একটুখানি সুখ পর্ব-২৩+২৪

0
1126

#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৩

ঘুমটা উড়েই গেল স্বচ্ছের কথা শুনে মোহের। কর্ণকুহরে এখনো বাজছে কথাটি। চোখজোড়া পলকহীনভাবে স্থির হয়ে রয়েছে স্বচ্ছের ওপর। স্বচ্ছ আজ নির্বিকার। তার ঠোঁটের কোণে পুরোপুরি হাসি না দেখা গেলেও হাসির রেশ বিদ্যমান। একটু আগেই ঠান্ডায় কাঁপছিল মোহ। কথাটি কানে আসার সাথে সাথে ঘামতে শুরু করেছে সে। এই মূহুর্তে নিজেকে কেমন লাগতে পারে সেইভাবে কল্পনা করতে থাকল মোহ। এলোমেলো আর জোট পাকানো চুল, ফুলে ওঠা আর তেলতেলে চোখমুখ! ভাবতেই ভ্রু কুঁচকে এলো তার। অন্যকেউ দেখলে নিশ্চয় এই ভোর রাতে পেত্নী ভেবে হার্ট অ্যাটাক করেও বসতে পারে।

“আমার এখনো মনে হয় আপনি ঠিক নেই। নিশ্চয় ড্রিংকস করে এখন চোখে হুরপরীর আবির্ভাব ঘটেছে। আমি মোহ চিনতে পারছেন তো?”

“তুমি যদি আমার চোখ দিয়ে নিজেকে দেখতে তাহলে তুমি নিজেও সেই মোহের তাপে জ্বলে যেতে। কিন্তু আমি তোমাকে দেখাতে চাই না। তুমিও যদি লোভে পড়ে যাও? এই লোভটা আমি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক।”

মোহ এবার চাদর হাত দিয়ে খামছে ধরে। দরদর করে ঘেমে যাচ্ছে সে। তার মস্তিস্কে শব্দ ভান্ডার শূন্য হয়ে যাচ্ছে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে ভাবতে থাকে কি বলা যায়। এটা কেমন ভিন্ন অনুভূতি? আর স্বচ্ছকে চিনতে খানিকটা কষ্ট হচ্ছে মোহের। কি হয়েছে লোকটার আজকাল? অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে চমকে দেয়। আর মোহের মনেই বা কি হয়েছে? কেন সে জবাব দিতে পারে না? কেনই বা স্তব্ধ হয়ে কথাগুলো শুনেই যায়?

“এ…এই সময়ে কে…কেন এসেছেন? সবে তো ভোর। ঘুম পাচ্ছে না আপনার? আপনি নিজের এক বাদুড় আমাকেও বাদুড় বানাচ্ছেন?”
খানিকটা দম নিয়ে কথাগুলো আঁটকে আঁটকে বলে মোহ। স্বচ্ছ এবার সত্যিই হাসে। আবার খানিকটা বিচলিত কন্ঠে বলে,
“দেখতে আসছিলাম তুমি আছো নাকি মাটির সাথে মিশে গেছো!”

“মানে?”

“মানেটা খুব ইজি। সেদিন যে পরিমাণে শুঁকিয়ে গেছিলে আমি ভেবেছিলাম এতোদিনে খাওয়াদাওয়ার অভাবে তোমাকে দেখতে পাওয়া যাবে না। তোমায় দেখতেই এলাম আরকি!”

বিদ্রুপের সুরে বলে স্বচ্ছ। সঙ্গে সঙ্গে মুখটা ভার করে ফেলে মোহ। বিরক্তির সুরে বলে,
“দেখা হয়েছে? আমি বেঁচে আছি। এখন যাচ্ছি।”

“আরে ওয়েট! এতো তাড়াহুড়ো কীসের? একদিন না ঘুমালে এমন কিচ্ছু হবে না।”

“কিচ্ছু হবেনা মানে? আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। বাহিরে কি ঠান্ডা। বৃষ্টির পর বাতাসটা আরো ঠান্ডা লাগছে।”

মোহ পিছু ঘুরে যায় বাড়ির গেটের দিকে যাবার জন্য। পেছন থেকে স্বচ্ছ বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
“এক প্রেয়সীকে দেখবার তৃষ্ণায় কত যে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি তার কি খেয়াল আছে? এক উন্মাদ যে তাকে একটা পলক দেখার পরই নিজে শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে সে কি জানে? জানে না হয়ত! জানলে এমন ঘুমানোর বাহানা দিতো না।”

স্বচ্ছের কোনো কথা স্পষ্ট না শোনালেও পিছু ফিরে তাকায় মোহ। স্পষ্ট জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বললেন?”

“ইয়াপ! গাড়িতে বসো।”
অকপটে বলল স্বচ্ছ। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দরজা খুলেও দাঁড়ালো সে। মোহকে ইশারা করে গাড়ির ভেতরে বসতে বলল। মোহ এবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। এবার সত্যি স্বচ্ছের ওপর রাগ হচ্ছে তার খামখা এই ভোরবেলা সুন্দর মাখো মাখো ঘুম নষ্ট করে কি পাচ্ছে সে? স্বচ্ছের যে নিজেরও ঘুম পেয়েছে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চোখজোড়া হালকা ফুলে উঠেছে তার। আর চোখের সাদা অংশে লাল রঙের হাতছানি। সেটা মোহের নজর এড়ায়নি। মোহ জানে স্বচ্ছ এই শহরে ছিল না। স্বচ্ছের এমন বিধ্বস্ত রুপ দেখে বুঝেও নিয়েছে রাতেই চট্টগ্রাম থেকে বেরিয়ে পড়েছিল স্বচ্ছ। সারারাত জেগে ড্রাইভ করে তবেই এখানে এসে পৌঁছেছে। মোহ হাফ ছেড়ে বলে,

“সিরিয়াসলি? এই ভোর বেলা কোথায় যাব? একটা ভালো সাজেশন দিচ্ছি বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আর সকাল বেলা যদি বাড়িতে সবার ঘুম ভেঙে আমায় না দেখতে পায় তাহলে কি হবে জানেন?”

“ঘুম ঘুম করছো কেন? বাউ ইনি চান্স তুমি আবার এটা ভাবছো না তো যে আজকে বিয়ের পর সারা রাত তোমায় ঘুমাতে দেব না? তাই এখনই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাবার করে ফেলতে চাইছো? তাহলে জানিয়ে রাখি তোমায় টাচ করায় আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সারা রাত নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারো। জাস্ট আমার বুকের ওপর উঠে এসো না। তোমার তো ঘুমানোর স্টাইল ভালো না। যখন তখন লাথি মেরে ফেলেটেলে দিতে পারো। লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে আমার। তুমি গাড়িতে বসবে হ্যাঁ কি না?”
শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন করে স্বচ্ছ। কিন্তু আগের কথাগুলো শুনে অলরেডি মোহ বিষম খেয়ে বসে আছে। স্বচ্ছ যে এডভান্স ভাবতে ভালোবাসে সেটা বুঝে নিয়েছে মোহ। কন্ঠ শান্ত হলেও মোহের বুঝতে বাকি থাকে না যে এখন যদি সে আপত্তি করে তাহলে লোকটা এমন কিছু ঘটাবে যা তাকে গাড়িতে সঙ্গে যেতে বাধ্য করবে। মোহ এবার উপায়ন্তর না পেয়ে বলে,
“যাচ্ছি তো।”

গাড়িতে উঠে বসে মোহ। স্বচ্ছও সময় নষ্ট না করে তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। প্রথমে চোখ বড় বড় করে রাস্তার দিকে চোখ পাকিয়ে থাকলেও মাঝরাস্তায় ঝিমাতে থাকে মোহ। এক পর্যায়ে জানালায় ঠেস লাগিয়ে ঘুমিয়েই পড়ে সে। বাঁকা দৃষ্টিতে মোহকে দেখে একহাতে তাকে নিজের দিকে টেনে নেয় স্বচ্ছ। মোহ নেতিয়ে পড়ে তার কাঁধে। মোহের মাথা আলতো করে একহাতে চেপে ধরে। মাথা ঘুরিয়ে নিজমনে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া বসিয়ে দেয় মোহের মাথায়। তারপর কাতর সুরে বলে,
“আর কতদিন যে চোরের মতো করে তোমায় ছুঁতে হবে জানা নেই আমার। কিন্তু তুমি জানালায় মাথা রেখে কেন ঘুমিয়েছো প্রেয়সী? তোমার জন্য এই মানুষটা যে অধীর আগ্রহে বসে থাকে জানা নেই তোমার? মাঝে মাঝে নিজের অজান্তে একটু ছুঁইয়ে দিলেও তো পারো।”

“কুম্ভকর্ণের ফিমেল ভার্সন? ঘুম কি এবার ভাঙবে না আপনার?”
ঘুমটা হালকা হয়ে আসে মোহের। চোখমুখ জড়িয়ে অস্পষ্ট কন্ঠে বলে,
“মিমি, যাও প্লিজ। আরেকটু!”

“হোয়াট দ্যা…! আমার কন্ঠস্বর কি ছোট ফুপির মতো?”
পুরুষালি কন্ঠে হকচকিয়ে ঘুম ভেঙে তাকালো মোহ। তার মতে তার ঘরে পুরুষ আসবে কোথা থেকে। চোখ মেলে আবছা দৃষ্টিতে আশপাশটা দেখতেই সবটা স্মরণে এলো। পাশ ফিরে স্বচ্ছের দিকে তাকায় মোহ। স্বচ্ছ ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে। মোহ তাকাতেই সে নিজের কাঁধে হাত দিয়ে একটু ম্যাসাজ করে বিচলিত ভঙ্গিতে বলল,
“উফফ…একটা অ্যাডভান্টেজ নিতেও তো দেখছি ছাড়ো না। সারা রাস্তা কাঁধে ঘুমিয়ে ঠিক কাটিয়ে দিলে। আমার ওপর মায়া দয়াও নেই তোমার।”

মোহ জবাবে কিছু বলতে নিলেই থামিয়ে স্বচ্ছ বেরিয়ে বলে,
“আই হ্যাভ নো টাইম। কাম ফাস্ট।”

চোখ কচলাতে কচলাতে বাহিরে বের হয়। সামনে একটা রিসোর্ট দেখে হতভম্ব হয় সে। তড়িৎ গতিতে স্বচ্ছের দিকে দৃষ্টিপাত করে ভয়ার্ত সুরে বলে,
“এখানে কি করতে এসেছি আমরা?”

স্বচ্ছ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোনো কাজেই এসেছি অবশ্যই।”

“রিসোর্টে কি কাজ? আমি বাড়ি যাব।”

“ভয় পাচ্ছো?”
স্বচ্ছের প্রশ্নে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয় মোহ। কয়েকটা ঢক গিলে মনে সাহস জুগিয়ে মৌনতা পালন করে সে। আচমকা স্বচ্ছ তার হাত ধরে একপ্রকার টেনেই ভেতরে নিয়ে আসে। মোহের বুক ধক করে ওঠে এবার। স্বচ্ছের মনে কি চলছে তা বোঝা দায়।

“দেখুন আমি ভালোই ভালোই বলছি আমায় বাড়ি যেতে দিন। আমার এখানে ভালো লাগছে না।”
কথাটুকু কান পর্যন্ত পোঁছায় না স্বচ্ছের। রিসোর্টের ভেতরে এনে একটা ঘরের সামনে এসেই থামল সে। এবার মোহের দিকে তাকিয়ে আবারও ভেতরে ঢুকে গেল মোহকে নিয়ে। ঘরে ঢুকতেই মোহের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে থাকে সে। কিছু বলবার আগেই সে দেখতে পায় বেডে থাকা একটা হলুদ রঙের সুন্দর লেহেঙ্গা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে স্বচ্ছ। চুপ হয়ে যায় মোহ। স্বচ্ছ তার দিকে এসে তার হাতে লেহেঙ্গা গুঁজে দিয়ে বলে,
“নাও। পড়ে নাও। ফাস্ট।”

“এটা কেন? মানে আপনি কি করতে চাইছেন?”

“তোমার প্রশ্নের ঝুড়ি কখনো শেষ হবে না? মেয়েরা যে কতটা বাঁচাল হয় সেটা তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়। আরে বাবা, যা বলছি সেটা করলেই তো বুঝতে পারবে যে কি করতে চাইছি আমি! এখন প্রশ্ন করলে মুখে সেলাই করে দেব মিলিয়ে নিও।”
বলেই বেরিয়ে যায় স্বচ্ছ। মুখ ফুলিয়ে লেহেঙ্গা উল্টেপাল্টে দেখে মোহ। হলুদ পোশাকে স্টোনের গর্জিয়াস কাজ করা। প্রায় বেশ ভারি লেহেঙ্গা! দেরি না করে গেট লাগিয়ে স্বচ্ছের কথায় চেঞ্জ করে নেয় সে।

গেট খুলতেই স্বচ্ছকে দেখে খানিকটা চমকে যায় মোহ। মাতাল ভরা চাহনি স্বচ্ছের। একবার মাথা থেকে পা পর্যন্ত মোহকে দেখে নেয় সে। হলুদ রাঙা মেয়েটির সৌন্দর্য ভাঁজে ভাঁজে বোঝা যাচ্ছে। একপা দুইপা করে এগিয়ে আসে স্বচ্ছ। এমন দৃষ্টিতে খানিকটা ভড়কে যায় মোহ। পিছিয়ে আসতেই আচমকা স্বচ্ছ ধরে ফেলে মোহের বাহু। ভয়ে ভরা দৃষ্টি মোহের। তাকে এনে লাইটিং এর ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দেয় স্বচ্ছ। হাতে চিরুনি নিয়ে মোহের মাথার চুলে চালিয়ে আলতো করে আঁচড়ে দিতে থাকে। মোহ ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে সোজা হয়ে বসে থাকে। কি চায় স্বচ্ছ তার মস্তিষ্কে আসছে না। এই রহস্যময় মানুষটার ফাঁদে পা দিতে দিতে জড়িয়ে গেছে সে। স্বচ্ছ আনমনে বলে,
“এই রিসোর্ট আমার এক বন্ধুর। সেজন্যই এখানে আনা সহজেই সম্ভব হয়েছে।”

“কিন্তু এখানে আমার কারণ?”

স্বচ্ছ আয়নার মাধ্যমে মোহের দিকে তাকায়। স্নিগ্ধময় চেহারা তার। হলুদ রঙে জ্বলজ্বল করছে। যেন সে চারিদিকটা আলো ছড়িয়ে রেখেছে। স্বচ্ছ হালকা নিচু হয়ে মোহের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“বিয়ে মানে হাজারো স্বপ্ন। একটা মেয়ের অনেক অনেক স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে এই বিয়েতে। আমার কাছে #একটুখানি_সুখ চেয়েছিলে। আমি চাই তোমায় প্রতিদিন মূহুর্ত সুখ অনুভব করাতে। তোমার মুখে সেই হাসিটা দেখতে যেই হাসিটা দেখলে আমি নিজেও প্রাণভরা শ্বাস নিতে পারব। সুখ রাজ্যের সকল সুখপাখি আমি তোমার হাতের মুঠোয় এনে দিতে চাই। তার জন্য এক ছোট্ট প্রচেষ্টা। কখনো কখনো তো আমায় বিশ্বাস করতেই পারো সুন্দরী!”

ঘনঘন চোখের পলক ফেলতে থাকে মোহ। সে কিছুটা অনুতপ্ত। সে আসলেই স্বচ্ছের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল কিছু মূহুর্তের জন্য। মাথা নত করে বলল,
“আই এম সরি।”

“সরি দিলে হবে না। এটার হিসাব তোলা রইল। অন্য কোনোদিন হিসেব করব। এখন বলো তো বেণী কিভাবে করে?”

“বেণী?”

“হু বলো!”

“আপনি বেণী করবেন?”
বিস্ময়ের সুরে বলে মোহ। স্বচ্ছ মাথা নাড়িয়ে বলে,
“হ্যাঁ বলো।”

স্বচ্ছের অদ্ভুত আনন্দে বেশ আনন্দ পায় মোহ। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে স্বচ্ছকে দেখিয়ে দেয়। বেশ সময় নিয়ে কোনোমতে বেণী করে দিতে সক্ষম হয় সে। মোহের একপাশে বেণী ঝুলিয়ে দিয়ে ড্রেসিংটেবিলের নিচ থেকে বেশ কয়েকটা কাঠগোলাপ বের করে মোহের বেণীর ফাঁকে ফাঁকে সযত্নে গুঁজে দেয় সে।

স্বচ্ছের পাগলামিতে স্তব্ধ মোহ। এ কেমন উন্মাদ লোক? বর্তমানে কাঁচা ফুলের গয়না দিয়ে মোহকে জড়িয়ে দিতে ব্যস্ত সে। কানে আলতো ছুঁইয়ে ফুলের কানের দুল, গলায় ফুলের মালা আর মাথায় সুন্দর করে ফুলের গাজরা গুঁজে দেয় স্বচ্ছ। মোহের হাত ধরে টেনে দাঁড় করায় সে। উঠে দাঁড়ায় মোহ। স্বচ্ছ মুখ ফসকে বলেই ফেলে,
“ফুলের মোড়ানো আরেকটি ফুল।”

সঙ্গে সঙ্গে চোখমুখ লাল হয়ে যায় মোহের। লজ্জায় দ্রুত সরে যেতে গিয়ে ব্যাঘাত ঘটে তার। লেহেঙ্গার নিচের অংশ একটু বেশি বড়। মাটি ছুঁয়েছে। স্বচ্ছ মৃদু হেঁসে আচমকা কোলে তুলে নেয় মোহকে। মোহের চোখজোড়া এবার কপালের উঠে যায়। স্বচ্ছের ঘাড় জড়িয়ে ধরে। আর বিপাকে পড়ে বলে,
“কি করছেন?”

“যা করছি করতে দাও। নয়ত তোমারই ক্ষতি।”
আবারও নিরব হয়ে যায় মোহ। আজ সে বাকরুদ্ধ। যেন বোবা হয়ে গেছে। তাকে ঘর থেকে নিয়ে বের হয় স্বচ্ছ। হাঁটতে হাঁটতে মোহের কানে ধীর কন্ঠে বলে,
“তোমার দিকে তাকাতেও আমার ভয় করছে। একবার যদি তোমার সেই ঘোলাটে দৃষ্টিতে ফেঁসে যাই তাহলে প্রেম নেশা গাঢ় হয়ে যাবে। মগ্ন হয়ে যাব মোহ নামক মেয়েটিতে। এই স্বচ্ছ নামক অস্বচ্ছ ব্যক্তি মরিয়া হয়ে উঠবে তোমায় পেতে। না তাকানোই ভালো কি বলো?”

স্বচ্ছের শার্ট খামচে ধরে মোহ। মুখ দেখানোর অবস্থাতে নেই সে। এমন কথা বলে তাকে মিশিয়ে না দিলেও পারত! স্বচ্ছের বুকের সঙ্গে মিশে যায় মোহ।

আলো ফুটতে শুরু করেছে। পরিবেশে এখনো শীতলতা ভাব। রিসোর্টের টেরিসে স্বচ্ছ মোহকে এনেছে। মোহকে আসনে বসিয়ে দিল সে। সামনে হলুদের বাটি। মোহের পায়ের নিচে পানি থইথই করছে। পাশে ছোটখাটো কৃত্রিম ঝর্ণার ব্যবস্থা করা। স্বচ্ছ দেরি না করে হলুদের বাটি নিয়ে হাতে হলুদ ভরিয়ে বেশ গভীরভাবে ছুঁইয়ে দিল মোহের ডান গাল। হালকা কেঁপে উঠল মোহ। চোখ বুঁজে ফেলল সে। এ এক প্রগাঢ় অনুভূতি। যা বলার কোনো নির্দিষ্ট শব্দ যেন হয়নি। অনুভব করাই শ্রেয়! স্বচ্ছ মোহের দিকে খানিকটা ঝুঁকে মোহের নাকে নাক ঠেকিয়ে বলল,
“হ্যাপি বডি ইয়োলো ডে হবু মিসেস. আহিয়ান স্বচ্ছ!”

চলবে…

#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৪

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে মোহ। স্বচ্ছের দিক থেকে এক ইঞ্চি নজরও সরছে না তার। স্বচ্ছও এক ইঞ্চিও সরেনি। নাকে নাক লাগিয়ে রয়েছে সে। এই পুরুষকে এতোটা কাছে দেখে থরথর করে কাঁপছে সে। স্বচ্ছের ধূসর বর্ণের চোখজোড়ায় ছড়িয়ে রয়েছে এক অদ্ভুত আকুলতা। যেখানে ঘায়েল হচ্ছে মোহ নামক এই ভয়ানক সুন্দর রমনী! মৃদু শিরশিরে বাতাস, এক চিলতে আলো, বৃষ্টিভেজা এই প্রকৃতি সবাই যেন স্বচ্ছ নামক রহস্যময় ব্যক্তি এবং মোহ নামক সুন্দরী রমনীর কাছে আসার মূহুর্তে সাক্ষী! মোহের বাম গালেও হলুদ ছুঁইয়ে ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছ। ভ্রু নাচিয়ে মোহের দিকে তাকায় সে। মোহের চোখের পলক এখনো পড়েনি। সে বাকহারা আজ। মনে কোনো অনুভূতি না থাকলে কি এতোটা পাগলামি করা যায়? এই ছোট্ট প্রশ্নটা নাড়া দিল মোহের মস্তিষ্কে। চোখের পলক ফেলে এবার তাকালো সে। উত্তর জানতে যে আকুপাকু করছে তার মনের মধ্যে। তাই সে জিজ্ঞেস করতে নেয় স্বচ্ছকে। মুখ খুলে কিছু বলার আগেই থামে সে। মনে সৃষ্টি হচ্ছে খানিকটা সংকোচ আর লজ্জা!

“কাল রাতে কাজটা সেড়ে ফেলার ইচ্ছে ছিল আমার। কিন্তু বাড়িতে ছিলাম না। আসতে আসতে ভোর হয়ে গেছে। তাই ভোরেই ডেকে নিলাম। এখন চাইলে এখানেই ঘুমিয়ে যেতে পারো আই ডোন্ট মাইন্ড।”

“নিজের পাগলামি দিয়ে যে আমার ঘুম একেবারে কেঁড়ে নিয়েছেন আপনি সে খবর কি রাখেন?”

কিছুটা চমকেই তাকায় স্বচ্ছ। মোহের মুখে এমন কিছু শুনবে সেটা ধারণাতে ছিল না তার। সে শান্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠে,
“আজকের ঘুমই কেঁড়ে নিয়েছি নাকি সারাজীবনের?”

“সেটা তো সময় বলবে। আমাকে তো হলুদ লাগিয়ে দিলেন। বিয়েটা তো আপনারও। সেই হিসেবে হলুদ তো আপনারও লাগানো উচিত। আমি কেন একাই এই ঠান্ডায় হলুদ লাগিয়ে যাব?”

স্বচ্ছের মুখে কিছুটা হাসির রেশ কেটে যায়। হাসোজ্জল চেহারা বিলীন হয়ে যায়। কিছুটা থমথমে সুরে বলে,
“ধরো, তোমার বিয়ে আমার সাথেই হলো না। তখন এই হলুদ লাগিয়ে কি লাভ সুন্দরী?”

থমকে গেল মোহ। তার মুখে ফুটেছিল হাসির রেশ। সেটাও কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। ধড়ফড়িয়ে উঠল ভেতরটা। এই কথার মানে খুঁজে পেলো না মোহ। এক মূহুর্তে এলোমেলো লাগছে তার সবটা। শুধুমাত্র এই কথাটার জন্য। সামান্য একটা কথাতে কেন এতো তড়পাচ্ছে সে? গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে কথাগুলো। তবুও তিরতির করে কাঁপতে থাকা ঠোঁটে সে বলল,
“কে…কেন? এমন কথা বলছেন কেন?”

“কথাগুলোর মানে যদি তোমাকে আমি বোঝাতে পারতাম। একটু শ্বাস নিয়ে মনে যে সকল কথা একেবারে জট পাকিয়ে ফেলেছি সেসব যদি বলতে পারতাম। আমার জীবনটা আরেকটু সুখের হতো।”

“এমনভাবে বলছেন কেন? আপনার জীবনে তো সব আছে। মা-বাবা আছে। পরিবার আছে। আপনার জীবনে খুশি আছে। আপনার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাহলে কেন নেই সুখ? আমি তো জানতাম আপনি একজন সুখি মানুষ।”

“যা দেখা যায় তা আসলে হয় না। যা হয় তা আসলে দেখা যায় না!”
গমগমে কন্ঠে বলা কথাটি বারংবার মোহের কানে বাজতে থাকল। মোহের ডান হাত আপনাআপনি চলে গেল স্বচ্ছে বাম গালে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ভর্তি গালে এই প্রথম ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করে ফেলল মোহ। স্বচ্ছ বেশ চমকেই উঠেছে। বড় বড় করে পাকিয়ে আছে ধূসর চোখজোড়া। একটা শুকনো ঢক গিলে বোঝার চেষ্টা করছে এ কি হচ্ছে তার সাথে? মোহ এবার নির্বিকার সুরে বলে ওঠে,

“যদি আপনার জীবনে আমার মতোই #একটুখানি_সুখ এর দেখা না পাওয়া যায় তাহলে সেটার দেখা পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। আপনার অর্ধাঙ্গিনী হতে চলেছি আমি। আমি কি করে দেখব আপনার অসুখ? হন আপনি যতই অপ্রিয়! ‘বিবাহ’ নামক বন্ধনই এমন অপ্রিয় মানুষটাকে প্রিয় বানাতে সক্ষম। আমি স্পষ্টভাষী মেয়ে। তাই বলতেই পারি আপনি আমার সেই অপ্রিয় মানুষ নেই আর। কোথাও যেন নিজের অদ্ভুত পাগলামি দ্বারা মনের গহীনে সূক্ষ্মভাবে প্রবেশ করেছেন। আপনার সঙ্গে আমার এই নতুন সম্পর্কের পরিণতি জানা নেই আমার। তবে আপনার পরিপূরক হিসেবে আমিও চেষ্টা করব আপনাকে একটু শান্তি আর একটু সুখ পাইয়ে দিতে।”

স্বচ্ছের মনে বয়ে গেল প্রশান্তের ঝড়। মোহ আর আগের মোহ নেই। কোথাও একটা পাল্টেছে সে। নাকি তার মনের অনুভূতি পাল্টেছে? নাকি এটাই তার বাধ্যবাধকতা? এসব ভাবনাতে মেতে ওঠার আগেই পুরো মুখে ঠান্ডা কিছু অনুভব করে স্বচ্ছ। কিছু পিছিয়ে দেখতে পায় মিটমিটিয়ে হাসছে মোহ। হাসিতে যেন মুক্তা ঝরছে তার। কোথাও স্বচ্ছের মনে হচ্ছে রুপকথার রাজকন্যা হেঁসে এক সামান্য প্রজাকে ঘায়েল করে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। মোহের হাতের দিকে নজর গেল স্বচ্ছের। তার হাতেও হলুদ। এরমানে মোহ তাকে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে। মোহ খিলখিল করে হেঁসে উঠে বলে,
“হ্যাপি বডি ইয়োলো ডে মি. আহিয়ান স্বচ্ছ!”

স্বচ্ছের ঠোঁটের কোণেও ফুটে ওঠে দুষ্টু হাসি। তার হাসি খেয়াল করে মোহ। বুঝতে বাকি থাকে না স্বচ্ছ এবার কিছু একটা করতে চলেছে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। পিছিয়ে যায় বেশ খানিকটা। স্বচ্ছ ফিচেল কন্ঠে বলে,
“পিছিয়ে যাচ্ছো কেন এভাবে? আমাকে না বলিয়ে হলুদ লাগিয়ে দেবে এভাবে আর পালিয়ে যাবে? তা হচ্ছে না। ওখানেই দাঁড়াও সাহস থাকে তো!”

“দাঁড়াব না। এতোটাও সাহস আমার দরকার নেই। বলে আরো কয়েকধাপ পিছিয়ে যায় মোহ।”

স্বচ্ছ এগিয়ে যেতে আরো দুই কদম পিছিয়ে যেতেই পেছনের সুইমিংপুল থাকায় আর পা রাখার জায়গা পায় না সে। স্বচ্ছ ধরার আগেই মোহের পানিতে পড়ে হাবুডুবু খাওয়া শুরু হয়েছে। মোহের এমন অবস্থা দেখে উচ্চস্বরে হেঁসে ওঠে স্বচ্ছ। সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে সুইমিংপুলে দাঁড়ায় মোহ পানিতে। পুলটা খুব একটা গভীর নয়। দাঁড়িয়েও থাকা যায়। মোহের কাঁধ পর্যন্ত পানি থৈথৈ করছে। স্বচ্ছ হাসতে হাসতে বলে,
“দেখেছো সিনিয়রদের কথা না শোনার ফলাফল! এমন হয়। লক্ষ্মী মেয়ের মতো কথা শুনলে এমনটা হতো না মোটেও।”

“তাই বলে রাক্ষসের মতো হাসবেন? দ্যাটস নট ফেয়ার। তুলুন আমাকে। একা উঠতে পারব না এতো ভারি ড্রেস নিয়ে।”

“ড্রেস খুলে উঠতে পারো। আমি চোখ বন্ধ করে রাখছি।”
বলেই চোখ টিপে দিল স্বচ্ছ। মোহের কান থেকে এই মূহুর্তে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। পানির নিচে ডুব দিল সে। হায় কি লজ্জা! আর উঠবে কিনা সন্দেহ। স্বচ্ছ তা দেখে এগিয়ে এসে বলল,
“এই মেয়ে কি করছো? উঠো।”

মুখ নিচু করে পানি থেকে মাথা উঠালো মোহ। ক্ষেপে উঠে বলল,
“এমন কথা বললে আপনার কন্ঠস্বর সত্যি নষ্ট করে দেব। শুধু আর একবার বলে দেখবেন।”

মিটমিট করে হেঁসে মোহের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল স্বচ্ছ। সঙ্গে সঙ্গে মোহ নিজের সব শক্তি দিয়ে স্বচ্ছের হাত টান দিতেই টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায় সোজা পানিতে। হাবুডুবু খেয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। চোখ গরম করে তাকায় মোহের দিকে। মোহ নিজেও ঠান্ডায় কাঁপছে তবুও তার হাসি থামে না। মোহের হাসিতে স্বচ্ছও হেঁসে ওঠে। সূর্য উঠছে। লাল আভায় ঢাকা আকাশ। স্নিগ্ধ মন মাতানো পরিবেশে একে ওপরের হাসিতে মাতাল হয়ে রয়েছে এক নারী ও পুরুষ!

সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। সকাল প্রায় ১১ টা। দুপুর হতেই চলল। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে চলেছেন মিসেস. নিরা। তার বিশ্রাম নেওয়ার জো নেই। আজ মোহের মেয়ে। যাকে কিনা সে নিজের মেয়ের মতোই দেখে। একটা মেয়ের বিয়েতে মায়ের যেমন দায়িত্ব ঠিক তেমনই দায়িত্ব মিসেস. নিরার। সেসব খুশিমনেই পালন করে চলেছেন উনি। যদিও বিয়েটা ছোট করেই হবে। কাছের কয়েকজন আত্মীয়রা এসেছে। তবুও বাড়ির ভেতরটা সাজানোর কাজ চলছে।

“রান্নাবান্না হলো? কলি কোথায়? মোহকে ডাকতে গিয়েছিল না? কোথায় ও? কলি!”

চোখমুখ কাঁচুমাচু করে মিসেস. নিরার সামনে এসে দাঁড়ায় কলি। মিসেস. নিরা দাঁড়িয়ে ছিলেন রান্নাঘরের কাছে রান্নাবান্না দেখছিলেন। কলিকে দেখে ভ্রু কুঁচকাতেই কলি মিনমিন করে বলল,
“মোহ ম্যাডামকে ডাকতে গেছিলাম! কিন্তু আমাকে ধমক দিয়ে পাঠায়ে দিছে।”

“এখনো ওঠেনি ও?”
চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করেন মিসেস. নিরা। কলি মাথা নাড়াতেই ওপরের দিকে তাকান উনি। বেশ ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন,
“দেখো মেয়ের কান্ড! আজলে তার বিয়ে। কিছুক্ষণ পর স্বচ্ছ এলো বলে। ও ফ্রেশ হবে কখন আর রেডিই বা হবে কখন?”

বলেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে তড়তড় করে ঢুকে গেলেন মোহের ঘরে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঘুমাচ্ছে মোহ। হাতে বালিশ জড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে ঘুমিয়ে যাচ্ছে নির্বিকারভাবে। ভোরে স্বচ্ছ বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর লুকোচুরি করে ঘরে ঢুকেই শুয়ে পড়েছিল সে। তার আর স্বচ্ছের অদ্ভুত আর মোহময় মূহুর্ত মনে করতে করতে কখন যে চোখ লেগে এসেছে বুঝতেই পারেনি! ফলস্বরূপ সে এখনো ঘুমে।

“মোহ! এই মোহ! উঠবি না? এতো লেট করছিস কেন?”

“আর একটু ঘুমাতে দাও না মিমি। জাস্ট ফাইভ মিনিটস!”

মিসেস. নিরা বুঝে গেছেন মোহ আজ এভাবে মানবে না। ধমকে উঠে বলেন,
“মোহ! পাত্রপক্ষ এসে গেছে। স্বচ্ছকে এখানেই ডেকে এনে বিয়ে করাব?”

পিটপিট করে চোখ মেলে মোহ। আশেপাশে তাকায় সে। হাই তুলতে গিয়েই দিয়ে ফেলে দুইবার হাঁচি। সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন মিসেস. নিরা! আর বলেন,
“ঠান্ডা লেগেছে তোর? কি করে? বিয়ের দিনে ঠান্ডা বাঁধিয়েছিস?”

মোহের মনে পড়ে ভোরের সময়ের কথা। এখন কিভাবে বলবে এই ঠান্ডা ওয়েদারে সুইমিংপুলে পড়ে এই অবস্থা তার? আমতা আমতা করে বলে,
“ওই মিমি, আমি কি করে জানব বলো তো?”

“তোকে নিয়ে আমি আর পারি না বিশ্বাস কর। উঠে পড় এক্ষুনি।”
হতাশ ভঙ্গিতে আরেকটা হাঁচি দিয়ে নাক ডলতে ডলতে উঠে বসে মোহ। একটু পর তার বিয়ে। ভাবতেই গায়ের লোম শিউরে উঠল তার। বদলাতে চলেছে সম্পর্কের সমীকরণ!

“কেমন সারপ্রাইজ দিলাম মা তোমাকে? চমকে উঠেছো?”
বর বেশে সেজে থাকা স্বচ্ছ বাঁকা হেঁসে মিসেস. রেবার উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা করে। চিন্তিত মুখভঙ্গি মিসেস. রেবার। পায়ে পা তুলে সোফায় বসে স্বচ্ছ। পরণে খয়েরী রঙের একটা শেরওয়ানি। যার ওপর গোল্ডেন কাজ করা। মাথার খয়েরী পাগড়ি খুলে রেখেছে সে। চুলগুলো হাত দিয়ে আরো এলোমেলো করে নিজের সেই চোখজোড়া দিয়ে মায়ের দিকে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই তার মা বলে ওঠে,
“সৌমিত্র কোথায় স্বচ্ছ?”

“আমি কি করে জানব?”

“তুইই জানিস। সৌমিত্রকে সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। উধাও হয়ে গেছে। সৌমিত্র এই বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড ছিল। নিশ্চয় একা একা বিয়ে ছাড়া চলে যাবে না কোথাও?”

“তাহলে তুমি স্বীকার করছো তুমি আমার বদলে মোহের সঙ্গে ভাইয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলে। আমার পেছন দিয়ে গেম খেলছিলে মা? ভুলে যাচ্ছো? এই গেমের মাস্টার আমি নিজে?”
হিসহিসিয়ে বলে মায়ের দিকে কটাক্ষ করে তাকায় স্বচ্ছ। তার সুন্দর চোখজোড়ায় এখন মায়ের জন্য পাহাড় সমান রাগ। মিসেস. রেবা এবার অবাক হন। ‘মোহ’ নামক মেয়েটির জন্য দেওয়াল তৈরি হয়ে গেল তাদের মাঝে। বিস্ময়ের সাথে বলেন,
“সৌমিত্র তোর ছোট ভাই স্বচ্ছ!”

“ও ছোট ভাই বলে ওর সব অন্যায় মেনে নেব আমি? মেনে নিয়েছি। ওর অন্যায় ঢাকতে গিয়ে আমি নিজেও পাপীর ভাগিদার হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মোহকে ওর হাতে তুলে দিয়ে ওর জীবন আমি জাহান্নামে পরিণত করতে পারব না। আই এম সরি।”

“তাহলে তুই কি চাইছিস স্বচ্ছ?”
দরজা খুলে প্রশ্নটা স্বচ্ছের দিকে ছুঁড়ে দেন নেহাল সাহেব। সঙ্গে সঙ্গে স্বচ্ছ আয়েশ করে বলে ওঠে,
“আমার মোহকে আমি চাই। ওর সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। দ্যাটস ইট!”

“স্বচ্ছ….”
চিৎকার দিয়ে ওঠেন মিসেস. রেবা। স্বচ্ছ তবুও শান্ত সুরে বলে,
“চিৎকার করো না মা। সৌমিত্র আমার কাছে। ওকে ততক্ষণ পাবে না যতক্ষণ না আমি বলছি। আর আমার শর্ত পূরণ না করলে আমি ওকে পুলিশের তুলে দিতে বাধ্য হবো।”

নেহাল সাহেব ইশারায় মিসেস. রেবাকে থামতে বলেন। মিসেস. রেবা রাগ সামলাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিছুটা নরম কন্ঠে বলেন,
“যেই ভাইকে এতো বছর আগলে রাখলি তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিবি তুই?”

“আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে কোনো লাভ হবে না। আমার শর্তে রাজি? ইয়েস ওর নো? রাজি না হলেও মোহকে আমিই নিজের অর্ধাঙ্গিনী বানাব।”

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে