অচেনা শহর পর্ব-৩+৪+৫

0
4361

#অচেনা শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৩

গলার অনেকটা জায়গায় ভিজে গেছে ওড়না এক পাশে ভিজে গেছে। পানি ঝরিয়ে ফেলে ভালো করে মাথায় ওড়না পেঁচিয়ে নিল স্নেহা। পাশে দাঁড়িয়ে আছি অন্তরা। তার চোখ-মুখ ভয় স্পষ্ট।
আমি এক নজর তার দিকে তাকাতেই সে বাইরে ইশারা করলো। বাইরে তাকিয়ে আবার আতকে উঠলাম। ওই ছেলেটা এদিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।চোখে রাগ স্পষ্ট তার চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে আমাকে চরম রকমের শাস্তি দেওয়ার জন্য বসে আছে। আমাকে যদি এখন মাঠের সবার সামনে দশটা চড় মারতে পারে তাহলে সে ক্ষান্ত হবে না।

ভয় আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম সে আমাকে দেখতে পাচ্ছ না জানি তবুও আমার মনে হচ্ছে সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আর চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্স করে দিচ্ছে।

—স্নেহা তুমি এটা কি করে করলা কিভাবে তুমি ওই ছেলেটার গায়ে হাত তোল্লা। তুমি জানো ওদের কত দাপট চাইলে তোমার যা খুশি করতে পারে। আমার তো ভাবতেই ভয়ে গা শিউরে উঠছে।

স্নেহা অসহায় মুখ করে অন্তরার দিকে তাকালো। ওর ভয়ার্ত মুখ দেখে আমার আরো বেশি ভয় করছে।

—এই ভাবে ভয় দেখাচ্ছ কেন?আমি কি এমন ভুল করছি তারা তো আমাদের সাথে অন্যায় করেছে। আর আমি সত্যিই চাই নি তাকে থাপ্পড় দিতে আমার হাত আপনাআপনি চলে গেছে।সিগারেটের গন্ধ আমি আগে থেকেই সহ্য করতে পারিনা তারপরও ওই ভাবে হাত টেনে আমার সত্যি খুব রাগ উঠেছিল। কিভাবে কি করে ফেলেছে?

কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল স্নেহা। ওর মুখে নরম কথা শুনে অন্তরার খুব মায়া হল। অন্তরা অতটাও ভীতু নয় কিন্তু সবার সামনে ন্যাকামীটা একটু বেশি করে।

—এখন আর ভয় পেয়োনা আচ্ছা চল আমরা ক্লাস করি এখন তারা আমাদের কিছু বলবেনা ক্লাস টাইম। ক্লাস শেষে বলেছে কিছু করবে। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য।

স্নেহা কৌতুহল ভরা চাহনি দিল।
—কি প্ল্যান?

—এখন চলো ক্লাস করি ছুটির পর আমরা লুকিয়ে ওদের চোখের আড়াল ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যাবো।

—কিভাবে দেখনা মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে আমরা এখান দিয়ে বের হতে গেলে তো ধরা পড়ে যাব।

—চলো তো তখন দেখা যাবে এখন ক্লাস তো করি। ভার্সিটির প্রথম দিন কত কিছু ভেবে এসেছিলাম আর কিছুই হলো না ভয়ে আতঙ্কে সারাটা সময় কেটে গেল।

ভয় ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ক্লাসে যাওয়ার জন্য মনস্থির করল স্নেহা‌। ক্লাস করতে হবে এমনিতেই কিছুদিন ক্লাস করতে পারে নাই। এখন আর ক্লাস মিস দিতে চায় না। ভাল করে লেখাপড়া করতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তারপর সেনা বাবার ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারবে।

স্নেহা অন্তরার সাথে কমন রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এগোতে লাগল ওরা এখন নিচতলায়। এখান থেকে মাঠ স্পষ্ট দেখা যায় একবার আড়চোখে গাছের নিচে তাকায় ওখানেই বসে আছে আদ্র সিগারেট খাচ্ছে আর আমাদের দিকে রক্ত লাল করা চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে।আশেপাশের সবাই গল্পে মেতে উঠেছে হয়তো সিরিয়াস কিছু নিয়ে কথা বলছে সবার মুখে রাগ স্পষ্ট।

স্নেহা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিল। তারপর অন্তরার পেছনে পেছনে যেতে লাগলো কারন ও ক্লাস চিনে না। দোতালার একদম কর্নারের রুম স্নেহা দের। ও আর অন্তরা ক্লাসে ঢুকলো স্যার এখনো ঢুকেনি দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।কিন্তু ওরা ঢোকার পর সবাই এমন ভাবে বড় বড় চোখ করে তাকালেন যে মনে হলো কেন জোকার রুম এসেছে। সবাই কেমন করে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানোর কারণটা বুঝতে পারলাম না। হ্যা পরে বুঝতে পারলাম তাদের তাকানোর কারণটা।

একটা মেয়ে বলাবলি করতেছে একটা মেয়ে বললে ভুল হবে প্রায় ক্লাসের অনেক মেয়ে ছেলেই বিড়বিড় করে বলতাছে,,
এই দেখ এই সেই মেয়ে কি সাহস মেয়ের আদ্র ভাইয়া কে চড় মেরেছে। মেয়েটা সাহস দেখে অবাক হই যার দিকে চোখ তুলে তাকানোর কারো সাহস নাই তার গায়ে হাত তুলেছে। সব স্যারেরা যার ওপর কথা বলতে পারেনা তার সাথে এমন ব্যবহার।
এই মেয়ের যে কি হাল করবে আদ্র ভাইয়া আল্লাই জানে।মেয়েটার ভয় ও নাই কোথায় ছুটে পালিয়ে বাসায় চলে যাবে তা না আবার ক্লাস করতে আসছে।

অন্তরা কানে ও কথাগুলো গেল ও আমার হাত ধরে বলল চলো সিটে গিয়ে বসি। একটা সিটেদুইজন বসে আছে আর দুজন বসা যাবে সিটটা বড়ই। অন্তরা আমাকে নিয়ে বলল ভেতরে যাও আমি কিনারে ছাড়া বসতে পারিনা।
আবার আরেকজনের কথা কানে এলো, সেইসব নিয়ে তো বলাবলি করছেই আবার আরেকটা কথা বলল। যা শুনে আমার চোখে অটোমেটিক পানি চলে এলো।
ভেতরে যাওয়া বাদ দে আমি শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। মেয়েটা তার পাশের মেয়েকে বলছে।

এই শোন এই মেয়েটা এখানে বসলে আমরা দুজনে উঠে যাব বুঝছিস। একেতে আদ্র মাই জানের সাথে ঝামেলা করেছে।কিভাবে থাপ্পর মারল দেখছিস ও যখন থাপ্পড় মারছিল মনে হয়েছে থাপ্পর টা ও আদ্র গালে নয় আমার গালে মারছে। আর দেখছিস ড্রেস আপ ওর মত এমন ড্রেস পড়ে এসেছে ভার্সিটিতে‌।

আর শুনতে পাচ্ছি না অপমানে আমার কান্না দলা পাকিয়ে আসছে। কিন্তু কাঁদতে পারছি না।আমি পেছনে ঘোরে অন্তরাকে ঠেলে সরিয়ে সবার পেছনের ফাঁকা ছিঁটে গিয়ে বসলাম।

কান্নার আটকাতে পারলাম না মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠলাম। থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি পারছিনা।হঠাৎ ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,,

—কাঁদছো কেন স্নেহা? ওদের কথায় মন খারাপ করো না। ওরা এরকমই কেউ তোমার পাশে না বসলে আমি তোমার পাশে বসব।

আচমকা ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে উঠলাম…

—আরে কাঁদছো কেন? আজ থেকে তুমি আমার ফ্রেন্ড শুধু ফ্রেন্ড না বেস্ট ফ্রেন্ড।

এর মাঝে ক্লাসরুমে স্যার রুমে ঢুকলো
—স্নেহা আমাকে ছাড়া ওই দেখো চলে এসেছে। তুমি তো আমার থেকেও বেশি কাঁদুনি দেখা যায়।

সারা আসছে শুনেই আমি তাড়াতাড়ি ওকে ছেড়ে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম।

রোল কলের সময় আমার নামটা আসতেই আমি দাঁড়িয়ে কিছু বলবো স্যার আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি স্যারের তাকানো দেখে মাথা নিচু করে ফেললাম,,

—এই যে মেয়ে তুমিতো দশদিন পর এসেছ তাই না। 10 দিনে একদিন তোমার পেজেন নাই।

–আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালাম,

—তা এতদিন লেট করে এসেছ কেন?

—স্যার আসলে আমি গ্ৰামে থেকে এসেছি আমি কালকেই এখানে এসে পৌঁছেছি। এজন্য উপস্থিত থাকতে পারি নাই।

—আচ্ছা সমস্যা নাই আগের ক্লাসের নোটগুলো নিয়ে নিবা। আর একদম প্লাস অ্যাপস সেন করবে না।

আমি তার কথায় সম্মতি জানালাম সে আমাকে বসতে বলে রুল কল শেষ করল। তারপর ক্লাস শুরু হলো মনোযোগ সহকারে ক্লাস করলাম একেএকে তিনটা ক্লাস শেষ হলো। আরেকটা ক্লাস আজকে হবে না।এখনই ছুটি ক্লাসে এতটাই মুশগুল ছিলাম যে আমার বাইরের বিপদের কথা মনেই ছিলনা।

নিচতলায় আসতে আমার গাছের দিকে চোখ পড়ল ভয়ে অন্তরার হাত খামচে ধরলাম,

গাছ থেকে আস্তে আস্তে নিচের দিকে চোখ আনলাম সাথে সাথে আমার ভয় ছুটে গেল। গাছের নিচে কেউ নাই। বাইক টাও নাই। এই সুযোগ অন্তরা তো এটাই বলেছিল পালাতে হবে।

অন্তরা মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে ও হাসি। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম।

—তোমার হাসিটা খুব সুন্দর স্নেহা?

—ধ্যাত কি যে বলো না। আমি আমার কিছুই সুন্দর না। তুমি অনেক সুন্দর একদম গুলুমুলু।

—এখানে এসব বাদ দাও চলো পালাই। ওয়েট দাঁড়াও তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাও।

স্নেহার নাম্বারটা অন্তরার মোবাইলে তুলে দিল। তারপর দুজনে তাড়াহুড়া করে মাঠ দিয়ে এগোতে লাগলো।
তাড়াতাড়ি সময় হাঁটা মনে হয় জোরে হয়না।আজকে তাই হচ্ছে মনে হয় মাঠ আজকে ফুরাবেই না।

অবশেষে মাঠে শেষ প্রান্তরে চলে এলাম। দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গেটের বাইরে পা রাখবে এমন সময় কেউ ঝড়ের গতিতে এসে স্নেহার হাত টেনে ধরলো। তারপর উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলো। স্নেহা তো স্তব্ধ হয়ে গেছে ভয়ে হাত-পা অনবরত কাঁপছে। অন্তরা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।অবাক করা বিষয় অন্তরা কে কেউ কিছু বলছে না।অন্তরা ওদের পিছনে যেতে যাবে হঠাৎ একটা ছেলে ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।ছেলেটাকে দেখে চিনতে অসুবিধা হয়না এই ছেলেটা তখন রাগিং করানোর সময় ছিল।

—কি ব্যাপার আপনি আমার পথ আগলে দাঁড়াচ্ছেন কেন?

—তোমার যাওয়া বারণ আছে। আর তোমার কোন শাস্তি নাই তাই তুমি ফট। যে শাস্তি পাওয়ার তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

অনেক কাকুতি-মিনতি করে ও অন্তরা যেতে পারে না। জোর করে যেতে চাইলে ওকেও শাস্তি পেতে হবে বলা হয়। তাই বাধ্য হয়ে অন্তরা চলে যায় কিন্তু ওর খারাপ লাগছে স্নেহা জন্য। কিন্তু ওর করার কিছু নাই।

চলবে♥️

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৪

–প্লিজ হাত ছাড়ুন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে…
বলে হাত সরানোর চেষ্টা করতে লাগল স্নেহা।
কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করল না আদ্র ও নিজের মাথা হেঁটে চলেছে।স্নেহা শত চেষ্টা করেও আদ্রকে থামাতে পারল না।

স্নেহার কান্না পাচ্ছে। আদ্রকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা না। ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ভয়ে। একটা রুমে নিয়ে ছুড়ে মারল স্নেহাকে। এটা রুম না সরি ক্লাস আমি ক্লাসের ফ্লোরে হুমরি খেয়ে পড়লো। ফ্লোরে পড়ে হাতে ব্যথা পেলাম হয়তো ছুলেও গিয়েছে।
হাতে এমনিতেই ব্যাথা করছিল এমন ভাবে শক্ত করে ধরে এনেছে যে মনে হয় রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর এভাবে পরায় আরো পুরো শরীর ব্যথা হয়েছে।

এখানে কেন নিয়ে এলো কি শাস্তি দিবে আমাকে? ভেবেই আমার সারা শরীর কাপতে লাগলো। মাথা উঁচু করে সামনে তাকানোর আগে আরো কিছু গলার আওয়াজ পেলাম। আস্তে আস্তে মাথা উঁচু করে দেখি আদ্রর সব ফ্রেন্ডরা রুমে ঢুকছে। কি যেন বলাবলি করছে তারপর সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শুধু সেই মেয়েটা রয়ে গেল মেয়েটা কি যেন বলতে আদ্র তাকে ও যেতে বলল মেয়েটা গোমরা মুখ করে আমার দিকে কটমট চোখে তাকালো। সবাইকে বের হয়ে যেতে আমার আত্মা শুকিয়ে এলো। অজানা ভয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম। আল্লাহ কেন আমি এই ছেলেটার গায়ে হাত তুলতে গেলাম। এখন আমার কি হবে?

সে আমার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। স্নেহা কোনমতে উঠে দাঁড়ালো তারপর। আমি ভয়ে ভয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
—প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন এখানে কেন নিয়ে এসেছেন? আমার কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ। আমি করে ফেলেছি। আমার আপনার গায়ে হাত তোলা উচিত হয়নি কিন্তু আপনি যদি এরকম ব্যবহার না করতেন তাহলে আমি এমনটা করতাম না। দোষ আপনারা ছিল এজন্য আমি চড় মারতে বাধ্য হয়ে আর আমি সত্যি চড় মারতে চাই নি কিভাবে যে কি হয়ে গেল। আপনার কাছে আমি..

আদ্র রাগী চোখে তাকিয়ে আছে স্নেহার দিকে দোষ ওর ও আছে সেটা শুনে তো আরও রেগে ফায়ার হয়ে গেল। এই মেয়ে একে তে আমায় গায়ে হাত তোলার মতো স্পর্ধা দেখিয়য়েছে সারা ভার্সিটির সবার সামনে। আবার এখন এতো কথা বলছে। চিৎকার করে উঠলো,

চিৎকার শুনে তো ভয়ে কেঁপে উঠলাম, হঠাৎ আদ্র এগিয়ে এসে আমার বাহু শক্ত করে ধরে। এটা দেখে তো আমি আরও ভয় পেয়ে যাই এত শক্ত করে আমার হাত ধরে আছে যেন হাত ভেঙে যাবে।আগের ব্যথাটার থেকেও বেশি শক্ত করে ধরেছে এবার।
ব্যথায় আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

—কি বললে তুমি আমার দোষ ছিল? আদ্রকে দোষ দেখাও তুমি এতো বড় সাহস তোমার।

—আমি সেটা বলতে চাইনি আমি তো..

—স্টপ ইট..!!

হঠাৎ আদ্রর ফোনটা বেজে ওঠে, বিরক্ত হয়ে আদ্র স্নেহা কে ছেড়ে পকেট থেকে ফোন বের করে। ফোনের উপর বড় করে লেখা আম্মু।আম্মুর কল দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।

-হ্যালো আম্মু,
অপর পাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। কান্নার আওয়াজ শুনে আদ্র ভয় পেয়ে যায়।
ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগে,

-হ্যালো কি হয়েছে? কান্না করছো কেন? হ্যালো আম্মু কথা বলো সবাই ঠিক আছে তো!

-আদ্র বাবা তুই কোথায়?

-আমি তো ভার্সিটিতে থাকি এই সময় তুমিতো জানো সেটা।

-হ্যাঁ তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয় তোর আব্বুর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে?

-হোয়াট কখন কিভাবে কোথায়?

-তুই তাড়াতাড়ি আয় এখন কিছু বলতে পারব না আমরা সবাই হসপিটালে যাচ্ছি?

-আচ্ছা আমি এখন আসছি কোন হসপিটাল।

আদ্রর আম্মু হসপিটালে ঠিকানা বলে ফোন কেটে দিল। একটু আগে অর্থাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছিল তার পরে জানতে পেরেছে এক্সিডেন্টের খবরটা। আদ্র চাচা আদ্রর আম্মু ছোট বোন চাচাতো ভাই সবাই হসপিটালে যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠে বসলো।
আদ্রর মাকে তো কোন ভাবেই কান্না করা থেকে থামানো যাচ্ছে না।

আদ্রর ফোন কানে থেকে নামিয়ে একবার পেছনে তাকিয়ে তারপর দরজা খুলছ বেরিয়ে যাই ওর ফ্রেন্ডরা সবাই বাইরে দাঁড়িয়েছিল। আদ্রকে এভাবে হতদন্ত হয়ে বের হতে দেখে সবাই ছুটে আসে ওর কাছে।

–কি হয়েছে আদ্র তুই এভাবে ছুটে কোথায় যাচ্ছিস।
ওই মেয়েকে রুমে রেখে এসেছিস আমরা কি বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেবো।

—না দরকার নাই ওকে চলে যেতে বল।

—হোয়াট চলে যেতে বলবো কেন?তুইতো বলেছিলি এই মেয়েকে রুমে বন্ধি করে রাখবি।

—হ্যাঁ বলেছিলাম এখন বলছি যেতে দে আমি এখন ব্যস্ত আছি আমাকে এখনই বাসায় যেতে হবে ওর যা ব্যবস্থাও পড়ার পরে করব।

বল আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বাইক নিয়ে চলে যায়। উদ্দেশ্য হসপিটাল যাওয়া।

স্নেহা সট্যাটু হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রর যাওয়ার দিকে। কিছুই বুঝতে পারল না ও। ও নাড়াচাড়া করার কথা ভুলে গেছে। হঠাৎ একটা ছেলে এসে ওকে চলে যেতে বলল, ওকে আর পায় কোন রকম দৌড়ে বেরিয়ে এলো রুমে থেকে। কিছুই স্টুডেন্ট ছাড়া সবাই চলে গেছে। গেটের বাইরে আসতেই কেউ ওকে পিছন থেকে ডাকলো, চমকে ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালো আবার কেডায় ডাকে আমারে। আল্লাহ আজকে কি আমার বিপদ শেষ হবে না।
পেছনে তাকিয়ে আবার ভয় পেয়ে যায়।এটাতো আদ্রর ফ্রেন্ড মনে হয় তাদের সাথে তো দেখেছিলাম। নামটা জানা হয় নাই দুই তিন জনের নাম মুখে শুনেছি এর নাম জানিনা।
আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে আবার শাস্তি দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যাবে নাকি।

—জি ব লু ন

—তোমাকে একটা কথা বলতে এলাম তোমার নামটা কি যেন?

—জি স্নেহা।

–আমাকে ভয় পাচ্ছো কেন আমি তোমার ক্ষতি করার জন্য তোমাকে সাহায্য করার জন্য এসেছি আদ্র তোমার উপর অনেক রেগে আছে আর রাগ করাটা স্বাভাবিক। তুমি ওর গায়ে হাত না তুললে ও তোমাকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছে ও প্রচণ্ড রেগে আছে তোমার উপরে। সারা ভার্সিটি সবার সামনে তুমি ওকে চড় মেরেছ। যেখানে সবাই ওকে ভয় পায় চোখ তুলে তাকাতে সেখানে তো তুমি এই কাজটা করে বসেছে এত সহজে তোমাকে ছেড়ে দেবে না। ওর রাগ খুব ভয়ঙ্কর তোমার সাথে যে কি করবে আমি ভেবে পাচ্ছি না। তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে জন্যই এই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছো কিন্তু। আদ্রর রাগ খুব ভয়ঙ্কর ও রাগে কি করে নিজেও বুঝতে পারে না। তাই ওর হাত থেকে যদি বাঁচতে চাও তাহলে তোমাকে একটা সাজেশন দিতে পারি।

উনার কথাটা শুনে আমি চমকে তাকালাম ভালো করে হ্যাঁ ছেলেটা গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, লম্বা স্বাস্থ্য মিডিয়াম। দাড়ি মোচ নিচে নাই একদম ক্লিন। মুখে হালকা হাসি দেখতে ভালোই। ছেলেটাকে বিশ্বাস করতে মন চাইলোএত কিছু হওয়ার মাঝে তার মুখে আমি একটা খারাপ কথা শুনি নাই সে সময় চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলো। আমাকে এত কথা বলছে কেন? আর ফ্রেন্ড এর বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে সাহায্য করতে এসেছি বা কেন?

—আপনি আমাকে সাহায্য কেন করবেন?

–কোন কারণ নেই। জাস্ট তোমার জন্য আমার খারাপ লাগছিলো এজন্যই আমি তোমাকে বলতে পারি তুমি এমনি এমনি আদ্রর হাত থেকে ছাড়া পাবে না। আর অনেক জোর আছে ভার্সিটিতে।

—যে জোর‌ই থাক আমি কালকে ওনার নামে প্রিন্সিপালের কাছে কমপ্লেন করব।

—এই কাজটা ভুলে ও করতে যেও না
তারা তোমার কোন কথাই বিশ্বাস করবে না আর করলেও তারা আদ্র কিছুই করতে পারবেনা। ওহ তোমাকে যা বলতে এসেছিলাম এইসব করার কথা বাদ দিয়ে আদ্রর কাছে সরি বলে দিও। এতে হয়তো বা ওর রাগটা কমতে পারে।

—সরি কেন বলব উনি ভুল করেছেন উনি আমাদের সাথে বাজে ব্যবহার করেছেন?

—সেটা তোমার ইচ্ছা তুমি যদি সরি বলো হয়তোবা ব্যাপারটা সল্ভ হতে পারে। আর যদি না বল তাহলে তোমার সামনে অনেক বিপদ আছে। আদ্রকে আমি চিনি ও এতো সহজে তোমাকে ছেড়ে দেবেনা। আজকে একটা কারণেও চলে গিয়েছে।হয়তোবা তোমাকে বাঁচার একটা সুযোগ করে দিয়েছে।

ছেলেটা চলে গেল। হ্যাঁ চরটা দেওয়া ঠিক হয় নাই কিন্তু সে তো আমাদের সাথে খুব বাজে ব্যবহার করেছে। কেন স্যরি বলবো প্রিন্সিপাল কে জানে কথা তোমার মনেই ছিলনা। এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে এসব কথা বলেই গিয়েছিলাম। কালকেই প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ করব। আজকে আর একা যাবো না অন্তরা কে নিয়ে যাব কালকে।

বাসায় এসে হালকা ফ্রেশ হয়ে আসে হাত ব্যথা করছে হাতে নীলা পরে গেছে এক সপ্তাহ মতো এই নীলা থাকবে। ওইভাবে বাবার রুমে যায় স্নেহা বাবা ঘুমিয়ে আছে। দুটো উপরে বেজে গেছে রান্নাঘরে এসে সকালের ভাত গরম করে তার পায়ে বাবার রুমে এসে বাবাকে খাইয়ে দেয় ডেকে ওঠিয়ে। খাওয়ার সময় বাবা আজকে সারাদিন কেমন কাটলো নানা কথা জিজ্ঞেস করে আমাকে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভালোই বলে প্লেট নিয়ে বাইরে চলে আসে। বাবা যদি জানত আজকে ভার্সিটিতে কি সব ঘটেছে।

এসব বাবাকে জানতে দেওয়া যাবে না। নিজেও হালকা কিছু খেয়ে নিলাম। ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করতে দেখি অনেকগুলো মিসকল আননন নাম্বার সাথে সাথে আবার ফোন আসে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অন্তরের কন্ঠে আসে।

—হ্যালো স্নেহা তুমি ঠিক আছো? আমি তোমাকে কখন থেকে কল করছি রিসিভ করছো না কেন। কত চিন্তিত জানো তোমাকে নিয়ে গেল তোমার কোন ক্ষতি করেনি তো তুমি ঠিক আছো।

,–হ্যা ঠিক আছি।

অন্তরাকে সবকিছু খুলে বলে স্নেহা। অন্তরা বলে কালকে ভার্সিটিতে আগেই যেতে।
স্নেহা হ্যাঁ বলে ফোন রেখে দেয়।

এদিকে
আদ্র হসপিটাল এসে দেখে বাসার সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে। ও সবার কাছে যেতে ডাক্তার বেরিয়ে আসে।ডাক্তার কে দেখে আর কারো সাথে কথা না বলে ডাক্তারের কাছে ছুটে যায়।

—ডাক্তার আমার আব্বু ঠিক আছে তো।

ডাক্তার জানানআব্বু পায়ে ব্যথা পেয়েছে কিন্তু খুব গুরুতর না মাথা একটু বেশি আঘাত পেয়েছে কিন্তু সমস্যা হবে না তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। এটা শুনে সবাই নিশ্চিন্ত হয়।

ডাক্তার কে বলা হয় বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা
সে বলে নিয়ে গেল ওসমস্যা নাই ভালো করে দেখাশোনা করতে। রাতে বাসায় নিয়ে আসে আদ্র ও বাবাকে।

পরদিন অন্তরা আগে যেতে বলেছিল ফোন দিয়ে অন্তরায় টাইম বলে বাসা থেকে বের হয় আধা ঘন্টা লাগে ভার্সিটিতে যেতে। অন্তরার বাসা কোথায় সেটা জানা হয় নাই এখনও। কারণ কালকে তো আমার আগেই চলে এসেছে। কালকে অটোতে গিয়েছিল বেশি দূর না হলেও 50 টাকা ভাড়া। প্রতিদিন এমন 50 টাকা ভাড়া খরচ করা লাগবে। যেতে আসতে 50 টাকা। ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, আজকে অটোতেই তাই কাল থেকে না হয় হেঁটে যাবো। কিছু কাজ জোগাড় করতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি। ভাবতে ভাবতে অটোতে উঠে বসে স্নেহা কিন্তু অটোতে উঠি চমকে যায় অন্তরা কে দেখে।

–ও এখানে কি করে? অন্তরার সেম অবস্থা ও চমকে গেছে স্নেহাকে দেখে।

—তুমি এখানে তোমার বাসা কি ওই দিকে?

—না আমার খালার বাসা। কালকে সন্ধ্যায় খালার বাসায় এসেছিলাম আমার খালাতো বোনের জন্মদিন ছিল।

–ও আমি আরো ভাবলাম তোমার বাসা বোধ হয়।

–হলে ভালো হতো একসাথে যেতে আসতে পারতাম।

—হ্যাঁ।

—-কালকে কি হয়েছিল এখন আবার ফিরে বল। তুমি জানো তোমার জন্য আমি কত টেনশন করেছি। আমি কত ভেতরে যেতে চাইলাম আমাকে যেতে দিল না কেউ।

–সবকিছু খুলে তো বললাম কালকেই।

–আরে ফোনে তো বুঝি নাকি আবার বল।

আবার সবকিছু বলল স্নেহা।

সব শুনে অন্তরা বলল।

—-স্নেহা আমার কিন্তু শেষে ভাইয়াটা যা বলেছে তার কথায় ভালো লেগেছে।

—মানে তুমি আমাকে সরি বলতে বলছো।

—হ্যাঁ এটাই ঠিক হবে তুমি একটু ইনোসেন্ট মুখ করে সরি বলে দিবি। আচ্ছা আমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না আমি তোমাকে তুই করে বলব কেমন। তুমি আবার রাগ করবে নাতো। আসলে ফ্রেন্ডকে না তুমি তে ভালো লাগেনা।

—-সমস্যা নাই বলো।

—শুধু আমি একা নাকি তুইও বল।

—-আচ্ছা।

—তাহলে এবার আমি বলি কী তুই আদ্র ভাইয়ের কাছে গিয়ে ছরি বলে দে আমি তোর সাথে যাব। দেখ তার অনেক ক্ষমতা ভার্সিটিতে। আর তুই প্রিন্সিপালের কাছে নালিশ করবি ভেবেছিস। প্রিন্সিপাল তোর কথা শুনবে না দেখিস। আর ওএর জন্য আদ্র রেগে যাবে আমাদের ওপর।আর তুই যা বললি তোকে রুমে নিয়ে গিয়েছিল যেভাবে ফেলছিল যদি তোকে আটকে রেখে দিত তাহলে কি হতো আর তোর সাথে খারাপ কিছু করে ফেলতো তাহলে কি হতো ভাবতে পারছিস।

কথাগুলো শুনে স্নেহা ভয় পেয়ে গেল।

—আমার কথাটা শোন চল আমরা দুজনে গিয়ে ছরি বলে দেই। আমার বিশ্বাস ছরি বললে আর কিছু বলবেনা।

এমনিতেই প্রচন্ড রকমের ভীতু স্নেহা তার ওপর এতোটুকু সাহস রেখেছিল ভেবেছিল অন্তরা ওর সঙ্গ দেবে কিন্তু অন্তরার কথা শুনে আরো ভয় পেয়ে যায়। সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় ও সরি বলে দেবে। ঝামেলা এমনিতেই স্নেহার পছন্দ না।

ভার্সিটির সামনে এসে নেমে ভাড়া দিতে যাবে তার আগে অন্তরা দুজনে ভাড়া দিয়ে দেয়।

—এটা কি হলো তুই ভাড়া দিলে কেনো আমি দিতাম।

—সমস্যা নাই অন্য দিন দিয়ে দিস।

দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি এখন গিয়ে আদ্রকে ছরি বলে দেবে।
স্নেহা ভেতরে ঢুকে যেখানটায় আদ্ররা দাঁড়িয়ে থাকে সে দিকে তাকায়। সবাই সেখানে আছে দেখে অন্তরা কে নিয়ে সে দিকে এগিয়ে যায়। আমাদের দেখে সবাই অবাক হয়ে বড় বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে। আমি চারপাশে আদ্র কে খুজছি। কিন্তু সবাই আছে আদ্র নাই।

–এই মেয়ে তুই এখানে কি করছিস? মাইশা ওদেরকে দেখেই কথাটা বলে উঠলো,

—না মানে আসলে,

—তাদের সাহস দেখে তো অবাক হচ্ছি কোথায় ভয়ে এক সপ্তাহ ভার্সিটিতে আসবি না। কালকে এত কিছু হওয়ার পর আবার এখানে এসেছিস। এখানে কি চাই?

কিছু বলতে যাবে তার আগেই সেই কালকের সাহায্য করবে বলেছিলে সেই ছেলেটা এলো।

—উফ মাইশা অফ করো তো শুনে দেখ কি জন্য এসেছে।

—রাহাত তুই ভাবতে পারবি না মেয়েটাকে দেখে আমার কথাটা রাগ হয়। ও আদ্রকেচড় মেরেছে আমার সামনে আমার তো মন চায় সেই মেয়েকে আমি উচিত শিক্ষা দিয়ে দেয় থাপরিয়ে গাল লাল করে দেয়। কিন্তু আদ্র বলেছে ও শাস্তি দিবে এজন্য কিছু বলতে পারতাছিনা। আর আদ্র তো এখনো ভার্সিটিতে আসে নাই।

আদ্র ভার্সিটিতে আসে নাই শুনে স্নেহা অন্তরার দিকে তাকায় অন্তরা ও।

দুজনে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় এমন সময় বাইক এসে থামে ওদের সামনে। বাইক থেকে নেমে আসে আদ্র।

আদ্র নেমে এসে ওদের দুজনকে দেখে বাঁকা হাসি পাখি নিজেই খাঁচায় বন্দী হতে এসেছে ।

কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে স্নেহা আদ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আদ্র সহ সবাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকায়। চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে,

–আই এম সরি আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি কালকের জন্য সত্যিই খুব দুঃখিত।আমাকে কোন শাস্তি দিবেন না প্লিজ আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।

এক নাগাড়ে কথাটা বললে স্নেহা চোখ মেলে তাকায়। সামনে ঠিক কি রিয়াকশন দেখার জন্য। দোয়া দরুদ পড়ছে আল্লাহ কালকে কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম উনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয়।

চলবে ♥️

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৫

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে স্নেহা থামল।
চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলছিলোএবার ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকায় আশে পাশে থেকে কোন কথার আওয়াজ আসছে না। চোখ মেলে প্রথমে আদ্ররদিকে তাকায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার আদ্রর চোখে আমি রাগ দেখতে পাচ্ছিনা যে রাগটা কালকে ছিল।

আমি ব্রু কুচকে তার চোখে দিকে তাকিয়ে আছি। এত ঠান্ডা কেন কিছু বলছ না কেন? কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। তার তাকানো দেখে আমার অস্থি হচ্ছে।আমি একবার পিছন ঘুরে অন্তরার দিকে তাকালো ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ওর মুখে ভয়ের ছাপ।কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি না এখন আমার সাহস হচ্ছে ভুল করেছে সরি বলেছি। এখন যদি সে আমার সাথে বেশি বারাবারি করে সোজা প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে তার নামে আমি কমপ্লেন করব। সে তো আমাদের সাথে রুড বিহেভ করেছিল বলে আমি তার গায়ে হাত তুলেছিলাম। তবুও সেটা নিয়ে তাকিয়ে আমরা এটা কিছু বলি নাই উল্টো আমরাই সরি বলেছি।

আমি একদম আদ্রর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেছি এবার আমি পিছিয়ে অন্তরার কাছে যেতে নেই। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আদ্রর আমার হাত চেপে ধরে। আচমকা ঘটনায় থমকে যায় আমি। অবাক হয়ে হাত দিকে তো একবার আদ্রর দিকে তাকায়।

—দেখছিস মেয়েটাকে কাল চড় মেরে আজকে আবার সরি বলতে এসেছে সরি বললে সব সমস্যার সমাধান হবে নাকি। আদ্র তুই মেয়েটাকে কখনো ক্ষমা করবি না। তুই যদি ওকে শাস্তি দিতে না পারিস আমাকে বল আমি ওকে এক থাপ্পর,

আদ্র হাত উঠিয়ে ওকে ইশারায় থামতে বলে।

—মাইশা বেবি স্টপ। আমি আছি নাও আমার গায়ে হাত তুলেছে সেই হিসেব আমি তুলবো।

—দেখুন আপনি আমার হাত ছাড়ুন।

—ওকে ছাড়লাম এখানে দাঁড়াও। তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাইছ তার মানে তুমি বুঝতে পেরেছ তুমি কাজটা ঠিক করো নাই।

কথাগুলো বলে আদ্র স্নেহার হাত ছেড়ে দেয়। ভুল করেছে শুনে স্নেহা আবার একটু চেতে ওঠে ভুল কোথায় করল ছেলেটা ওদের অসভ্যতামি করেছে এর জন্যই তো হাত তুলেছে। নিজের দোষটা তো দেখতেই পাচ্ছি না।

কিছু বলতে যাবে হঠাৎ অন্তরায় এসে ওর হাত চেপে ধরে। ও অন্তরার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে ঠান্ডা হয়ে ক্ষমা চেয়ে মিটমাট করে নিতে বলছে এদের সাথে আমরা পারব না উল্টা ঝামেলা হবে। তার থেকে নিজেরাই সরি বলে কেটে পড়া ভালো।
সেহার কিছু কথা শুনাতে ইচ্ছে হলেও নিজের কথা নিজের মধ্যে রেখে দিল।

এখানে লেখাপড়া করতে এসেছে এদের সাথে ঝামেলা করে নিজের বিপদ ডেকে আনতে চায় না আর এই শহরে একেবারেই নতুন স্নেহা। আপন পরিচিত বলতে কেউ নাই।এক বাবা নিজের কোন বিপদ হলে বাবা তাকে সাহায্য করতে পারবেও না সে নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারে না। গল্পে রিয়েল লেখিকা তানজিনা আক্তার মিষ্টি। আর ভার্সিটিতে এদের যে অনেক ক্ষমতা তা ভালোই বুঝতে পেরেছে স্নেহা। কাল ক্লাসের কেউর সাথে বসে নাই কথা বলেনা স্টুডেন্ট সব এই ঝামেলার জন্য। কাল যে ভাবে আদ্র ক্লাস রুমে নিয়ে গিয়েছিল প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল। আর কোনো ক্ষতি করলেও আদ্রর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারত না। সেসব ভেবে আর একটু ভয় পেয়ে যায়। তাই নিজেকে সংযত করে।

আদ্র আবার জিজ্ঞেস করে, তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।

স্নেহা মাথা উঁচু করে একবার আদ্রর দিকে তাকিয়ে, বলে উঠে, হ্যাঁ।

—ওকে তোমার সরি একসেপ্ট হতে পারে কিন্তু তার জন্য একটা শর্ত আছে।

কথা শুনেই অন্তরা বলে ওঠে,, আবার কি শর্ত?

—আছে যদি সেই শর্তটা মানতে রাজি হও তবে তোমাকে ক্ষমা করব।

স্নেহা শর্তের কথা শুনে ভয় জমে গেছে।মাথায় দেওয়া ওড়না টা আরেকবার মাথায় ভালো করে টেনে উনার কোন আঙ্গুলে পেচাতে থাকে। আমার কি শর্ত দিবে।

—কি হলো তুমি কি আমার শর্ত শুনতে রাজি আছো।

–কি শর্ত? কাঁপা কাঁপা গলায় স্নেহা কথাটা বলে।

—তুমি সিগারেট এর জন্য আমাকে থাপ্পড় মেরেছিল।সারা ভার্সিটির সবার সামনে যেখানে কেউ আমার দিকে তাকানোর সাহস করেনি সেখানে তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছে। এতে আমার রেপুটেশন খারাপ হয়েছে।সে জন্য তোমাকে তো আর এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় না তবু আমি তোমার সরি অ্যাকসেপ্ট করতে পারি যদি তুমি যে কারনে আমার গায়ে হাত তুলেছিল সেই কাজটা এখন করো।

কথাটা শুনে স্নেহা বড় বড় চোখ করে আদ্রর দিকে তাকায়,

—মানে?

—মানে খুব সহজ তোমাকে সেদিনের অসম্পন্ন কাজটা শেষ করতে হবে। তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব । কেউ কিছু বলবো না তোমাকে।

স্নেহা কল্পনাও করেনি এমন একটা কথা বলবে আদ্র। আদ্রকে যতটা খারাপ ভেবেছিল তার থেকেও জঘন্য এই ছেলেটা। তার চোখে মুখে দুষ্টুমি সাপ আর সহ্য করতে পারলো না।

—দেখুন আপনি আবার অসভ্যতামি করছেন আমাদের হেরাস করছেন। আপনাকে আমার ছরি বলাটাই উচিত হয় নাই আমি এখানে সব মিটমাট করতে চাইছিলাম কিন্তু আপনি মিটমাট করতে চাইছেন না। আমি আর আপনার কোনো শর্ত মানতে পারবেন আপনার ছরি এক্সেপ্ট করা লাগবে না। আমি এখনই নিজে প্রিন্সিপালের কাছে আপনার নামে নালিশ করব।

বলে অন্তরার দিকে তাকায় স্নেহা,
কি হলো এখন এই ভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তোর কথা শুনে তো কিছু বললাম দেখলি কতটা খারাপ এরা। এদের যত মাথায় তুলব ততই রা মাথায় চড়ে বসবে। চল আমার সাথে এখনই আমরা অফিস রুমে যাবো।

দুই কদম এগোতেই ওর পা থেমে যায় আপনা আপনি।

রাগী‌ চোখের পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়। আদ্রর মুখে হাসি হাতে থাকা সানগ্লাস চোখে দিয়ে বাইকে উঠে অফিস রুমে চলে যায়।
অন্তরা আর স্নেহা ওখানে দাঁড়িয়ে হা করে আদ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। পেছন থেকে ওর ফ্রেন্ড গুলো আর সেই মেয়ে দুটো ওদের কাছাকাছি এসে বলে।

—তুমি প্রিন্সিপালের কাছে কী নালিশ করবে আমরা তোমার নামে এখন গিয়ে নালিশ করব যে তুমি আদ্রর গায়ে হাত তুলেছো। প্রিন্সিপাল তোমার কি হাল করবে দেখো এমন না হয় তোমাকে ভার্সিটি থেকে বের করে দেয়। একদিন ক্লাস ও করতে পারলে না ভালোমতো আহারে বেচারী।

কথাটা মাইশা বলেই ওর বেস্টফ্রেন্ড রাইসার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায় পেছনে আশিক রাও চলে যায় শুধু একজন দাঁড়িয়ে থাকে। সে আর কেউ নয় যে স্নেহাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল রাহাত।

—তোমাকে প্রথম যখন সরি বলতে শুনলাম আমি কিন্তু খুশি হয়েছিলাম ভেবেছিলাম তুমি বুঝেছ কিন্তু পরে আবার প্রিন্সিপাল করলে কেন। এখন তোমাদেরকে ওরা ফাসিয়ে দেবে আর তোমাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দেবে না।

—উনিতো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে আপনি তো দেখেছেন। আপনাকে অনেকটা ভালো মনে হয়েছে। প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন।

—সরি বোন আমি কিছু করতে পারবোনা আর্দ্র একটু জেদি হল মনটা খুব ভালো। আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর বিরুদ্ধে আমি কিছু বলতে পারবো না।

—দেখনা আমি তো সরি বলেছিলাম কিন্তু উনি আবার সেই কথাটাই তুলল ‌। আমার সিগারেটে প্রবলেম আছে এটা আমি কিছুতেই করতে পারবোনা না।

—সেটা তুমি তখন বললে না হয় অন্য একটা কিছু করা যাইতো এখন দেখো ওই যে ওরা চলে যাচ্ছে স্যারকে তোমার বিষয়ে অনেক কিছু বলবে।

—প্লিজ আপনি একটু সাহায্য করুন প্লিজ ছোট বোন মনে করে আমাদের সাহায্য করুন।

আচ্ছা তোমরা এখন ক্লাসে যাও আমি দেখছি কি করা যায়। রাহাতের খুব খারাপ লাগলো স্নেহার মুখটা দেখে সত্যি মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে। ওর সাথে তো খারাপই হয়েছে কিন্তু আদ্রর বিরুদ্ধে আমি যেতে পারব না
দেখি বলে কিছু করা যায় কিনা। দূর থেকে রাহাত দেখতে পায় ওরা প্রিন্সিপালের রুমের ঢুকার আগে বাইরে কিছু আলোচনা করছে। রাহাত তাড়াতাড়ি সে দিকে যায়।

আদ্র সবাইকে বুঝিয়ে বলেছে কিভাবে কি বলতে হবে। এমন ভাবে বলবে যে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে ওর গায়ে হাত তোলা শাস্তি তো পেতেই হবে। প্রিন্সিপালের রুমের ঢুকবে এমন সময় পেছন থেকে চিৎকার করে আদ্রর নাম ধরে ডেকে ওঠে রাহাত তা দেখে সবাই অবাক চোখে রাহাতের দিকে তাকায়,

রাহাত কারো সাথে কোন কথা না বলে আদ্রকে একটু দূরে নিয়ে যায়। দূর থেকে সবাই দেখছে ওরা কিছু কথা বলছে।

অনেকক্ষণ ওদের মাঝে কিছু কথাবার্তা চলল দেখা গেল আদ্র রেগে কিছু বলছে তারপর রাহাতের কথায় আস্তে আস্তে শান্ত হলো। মুখটা গম্ভীর করে এলো রাহাত ওকে নিয়ে সবাইকে নিয়ে আবার মাঠে চলে এলো।

—-কি হলো এভাবে চলে এলাম করে সবাই। রাহাত তুই আদ্রকে কি বললি তখন।

—-কিছু না।

আদ্র কিছু বলছে না।সবাই জিজ্ঞেস করেও যখন ওদের মধ্যে মুখ দিয়ে কিছু বের করতে পারলো না সবাই চুপ হয়ে গেল।

অন্তরার আর স্নেহা ভয়ে ভয়ে ক্লাসগুলো শেষ করল। না জানি কখন কোন বিপদ আবার এসে হানা দেয়। কিন্তু কোনকিছুই করল না শেষ ক্লাস বের হতেই ভয় পাচ্ছে।

—-আমার ভয় করছে রে স্নেহা প্রিন্সিপালের কাছে কী নালিশ করে ফেলেছে প্রিন্সিপাল আমাদের ডাকলো না তো।

—-হ্যাঁ মনে হয় রাহাত ভাইয়া কিছু করেছে।

—হতে পারে চল এবার বাসায় যায়।

দুজনের গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে আজকে একবারও ক্লাস থেকে বের হয় নাই। মাঠের কাছে আসতেই গাছটার দিকে নজর যায় সবাই বসে আছে ভয়ে ভয়ে দুজনে এগিয়ে যাচ্ছে এই বুঝি ডেকে উঠলো, কিন্তু কেউ ডাকলো না। দুজনে গেটের বাইরে সে অবাক হয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে হেসে উঠল,

—মনে হয় বিপদ গেল।

—-হ্যাঁ এর জন্য রাহাত ভাইয়ের কৃতিত্ব আছে তাকে ধন্যবাদ দিতে হবে।

—আচ্ছা কালকে তাহলে দেব।

দুজনেই নিশ্চিন্তে বাড়ি চলে আস।

সবাই বাসায় চলে গেছে। রাহাত আর আদ্র পাশাপাশি একটা লেকের পাড়ে বসে আছে।

—তখনকার ব্যবহারের জন্য রাগ করেছিস?

একবার ফিরে তাকালো আদ্র রাহাতের দিকে তারপর আবার দৃষ্টি সামনে দিকে।

—রাগ করিস না।আমি কারো হয়ে কথা বলি নাই শুধু আমার মনে হয়েছে মেয়েটার সাথে অন্যায় হয়েছে।

–ও যে আমার গায়ে হাত তুললো সেটা কিছু না।

—-হ্যাঁ এটা খারাপ কিন্তু তুই তোর সাথে খারাপই করছিস জোর করে সিগারেট খেতে বলেছিস এটা কি ঠিক?

—তুই আমার ভুল ধরছিস আগে এমন ধরছিস না তুই আমার ফ্রেন্ড নাকি ওই মেয়েটার।

—আদ্রর তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। সে ভুল করেছে পরে তো ক্ষমাও চেয়েছে ক্ষমা করে দে প্লিজ। এই নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করিস না যা হওয়ার হয়েছে এখানে ভুলে যা।

আদ্র কিছু বলল না চুপ চাপ বসে রইলো কিছুক্ষণ।

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে