আকাশ জুড়ে তারার মেলা পর্ব-০৮

0
991

#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_৮
#লেখিকা_N_K_Orni

— স্যার প্লিজ আমার সাথে একটু বাইরে আসেন।

ফাহিমের কথা শুনে ইফাদ ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

— কি এমন বলবে যে আমাকে বাইরে যেতে হবে?

— স্যার খুবই জরুরি বিষয়। প্লিজ বাইরে আসেন।

ইফাদ এবার বুঝল সত্যিই সেই রকম কিছু একটা ঘরেছে। যার কারণে ফাহিম বারবার তাকে বাইরে যাওয়ার জন্য বলছে। ইফাদ এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

— আচ্ছা চলো।

ইফাদ ফাহিমের সাথে বেরিয়ে গেল। তানিশা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল,

— হঠাৎ কি এমন হলো যে ফাহিম ভাইয়া ওনাকে এভাবে ডেকে নিয়ে গেলেন?

ইফাদ রুমের বাইরে যেতেই ফাহিম বলে উঠল,

— কি হয়েছে ফাহিম? আমাকে এভাবে এখানে নিয়ে এলে কেন?

— স্যার আজাদ রহমান মানে ভাবির বাবা এসেছেন। আর তিনি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন।

ফাহিমের কথা শুনে ইফাদ বাঁকা হেসে বলল,

— ওহ এই ব্যাপার। আগে বলবে তো। চলো ওনার সাথে দেখা করে আসি।

ফাহিম ইফাদকে নিয়ে ওখানে এলেন। ইফাদকে দেখে আজাদ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। তারপর রেগে বলে উঠল,

— তুমি কি ভেবেছো? আমার অনুপস্থিতিতে আমার মেয়েকে তুমি বিয়ে করে নিজের কাছে রাখবে। আর আমি তোমাকে কিছুই বলব না? এটা কখনোই হবে না। আমি এই বিয়ে মানিনা। আমি কোনো দিনই তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতাম না। তাই তাড়াতাড়ি আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেও।

আজাদ সাহেবের কথা শুনে ইফাদ হালকা হাসল। তারপর বলে উঠল,

— আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি আর তানিশা এখন স্বামী স্ত্রী। আর সেটা আইন আর ধর্মীয় দুই ভাবেই। তাই আপনার মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ সে এখন শুধু আপনার মেয়ে নয় সাথে আমার স্ত্রীও।

— আমি কি বলেছি শুনতে পাওনি? তাহলে আবার বলছি শোনো। তোমার মতো ছেলের কাছে আমি কখনো আমার মেয়েকে দেব না। আমি এই বিয়েটা মানি না। তাই আমার মেয়ে তানিশাকে আমার কাছে ফিরিয়ে।

— আমি একটু আগেই বলেছি যে ও এখন আমার স্ত্রী। তাই আমি ওকে কখনোই ছাড়ব।

— আমি কিন্তু তোমার নামে পু*লিশের কাছে কে*স করব।

— ওসবে কোনো লাভ হবে না। কারণ আমরা এখন স্বামী স্ত্রী।

তানিশা কফি খাওয়া শেষ করে রুমে চলে এলো। তানিশা বিছানায় বসতে বসতে ভাবল,

— আচ্ছা ফাহিম ভাইয়া ওভাবে ইফাদকে নিয়ে গেলেন কেন? কোনো সমস্যা হলো না তো? আমি কি একবার গিয়ে দেখব ওখানে?

কিছুক্ষণ ভাবার পর তানিশা ঠিক করল সে বাইরে গিয়ে দেখবে কি হয়েছে। তাই তানিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেল ইফাদ কোথায় আছে দেখার জন্য। তানিশা ইফাদের ওখানে যেতেই দেখল তার বাবা বসে আছে। সে দ্রুত ওখানে গিয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— বাবা তুমি এখানে? তুমি তো এখনো পুরোপুরি সুস্থ হওনি। তাহলে তুমি কেন এই অসুস্থ অবস্থায় এখানে এসেছ?

— তানিশা তুই এসেছিস। তোকে আর চিন্তা করতে হবে না। তুই এখন চল আমার সাথে বাসায় যাবি।

আজাদ সাহেবের কথা শুনে তানিশা একটু অবাক হলো।

— কিন্তু বাবা…

— কোনো কিন্তু না। চল তাড়াতাড়ি বাসায়।

তখন ইফাদ পাশ থেকে বলে উঠল,

— সেটা কখনোই হবে না। তানিশা এখন আমার স্ত্রী। তাই ও কোথায় থাকবে আর না থাকবে সেটা আমি সিদ্ধান্ত নেব। আর আমি চাই এখন থেকে ও আমার সাথে এখানে থাকবে।

আজাদ সাহেব এবার রেগে বলে উঠলেন,

— কখনোই না।

তানিশা এবার তার বাবার কাছে ছুটে গিয়ে বলল,

— বাবা তুমি প্লিজ শান্ত হও। রাগ করলে তোমার শরীরের ক্ষতি হবে।

আজাদ সাহেব এবার তানিশার হাত ধরে বললেন,

— আচ্ছা আমি রাগ করছি না। তুই এখন আমার সাথে বাসায় চল। তোকে এই বিয়েটা মানতে হবে না। আমি তোকে ভালো জায়গায় বিয়ে দেব।

আজাদ সাহেব এবার তানিশাকে টেনে নিয়ে যেতে গেলেন। তখনই পেছন থেকে ইফাদ তানিশার হাত ধরে তাকে আজাদ সাহেব থেকে ছাড়িয়ে দূরে সরিয়ে দিল। যেটা দেখে আজাদ সাহেব ইফাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— ভালো হচ্ছে না কিন্তু ইফাদ। আমার মেয়েকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দাও।

— আপনি কেন বুঝতে পারছেন না তানিশা এখন আমার স্ত্রী। তাই ও আমার কাছেই থাকবে। আমি ওকে কখনোই ছাড়ছি না।

— আমি আগেও বলেছি আমি এই বিয়েটা মানি না।

— আপনি না মানলে কিছুই করার নেই। ও এখন থেকে আমার সাথেই এখানে থাকবে। আর আমার মনে হয় তানিশাও আমাকে ছেড়ে এখান থেকে যেতে চায় না।

আজাদ সাহেব এবার তানিশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— তানিশা তুই আমার যাবি? চল এখান থেকে।

তানিশা কিছু বলল না। সে শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। আজাদ সাহেব এবার ওকে জিজ্ঞাসা করলেন,

— তানিশা তুই কি এখানে ওর সাথে থাকতে চাস?

তানিশা এবার মাথা নিচু করে বলল,

— হুম।

— কিই! তুই ওর সাথে থাকতে চাস? তাহলে একটা কথা শুনে রাখ তুই যদি এখন ওখানে না যাস তাহলে আমার বাড়ির দরজা তোর জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ।

আজাদ সাহেবের কথা শুনে তানিশা ছলছল চোখে ওনার দিকে তাকাল।

— তুই যখন আমার মান সম্মানের কথা ভাবিসনি। তাহলে আমিও এখন আর তোর কথা ভাবব না।

বলেই আজাদ সাহেব ওখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। তানিশা কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে এলো। সে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর ইফাদ এসে তার মাথার কাছে বসল। ইফাদ তার মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

— তানিশা প্লিজ কান্না করো না। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।

তানিশা এবার মুখ তুলে ইফাদের দিকে তাকাল। তারপর সে চিৎকার করে বলে উঠল,

— এই সবকিছু আপনার জন্য হয়েছে। এসবের পেছনে আপনি দায়ী। আজ আপনার জন্য আমার বাবা আমাকে ভুল বুঝছে।

তানিশার কথা শুনে ইফাদ অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কিন্তু এখানে আমি কি করলাম?

— আপনার জন্যই এসব হয়েছে। আপনি আমাকে বিয়ে না করলে আমাকে এই দিন দেখতে হতো না।

— আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করিনি। তুমি নিজেই আমার কাছে এসেছিলে।

— ভুলে যাবেননা আপনি আমার অসহায়ত্ত্বের সুযোগ নিয়েছেন। আপনি এমন ব্যবস্থা করেছেন যে আমার কাছে আপনাকে বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় না থাকে।

— মোটেই না। তোমার মা টাকার লোভে তোমাকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।

— কিন্তু টাকার অফারটা তো মাকে আপনিই দিয়েছেন।

ইফাদের এবার বেশ রাগ হলো। সে জোরে বলে উঠল,

— তোমার সমস্যাটা কি আমাকে বলতে পারো? তোমার কাছে সবসময় আমাকে কেন ভুল মনে হয়? অন্যদের ভুল কেন তোমার চোখে পড়ে না? অন্যরা যে এতো বড়ো বড়ো ভুল করছে সেটা তোমার চোখে পড়ছে না? সবসময় শুধু আমাকে দোষ দিয়ে যাও কেন?

— কারণ এতে আপনার দোষ সবচেয়ে বেশি।

— তোমার কাছে শুধু আমার দোষটাই চোখে পড়ে। আর আমার ভালোবাসাটা চোখে পড়ে না?

— আপনি যেটাকে ভালোবাসা বলছেন সেটা কখনো ভালোবাসা বলে না। ওটাকে মোহ বলে যেটা সময়ের সাথে সাথে কেটে যাবে।

— তুমি প্রতিবারই একি কথা বলো। আরে এটা যদি মোহই হতো তাহলে আমি এতোকিছুর পরে আর তোমার পেছনে লেগে থাকতাম না, তোমাকে ভালোবাসি বলতাম না। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই এখনো তোমার সাথে আছি। তোমার জন্য আমি আমার জীবনের শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও তুমি বলো আমি তোমাকে ভালোবাসি না? যাও যা খুশি মনে করো তুমি।

বলেই ইফাদ রেগে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে