আকাশ জুড়ে তারার মেলা পর্ব-১০

0
946

#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_১০
#লেখিকা_N_K_Orni

দুপুরের কড়া রোদ্দুরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে তানিশা। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত লাগছে তার। তার বান্ধবী নাবিলার দেওয়া ট্রিট নিতে নিতে বেশ দেরীই হয়ে গেছে তার। তার উপর বাইরে এসে একটাও রিক্সা পায়নি সে। ক্লাস করতে হবে না শুনে সে ভেবেছিল আজকে তাড়াতাড়ি যেতে পারবে। কিন্তু এসবের কারণে তার আর তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়া হলো না। আর কোনো উপায় না পেয়ে তানিশা হেঁটে হেঁটেই বাসায় চলে এলো। বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেলে চাপ দিতেই মিসেস তাসনীম এসে দরজা খুলে দিলেন। তানিশাকে এই সময় দেখে মিসেস তাসনীম বলে উঠলেন,

— কিরে এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি যে? তোর তো এতো তাড়াতাড়ি আসার কথা না?

— আজকে তেমন ক্লাস হয়নি। তাই চলে এসেছি।

— ওহ।

তানিশা রুমে এসে ব্যাগ এক কোণায় রেখে ধপ করে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ বসার পর সে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— নাহ, যাই ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে আসি। তারপর আরও অনেক কাজ আছে তো।

বলেই তানিশা উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে ফিরে এসে নেহার দেওয়া নোটগুলো দেখতে লাগল। একটু পরে মিসেস তাসনীম ওখানে এলেন।

— কিরে এসেই এসব নিয়ে বসেছিস কেন? খাবি না?

মিসেস তাসনীমের কথা শুনে তানিশা একবার ওনার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। তারপর নোটের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,

— হুম খাব তো। আসলে নেহার কাছ থেকে নোটস নিয়ে এসে এসেছি। ওগুলোই একটু দেখছিলাম। তুমি যাও আমি আসতেছি।

— আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।

বলেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তানিশা উঠে খাওয়ার জন্য চলে গেল। খেয়ে এসে সে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়ল। তানিশা একবার ঘড়ির দিকে তাকাল আরেকবার নোটগুলোর দিকে তাকাল।

— নাহ, আগে একটু ঘুমিয়ে নেই। তারপর নাহয় পড়া যাবে।

সে উঠে সবকিছু আগের জায়গায় রেখে দিল। যাতে কেউ বিরক্ত না করে তাই দরজা বন্ধ করে দিয়ে এলো। তারপর এসে সে শুয়ে পড়ল। সন্ধ্যার একটু আগে তানিশা ঘুম থেকে উঠল। সে উঠে চোখ ডলতে ডলতে কত বাজে দেখার জন্য ফোন খুলল। ফোন খুলতেই সে দেখল ফোনে একটুও চার্জ নেই। তাই সে উঠে গিয়ে ফোন চার্জে দিয়ে এলো। কিন্তু চার্জে দেওয়ার আগে সে ভুলে গেল যে তার ফোন সাইলেন্ট করা। তাই সে সাইলেন্ট অবস্থায়ই ফোন চার্জে দিয়ে এলো। তারপর সে হাত মুখ ধুয়ে এসে পড়তে বসল। রাতে তানিশা তার ফোন হাতে নিতেই দেখল নাবিলার নম্বর থেকে বারোটা কল এসেছে। সে সাথে সাথে বারান্দায় গিয়ে নাবিলাকে কল দিল।

— কিরে নাবিলা এতোবার কল দিয়েছিস কেন?

— তুই ফোন ধরিসনি কেন?

— আরে আমি ফোন সাইলেন্ট করে চার্জে দিয়ে রেখেছিলাম। যার কারণে এই অবস্থা। এখন ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম যে তুই কল দিয়েছিলি।

— ওহ।

— তা তুই কেন ফোন করেছিলি বললি না তো? কি বলবি?

— হ্যাঁ বলব তো। অনেক কিছুই বলার আছে। কিন্তু এগুলো ফোনে বলা যাবে না। তাই তুই কালকে কলেজের পর আমার বাসায় আসিস। পারলে নেহাকেও সাথে নিয়ে আসিস।

— কেন? তুই কালকে কলেজে আসবি না?

— আরে আসা হবে না। তাই তো বলছি তোরা দুজন যেভাবেই হোক কালকে আমার বাসায় আয়। তোরা ছাড়া অন্যদের তো আমার বাসায় লোক পছন্দও করেনা।

— তুই নেহাকে ফোন দিয়েও তো বলতে পারতি।

— কোনো দরকার নেই তার। তুই তো জানিসই ওর বাসার লোক কেমন?

— বুঝেছি। আচ্ছা আমি আসার চেষ্টা করব কিন্তু নেহার কথা জানিনা। আর বিষয়টা কি? অনেক জরুরি কিছু?

— আসলেই সব জানতে পারবি।

— আচ্ছা।

নাবিলা ওপাশ থেকে কল কেটে দিল। তানিশা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— এর আবার কি সমস্যা হলো? খুবই জরুরি বিষয় ছাড়া তো ও আমাদের বাসায় ডাকে না। নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা হয়েছে।

তখন তিনা ওর রুমে এলো। তিনা রুমে এসে ওকে দেখতে না পেয়ে বলে উঠল,

— আপু তুই কোথায়?

— আমি বারান্দায়। দাঁড়া আমি আসছি।

তানিশা রুমে ফিরে গেল।

— আপু মা তোকে খাওয়ার জন্য ডাকছে।

— আচ্ছা চল যাচ্ছি।

তানিশা তিনার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

— খাব কিভাবে? মাথায় তো শুধু ওই চিন্তাই ঘুরছে।

পরদিন সকালে তানিশা ঠিক সময়মতো কলেজে গেল। সে ক্লাসে গিয়ে দেখল নেহা এখনো আসেনি। তাই সে নেহার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।

অফিসে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে ইফাদ। তখন ফাহিম ওখানে এলো। ইফাদের দিকে তাকাতেই তার ভ্রু কুচকে এলো। ইফাদ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। হঠাৎ ইফাদের নজর গেল সামনের দিকে। ইফাদ ফাহিমকে দেখে বলে উঠল,

— ওহ ফাহিম! তুমি চলে এসেছ। তোমার জন্য একটা কাজ আছে।

ফাহিম দাঁত বের করে হেসে বলল,

— স্যার আমার জন্য তো সবসময় কাজই থাকে। কাজের আগে একটা কথা ছিল।

ইফাদ ফোন পাশে রেখে বলল,

— হুম বলো।

— স্যার কথাটা আমার না নির্জনের।

— তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ডাকো ওকে।

ফাহিম নির্জনকে ডাকল। নির্জন বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল, ফাহিম ডাকতেই সে ভেতরে এলো।

— হুম নির্জন বলো কি বলবে?

— স্যার একটা রিকুয়েস্ট ছিল। প্লিজ রিকুয়েস্টটা রাখবেন।

— আচ্ছা আগে রিকুয়েস্টটা তো বলো। আমি রাখার চেষ্টা করব।

— না স্যার আপনাকে রাখতেই হবে।

ফাহিম এবার বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলে উঠল,

— আরে ভাই আগে রিকুয়েস্ট তো বল। তারপর রাখার কথা বলিস। আগে থেকেই অন্য কথায় যাচ্ছে।

নেহা ক্লাসে আসতেই তানিশা তাকে টেনে এনে তার পাশে বসাল। তানিশাকে এভাবে টেনে আনতে দেখে নেহা অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কিরে এভাবে টেনে নিয়ে এলি কেন?

— জানিস কালকে নাবিলা কল দিয়েছিল। কলেজ শেষে তোকে আর আমাকে ওর বাসায় যেতে বলেছে।

নেহা অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কিন্তু কেন?

— সেটা আমি জানিনা। ও বলেছে যাওয়ার পর সব বলবে। তুই কি যাবি?

— তুই যাবি তো?

— হুম আমি যাব। তুই না গেলেও আমার যেতে হবে। কারণ নাবিলা অনেকবার করে যাওয়ার জন্য বলেছে। আমার মনে হয় নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা হয়েছে।

— হুম হতে পারে। আচ্ছা আমিও তোর সাথে যাব। কিন্তু কখন যাবি?

— এইতো কলেজ শেষে।

— আচ্ছা।

কলেজ শেষ করে নেহা আর তানিশা নাবিলা বাসায় যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেল। যাওয়ার আগে নেহা তার বাসায় কল দিয়ে বলে দিল যে তার আসতে দেরী হবে, সে তার বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছে কাজে। সে না বলে কোথাও গেলে বাসায় যাওয়ার পর তাকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। তাই সে আগে থেকেই বলে দিল। ওরা দুজন নাবিলা বাসায় যেতেই নাবিলার আম্মু দরজা খুলে দিলেন। ওদের দুজনকে দেখে তিনি হেসে বলে উঠল,

— আরে তোমরা দুজন!

— হ্যাঁ আন্টি আসলে নাবিলা তো কলেজে যাইনি। তাই অসুস্থ কিনা দেখতে এসেছি।

— ওহ। যাক এসেছ ভালোই করেছ। তোমাদের কিছু বলার আছে। আচ্ছা তোমরা নাবিলার রুমে যাও। আমি একটু পর আসতেছি।

— আচ্ছা।

ওরা দুজন মাথা নাড়িয়ে নাবিলার রুমে চলে গেল। নাবিলা ওদের দেখে বলল,

— ওহ তোরা এসেছিস! তোদের অপেক্ষায় ছিলাম এতোক্ষণ। যাক ভালো হয়েছে।

নেহা আর তানিশা গিয়ে বসল আর নাবিলা উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। তানিশা ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

— এবার তো বল।

— এদিকে সব শেষ হয়ে গেছে!

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে