আমার মুগ্ধতায় তুমি পর্ব-২+৩

0
1897

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০২_০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি দেখতে পায় আয়াদ তার রুমের দরজা বন্ধ করে আছে। এতো ডাকার পরেও খুলছে না দরজা। অর্শি আয়াদের রুমের সামনে যেতেই আয়াদের মা কান্না ভেজা কন্ঠে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই অর্শি তুই একটু দেখ না মা আমার ছেলেটা কেনো দরজা খুলছে না।

মা এর কথাটা অর্শির মনের মধ্যে একটু নাড়া দিলো। হঠাৎ করে আয়াদ ভাইয়া দরজা বন্ধ করে আছে কেনো? অর্শি দরজা নক করতেই আয়াদ হকচকিয়ে দরজা খুলে দিলো। প্রথমবার নক করতেই দরজা খুলে গেলো! অর্শি একটু অবাক হয়ে যায়। আয়াদ দরজা খুলতেই অর্শিকে দেখতে পেয়ে বেশ রেগে যায়। অর্শিকে দরজার বাহিরে দেখতে পেয়ে আয়াদ একটু কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— এখানে কি? কাল তোকে বলেছিলাম না আমার রুমের সামনে যেনো তোকে না দেখি! তারপরও নির্লজ্জের মতো আমার রুমের সামনের এলি কেনো? আবার বুঝি আমার গালে আদর দিতে ইচ্ছে হচ্ছে?

আয়াদের রাগান্বিত কন্ঠেস্বর অর্শিকে ঠিক বুঝিয়ে দিচ্ছে যে সে আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছে। কাল রাতের কথা আয়াদ ভূলে পারেনি। অর্শি মুখটা মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদের কথা শেষ হতেই আয়াদের মা আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তোর সমস্যা কি আয়াদ? আমার মেয়েটাকে তোর সহ্য হয় না একটুও? আর কি সব বলছিস কাল আবার কি হয়েছে তোদের? আর তুই এতো ডাকার পরেও কেনো দরজা খুল ছিলি না? সমস্যা কি?

আয়াদ একটু মুখ বাঁকিয়ে অর্শির দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে তার মা কে উদ্দেশ্য করে একটু শান্ত গলায় বলে উঠলো

— কাল রাতে ঘুমাইনি একটু কাজ করেছি বলে উঠতে লেট হয়ে গেছে।

— ওহহহ। যা ইচ্ছে হয় কর। আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি। যাই হোক তুই ঠিক আছিস তাতেই শান্তি।

আয়াদের মা কথা শুনাতে শুনাতে চলে গেলো। আয়াদ দরজার উপর এক হাত রেখে একটু হেলে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি বোকার মতো দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদ অর্শির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলতে লাগলো

— ওরে নির্লজ্জ মেয়ে রে। কোন ভাষায় বললে যে বুঝবে এর মতো একটা বদমেজাজি মেয়েকে আমার সহ্য হয় আল্লাহ জানে। দেখো কেমন মেরুদন্ডহীনের মতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ঐ মিস নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। কথা কানে যায় না তোর? একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে দেখলে এমন করে তাকিয়ে থাকতে হয়? আশ্চর্য। মনে হয় জিবনেও ছেলে দেখে নাই।

আয়াদের খোঁচা মারা কথা গুলো অর্শির কানে পৌচ্ছাতেই অর্শি আয়াদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে উঠলো

— আমার মেরুদন্ড নেই তা তোকে বলছে কে? তুই তো একটা হনুমানের বংশধর। অসহ্যকর ছেলে একটা। জংলিদের মতো দেখতে। তোকে তো চিড়িয়াখানায় থাকার কথা। এখানে কি? তোর রূপের জন্য তোকে দেখছি না। তোর মত একটা আজব প্রানীকে তো আর‌ সচরাচর দেখা যায় না। তাই মন‌ ভরে দেখে নিচ্ছি।

অর্পি কথাটা শেষ করতেই আয়াদের দিকে তাকিয়ে মুখটা ভেংচি কাটে। আয়াদ রেগে আগুন হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে অর্পির দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অর্পি আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে‌ বলতে লাগলো

— কাল রাতের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত আয়াদ ভাইয়া। নেক্সট টাইম এমন ভূল হবে না।

— অর্পি আমি তোকে…….!

অর্পি আয়াদের কথা শেষ হবার আগেই আয়াদের সামনে থেকে পালিয়ে যায়। আয়াদ অর্শির চলে যাবার দিকে একদৃষ্টিতে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে চৌখ নামিয়ে নিলো।

— অর্শি সন্ধ্যা হতে চলল রেডি হয়েছিস তুই?

আয়াদের মা ভিশন চিৎকার করে কথা অর্শির উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো। আসলে আজ একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে আয়াদ ও তার ফুল পরিবার যাবে। আয়াদ একদম রেডি আর অর্শি নিজের রুমে এখনো রেডি হচ্ছে। আয়াদ গাড়িতে উঠতে যাবে‌ ঠিক এই মুহূর্তে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে তার বাবা বলতে লাগলো

— আয়াদ তুই আমাদের সাথে যাস না। অর্শিকে নিয়ে তোর বাইকে করে আসিস। আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।‌ আমরা আসছি।

— কিন্তু বাবা আমি তো…..!

— তোকে না বারন‌ করেছি আমার‌ মুখের উপর কথা বলতে না। অর্শিকে সাথে করে নিয়ে আসলে কোনো পাপ হবে না। আর আমি যেনো না শুনি যে আবার ঝগড়া করেছিস। সাবধানে আসিস।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদের বাবা গাড়ি নিয়ে আয়াদের সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। আয়াদ বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। চোখের উপর থেকে সানগ্লাসটা সরিয়ে আয়াদ মনে মনে বলতে লাগলো “এটা কি হলো? এতো সুন্দর করে সেজে গুজে বিয়ের‌ অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। আমায় না নিয়ে বাবা মা চলে গেলো! তা না হয় মানতে পারলাম কিন্তু অর্শির মতো একটা বজ্জাত মেয়েকে নিয়ে আমি কেমন করে যাবো? মান সম্মান আর থাকলো না আমার”। আয়াদ কিছু সময় দুঃখ প্রকাশ করে বাড়ির মধ্যে চলে যায়। অর্শির রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে আয়াদ রাগান্বিত কন্ঠেস্বর নিয়ে বলতে লাগলো

— এই তোর হয়েছে? সবাই চলে গেছে। আর কত লেট করবি? তারপর তো বিয়েই শেষ‌ হয়ে যাবে।

— কি? সবাই চলে গেছে! হায় আল্লাহ এখন আমি যাবো কি করে? আমার‌ কত ফ্রেন্ড আশার কথা। আল্লাহ আমি এখন কি করবো?

— কি করবি মানে? আল্লাহরাস্তে তারাতাড়ি রেডি হবি আর কি করবি!

— রেডি হয়ে লাভ কি? আমার যাবো কাল সাথে?

— আমার সাথে যাবি। বাবা বলে গেছে আমার সাথে যেতে। কপাল আমার। আচ্ছা ঝামেলায় ফেসেছি আমি। যত্তসব

— ওহহ।

* অর্শির শান্ত জবাব শুনে আয়াদের একটু অবাক লাগলো। এই বদমেজাজি মেয়েটা এতো শান্ত গলায় কথা বলছে মানে নিশ্চই কোনো ব্যাপার আছে। আয়াদ অর্শির রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওয়েট করছে। কিছু সময় যেতে আয়াদ আবার অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আর কতক্ষন লাগবে?

— এই তো আর একটু।

— ভাই করছিস কিরে তুই? মানে এতোক্ষণ সময় লাগে রেডি হতে! বিয়েটা তো আফরিনের তোর না। একটু তো রহম কর। পরে আবার ওর জামাই নিয়ে টানাটানি পরবে।

আয়াদের কথার কোনো বিপরীত জবাব এলো না। প্রায় আরো ১৫ মিনিট যেতেই আয়াদের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে যায়। আয়াদ চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল

— এই তুই থাক আমি গেলাম।‌

— এই আয়াদ ভাইয়া যাবেন না প্লিজ! আমি একটা বিপদের মধ্যে ফেসে গেছি। প্লিজ.

অর্শির কান্না ভেজা কন্ঠ আয়াদের মনের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করে দিলো। আয়াদ দরজায় নক করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এই তুই ঠিক আছিস তো? তোর কি শরীর খারাপ লাগছে? আচ্ছা আমি যাচ্ছি না। তুই রেস্ট নে তা হলে।

— আরে না। আমি শাড়ি পরতে পারছি না। মা কে একটু ডেকে দিন না প্লিজ!

— লে এতোক্ষণ কি উগান্ডার ভাষায় বলছিলাম যে বাবা মা চলে গেছে? এখন বলে মা কে ডেকে দাও। প্রেসিডেন্টরে ঠেকে দাও। শাড়ি পরিয়ে দাও। ঢং যত

— আয়াদ ভাইয়া আমায় একা বাড়িতে রেখে যাবেন না প্লিজ! আমার ভিশন ভয় করছে। প্লিজ!

— উফফফ! আর কতক্ষণ থাকবো বলে আমায়। শাড়ি না পড়ে অন্যকিছু পরলে পাপ হয়ে যেতো। অসহ্যকর একটা মেয়ে। আমি আসবো কি?

— হু।

অর্শি দরজা খুলে দিতেই আয়াদ অর্শির রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। অর্শি শাড়ির কুচি এক হাতে ধরে অন্য হাতে নিজের বুকের উপর একটা কাপড় দিয়ে রেখেছে। আয়াদ অর্শির চোখের দিকে তাকাতেই অর্শি মাথা নিচু করে ফেললো। কি আর করবে? এমন লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে না পরলে আয়াদের থেকে সাহায্য নেয়া তো দূর এরে তো সহ্য করাই যায় না। আয়াদ অর্শির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অর্শির শাড়ির কুচি ঠিক করে লাগলো। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে। আয়াদ কুচি ঠিক করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই নে কুচিটা ধরে গুজে দে। আর আমায় উদ্ধার কর।

অর্শি শাড়ির কুচি ধরতেই কুচিটা আবার নষ্ট হয়ে যায়। কুচিটা নষ্ট হতেই আয়াদ রেগে বোম হয়ে যায়।

— একি করলি? আবার নষ্ট করে ফেললি! আল্লাহ আজ আর যাওয়া হবে না। কোনো কাজ তোর দ্বারা ঠিক মতো হয় না।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ আবার অর্শির শাড়ির কুচি ঠিক করতে লাগলো। অর্শি ছলছল চোখে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদ বিষয়টা লক্ষ্য করে আর কিছু বলল না। আয়াদ কুচিটা ঠিক করে অর্পির পেটের দিকে গুজে দেয়ার চেষ্টা করতেই আয়াদের হাতের স্পর্শ অর্শির পেটে লাগে। আয়াদের স্পর্শ পেতেই অর্শির সমস্ত শরীর শিউরে উঠে। অর্শি নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আয়াদ শাড়িটা গুজে দিয়ে অর্শির পেটের দিকে তাকাতেই অর্শির নাভিটা আয়াদের চোখে পরে। আয়াদ এই প্রথম কোনো নারীর উন্মুক্ত পেটের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে আয়াদ বলছে “বাহ কি অপূর্ব সুন্দর”! আয়াদ অর্শির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো অর্শি চোখ বন্ধ করে আছে। আয়াদ অর্শির সামনে থেকে উঠে দাঁড়ালো। বুকের উপর থেকে শাড়ি অনেক আগেই সরে গেছে। অর্শি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ অর্শিকে এমন অবস্থায় দেখে একটা ঘোরের মধ্যে হারিয়ে যায়। অর্শির দিকে থেকে আয়াদ নিজের চোখ ফেরাতে পারছে না। এতোটা সুন্দরী মানুষ কি‌ করে হতে পারে? ভাবছে আয়াদ। আয়াদ অর্শির শাড়ির আঁচলটা সেফ্টি পিন দিয়ে আটকে দিতে নিলো। অর্শির বুকের উপরে আয়াদের স্পর্শ অর্শির মনের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভূতির জন্ম দিলো। অর্শি আয়াদের কাঁধের উপর হাত রেখে আয়াদের শার্টটা শক্ত করে চেপে ধরলো। অর্শির হাতের স্পর্শ আয়াদের মনের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করে দিলো। হ্যাঁ আয়াদ‌ আর নিজের মধ্যে নেই। আয়াদ অর্শির শাড়ির আঁচল টা ফেলে দিয়ে অর্শির কোমড় ধরে স্লাট করে নিজের দিকে অর্শিকে টেনে আনে। অর্শি চোখ বন্ধ করে আছে। আয়াদ অর্শির চুল গুলো ঘাড়ের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে অর্শির ঘাড়ে গলায় চুমু খেতে লাগলো। অর্শি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। অর্শি অনিচ্ছা সত্ত্বেও আয়াদের চুমু গুলো ফিল করতে লাগলো। আয়াদ একটু একটু করে অর্শির ঘাড় থেকে অর্শির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসে। আয়াদ অর্শির ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতেই অর্শি আয়াদকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে তাকে আলাদা করে নিলো। অর্শি আয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করে বলতে লাগলো

— আয়াদ ভাইয়া এই সব ঠিক না। প্লিজ আপনি এখন যান। আমি চাই না এই সব প্লিজ!

আয়াদ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই। অর্শির কথা গুলো আয়াদের কান উবদি পৌঁছায় না। আয়াদ অর্শির দিকে এগিয়ে আসে। অর্শি ছলছল দৃষ্টিতে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্শি পিছিয়ে যেতে যেতে বিছানার কাছে চলে আসে। আয়াদ অর্শিরকে এক ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। অর্শির উপর ঝাপিয়ে পরে আয়াদ। অর্শি কান্না ভেজা কন্ঠে আয়াদকে এক নাগাড়ে বলে যাচ্ছে

–প্লিজা ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিন। আমার এসব সহ্য হচ্ছেনা। আমি অবিবাহিত প্লিজ!

আয়াদ অর্শির কথা গুলো পাত্তা না দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— প্লিজ অর্শি প্লিজ। আমি নিজের মধ্যে নেই। আমরা আজ এক হবোই হবো। আই নিড ইউ। ইয়া আই রিয়েলি নিড ইউ অর্শি।

কথা খুলে বলতে বলতে আয়াদ অর্শির ঘাড়ে আবারও মুখ গুজে দিলো। অর্শি সহ্য করতে পারছে না। আঁতকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো সে। অর্শির কান্নার শব্দ আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ……………………

#চলবে…………………..

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অর্শির কান্নার শব্দ আয়াদের কানে আসতেই আয়াদ থ মেরে যায়। আপন মনে আয়াদ ভাবতে থাকে ছিঃ! এসব আমি কি করছি? একটা মেয়েকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্ষণ করছি আমি! আয়াদ একটু শান্ত হয়ে যায়। আয়াদ অর্শির উপর থেকে উঠে যায়। অর্শি বিছানায় অর্ধ নগ্ন হয়ে শুয়ে কেঁদে চলেছে। আয়াদ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শিকে কিছু বলে শান্ত করার মতো ভাষা তার জানা‌ নেই। আয়াদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে অর্শির রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়। অর্শি নিজের‌ বিছানায় পরে আছে। এতোটা লজ্জা লাগছিল তার যে ইচ্ছে করছিলো মরে যেতে। অর্শি কাঁদছে আর ভাবছে “আয়াদ ভাইয়াকে সাহায্য করার জন্য না ডাকা উচিত ছিলো। আজ আমার ভুলের জন্য আয়াদ ভাইয়া আমার উপর জোর করে। আমি এই মুখ কাউকে দেখাতে পারবো না আর”। অর্শির ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ প্রকাশ করে চলেছে আয়াদের করা ব্যবহার তার মনের মধ্যে কতটা আঘাত করেছে। আয়াদ নিজের রুমে সোফার উপর কপালে হাত দিয়ে বসে‌ আছে। অর্শির উপর এতোটা আকর্ষিত হয়ে কি করে পরলাম আমি? আপন মনে ভাবছে আয়াদ।

— কিরে এমন মুখ গোমড়া করে বসে‌ আছিস কেনো? অনুষ্ঠানে আসলি না যে? অর্শির সাথে ঝগড়া করেছিস?

আয়াদের মা‌ এর প্রশ্ন সূচক কন্ঠ শুনে আয়াদ কেঁপে উঠলো। আচমকা আয়াদের মা এর উপস্থিতি আয়াদকে বিব্রত করলো। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার মা কে উদ্দেশ্য করে ভয়ার্ত কন্ঠে বলতে লাগলো

— তোমরা চলে এসেছো! বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ?

— হ্যাঁ, বিয়ের অনুষ্ঠান তো শেষ। কিন্তু তোকে এতোটা চিহ্নিত দেখাচ্ছে কেনো? ঘেমে যাচ্ছিস যে? কি হয়েছে? সব ঠিক তো?

— হ্যাঁ মা সব ঠিক আছে। আসলে একটু অসুস্থ বোধ করছি বলে আর যাই নি।

— ওহহহ।

আয়াদের মা এর কথা শেষ হতেই আয়াদ রুমার দিয়ে নিজের মুখের উপরের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে ফেলতে লাগলো। আয়াদের মা আয়াদকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলে উঠলো

— অর্শি কোথায়?

কথাটা শুনতেই আয়াদ চমকে উঠলো। “অর্শি কোথায় মানে”? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো আয়াদ।

— হুম অর্শি কোথায়? নিজের রুমে আছে নাকি একা একা চলে গেছে বিয়েতে?

— না মা একা যায় নি। রুমে আছে হয়তো।

— ওহহহ।

আয়াদের রুম থেকে মা চলে যেতেই আয়াদ আবার সোফায় বসে পরলো। নিজের প্রতি নিজের ভিশন ঘৃণা হচ্ছে তার। এমন একটা কাজ করেছে সে যাতে করে সে নিজের কাছে সারা জীবনের জন্য ছোট হয়ে গেলো।

— অর্শি খাবার খেতে আয়। রাত অনেক হয়ে গেছে।

অর্শিকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে কথাটা বলল আয়াদের মা। অর্শি সেই সন্ধ্যার ঘটনার পর আর নিজের রুম থেকে বের হয়নি। নিজের রুমের মধ্যে চুপটি করে বসে আছে সে। আয়াদের মা অনেক বার বলার পরেও অর্শি রাতের খাবার খেতে আসলো না। আসলে অর্শি একটা শকের মধ্যে আছে। এই অবস্থায় গলা দিয়ে তার কিছুই নামবে না। আয়াদ অর্শির খাবার না খেতে আসার কারনটা জানে। আয়াদ খাবার টেবিল থেকে উঠে চলে যায় নিজের রুমে। নিজের রুমে এসে আয়াদ ব্যল্কনির দিকে চলে যায়। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটে গুঁজে নিকোটিনের ধোঁয়া গ্রহণ করতে থাকে। মাথাটা জ্যাম ধরে আছে তার। তাই একটু হালকা হচ্ছে আয়াদ।

* রাত প্রায় গভীর। আয়াদ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। কিছু একটা ভেবে আয়াদ অর্শির রুমের দিকে এগিয়ে যায়। অর্শির রুমের লাইট অফ। আয়াদ অর্শির রুমের মধ্যে প্রবেশ করে দরজাটা আলতো শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। রুমের মধ্যে একটু বেশিই অন্ধকার। আয়াদ লাইটের সুইচ খুঁজতে লাগলো। লাইটের সুইচ অন করে আয়াত অর্শির বিছানার দিকে ঘুরে তাকাতেই বেশ চমকে যায়। আয়াদ দেখতে পায় অর্শি বিছানার একটা কোনে চুপ করে বসে আছে। চোখ জোড়া বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে তার। রুমের লাইট অন হতেই অর্শি আয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। আয়াদকে এতো রাতে নিজের রুমে দেখতে পেয়ে অর্শির আর বুঝতে বাকি নেই আয়াদ তার রুমে কি জন্য এসেছে? অর্শি আয়াদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— যেটা তখন করতে পারেননি ঐ টা এখন করতে এসেছে? হুম, শুরু করুন। আর বাধা দিবো না। আমি প্রস্তুত।

অর্শির কথাটা আয়াদের কান থেকে এসে বুকের মধ্যে আঘাত করলো। একটা ভুল আয়াদকে অর্শির চোখে কতটা নিচে নামিয়ে এনেছে তা দেখে আয়াদ মাথা নিচু করে ফেললো। অর্শি আয়াদের নিরবতা দেখে আবারও বলতে শুরু করলো

— তারাতাড়ি করুন। মা বাবা আবার চলে আসলে সমস্যা হবে।

অর্শি কথাটা শেষ করতেই আয়াদ অর্শির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আয়াদ সকল নিরবতা ভেঙ্গে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— একদম চুপ। অনেক কথা বলা শিখে গেছিস তুই। নিজেকে আমার রক্ষিতা ভাবিস নাকি? আমি ভুল করেছি। হ্যাঁ ঐ মুহুর্তে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। তবে একটা কথা। আমি যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। তখন আমি তোকে ছেড়ে দিয়েছি।‌ তুই প্লিজ অর্শি আমায় ক্ষমা করে দে। আমি লজ্জিত তোর কাছে। প্লিজ!

— হুম। করে দিয়েছি ক্ষমা। তো এতো রাতে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছেন! আরো তো সময় ছিলো। তখন কেনো ক্ষমা চাইতে আসেননি? আপনাদের মতো ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ মানুষদের আমার খুব খুব ভালো চেনা আছে। আপনারা সুযোগ খোঁজেন। সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে লেট করেন না।

অর্শির কথা গুলো আয়াদকে বার বার আঘাত করছে। অর্শি বার বার এটাই বোঝাতে চাইছে যে সব ভুল আয়াদের। অর্শির কোনো ভুল নেই। হ্যাঁ আয়াদ ঠিক অর্শির উপর কিছুটা জোর করেছে কিন্তু পরিস্থিতি এমনটাই ছিলো। অর্শির কথার বিপরীতে আয়াদ কোনো কথা বললো না। প্লেটে করে আয়াদ অর্শির জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। অর্শির সামনে বসে আয়াদ অর্শির উদ্দেশ্যে খাবার প্লেট এগিয়ে দিতেই অর্শি মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আয়াদ মৃদু কন্ঠে অর্শিকে বলল

— প্লিজ অর্শি খাবার টা খেয়ে নে। আমি তোর কাছে ঐ ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইছি। দয়া করে আমায় ক্ষমা করে দে। তোর চোখের জলের কারন আমি। প্লিজ আর চোখের জল ফেলিস না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ!

অর্শি নিরব হয়ে আছে। আয়াদ নিজের হাতে অর্শির মুখের দিকে খাবার এগিয়ে দিতেই অর্শি খাবারটা খেতে লাগলো। চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে অর্শির। আয়াদ অর্শিকে খাবার খাইয়ে অর্শির চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো

— ক্ষমা করে দে অর্শি আমায়। জীবনে আর কখনো আমি এই ভুলের ২য় সুত্রপাত করবো না। প্লিজ! মন থেকে ক্ষমা করে দে আমায়।

আয়াদের কথার বিপরীতে অর্শি কিছু বললো না। আয়াদ প্লেটটা হাতে নিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে অর্শির রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

* সকাল হতেই আয়াদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে যে খুব ঘুম হয়েছে তার এমনটা নয়। সারা রাত আয়াদের মাথায় আজকের এই ঘটনাটা ঘোরপাক খাচ্ছিলো। তাই আয়াদের ঘুম শান্তিতে হলো না। আয়াদ ভোর হতেই ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।
সকালের নাস্তার টেবিলে আয়াদ বসে নাস্তা খাচ্ছে। অর্শি এখনও আসেনি খাবার টেবালে। আয়াদ বার বার অর্শির রুমের দিকে তাকাচ্ছে। কখন অর্শি আসবে? ভাবছে আয়াদ। কিছু সময় যেতেই অর্শি রেডি হয়ে খাবার টেবিলে চলে আসলো। আয়াদ অর্শি আসছে দেখে আর অর্শির দিকে তাকালো না। খাবার‌ শেষ হতেই আয়াদ বাইক নিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রোজ অর্শিকে নিয়ে আয়াদ ভার্সিটিতে যায়। আয়াদ রোজকার মতো অপেক্ষা করছে। অর্শি বাড়ির সামনে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে পাত্তা না দিয়ে আয়াদের সামনে এসে দাঁড়ায়। আয়াদ অর্শির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আয়াদকে দেখে বোঝা যাচ্ছে আয়াদ চাইছে অর্শি তার বাইকে করে ভার্সিটিতে যাক। কিন্তু না। অর্শি একটা রিক্সা থামিয়ে রিক্সায় উঠে বসে। আয়াদ অবাক হয়ে অর্শির দিকে তাকিয়ে রইল। অর্শি তার মানে মন থেকে কালকের ব্যাপার্টার জন্য ক্ষমা করেনি। আয়াদ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো।

* ভার্সিটিতে এসে আয়াদ ক্যাম্পাসের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছে। অর্শি ক্যাম্পাসে ঢুকতেই আয়াদ অবাক হয়ে যায়। আয়াদ অর্শিকে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে অর্শির দিকে এগিয়ে যায়। অর্শি একটা…………………….

#চলবে…………………….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে