আকাশ জুড়ে তারার মেলা পর্ব-০৩

0
1128

#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_৩
#লেখিকা_N_K_Orni

— আপু তুই একটু এই দিকটায় চল কথা আছে।

বলেই তিনা ওকে দূরে টেনে নিয়ে গেল। তিনাকে এভাবে টেনে আনতে দেখে তানিশা অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কিরে এভাবে টেনে এখানে নিয়ে এলি কেন?

তিনা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে উঠল,

— আপু তোর এই বিয়ের জন্য মা তোকে এমনি এমনি জোর করেনি। ইফাদ ভাইয়া মাকে ফোন দিয়ে এসব করতে বলেছে। সাথে টাকাও দিতে চেয়েছে। এজন্যই মা তোকে এতোটা জোর করেছে।বাবার অপারেশনের জন্য মা অন্যভাবেও টাকা জোগাড় করতে পারত। কিন্তু ইচ্ছা করেই করেনি। কারণ ইফাদ ভাইয়া অপারেশনের টাকাটা দিবে বলেছে সাথে আলাদা টাকাও দেবে। তাই মা রাজি হয়ে গেছে তার কথায়। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে সব শুনে ফেলেছি। আর তুই যাওয়ার পর মা আবারও ফোনে কাউকে তোর বিষয়ে বলছিল যে তুই বেরিয়ে গেছিস।

তিনার কথা শুনে তানিশা স্তব্ধ হয়ে গেল। তার মা তার সাথে এতো বড়ো একটা অন্যায় করবে সে এটা ভাবতে পারেনি। ছোট থেকেই তার মা তাকে তার অন্য ভাইবোনদের থেকে কম ভালোবাসেন। কিন্তু তাই বলে যে তিনি এতো বড়ো একটা কাজ করবেন সেটা সে কখনোই ভাবেনি। সে আর কিছু ভাবতে পারছে না। সে নিজেকে কোনো মতে সামলে নিয়ে বলে উঠল,

— তিনা বাবা কেমন আছে রে? আমাকে একবার বাবার কাছে নিয়ে যাবে? বাবাকে অনেকক্ষণ দেখিনা।

— বাবা এখন একটু ঠিক আছে। তুই আমার আয়। আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।

— হুম চল।

এরপর তিনা তানিশাকে ওর বাবার রুমে নিয়ে গেল। সে ওখানে গিয়ে দেখল তার বাবা ঘুমাচ্ছেন। আর তার মা ওনার পাশে বসে আছেন। তানিশাকে দেখেই ওর মা মিসেস নায়রা বলে উঠলেন,

— কিরে তুই এখন এখানে যে? তুই যে এখানে এসেছিস সেটা কি ইফাদ জানে?

— আমি বাবার সাথে দেখা করতে এসেছি। আর আমি আমার বাবার সাথে দেখা করতে আসব সেটা কেন অন্য কাউকে বলে আসতে হবে? আমি কোথায় যাচ্ছি না যাচ্ছি সেটা কেন অন্য কাউকে জানিয়ে আসতে হবে?

— অন্য কেউ কেন বলছিস? ইফাদ তোর স্বামী সেটা কি ভুলে গেছিস? তাই তোর এখানে আসার আগে একবার তার অনুমতি নিয়ে আসা উচিত ছিল।

তানিশা এবার বেশ বিরক্ত হলো। সে কড়া গলায় বলে উঠল,

— আমি তাকে জানিয়েই এসেছি।

মিসেস নায়রা এবার একটু নরম স্বরে বলে উঠলেন,

— ভালো করেছিস জানিয়ে এসেছিস। ওকে জানিয়ে এসেছিস সেটা আগে বললেই পারতি। শুধু শুধু কথা বাড়াতে গেলি। আর তাছাড়া ইফাদ ছেলেটা অনেক ভালো। দেখলি না কীভাবে আমাদের সাহায্য করল?

ওনার কথা শুনে তানিশা মুখে কিছু বলল না। সে মনে মনে বলে উঠল,

— সে কতো ভালো সেটা আমি ভালো করেনি জানি। আর তোমার কাছে এখন কেন ভালো হয়ে উঠেছে সেটাও আমি এখন বুঝতে পারছি। সে যে তোমাকে টাকা দিয়েছে সে তো ভালো হবেই।

— বাবা কখন ঘুমিয়েছে? বাবা উঠলে আমি একটু বাবার সাথে কথা বলতাম।

— তুই আসার একটু আগেই ঘুমিয়েছে। ডাক্তার বলেছে বিশ্রাম নিতে আর ওনাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে।

— ওহ। আচ্ছা এই বিয়ের কথাটা কি বাবাকে জানিয়ে দিয়েছ?

— না এখনো বলিনি। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরুক তখন বলা যাবে এই বিষয়ে।

— আচ্ছা ভালো করেছ। এখন বললে বাবা শুধু শুধু চিন্তা করতেন।

— সেজন্যই বলিনি। আচ্ছা শোন তোর বাবার উঠতে তো দেরী হবে। তুই বরং বাসায় চলে যা। পরে বিকালে আসিস। এখন এমনিতেও তোর বাবার সাথে তোর দেখা হবে না।

— কিন্তু…

— কিন্তু কিন্তু করিস না তো। যেটা বলছি সেটা শোন।

— আচ্ছা। কিন্তু তোমাদের কিছু লাগলে বলো। আমি আসার সময় নিয়ে আসব বাসা থেকে।

— বোকা মেয়ে! আমি তোকে আমাদের বাড়ি নয়, ইফাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলেছি। আর আমার দরকার হলে আমি নিজে গিয়েই নিয়ে আসব।

তানিশা বুঝতে পারছে না তার মা এমন কেন করছে। সে কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। তার সবসময় এমন করে কেন সে বোঝে না। আগেও ঠিক এমনটা করত। পার্থক্য শুধু তখন ভিন্ন মানুষের জন্য করত। তানিশা আর হসপিটালের থাকতে পারল না। তার বাবার সাথে তার কথা হয়নি বলে মন খারাপ হলেও বাবাকে দেখতে পেয়েছে বলেই সে একটু খুশি হয়েছে। কিন্তু মায়ের বিষয়টা জানতে পেরে বেশ কষ্ট পেয়েছে। তানিশা হসপিটাল থেকে বের হয়ে একটু আগের কথা ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল। তখনই একটা গাড়ি তার পাশে এসে থামল। গাড়ির ভেতরে থেকে ইফাদ বেরিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়াল।

— আমার সাথে এসো। আমি ওখানেই যাচ্ছিলাম তোমাকে আনতে। কিন্তু রাস্তায়ই তোমাকে দেখতে পেয়ে গেলাম। ভালোই হয়েছে। এখন আমার সাথে চলো।

তানিশা আর কোনো কথা না বলে ওর সাথে চলে গেল। তার এখন আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। ইফাদের বাড়িতে এলে তানিশে নিরবে গাড়ি থেকে নেমে রুমে চলে গেল। তানিশা বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিনার বলা কথাগুলো ভাবতে লাগল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল,

— তুমি সবসময় আমার সাথে এমন কেন করো মা? তুমি কেন আমাকে ভালোবাসোনা। তিনা আর তিহানের মতো আমিও তো তোমারই সন্তান। তাহলে আমার বেলায় কেন এতো বৈষম্য? কেন মা? কেন তুমি আমাকে ছোট থেকেই ওদের মতো ভালোবাসো না? আমার অপরাধটাও কখনো বলোনি।

তখনই ইফাদ রুমে এলো তানিশার জন্য খাবার নিয়ে। তানিশাকে শুয়ে থাকতে দেখে ইফাদ বলে উঠল,

— এখন উঠে বসো। তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। কালকে থেকে কিছু খাওনি তুমি।

ইফাদের কথা শুনে তানিশা উঠে বসল। তারপর তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— এই বিয়েটা করানোর জন্য আপনি আমার মাকে টাকা দিয়েছেন?

তানিশার কথা শুনে ইফাদ হালকা হেসে বলে উঠল,

— ওহ। জেনে গেছ দেখছি। ভালোই হয়েছে।

— আপনি কেন এমনটা করলেন? কেন পড়ে আছেন আমার পেছনে?

— এখানে দোষটা তো তোমার মায়েরই বেশি। তিনি রাজি না হলে তো আর আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারতাম না। তিনিই তো টাকার জন্য তোমাকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য তিনি টাকার জন্য হলেও ঠিক মানুষের সঙ্গেই বিয়েটা দিয়েছেন।

— আপনি মোটেও ঠিক মানুষ নন।

তানিশার কথা শুনে এবার ইফাদের বেশ রাগ হলো। সে রেগে বলে উঠল,

— তাহলে ঠিক মানুষটা কে? ওই রোহান?

— একদম কথা ঘোরাবেন না। এখানে রোহানের কথা কেন আসছে?

— আসবেই তো। কারণ রোহানও তো তোমার মায়েরই পছন্দের ছিল। আমার তো মনে হয় রোহানের সাথে বিয়ে দেওয়ার বিষয়েও তোমার মায়ের কোনো স্বার্থ ছিল।

— আর যাই বলুন আমার মায়ের নামে একটাও বাজে কথা বলবেন না।

— আমি কোনো বাজে কথা বলিনি। যা সত্যি তাই বলেছি। আর তোমার মা বাবা দুজনের কেউই ভালো মানুষ নন। আর তুমি সেটা ভালো করেই জানো। যারা মানুষকে সম্মান দিতে জানে না, মানুষকে নিচু করে দেখে তারা আর যাই হোক ভালো মানুষ নন। যাইহোক, তুমি এখন খেয়ে নেও। নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

ইফাদের কথা শুনে তানিশা কড়া গলায় জবার দিল,

— আপনার আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আমি এখন খাব না।

— বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নেও। নাহলে আমি আরও খারাপ হবো যেটা তোমার ভালো লাগবে না। আর আমি তোমাকে নিয়ে ভাবব না তো কাকে নিয়ে ভাবব। তুমি ছাড়া আমার কাছে আর এমন কেউ নেই যে তাকে নিয়ে ভাবব।

ইফাদের কথা শুনে তানিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইফাদ বলে উঠল,

— আর একটাও কথা নয়।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে