MR AND MRS WHATEVER পর্ব-০১

0
2929

#MR AND MRS WHATEVER
পর্ব:সূচনা
#লেখিকা-Arshi khan

আব্বুর এক্স গার্লফ্রেন্ড এর একমাত্র ছেলের জন্য আমাকে দেখতে আসছে।ব্যাপার টা হাস্যকর হলেও সত্যি এমনটাই হচ্ছে। কেন হচ্ছে তা একটু বলি।আগে আমার পরিচয় দিয়ে নেই।আমার নাম নুসরাত জাহান।বাবা মায়ের প্রথম এবং শেষ সন্তান। মানে একমাত্র সন্তান আরকি। আব্বুর নাম মামুন জামান আর আম্মুর নাম রিতা বেগম। আব্বু পেষায় ব্যবসায়ী আর আম্মু গৃহিনী।কিছুদিন আগে জিনজিরা গিয়েছিলাম একটা রেস্টুরেন্ট এ ফ্রেন্ড দের নিয়ে। সেখানের থেকে ফেরার সময় দেখি একটা রিক্সা কে একটা গাড়ি ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।রিক্সার মধ্যেই একজন মহিলা ছিল। আমরা সেই সময় জ্যামে বসা।আমি ফ্রেন্ড এর বাইক থেকে নেমেই দৌড়ে ওনাকে হেল্প করতে যাই।আর এই হেল্প করাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছে।শেষে কিনা আব্বুর এক্স গার্লফ্রেন্ড যে আমার আব্বুকে বিয়ে না করে তার বাবা মায়ের কথা রাখতে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছিল। এদের প্রেম কাহানি অন্য একদিন বলব।এখন সব থেকে ইম্পরট্যান্ট জিনিস টা করে নেই।কিছুক্ষণ আগে আম্মু একটা শাড়ি দিয়ে বলে গেল জলদি রেডি হয়ে নিতে।তাই আমিও রেডি হচ্ছি। তবে আমার মনে হয় না ওনার ছেলে আমাকে পছন্দ করবে। আর আমি চাই ও তাই যেন হয়।কারণ এখানে বিয়ে হলে আব্বুর মনে তার গার্লফ্রেন্ড থুড়ি এক্স এর দেখা পেতে সুবিধা হবে তাই বিয়ে টা যেন না হয়।মনে মনে এসব এই ভাবছিলাম আর মেকাপ করছিলাম। হঠাৎই আম্মুর ডাক পড়ল জলদি রুম থেকে বের হতে বলল।আমি মাথায় গোমটা টেনে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে সোফায় বসে পড়লাম। (নুসরাত মনে মনে)

একি মামনি এত্ত দূরে বসলে কেন?আমার পাশে এসে বস আমার ছেলেও তোমাকে একটু দেখুক।(মরিয়ম বেগম নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

আমি চুপচাপ উঠে গিয়ে ছেলের একেবারে গা গেসে বসে পড়লাম। ছেলেটা সাথেসাথেই সরে বসল।
কি দেখুন ভাল মতো দেখুন আপনার দের ব্যাটারি চোখ দিয়ে।(দাঁতে দাঁত চেপে নুসরাত ছেলের উদ্দেশ্য)

একি তোমার চেহারা এমন কালো দেখাচ্ছে কেন?তোমাকে ঐদিন তো দেখলাম খুব এই ফর্সা সুন্দর দেখতে ছিলে।এখন এমন কালো দেখা যাচ্ছে কেন?(অবাক হয়ে মরিয়ম বেগম নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

আব্বুর আর আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি তারা রাগি লুক দিচ্ছে আমাকে তাতে আমার কিতা।আমি তো বিয়ে করতাম না কত্ত বার কইছি।মোর কথা শুনে নাই কে!এখন আমাকে দেখাতে আসছ দেখ বিয়ে কিভাবে ভাঙ্গি।মনে মনে এসব ভাবলেও আমি আন্টির উদ্দেশ্য বললাম।
আসলে আন্টি আমি তো এমনি দেখতে কালো।ঐদিন মেকাপ করে ছিলাম বলে ফর্সা লেগেছিল।(মন খারাপ করার ভান করে নুসরাত)

ও আচ্ছা তাই বল।তারমানে মামুন তোমার মেয়ে দেখতে কালো। আমিতো ভেবেছিলাম তোমার মত সুন্দর হয়েছে।আর তাই তো এত্ত ঘটা করে দেখতে আসলাম। যাইহোক আমার ছেলের যদি পছন্দ হয় তো আমরা কথা আগে বাড়াব। নাহলে বাপু এখানেই কথা শেষ করে যাব।(মরিয়ম বেগম তাচ্ছিল্যের সুরে)

মামনি ওনার সাথে একটু একা কথা বলতে চাই। যদি তুমি পারমিশন দাও তো !(ছেলেটা মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

ওর সাথে আবার কি কথা বলবি।এমন কালো মেয়ে আমার পছন্দ না।ঐদিন দেখলাম সুন্দর তাইতো ওকে দেখতে আসা।নাহলে আর এমন মেয়েকে কে এইবা এত্ত দূর দেখতে আসে।(মরিয়ম বেগম ফিসফিস করে ছেলের উদ্দেশ্য)

তাও একটু কথা বলতাম যদি তুমি পারমিশন দাও তো!(ছেলে মরিয়ম বেগম এর উদ্দেশ্য)

আচ্ছা যাও কথা বল।মামুন আশরাফুল তোমার মেয়ের সাথে একটু একা কথা বলতে চায়।(মরিয়ম বেগম মামুন জামান এর উদ্দেশ্য)

আচ্ছা বলুক ।নুসরাত ওকে নিয়ে ছাদে যাও আর কথা বলে আস।(মামুন জামান আদেশ এর সুরে)

জ্বি আব্বাজান যাইতাছি তো।এত্ত রাগ দেখান কেলা!আরে আশরাফুল ভাই আসেন আমার সাথে কিতা কোইবেন কোইয়া যান।
বলেই দাড়িয়ে হাটা দিলাম। মেন গেট খুলে সোজা সিড়ি দিয়ে উঠা শুরু করলাম। শাড়ির জন্য হাটতে কষ্ট না হলেও মেজাজ খারাপ এর কারণে একটু খারাপ ভাবেই হাটছি।যাতে মনে হয় আমার পায়ে সমস্যা আছে।ব্যাটা দের ব্যাটারির শখ কত্ত RJ নুসরাত কে বিয়ে করতে চলে আসছে।তাও বাপের এক্স গার্লফ্রেন্ড এর ছেলে কোথাকার?মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতেই ছাদে এসে একটা চেয়ার এ বসে পড়লাম। বেশ কিছুক্ষন পর আস্তে আস্তে সামনের থেকে দের ব্যাটারির আগমন ঘটল। উনি এসে আকাশের দিকে তাকিয়েই আছে না নড়ছে না কিছু বলছে।
কি ভাই কোন সমস্যা কথা কোন না কেলা!(নুসরাত আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

আপনার আব্বুর জন্মস্থান তো বিক্রামপুর। আর আপনার আম্মুর ও তাই।তাহলে এমন ভাবে কথা বলছেন কেন আপনি?ঢাকায় থাকেন বলে তাদের ভাষা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছেন বুঝি?(আশরাফুল চশমার ফ্রেম টা ঠিক করে মুচকি হেসে)

তাতে আপনার কিতা সমস্যা(মুখ ভেংচি কেটে নুসরাত)

Whatever দেখুন আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি আপনি কালো সেইজন্য নয়।বরং আপনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন সেইজন্য। আমার মিথ্যা বলা বা কেউ মিথ্যা বললে তাকে একদম এই ভাল লাগেনা।এক কথায় তাদের আমি ঘৃণা করি।আর তাছাড়া আমার মনে হয়েছে আপনার আমাকে এবং আমার আম্মুকে পছন্দ হয়নি।তাই আপনি এমনটা করেছেন।(আশরাফুল আবার আকাশের দিকে তাকিয়েই)

কি মিছা কথা কইছি আমি ?(নুসরাত উঠে চিৎকার করে)

সেটা আপনি খুব ভাল এই জানেন। কি জানেন না?(নুসরাত এর চোখের দিকে তাকিয়েই আশরাফুল)

Whatever আমার অনেক কাজ আছে আমি আসছি।আর প্লিজ আপনার আম্মুকে বলবেন আমার আপনাকে পছন্দ হলেও তার জন্য আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি।Got it!(আঙ্গুল তুলে নুসরাত আশরাফুল এর উদ্দেশ্য)

এই যে Miss Whatever নেক্সট টাইম মেকাপ মুখের সাথে পায়েও দিবেন কেমন?নাহলে তো সত্যি যে আপনি ফর্সা তা সবাই বুঝে যাবে।শুধু হাতে আর মুখে কালো মেকাপ করলে হবে দুধে আলতা পা জোড়ার মধ্যেও যে কালো মেকাপ করা জরুরী ছিল।Whatever I want to leave. (যাইহোক আমার যাওয়া জরুরী)আসছি কেমন।আর হ্যা ভবিষ্যত এ আর কোন দিন যাতে দেখা না হয় এই আশা এই করি।বায়বায়।
বলেই নিচে চলে আসলাম আর মামনিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ত্যাগ করলাম। এখানে থাকা আমার জন্য খুবই রিক্স। কারণ বলা যায়না মেয়ের পা দেখেই প্রেমে পড়ে গেছি,কালো মেকাপ এর আড়ালের মায়াবি মুখটা দেখলে না এখানেই অজ্ঞান হয়ে যাই।আম্মু বেশ খুশি তার ছেলে তার কথা মেনে এখানে এসেছিল আর তার কথা মতো মেয়েকে প্রত্যক্ষাণ করেছে।এমন ছেলে এইতো সব মা চায়।(মনে মনে আশরাফুল)

ছাদের থেকে এসে দেখি রুমের গেট লক করা।আম্মু কড়া নির্দেশ করল এই বাড়ির মুখো যেন না হোই।আমার কারণে নাকি আম্মুর সম্মান হানি হয়েছে।দূর জ্বালা এখন এই অবস্থা নিয়ে বাইরে যাব কি করে?
আম্মু আর এই বাড়ির মুখো কেন পা ও দিতাম না একটু আমার ব্যাগ, কয়েক খানা জামাকাপর আর স্কুটির চাবি খানা দিলেই আমি বাড়ি ত্যাগ করে বনবাসে চলে যাব।ও হ্যা মোবাইল খানার চার্জার খানা টাও দিও।(গেটের বাইরে থেকে চিৎকার করে নুসরাত রিতা বেগম এর উদ্দেশ্য)

এখন জদি গেট খুলে তোকে দেখি ঝাড়ু খানা দিয়ে তোর পিট খানা ছিলে ফেলব।(চিৎকার করেই রিতা বেগম)

থাক আম্মাজান আপনার আর কষ্ট করিয়া ঝাড়ু খানা ভাঙ্গতে হবে না।আমি এমনেই চললাম।তবে রাতের বেলা টাকা, মোবাইল, স্কুটি ছাড়া একা রাস্তার মধ্যেই একটা মেয়ের অপহরণ করে মারডার এর খবর কালকে যখন পাবে তখন খুশি হবেতো?(নুসরাত হালকা চিৎকার করে গেটের সামনে)

এমন কথা সুনে মনটা ছেত করে উঠল। আমি জলদি গিয়ে গেট খুলে ওর দিকে রাগি লুক দিতেই ও মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
মেরে আলুর দম বানিয়ে দিব এসব অলুক্ষে কথা বললে।এখন যাও জলদি ফ্রেস হয়ে নিজের কাজে।লেট হলে তোমার ভক্ত গনরা অককা তুলবে।আর হ্যা সাবধানে যাবে,জলদি ফিরবে।তোমার আব্বু রাগ করেছে তার বান্ধবীর ছেলেকে জামাই বানানোর ইচ্ছা কে তুমি মাটি চাপা দিলে বলে।(রিতা বেগম নুসরাত এর উদ্দেশ্য)

দূর বাদ দাও আমি গেলাম ফ্রেস হতে টাইম লাগবে। বেশি দেরি করলে সো করতে দেরি হবে।
বলেই ওয়াশরুম এ ঢুকে গেলাম।মুখ আর হাত ভাল মতো ফ্রেস ওয়াস দিয়ে ধুয়ে কালো মেকাপ তুলতে সক্ষম হলাম।তারপর রুমে এসে মুখ হাত মুছে শাড়ি পাল্টে থ্রিপিস পরে বোরকা পড়ে নিলাম। তারপর আম্মুর থেকে বিদায় নিয়ে স্টুডিও এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম। ও বলা হয়নি আমি পড়ালেখার পাশাপাশি একজন RJ ও।92:1FM এ LOVE IS LIFE এর হোস্ট। আমার শো রাত নয়টার থেকে এগারোটা পর্যন্ত হয়।এই শোতে সব ভালোবাসার গল্প এসে শোনায় LOVE BIRDS রা।আবার কেউ ফোন কলে তাদের গল্প শোনায়।আমার বেশ ভালোই লাগে এই কাজটা করতে।স্টুডিও তে পৌঁছে জলদি রেকর্ড রুমে চলে গেলাম। যেহেতু লাইভ সো অনেক কিছুই প্রসেস ঠিক করে ঠিক নয়টার সময় সো শুরু করলাম। আজকে গল্প কেউ শোনাতে বা কলে শোনাবে না।একজন তার লাভ স্টোরি টা মেইল করেছে আমাদের ফেসবুক পেজে।আর আমার বেশ ভাল লেগেছে গল্প টা তাই ঐটাই পড়ে শোনাতে লাগলাম। (নুসরাত)

************(চলবে)**********

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে