pyar_to_hona_hi_tha Part-10+11

0
1988

#pyar_to_hona_hi_tha❤
লেখা- পূজা
পর্ব-১০


নিলির জন্য তীব্র আজ মজা করতে পারলো না বাসে। সিট থেকেই ও উঠতে পারে নি। অন্য সময় যখন তারা টুরে যেতো তীব্রই সব থেকে বেশি ইনজয় করতো। সিটে বসে খুব কম থাকতো। বাসের মধ্যে তীব্র তানভীর আকাশ ডান্স শুরু করে দিতো আর গান তো আছেই। আকাশ অন্য বাসে। তীব্র নিলিকে নিয়ে আছে। তাই তানভীরের ও বসে বসে যেথে হচ্ছে। চিল্লিয়ে গান গাওয়া লাফালাফি কিছুই করতে পারছে না। তারপরো শিহাব সাগর ওদের সাথে মজা করছে। সবাই স্ট্রেন্জ তীব্রর নিরবতা দেখে।

দুপুর ২টা,,
সকাল ১০টায় গাড়ি ছেড়ে ছিলো। পুরো ৪ঘন্টা জার্নি করে সবারই খিদে পেয়ে গেছে। তীব্রদের গাড়ি একটা হোটেলের সামনে এসে দার করালো। যার যার খিদে পেয়েছে খাওয়ার জন্য। নিলি ২ঘন্টা ধরে ঘুমিয়ে আছে। বাস থামতেই ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। পিটপিট চোখে তাকিয়ে দেখলো ও কাউকে জরিয়ে ধরে আছে। হঠাৎ মনে হলো ওর পাশে তো তীব্র। তারমানে…..সাথে সাথে এক ঝটকায় নিলি তীব্রকে ছেড়ে দিলো। মনে হলো কারেন্ট এর শক খেয়েছে।

নিলিঃসরি সরি আমি কখনো ঘুমিয়ে গেছি বুঝতে পারি নি। আর ঘুমের মধ্যে…..সরি।

তীব্রঃআরে কুল। এত সরি বলতে হবে না। আমি কিছু মনে করি নি।

নিলি চোখ ছোট ছোট করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বললো,”আমি তো জানালায় মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলাম। এখানে আসলাম কি করে।”

তীব্রঃমাথায় ব্যাথা পাবে তাই তোমার মাথা আমার কাধে রেখেছিলাম। বাট তুমি আমায় জরিয়ে ধরেই ঘুমিয়ে গেলে।

নিলি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। মনে মনে নিজেকে ১০০টা বকা দিচ্ছে। তীব্র দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,”আবার জরিয়ে ধরবে প্লিজ। খুব ভালো লাগছিলো😜।”

নিলিঃ😡

পাশ থেকে অনিক বলে উঠলো,”কিরে কিছু খাবি না। আজ তো তুই রেকর্ড ভাঙ্গবি দেখছি। নো ডান্স নো ইনজয়। শুধু বসে ছিলি।”

তীব্রঃভালো লাগে নি। তরা যা আমি আসছি।

নিলির ক্লাসমিট তিরা আর জুলি এসে বললো,”এই নিলি কিছু খাবি না।”

নিলিঃখাবো। ভীষন খিদে পেয়েছে। দেখতো তৃনা কোথায়।

তৃনাঃএইতো আমি। চল।

তীব্র উঠে চলে গেলো। তারপর নিলি বেরলো। সবাই হোটেলে গিয়ে যে যার মতো খেয়ে নিলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ১ঘন্টা পর সবাই বাসে ফিরে আসলো। তীব্র বাইরে দারিয়ে হেসে হেসে ওর ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছে। সাথে কিছু মেয়ে ফ্রেন্ডস ও আছে। নিলি জানালা দিয়ে দেখছে। তৃনা এসে নিলির পাশে বসলো।

তৃনাঃকি দেখছিস?

নিলিঃকিছু না।

তৃনাঃআমার তো ভালোই লাগছে না। কখন যে পৌছবো।

নিলিঃআরো ২ঘন্টার মতো লাগবে।

তৃনাঃঅসহ্য।

তানভীর মাউস নিয়ে সবাইকে যে যার সিটে বসতে বললো। ১০মি এর ভিতর গাড়ি ছেড়ে দেবে। সবাই গাড়িতে বসলো। তীব্র একদম সামনে গানের বক্সের কাছে বসলো। গাড়ি ছেড়ে দিলো। তীব্র গান প্লে করলো আর তানভীর শিহাব ওদের হাত ধরে টেনে দার করালো। বাসের সব ছেলেরা দারিয়ে উরাধুরা ডান্স শুরু করে দিছে। মেয়েরা বসে বসে দেখছে। আর কিছু মেয়েরা সিটের মাঝেই হেলান দিয়ে দারিয়ে ইনজয় করছে।

শিহাব চিল্লিয়ে বললো,”এতক্ষণ এটাই মিসিং ছিলো দোস্ত। তুই না থাকলে সব একদম শান্ত হয়ে যায়।”

তীব্রঃলেটস ডান্স গাইজ।

তীব্র তানভীর শিহাব অনিক তীব্রর সিটের কাছে আসলো। নিলি চোখ বড় বড় করে ওদের ডান্স দেখছে। এটাকে ডান্স না লাফালাফি বলে। আর ওদের চিল্লির জন্য বক্সের গানই শুনা যাচ্ছে না।

তীব্র চিৎকার করে নিলিকে বললো,”এভাবে বসে আছো কেনো? ইনজয় দিস মোমেন্ট।”

নিলি কিছু বললো না। ওদের মতো লাফালাফি আর চিল্লাচিল্লি করা ওর পক্ষে সম্ভব না। লোকে পাগল বলবে। নিলি লুকিয়ে ওর ফোন বের করে ওদের একটা ভিডিও বানিয়ে ফেললো। পরে ব্লেকমেইল করা যাবে।

পুরো ১ঘন্টা পর তীব্র সিটে বসে পরলো। আর বোতল বের করে ঢকঢক করে পুরো ১বোতল পানি খেয়ে ফেললো।

নিলিঃ😳

তীব্রঃআজ খুব কম ইনজয় করেছি। শুধু আমরা যখন কোনো টুরে যেতাম বাসকে পুরু লারিয়ে ফেলতাম। আর ড্রাইবার কাদোকাদো ফেইস করে বলতো বাসটা ভেঙ্গে যাবে বাবা প্লিজ তোমরা একটু কম নাচো😂

নিলিঃসবকটা তো এক একটা আটার বস্তা। কিভাবে এই ছোট্ট জানটা এতকিছুর ভাব সহ্য করবে।

তীব্রঃউয়াট! আমরা আটার বস্তা? আমার ওজন মাত্র ৭০কেজি।

নিলিঃও মাই গড। আমি তো আটার বস্তা ভেবেছিলাম। এ তো দেখছি চালের বস্তা।

তীব্রঃউয়াটটট?

নিলিঃ😏

তানভীর আর অনিক এসে তীব্রর হাত ধরে টেনে বসা থেকে তুললো। আবার তাদের সেই ডান্স আর গান। পুরো ফাটাবাশ। নিলির এই গানের মধ্যে ঘুম ও আসছে না। আগে সাউন্ড কম ছিলো তাই ঘুমাতে পেরেছে এখন তীব্র সাউন্ড বারিয়ে দিয়েছে। নিলি জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে। কি অপুর্ব। নিলি সিলেট আগেও দুবার ওর ভাইয়ের সাথে এসেছিলো। বাট ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে তাই বাইরের দৃশ্য দেখা হয় নি ওর। প্রায় চলে এসেছে ওরা। বিকেল ৫টায় ওদের গাড়ি রিসোর্টে ডুকে। আস্তে আস্তে সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরে। একদম শেষে নিলি বসা থেকে উঠে। তৃনা নিলির কাছে এসে বললো,”চল।”

নিলিঃহুম।

ব্যাগ নিয়ে নিচে নেমে যায়। রিত্তিক আর রাহুল ওদের কাছে আসে।

রাহুলঃতদের রুম কোনটা বলেছে?

তৃনাঃজানি না। কেউ বলে নি।

রিত্তিকঃতাহলে তীব্র বা তানভীর ভাইয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।

নিলিঃচল তৃনা তানভীর ভাইয়ার কাছ থেকে জেনে আসি।

তৃনাঃহুম।

একটু সামনে এগতেই ওরা তানভীরকে দেখতে পেলো। তানভীরই ওদের কাছে এসে বললো,”চলো তোমাদের রুম দেখিয়ে আসি।”

নিলিঃওকে।

তানভীর যেথে যেথে বললো,”এক রুমে ৪জন করে দিয়েছি। একটু ম্যানেজ করে নেবে। ওকে?”

নিলিঃআচ্ছা ভাইয়া।

তানভীর একটা রুমের ভিতর ওদের ডুকিয়ে দিয়ে গেলো। এই রুমে বাকি ২টি মেয়ে তীব্র আর তানভীরের ফ্রেন্ড। তিন্নি আর নিশিতা।

নিশিতা আর তিন্নিকে দেখে নিলি চিল্লিয়ে বললো,” নিশিআপু তুমি?”

নিলি আর তৃনা গিয়ে ওদের জরিয়ে ধরলো। প্রথম থেকেই ওদের সাথে একটু বেশিই ফ্রি ওরা।

নিশিঃআমিই তানভীরকে বলেছিলাম তদের এই রুমে দিতে।

নিলিঃআমি তো টেনশনে ছিলাম কোন ভাবওয়ালি মেয়ের কাছে যে পরবো।

তিন্নিঃ😂যা তরা ফ্রেস হয়ে আয়।

তৃনাঃওকে আপু।

ওরা ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসলো। তারপর নিলি বারান্দায় গেলো। রিসোর্ট এর সামনের জায়গাটায় ফুলের বাগান করা। ২দিকে নানা ধরনের ফুল আর মাঝখানে রাস্তা। ওরা জাপলং গ্রিন রিসোর্ট এ উঠেছে। এর চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের অন্য সাইডে ইন্ডিয়া। নিলি বারান্দা থেকে বাইরে বের হলো। আকাশ তানভীর বিপ্লব বাসের ছাদ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিচে নামাচ্ছে আর ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। নিলি চারিদিকে তাকালো তীব্রকে কোথাও দেখতে পারছে না। নিলি একা একা হেটেই রিসোর্ট এর সাইডে গেলো। ওদিকে নিচে শুধু ঘাস আর চারিদিকে গাছপালা। মাঝখানে বসার জন্য ব্রেঞ্চ আছে ২টা। রাতের মাঝে ও স্পষ্ট সব দেখা যাচ্ছে। চারিদিকে লাইটস। সেখানেই তীব্র অনিক নিশি তিন্নি আর একটা মেয়ে বসে গল্প করছে। তীব্র ক্যামেরা দিয়ে সবাইকে কি একটা দেখাচ্ছে। আর তা দেখেই হো হো করে হাসছে। নিলি আর সামনে এগোলো না। ঘুরে চলে আসবে তখনি তিন্নি “নিলি” বলে ডাক দিলো। তিন্নির ডাকে সবাই ওদিকে তাকালো।

নিশিঃনিলি তুই এখানে। এদিকে আয়। চলে যাচ্ছিস কেনো?

নিলিঃনা আপু আমি রুমে যাই তোমরা গল্প করো।

তিন্নিঃএকসাথে রুমে যাবো। এখন তুই এদিকে আয়।

নিলিঃআপু চারিদিকে অন্ধকার খুব ভয় করছে।

তীব্র হাসতে হাসতে বললো,”লাইটস দেখতে পারছো না। এখানে ভূত নেই। ভয় পেও না এসো।”

নিলি পা টিপে টিপে ওদের কাছে গেলো। নিশির পাশে বসলো। ওরা বাসে উঠার আগে ভার্সিটিতে যেসব পিকচার উঠেছিলো এসবই দেখছে। বাসে ও অনিক লুকিয়ে সবার পিক তুলেছে। নিলি ও আছে এখানে। একটা ছবির মাঝে নিলি তীব্রকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে। এটা দেখে সবাই চোখ বড় বড় করে নিলি আর তীব্রর দিকে তাকায়। নিলি তো লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। তীব্র তিন্নির হাত থেকে ক্যামেরা নিয়ে নেয়।

তীব্রঃশালা আর কোনো পিক পাস নি তোলার জন্য।

অনিকঃএত সুন্দর সিন কিভাবে মিস করি দোস্ত😜

তীব্রঃ😐

তোবাঃতীব্র তুই আর ও এইভাবে……

তীব্রঃআরে ঘুমের মধ্যে ভুল করে……..। এটা নিয়ে এরকম রিয়েক্ট করার কিছু নেই।

নিলিঃআপু আমি আসি। তোমরা গল্প করো।

তিন্নিঃআরে বস। এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমরা ও কিছুক্ষণ পর চলে যাবো।

নিলয় সন্ধ্যা ৬টায় বাসায় ফিরে আসে। আরো আগেই আসতে চেয়েছিলো। বাট একটা কাজের জন্য আটকে গিয়েছিলো। রুমে গিয়ে দেখে আরশি উল্টো হয়ে দারিয়ে আছে। নিলয় ফোন আর ওয়ালেট বেড সাইড টেবিলে রেখে বললো,”এভাবে দারিয়ে আছো কেনো?”

আরশি কিছু বললো না। নিলয় টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেলো। ফ্রেস হয়ে এসে দেখে আরশি আগের মতোই দারিয়ে আছে।

নিলয়ঃকি হয়েছে? আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি শুনতে পারছো না।

নিলয় আরশির সামনে দারালো। চোখ থেকে টপটপ করে জল পরছে। নিঃশব্দে কাদছে আরশি। চোখ মুখ ফুলে গেছে। মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে কেদেছে। নিলয় বুঝতে পারছে না কাদার কারনটা কি?

নিলয়ঃকি হয়েছে কাদছো কেনো? আরে বলবে তো কি হয়েছে? না বললে বুঝবো কি করে?

আরশি কিছু বলছে। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

নিলয় এবার ধমক দিয়ে বললো,”আরশি? বলো।”

আরশি ওর হাতের খামটা নিলয়ের দিকে এগিয়ে দিলো। নিলয় খামটা দেখেই আরশির থেকে একটু দুরে সরে গেলো। আর ভাবছে এটা আরশির হাতে কি করে এলো।

আরশিঃনিরব আপনার কি হয় মি.চৌধুরি?


চলবে?🙄

#pyar_tho_hona_hi_tha❤
লেখা- পূজা
পর্ব-১১


নিলয় রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলো। আরশি ও নিলয়ের পিছু পিছু গেলো। আর নিলয়ের সামনে গিয়ে দারালো।

আরশিঃকি হলো বলুন নিরব আপনার কি হয়? নিরব আর আপনার এত ক্লোজ ছবি কেন? তারমানে আপনি নিরবকে খুব ভালো করে চিনেন। তাহলে নিরব কোথায় আপনার জানার কথা। বলুন নিরব কোথায়? কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে? কেনোওও? আপনি তো আগে থেকেই জানতেন আমি নিরবকে কতটা ভালোবাসি। তারপরো কেনো আমাকে বিয়ে করে ওর থেকে আলাদা করলেন? বলুন কেন? এর মানে কি বুঝবো মি.নিলয় চৌধুরি?
আপনি আমাকে আগে থেকে ভালোবাসতেন নাতো? আমাকে পাওয়ার জন্য আপনি নিরবকে কোথাও সরিয়ে ফেলেন নি তো। নিরব যেখানেই যে সিচুয়েশনেই থাক আমাকে ও একটা ফোন করবেই। এতদিন ধরে ফোন করছে না। তার মানে…….আপনি ওর সাথে বাজে কিছু করে ফেলেন নি তো। মেরে ফেলেন……..

আর কিছু বলার আগেই ঠাস করে আরশির গালে একটা চর বসিয়ে দেয় নিলয়। আরশি ছলছল চোখে গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে নিলয়ের দিকে তাকায়।

নিলয় রেগে গিয়ে বললো,”আর একটাও বাজে কথা বললে এখানেই মেরে পুতে ফেলবো। কাকে মারার কথা বলছো? হ্যা। যাকে আমি নিজের থেকে ও বেশি ভালোবাসি তাকে মারার কথা বলছো? নির? নির আমার ছোট ভাই। ওকে আমি কতটা ভালোবাসি তোমার কোনো আইডিয়া আছে। মা বাবা মারা যাওয়ার পর নির আর নিলিই ছিলো আমার দুনিয়া। নির আমার ১বছরের ছোট। বাট আমরা বেষ্টফ্রেন্ড এর মতো সবসময় ছিলাম। কখনো আমাদের দেখলে মনে হতো না আমরা ভাই। সবাই দেখলে ফ্রেন্ড ভাবতো। সেই ভাইয়ের থেকে আজ আমি কতো দুরে জানো। তুমি ওকে মাত্র ২বছর ধরে ভালোবাসো। আর আমি? আমি ওকে সেই ছোটবেলা থেকে। আগলে রেখেছি ওকে।”

নিলয় আর কিছু বলতে পারলো না। হাটুগেড়ে বসে পরলো নিচে। কাদছে নিলয়। আর আরশি স্তব্দ হয়ে দারিয়ে আছে। নিলয় নিরবের ভাই এটা ও বিশ্বাসই করতে পারছে না। নিরব বলেছিলো ওর একটা ভাই আর একটা ছোট বোন আছে। বাট ওদের নাম নিরব কখনো বলে নি। বা নিলয়ের ছবি ও দেখায় নি তাই আরশি নিলয় বা নিলিকে চিনতো না।

আরশি কাপা কাপা গলায় বললো,”নিরব কোথায় এখন?”

নিলয় কিছু বললো না। বসা থেকে উঠে দারালো। তারপর ছাদ থেকে নিচে চলে গেলো। আরশি ও নিলয়ের পিছু পিছু গেলো। নিলয় সেই বন্ধ দরজা খোলে ভেতরে ডুকলো। আজ আর ডুকে দরজা বন্ধ করে নি। দরজা খোলা দেখে আরশি ও ভেতরে ডুকলো। ডুকেই ও অবাক! নিলয় নিরব আর নিলির ছবি দিয়ে এই রুম ভর্তি। সাথে অত্র রাজ পলক আর পিয়া ও আছে। আরশি ঘুরে ঘুরে সব পিক দেখছে। নিরবের ছবিতে হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে। আর চোখের জল পেলছে। নিলয় ওর নিলির আর নিরবের একটা ছবি হাতে নিয়ে সোফায় বসে পরলো। এই রুমটাতে নিরব থাকতো।

আরশি সব ছবি দেখে নিলয়ের কাছে গেলো। আবার নিলয়কে কেদে কেদেই বললো,”কোথায় নিরব বলুন না প্লিজ?”

নিলয় হাত দিয়ে ইশারা করে একটা ছবি দেখালো। নিরবের একা ছবি। যেটায় ফুলের মালা দেওয়া। ছবিটা দেখেই আরশির বুক ধক করে উঠলো। নিলয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলয়ের চোখে জল। আরশির আর বুঝতে বাকি নেই নিরবের কি হয়েছে? আরশি ফ্লোরে বসেই চিৎকার করে কান্না করছে।

নিলয়ঃও চলে গেছে না ফেরার দেশে। আমাকে একা রেখে।

নিলি রুমে এসে বসে বসে ফেসবুকিং করছিলো। তৃনা ও বসে বসে ফোন টিপসে। তিন্নি আর নিশি এখনো আসে ও নি। নিলি ওদের রেখেই রুমে চলে আসে। অনিক নিলিকে লজ্জা দেওয়ার জন্য নানারকম কথা বলছিলো। আর বাকিরা হাসছিলো। তাই ও ওখানে থাকতে পারে নি। জোর করে চলে আসে। হঠাৎ নিলির মনে হয় এখানে এসে তো নিলয় বা ওর মা বাবাকে জানায় নি পৌছেছে। একটা ফোন দেওয়া উচিৎ। প্রথমে ওর মাকে ফোন দিয়ে সব জানিয়ে দেয়। তারপর নিলয়কে ফোন দেয়। ২বার ফোন দেয় ফোন রিসিভ করে না। আবার ফোন দিতেই নিলয় ফোন রিসিভ করে।

নিলিঃভাইয়া ফোন ধরছিলি না কেনো?

নিলয়ঃফোন বিছানায় ছিলো দেখি নি।

নিলিঃভাইয়া কিছু হয়েছে?

নিলয়ঃকিছু হয় নি। কি হবে?

নিলিঃসত্যি করে বল। তুই ভালো করেই জানিস আমাকে মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। আমি বুঝতে পারছি তুই কেদেছিস।

নিলয়ঃআরশিকে সব বলে দিয়েছি।

নিলিঃকি?

নিলয়ঃনিরের কথা।

নিলিঃকিইই? বউমনি কি বলেছে?

নিলয়ঃ১ঘন্টা ধরে নিরের রুমে ফ্লোরে বসে কাদছে।

নিলিঃতুই ও কাদছিস। ভাইয়া মনে আছে ভাইয়া শেষ বারের মতো কি বলেছিলো। ওর কথা মনে হলে যেনো মুখে হাসি থাকে। কাদলে ভাইয়া ও কষ্ট পাবে। প্লিজ কাদিস না। আর বউমনিকে তুই কি কি বলেছিস?

নিলয়ঃও শুধু জানে নির আমার ভাই আর……..

নিলিঃআর কিছু বলিস নি।

নিলয়ঃনা।

নিলিঃফোন দে বউমনির কাছে।

নিলয়কেনো?

নিলিঃদে না কথা বলবো।

নিলয় আরশির সামনে বসলো। হাটুর মাঝে মুখ গুজে কাদছে।

নিলয়ঃনিলি কথা বলবে তোমার সাথে।

আরশি মাথা তুলে তাকালো। তারপর নিলয়ের হাত থেকে ফোন নিলো। আরশি কাপাকাপা গলায় বললো,”হ্যালো।”

নিলিঃবউমনি তুমি কাদছো।

নিলির কন্ঠ শুনে আরশি আরো জোরে কান্না শুরু করে দিলো। কান্না আটকাতেই পারছে না।

নিলিঃবউমনি প্লিজ কেদো না। নিরভাইয়া খুব কষ্ট পাবে তোমার কান্না দেখলে। ও নেই তো কি হয়েছে ও কিন্তু সব দেখছে। ও বলেছিলো ওর কথা মনে হলে যেনো কেউ না কাদি। কাদলে ও কষ্ট পাবে। তুমি কি চাও আমার ভাইয়াটা মরে গিয়ে ও কষ্ট পাক।

আরশিঃকেনো এমন হলো বলতে পারো। বাপীর পর ওকে নিজের থেকে ও বেশি ভালোবেসেছি। আজ এতদিন ধরে ওর জন্য ওয়েট করেছিলাম। একটা আশা ছিলো ওকে ফিরে পাওয়ার আজ সেই আশাটা ও শেষ হয়ে গেলো। এতদিন ওকে না দেখে ওর সাথে কথা না বলে কিভাবে থেকেছি এটা শুধু আমি জানি। আমার ধম বন্ধ হয়ে আসছে নিলি। আমি কি করবো? ওকে শেষ দেখা ও দেখতে পেলাম না। চলে গেলো আমাকে ছেড়ে।

এটা বলেই আবার আরশি জোরে জোরে কান্না শুরু করে দিলো। নিলয় আর এসব সহ্য করতে পারলো না। রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নিলিঃপ্লিজ বউমনি নিজেকে সামলাও। জানো, ভাইয়া সবসময় তোমার কথা আমাকে বলতো। খুব ভালোবাসতো ভাইয়া তোমাকে। ভাইয়াকে অনেকবার বলেছিলাম তোমার সাথে দেখা করানোর জন্য। ও বলেছিলো একেবারে বিয়ের দিন দেখাবে। তোমার নামটা পর্যন্ত বলেনি। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোমাকে দেখার। নিলভাইয়ার কাছে যখন শুনি তুমিই সেই মেয়ে তখন আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো। ভাইয়া শুধু নিরভাইয়ার কথা রাখতে তোমাকে বিয়ে করে। নিরভাইয়া জানতো এসব জানলে তুমি পাগল হয়ে যাবে তাই তো ভাইয়া এসব জানাতে বারন করে গিয়েছিলো। আর নিলভাইয়াকে তোমার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলো।

আরশি অবাক হয়ে নিলির কথা শুনছে। নিলি আবার বলতে শুরু করলো,”প্লিজ তুমি ভাইয়াকে ভুল বুঝে দুরে সরিয়ে দিও না। ভাইয়া এই বিয়ে করতে চায় নি। নিজের ছোট ভাইয়ের ভালোবাসাকে কিভাবে…….একদিন তোমার বাবা ভাইয়াকে ফোন দিয়ে জানায় তুমি নিরভাইয়াকে পাগলের মতো খুজছো। সামান্য খুজে না পেয়েই তোমার অবস্থা খারাপ ছিলো। যখন জানতে ভাইয়া আর নেই তোমাকে আর সামলানো যেতো না। তাই কেউ তোমাকে এসব জানায় নি। তোমার বাবা ভেবেছিলেন তোমার বিয়ে হয়ে গেলেই তুমি এসব পাগলামি করা বন্ধ করবে নিরভাইয়াকে ভুলতে পারবে। কিন্তু তোমার এই পাগলামির জন্য কেউ তোমাকে বিয়ে করতেই রাজি হচ্ছিলো না। তাই তোমার বাবা ভাইয়াকে তোমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেন। ভাইয়াও নিরভাইয়ার কথা ভেবে এই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। আমার মা বাবা ও এসব জানে না।

আরশিঃকি করে নিরবের সাথে এসব হলো?

নিলিঃতোমার বাবার সাথে দেখা করার পর নিরভাইয়া গাড়ি নিজে ড্রাইভ করে বাসায় ফিরছিলো। ভাইয়া খুব খুশি ছিলো সেদিন। তোমাকে পার্লামেন্টারি পেতে চলেছিলো। তোমার বাবা এই বিয়েতে রাজি ছিলেন। নিলভাইয়াকে ফোন দিলো এসব বলতে। ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ একটা ট্রাক এসে ভাইয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যায় ভাইয়া বুঝতে ও পারে নি।

এবার নিলি নিজেও কেদে দেয়। এতক্ষণ ও নিজেকে সামলে ছিলো এবার আর পারছে নি। নিলি বারান্দায় বসে পরে। তীব্র পেছন থেকে নিলির সব কথা শুনেছে। তীব্রর চোখ থেকে ও একফুটা পানি গরিয়ে পরে। তীব্র জানতো নিরবের মারা যাওয়ার কথা।

নিলি ফোন রেখে মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে কাদছে। তীব্র গিয়ে হাটু বাজ করে নিলির পাশে বসলো। নিলি তীব্রকে দেখে কোনো কিছু না ভেবেই তীব্রকে গিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিলো। তীব্র নিলির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে দিতে বললো,”নিলি প্লিজ কান্না থামাও। এভাবে কেউ কাদে। প্লিজ স্টপ ক্রায়িং।”

তীব্রর কথা নিলির কানে ও ডুকছে না। ও ওর মতো কেদেই যাচ্ছে। এসব হবে আগে জানলে আসতো না এখানে। ওকে এখন সব থেকে বেশি নিলয়ের প্রয়োজন। নিলয় একা নিজেকে কিভাবে সামলাচ্ছে ভাবছে নিলি।

তীব্রঃনিলি প্লিজ স্টপ ক্রায়িং। আমি বুঝতে পারছি তোমার কষ্টটা। এভাবে কাদলে কি নিরবভাইয়া ফিরে আসবে। কান্না বন্ধ করো। আর আমার দিকে তাকাও।

তীব্র জোর করে নিলির মাথাটা তুললো। চোখ থেকে পানি পরা থামছেই না। তীব্র নিলির চোখের পানি মুছে দুগালে হাত রেখে বললো,”আমার কথা মন দিয়ে শুনো। এতক্ষণ তুমি ওদের কাদতে বারণ করেছো। এবার তুমি নিজে কিভাবে কাদছো। বুঝতেছি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কষ্ট পেয়ে কি হবে বলো। নিজেকে শক্ত করতে হবে। কাদলে তো ভাইয়া ফিরে আসবে না। তাইনা।”

নিলিঃকি করবো বলুন? খুব কষ্ট হচ্ছে খুব। এতদিন এসব ভুলে থাকার চেষ্টা করেছি। মনে না করার চেষ্টা করেছি। আর আজ? আজ আবার সব তাজা হয়ে গেলো। কত ভালোবাসতো ভাইয়া আমাকে। সব বিপদ থেকে প্রটেক্ট করতো। আর…….

তীব্রঃনিলয়ভাইয়া ও তো তোমায় খুব ভালোবাসে। সবসময় তোমাকে আগলে রাগে।

নিলিঃ২জনেই আমাকে খুব ভালোবাসে। আর আমি ও।

তীব্রঃআই নোউ। আর তোমার সেই ভাই যদি দেখে তুমি তার জন্য কষ্ট পাচ্ছো কাদছো সেটা কি তার ভালো লাগবে? লাগবে না। তাই তোমাকে কাদলে চলবে না। আমার সাথে এসো।

তীব্র নিলির হাত ধরে বসা থেকে তুললো। তারপর নিলিকে নিয়ে বাইরে বের হলো। আর আকাশের দিকে আঙ্গুল দিকে ইশারা করে বললো,”উপরে তাকাও। এই দেখছো স্টার।”

নিলি উপরে তাকালো। তীব্র আবার বললো,”সব থেকে বড় স্টারটা দেখছো ওটা তোমার ভাইয়া। কখনো উনার কথা মনে পরলে ওই স্টারের সাথে কথা বলবে। দেখবে সব কষ্ট চলে গেছে। বুঝেছো। মনে করবে উনি স্টার হয়ে আকাশে আছেন।”

নিলি বড় স্টারের দিকে এক মনে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নিমিষেই ওর সব কষ্ট দুর হয়ে গেলো। মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ওর ইচ্ছে করছে ছুটে নিলয় এর কাছে চলে যেথে আর বলতে,”ভাইয়া দেখ ওটা নির ভাইয়া। ভাইয়া আমাদের ছেড়ে চলে যায় নি। এখন থেকে ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পারবি।”

তীব্রঃএবার রুমে চলো। বাইরে খুব ঠান্ডা।

তীব্র নিলির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। নিশি আর তিন্নিকে বললো নিলির খেয়াল রাখতে। ওরা অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে তীব্র কিছু বলে নি। আর নিলিকেও এখন কিছু জিজ্ঞেস করতে বারণ করে দিয়েছে। নিলি বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকে। বেশি কাদার কারনে কিছুক্ষণ এর মধ্যেই নিলি ঘুমিয়ে পরলো।

অন্যদিকে,
নিলয় আকাশের দিকে তাকিয়ে নিরের সাথে কথা বলছে। সেই বড় স্টার টাকে নির ভেবে।

নিলয়ঃনির আমি তর দেওয়া কোনো কথা রাখতে পারি নি। কেনো এইভাবে আমাকে রেখে চলে গেলি। আজ তর জন্য এতগুলো মানুষের কাছে আমি অপরাধী। খুব কষ্ট হচ্ছে আজ। প্রথমে মা বাবাকে হারালাম তারপর তকে। জানিস শুধু আর কোনো প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়ে মামনি কাকু নিলিকেও আমার থেকে দুরে রাখি। আরশিকে ভালোবাসি না। কখনো বাসবো ও না। তর আমানত হিসেবে আমার কাছে রেখে দেবো। তর মতো হারিয়ে যেথে দেবো না। এই কারনে ওকে বাসা থেকে একা ছাড়ি না। গাড়ি আমার থেকে আমার কাছের মানুষদের কেড়ে নিয়েছে। যদি আর কাউকে কেড়ে নেয় বাচবো না আমি।

আরশি নিরবের রুমেই মুখ গুজে কাদছে। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছে না। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না নিরব নেই। নিরবের সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে চোখের সামনে।

রাত ১১টা,
নিলি এখনো ঘুমিয়ে আছে। তৃনা নিলিকে ডাকতে চেয়েছিলো ডিনার করার জন্য। নিশি বাধা দিলো। তীব্র বলে গিয়েছে না ডাকতে। তাই তৃনা একা ওদের সাথে ডিনার করতে চলে গেলো। এই ফাকে তীব্র খাবার নিয়ে ওদের রুমে ডুকলো। খাবারের প্লেটটা টেবিলে রেখে নিলির পাশে গিয়ে বসলো। তারপর…..

তীব্রঃনিলি শুনতে পারছো। নিলি…..

নিলিঃহু

তীব্রঃজলদি উঠো। তোমার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।

নিলিঃওহো ভাইয়া ডিস্টার্ব করবি না ঘুমাতে দে। পারলে তুই খাইয়ে দে।

ঘুমের মধ্যে খাওয়ার অভ্যাস আছে নিলির। তীব্র চোখ বড় বড় করে নিলির দিকে তাকালো।

তীব্রঃ😐আমি তোমার ভাইয়া……

তারপর তীব্র তাকিয়ে দেখে নিলি হা করেছে খাওয়ার জন্য তাই তীব্র তারাতারি গিয়ে প্লেটটা নিয়ে আসে আর নিলির মুখে খাবার তুলে দেয়। এভাবেই সম্পর্ন খাবার ফিনিস করে। খাওয়া শেষেও নিলি আগের মতোই ঘুমিয়ে থাকে। তাই তীব্র নিলির গায়ে কাথা টেনে নিলির কপালে ১টা চুমু দিয়ে খাবার প্লেট নিয়ে চলে যায়।


চলবে?🙄

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে