আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো রিয়া।

রিয়া কফি নিয়ে ফিরে আসার পর ওর দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করেছিলো অর্ক। ওকে কি খুব অপমান করেছে দিতি! কিন্তু দেখে তো সেটা মনে হচ্ছে না, বেশ তো খুশি মুখেই কফি নিয়ে ঢুকলো, একটু একটু করে টেনশন টা কাটিয়ে উঠছিলো অর্ক। দিতির কোনো রাগের গলাও শোনা যাচ্ছে না, তাহলে কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি নিশ্চয়ই। ও এতো করে বুঝিয়েছে অদিতি কে তারপরে আর নিশ্চয়ই কোনো বোকামি করবে না ও। কফি শেষ করে আবার চেয়ারে বসে পড়াতে শুরু করলো অর্ক।

আরো প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পরে পড়ানো শেষ হলো, এক এক করে স্টুডেন্টরা বেরিয়ে যাচ্ছে, অদিতির ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালো ও। শেষ পর্যন্ত যে ঠিক মতো কোনো অশান্তি ছাড়াই মিটে গেছে আজকের দিনটা এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছিলো ওর। দিতি চোখের ওপর হাত চাপা দিয়ে শুয়ে আছে, পেছন ফিরে, ওর কি শরীর খারাপ! ছেলে একমনে মোবাইল নিয়ে খেলছে ও ফিরেও দেখছে না!

ঘুমোচ্ছো নাকি?

খাটে বসে জিজ্ঞেস করলো ও, চোখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো অদিতি।

রিয়া? তাই না? এই নামই তো মেয়েটার? ওকেই বিয়ে করতে চাও তুমি?

ঠান্ডা গলায় ওর দিকে তাকিয়ে বললো অদিতি,

রিয়া! ছি ছি, তুমি একদম পাগল হয়ে গেছো দিতি, ও আমার ছাত্রী,

চমকে উঠে বললো অর্ক, এই ভয়টাই তো এতক্ষন পাচ্ছিলো ও।

ছাত্রী বুঝি বউ বাড়িতে না থাকলেই এসে কফি বানিয়ে খাওয়ায়? স্যার কে ও বলে ডাকে?

মানে? ও বলে ডাকবে কেনো? স্যার বলেই ডাকে!

তাই! আর কফি? সেটাও বানায় না তো?

শ্লেষের গলায় বললো অদিতি,

ও একবারই এর আগে এখানে এসেছিলো দিতি, তখন বানিয়েছিল, তুমি ছিলেনা তখন, তোমাকে বলা হয়ে ওঠেনি আর,

তাই? বলা হয়ে ওঠেনি তাই না! নাকি বলতে চাওনি? আজ ধরা পড়লে, তাই বলতে বাধ্য হলে তাই তো? একদিন বানিয়েছিল? কিন্তু ও তো বললো অনেকবার বানিয়েছে,

ও বললো তোমাকে? এতবড় মিথ্যে কথা! কেনো ও এই মিথ্যে কথাগুলো অহেতুক বলবে তুমি বলতে পারো আমাকে? নিজের কল্পনাগুলো কে নিজের মতো করে অন্যের মুখে বসিয়ে দিও না দিতি। ওদের সামনে পরীক্ষা, আজকের পরে আর কোনোদিনও ওরা আসবে না এখানে, আমার সঙ্গে আর দেখাও হবেনা হয়ত সারাজীবনেও। এই কথাগুলো কলেজে ছড়িয়ে পড়লে আমার সমস্যা হবে, সেটা তুমি বুঝতে পারছো কি!

আর ও যে আমাকে স্যার বলেই ডাকে, এটা প্রমাণ করতে আমার এক সেকেন্ড লাগবে, কিন্তু তার জন্যে অন্য স্টুডেন্ট দের ডাকতে হবে, সেটা করলে আমার সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না দিতি। এতো করে বোঝালাম তোমাকে, তাও তুমি একই জিনিস করেই যাচ্ছ বারবার।

আমি ছেলের কথা ভেবেই তোমার এই পাগলামি গুলোকে এতো দিন ধরে মেনে নিচ্ছিলাম কিন্তু সত্যিই আমি আর পারছি না বিশ্বাস করো। এবার তোমার যা মনে হয় করো তুমি, আর আমি আটকাবো না তোমাকে, যদি থাকতে চাও আমার সঙ্গে তাহলে থাকো, কিন্তু থাকতে না চাইলে যা ইচ্ছে তাই করো, আর কোনো রকম অভিযোগের জবাব আমি তোমাকে দেবো না,

কথাগুলো বলেই বেরিয়ে যাবার জন্যে পেছন ফিরেই চমকে গেলো অর্ক, তিয়াসা ওর সামনেই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষন ধরে চলা ওর আর দিতি র সব কথাই যে ও শুনে ফেলেছে সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলো ও।

স্যার, আমার মোবাইল টা,

ওকে ওর দিকে ঘুরতে দেখেই কাঁচুমাচু মুখে বললো ও, অর্ক ওর দৃষ্টি লক্ষ্য করে তাকিয়ে দেখলো ওর ছেলের হাতে ধরা তিয়াসার মোবাইল। কোনো কথা না বলেই ছেলের হাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে ওর হাতে দিয়ে দিলো অর্ক, ওর পেছন পেছন বাইরে বেরিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সোফায় এসে মাথা নিচু করে বসে পড়লো ও, আর কারোর জানতে বাকি থাকবে না এবার, তিয়াসার কল্যাণে কালকের মধ্যেই এই কথাগুলো সারা কলেজে ছড়িয়ে পড়বে।

#এটা গল্প হলেও পারতো
#পর্ব ১৪
কলেজের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো মাঠের কোনায় একটা দলের সঙ্গে তিয়াসা বসে আছে, নিজের মনের মধ্যেই একটা লজ্জা লাগছে ওর, নিশ্চয়ই তিয়াসা ওদের কে সব কিছুই বলে দিয়েছে এতক্ষনে। গোটা কলেজ আজ ওর দিকেই তাকিয়ে থাকবে, ভাবতেই পা টা কেমন আড়ষ্ঠ হয়ে গেলো, আস্তে আস্তে নিজেকে শক্ত করে টিচার্স রুমের দিকে এগোতে লাগলো অর্ক।

স্যার, আপনাকে কিছু বলার ছিলো আমার,

কখন যে তিয়াসা ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করে নি অর্ক। চমকে উঠে পেছন ফিরে তিয়াসা কে দেখেই লজ্জা লাগলো ওর, নিজেকে যথা সম্ভব শান্ত রেখেই ওর দিকে তাকালো অর্ক,

বলো, কিছু ডাউট আছে এখনও? অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে?

না স্যার, সে সব নয়, আমার অন্য কিছু কথা বলার আছে আপনাকে,

অর্ক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, ওর আবার কি বলার আছে!

স্যার, ম্যাম কাল বানিয়ে বলেন নি, সত্যি রিয়া ওগুলো বলছিলো ম্যাম কে, আমি রান্না ঘরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, নিজে কানে শুনেছি,

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে একদম চমকে গেলো অর্ক!

এদিকে সরে এসো,

এবার মেয়েটা কে একটা সাইডে সরিয়ে আনলো ও,

তুমি শুনেছ নিজে?

হ্যাঁ, স্যার, বলছিলো ও মাঝে মাঝেই আপনাকে বাড়িতে এসে কফি করে খাওয়ায়, এই কথাগুলো শুধু কাল ম্যাম কে বলেনি স্যার, আমাদেরও বলেছে অনেক বার। আর জানেন স্যার, ও এটাও বলেছে সবাই কে, ম্যাম খুব সন্দেহ করেন আপনাকে, তাই আপনাদের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে,

প্রায় এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললো তিয়াসা, অর্ক অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। একটু চুপ করে থেকে বললো,

তিয়াসা, একটা রিকোয়েস্ট করবো তোমাকে…

আমি জানি স্যার, আমি কাউকে কিছু বলবো না, আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন,

অর্ক কে থামিয়ে দিয়ে বললো তিয়াসা,

স্যার, আমিই যে এই কথাগুলো বলেছি, এটা কেউ যেনো না জানে প্লিজ। আসলে সবাই বন্ধু তো, নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল করতে পারবো না!

রিয়া কে একটু টিচার্স রুমে ডেকে দাও তো,

তিয়াসা ঘাড় নাড়লো,

ও আজ আসে নি স্যার, কিন্তু স্যার আপনি কিন্তু আমার নাম নেবেন না!

নেবো না, এমনি কথা বলবো, ওর ফোন নম্বর আছে তোমার কাছে?

ফোন নম্বরটা দিয়ে মেয়েটা চলে যাবার পর, অর্ক টিচার্স রুমে এসে বসে পড়লো। মেয়েটা সত্যিই এই কথাগুলো দিতি কে বলেছে! অর্ক র এখনও যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। একদম বোকা লাগছে নিজেকে! একটু পরেই অরিন্দম এসে ঢুকলো, ওকে গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে একটু অবাক হলো,

কি হয়েছে? আবার অদিতির সঙ্গে ঝামেলা নাকি?

অর্ক মাথা নাড়লো,

ঝামেলা ছিলো, এখন আর নেই! আমি বুঝলি তো পুরো বোকা হয়ে গেছি!

মানে?

চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো অরিন্দম, অর্ক গত দুদিনের ঘটনা খুলে বললো।

বলিস কি! কি সাংঘাতিক মেয়েরে! কিন্তু হটাৎ এরকম কেনো করলো বলতো? ডাক মেয়েটা কে, কথা বলি ওর সঙ্গে!

আসে নি আজ, ফোন নম্বর নিয়েছি! কিন্তু কিছু প্রমাণ তো করতে পারবো না! ওই তিয়াসা নামের মেয়েটা জানে সব, কিন্তু সামনে আসতে চায় না! আগেই বলেছে ও যে বলেছে এটা কেউ যেনো জানতে না পারে! তোর মনে হয় সবার সামনে ও স্বীকার করবে? যদি না করে তাহলে উল্টে আমিই বিপদে পড়ে যাবো।

অরিন্দম চিন্তায় পড়লো,

ঠিকই বলেছিস! এমনিতেও তো দিন কয়েক পর থেকেই আর আসবে না কলেজে! মিছিমিছি জল ঘোলা করে লাভ নেই কিছু! তুই একটু সতর্ক থাক বরং, আর ফোন করারও দরকার নেই!

কোনো রকমে পর পর দুটো ক্লাস শেষ করলো অর্ক, অদিতির সঙ্গে ফোনে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব, এখন মনে হচ্ছে রাগ দেখিয়ে আজ বেরোনোর সময়ে বলেও আসেনি ওকে। অদিতি অবশ্য অভ্যাস মতোই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলো, কিন্তু বুঝতে পেরেও ও ওপরের দিকে তাকায় নি। কাল খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে ও, বাড়ি গিয়েই ক্ষমা চাইতে হবে! কিন্তু যদি সব শুনে ফোনেই চেঁচামেচি করে! তাই বাড়ি গিয়েই সবটা বুঝিয়ে বলবে ঠিক করলো ও। দুটোর পরে ওর সব ক্লাস শেষ হয়ে গেলো, অরিন্দমের এখনও একটা বাকি আছে তাই আজ একাই কলেজ থেকে বেরিয়ে পড়লো অর্ক। বেল বাজাতেই দরজা খুললো মা, দেখে একদম চমকে গেলো ও,

তুমি ? কখন এসেছো? বাবা এসেছে?

পর পর অনেকগুলো প্রশ্ন করে ফেললো অর্ক, রুমা কোনো উত্তর দিলেন না, মনের মধ্যে চাপা টেনশন হতে লাগলো অর্কর। দিতি কি তবে বাবা, মা কে খবর দিয়ে এনেছে! মনে মনে ভাবতে ভাবতেই ঘরে ঢুকলো ও। সমরেশ সোফায় নাতি কে কোলে নিয়ে বসে আছেন, দিতি রান্না ঘরে কিছু করছে বোঝা যাচ্ছে, গোটা বাড়িতে একটা থমথমে পরিবেশ।

ছেলে ওকে দেখেই হাত বাড়ালো কোলে ওঠার জন্যে, এটা ওর প্রতিদিনের অভ্যাস, বাড়ি ফিরেই একবার কোলে নিতে হবে ওকে, অর্ক তাড়াতাড়ি হাত, মুখ ধুয়ে এসে ওকে কোলে নিলো। কয়েক মিনিট কোলে নিয়ে বারান্দায় ঘুরে আসার পরেই ছেলে শান্ত হয়ে গেলো, রুমা ওর কাছ থেকে ছেলে কে নিয়ে বললেন,

বাইরে যা, বাবা ডাকছেন তোকে,

মনের মধ্যে একটু অশান্তি নিয়েই এসে বসলো অর্ক, একটু পরেই অদিতি চায়ের কাপ রেখে গেলো, রুমাও নাতি কে কোলে নিয়ে পাশের সোফায় বসলেন। বড়ো কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস বুঝেই অর্ক মনে মনে প্রমাদ গুনলো।

নিজেদের সমস্যা নিজেরা মেটাতে পারো না? এরকম পরিস্থিতি কেনো তৈরি হয় বাড়িতে যে, আমাদের এসে ইন্টারফেয়ার করতে হয়? তুমি নাকি দিতি কে চলে যাবার কথা বলেছো?

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কড়া গলায় বললেন সমরেশ, অর্ক কিছু বলার আগেই অদিতি সমরেশের সোফার পেছনে এসে দাঁড়ালো,

বাবা, বিশ্বাস করো, আমি নিজেই আর থাকতে চাই না এখানে! তোমার ছেলে আমাকে পাগল প্রতিপন্ন করতে চাইছে, কিন্তু আমি তো নিজে জানি যে আমি পাগল নই! আগের বার ওকে অরিন্দম দার বন্ধু বোঝালো যে প্রেগন্যান্সি তে এমন হয়! আমি নাকি ডিপ্রেসন থেকে এসব বলছি, আমি মেনেও নিয়েছিলাম, গিয়েছিলাম কাউন্সিলরের কাছে! কিন্তু এখন তো আমি প্রেগন্যান্ট নই, ছেলে কে নিয়ে আমি নাকানি, চোবানি খাচ্ছি সারাদিন, কোনো ডিপ্রেসন নেই আমার, আমি জানি! তাও ও বলতে চায় যা আমি নিজে কানে শুনেছি সব ভুল!! নিজের অন্যায়গুলো কে ও আমার ঘাড়ে দিয়ে পার পেয়ে যেতে চাইছে, সেটা আমি এবার কিছুতেই মেনে নেবো না।

অর্ক কোনো উত্তর দিলো না, এই মুহূর্তে তিয়াসার কথাগুলো বলতে যাওয়া মানে যে আগুনে ঘি ঢালা সেটা বুঝেই চুপ করে রইলো। সমরেশ বিরক্ত হলেন, ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

তুমি জানো ও বাড়ি চলে যাচ্ছিলো! নেহাত আমি আর তোমার মা তোমাদের সারপ্রাইজ দেবো বলে হটাৎ এসে গেলাম তাই! বেয়াই মশাই অসুস্থ, উনি এসব জানতে পারলে কি হতো ভেবেছো তুমি?

অর্ক অবাক হয়ে গেলো, দিতি বাবার কাছে চলে যাচ্ছিলো! ওর যা রাগ! এখন যদি ও জানতে পারে ওই ঠিক, তাহলে কুরুক্ষেত্র বাধবে, ওকে কিছুতেই সকালের কথাগুলো জানতে দেওয়া যাবে না। অরিন্দম ঠিকই বলেছে, এমনিতেও তো ওরা আর কয়েকদিন পর থেকে আসবেই না, মিছিমিছি গন্ডগোল করে লাভ নেই! তার থেকে বরং ও দিতি র কাছে ক্ষমা চেয়ে ম্যানেজ করে নেবে!

আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করেছি? উত্তর দিচ্ছ না কেনো?

ছেলে কে চুপ করে থাকতে দেখে অধৈর্য্য গলায় বললেন সমরেশ, অর্ক দিতি র দিকে তাকালো,

সরি দিতি! আমার ওইভাবে কথা বলা উচিত হয় নি, ভবিষ্যতে কোনোদিনও হবে না এরকম আর,

দিতি মাথা নাড়লো,

তোমার সরি বলা না বলায় আমার কিছু যায় আসে না! তুমি যদি আজ কথা গুলো কে উইথড্র করেও নাও তাহলেও তো এটা বোঝায় না যে আমি সত্যি কথা বলেছি! তোমার ধারণা আমি বদলাতে পারবো না, তুমি আমাকে পাগল ভাবছো, ডিপ্রেশনের জন্য কাউন্সিলিং করিয়েছো, আমি সব মেনে নিয়েছি এতদিন! কিন্তু আর না! আমি কাল সামনে দাঁড়িয়ে বলা কথাগুলো কে কল্পনা করেছি, এটা ভাবতে আমি কিছুতেই রাজি নই! আমি এই অশান্তির থেকে মুক্তি চাই এবার, তুমিও ভালো থাকবে এতে! পাগলের সঙ্গে থাকা তো তোমার জন্যেও কষ্টকর তাই না? মিছিমিছি আমার জন্যে তুমি সবার কাছে ছোটো কেনো হবে বারবার?

এবার রুমা হস্তক্ষেপ করলেন,

আমরা জানি তুই পাগল নস! তোর মত বুদ্ধিমতি মেয়ে কজন আছে? আমি তোকে বিশ্বাস করি! কিন্তু ডিভোর্স কোনো সমস্যার সমাধান নয় মা, পরে বুঝবি সেটা!

বরং এটার একটা হেস্তনেস্ত করা উচিত এবার! কে ঠিক কে ভুল, সেটা জানতে হবে, সেরকম হলে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে হবে। নিজের স্ত্রী কে বিশ্বাস না করে তুমি বাইরের একটা অচেনা মেয়ে কে বিশ্বাস করছো, এটা ভাবতে আমার অবাক লাগছে,

পাশ থেকে বললেন সমরেশ, রুমা সহমত হলেন,

হ্যাঁ, তুই তাই কর! ডাক মেয়েটা কে, জিজ্ঞেস কর সব কিছু!

অর্ক টেনশনে পড়লো, এখন কি করবে ও! ও যে সব টা জানে সেটা যদি এখন প্রকাশ করে তাহলে তো সবাই ওকেই দোষারোপ করবে! জানতে চাইবে, সব কিছু জেনেও ও কেনো চুপ করে ছিলো। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে অদিতি এগিয়ে এলো,

দ্যাখো মা! ও কিন্তু জিজ্ঞেস করতে চায় না কিছু! কারণ ও জানে আমি সব সত্যি কথাই বলেছি! নিজের দোষ চাপা দেবার জন্যেই ও মেয়েটার মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করাতে চায় না কখনো! তাহলে তো ধরা পড়ে যাবে সব কিছু! আমি এখন নিশ্চিত এই মেয়েটাই আমাকে ফোন করেছিলো!

এবার অর্ক চেঁচিয়ে উঠলো, বাবা, মায়ের উপস্থিতি সম্পূর্ন ইগনোর করে বললো,

এবার তুমি কালকের ঘটনার সঙ্গে এতদিন আগের ঘটনাকেও রিলেট করে ফেলছো! বাহ! খুব ভালো! এরপরে আর কোনো কথাই থাকে না! যা খুশি করো তুমি! আর ধরা পড়ে যাবে মানে কি? কি এমন অন্যায় করেছি আমি, যে ধরা পড়ার ভয় পাবো?

এবার সমরেশও ধৈর্য্য হারালেন, রাগের গলায় বললেন,

রিলেট তো করবেই! আমি হলেও তাই করতাম! তুমি কেনো মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে চাইছো না? আমাকে বুঝিয়ে বল সেটা! এটার দুটো মানে হয়, হয় দিতি যা বলছে সব ঠিক, তুমি সব জানো! জেনেশুনে সব কিছু আড়াল করতে চাইছো! আর নয়তো তুমি বিশ্বাস করো না যে দিতি সুস্থ! তুমি সত্যিই ওকে পাগল ভাবছো!!আমি কিন্তু ওকে সুস্থ মনে করি, তাই আমি জানতে চাই তুমি কি ভাবছো?

আর কোনো উপায় নেই দেখে এবার মুখ খুললো অর্ক,

দিতি কে পাগল মনে করি না আমি, সমস্যা মেয়েটার, সেটা আমি আজই জানতে পেরেছি! কিন্তু আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই! তাই মেয়েটার সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা বলা সম্ভব নয়! সেই জন্যেই চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার,

সোফায় বসা বাকি তিনজন বিস্ফারিত চোখে অর্কর দিকে তাকালো, রুমা বিস্মিত গলায় বললেন,

এতো বড়ো কথাটা এতক্ষন বলিস নি তুই! শুধু প্রমাণ নেই বলে এতো বড়ো ঘটনা ঘটানোর পরেও মেয়েটা কে ছেড়ে দিবি!

দিতি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো, ওর ধারণাই কি সত্যি তবে! অর্কর সঙ্গে মেয়েটার কোনো সম্পর্ক সত্যিই আছে! সেই জন্যেই ও মেয়েটাকে কিছু করতে চায় না! সমরেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন,

আমি তোমাকে আর বিশ্বাস করতে পারছি না!! এতক্ষন ধরে তুমি চুপ করে ছিলে! আমরা তোমাকে বাধ্য করছিলাম মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে তাই আর কোনো উপায় না দেখে এই কথাটা বললে!

অর্ক মাথা নাড়লো,

আরে! সে জন্যে নয় বাবা! কোনো প্রমাণ ছাড়া এগুলো নিয়ে এগোনো যায়? তুমিই বলো! আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলেই তো ও আমাকে কে বলেছে তার নাম জিজ্ঞেস করবে! কিন্তু যে বলেছে সেতো সামনে আসতে চায় না! তাহলে আমি প্রমাণ করবো কি করে! মাঝখান থেকে গোটা কলেজে ছড়াবে!

এবার দিতি মুখ খুললো,

এতদিন তো চুপ করেই ছিলে! তাতে ছড়ায় নি কিছু? সবাই তো জানে আমি সন্দেহবাতিক! সেটাও তো ছড়িয়েছে! আটকাতে পেরেছো? এবার ছড়ালে ছড়াক, তবু আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো!

তুমি আমার সম্মানের কথা ভাববে না একবারও? অরিন্দমও আমাকে ইগনোর করতে বললো এসব, আমিও ভেবে দেখলাম ওরা কদিন পরেই চলে যাবে, তাই আর এইসব নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করতে চাই না।

কলেজ থেকে চলে যাবে, তোমার জীবন থেকে যাবে কি?

অর্ক কে থামিয়ে দিয়ে বললো দিতি, অর্ক অবাক চোখে তাকালো,

আমার জীবন থেকে মানে? তুমি এখনো ভাবছো ওর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক আছে! তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না!

দিতি হাসলো,

তুমি করো আমাকে? আমার বলা কথাগুলো কোনোদিনও বিশ্বাস করেছো? আর তোমাকে বিশ্বাসের কথা বলছো? বিশ্বাস করার মতো কোন কাজটা তুমি করেছো আজ পর্যন্ত? এতো লোক আছে চারপাশে, বলতো তাদের কার ফোন প্রতিদিনই বন্ধ বা সাইলেন্ট হয়ে যায় ভুলবশত? কে কোথাও বেড়াতে গিয়েও ফোন সাইলেন্ট করে কোনো খবর না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা বাইরে থাকে? একই ভুল দিনের পর দিন হয় কারো?

দিতি ঠিক বলেছে, আমি বহুদিন আগেই তোমার মা কে এই কথাগুলো বলেছি!! তোমার কাজকর্মই তোমাকে সন্দেহের তালিকায় রাখে সব সময়। যেকোনো ব্যাপারে তোমার ক্যাসুয়াল অ্যাপ্রোচ এর জন্যে দায়ী। সামান্য ব্যাপারগুলো কে তুমি নিজেই অসামান্য করে তোলো সবসময়। এই যে আজকের ব্যাপারটাই ধরো, আমরা চেপে না ধরলে তুমি কোনোদিনও এটা বলতে না আমাদের! তাহলে তো প্রশ্ন জাগবেই যে কেনো তুমি মেয়েটা কে বাঁচাতে চাইছো?

বিরক্ত গলায় দিতি কে থামিয়ে দিয়ে বললেন সমরেশ,

না বাবা, আমি মেয়েটা কে বাঁচাতে চাইছি না, কোনো প্রমাণ করার উপায় নেই তাই বাধ্য হচ্ছি। আর ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ এর কথা বলছো? হয়ত দু একবার এরকম হয়েছে, কিন্তু এটার আসল কারণ জাস্ট অশান্তি অ্যাভয়েড করা! আর কিছু না! হ্যাঁ মেয়েটা এটা বলেছে সেটা মানলাম! কিন্তু দিতিও এটা বিশ্বাস করলো তো? ও আসলে আমাকে একটুও বিশ্বাস করে না, সব ব্যাপারেই তিল কে তাল করা ওর স্বভাব। ওই যদি আমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে বাইরের লোকের আর কতক্ষন লাগবে এসব গন্ডগোল বাধাতে? শান্তিনিকেতনের কথা জানো তুমি? আমি জাস্ট একটু নিজে ক্রেডিট নেবার জন্যে বলেছিলাম যে আমি ওর গয়নাগুলো পছন্দ করেছি, ও সেটা নিয়ে কি কাণ্ডই করলো! কেনো আমি ওকে মিথ্যে কথা বলেছি, সেটা জানতে চাইলো। এটা তো মজা, এটাকেও সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো ও। তাহলে আমি কি করবো? বাধ্য হয়েই তো বলতে হয় আমাকে! আমি যখন সত্যি বলি তখনও কি দিতি আমাকে বিশ্বাস করে? করে না তো! মোবাইলটা যে আগের বার সত্যিই আমি সারারাত খুঁজে পাইনি, এর মধ্যে কিন্তু একফোঁটাও মিথ্যে ছিলো না, কিন্তু ওকে বিশ্বাস করাতে পারলাম কি? এমনকি একটা সামান্য কথা, রিয়া এখানে এসে কফি করেছিলো একবার। এটাও কি এতটাই জরুরি কোনো বিষয় যে ওকে মনে করে বলতে হবে? কিন্তু কাল এটা নিয়েই ও কতো কিছু বললো! আমি নাকি ওর কাছ থেকে ইচ্ছা করেই লুকিয়ে রাখতে চেয়েছি! তাহলে? তুমি হলে কি করতে? অশান্তি এড়ানোর জন্যে মিথ্যেই বলতে তাই না?

রাগের গলায় বললো অর্ক, রুমা কপালে হাত দিলেন, হতাশ গলায় বললেন,

তোদের দুজনেরই কোনো ম্যাচুরিটি নেই! তোরা তো নিজেরাই দেখছি ছেলেমানুষ, তোরা বাচ্চা মানুষ করবি কি ভাবে!!

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে