আগন্তুক পর্ব-১১

0
869

#আগন্তুক
– সাবিহা বিনতে রইস

পর্ব – ১১

– আমার কিন্তু মনে হচ্ছে, আমরা ঠিক দিকে এগুচ্ছি।

অন্তু মাথা নাড়লো৷

– আমার মতামত আংশিক হ্যা, আর আংশিক না!

তনিমা ভ্রু কুচকালো৷

– জানা গেল তো, প্রত্যয়ের একটা এফেয়ার ছিলো৷ সোজা বাংলায় পরকীয়া। মল্লিকা এটা জেনে নিতেই সে মল্লিকাকে খুন করেছে।

– উম, নাহ! তুমি মূল ঘটনা থেকে সরে গেছো।

তনিমা হাত ওল্টালো৷

– কি জানি বাবা! এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি যখন থেকে, ঠিক তখন থেকেই আমার বুদ্ধি কমা শুরু হয়েছে। অনেক বিষয় ঠিক ধরতে পারছি না।

অন্তু হাসলো৷ তারপর তনিমার মাথায় হাত রেখে বললো,

– মাথাটাকে রেস্ট দাও একটু৷ এদিকের ঘটনা শুনেছো?

– কোনটা?

– মা বাবা আর থামতে চাইছেন না। লকডাউন শেষ, এবার উনারা বিয়ের তোড়জোড় শুরু করতে চান।

– শুধু বাবা মা তোড়জোড় শুরু করেছেন? আর কেউ না?

তনিমার চোখেমুখে স্পষ্ট দুষ্টুমি। অন্তু কিছু বলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই ও ঘর থেকে ডাক এসেছে।

– এই তনি, সেরার সেরা এওয়ার্ড প্রোগ্রামটা দেখাচ্ছে। টিভি অন কর, দেখতে পাবি৷

তনিমা সাথে সাথে গলা ওঠানো,

– পুনঃপ্রচার হচ্ছে মা। আমি দেখেছিলাম সেদিন। তুমি দেখো৷

– এই টিভিটা অন করো। প্রোগ্রামটা দেখি।

– কেন? তুমি দেখোনি এর আগে? এবার এওয়ার্ড লাবণ্য পায়নি৷ আগন্তুক পেয়েছে।

– সেজন্যই তো দেখতে চাইছি আরেকবার।

তনিমা অবাক হয়ে তাকালো অন্তুর দিকে। তারপর অনিচ্ছা নিয়ে উঠে গিয়ে টিভি চালালো। প্রোগ্রামের অনেকটা দেখানো হয়ে গেছে৷ ঘোষণাও হয়েছে আগন্তুক পুরস্কার পাচ্ছে। সঞ্চালক সুমধুর কণ্ঠে পড়ে শোনাচ্ছে তার আত্মজীবনী৷ অন্তু টিভির সামনে এসে বসে মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে থাকলো পর্দায়। তনিমাও গিয়ে বসলো কিছু দূরে। ফোন হাতে নিয়ে অকারণে স্ক্রল করতে থাকলো নিউজফিড। সঞ্চালক তখনও পড়ছে,

” বর্তমান সময়ে তরুন পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করা মানুষটা নিজেকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যেতে পারেন যখন তখন। কিন্তু তিনি তা চাননি৷ তিনি শুধু চেয়েছেন লেখা দিয়ে পাঠকের মন ছুঁয়ে রাখতে। আর তাই গত দুই বছরের সেরার সেরা এওয়ার্ড প্রাপ্ত লেখক লাবণ্য রহমানকে পেছনে ফেলে তিনি জিতে নিয়েছেন সেরার স্থান। আমি আগন্তুকে স্বাগত জানাচ্ছি, মঞ্চে এসে পুরস্কার গ্রহনের জন্য৷

তনিমাও ততক্ষণে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়েছে টিভির দিকে। পর্দায় আগন্তুক উপস্থিত হচ্ছে। এই প্রথমবার আগন্তুকের দর্শন পাবে সে। আগেরবার সে পুরস্কার পাচ্ছে, এ খবর শুনেই উঠে পড়েছিলো তনিমা। বান্ধবীর জায়গায় অন্য কাউকে প্রায় সহ্যই হয়নি। লাবণ্যর বইয়ের পাশাপাশি, বুকসেলফ ভর্তি আগন্তুকের প্রচুর বই রয়েছে তার৷ নিঃসন্দেহে সে ভালো লেখে। তাকে এক নজর দেখা দরকার।

পর্দায় ঘোষণা চলছে, ” অবশেষে স্বেচ্ছা বন্দীত্ব কাটিয়ে হাজির হচ্ছেন তিনি”। হাত তালির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। তনিমা নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে৷

মঞ্চে প্রবেশ তার। লম্বা গড়নের এক ব্যক্তি। পরনে ক্রীম রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট। মাথা ভর্তি কাঁচাপাকা চুল দারুণ ভাবে আঁচড়ে রেখেছে। মুখেও চাপ দাড়ি৷ চোখে ক্রীম রঙের চশমা। দারুণ ব্যক্তিসম্পন্ন, আর তীক্ষ্ম চেহারা। পুরস্কার হাতে নিলেন তিনি, হাসলেন মৃদু। সেই হাসি দেখেই তনিমা ধাক্কা খেল৷ কেন লোকটাকে এত চেনা চেনা লাগছে তার? কোথায় দেখেছে একে? কোথায় দেখেছে? মাথায় ঘুরছে এক চিন্তা! পুরস্কার নিয়ে সে মাইকের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপর গলা তুলে বললো, আমি জনপ্রিয়তা চাই না। শুধু আপনাদের ভালোবাসা চাই৷ আজ আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি৷ এতেই আমি ধন্য। মাত্র কয়েকটা বাক্য যেন ঝংকার তুললো সকলের মস্তিষ্কে। সকলে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো তার কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আগন্তুক আর কিছু বললো না। সামনের সকল শ্রোতা যেন বোবা হয়ে গেছে। মিনিট কয়েক চুপ থাকার পর সকলে একত্রে হাত তালি দিয়ে উঠলো। ততক্ষণে আগন্তুক মঞ্চ ছেড়ে মিলিয়ে গেছে। কোথাও নেই সে।

তনিমা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে টিভির দিকে৷ অনুষ্ঠানে বিরতি দিলো৷ অন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ৷ তার চোখেও বিভ্রান্তি। আবার যেন কোন কিছু খুঁজে পাওয়ার অনিশ্চিত আনন্দ।

অন্তুই প্রথমে মুখ খুললো। বললো,

– পেলে কিছু?

তনিমার যেন সহসা ধ্যান ভঙ্গ হয়েছে। সে মুগ্ধ কন্ঠে বললো,

– দারুণ স্মার্ট, তাইনা?

অন্তু বাঁকা হাসি হাসলো।

– ঠিক বলেছো। তবে শুধু চেহারায় নয়, বুদ্ধিতেও স্মার্ট। দারুণ ঘোল খাওয়াচ্ছে আমাদের৷

তনিমা হাসলো৷ তবে এই হাসি প্রাণখোলা প্রেয়সীর হাসি নয়। এই হাসি এক সত্যান্বেষীর রহস্য উদঘাটনের। অন্তু তনিমার এই হাসিটা চেনে। তার বুদ্ধির ঝিলিক দেখেই একসময় প্রেমে পড়েছিলো তার।

– তাহলে এবার কি করব, বলো?

অন্তু দু হাত উপরে তুলে আড়মোড়া ভাঙলো। বললো,

– মাকে বলি, বিয়ের শপিং শুরু করতে, নাকি? দিন কয়েক পরে দারুণ একটা ব্রেক নিব। এই ঝামেলা সলভ করতে কয়দিন লাগবে? আর দিন দুয়েক, নাকি?

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে