আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-০১

0
3088

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃসূচনা
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

নিজের বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎ করে কারো স্পর্শ পেতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ জোড়া মেলাতেই অনুভব করলাম আমি ছাড়াও আমার রুমের মধ্যে অন্য করো উপস্থিতি। শরীরটা শিউরে উঠলো আমার। আমার রুমে এতো গভীর রাতে কে আসতে পারে? কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি অনুভব করলাম কেউ একজন আমার পিছন থেকে আমার কোমরের উপর হাত রাখলো। ভয়ে শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার। শরীরটা বেশ ভারী হয়ে গেছে। একটু নড়ে চড়ে উঠার শক্তি নেই আমার। হাতটা আমার কোমর থেকে সরে যেতেই আমার কানের আর গলার উপর কারো গভীর নিঃশ্বাস পরতে লাগলো। নিঃশ্বাস এর উষ্ণতা আমার অদ্ভুত রকম ভাবে কাছে টানছে। আমি বিছানা থেকে অনেক কষ্টে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই আমি রুমের লাইটা অন করলাম। লাইট অন করে আমি বিছানার দিকে তাকাতেই আমার চোখ জোড়া ছানা বড়া হয়ে যায়। এ আমি কাকে দেখছি? আয়াদ ভাইয়া আমার রুমে, আমার বিছানায়, এতো রাতে! গলাটা এক মুহুর্তে শুকিয়ে আসে‌ আমার। একটা ঢোগ গিলে নিজেকে একটু শান্ত করতে চেষ্টা করলাম। আয়াদ ভাইয়ার উপস্থিতি আমার মনের মধ্যে এক অজানা ভয় সৃষ্টি করে দিলো। হাত পা কাঁপছে আমার। আয়াদ ভাইয়া আমার বিছানার পাশে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলার শক্তি পাচ্ছি না। অনেকটা সাহস করে একটু শান্ত গলায় বলার চেষ্টা করলাম

— আয়াদ ভাইয়া এসব কি? আমার রুমে এতো রাতে আপনি, তাও আমার বিছানায়!

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ ভাইয়া আমাকে অবাক করে দিলো। আয়াদ ভাইয়া আমার রুমের দরজার কাছে দিয়ে দরজাটা বেশ শব্দ‌‌ করে বন্ধ করে দিলো। আয়াদ ভাইয়ার এমন ব্যবহারের সাথে আমি পরিচিত নই। আমার মনের মধ্যে ইতোমধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। আমি দৌড়ে আয়াদ ভাইয়ার কাছে ছুটে চলে আছি। দরজা খোলার চেষ্টা করতেই আয়াদ ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— ভূল করেও দরজা খোলার কোনো চেষ্টা করিস না অর্শি। আর যদি চিৎকার করিস তো তোর সম্মান নষ্ট হবে। আমি চাই না তোকে এই সমাজ নষ্টা মেয়ের নাম ধরে ডাকুক।

আয়াদের কথা শুনে অর্শি একদম চুপসে যায়‌। আয়াদ অর্শির দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। অর্শি আয়াদের চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে আছে। অর্শির চোখ জোড়া আয়াদের দিকে ভিশন ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। আয়ান অর্শির দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে অর্শির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অর্শি একপা একপা করে পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে তার পিঠ ঠেকে যায়।‌ আয়াদ অর্শির খুব কাছে চলে আসে। অর্শি এক দিক মুখ বাঁকিয়ে ফিসফিস করে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আয়াদ ভাইয়া প্লিজ! আমার কোনা ক্ষতি করিয়েন না। আমি আপনার বোন। প্লিজ ভাইয়া!

অর্শির কথা আয়াদের কানে যাচ্ছে না। আয়াদ অর্শির কোমরে নিজের হাত‌ রাখতেই অর্শি নিজেকে শান্ত করলো। অর্শি আপন মনে ভাবতে লাগলো “আয়াদ ভাইয়া আমাকে চুপচাপ থাকতে বললো আর আমি চুপচাপ নিজের সব থেকে দামী সম্পদ। আমার সম্মান তার হাতে তুলে দিবো! এটা কি করে সম্ভব? সম্মান নষ্ট হোক তবুও নিজেকে কারো কাছে নত করবো না আমি”। কথাটা ভাবতেই অর্শি আয়াদের হাত ধরে নিজের কোমড় থেকে সরিয়ে দিলো। আয়াদ অর্শির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— আমার কাজটা আমায় করতে দে অর্শি।

— আমি মরে যাবো তবুও নিজের সম্মান নষ্ট করতে দিবো না।

কথাটা শেষ করতেই অর্শি আয়াদের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। থাপ্পড়ের শব্দে পুরো রুমটা কেঁপে উঠলো। আয়াদ কিছুই বুঝতে পারলো না। কি থেকে কি হয়ে গেলো?

— ঠাসসসসসস, তোর বাবা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে বলে আমার সাথে নোংরামি করতে চলে আসবি আর আমি সব কিছু মেনে নিবো তা তো হতে পারে না। আমার কাছে আমার আত্নসম্মান পৃথিবীরর সব থেকে দামী। যেটা আমি কখনও কাউকে নিতে দিবো না। মাইন্ড ইট মিস্টার আয়াদ। বেড়িয়ে যান আমার রুম থেকে। সকাল হতেই আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।

অর্শির কথা শুনে আয়াদ থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। অর্শির থাপ্পড়ে যতটা না রাগ হচ্ছে তার থেকে কয়েক গুণ বেশি রাগ হচ্ছে অর্শি চলে যাবে এটা শুনে। আয়াদ অর্শির হাত জোড়া দুম করে চেপে ধরে অর্শিকে তার মুখের দিকে বরাবর থেকে ঘুরিয়ে নিলো। পিছন থেকে অর্শির কানের কাছে মুখ নিয়ে আয়াদ ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— আমার তোর শরীরের উপর কোনো ইন্টারেস্ট নাই। তবুও আমায় বাধ্য করিস না। আমি তোর রুমে তোকে ধর্ষণ করতে আসি নাই। আমি এসেছি তোর পিঠে লেপ্টে থাকা আমার এই চিপটা নিতে। এই তোকে লাস্ট অর্নিং দিলাম আমার রুমে ফার্দার তুই যাবি না।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ অর্শিকে একটা ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সামান্য দূরে সরিয়ে দিলো। অর্শিকে ধাক্কা দিয়ে আয়াদ হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আয়াদ চলে যেতেই অর্শি হাঁটু গেড়ে ধপাস করে ফ্লোরে বসে পরে। বুঝতে পারছে না কিছুই। ‘আয়াদ ভাইয়া হঠাৎ করে রাতের গভীরে আমার রুমে আসলো। যে কেউ হলে ঠিক এটাই ভাবতো যে নিশ্চই কোনো বাজে উদ্দেশ্যে আমার রুমে এসেছে। তাও আমার বিছানায়”।

অর্শি আপন মনে ভাবছে আয়াদের কথা। “আয়াদকে থাপ্পড় মারাটা উচিত হয়নি। কিন্তু উনি তো আমার শরীরে টাচ করেছে। এটাকি কি যুক্তিযুক্ত? আমি ভুল কিছু করিনি”। আজ আবারও মনে পরে গেলো পুরনো অতিতের কথা। আয়াদ ভাইয়া আমাকে মনে করিয়ে দিলো সেই বিষাক্ত অতিতেত কথা যা আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। আপনারা হয়তো ভাবছেন আয়াদের পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক কি? তা হলে বলি আমার নাম অর্শি। যখন আমার বয়স মাত্র ১১ তখন থেকে আমি আয়াদ ভাইয়াদের বাড়িতে থাকি। আয়াদ ভাইয়ার বাবাকে বাবা বলে ডাকি কারন আমার বাবা নেই। বাবা নেই বলতে আমি অনাথ ঠিক তবে সেটা আমার মা এর জন্য। আমার মা আমার বাবার খুনি। নিজ হাতে আমার মা আমার বাবাকে খুন করেছে। নিজের চোখের সামনে আমি আমার বাবাকে খুন হতে দেখেছি। আমার বয়স তখন ৯ বছর। প্রতিদিন দেখতাম বাবা অফিসে গেলেই আমাদের বাড়িতে অনেক লোক আসতো। লোক বলতে কিছু আংকেল আসতো। আমি তখন কতকিছু বুঝতাম না। একদিন ভুল করে আমি আমার মা এর সাথে এক আংকেলকে ভিশন নোংরা আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলি। তখন আমার অত কিছু ধারনা ছিলো না। কিন্তু এতোটুকু বুঝতাম যে তারা কোনো নোংরামি করছে। আমার মা আমাকে দেখার পরেও বিষয়টা হালকা করে দেখলো। উনি তার কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। বাবা অফিস থেকে ফিরতেই আমি বাবাকে বলে দেই কথাটা। সেই দিন আমার ভুল ছিলো এটাই যে বাবাকে সবটা বলে দিয়েছিলাম। ঐ দিন যদি বাবাকে না বলতাম তবে আমার বাবা আজ আমার কাছে থাকতো। বাবাকে কথাটা বলার পরে বাবা কিছু বলল না। পরদিন সকালে বাবা অফিস যেতেই ঐ আংকেল বাড়িতে আসলো। আমার জন্য কিছু চকলেট নিয়ে। আমি চকলেট নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে পুতুল নিয়ে খেলছি এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখি বাবা মা এর সাথে উচ্চস্বরে কথা বলছে। মা আর ঐ আংকেল বাবা কথা গুলো শুনছে। আচমকা মা বাবার গালা চেপে ধরে। ঐ আংকেল টা বাবার হাত পা ধরে বেঁধে ফেলে আর আমার মা বাবাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে খুন করে। ঐ দৃশ্য বর্ণনা করার মতো নয়। নিজে নিরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাবাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে দেখলাম। অনেক কেঁদেছি আমি। দুদিন মুখে কিছু তুলিনি। কিছু দিন যেতেই আমি আমার মা এর আসল রূপ দেখতে পেলাম। রোজ রোজ একেক জন আমাদের বাড়ি আসতো আর আমার মা তাদের নিয়ে ফুর্তি করতো। একদিন এক আংকেল আমাকে দেখে আমার মা কে উদ্দেশ্য করে বলে

— তোমার মেয়ের কত দাম হবে? বয়স কত ওর?

মা হেসে জবাব দিলো

— এই তো ১০ বছর। আর একটু ধৈর্য ধরো ওকেও আমাদের লাইনে আনবো।

মা এর কথাটা শোনার পরে আমার দমবন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। আমি ঐ দিন রাতে যখন মা অন্য একজনের সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত পার করছিলো ঠিক তখনি বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি। লজ্জা করছে ঐ মহিলাকে মা বলে ডাকতে। আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে থানায় এসে পুলিশ আংকেল কে সব কিছু বলে দেই। আর সেই পুলিশ আংকেল হলো আয়াদ ভাইয়ার বাবা। উনি আমার কথা শুনে আমাকে নিজের সাথে এখানে নিয়ে আসে। তারপর থেকে এখানেই থাকি আর এখান থেকেই পড়াশোনা করি। বাকি কথা ধিরে ধিরে জানতে পাবেন।

* সকাল হতেই রুমের বাহিরে বেশ চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ কানে ভেসে আসতে লাগলো অর্শির। অর্শি তারাতাড়ি দরজা খুলে বাহিরে আসতেই অবাক হয়ে যায়। অর্শি দেখতে পায় আয়াদ………………………

#চলবে……………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে