আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব-০৩

0
1995

~আমি শুধু চেয়েছি তোমায়(০৩)

“বিন্দুকে নিয়ে সাকিব বাসায় আসতে সাকিবের মা বলল-“গ্রাম কেমন লাগলো?
-ভাল চাচিয়াম্মু,ঠিকাছে আমি বাসায় যাই?
-না আজ তোমার আম্মু আব্বুকে এখানে দাওয়াত করেছি তাই তোমার ওখানে গিয়ে কাজ নেই!
-অহ!
-আমি কি তোমাকে হেল্প করতে পারি?
-নাহ লাগবে না!বরং তুমি বসে থাকো?সাকিব তো তোমার সাথে দুষ্টুমি করেনি তাইনা?
-নাহ ভাইয়া অনেক ভালো!

সাকিবের মা হেসে চলে গেলো রান্না বসাতে!কিছুক্ষণ পর বিন্দু বারান্দায় বসে আকাশের দিকে চেয়ে ভাবছিল শিশির এখন কোথায়?কি করছে?তাকে ভাবছে কিনা?সে যেমন মিস করছে শিশির ও কি করছে?

এসব ভাবতে ভাবতে একটা পিচ্চি ছেলে এসে বিন্দুকে একটা চিঠি দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো,কিছু জিজ্ঞেস করার ও সুযোগ দিলো না!

বিন্দু চিঠিটা নেড়েচেড়ে দেখলো কিন্তু কোনো নাম খুঁজে পেল না,তারপর চিঠি টা খুলল,তাতে লিখা-
-সামনে একটু এগুবে,কিছু কথা ছিল তোমার সাথে?

আর কিছুই লিখা নেই,আজব কে হতে পারে,এভাবে ডাকার কি মানে?বিন্দু যাবে না যাবে ভেবে ধরে ই নিলো সে যাবে!

একটু দূরে হাটতে ই তার চোখে পরলো আকাশ কে, তার মানে সে ই ডেকেছে!বিন্দু আবার পিছনে ফিরে চলে আসতে নিলেই আকাশ বলে-
-বিন্দু!
-আমার নাম ধরে ডাকার সাহস আপনাকে কে দিয়েছে?
-প্লিজ রেগে যেও না,আমি জানি আমি খারাপ ছেলে কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাকে দেখার পর শান্তি পাচ্ছি না আমি,আমি ভাল হয়ে যাব বিন্দু!
-কি বলতে চান?
-আমি শুধু চেয়েছি তোমায়!

বিন্দুর মেজাজ বিগড়ে গেলো,ইচ্ছে করছে থাপ্পড় দিতে কারণ তার মনে শিশির ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে কখনো বসাবে না বসাতে পারে ও না!

বিন্দু তাও ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে-ভাল আমাকে নয় আল্লাহ কে বাসুন,দেখবেন জিবন সুন্দর লাগবে,আমাকে ভালবাসা মানে পুড়বেন?
-পুড়তে রাজি!
-এসব আমার ভাল লাগছে না,তবে আপনি ভাল হয়ে যাবেন শুনে ভাল ই লাগছে,দুইটা বিষয় আপনি নিয়মিত করবেন একটা হলো মিথ্যা বলা ছেড়ে দেয়া আরেকটা হলো নামায পড়া!দেখবেন আমায় ছাড়া ও সব ভাল লাগবে!

এই বলে বিন্দু চলে যেতে নিলে আকাশ মনে মনে বলে তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি!

সাকিব দূর থেকে বিন্দুকে আকাশের সাথে কথা বলতে আসতে দেখেই মুহুর্তে রেগে গেলো-
তুই এখানে?
-আসলে?
-অই বখাটের সাথে কিসের কথা?
-তুমি যেভাবে রেগে আছো আসলে,
-কিছুই শুনতে চাইনা!ভবিষ্যৎ এ যেন না দেখি ওর সাথে কথা বলেছিস!চল এখন?

সাকিব বিন্দুকে হাত ধরে নিয়ে আসতেই বিন্দুর মা বাবা সামনে পরে,বিন্দুর বাবা জিজ্ঞেস করে-কোথায় গিয়েছিলি?
বিন্দু ভয় পেয়ে চুপ করে থাকে,সাকিব সত্যি টা বলে দিবে নাকি,বাবার যা রাগ মেরে ই ফেলবে!
সাকিব বলে-এইতো বড়াব্বু গ্রাম ঘুরতে গেছিলাম!

বিন্দুর আব্বু বলে-ভাল হয়েছে,এখন সবাই ঘরে চলো!
বিন্দু মনে মনে সাকিব কে ধন্যবাদ জানায়!আর সবার পিছুপিছু চলে যায়!


গ্রামের পথে ডুকতেই শিশিরের মন নেচে উঠলো,আশেপাশে খালি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কোথাও বিন্দুর মতো কাউকে দেখছে কিনা!শিশিরের মা ও এটা খেয়াল করতে হেসে দিলো!আদৌ কি বিন্দুকে সে খুঁজে পাবে এ ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেলো!

শিশির হঠাৎ গাড়ি থামাতে বলে বলল-আমি হেটে যেতে চাই আম্মু,তোমরা গাড়িতে যাও?
শিশিরের বাবা বলে তোর এসব পথে হাটার অভ্যাস নেই!

তাও পারবে বলে সে নেমে পরে,

শিশিরের আম্মু বলে-
আচ্ছা আমরা পৌছে তোর কাজিন সিমা কে পাঠিয়ে দিচ্ছি,ওর সাথে গল্প করে করে চলে আসতে পারবি!

আর শিশির এমনিতেও বাড়ি টা চিনে না,তাই সে নেমে পরলো আর তার আব্বু আম্মু আগেই চলে গেলো!

শিশিরের গ্রামের মেঠো পথে হাটার অভ্যাস নেই,জিবনে প্রথম ই নিজ গ্রামে আসা,তাকে কেউ চিনে না সে ও কাউকে চিনে না,বিলের পর বিল ধান ক্ষেত,কয়েকটা ছবি তুলে সে স্মৃতিবন্ধী করলো! কয়েকজন কৃষক তাকে আড়চোখে দেখছে!

একজন বৃদ্ধ কৃষক বলে উঠলো তুমি কে বাবা?

শিশির সালাম দিয়ে বলল-আমি এ গ্রামেই একজন চাচা!
-কার ছেলে আগে তো দেখিনি?
-জ্বি আমি নতুন আসছি,আহম্মেদ এর ছেলে আমি!
-ও আমাদের আহম্মেদ এর ছেলে?তোমার বাবা খুব ভাল মানুষ!

শিশির মুচকি হাসলো,
-তুমি তোমার বাবার মতো ই হয়েছ,তবে তুমি একটু বেশি সুন্দর দেখতে!

শিশির হু হু করে হেসে উঠলো,গ্রামের মানুষ এত সরল,যা বলে সহজে ই বলে দেয়!

তারপর লোকটি চলে যায়,হাটতে হাটতে চোখ পরে গাছের ডালে,দুইটা পাখি বসে আছে,শিশির আনমনে হাসে,আর বলে একটা আমি একটা বিন্দু,কিন্তু আমাদের বাচ্চাকাচ্চা কই?
এসব ভাবতে ভাবতে আরো দুই টা পাখি এসে বসে,এইতো এগুলো আমার আব্বু আর আম্মু,কিন্তু বাচ্চা!

এসব ভাবছে আর পিছন থেকে একজন ডেকে বলছে-
কিছু সাহায্য করেন আমার মেয়ের বিয়ে,কিছু সাহায্য করেন?

শিশির খেয়াল করলো লোকটি বৃদ্ধ!
-দয়া করুন আমাকে,আল্লাহ আপনার মনের বাসনা পূরণ করে দিবেন?

শিশির বলে উঠলো-সত্যি দাদু,আমি যা চাচ্ছি আল্লাহ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন?
-অবশ্যই,কি চাচ্ছ তুমি?
-আমার বউকে,হারিয়ে ফেলেছি(চোখ ছলছল)
-তোমার নিয়ত ঠিক থাকলে,ডাকার মতো আল্লাহ কে ডাকতে জানলে কখনো ফিরিয়ে দিবেন না তিনি!

লোকটির কথায় শিশির মুগ্ধ হয়ে হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে দিলো, বৃদ্ধ যাওয়ার সময় প্রাণভরে দোয়া করে দিলো।

তারপর শিশির আবার হাটতে শুরু করলো,মুখোমুখি একটা মেয়ে আসছে,শিশিরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফর্সা গালে সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে!

একবার মেয়েটির দিকে চেয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলল,সব মেয়েকে সে একবার করে দেখে,না দেখলে বিন্দুকে খুঁজবে অথবা চিনবে কিভাবে?

মেয়েটি হাতের ইশারায় থামতে বলে-শিশির ভাইয়া রাইট?
-কে তুমি?
-আপনার কাজিন!সীমা!বড় আব্বু আমাকে পাঠিয়েছে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য?
-অহ আচ্ছা!তোমাদের গ্রাম টা অনেক সুন্দর!
-এটা আপনার ও গ্রাম!

হেটে হেটে যেতে যেতে দুজনে অনেক কথা বলছে,
-আচ্ছা তা তুমি কিসে পড়ো?
-এখানেই একটা বিশ্ববিদ্যালয় আছে কাছেই,সো ওটাতে ই পড়ি!
-আচ্ছা ভালো,তোমার কথাগুলা মিষ্টি!
-ধন্যবাদ ভাইয়া!

কিছুক্ষণ থেমে সীমা আবারো বলে-
এখন আপনি ক্লান্ত,বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবেন,তারপর আপনাকে নিয়ে গ্রাম ঘুরে দেখাবো!
-সত্যি?
-হ্যা,এখানে সবাই আমাকে চিনে,আমি ও সবাইকে চিনি!এখানে কাছেই আরো একটা গ্রাম আছে ওই গ্রামে একটা সুন্দর নদী আছে,তবে আমি একা যে তাই যাওয়া হয়না!জানেন ই তো আম্মু বকবে!
-সমস্যা নেই আমার সাথে ই যাবে,তুমি শুধু পথ চিনিয়ে দিবে আরকি?
-তাহলে খুব ভাল হয়!

সীমা খুশি হয়ে হাটতে থাকে,শিশির হঠাৎ হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলে ই সীমা ধরে ফেলে,
-আস্তে হাটুন ভাইয়া,পরে গেলে সমস্যা!
-পরবো না সাপোর্ট আছে..!

সীমা মুচকি হাসে……..

চলবে….

#তাহরীমা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে