অমানিশা পর্ব-০৫

0
194

ধারাবাহিক গল্প
অমানিশা
পর্ব : ৫

দ্বিতীয় পিরিওডের পর রাত্রি দেখল টিচার্স রুমে হেডস্যার মিটিং বসিয়েছেন। ওকেও ডাকা হয়েছিল। একটু দেরি করে ফেলেছে। নতুন দু’জন শিক্ষক এসেছেন। তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। চা নাস্তার আয়োজন হয়েছে। নতুন শিক্ষকদের একজন পদার্থ বিজ্ঞান আর একজন চারুকলার।

বেসরকারি হলেও এই স্কুলটা অল্প সময়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। যেকোনো নামিদামি স্কুলের সাথে পাল্লা দিতে পারার মতো সব রকম কোয়ালিটি আছে। এখানে শিশুদের প্রতি শিক্ষকরা খুব যত্নশীল। তাই রেজাল্ট ভালো। প্রধান শিক্ষক আর পরিচালনা পর্ষদ খুব কড়াকড়ি নিয়মে সবকিছু তদারকি করার ফলেই এতো সুন্দর একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছে।

পদার্থ বিজ্ঞান এর শিক্ষক এর নাম আয়ান। একটা নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছে। দেখতে শুনতে বেশ। আর চারুকলার যিনি উনি একজন মেয়ে। বয়স দেখে বোঝার উপায় নেই যে পড়াশোনা শেষ ওনার। এখনো স্কুল কলেজের ছাত্রী হিসেবে চালিয়ে দেয়া যাবে।

নবাগতরা নিজেদের পরিচয় দিলেন। চা নাশতা খেতে খেতে আলাপ হলো টুকটাক। রাত্রি চুপচাপ বসে ছিল। চা পর্ব শেষে সবাই যার যার ক্লাসে গেল। রাত্রির এই সময়টা লিজার । আয়ান এগিয়ে এসে বলল,

আপনার মন খারাপ?

রাত্রি নড়েচড়ে বলল,

না তো।

না অনেক ক্ষণ দেখছি চুপ করে আছেন।

এমনই চুপ আছি।

আপনি কতদিন হয় এখানে আছেন?

মাস চারেক হলো।

ও আচ্ছা। আমি আয়ান। আপনার নামটা।

আমি রাত্রি।

বাহ,নামটাতো বেশ সুন্দর।

কমন নাম।

কমন হলেও মিষ্টি।

ক্লাস নেই এখন?

না এই পিরিওয়ডটা লিজার আমার।

ভালোই হলো। আপনার সাথে কথা বলে সময়টা কাটবে।
এ সময় নতুন মেয়েটা এগিয়ে এলো। রুহিয়া নাম। রুহিয়া আয়ানকে বলল,

আপনি চা খেয়েছেন?

আমি তো চা খাই না।

ও আচ্ছা। আমার তো চা ছাড়া দিন শুরু হয় না। তা আপনি এখানে কেনো এলেন ? এতো ভালো রেজাল্ট আপনার।

চেষ্টা করছি। কিন্তু ততদিনে এখানে একটু থাকার ইচ্ছা। ছোটদের সাথে সময় কাটাতে আমার ভালো লাগে।

তাই! আমারতো মাথা ধরে যায়।

তবে তো এখানে জয়েন করা ঠিক হয়নি।

দেখি ক’দিন থাকি। বেশি দিন থাকার ইচ্ছা নাই। এই স্কুলের পরিচালক রহমান সাহেব আমার চাচা। উনি বললেন যতদিন বাসায় আছি একটু যেন সময় দেই।

আয়ান রাত্রিকে দেখিয়ে বলল,

ইনি রাত্রি,আলাপ হয়েছে?

না, আপনি কোথায় থেকে পড়েছেন?

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ওহ! তাহলে ভালো করেছেন এখানে জয়েন করে। পরে চাকরি হবে কি না হবে।

রাত্রি বুঝল ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তাই এভাবে বলল মেয়েটা। ও একটু হেসে বলল,

আমার তো ভালোই লাগে এখানে। খারাপ মনে হয় না। ছোটদের মাঝে থাকলে মনটা ভালো হয়ে যায়। আর তাছাড়া শিক্ষক হিসেবে ভাবলে মনটা গর্বে ভরে ওঠে।

এসব বুকিশ কথাবার্তা।‌ বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমি অবশ্য বেশিদিন থাকবো না।‌ সময় কাটানোর জন্য এখানে জয়েন করলাম। ভালো কিছু হলে ছেড়ে দেব।

রুহিয়া এবার আয়ানকে বলল,

আপনার বাসা কোথায়?

মিরপুর ১।

ওহ,আমিও তো ওদিক হয়ে আসি। একসাথে আসা যাবে।

আমিতো মাঝে মাঝে পাঠাও রাইডে আসি। আবার বাসেও আসি কখনো কখনো। আপনি আমার সাথে আসতে গেলে আপনার ঝামেলা হয়ে যাবে।

কিছু ঝামেলা হবে না।

আচ্ছা দেখা যাক।

চলুন স্কুলটা ঘুরে দেখি।

আচ্ছা চলুন। রাত্রি, আপনিও আসুন না।

ওনিতো দেখেছেন। উনি না গেলেও হবে।

না উনি ঘুরিয়ে দেখালে ভালো লাগবে।

রুহিয়ার বোধ হয় বিষয়টা পছন্দ হলো না।

রাত্রি বলল,

আমার ক্লাস আছে, আপনারা দেখুন।

আয়ান বলল,

তাহলে পরে দেখি।

নতুন ম্যাম মনে হয় মন খারাপ করল। তার আয়ানের জন্য একটু বাড়তি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। রাত্রি মনে মনে হাসল।

সাব্বির ছবিগুলো খামে ঢুকিয়ে রাখল। এখুনি গোধূলিকে এসব দেখানো ঠিক হবে না। ও গোধূলিকে মেসেজ দিল।

কি করো? দেখা করতে পারবে?

গোধূলি মেসেজ দেখল ঘন্টা খানেক পর। ও স্কুলে ফোন নিয়ে গেছে। কমনরুমে ঢুকে বুকের ভেতর থেকে ফোন বের করে অন করল। সাথেই সাব্বির এর মেসেজ ঢুকল।

গোধূলি রিপ্লাই দিল,

আচ্ছা ছুটির পরে।

সাব্বির একটা চুমুর ইমোজি এঁকে দিল। লিখল,

আজ একটু বেশি সময় রাখব তোমায়।

গোধূলি লাভ সাইন দিল।

এমন সময় তরু এসে ঢুকল কমন রুমে। গোধূলি ফোন লুকাতে গেল কিন্তু তরু দেখে ফেলল।

কিরে কি লুকাচ্ছিস।

কই কিছু না।

আচ্ছা ঠিক আছে লুকিয়ে ফেল। আমি চোখ বন্ধ করছি।
না কিছু না। চোখ বন্ধ করতে হবে না।

বলতে বলতেই ফোন লুকিয়ে ফেলল গোধূলি। তরু রিয়াদের বোন তাই ওকে ফোন দেখানো ঠিক হবে না।

ছুটির পরে সাব্বির এসে অপেক্ষা করছিল গেটে। তরু কোনো দিকে না দেখে উঠে পড়ল। সাব্বির ওকে নিয়ে চলে গেল একটা এপার্টমেন্ট এর সামনে। গোধূলিকে নামতে বলল।

গোধূলি বলল,

এখানে কেনো?

আসো সমস্যা নেই। এটা আমার এক কাজিনের বাসা।

কিছু মনে করবেন না উনি?

না,আমি বলে রেখেছি।

গোধূলি সাব্বিরের সাথে গেল। তিন তলায় গিয়ে লিফট থেকে নামল ওরা।‌ সাব্বির বা দিকের ফ্লাটে বেল টিপলে একটা ছেলে দরজা খুলে দিল। সাব্বির বলল,

এসো।

বেশ গোছানো একটা বাসা। একটা মেয়ে এলো ভেতর থেকে। আয়ানকে বলল,

কেমন আছো ভাইয়া?

হুম ভালো। তোর বর কোথায়?

ওতো অফিসে।

ও আচ্ছা,এ হলো গোধূলি। আর গোধূলি ও আমার চাচাতো বোন মনি।

গোধূলি সালাম দিল।

ওয়ালাইকুমুস সালাম। বেশ মিষ্টি তো দেখতে তুমি। তোমরা বসো। আমি রান্না বসিয়েছি। খেয়ে যাবে। গোধূলি বলল,

দেরি হয়ে যাবে তো।

কিছু দেরি হবে না। আমি পৌঁছে দেব। সাব্বির আশ্বস্ত করল।
মেয়েটা ভেতরে গেলে সাব্বির গোধূলির কাছে গিয়ে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল।

গোধূলি বাধা দিলো না।

সাব্বির গোধূলির ঘাড়ে নাক ঘষল। তারপর ওর গালে গলায় ঠোঁটে চুমু খেল। সাব্বিরের হাত ঘুরতে থাকল গোধূলির পুরো শরীর জুড়ে। এর আগেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে গোধূলির। ও সাড়া দিতে থাকল।

কিছু সময় পরে খেয়ে বেরিয়ে এলো ওরা। বাইকে যেতে যেতে সাব্বির বলল,

রিয়াদ ছেলেটা কে?

গোধূলি চমকালেও সামলে নিয়ে বলল,

আর বলবেন না। বন্ধুর বড় ভাই। কেন কি হয়েছে।

না কিছু না। দেখা হলো স্কুল গেটে।‌ জানতে চাইল তোমাকে কিভাবে চিনি।

খুব বিরক্ত করে। পছন্দ করে আমাকে। আমি অবশ্য এড়িয়ে চলি।

ও আচ্ছা।

গোধূলি বাড়িতে ঢুকলে নাজমা বলল,

এতো দেরি হলো যে, কোথায় গিয়েছিলি?

একটা নোট নিতে গেছিলাম তরুর বাড়িতে। আন্টি না খাইয়ে আসতে দেবে না। তাই দেরি হলো।

নাজমা বললেন,

কি নোট দেখি।

গোধূলি ব্যাগ থেকে গণিতের একটা শিট বের করে দেখালো।
নাজমা বললো আচ্ছা ঠিক আছে। হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়।
গোধূলি ভেতরে চলে গেল।

নাজমা মনে মনে এই ভেবে নির্ভার হলেন,যাক মেয়েটা ভুল বুঝতে পেরেছে। পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে।

পরদিন স্কুলে গিয়ে টিফিন পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। টিফিন এর পরে হেড স্যারের রুমে ডাক পড়ল গোধূলির। গোধূলি বুঝলো না হঠাৎ স্যার কেনো ডাকলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখল স্যারের রুমে আরো দু’জন ম্যাডাম আছেন। একজন ওদের ক্লাস টিচার শাহিন ম্যাডাম। গোধূলি রুমে ঢুকে সালাম দিয়ে একপাশে দাঁড়াল।

শাহিন ম্যাডাম বললেন,

তুমি কি মোবাইল এনেছো?

না তো।

মিথ্যা বলোনা।‌ এনে থাকলে দিয়ে দাও।

আনিনি ম্যাডাম।

হেডস্যার বললেন,

আচ্ছা তোমার ব্যাগ চেক করা হবে।

গোধূলি ভয় পেল।

আয়া গিয়ে ক্লাস থেকে গোধূলির ব্যাগ আনল। কিন্তু কিছু পেলো না। শাহিন ম্যাম বললেন,

আমার সাথে এসো তুমি?

গোধূলির ম্যাম ওকে কমনরুমে নিয়ে ভালো করে চেক করে বুকের মধ্যে রাখা মোবাইল পেল।

হেডস্যার এর রুমে আবার গেলো ওরা। গোধূলির বাবাকে ফোন দিলেন স্যার।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে