একটুখানি সুখ পর্ব-১৫+১৬

0
1139

#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৫

ঘরের দরজা আঁটকে দিয়ে বসে আছে মোহ। তার ধারণা স্বচ্ছ আসবেই তাকে নিতে। কোলে নেওয় কোনো ব্যাপারই না লোকটার কাছে। যেই মানুষ পাবলিজ প্লেসে কোলে নিতে অস্বস্তিবোধ করে না সেই মানুষটা বাড়ির ভেতরে এসে কোলে করে টেনে নিয়ে যাবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। দরজার দুটো লক আঁটকেই শান্তি মতো ওয়াশরুমে আরো একবার শাওয়ার নিতে চলে গেল সে। বেশ ভ্যাপসা গরম পড়েছে। এসব টেনশনে এসির বাতাসটুকুতে মন ভরছে না তার। কৃত্রিম জিনিসে তার অনেক অনেক বিরক্ত!

গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ওয়াশরুমের দরজাটা খোলে মোহ। পড়নে সাদা রঙের বাথরোব আর মাথায় জড়ানো টাওয়াল। মুখে স্বস্তির হাসি। এবার ফ্রেশ লাগছে তার। টকটকে গোলাপি ঠোঁটের আশেপাশে পানির ছিটেফোঁটা এখনো রয়েছে। সে মনের সুখে বলে ওঠে,
“এতোক্ষণে স্বচ্ছ নামক আস্ত বিরক্তির ড্রামটা নিশ্চয় চলেই গেছে। আহারে বেচারা… ”

“আসলে বিরক্তিকর জিনিসটা সহজে পিছু ছাড়ে না জানো তো? একেবারে চিপকে থাকে। কিন্তু তোমার প্রতি চিপকে থাকার ইন্টারেস্ট আমার নেই। বাধ্য হয়ে আমার মতো ছেলেকে তোমার মতো মেয়ের সাথে চিপকে থাকতে হচ্ছে।”

স্তব্ধ হয়ে গেল মোহ। সবেমাত্র ফ্লোরে পা রেখে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছিল সে। কন্ঠস্বরটা শুনে পিলে চমকে গেল তার। মাথা উঠাতেই চোখজোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম তার। পিছু ফিরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে পকেটে হাত গুঁজে একটা বাঁকা হাসির সহিত দাঁড়িয়ে আছে স্বচ্ছ। তৎক্ষনাৎ মোহ নিজের দিকে তাকাল। সেদিন স্বচ্ছের বাথরোবের ফিতা ভুল করে খুলে ফেলেছিল মোহ। আজকেও সেই একই পরিস্থিতি কিন্তু উল্টোটা। চোখ বড় বড় করে স্বচ্ছের দিকে তাকালো সে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় স্পষ্ট স্বচ্ছের মুখ। নেভি ব্লু কালারের একটা শার্ট সাথে সাদা রঙের ডেনিম প্যান্ট পড়ে মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। এবার আগপাছ না ভেবেই মোহ পিছিয়ে দৌড় দিয়ে ওয়াশরুমের আড়ালে গিয়ে লুকায়।

“এই আপনি ভেতরে ঢুকলেন কি করে? আমি তো…”

“তুমি তো দরজা লক রেখেছিলে!”

“হুমম সেটাই তো, সেটাই তো!”

স্বচ্ছ ড্রেসিংটেবিলের শোপিচ ধরে সেটা ওপরে ছুঁড়ে দিয়ে ক্যাচ করতে করতে বলে,
“তোমার বাড়িতে তো সব দরজারই এক্সট্রা চাবি না থাকে না?”

“কিন্তু সেটা কে দিল আপনাকে?”

“অভিয়েসলি চুরি করিনি। ছোট ফুপি দিয়েছে। উনি জানেন আমি অযথা সময় কাটাতে এই বাড়ি আসিনি। দরকারেই এসেছি। তুমি তো আবার যাকে তাকে চোর বানিয়ে দাও।”

সরু চোখে তাকায় মোহ। স্বচ্ছও এবার শোপিচটা রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আড়ালে থাকা মোহের দিকে তাকিয়ে কন্ঠে জোর দিয়ে বলে,
“এখন কি চাচ্ছো তুমি? তোমাকে এই অবস্থায় তুলে নিয়ে যাই?”

“আপনি বাহিরে যান। আমি আপনার মতো নেশাখোর লোকের সাথে মোটেই যাব না। ভালোই ভালোই বলছি বাহিরে যান নয়ত…”

“নয়ত কি?”
স্বচ্ছ এগিয়ে এলো মোহের দিকে। আরো সেঁটে দাঁড়াল মোহ। অতঃপর ওয়াশরুমে আবার ঢুকে পড়ল সে। তাড়াহুড়ো করে দরজা লাগাতে গেলেও স্বচ্ছ আঁটকে ধরল দরজা এক হাতে। মোহ দুহাতেও আর দরজা লক করতে সক্ষম হচ্ছে না। বরং স্বচ্ছই তার একহাত দিয়ে প্রায় অর্ধেক দরজা খুলে প্রায় ঢুকে পড়েছে।
“নিশ্চয় তুমি এমনটা চাও না যে তোমায় এই অবস্থায় তুলে নিয়ে যাই? নয়ত এটাও করতে পারি সেদিন আমার সাথে যা কান্ড করেছিলে! তোমার বাথরোবের ফিতা…”

বলেই থেমে গেল স্বচ্ছ। অসভ্যের মতো হাসি দিল সে। মোহের এক হাত চলে গেল পেটের কাছে ফিতাতে। ঢক গিলতেই স্বচ্ছ আবারও বলল,
“তোমার আমার ওসব দেখার লোভ থাকতেই পারে। আমার নেই। আমার বিয়ে হবে দেন এসব দেখা যাবে। তোমার মতো নাকি? একটা অবিবাহিত সিঙ্গেল ছেলেকে জোর করে তার সম্মান ছিনিয়ে নেওয়া?”

“আমি তো ওসব ইচ্ছে করে করিনি বিশ্বাস করুন। আপনি এমন করলে কিন্তু মান হানির মামলা করব।’

“ওহ রিয়েলি? আইন শুধু মেয়েদের জন্য? আমাদের মতো অসহায় ছেলেদের জন্য কোনো আইন নেই? তোমাদের মতো মেয়েরা যে আমাদের নির্যাতন করে যাচ্ছে?”

“আপনি… আপনি এটা…”

“হুঁশশ! নো মোর ওয়ার্ড। রেডি হয়ে বাহিরে এসো আদারওয়াইজ, ভয়ানক কিছু ঘটিয়ে ফেলব।”
রক্তচক্ষু নিয়ে হুমকিস্বরূপ বলে ওঠে স্বচ্ছ। মোহ স্বচ্ছকে পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে বলে,
“আপনি ঘরের বাহিরে তো যান।”

“তা তো যাবই। বাট ইয়েস, চালাকি করার চেষ্টা করবে না।”
মোহ ঠোঁট উল্টে মাথা দুলাতেই গেট ছেড়ে বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছ। হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় সে রুম থেকে। হাফ ছেড়ে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে মোহ। কি জ্বালাতন শুরু করেছে? কি এমন দরকার তার সাথে স্বচ্ছের?

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। অর্ধচাঁদ দেখা দিয়েছে আকাশে। তার পাশেই জ্বলজ্বল করছে সন্ধ্যাতাঁরা। রাতে বাহিরের পরিবেশ খুব সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠে। আশেপাশে রাস্তার পাশে সোডিয়াম লাইট। ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরছে লোকজন। আশেপাশে বেশ ট্রাফিক। সোডিয়াম লাইটের বেশ কাছেই দাঁড়িয়ে আছে চকচকে কালো রঙের গাড়ি। তার ভেতরে সামনের সিটে বসে রয়েছে মোহ ও স্বচ্ছ। এসিটা বন্ধ করে জানালা খুলে বসে রয়েছে মোহ। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে আর নাকের ডগায়। সোডিয়াম লাইটের আলোতে অন্যরূপ ফুটে উঠেছে তার। গোল্ডেন রঙের লং জামা আর কালো ওড়না গলায় পেঁচিয়ে রাখা। গালে হাত দিয়ে আনমনে তাকিয়ে আছে বাহিরে। মেয়েটার মোহ নামটি যেন ভেবেচিন্তেই রাখা হয়েছে। এই রুপ, এই চোখ সকলের নজর কাঁড়লেও স্বচ্ছের নজর কাঁড়ে তার আচরণ! মাঝে মাঝে রাগ, দুঃখ, অদ্ভুত আচরণ মাতিয়ে দেয় স্বচ্ছকে। তার আচরণেও রয়েছে সীমাহীন মোহ! স্বচ্ছের মন বলে ওঠে,

“একেই কি বলে পুরুষের সর্বনাশা নারী?”
কথাটুকু প্রকাশ করে না সে। তার প্রকাশ করা মানা। সে বাদ্ধ। মোহকে ভালোবাসা যাবে না। পৃথিবীর যেকোনো মেয়েকে ভালোবাসলেও মোহকে ভালোবাসা এতো সহজ নয়।

গভীর মনোযোগ দিয়ে স্বচ্ছের ব্যাপারেই ভেবে যাচ্ছে মোহ। লোকটা কত অদ্ভুত। মাঝে মাঝে আঁড়চোখে স্বচ্ছের দিকে তাকাতে চেষ্টা করছে সে। স্বচ্ছ তাকে নিয়ে গেছিল কিছু নিউজ চ্যানেলের অফিসে। কঠোরভাবে বারণ করে দিয়েছে এমন বদনাম ছড়ালে বা ভুলভাল খবর ছড়ালে সেকেন্ড বার চান্স দেবে না স্বচ্ছ। ওপর মহলে গিয়ে বন্ধ করিয়ে ছাড়বে চ্যানেল। তৎক্ষনাৎ সেসব খবর ডিলেট দেওয়া হয়। মোহ তখন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ছিল স্বচ্ছের পানে। বলার কিছুই ছিল না তার। তার মনে হয়েছিল স্বচ্ছই এসবকিছু করেছে। কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু! সে এটা ভেবে বিরাট বড় ভুল করে ফেলেছে। স্বচ্ছকে এই বিষয়ে বেশ কথাও শুনিয়েছে সে। ওকে সরি বলতে গিয়েও থামছে মোহ। কারণ স্বচ্ছও তো তাকে কম কথা শুনাইনি। বিয়ে করার প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেছে। সেজন্য নিজের অনুতপ্ত হয়েও হচ্ছেনা।

ট্রাফিক ছাড়া মাত্রই গাড়ি স্টার্ট দেয় স্বচ্ছ। চলল সে নিজের গন্তব্যে। মোহ স্বচ্ছকে তার নিজের বাড়ির রাস্তায় না নিয়ে যেতে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলে,
“এটা কোথায় যাচ্ছেন? এটা তো ভুল রাস্তা!”

“নিয়ে গেলেই দেখতে পাবে।”

“সব কাজ তো শেষ তাই না তাহলে কোথায় যাচ্ছি?”

“তোমাদের মেয়েদের একটা সমস্যা হলো তোমরা সবসময় নিজেদের খুব বেশিই ইম্পরট্যান্স দাও। তোমায় নিয়ে গিয়ে বিয়ে করব না। নো টেনশন।”

স্বচ্ছের একটা কথাতেই মোহের মুখটা ভোঁতা হয়ে যায়। সে কি সোজাসুজি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না? পারবেই বা কেন? মামা-মামি তো কম যায় না। মুখ ফুলিয়ে বসে রইল সে।

গাড়িটা এসে থামে একটা হসপিটালে। স্বচ্ছ দ্রুত নেমে যায় গাড়ি থেকে। মোহও নেমে হসপিটালের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের সুরে বলে,
“আমরা এখানে কেন? নানিমা ঠিক আছে তো?”

“সবাই ঠিক আছে। শুধু একজন বাদে।”

“কে?”

স্বচ্ছ মোহের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“কাল একজনকে খুব মেরেছি। বড়সড় অপরাধ করতে যাচ্ছিল সে। একটা বউ থাকতে আরেকটা বিয়ে করতে যাচ্ছিল। তাই বলছিলাম একটু চলো তো! দেখবে তুমি চেনো কিনা?”

“আমি চিনব কিভাবে? আমার চেনাজানা তো এমন কোনো নিচ মানুষ নেই।”
বেশ ভাবুক হয়ে বলল মোহ। স্বচ্ছ অদ্ভুত হেঁসে হসপিটালের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলল,
“ওয়েল! এক পলক দেখেই নাও। চিনলেও চিনতে পারো।”

স্বচ্ছের মাথায় কি চলে তা বোঝা মোহের পক্ষে হয়ত সম্ভব না। তার এসব কথা শুনে তার পিছু পিছু হেঁটে যায় মোহ। তিন নম্বর ফ্লোরে ডান দিয়ে করিডোর ধরে এগোতেই মোহের দৃষ্টিতে পড়ে কিছু চেনা মুখ। ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে চাপ দিতেই চোখ বড় বড় হয়ে আসে তার। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“এ…এটা… এটা তো ওই লোকটা মানে আদিল…”

পুরোটা বলতেই পারে না সে। স্বচ্ছের সাথে এগিয়ে যেতেই মাথা নুইয়ে ফেলে আদিলের মা-বাবা। তৎক্ষনাৎ স্বচ্ছ বলে ওঠে,
“তাহলে কি ভাবলেন? ছেলেকে আরেকটা বিয়ে দেওয়ার অপরাধে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া যাক?”

আদিলের বাবা এগিয়ে এলেন। বেশ বিনয়ের সুরে বললেন,
“এমনটা করো না বাবা। এমনি ছেলেকে মেরেছো এর বদলে আমরা মেনে নিয়েছি। পুলিশে ধরিয়ে দিলে মানসম্মান থাকবে না।”

“কিন্তু আমি তো খবর পেয়েছি মোহের মিমিকে কল দিয়ে যা ইচ্ছে তাই শুনিয়ে দিয়েছেন আপনার স্ত্রী? মোহ অপয়া? অলক্ষ্মী?”

আদিলের মা মাথা নাড়ায়। স্বচ্ছ হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“মোহ আপনাদের সস্তার ছেলেকে ডিজার্ব করে না। এটাকে হয়ত বাদরের গলায় মুক্তর মালা বলে। আমি আমার মোহকে কোনো থার্ডক্লাস পরিবারের হাতে তুলে দেব না।”

মোহের হাতটা ধরে স্বচ্ছ। ধরেই টেনে নিয়ে কেবিনে যায়। মোহ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে স্বচ্ছ নামক লোকটির দিকে। ‘আমার মোহ’ বলতে কি বুঝাতে চাইলো স্বচ্ছ?

চলবে…

#একটুখানি_সুখ
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৬

মাথাটা ঝিমঝিম করছে মোহের। এখনো বেশ ঘোরের মধ্যে আছে সে। স্বচ্ছের এমন আচরণ তার মনকে বেশ প্রভাবিত করছে। এই উদ্ভট লোকটার রহস্যভেদ করতে না পেরে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখজোড়া স্থির স্বচ্ছের দিকে।

“বইন, আমায় মাফ করে দাও। আর জীবন থাকতে কোনো মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব দেওয়া তো দূর আমার বর্তমান বউয়ের কাছে যেতেও একশবার ভেবে নিব।”
আচমকা এমন কাতর সুরে বলা কথাতে চমকে উঠে কেবিনের বেডের দিকে তাকায় মোহ। চোখের পলক পড়ে না তার। বিস্ময়ের সাথে দেখে নেয় আদিলকে। কপালে ইয়া বড় ব্যান্ডেজ, চোখের নিচে, ঠোঁটের নিচে ফোলা। হাতে প্লাস্টার করা। পায়েও প্লাস্টার করে ঝুলিয়ে রাখা। কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকে বেশ ঘৃণা সৃষ্টি হলো মোহের মনে। কার সাথে বিয়ের সম্মন্ধ ঠিক হয়েছিল তার? এই নর্দমার কীটের সাথে। ভাবতেই রাগে শরীর রি রি করে উঠল। আঙ্গুল উঁচিয়ে আদিলকে বলল,
“আপনি তো কথায় বলবেন না। আপনাকে তো খুন করে দেওয়া উচিত ছিল। ফোনটা কোথায় যেন? আমি এক্ষুনি পুলিশে কল করব।”

“আমি মাফ চাই। জীবন থাকতে আর এই কাজ করব না। এমনটা করবেন না বোন প্লিজ।”

আদিলের এরূপ কথা শুনে দম ফাটিয়ে হেঁসে ওঠে স্বচ্ছ। হাসি যেন থামাতেই পারছে না। তার হাসি শুনে কিছুটা আঁতকে উঠল আদিল। কেননা কালকে তাকে যেভাবে স্বচ্ছসহ তার কয়েকটা বন্ধু মিলে তাকে পিটিয়েছে তার পর থেকে স্বচ্ছের মুখটা দেখলেও তার ভয় ভয় লাগছে। তার ওপর কাল স্বচ্ছ নিজের আহত ছিল। মাথা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল রক্ত, পিঠে ছিল আঘাতের দাগ। তবুও শক্তি দমেনি তার। একধারে পিটিয়ে গেছে। কোনোমতে হাসি থামিয়ে স্বচ্ছ বলে ওঠে,
“উপপস… কাল পর্যন্ত না ও তোর হবু বউ ছিল। আজকে বোন হয়ে গেল? এতো চেঞ্জ? ওয়াও!”

এবার মোহ বিরক্ত হচ্ছে। সে অকপটে বলে ওঠে,
“কেন নিয়েছেন এই জঘন্য লোকের কাছে আমায়? এভাবে হাসির খোরাক বানাতে?”

স্বচ্ছ এগিয়ে মোহের পাশে এসে দাঁড়ায়। ব্যাঙ্গাত্বক সুরে বলে,
“তোমার হবু বর সে। ওর কিছু হলে তোমার সাথে ওর দেখা করানোটা আমার দায়িত্ব নয় বলো বলো? তাই তো বলি তোমরা মেয়েরা খুব স্বার্থপর হও। একটু দেখবে না নিজের হবু বরের কি অবস্থা হয়েছে?”

“হবু বর মাই ফুট!”
পা দিয়ে সজোরে ফ্লোরে আঘাত করে চোখমুখ লাল করে বলে মোহ। স্বচ্ছের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে নেয় সে। কিন্তু স্বচ্ছ হাত ধরে তার। আঁটকে দেয় তার চলা। এবার হাসি বাদ দিয়ে বেশ থমথমে গলায় বলে,
“আদিল যতক্ষণ না তোমার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে ততক্ষণ তুমি কোথাও যাচ্ছো না।”

“দরকার নেই আমার। এমন লোকের মুখোমুখি হতেও আমার গা ঘিনঘিন করছে।”

“কিন্তু আমার দরকার আছে। তোমার দরকার বা অদরকারের কথা আমি শুনতে চাইনি। আমার কাছে প্রতিটি মেয়ের সম্মান অনেক দামি। বিশেষ করে ‘মোহ’ নামক মেয়েটির। তার সাথে করা অন্যায় বা তাকে করা অসম্মান আমি দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিতে চাই কারণ… ”

“কারণ?”
ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে মোহের। অধীর আগ্রহে যেন অপেক্ষা করছে স্বচ্ছের কথার। কেন সে স্বচ্ছের কাছে বিশেষ? জানতে বড্ড মন চাইছে তার।

“বিকজ তুমি আমাদের বংশের মেয়ে। ভুলে গেছো?”
কিছুটা থতমত খায় মোহ। অদ্ভুতভাবে আশাহত হয় সে। মোহের মন তাহলে কি চাইছিল? স্বচ্ছ অন্যকিছু বলুক? সেটা মোহের নিজেরও জানা নেই।

পিছু ফিরতেই স্বচ্ছ ও মোহ দেখে আদিল ইতিমধ্যে কাঁদো কাঁদো চোখমুখ নিয়ে হাতজোড় করে শুয়ে আছে। আর যাই হোক ভয়ানকভাবে মাইর খেতে রাজি নেই সে।
“আমাকে মাফ করে দাও মোহ। আমি আর জীবন থাকতে এমন করব না।”

“আপনার মতো মানুষকে মাফ করা যায় না। পারলে নিজের স্ত্রী নিয়ে সুখে সংসার করুন। অর্থের কারণে অন্য মেয়েকে নিজের ফাঁদে ফেলতে যাবেন না। আপনাদেরও তো যথেষ্ট আছে। তাহলে অন্যের সম্পত্তির প্রতি এতো লোভ কেন? এরপর এমন জানলে আমি নিজ দায়িত্বে পুলিশের কাছে তুলে দেব আপনাকে।”

আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না মোহ। কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। দম বন্ধ লাগছে তার। এসব লোকজনের সাথে কথা বলতে তার মোটেও ভালো লাগে না। পিছু পিছু আসে স্বচ্ছ। নেভি ব্লু শার্টের ওপরের বোতাম একটা টেনে টেনে খুলতে মোহের পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করে সে। মোহ বাঁকা চোখে তাকায় তার দিকে। স্বচ্ছের বুকের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। বেশ ঘেমেছে সে। ঘর্মাক্ত দেহে শার্টও কিছুটা ভিজে। মুখেও ঘাম। এসি থেকে বেরিয়ে আরো বেশি গরম লাগছে তার। তবে মোহের এই দৃশ্যটা কেন যেন খারাপ লাগছে না। ঘর্মাক্ত চেহারায় কোনো পুরুষকে অদ্ভুত সুন্দর আর সুদর্শন লাগে তা তো জানা ছিল না মোহের! তা নজর এড়ায় না স্বচ্ছের। মৃদু হেঁসে বলে,
“এভাবে দেখার দরকার আছে? তুমি চাইলে পুরো শার্ট খুলে দেখিয়ে দিতে পারি। ইভেন, তোমায় বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বিয়েটা হলে এমনিই সব দেখতে পেতে। চাইলে অলওয়েজ খালি গায়ে বসে থাকতাম তোমার সামনে।”

এসব কথাবার্তায় দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয় মোহ। লোকটাকে যখনই একটু ভালো ভাবতে যায় অসভ্য কথাবার্তা বলে মোহকে পাহাড়ের সমান লজ্জা পাইয়ে দেয়। রাগ, বিরক্ত, লজ্জা সব মিশ্রিত হয়ে চোখমুখে ঘাম বেশি জমতে শুরু করেছে মোহের। সে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
“আপনি একটা যা তা! ছিঃ!”

স্বচ্ছের ঝংকার তোলা হাসির আওয়াজ পাওয়া গেল। ধক করে উঠল মোহের ভেতরটা। বেশ খানিকটা সামনে চলে এসেছিল সে। পিছু ফিরে তাকালো। হাসোজ্জল চেহারায় স্বচ্ছকে সত্যিকারের স্বচ্ছ মনে হয়। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল মোহ। আবারও মুখ ফিরিয়ে হাঁটতে শুরু করল সে। তার মুখেও মৃদু হাসি। হাসির কারণ সে জানে না। স্বচ্ছ হাসছে তাই সেও হাসছে।

রাত প্রায় এগারোটা পেরিয়ে সাড়ে এগারোটাতে ঠেকেছে। মোহ একনাগাড়ে কল করে চলেছে আয়মানের নম্বরে। চোখেমুখে চিন্তার রেশ। পুরো ঘরজুড়ে এমাথা-ওমাথা পায়চারি করছে সে। মাঝে মাঝে বিরক্তিকর শব্দ করে বারংবার চেষ্টা করে যাচ্ছে আয়মানের ফোনে কল লাগানোর। এমন সময় দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েন মিসেস. নিরা। মোহকে কিছুটা বকতে বকতে বলেন,
“তোকে সারাজীবন দেখছি খাইয়ে যেতে হবে। মাথাব্যথা ভাবলাম শুয়ে থাকব। কিন্তু কলির থেকে শুনলাম তুই খাওয়াদাওয়া কিচ্ছু করিসনি। একা একা কি খাওয়াদাওয়া করা যায় না? সারাজীবন কি তোর মিমি থাকবে?”

মোহের কোনো উত্তর নেই। মাথা উঠিয়ে তাকালো মিসেস. নিরা। মেয়েটাকে বেশ চিন্তিত লাগছে। এগিয়ে গেল খাবারের ট্রে হাত থেকে টেবিলে রেখে এগিয়ে এলেন মোহের দিকে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসে ছিল মোহ। তার এক হাতে ফোন। মাথায় মায়ের বোনের স্নেহভরা স্পর্শ পেয়ে চোখ পাকিয়ে তাকালো সে।
“কি হয়েছে? এমন দেখাচ্ছে কেন তোকে?”

“মিমি! আয়মান আমার ফোন ধরছে না। মানে ওর ফোন বন্ধ বলছে।”

“হঠাৎ? তুই বলেছিলি আয়মান এখন বান্দরবানে আছে। অফিসের কোনো কাজে গেছে সে। অনেকদিনের কাজ। নতুন চাকরি। আর ওখানে নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না।”

মোহ মাথা নাড়ায়। ক্ষীণ সুরে বলে,
“উঁহু, আয়মানের ফোন কখনো বন্ধ থাকবে না। অফিসিয়ালি কথাবার্তাও ফোনেই বলে সে। আর নেটওয়ার্ক নেই ঠিক আছে। তাতে তো ফোন বন্ধ দেখাবে না। আয়মান নিজে থেকে একবারও কল করার ট্রাই করেনি আমায়।”

“নিশ্চয় কোনো সমস্যা হয়েছে। তুই চিন্তা করিস না। আমি পানি নিয়ে আসিনি। তোর ঘরেও তো দেখছি পানি নেই। কি যে করিস না! দাঁড়া পানি নিয়ে আসি।”

মোহ প্রতিত্তোরে কিছুই বলে না। মিসেস. নিরা বেরিয়ে যান ঘর থেকে পানি নেওয়ার জন্য। মোহ আবারও ফোন করার চেষ্টা করে। তবুও লাভ হয় না সে। হতাশ ভঙ্গিতে হাত-পা ছড়িয়ে বিছানায় বসতেই টুং করে মেসেজ টোন বেজে ওঠে। তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে ধরে মোহ। একটা ভয়েজ মেসেজ এসেছে। তাও আয়মানের নম্বর থেকে। আর বিলম্ব না করেই ভয়েজ মেসেজটা অন করে সে। শুনতে পায় গমগমে কন্ঠে আয়মানের।
“আই এম সরি মোহ। আমি যতই মধ্যবিত্ত হই কিন্তু তোমার মতো একটা মেয়ে যে কিনা একসাথে দুজনের সঙ্গে ডাবল ডেট করে। আমি তোমায় নিজের পরিবারে নিয়ে গিয়ে নিজের সংসার নষ্ট করতে চাই না মোহ। তোমার সাথে সম্পর্ক তখনই শেষ হয়েছে যখন নিউজ পেয়েছি। একটু দেরিতে হলেও নিউজটা এসেছে আমার কাছে। আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ। কারোর সঙ্গে ডাবল ডেট করার থেকে কাউকে বিয়ে করে নাও। ভালো হবে তোমার জন্য। ভুলেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না আমার সাথে। বাই।”

শ্বাস রোধ হয়ে আসছে মোহের। চারিদিকে তিক্ততা বাড়ছে। মনে বাড়ছে ঘৃণা। এবার ঘৃণাটা আয়মানের প্রতি। একটি সম্পর্কের সাথে যদি একটি গাছের তুলনা করা হয় তাহলে গাছের মূল ভিত্তির মতো সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসটা যখন সামান্য বিষয়ে ভেঙে যায় সেই সম্পর্কটা মূল্যহীন হয়ে যায়। আয়মানের কি উচিত ছিল না মোহের কাছ থেকে সবটা শোনা? দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে মোহ। তৎক্ষনাৎ বিকট আওয়াজে চোখ খুলে ফেলে সে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মিসেস. নিরাকে। কাঁচের গ্লাস নিচে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। থরথর করে কাঁপছেন মিসেস. নিরা। মোহ দ্রুত বেড থেকে নেমে ছুটে এগিয়ে যায়।

“মিমি…”

“চুপ কর। আমি বলেছিলাম মোহ তোর ওপর যদি ছেলেটার বিশ্বাস থাকে তবেই হ্যাঁ বল। ও যদি এসব জেনেও তোকে বিয়ে করতে রাজি থাকে তাহলে হ্যাঁ বল। কিন্তু কোথায় গেল ছেলেটার বিশ্বাস? একটা সামান্য নিউজের জন্য বাকি সবার মতো ফেলে চলে গেল তো? এখন কি হবে তোর? কে বিয়ে করবে তোকে?”

মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে মোহ। কারণ সে আসলেই ভুল ছিল। আয়মানের ওপর বিশ্বাস করে মিমিকে বলেছিল সে বিয়েতে রাজি হবে। কিন্তু কি করল আয়মান? মোহ চুপ থেকে কিছু বলতে উদ্যত হতেই মিসেস. নিরা তাকে থামিয়ে বলে,
“তোর কথা শুনে অনেক কিছু হয়েছে। আর না। আমি তোর কাছ থেকে কোনো কথা শুনতে চাইছি না। আমি ঘরে যাচ্ছি মাথাব্যথা করছে ভীষণ। আমায় একা থাকতে দে। খাবার এনেছি খেয়ে নে। একটু পর কলি এসব পরিষ্কার করে যাবে।”

মোহের কোনোরূপ কথা না শুনে চলে গেলেন মিসেস. নিরা। মোহ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকল কিছুক্ষণ। মনে মনে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে থাকল সে। খাবার খাবারের মতোই রেখে এসে ধপ করে শুয়ে পড়ল বিছানায়। চোখ বুঁজে এলো তার। চারিদিকে বিষাক্ত! তার #একটুখানি_সুখ চাই। তাও কি সে পাবে না?

সকালের ঘুমটা ভাঙে মোহের কলির ডাকাডাকিতে। গভীর ঘুমটা ভাঙাতে বেশ বিরক্ত হয় সে। ঘুম জড়ানো সুরে বলে ওঠে,
“কলি ঘুমাতে দাও। বিরক্ত করবে না।”

“নিরা ম্যাডাম ডাকলে সারা দেয় না। কিছু একটা হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি আসেন না মোহ ম্যাডাম।”

কথাটুকু কানে আসামাত্র চোখ মেলে মোহ। বুকটা ধক করে ওঠে তার। মনে আঁকড়ে ধরে হারাবার ভয়। মূহুর্তেই উঠে বসে সে। চোখ ডলে দ্রুত বলে,
“কি হয়েছে? কি হয়েছে মিমির?”
কথাটা বলার পরই উঠে দাঁড়ায় সে। সেভাবেই ছুটে ঘর থেকে বের হয়। মিসেস. নিরার ঘরে পৌঁছাতেই দেখে বেশ কয়েকটা মেয়ে সার্ভেন্টের ভীর। কেউ তাকে ডাকছে কেউ পানি ছিটাচ্ছে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মোহের। সবাই ঠেলে বসে পড়ে মিসেস. নিরার কাছে। উনার হাত ধরে পাগলের মতো ডাকতে থাকে মোহ।

“ও মিমি! মিমি! তাকাও। কি হয়েছে তোমার? সাড়া দাও না একটু। তাকাও।”
সাড়া নেই মিসেস. নিরার। চোখ ভিজে আসে মোহের। একে তো মা-বাবাকে সদ্য হারিয়েছে। এরমধ্যে যদি এই মানুষটার কিছু হয়ে যায় ভেঙে পড়বে সে। এরই মাঝে কলি বলল,
“হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে হয়ত ম্যাডামকে। সময় বেশি নাই।”
মোহের হুঁশ এলো। তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নেয় সে। এম্বুলেন্সে কল করতে গিয়েও করে না। আসতে সময় লাগবে। গাড়িতে করেই হসপিটালের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তাকে।

প্রায় আধঘন্টা ধরে কেবিনের বাহিরে বসে আছে মোহ। স্বচ্ছ দাঁড়িয়ে আছে বেশ খানিকটা দূরে। রোবটের মতো একই জায়গায় বসে থাকা মোহকে পর্যবেক্ষণ করছে সে। মিসেস. নিরার ছেলে আর মেয়ে ছুটে এসেছে। তারাও কান্নাকাটি করছে। কিন্তু মোহ স্থির ভাবে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। যেন খুব গভীর একটা চিন্তাভাবনা করছে সে। স্বচ্ছ তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মেয়েটা এক মূহুর্তে কেমন যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। এমন সময় কল আসে স্বচ্ছের ফোনে। কলটা বিরক্ত নিয়েই ধরে স্বচ্ছ। কিন্তু ওপাশ থেকে কিছু শোনার পরই স্বচ্ছ চমকে ওঠে।

“হোয়াট দাদিমা আরো অসুস্থ হয়েছে? কেন?”

কথাটা মোহের কান অবধি পৌঁছায়। স্বচ্ছের দিকে তাকায় সে। কথা বলা শেষে আরো মুখটা ভার হয়ে যায় স্বচ্ছের। উঠে দাঁড়ায় মোহ। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসে স্বচ্ছের দিকে। স্বচ্ছ কিছুটা বিস্ময়ের সাথে তাকায় তার দিকে। মোহের ফোলা ফোলা চোখমুখ বলে দিচ্ছে সে কতটা চিন্তিত। আচমকা মোহ থমথমে সুরে বলে ফেলল,
“আপনি আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন না? আমি সেই প্রস্তাবে রাজি আছি। বিয়ে করবেন আমাকে?”

চলবে….

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার কোনো ভিত্তি নেই।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে