এক আকাশ দূরত্ব পর্ব-২৬

0
277

#এক_আকাশ_দূরত্ব (২৬)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

শান্তর মা ছেলের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
– “এই তোর বন্ধু এইসব কি করছে? আমাদের মান-সম্মান ডোবাবে নাকি!”

শান্ত কিছু বলতে পারল না। ওহ নিজেই বুঝতে পারছে না, আবরারের এইরকম ব্যবহারের কারন কি!

শ্রেয়ার বাবা সহ বাড়ির বড়োরা উপস্থিত হয়ে শান্তর‌ পরিবারের‌ সাথে আলাপ করতে লাগলেন। কিন্তু শান্তর সেইদিকে নজর নেয়, বারবার ওদিক সেদিক উঁকি দিয়ে আবরারকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছে।

আবির শান্তর পাশে বসে নিম্নস্বরে বলল,
– “কি ব্যাপার এদিক ওদিক তাকাচ্ছ, বউয়ের জন্য তর সইছে না বুঝি!”

শান্ত চিন্তিত কন্ঠে বলল,
– “একচুয়ালী সেটা নাহ। আবরার ভেতরে কোথায় চলে গেল অনেকক্ষণ হলো তাই খুঁজছিলাম।”

আবির কিছু না বলে মৃদু হাসল। দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা চলছে, সবাই রাজি। আবরার আর আবির আগে থেকেই সবাইকে সবকিছু বলে রাজি করিয়ে রেখেছিল, তাই আর হিটলার হিটলার গিরি করতে পারল না।

কিছুক্ষন কেটে যাবার পর, আবরার একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসার ঘরে আসলো। শান্ত বোঝার চেষ্টা করছে বাচ্চাটা আসলে কে! শান্তর পরিবার একটু বিরক্ত হচ্ছে আবরারের কান্ডে, ওনারা রীতিমতো উশখুশ করছেন আবরারকে দু-চারটে কথা শুনিয়ে দিতে পারলে শান্তি হতো। অচেনা জায়গায় পাত্রী দেখতে এসে পাত্রপক্ষের কেউ এইভাবে কিভাবে ঘোরাঘুরি করে!!

শ্রেয়ার বাবা আবিরের উদ্দেশ্যে বললেন,
– “আবির শ্রেয়াকে নিয়ে আসতে বলো তো একটু।”
– “জ্বি মামা।”

আবির উঠে ভেতরে চলে যায়। শ্রেয়ার বাবার চোখ পড়ে আবরারের উপর, মৃদু হেঁসে বলল,
– “আরে আবরার কখন আসলে? সেই কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম।”
– “এই তো কিছুক্ষন আগে আসলাম।”

সবকিছু শান্তর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আসলে এইখানে হচ্ছেটা কি!!

ওইদিকে,

নাজিয়া শ্রেয়াকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শ্রেয়া প্রচন্ড নার্ভাস।

– “এই নাজিয়া আমার খুব ভয় লাগছে।”
– “আরে ভয় কিসের। শান্ত’দা আর ঐর পরিবারই তো।”
– “তবুও আমার অনেকটা টেনশন হচ্ছে।”
– “কুল থাকো।”

আবির দরজায় নক করল,
– “এই নাজু শ্রেয়াকে নিয়ে বসার ঘরে আয়।”
– “চলো ডাক পড়ে গেছে।”
– “ভয় লাগছে।”
– “চলো তো।”

নাজিয়া শ্রেয়াকে জোর করে বসার ঘর পর্যন্ত নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়। শান্তর চোখ কপালে, এইখানে নাজিয়া!! শান্ত মনে মনে বলল,
– “নাজিয়া আবরার এইখানে, আসলে হচ্ছেটা কি!”

শান্তর সাথে ওর এক আন্টিও এসেছিল তার চোখ আটকায় নাজিয়ার দিকে।শ্রেয়ার সাথে শান্তর মা কথা বলে, তারপর শ্রেয়া আর শান্তকে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পাঠানো হয়।

ছাদে চারজন দাঁড়িয়ে আছে, শান্ত শ্রেয়ার সাথে কথা ধা বলে আবরারের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,

– “এই সত্যি করে বল তো কেসটা কি! তুই আমাদের সাথে আসলি তারপর হাওয়া হয়ে গেলি। তারপর ফিরলি একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে। আবার শ্রেয়ার বাবাও তোকে চেনে, নাজিয়াও এইখানে। বল‌ কেসটা কি?”

আবরার হা হা করে হেসে উঠল, শান্তর রাগ বাড়ছে এতটা সিরিয়াস মুমেন্টে ওহ হাসছে কিভাবে?

—-
বিয়ের আলোচনার একটা পর্যায়ে শান্তর আন্টি জিজ্ঞেস করল,
– “শ্রেয়ার সাথে যে মেয়েটা এসেছিল সে কে হয় আপনাদের?”
– “নাজিয়া আমার বোনপোর বউ।”
– “বউ!”

একটা বড়ো ঝটকা খেলেন উনি। আশা করেছিলেন নাজিয়াকে নিজের বউমা বানাবেন কিন্তু কপাল খারাপ।

শ্রেয়ার বাবা মুচকি হেসে বললেন,
– “হ্যাঁ নাজিয়া আমাদের আবরারের বউ। আপনারা তো আবরারকে চেনেন।”

ওনারা অবাক হলেন, আর অবাক হবারই কথা আবরারের পরিচয় ওনাদের কাছে অজানা ছিল। আবরার এই বাড়ির ছেলে সেই কারনেই এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিল।

সবাই আবার ভুল টপিক শ্রেয়াও শান্তর বিয়েতে ফিরে গেল। ওইদিকে, আবরারের উপরে বেজায় ক্ষেপে গেছে শান্ত। ছেলেটা যত ক্ষেপে যাচ্ছে আবরার ততই ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে মাঝখান থেকে নাজিয়া আর শ্রেয়া মজা নিতে ব্যস্ত।

শান্ত বিরক্ত হয়ে বলল,
– “ভাবি তুমি তো অন্তত বলো কেসটা কী।”

নাজিয়া নিজের হাসিটাকে চেপে রেখে বলল,
– “তোমাদের দুজনের মধ্যে হচ্ছে আমি এইখানে থার্ড পারসন হতে পারব না।”

শান্ত মুখটা বিকৃতি করল, ওরা দুজন না থাকলে আবরারকে কয়েকটা গালি দিয়ে দিত। কিন্তু ওদের সামনে দিতেও পারছে না, ইচ্ছা করছে মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।

আবরার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,
– “শ্রেয়ার ফুপাতো ভাইকে যদি কখনো সামনে পাস তুই কি করবি?”

শান্ত মুখ দিয়ে কিছু শব্দ ব্যবহার করতে গিয়েও গিলে নিল। তারপর বিরক্ত হয়ে বলল,
– “খু’ন করতে পারলে শান্তি পেতাম।”

আবরার নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে, সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
– “আমিই শ্রেয়ার ফুপাতো ভাই।”
– “ওহ…. কি!!”

শান্তর চোখে মুখে বিস্ময়, শ্রেয়ার দিকে তাকাতে ইশারায় বোঝাল হ্যাঁ আবরারই সেই ব্যক্তি। ভাগ্যিস শান্ত স্ট্রং হার্টের মানুষ নাহলে নির্ঘাত হার্ট এ্যাটাক করে ফেলত কথাটা শুনে।

– “তুই সে! তাহলে এতদিন বলিস নি কেন?”
– “সারপ্রাইজ দেব বলো।”
– “বাই দ্যা ওয়ে, বাচ্চাটা কে?”
– “সারপ্রাইজ।”

শান্ত মুখটা বিকৃতি করে হাত জোড় করে বলল,
– “থাক ভাই আর সারপ্রাইজ দেওয়া লাগবে না তোর।”

সবাই হেসে উঠল। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এইটাই তো শান্তি।

—–

শান্ত আর শ্রেয়ার বিয়ের ডেট ফাইনাল করা হয়েছে সামনের মাসের ২৪তারিখ। দুই পরিবারের সকলের মতামত নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আবির এর মাঝে বলল,
– “আমার একটা প্রস্তাব ছিল।”
– “কি প্রস্তাব?” (শ্রেয়ার বাবা)
– “শান্ত আর শ্রেয়ার সাথে সাথে আবরার আর নাজিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানও আরেকবার করতে চাই।”

শান্তর পরিবার বিষয়টা বুঝতে পারলেন না, তাই শান্তর বাবা জিজ্ঞেস করলেন,
– “ওরা তো বিবাহিত তাহলে?”
– “একচুয়ালি আঙ্কেল ওদের বিয়েটা হুট করেই হয়েছিল, অনুষ্ঠান করার মতো সুযোগ ও পরিস্থিতি কোনটাই ছিল না তাই আমরা সবাই ওদের বিয়েটা আনুষ্ঠানিক ভাবে দিতে চাই। আপনাদের কোনো অমত না থাকলে তাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানটা একসাথে করতাম।”
– “না অমত করার কি আছে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”

—-

আবরার গালে হাত দিয়ে বসে আছে, আর আবির বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

– “এই তুই এইভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছিস কেন?”
– “তো কি করব?”
– “বিয়ে হবে কোথায় নাচানাচি করবি তা না চুপচাপ বসে আছিস কেন?”
– “তুমি তো সব গন্ডগোল করে দিলে।”
– “আমি আবার কি করলাম!”
– “কি করলাম মানে! কোথায় ভাবলাম শান্ত আর শ্রেয়ার বিয়েতে আনন্দ করব। আমার সাথে করা সমস্ত অন্যায়ের শোধ তুলব কিন্তু না এখন আমাকেই বর হয়ে বসে থাকতে হবে।”

আবির ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “তোর সাথে কে আবার কি অন্যায় করল?”
– “আমার বিয়ের সময় তোমরা কি করছ আমি কিন্তু কিছু ভুলিনি। দাদা বিয়েটা কি করতেই হবে!”

আবির বিরক্তিতে গজগজ করতে করতে চলে গেল। ছেলেটা মনে হয় অতি খুশিতে পাগল হয়ে গেছে, যতসব।

#চলবে…

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে