একজোড়া চড়ুই পর্ব- ১২

0
1342

একজোড়া চড়ুই?️?️
#পর্ব_১২
#Writer_Afnan_Lara
?
আমাকে আপু ডাকতে হবে না,আমাকে তুই বললেও পারেন কারণ আপনার মতে তো আমি ছোট
.
নাহ,তুমি যখন ভাইয়া বলে ডাকসো তো আমার ও তোমাকে আপু ডাকা সাজে
.
ভালো ডাকেন,তা খাগড়াছড়ি ফিরবেন কবে?
.
এইতো কাল পরশু
.
আমিও
.
আমার সাথে ফিরবে?
.
আবার শাপলা চুরি করবো,সাথে ডাব আর নারকেল ও
.
নাহ,এবার ঐ বিলের মালিক কড়া করে সিকিউরিটি রাখসে নির্ঘাত ধরে ফেলবে
.
তাহলে অন্য কিছু চুরি করবো,বাট চুরি যে করবো এটা সিউর?
.
তুমি এগুলা শিখসো কই থেকে?
.
শিখার কি আছে?চোখের সামনে মজার মজার খাবার ঝুলবে কেউ নিতেসে না তো আমার তো দায়িত্ব ওগুলা নিয়ে নেওয়ার
.
তোমাকে বোঝানো আমার পক্ষে অসম্ভব!
এই এই এক মিনিট,, ডাকটা শুনতেসো?
.
হুম,পাখির ডাক
.
কি পাখি বলোতো
.
আমি কি জানি,আমি কি পাখি বিশেষজ্ঞ নাকি?
.
আরেহ এটা চড়ুই পাখির ডাক,আমাদের বাসার চারপাশে সারাদিন চড়ুই পাখির ডাক শুনি,তোমরা শুনো না?
.
না তো,শুনলেও চিনি না
.
দাঁড়াও!
.
শ্রাবণ ছোঁয়ার হাত ধরে উঠালো,তারপর পা টিপে টিপে একটা গাছের কাছে এসে দাঁড়ালো
.
আমাকে চুরি করতে মানা করে এখন আপনি চুরি করতেসেন?এটা কিন্তু নুহাশ পল্লী
কিছু চুরি করলে সোজা জেলে
.
আরে না দেখোই না চুপ করে!একটু উপরে উঠো
.
আপনার মাথা কি গেসে নাকি!আমি গাছে উঠবো কেন?
.
তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো,যেটা আগে লাইভ দেখোনি কখনও
.
ছোঁয়াও অনেক ইন্টারেস্ট নিয়ে উঠলো,শ্রাবণ ওকে আঙ্গুল দিয়ে সামনে দেখালো
দুটো ঢালের কোণায় এক জোড়া চড়ুই বাসা বেঁধেছে,ডিম ও আছে,ছোঁয়া তো হা করে তাকিয়ে আছে,ফোন আনলে ছবি তুলতে পারতো,ইস কি কিউট!
চুড়ই গুলো নড়েচড়ে উঠতেই শ্রাবণ ভয়ে হাত ছেড়ে দিলো গাছ থেকে
ব্যস নিজে তো পড়লোই সাথে নিয়ে ছোঁয়াকেও ফেললো
একদম গিয়ে সে ছোঁয়ার গায়ের উপরই পড়তে গেলো
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে স্থির হয়ে আছে মাটিতে
তারপর পিঠে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিঁচিয়ে ফেললো
নিশ্চয় ব্যাথা পেয়েছে
শ্রাবণ ঠিক হয়ে বসে ছোঁয়ার দিকে তাকালো
ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে বারবার পিঠের দিকে তাকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে
শ্রাবণ এক নজর তাকাতেই দেখলো ছোঁয়ার পিঠের উপরে জামা ছিড়ে গেসে অনেকটা
তাই সে ছোঁয়ার ওড়নাটা টেনে পিঠে জড়িয়ে দিয়ে বললো”চলো ফিরে যাই
আর সরি,আমার জন্য ব্যাথা পেলে”
.
ছোঁয়া শ্রাবণের কথায় উঠে দাঁড়ালো,কিভাবে পড়সে দুজনে,ছোঁয়া তো লজ্জায় লাল হয়ে আছে
শ্রাবণ তার মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বাইকে উঠে বসলো,এখন রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ছোঁয়া বললো সে বাসায় ফিরে যাবে
শ্রাবণ আর জোর করলো না,ছোঁয়াকে বাসায় পৌঁছে দিলো সে
ছোঁয়া নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো,বুকের ভেতর এখনও কেমন যেন করতেসে,তাড়াতাড়ি করে জামাটা চেঞ্জ করে বাসার একটা জামা পরে নিলো
ইতি নাকি রিয়ানের সাথে দেখা করতে গেসে,যাক ভালো এটা শুনে ছোঁয়া খুশি হলো অনেক,তার বোন খুশি তো সেও খুশি
শ্রাবণ বাসায় ফিরে সেই একজোড়া চড়ুইকে বকতে লাগলো,তাদের জন্য আজ এমন সিচুয়েশনে পড়তে হলো তার
গিয়ে একেবারে ছোঁয়ার গায়েই পড়লো!!
ছোঁয়া তো আমার চাইতে বেশি লজ্জা পেয়েছে তাই তো আর রেস্টুরেন্টে খেতেও আসলো না
.
কিরে শ্রাবণ এমন মিট মিট করে হাসতেসিস কেন?
.
না কিছু না মা,আমি কাল ভোরবেলা রওনা দিব খাগড়াছড়ির জন্য
.
আচ্ছা,কোথায় ভাবলাম তোর বিয়েটা দিয়ে দিব এবার তা আর হলো না,আচ্ছা শুন,আঁখিকে মনে আছে তোর?
.
ছোট খালার মেয়ে,ওরে ভুলবো কেন?
.
ওরে তোর কেমন লাগে?
.
মা প্লিস,আবার শুরু করো না,তোমার পুত্রবধূ লাগবে তো??আমি নিজের পছন্দে একটাকে নিয়ে আসবো,ঠিক আছে?
.
খাগড়াছড়ির?
.
আরে না,তোমার পছন্দেরই আনবো,ঠিক আছে?
.
সব কিছু রেডি করার আগে আমাকে একবার জানাইস,কেমন?
.
হুম,ঠিক আছে
.
ছোঁয়া ভাবতে ভাবতে নিজের জামাকাপড় ঘুছাচ্ছে,মাকে বলেছে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে যাবে, কথাটা শুনে মা ও টেনসন ফ্রি হলো
.
পরেরদিন আবার ভোর হতে না হতেই ছোঁয়া তড়িগড়ি করে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছে,শ্রাবণ বলেছে এখান থেকেই পিক আপ করবে
ইতি আপু এসব সম্পর্কে কিছু জানে না,ছোঁয়া জানায় ও নি,জানলে তুমুল কান্ড করবে তা জানা আছে ছোঁয়ার
আর ইতি বললো রিয়ান নাকি তার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না আপাতত ,সে নিয়ে ইতি আপু মন মেজাজ চরগ গাছ করে রেখেছে
ছোঁয়া ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রাবনের জন্য অপেক্ষা করছে
একদম ভোরবেলা যাকে বলে,ঠান্ডা তার উপর কারোর বাসার জানালা খোলা নেই,রোডে একটা মানুষ ও নেই,আবিদ ভাইয়া বাসার সামনে এসে ছোঁয়াকে পাহারা দিচ্ছে,আদরের ছোটবোনকে একা রোডে দাঁড় করিয়ে রাখতেও সে চায় না,তাই ঘুম থেকে উঠে বোনকে পাহারা দিচ্ছে সে
শ্রাবণ আসতে আসতে ১০মিনিট দেরি করলো,আবিদ শ্রাবণকে দেখতে পেয়ে বাসার ভেতরে চলে গেসে
ছোঁয়া আর দেরি না করে বাইকে উঠে বসলো
.
সরি লেট হলো মনে হয়,কি করবো মা সবসময় আমি ফিরে যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করে
.
হুম বুঝছি
.
পিঠে মলম লাগিয়েছিলে?
.
আবার মলম!এইটুকুতে কিসের মলম লাগাবো আমি?
.
ওমা,কতটা ছড়ে গিয়েছিল আর তুমি বলতেসো কিসের মলম?
.
ও কিছু না,এমনিতেই বাতাসে ঠিক হয়ে যাবে
.
বাতাসে ঠিক হলে বাজারে মলম আসতো না
.
কেয়ারিং দেখাচ্ছেন?
.
না তো,আমার কেয়ারিং অন্যরকম
.
কিরকম?
.
ধরো তোমাকে কেয়ারিং দেখাবো তো জোর করে মলম লাগাবো,এখন তো জোর করতেসি না তাই এটা কেয়ারিং এর আওতায় পড়ে না
.
আচ্ছা বুঝলাম
.
চকলেট নিয়েছো?তোমার তো আবার ৬বার বমি করার অভ্যাস
.
নিতে ভুলে গেসি
.
জানতাম,আমি কিন্তু নিয়েছি
.
এত এত!!আপনার হলোটা কি বলুন তো
.
আমরা তো ভালো বন্ধু,আর ভালো বন্ধুর এইটুকু খেয়াল রাখাই যায় তাই না?
.
হুমমম!হতে পারে,দিন চকলেট
.
বমি আসতেসে নাকি?
.
না,কিছু গিলতে মন চাচ্ছে,তাড়াহুড়োই কিছুই খাইনি
.
ভোরবেলায় আবার কিছু খেতে হয় নাকি?ভোরের পরিবেশ দেখলেই পেট ভরে যায়
.
তা ঠিক বলছেন হাহা,আপনার কথাগুলো শুনলে মনে হয় আমি আরেকটা দুনিয়ায় আছি
.
ভবিষ্যতে বলবা আসলেই তুমি আরেকটা দুনিয়ায় আছো
.
তা আপনার বিয়ের কি খবর?
.
সেই আগের খবরই,মা এবার আমার খালাতো বোনের পিছনে লেগেছে
.
বিয়ে করে ফেলেন,অনেকদিন হলো রোস্ট খাওয়া হয় না
.
তাই বুঝি!যদি আমি বিয়ে না করে তোমাকে রোস্ট খাওয়াই??
.
তাহলে আর বিয়ের জন্য জোর করবো না মশাই
.
আচ্ছা তাহলে খাওয়াবো,তুমি অনেক পেটুক,সে অনুযায়ী তোমার বডি চিকন,সব খাওয়া যায় কই?
.
মাথায়!?

এখানে রাস্তা অনেক খারাপ,উদয়পুরের তো আরও বেশি খারাপ,শক্ত করে ধরিয়েন ম্যাডাম
.
হুম!
.
ইতির কি খবর,আমাকে বিয়ে করবে নাকি রিয়ানকে নাকি অন্য কেউ আছে
.
মনে হয় রিয়ান ভাইয়াকে মানিয়ে নিয়ে তাকেই বিয়ে করবে
.
তাহলে ভালো,আমি বেঁচে গেলাম
.
থামান,বমি আসতেসে
.
শ্রাবণ বাইক থামিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকালো,ছোঁয়া মাথায় হাত দিয়ে কাঁপতেসে
.
ছোঁয়া আমার দিকে তাকাও
.
কি?
.
হাত মুঠো করো
.
তারপর?
.
শক্ত করে মুঠো করে ধরে রাখো
.
ছোঁয়া তাই করলো,তার বমি আসলো না,চোখ বড় করে সে শ্রাবণের দিকে তাকালো
.
কেমন লাগলো ট্রিকটা??
.
ভালো,হুহ!বমি করলে শান্তি লাগতো, আমার শরীর খারাপ করতেসে
.
চকলেটটা মুখে দাও,আর এখান থেকে হেঁটে আসো একটু
.
হুম
.
ছোঁয়া বাইক থেকে নেমে এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করতেসে,দুপাশে বন আর বন,আর কিছু নেই,আর ফাঁকা রোড,অনেকক্ষণ বাদে বাদে লেগুনা যায়,বাস যায়,ট্রাক যায়
.
এবার ঠিক লাগতেসে,চলুন
.
পথে ছোঁয়া জাস্ট একবারই বমি করলো তাও কত চকলেট যে খেয়েছে সে
আসতে আসতে বিকাল হয়ে গেছে,ছোঁয়া ফুয়াদের সাথে বাড়ি ফিরে গেসে
শ্রাবণ নিজের বাসায় এসে রান্নায় লেগে পড়লো
ছোঁয়া বিছানায় শুয়ে ফোনটা হাতে নিলো পরে ভাবলো এখন কল দিলে কি না কি ভাববে,থাক কল দিবো না
.
শ্রাবণ ও কল দিতে গিয়েও দিলো না
রেখে দিলো ফোন
.
ছোঁয়া নিজেকে ফ্রেশ করতে একটু বারান্দায় এসে দাঁড়ালো,কোকিলা মোদি আন্টি আচারের সব বোয়াম সরিয়ে নিয়েছে যখন শুনসে আজ ছোঁয়া আসবে
ছোঁয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হেসে দিলো তারপর ফোন নিয়ে মা বাবার সাথে একটু কথা বলে নিলো তাও সময় কাটতেসে না তার
আরওয়া তার স্কুল থেকে এসে মরার মতন ঘুমাচ্ছে, খালামণি টিভি দেখতেসেন,ফুয়াদ ভাইয়া তার রুমে,আর খালু বাজারে
ছোঁয়ার কেমন বোরিং বোরিং লাগতেসে,মন চাচ্ছে শ্রাবণের সাথে বসে অনেক অনেক আড্ডা দিতে
কিন্তু তা সম্ভব না
এসব ভাবতে ভাবতেই সে ফোনের দিকে চেয়ে দেখলো শ্রাবণের কল
সাথে সাথে মুখে হাসি ফুটলো তার
রিসিভ করে হ্যালো বললো জলদি
.
আমার কলের অপেক্ষা করতেসিলে বুঝি
.
না তো?
.
আচ্ছা যাই হোক,তা ম্যাডাম আমার বাসায় আসতে পারবেন??
.
কেন?
.
আড্ডা দিতাম,বিকাল কাটতেেস না আমার
.
আমারও
.
বাসা চিনবেন তো??আমার বাড়ির রং মনে আছে?
.
হিহি!চিনবো চিনবো,এখন অনেকটাই চেনা হয়ে গেছে
.
ওকে আসেন,আমি নাস্তা বানাই
.
না,আমি এসে বানাবো,আপনি বসুন
.
ওকে তাহলে
.
ছোঁয়া ওড়নাটা গলায় দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লো
খালামণি একবার জিজ্ঞেস ও করলেন না
কারণ উনি জানেন ছোঁয়া এখন আর বাচ্চা নেই,ম্যাচিউরিটি এসেছে তার মধ্যে,তার একটা স্বাধীনতা আছে,তাকে তা দেওয়া উচিত
যদি জিজ্ঞেস করে কই যাচ্ছিস তাহলে ছোঁয়া ব্যাপারটা কি ভাবে নিবে এসব ভেবেই তিনি কিছু বলেননি তবে ছোঁয়া যাওয়ার সময় বলেছে জলদি ফিরে আসবে
.
ছোঁয়া রিকসা নিয়ে চলে আসলো শ্রাবণের বাসায়
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে ওর অবস্থা খারাপ,শ্রাবণ এক গ্লাস পানি নিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে
ছোঁয়া অনেক কষ্টে উঠে পানি নিয়ে খেলো তারপর শ্রাবণকে আর বাড়িআলাকে গালি দিতে দিতে সোফায় ধপ করে বসে গেলো

আমি আর আপনার বাসায় আসবো না হুহ
.
আসিয়েন না
.
ছোঁয়া একটু জিরিয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলো,চটপট নুডুলস রেঁধে চা বসিয়ে চলে আসলো আবার
.
তো কি করতেসিলে এতক্ষণ?
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বোরিং টাইম কাটাচ্ছিলাম এই আর কি
.
আমি তো ঘুমাইতে চাইসি একটু তাও অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসতেসে না দেখে তোমাকে কল করলাম
.
ছোঁয়া ব্রু কুঁচকে শ্রাবণের দিকে চেয়ে আছে
.
কি এমন করে তাকাচ্ছো কেন?
.
আপনি আবার প্রেম করতেসেন?
.
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?
.
আমি রান্নাঘরে একটা লাভ পিলো দেখসি তাকের উপর সাজানো,যেটা ঐদিন দেখিনি
.
হাহা,সেটা থেকে বুঝলা আমি প্রেম করি?
.
হুম তাই নয়ত কি?
.
আরে বোকা ওটা মিতুল দিয়েছিল,আর আমি তাকে সাজিয়ে রাখিনি বেডরুম থেকে সেটা নিয়েছি আগুনে জ্বালানোর জন্য
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে