একজোড়া চড়ুই পর্ব- ১৩

0
1177

একজোড়া চড়ুই?️?️
#পর্ব_১৩
#Writer_Afnan_Lara
?
আচ্ছা সব আগুনে পুড়িয়ে ফেললেই কি মন থেকে মুছে যাবে?
.
তোমাকে অভ্র কিছু দিয়েছিল?
.
সে আমাকে ইগনোর ছাড়া আর কিছুই দেয়নি
.
তাহলে ইগনোরকে জ্বালাবা কি করে??
.
হাত পুড়লে হবে না?
.
তোমার মাথা কি গেছে নাকি?বোকা মেয়ে একটা,হাত পুড়তে যাবা কেন
.
তাহলে মনের ভেতরের আঘাতটা হয়ত যেতে পারে কিছুটা
.
দরকার নেই,কারোর জন্য নিজেকে কষ্ট দিয়ে কোনো লাভ হবে না,আমাকেই দেখো আমি ঠিক তাকে কষ্ট দিচ্ছি যার অস্তিত্ব নেই
তা হলো এই লাভ পিলোটা,এটা পুড়লে আমার আঘাত লাগবে না,মিতুলের ও না
.
আমার হাত পুড়লে আমার আঘাত লাগবে না,আমি ব্যাথা পাবো না
.
বাদ দাও তো,বাচ্চাদের মতো কথা শুরু করলে কেন আবার?যেভাবে বলতেসো যেন কত করে রাখসো
.
ছোঁয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো,ওড়না দিয়ে হাতের এপিঠ লুকিয়ে ফেললো সে
.
শ্রাবণ বুঝলো না,রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ফেরত আসলো সে
ছোঁয়া সোফার রুমে নেই,তার রুমের বারান্দায় ছোঁয়ার হাতটা দেখা যাচ্ছে
তাই শ্রাবণ কাপ হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে গেলো,ছোঁয়া মুখটা শক্ত করে বারান্দার গ্রিল ধরে রেখেছে,দূরের গাছগাছালির দিকে তার চোখ,তবে মন নিশ্চয় অন্যখানে
শ্রাবণ চায়ে চুমুক দিয়ে বললো”কাঁদো”
.
ছোঁয়া তার অন্যমনস্ক ভাবটা সরিয়ে শ্রাবণের দিকে চেয়ে রইলো
তারপর বললো”এখন নিশ্চয় বলবেন কাঁদলে মনটা হালকা হবে?”
.
না আমি এতো ফিল্মি না
.
তাহলে কি বলতেন?
.
বলতাম কাঁদো চিৎকার করে তাহলে ভেতরের অভ্র চলে যাবে
.
ঠিক বুঝিনি
.
শ্রাবণ বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো”অভ্র তোমাকে ভালোবাসেনি ছোঁয়া!তো যখন তুমি চিৎকার করে কাঁদবে তখন তোমার মনের মধ্যে থাকা অভ্র নামের ছেলেটি বিরক্ত হয়ে যাবে আর তারপর চলে যাবে সে প্রিয়ার কাছে”
.
ছোঁয়া হেসে ফেললো,তারপর হাসতে হাসতে চায়ে চুমুক দিলো
.
যাক বাবা ছোঁয়া মহারানীকে হাসাতে পারলাম
.
আপনার ওয়াইফ লাকি হবে
.
কেন কেন??
.
কারণ আপনার কথা অনেক সুন্দর
.
আর তোমার মন অনেক সুন্দর
.
ছোঁয়া চমকে শ্রাবণের দিকে তাকালো,কিছুক্ষন চেয়ে থেকে চোখ নামিয়ে আরেকদিকে ফিরে বললো “এই দুনিয়ায় মনের শুদ্ধতা দিয়ে কিছু হয় না,চেহারাটাই আসল,শ্যামবর্নের বা কালোদের তো উপন্যাসের খাতায় উপরের স্থান দেওয়া হয় বাস্তবে কজন শ্যামবর্নের মেয়ে হাসিমুখে বলতে পারবে যে তাকে কেউ আজ পর্যন্ত তার রুপ নিয়ে কিছু বলেনি?অন্তত আমি বলবো “না”
আমাকে তো মানুষ এখনও বলে
আসলে ছোট থেকে যদি জানতাম চেহারাই আসল তাহলে পড়ালেখায় মন না দিয়ে চেহারায় দিতাম,ছোট থেকে পাথর দিয়ে ঘষলে এতদিনে ফর্সা হয়ে যেতাম তাই না?
.
আচ্ছা তার পর?
.
মানে কি?
.
মানেটা সহজ,তুমি ফর্সা হলে কি হতো??তোমার জন্য ভালো ভালো পরিবারের থেকে সম্বন্ধ আসতো তাই না?
.
হয়তবা,তবে আমি এসব ভেবে কথাটা বলিনি,আমি বললাম ফর্সা হলে সমাজে একটু সম্মান পাওয়া যায়
.
সম্মান পেতে যে রুপটাই আসল তা কিন্তু নয়!তোমার মেধা থাকলে আর কি চাই
.
শুনুন,কবিদের মত বড় বড় কথা বলবেন না,আমরা শ্যামবর্ণের মেয়েরা কেমন দিন কাটাই তা শুধু আমরাই জানি
আপনারা উপর দিয়ে দেখে এসব বলতে আসবেন না একদম!
.
রাগ করো কেনো,ভালোই ভালোই তোমার মুড ভালো করার চেষ্টা করছিলাম একটু
.
লাগবে না যান তো!
.
শ্রাবণ মুখ বাঁকিয়ে নিজের ফোন নিয়ে খাটে এসে বসলো
.
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে দূরের দিকে চেয়ে আছে মন খারাপ করে,রাগ উঠতেসে খুব
তারপর ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে
শ্রাবণ পিছন পিছন আসতে আসতে বলতেসে “হঠাৎ চলে যাচ্ছো কেন”
ছোঁয়া শুধু বললো “ভালো লাগতেছে না”
শ্রাবণ ও আর কিছু বললো না,সারা সন্ধ্যা সারা রাত দুজনে ফোনে একটিবারও কথা বলেনি আর
পরেরদিন ছোঁয়া সকাল সকাল রেডি হয়ে স্কুলে এসেছে,এসেই শ্রাবণকে দেখতে পেয়েছে,সে ক্লাস করাচ্ছে ক্লাস ওয়ানের
ছোঁয়া বাইরে থেকে চেয়ে আছে সেদিকে
একটা স্টুডেন্ট মাথা উঁচু করে বললো”ছোঁয়া মিস এসেছে,আঁকা শিখবো”
.
শ্রাবণ মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখলো ছোঁয়া চলে যাচ্ছে,সে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ছোঁয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো
.
কি?
.
আমার সাথে রাগ করেছো কেন আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়ে কিছু বলেছিলাম?
.
নাহ,এমনিতেই একটু একা সময় কাটাতে চাই ব্যস
.
ঠিক আছে,আমি ততক্ষণ তোমার সাথে কথা বলবো না যতক্ষন না তুমি এসে বলো,বাই!
.
শ্রাবণ আবার নিজের ক্লাসে ফেরত এসে কাজে মন দিলো
.
ছোঁয়া তার ক্লাস গুলো করে বের হয়ে চলো গেলো স্কুল থেকে
.
শ্রাবণ বাসায় ফিরেছে ১ঘন্টা হয়েছে,রান্নাবান্না শেষ তবে কেমন যেন খালি খালি লাগতেছে,এর আগেও সে একা থাকতো এই বাসায়
তবে কেন যে হঠাৎ করে ছোঁয়ার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে তার দিনগুলো কেমন পাল্টে গেছে,মন চায় শুধু সারাদিন ওর সাথে কথা বলতে,অথচ মিতুলের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন তার এমন কোনোদিনই মনে হতো না
.
শ্রাবণ না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো,বিকাল হতেই আবার জেগে উঠে বসলো,ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো ছোঁয়ার মিসড কল ৩টা
তড়িগড়ি করে সে কল ব্যাক করলো
রিং হতে হতে কাটা যাওয়ার সময় রিসিভ হলো,ফুয়াদ ধরেছে
.
ছোঁয়া!শ্রাবণ ভাইয়া রিসিভ করেছে
.
ছোঁয়ার আওয়াজ শোনা গেলো না,মনে হয় বলেছে ফোনটা আমাকে দাও
ফুয়াদ ছোঁয়ার হাতে ফোন দিয়ে চলে গেছে
ছোঁয়া আস্তে করে বললো”একটু হসপিটালে আসবেন?”
.
শ্রাবণ থ হয়ে আছে,হসপিটাল কেন,আর ছোঁয়ার আওয়াজই বা এমন শুনাচ্ছে কেন
.
ছোঁয়া তুমি ঠিক আছো?কি হয়েছে তোমার?
.
আপনি আসুন,ফুয়াদ ভাইয়া থেকে এড্রেসটা নিয়ে
.
শ্রাবণ জলদি করে মুখটা ধুয়ে ফুয়াদের দেওয়া এড্রেসে চলে আসলো
ছোঁয়া হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে,হাতে ব্যান্ডেজ করা
শ্রাবণ দৌড়ে এসে মুখে হাত দিয়ে ছোঁয়ার দিকে চেয়ে আছে
ফুয়াদ দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছে
ছোঁয়া মুচকি হেসে বললো” আপনার সাথে হুদাই রাগ করছিলাম বলে এই বিপদ হলো”
.
কি ভাবে হলো এমন?
.
ফুয়াদ ফোনটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে এসে বললো”ভাগ্যিস আমি সাথে ছিলাম তা নাহলে ওকে এই এলাকায় কে হসপিটালে নিয়ে আসতো,আমি বারবার মানা করসি এলোমেলো হয়ে যেনো না হাঁটে,এক নাম্বারের নাছোরবান্দা হয়ে যাচ্ছে দিনদিন,আপনি বুঝান,মনে তো হয় আপনাকে মানে”
ফুয়াদ ভাইয়া কথাটা বলে চলে গেলো
.
শ্রাবণ চেয়ার টেনে বসে ছোঁয়ার হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো তারপর ছোঁয়ার কান টেনে বললো”হইছে শান্তি??আরও উড়ো বান্দরের মতো”
.
আর বকিয়েন না,এমনিতেও মা বাবা খালামণি অনেক বকেছে
তার উপর ডাক্তার বলেছে এই ব্যান্ডেজ নিয়ে নাকি আমাকে ২০দিন থাকতে হবে,আজব তো,আমি খাবো কি করে,আমাকে কে খাইয়ে দিব,শেষমেষ ডান হাত ভাঙ্গতে গেছে
.
ঠিক হয়েছে,তোমার এমন চঞ্চলতা এখন তোমার জন্যই ভারী পড়েছে
.
আপনি মনে হয় মহা খুশি?
.
হুম খুশি তো,তোমাকে বার বার মানা করছি এমন লাফালাফি করো না,এখন হলো তো?
.
যান তো,ভালোই ভালোই আনছি আমার অবস্থা দেখে আমাকে কোথায় একটু শান্তনা দিবে তা না করে বকেই যাচ্ছে
.
বকবো না তো কি করবো,বকার মতই কাজ করেছো,তোমাকে তো এখন লাঠি দিয়ে পিটানো উচিত
.
আপনি যাবেন নাকি আমি উঠে বের করে দিব
.
সেই অবস্থায় আছো তুমি?
এমনিতেও সামনা সামনি কথা না বললে ভালো লাগে না আর তুমি কিনা তোমার খালামণির বাসাতে ২৪ঘন্টা থাকার ব্যবস্থা করে নিলে??এবার কি করে কথা হবে?
.
হুহ!ঢং!আপনার বিয়ে হয়ে গেলে তখন ও কি বউয়ের সামনে আমার সাথে কথা বলবেন?
.
তখন বউ থাকবে,তোমাকে লাগবে কেন?
.
তাহলে আমি কেন আপনার সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করতেছি,আপনি তো বউ পেলে সব ভুলে যাবেন
.
তাহলে তুমি কি চাচ্ছো?
.
কিছু না,যান এখন
.
শ্রাবণ মুখ বাঁকিয়ে বাইরে এসে ফুয়াদের সাথে কথা বলতেসে
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে হসপিটালের রুমটা ভালো করে দেখে যাচ্ছে,আবার মাঝে মাঝে নিজের হাতের দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকাচ্ছে,এক্সিডেন্ট হয়েছে ১ঘন্টাও হয়নি সে এখন থেকে হাত নড়াচড়া করতেসে যেন তাড়াতাড়ি সেরে যায়
রোড দিয়ে হাঁটার সময় অন্যমনস্ক হয়েছিলো একটু ব্যস গাড়ীর ধাক্কাই দুম!
একদম কিনারায় ছিল বলে তেমন মারাত্নক ক্ষতি হয়নি তবে যা হয়েছে সেটাকেও মারাত্মক বলা যেতে পারে
শ্রাবণ ফুয়াদের সাথে কথা বলা শেষে আবার ছোঁয়ার কাছে ফেরত আসলো,ছোঁয়া আরেকদিকে ফিরে গেছে শ্রাবণকে দেখে
.
চলো
.
কোথায়?
.
আবার রোডের মাঝখানে দাঁড় করিয়ো রাখবো তাই
.
আমি আপনার সাথে কথা বলবো না, যান
.
বলিয়েন না,ফুয়াদ রিকসা এনেছে,সোজা বাসায় যাও তারপর ঔষুধ খেয়ে রেস্ট নিবা
কথাটা বলে শ্রাবণ ছোঁয়ার হাত ধরতে যেতেই ছোঁয়া হাত সরিয়ে ব্রু কুঁচকে তাকালো শ্রাবণের দিকে,তারপর কিসব ভেবেচিন্তে বললো”আমি এই ভাঙ্গা হাত নিয়ে যখন কল দিব ঠিক তখনি বাইক নিয়ে হাজির হবেন খালামণির বাসার সামনে
খালামণির বাসা একটা চিড়িয়াখানা যেকানে সব প্রানী নিজের মত করে কাউ কাউ করে,আরেকজন কি করে না করে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাঘামি নাই,আমি ঐ চিড়িয়াখানায় ভাঙ্গা হাত নিয়ে থাকলে মরেই যাবো,মাঝে মাঝে আপনার সাথে ঝগড়া করতে নয়ত আড্ডা দিতে চলে আসবো,ঠিক আছে?
.
আচ্ছা আসিয়েন,এখন চলুন
.
ছোঁয়া শ্রাবণের হাত ধরে নামতেই দেখলো ফুয়াদ মুচকি হেসে চেয়ে আছে,তারপর ওর সাথে রিকসায় করে বাড়ি ফিরার সময় সে ফুয়াদকে জিজ্ঞেস করলো তখন এমন করে হাসতেসিলে কেন
.
ফুয়াদ হাসি থামিয়ে বললো”শ্রাবণ ভাইয়াকে পছন্দ করো বুঝি?”
.
একজনকে পছন্দ করে মাটিও খাইসি মাটির নিচের পানিও খাইসি,আর শখ নাই আমার
.
আরে এমন সবাই বলে,এক প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া মানুষই দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়ে যায় তবে সেটা বুঝতে পারে না
.
আমি আজকাল আমার আশেপাশে সব কবির আগমন দেখতেছি,কি ব্যাপার বলোতো?
.
তোমার সাথে এমন ঘটনা ঘটছে তাই সব কবিরা এসে তারা তাদের উক্তি পেশ করতেছে
.
মানে?কি করে?কি ঘটছে?
.
মানে তুমি ছ্যাকা খাইসো,আর কবিরা এসে সবসময় ছ্যাকাখোরদের নিয়ে উক্তি বানায়,হাহা!
.
ভাইয়া তুমি পারও বটে!
.
ছোঁয়া বাসায় ফিরে ফোনে আরেক ধাপে বাবা মায়ের বকা খেলো
ইতি আপু তো বললো এমনিতেও এই চেহারায় ওকে কেউ বিয়ে করতো না এখন আবার হাত ভাঙ্গা এবার তো কেউ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাসার দরজায় ও আসবে না
ছোঁয়া ইতির কথা শুনে হাসতেছে
কেয়ামতের ভিতরে ইতি আপু ওর বিয়ের কথা চিন্তা করে যাচ্ছে,বিয়েই কি জীবনের সব??আমার কাছে আমি সব
আমি ভালো তো দুনিয়া ভালো
আল্লাহ যখন আমাকে বানিয়েছেন,আমার সাথে মিলিয়ে আমার জীবনসাথীকেও নিশ্চয় বানিয়েছেন
তাহলে তার উপরই ছেড়ে দিই,পরেরটা পরে দেখা যাবে
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে