আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব-০৪

0
2127

~আমি শুধু চেয়েছি তোমায়(০৪)

“শিশির কে নিয়ে সীমা তাদের বাড়ি পৌছলো,সীমা রা দুইবোন!সীমার ছোটবোন কে দেখে শিশির জিজ্ঞেস করতেই বলে এটা ওর বোন!
শিশির রীমা কে কোলে নিয়ে ভিতরে যায়,ভিতরে শিশিরের মা বাবা আর সীমার মা বাবা বসে গল্প করছে,তাদের কে সালাম করে পাশেই বসে-
-আমাদের শিশির অনেক বড় হয়ে গেছে ভাইজান?
-হ্যা তা তো বটেই,বয়স ত আর কম হচ্ছে না?
এটা বলেই ছেলেকে চোখ টিপ দেয়,
শিশির হাসে,শিশিরের বাবা ও জানে শিশির এখানে বিন্দু কে খুঁজতে এসেছে,ওর মা বাবা বন্ধুর মতো!যার মা বাবা বন্ধুর মতো হয় তার আর কি লাগে জিবনে,সে ই একমাত্র ভাগ্যবান ব্যাক্তি!

সবার খাওয়াদাওয়া শেষ করে শিশির ঘুমাতে যায়,এতদূর এসে সে এতই ক্লান্ত হয়ে পরলো যে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত আটটা বেজে গেলো!বিকেলের নাস্তা টাও সে খেলো না!হঠাৎ জেগে গিয়ে ফোন চেক করে দেখলো রাত হয়ে গেছে,এতক্ষন ঘুমিয়েছে অথচ কেউ ডাকেনি?

সে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাড়িটা তে একা ঘুরছিল,তার দাদা ই এ বাড়ি বানিয়েছিল,অনেক বড় আর পুরানো হলেও বাড়ি টাতে মায়া লেগে আছে,আছে ভালবাসার ছোয়া!
শিশিরের আম্মু ডাক দিয়ে বলল-চা খাবি?
-আম্মু ছাদে যাচ্ছি,ওখানে আনো?

শিশির ছাদে গিয়ে এক কোণায় বসলো,গোল চাঁদ উঠেছে আকাশে,ফোন চেক করলো বিন্দু এখনো ফেইসবুক এক্টিভ করেনি,আবার একরাশ মন খারাপ নিয়ে চাঁদ কে বলল-আমি যেমন তোমাকে দেখছি আমার বিন্দু ও তোমাকে দেখছে তার মানে আমরা কাছেই তো আছি?তাইনা?

“নিজেকে সান্তনা দিচ্ছিস?”

পিছন থেকে শিশিরের মা বলে উঠে,
-আমার একটু ভুলের জন্য বিন্দু এত দূরে চলে যাবে?একবার পায় কাছে দেখাবো মজা!

ছেলের কথায় শিশিরের মা শিশিরের চুল এলোমেলো করে দিয়ে ওখান থেকে চলে যায়,শিশির গরম চায়ে চুমুক দিতেই সীমা পাশে আসে!
-বসা যাবে?
-সিউর!
-একা একা ভুতের ভয় করছেনা?
-আমি ছেলে আমার আবার এসব ভয়টয় হতে যাবে কেন?

সীমা হাসলো,শিশির খেয়াল করলো মেয়েটার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে,হাসিমুখ এমনিতেই মিষ্টি হয়,
-তোমার নাম সীমা না হয়ে মিষ্টি হলে ভাল হতো,

সীমা যেন কি ভেবে আবারো হাসলো,
-কাল তাহলে আমরা নদী দেখতে যাচ্ছি ভাইয়া,আপনি আব্বু আম্মু থেকে অনুমতি নিয়েন?
-আচ্ছা ঠিক আছে!

এরপর তারা কিছুক্ষণ গল্প করে রাতের খাবার খেতে গেলো,

.

এদিকে বিন্দুর বাবা খাবার টেবিলে বসে বলে-বিন্দু আর সাকিব কে একসাথে আমার বেশ ভাল লাগে,

উনার কথায় বিন্দুর মা আড়চোখ এ তাকালো,তিনি আবারো বললেন-সাকিবের এখনো পড়ালেখা শেষ হয়নি তাছাড়া বেকার ও সে,একটা চাকরি পাক তারপর বিন্দু ও পড়ালেখা শেষ করুক তারপর ঘরের মেয়ে ঘরে ই থেকে যাবে,তোমরা কি বলো?

সাকিবের মা কিছু বলেনা,সাকিবের বাবা বলে-আপনি যা ভাল বুঝেন আরকি!
বিন্দুর মা একটা হাল্কা নিঃশ্বাস ফেলল তবে কিছুই বলল না,কিন্তু উনি জানেন বিন্দু সেটা কখনো ই মেনে নিবে না!

এখানে কাছে ভার্সিটি তে বিন্দু মাস্টার্স পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছে,সাকিব আর বিন্দু একবছরের বড় ছোট!

বিন্দু ছাদে দাঁড়িয়ে এতক্ষন চাঁদ দেখছিলো,আর জল গড়িয়ে গড়িয়ে পরছিল,মনে পরে গেলো সেদিন যেদিন শিশির তাকে কাদতে দেখেও আটকায় নি,এত ভালবাসার পর ও সে হেরে গেলো এ ভেবে সে কেঁদে ই চলেছে সবার আড়ালে,কাউকে এ কষ্ট বুঝানোর মত নয় যে.
বিন্দু ফিরে গেলো কিছুটা অতীতের দিকে যখন শিশির বিন্দুকে শাসন করতো ভুল ঠিক বুঝাতো,আর বিন্দু রাগ করলে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিত আর মজার সব গল্প বলে রাগ ভাঙ্গাতো কত মধুর না ছিল সে সময় গুলো!

এখন মানুষ টা হয়ত অন্য কারোর!বিন্দু চোখের জল মুছে ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো,আর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো!

—–
“সকালে শিশির ঘুম থেকে উঠে প্রাকৃতির দৃশ্য দেখলো তারপর ফ্রেশ হয়ে পুকুরপাড় এ বসে রইলো,চারদিকে হাল্কা কুয়াশা ঠান্ডা ও অনুভূত হচ্ছে,তাও তার এটা যেন ভাল লাগছে!

নে সুইটর,ঠান্ডা লাগাতে চাস?”

শিশিরের আম্মু একজন সচেতন মা,তাছাড়া একমাত্র ছেলের প্রতি সবসময় নজর রাখেন,প্রতিটা মা বাবা যেমন তার সন্তানের ভাল মন্দের খেয়াল রাখেন তেমন,তাই শিশির ও তাদের তেমনভাবে ভালবাসে!
শিশির সুইটর গায়ে দিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে যায়,ওখানেই বলে সে সীমা কে নিয়ে পাশের গ্রামে ঘুরতে যাবে,ওখানে নদী আর পাহাড় দেখবে!

এতদিন পর শিশির গ্রামে এসেছে তাই তার আবদার এ কেউ না করলো না অনুমতি দিলো,সীমা কে বেশি এক্সাইটেড দেখা যাচ্ছে যদিও কাহিনী শিশির বুঝলো না!

…….
এদিকে বিন্দুর সকাল থেকে মন খারাপ তাই সে অল্প কিছু খেয়ে একায় নদীর ধারে গেলো,কিছুক্ষণ বসে ই আবার ফিরে আসতে ই আকাশের সাথে দেখা হলো,আকাশ পথ আটকে দাঁড়াতে ই!
-কি সমস্যা আপনার?
-আমি ভাল হয়ে গেছি বিন্দু,আমি পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি,মিথ্যা বলিনা প্লিজ আমায় গ্রহণ করো?

বিন্দু হাল্কা নিশ্বাস নিয়ে বলল-“প্লিজ ভাইয়া আপনি ভাল হয়েছেন আমি খুশি হয়েছি,আপনি চাইলে ভাল জিবনসঙ্গী পাবেন,কিন্তু আপনি আমাকে চাইছেন এটা ঠিক না,আমি একজনের বাগদত্তা!সে আমার প্রাণ!আশা করি বুঝার চেষ্টা করবেন,আপনি ভাল করে খেয়াল করুন আপনাকে ও কেউ ভালবাসে অথবা পরে বাসবে তাকে নিয়ে বাচার চেষ্টা করুন!সুখী হবেন!

বিন্দু মিথ্যা বলল এছাড়া তো উপায় নেই,তাছাড়া ও শিশির ছাড়া কাউকে ভাবতে পারেনা,ভাল ও লাগেনা কাউকে সে যতই অসাধারণ হোক না কেন,

আকাশ এতক্ষন বিন্দুর কথাগুলা শুনলো তারপর মনে পরলো তার এক আত্মীয়ের মেয়ে তাকে প্রপোজ করেছিল,মেয়েটি ভাল হওয়া সত্ত্বেও তখন আকাশ বখাটে ছিল বলে মেয়েটির ভালবাসার দাম দেয়নি,সেদিনের মেয়েটির কষ্ট সে আজ বুঝেছে,দেরি হয়ে গেছে আজ ই তাকে বিয়ে ফাইনাল করতে হবে,
আকাশ বিন্দু চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে-তুমি যার বউ সে সত্যি ই ভাগ্যবান!

বিন্দু চলে যাওয়ার পর ই অন্যদিক থেকে শিশির সে জায়গায় আসে,তার কেন যেন দম আটকে আসছে কি কারণে সে জানেনা,বিন্দুর নদী পছন্দ!এইজন্য?
-ভাইয়া আমার কয়েকটা ছবি তুলে দেন?

শিশির হাল্কা হেসে সীমার কয়েকটা ছবি তুলে দিচ্ছিল,

বিন্দু অনেক দূরে যাওয়ার পর কেমন যেন লাগছিল,পিছন ফিরে দেখতেই দেখতে পেল অনেক দূরে অস্পষ্ট একটা ছেলে একটা মেয়ের ছবি তুলছে,ওরা হাসছে কিন্তু স্পষ্ট এদের চেহারা কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা,বিন্দু ভাবে শিশির হয়ত এখন বিয়ে করে এভাবেই বউকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!

সে ছলছল চোখ নিয়েফিরে আসতেই সাকিব সামনে আসলো!
-তুই এখানে একা একা কি করিস?
-ভাল লাগছিল না তাই!
-তোকে একা কে বের হতে বলেছে?(রাগিচোখ নিয়ে)

বিন্দু রাগ করে বলে-আমাকে এত শাসন করো কেন?
-কারণ আমি তোকে ভালবাসি,আমি চাইনা তোর ক্ষতি হোক!

চলবে…….

#তাহরীমা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে