MR AND MRS WHATEVER পর্ব-০৪ও০৫

0
1867

#MR AND MRS WHATEVER
পর্ব:4+5
#লেখিকা-Arshi khan

আব্বুর পাশেই বসে আম্মু অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে সামনের বেডের দিকে।কারণ সেখানে মরিয়ম বেগম শুয়ে আছেন।দেখতে বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছে ।যেহেতু হসপিটালাইজ বেশ অসুস্থ এই তাহলে।কিন্ত আম্মুর কান্নার কারণ আমার বোধগম্য হল না।হঠাৎই খেয়াল করে দেখি আব্বু আন্টির হাত ধরে অসহায় ভাবে তাকিয়েই আছে।চোখের কোন দিয়ে অশ্রু ধারা বয়ে চলেছে।এসব দেখে আমার টাস্কি খাওয়ার যোগার।একজন মানুষ কত্তটা ভালোবাসলে তাকে কষ্ট দেওয়ার পর ও এবং এত্ত বছর পর ও তার কষ্টে নিজের চোখের জল বিসর্জন দিতে পারে।আমি বেশ অবাক হয়ে যাই আব্বুর এসব কান্ড দেখে।আমি কি বলব বা করব সব ভুলে আব্বুর আর আন্টির হাতের দিকে তাকিয়েই আছি।হঠাৎই দের ব্যাটারি কথাতে আমি তার দিকে তাকালাম। (নুসরাত মনে মনে)

আপনি গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসুন।ঐ দিকে ওয়াশরুম আছে।(আশরাফুল নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

আমি একেবারে বাড়ি ফিরে ফ্রেস হব।একটা ক্রোশেন করতে পারি?(নুসরাত আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

জ্বি করুন।(আশরাফুল নুসরাত এর দিকে তাকিয়ে)

আন্টি কি হয়েছে?(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর দিকে তাকিয়েই)

আম্মুর হার্ট এটাক করেছে।আসলে ইদানিং আমার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আজকে ও একটা মেয়েকে দেখতে যেতে চাইছিল। তবে আমার যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না তাই একটু রাগারাগি করেছি।আর ঐ সময় হঠাৎই আম্মুর অবস্হা খারাপ হয়ে যায়।এই প্রথম আম্মুর সাথে একটু রুডলি কথা বলেছি তো আম্মু এটা মানতে পারেনি।আর তাই।(আশরাফুল কান্না সিক্ত নয়নে মরিয়ম বেগম এর দিকে তাকিয়ে)

মিস্টার আশরাফুল আসলে উনি উত্তেজিত হওয়ার কারণে ওনার হার্ট এটাক হয়নি। ওনার আগের থেকেই হার্ট প্রবলেম। ওনাকে বলা হয়েছিল হার্টের মধ্যে একটা ছোট্ট ব্লোক আছে যেন জলদি অপারেশন করেন।কিন্তু ব্লোক রিকোবার আর অপারেশন এর জন্য তিন লক্ষ টাকার কথা শুনে উনি আর হসপিটাল এর এমুখো হননি ।গত মাসেই উনি এসেছিলেন হসপিটাল এ।(ডাক্তার কেভিন এ প্রবেশ করে আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

আমার এ কথা শুনে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। কেমন ছেলে আমি নিজের মায়ের খোজ নেইনা!একবছর আগে যখন আমি আব্বুর বিজনেস রেখে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করার কথা বললাম আম্মু শুধু আমার পাশে ছিল।আব্বুর সাথে আম্মুর ডিভোর্স হয়েছে আর ও পনের বছর আগেই।আব্বু দ্বিতীয়বার বিয়ে করে বউ কে ঘরে তুলে ষোল বছরের আমাকে আর আম্মুকে বের করে দিয়েছিল। সেইদিন ও আম্মু আমার সাথে ছিল। নানা আম্মুকে বিয়ের কথা বললে আম্মু আমার হাত ধরেই ঘর থেকে চলে এসেছিল।আম্মু একটা স্কুলে চাকরী করে আমাকে পড়াশোনা করায়।কিন্ত আব্বুর বিজনেস এর দেখাশোনার জন্য আমি ছাড়া কেউ ছিল না।তাই একবছর আগে আমাকে নিতে আসে।কিন্ত আম্মু আমার কথাকেই প্রাধান্য দেয়।আর আমিও চাইনি ঐ লোকটার সাথে যেতে।যে কিনা আমাদের কথা ভাবেনি।তবে আমি আমার আম্মুর যোগ্য সন্তান হতে পারিনি।আমি পারিনি তার কষ্ট গুলো দুর করতে।
আম্মু কেন তুমি বলোনি তোমার এই রোগের কথা!আমি কি এত্ত টাই অযোগ্য ছেলে তোমার যে মাত্র তিন লক্ষ টাকার জন্য তোমাকে মরতে ছেড়ে দিতাম!ও আম্মু এমন টা কেন করলে! আমাকে তুমি একটু ও ভরসা করতে পারলেনা!ও আম্মু আমিকে একটু বললেই তো আমি টাকা যোগাড় করে তোমার চিকিৎসা করে ফেলতাম।(মরিয়ম বেগম এর পাশে বসে আশরাফুল কান্না করে)

হঠাৎই বুকের ব্যাথার কারণে সেই সময়ে কি হল বুঝতে পারলাম না।ইদানিং ব্যাথা খুব বাড়ছিল তাইতো ছেলের বিয়ে দিয়ে শান্তিতে মরতে পারলেও কষ্ট টা একটু হলেও কমতো।কিন্তু ছেলে আমার রাগ করে এই প্রথম আমার সাথে কথা বলাতে বুকের ব্যাথা টা যেন বাড়তে লাগল।কিন্তু জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটাল এর বেডে দেখে একটু চমকে গেলাম। তার থেকেও ছেলের হাউমাউ করে কান্না করা দেখে বুকের বা পাশের ব্যাথাটা ও তীব্র হতে লাগল। আমি আস্তে করে হাতটা উঠানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কেন যানি সেই শক্তি টুকু সঞ্চয় করতে পারছিনা।হঠাৎই পাশের একজন এর উদ্বিগ্ন চোখ জোড়া দেখে আমার শরীরের শিরা দিয়ে হিমশিতল বাতাস বয়ে গেল। তার চোখ জোড়া তে এখন ও হাড়ানোর ভয় দেখে আমি যেন অবাক হওয়ার চরম শিখরে বাস করতে লাগলাম। সে আমার একটা হাত ধরে বসে আছে।তার পাশেই তার স্ত্রী নিরশ চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি চোখ জোড়া ঘুরিয়ে আমার ছেলের দিকে চাইলাম।আমার আদরের হিরা ছেলেটা।বেশ কষ্ট পেয়েছে আমার কষ্টে।
কি হয়েছে বাবা কান্না করছ কেন?এই দেখ আমি ঠিক আছি তো।(মরিয়ম বেগম আশরাফুল কে আশ্বাস দিয়ে)

তোমার আমার থেকেও কথা লুকাতে হয় আম্মু!আমি এতটাই পর তোমার কাছে?(মরিয়ম বেগম এর হাত ধরেই আশরাফুল)

তা কেন হবে বাবা!তুমি এইতো আমার সব থেকে আপন এই পৃথিবীর মধ্যে।তোমাকে ছাড়া আমি যে নিশ্ব বাবা।(মরিয়ম বেগম হাসির চেষ্টা করে)

তাহলে আমাকে কেন তোমার হার্ট ব্লোক এর কথা লুকালে বল?(আশরাফুল উদ্বিগ্ন কন্ঠে )

তো কি করতাম এত্ত টাকা আমার পেছনে খরচ করে তোমার ভবিষ্যত কে নষ্ট করতাম কেন আমি?আর তাছাড়া বয়স হয়েছে একদিন তো সবাই কে ছেড়ে চলেই যাব।তাহলে শুধু শুধু এত্ত টাকা কেন নষ্ট করতাম বল!তাই আর বলিনি।এখন বাবা একটা কাজ করবা তুমি?(মরিয়ম বেগম মুচকি হেসে)

হম বলো আম্মু কি করতে হবে আমাকে?(আশরাফুল মরিয়ম বেগম এর হাত ধরেই)

তোমাকে জলদি বিয়ে করতে হবে।আমি তোমাকে একজন এর হাতে তুলে যেতে চাই।আর এমন একজন এর হাতে যার সাথে তার ফেমেলির লোক রাও তোমার খেয়াল রাখবে।আর তাই আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি।(মরিয়ম বেগম উঠে বসে)

হ্যা আম্মু বল কি করতে হবে?(আশরাফুল মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

আমি তোমার বিয়ে দেখতে চাই।মামুন কে তো চেন। যার জন্য ওকে ও ডাকতে বলা।আসলে ওর মেয়ে কালো হলেও ও অনেক ভাল মনের অধিকারী।তাই আমি চাই মামুন ও ওর মেয়ের মতামত থাকলে কাল বা পরশু এর মধ্যেই ঘরোয়া ভাবেই তোমাদের বিয়ে দিতে চাই।যদিও এই আবদার টা অযৌক্তিক। কারণ কালকে ওকে দেখার পর আমি খারাপ আচরণ করেছি আর তুমি ওকে রিজেকট ও করেছ।এই জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থী মামুন তুমি প্লিজ আমাদের মাফ করে দিও।আর তোমার আর তোমার মেয়ের মতামত টা যানিয়ে দিও।আমার হাতে বেশি সময় নেই।(মরিয়ম বেগম মামুন জামান এর উদ্দেশ্য)

আপনার তো অপারেশন করলেই সুস্থ হয়ে যাবেন এত্ত খারাপ কথা চিন্তা করছেন কেন?আমি ডাক্তার এর সাথে কথা বলেছি।ওনারা বললেন এক সপ্তাহের মধ্যেই রিং বসালে আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।তাই আগে আপনার সুস্থতা জরুরী।পরে আপনার ছেলের বিয়ে দিয়েন।(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর সামনে এসে)

তুমি কে?(মরিয়ম বেগম অবাক চোখে)

ও নুসরাত চেননি ওকে?(মামুন জামান মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

না আসলে পুরো মুখ ডেকে চোখ দেখা যাচ্ছে তাই চিনতে পারিনি।আচ্ছা যাইহোক অপারেশন করার দরকার নেই।আমার পেছনে ওর ছয়মাসের জমানো টাকা খরচ করলে পরে ওর আর ওর বউ এর জন্য তো কিছুই থাকবেনা।আর তুমি যখন সামনেই আছ তোমাকেই জিজ্ঞেস করি। আমার ছেলেকে বিয়ে করাবো ।তবে যোগ্য কাউকে পাচ্ছি না।কিন্ত তোমাকে আমার কেন জানি খুব পছন্দ হয়েছে।দেখতে তুমি একটু কালো তবে তোমার মনটা অনেক বড়।তাই আমি চাইছি যে তুমি কি বিয়েতে রাজি কিনা?(মরিয়ম বেগম ইতস্তত বোধ করে)

আসলে!(নুসরাত সবার দিকে তাকিয়ে)

***********(চলবে)*********

পর্ব:5

রাত তিনটা

হসপিটাল এর নিস্তব্ধতা যেন শরীর কে হিম করে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষন ধরে একটা চেয়ারে বসে থাকতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। বেডে আন্টি আরাম করে ঘুমিয়ে আছে।আব্বু আর আম্মু এইমাত্র কেন্টিন এর দিকে গেল কফি খাওয়ার জন্য। আশরাফুল যেতে চাইছিল ।কিন্তু তারা তাদের একমাত্র মেয়ের হবু জামাতা কে জ্বালাতন না করাই শ্রেয় মনে করলেন।এবং নিজেরাই বেরিয়ে পড়লেন নিদ্রা কাটানোর মহৎ ঔষধ কফি পান করতে।আমার এখন মুখ বেধে রাখতে বেশ অসুবিধাই হচ্ছে। প্রায় পাঁচ ঘন্টা হল মুখে মুখোশ লাগানো।আর ক্লান্ত থাকার কারণে ঘুম পাচ্ছিল। তবে চেয়ার এ বসে ঘুমানো বেশ কষ্টকর। তাই ভাবলাম একটু মুখে পানি দিয়ে আসলে ভাল লাগবে।আশরাফুল চেয়ার এ বসে ওনার আম্মুর দিকেই তাকিয়ে আছে।আমি অবশ্য দূরেই একটা চেয়ার এ বসে ছিলাম।আমি উঠে আস্তে করে ওয়াশরুম এ এসে হিজাব খুলে মুখে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলাম। তারপর ফ্রেস হয়ে একটু পর ওয়াশরুম থেকে বের হলাম। দেখি আব্বু আর আম্মু ও এসে পড়েছে।আব্বু আমাদের জন্য ও খাবার নিয়ে এসেছে।আমি গিয়ে ব্যাগ থেকে টিসু বের করে মুখ টা মুছে নিলাম। হঠাৎই দের ব্যাটারির দিকে তাকিয়ে দেখি সে হা করে আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে।আসলে অনাকাঙ্খিত কিছু জিনিস দেখলে অবাক হওয়ার এই কথা।তাই বলে এমন হা করে তাকানো টা বেশ লজ্জার আমার কাছে।আমি তার থেকে চোখ সরিয়ে কফি পান করতে করতে চুল খুলে আচড়ে নিলাম। আম্মু আমাকে বসিয়ে একটা বেনি করে দিল।সে এখন ও একটু পর পর আমাকে দেখে নিচ্ছে। আর মাঝে মধ্যেই আব্বুর সাথে কথা বলছে।আজিব পাবলিক। (মনে মনে নুসরাত)

এর পা দেখে ক্রাস খাওয়াটা ছিল কোন এক আশ্চর্য। তবে ওর মুখটা দেখে ওর প্রেমে পড়ে যাওয়া আরো বড় রকমের আশ্চর্য। আম্মুকে এখন কয়েকটা চুম্বন করতে মন চাইছে।এমন মেয়েকে আমার জন্য বেছে নেওয়ার জন্য। সত্যি বলতে ওকে দেখার পর অন্য কাউকে দেখতে যেতে মন মানছিল না তাই আম্মুর সাথে চিৎকার করে ছিলাম। কিন্ত ওকে এইযে আম্মু আবার আমার জন্য বিয়ে করার জন্য আঙ্কেল আর ওকে রাজি করাবে ভাবতেই বেশি খুশি লাগছে।কিন্ত যাইহোক আম্মুর অপারেশন এরপর এই বিয়ে করা দরকার ছিল। কিন্ত এই মেয়ে ও আম্মুর সাথে ঘরোয়া ভাবেই বিয়ে করতে রাজি হবে ভাবতে পারিনি।বিয়েতে রাজি হবে তাইতো ভাবতে পারিনি!কালকে সন্ধ্যার সময় বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে।কারণ আম্মু চায় যাতে আম্মুর অপারেশন এর সময় আমি যেন একলা না থাকি ।আমাকে শক্ত রাখার জন্য হলেও আমাকে জলদি বিয়ে করাতে চাইছে।আর আম্মুর অপারেশন শনিবার এ করা হবে।কালকে হল বৃহস্পতিবার তাই কালকে সন্ধ্যার সময় কাবিন করিয়ে নুসরাত কে আমাদের সাথে নিয়ে আসব।পরে আম্মু সুস্থ হলে বড় করে অনুষ্ঠান করে তুলে আনবে।কিন্ত সত্যি বলতে ওর রাজি হয়ে যাওয়া কোন মিরাকল এরথেকে কম না।(আশরাফুল মনে মনে)

পরের দিন সকালেই আন্টি কে হসপিটাল থেকে বাসায় নেওয়া হল।সন্ধার সময় কাবিন করানো হবে।আমার ফেমেলির কিছু লোক আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হাবিবাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।আর সবাইকে অনুষ্ঠান এ দাওয়াত দিবে।ওরা পাচঁজন আসবে ।আন্টি, আশরাফুল আর ওর ফ্রেন্ড রা।তাই জানানো হয়েছে।আমি এসে সকাল সাতটার দিকে একটু ঘুম দিলাম। ঘুম ভাঙ্গল সকাল বারোটার দিকে ফোনের রিংটন শুনে।ঘুমের মধ্যেই ফোন হাতরে কানে নিতেই।
হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম কে বলছেন?(নুসরাত ঘুম চোখে)

ওলাইকুমআসালাম আমি আশরাফুল বলছিলাম আপনার সাথে আম্মু একটু কথা বলতে চাইছিল তাই কল করলাম। (আশরাফুল নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

ও আচ্ছা দিন ওনাকে। আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি এখন কেমন ফিল করছেন?(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

ওলাইকুমআসালাম আলহামদুলিল্লাহ ভাল। তোমার কি খবর!কি করছিলা!ডিস্টার্ব করলাম নাতো!(মরিয়ম বেগম একাধারে)

আরে আন্টি আস্তে আস্তে এত্ত প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দেই।আচ্ছা সব গুলোর উত্তর দেই একসাথে।(নুসরাত মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

***********(চলবে)***********

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে