আমার শহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব-১২

0
3023

#আমার_শহরে_তোমার_নিমন্ত্রণ
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১২

বাবা সকালে জারিফ কে ডেকে বললেন “তোমাকে অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে। কিছুদিনের জন্য লন্ডন যেতে হবে। আমি ভাবছি ফারিয়ারও এখন ক্লাস নেই। ওকেও সাথে নিয়ে যাও।” বাবার কথা শুনে জারিফ কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর বাবা আবার বলল “তোমরা গোছ গাছ করে নাও। আমি টিকেটের ব্যাবস্থা করছি।” আমি বাবার কথা মতো ঘরে এসে গুছিয়ে নিতে লাগলাম। জারিফ এসে আমার সামনে বসে একটু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল “হানিমুনটা তাহলে সেরেই আসি।” তার কথায় আমি লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকালাম। হানিমুন শব্দটা বুকের ভিতরে কেমন একটা অনুভুতি সৃষ্টি করলো। অদ্ভুত সেই অনুভুতি। আমার ভাবনার মাঝেই জারিফ আমাকে এক টানে তার কাছে নিয়ে আসলো। তারপর আমার কপালের সাথে তার কপাল ঠেকিয়ে বলল “ভাবছি হানিমুন থেকে সবার জন্য এবার বড় উপহার আনবো।” “কি উপহার?” আমি তার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করি। সে এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার পেটে হাত দিয়ে বলল “আমাদের ভালবাসার অস্তিত্ব।”আমি তার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালাম। সে আমাকে চোখ টিপ দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।

অবশেষে আমরা রওনা হলাম নতুন এক শহরের উদ্দেশ্যে যেখানে আমাদের ভালবাসার সাক্ষি হয়ে থাকবে সেই শহরের সব কিছু। আমরা পৌঁছে সোজা গাড়ি নিয়ে হোটেলে গেলাম। সেখানে পোঁছাতে রাত হয়ে গেলো। ভীষণ টায়ার্ড। আমি সব ঠিক করেই সাওয়ার নিতে চলে গেলাম। সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। জারিফ বিছানায় আধ শোয়া হয়ে ফোন টিপছে।

আমি সামনে তাকাতেই ফারিয়ার দিকে চোখ গেলো। ভেজা চুল। টপ টপ করে পানি পড়ছে।হাল্কা আকাশি রঙের একটা জামা পরেছে। আমাকে তার সব কিছু খুব ভালো ভাবে আকর্ষণ করলো। আমি আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না।

আমি সামনে আয়নায় দেখলাম জারিফ আমার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসছে। আমার কাছে এসে আমার পিঠ থেকে চুল গুলো সরিয়ে তার ঠোঁট ছোঁয়াল। আমি তার উষ্ণ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠি। এক হাত আমার পেটে চেপে ধরে আরেক হাত আমার পিঠে স্লাইড করছে। তার চোখ আয়নায় আমার দিকে। আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম। সে এবার আমার পিঠে তার বুক ঠেকিয়ে গলায় নাক ঘোষতে লাগলো আর নেশা ভরা কণ্ঠে বলল “তোমার শরীরের ঘ্রান আমাকে পাগল করে। আমি নিজেকে আটকাতে পারিনা।” বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি হঠাৎ এমন আচরনে চমকে উঠি।সে আমাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে আমার উপরে শুয়ে পড়ে। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে।জারিফ বেশ রকমের বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে চোখ বন্ধ করে বলে ”দিলো রোমাঞ্চের বারটা বাজিয়ে।” বলেই আমার উপর থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আমি বসে একটু হাসলাম। রাতের খাবার দিতে এসেছে। সে খাবার টা রেখে আমার দিকে আসতে গেলেই আমি বলি “অনেক রোমাঞ্চ হয়েছে। এখন ফ্রেশ হতে জান।” আমার কথায় সে বেশ রাগ করে। রাগ করে ওয়াশ রুমে চলে যায়। ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে সে আমার দিকে না তাকিয়েই আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করতে লাগলো।বুঝলাম বেশ রাগ করেছে। চুল ঠিক করে বারান্দায় গেলো। বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে কেবল জালাতে যাবে তখনি আমি তার ঠোঁট থেকে সিগারেট নিয়ে নিচে ফেলে দেই।এবার আরও রাগ করে আমার দিকে তাকায়। “কেন সারাক্ষন এসব খান? এখন খাবার খাবেন।” সে আমার কথার কোন উত্তর না দিয়েই চলে যায় ভিতরে। বিশাল জানালার সামনে একটা চেয়ারে বসে সামনে টেবিলে পা তুলে ল্যাপটপে কাজ করছে। তার পাশে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম “কি হল?” আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে আমার দিকে একবার তাকাল।আমি একটু ভেবে দুই কাপ কফি বানিয়ে ওনার সামনে একটা কাপ ধরলাম। উনি কাপটার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো। আমি টেবিলের উপরে একটা কাপ রেখে আর একটা কাপ হাতে ধরে তার পায়ের উপরে বসে পড়লাম দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য।উনি এবার রাগ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “কি সমস্যা?” “কফি?” আমি একটু হেসে বললাম। “তোমার সমস্যা কি?” এবার আমি তার কথায় একটু রেগে বললাম “সব কিছুতেই সমস্যা থাকতেই হবে? আমি এতো কষ্ট করে কফি বানালাম সেটার কোন মুল্য নেই আপনার কাছে?” বলেই উঠতে যাচ্ছিলাম। উনি আমার হাত থেকে কাপটা নিয়ে টেবিলে রেখে সেখান থেকে পা নামিয়ে নিলেন।আর আমি তার পা নামানোর কারনে একদম তার মুখের কাছে চলে এলাম। উনি আমার চুল টেনে ধরলেন। তারপর তার মুখটা আমার ঠোটের কাছে এনে বললেন “তোমার সব কিছুর মুল্য আছে আমার কাছে। কিন্তু আমার অনুভূতির মুল্য তোমার কাছে নেই।” বলেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার কথাটা আমার বুকের মাঝে একটা চাপা কষ্টের অনুভুতি তৈরি করলো। আমিও তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর তার উষ্ণ নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে। ভিতরের সমস্ত আবেগ যেন এক মুহূর্তেই সমস্ত শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে। সে আবেগের তারনায় আমি আজ তার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি। নিজেকে আটকাতে পারছিনা আর। আমি দুই হাতে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম। খানিকক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থেকে আমার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলেন। আমিও আজ এই অদ্ভুত ভালবাসার অনুভূতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। বেশ কিছুক্ষন পর উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আমার চুল ছাড়লেন না। আমার মুখ থেকে গলা পর্যন্ত তার দুই আঙ্গুলে স্লাইড করে আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি তার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে খুব জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলাম। উনি সামনে তাকিয়েই হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললেন “সারারাত এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকলে চলবে নাকি খাবারো খেতে হবে।” আমি তার কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে তার দিকে তাকালাম। সে সামনে তাকিয়েই কফিতে চুমুক দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। আমি কোন কথা না বলে আমার কফির কাপটা তুলে নিলাম।

আমি সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম। অফিসের কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেলো। প্রায় মাঝরাতে ফিরছি। ফারিয়া একা একা হোটেলে কি করছে কে জানে। আমি সারাদিন আজ বেশ ব্যাস্ত ছিলাম। তাকে ফোন করার সুযোগ ও পাইনি। ফোনটা হাতে তুলে নিয়েও কি মনে করে ফোন করলাম না। হোটেল এ এসে বেশ কয়েকবার দরজায় নক করেও খুলল না। আমি কান পেতে শুনতে চাইলাম ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসছে কিনা। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছিনা।আবার নক করলাম। কোন আওয়াজ পেলাম না। অনেক রাত হয়েছে তাই হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই আমার কাছে আরেকটা চাবি ছিল সেটা দিয়ে খুলে ঢুকে দেখলাম সারা ঘর অন্ধকার। ফারিয়া ঘুমাচ্ছে। আমার ভীষণ টায়ার্ড লাগছিলো তাই একটু খানি বিছানায় গিয়ে বসলাম। সারা ঘর অন্ধকার কিন্তু সামনের জানালা খুলে রাখায় কোথা থেকে যেন হালকা একটা আলো এসে ফারিয়ার মুখে পড়েছে। সেই আলোয় তাকে ভীষণ মায়াবি লাগছে। আমি চোখ ফেরাতে পারছিনা। তার মুখের উপরে কিছু চুল পড়ে আছে। সেগুলা আমি আলতো করে সরিয়ে দিলাম। তার কপালে একটা চুমু দিয়ে কিছুক্ষন তার মায়াবি মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে একটু নড়ে উঠলো। আমি ঠিক হয়ে শুয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সে আমকে জড়িয়ে ধরল ঘুমের মাঝেই। আমিও তাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। এক নিমেষেই সমস্ত ক্লান্তি চিন্তা সব কিছু যেন হারিয়ে গেলো। কি অদ্ভুত শক্তি ভালবাসার। আমিও তার সাথেই গভীর ঘুমে ঢলে পড়লাম।
চলবে…।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে