Love warning part -03

0
2176

#Love_warning❤️
#your_love_is_my_drug_addiction?
#Part_3
#ফারজানা

??

অর্ণব খাটের উপর এসে বসলো….

“আমি এখন এই বিয়ে করতে চাচ্ছি না অর্ণব। আমাকে কিছুদিন সময় দেও প্লিজ(হাত জোড় করে বললো তিতি)। আমি আমার পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে করতে চাই অর্ণব।”

তিতিরের প্রতি অর্ণবের কিছুটা মায়া হলো। তাছাড়া অর্ণব চায় যে তিতি পড়ালেখা করুক। তাইতো যে তিতির কে আগে সময় দিয়ে এসেছে।

“হুমমম,,, ভাবছি কি বলবো তোমায়(গালে হাত দিয়ে অর্ণব বললো) আদৌ কি তোমাকে সময় দেওয়া ঠিক হবে আমার। তোমার তো আবার পালক গজিয়েছে।”

“অর্ণব প্লিজ আমার এই অনুরোধ টুকু রাখো। ট্রাস্ট মী আমি তোমার অবাধ্য হবো না। তোমার ফোন ধরে বলছি”

“ওই খবরদার আমার ফোন নিয়ে কিছু বলবে না। তোমার ফোন নিয়ে বলো।”

“ওকে যাও আমার ফোন ধরেই বলছি প্লিজ অর্ণব একটা সুযোগ”

“বিশ্বাস করো তিতির পাখি তোমার কথাটা শুনতে মন চাচ্ছে বাট বিবেক বাঁধা দিচ্ছে,,,,তোমাকে তো আর আমি কম চিনি না”

তিতি অর্ণবের কথা শুনে অর্ণবের হাতে ধরে বললো…..

“আমি পড়ালেখা করতে চাই অর্ণব। ”

“বিয়ের পর তো পড়ালেখা করতে পারবে তাহলে প্রবলেম কোথায়?”

“প্রবলেম আছে। আমি বিয়ের পর কোনো ঝামেলা চাই না। বিয়ের পর শুধু রোমাঞ্চ করবো তাই বিয়ের আগেই পড়ালেখা শেষ করতে চাই।মাত্র তো আড়াই বছর বা তারও কম প্লিজ অর্ণব”

“বাহ বাহ কি ইটলারি বুদ্ধি।”

“ওই তুমি ফান করা বন্ধ করো আর বলো গিয়ে আব্বু আম্মুকে যে এখন বিয়ে হবে না”

“এত তাড়া কিসের তোমার তিতির পাখি”

“তাড়া কিসের যদি তুই বুঝতে পারতি তাহলে তো আমাকে এইখানেই খুন করে চলে যাবি তাইতো এই সাংঘাতিক বুদ্ধিটা বের করেছি”(মনে মনে)

“ওই কি ভাবছো এত মন দিয়ে?”

“কই কিছু না যাও জানু বাবু টিয়া ময়না গিয়ে সবাইকে বলে আসো”

“আরিব্বস এত দেখি ভূতের মুখে রাম রাম। তোমার মতলব তো ভালো মনে হচ্ছে না আমার”(ভ্রু কুঁচকে বললো)

“মদলবের কি আছে। আমি তো তোমাকে ভালোবেসেই কথাটা বলছি। তুমি চাও না বিয়ের পর শুধু আমরা রোমান্স করবো এইখানে যাবো ওইখানে যাবো আর প্রেম করবো তখন আমাদের মাঝে এই পড়ালেখা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না চাও না তুমি এইটা?”(বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো)

অর্ণব কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবতে লাগলো আর তিতি মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলো যেনো অর্ণব তার কথায় রাজি হয়ে যায়।

অর্ণব কিছুক্ষণ ভাবার পর বললো….

“ওকে যাও বিয়ে পিছিয়ে দিলাম বাটটট….”

“বাট কি?”

“আজ জাস্ট এনগেজমেন্টটা হয়ে যাবে আর তোমার পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে তো আইডিয়াটা কেমন ডেয়ার তিতির পাখি”(হাসি হাসি ভাব নিয়ে)

তিতিরের তো রাগে শরীল জ্বলে যাচ্ছে তাও মুখে হাসির রেখা টেনে বললো….

“ঠিক আছে আমি রাজি আছি”

“ওকে তুমি এইখানে বসো আমি বাহিরের পরিবেশটা ঠিক করে আসি”

“হুম”

অর্ণব চলে গেলো তখন তিতি বিড়বিড় করে বলতে লাগলো…..

“বিয়ে আর এনগেজমেন্ট তো আর এক না । হোক আজ এনগেজমেন্ট বাট বিয়ে তো আমি করবো না। জাস্ট পড়ালেখার নাম করে বিয়েটা পিছাতে পেরেছি এইটাই অনেক। ভাগ্যিস শিশিরের মতো একটা ফ্রেন্ড ছিল। তাই তো এই কষ্টের সময়ে ওর সব হিটলারি বুদ্ধি আমার এখন কাজে এসেছে। থ্যাংক ইউ দোস্ত আগামীকাল ভার্সিটিতে গিয়ে তোকে ট্রিট দিবো পাক্কা । ”

???

শিশির হলো তিতিরের ওনলি ওয়ান বেষ্ট ফ্রেন্ড। তিতি সবার সাথে ভালো ব্যবহার আর ফ্রেন্ডলী চললেও শিশিরের সাথে তার বেশ জমে। শিশির হলো একদম মুভি পাগল। পুরো ভার্সিটিতে ওর ক্রাশের অভাব নেই। ও মুভি দেখে দেখে একেক সময় একেক ডায়লগ বলবে আবার এইসব মুভি দেখেও ওর মাথায় সব সময় ভিলেনদের আইডিয়া থাকে। ও একবার এই রকম একটি গল্প বলেছিলো। যেখানে মেয়েটিকে ভিলেন বিয়ে করতে চায় তখন মেয়েটি পড়ালেখার নাম করে বিয়ে পিছায়। আজ ওই কথাটা তিতিরের মনে পড়ে আর একটু অভিনয় করে অর্ণবের মন ও নরম করে দিলো।

“আহ কি বুদ্ধি আমার। এই হিটলারি বুদ্ধির জন্য আমাকে নোবেল দেওয়া উচিত”

“কিসের জন্য নোবেল দেওয়া উচিত তোকে তিতি?”

তিতির আম্মু দরজা খুলে সামনে আসতে আসতে প্রশ্ন করলি তিতিকে……..

তিতি ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো তখন আমতা আমতা করে বললো….

“হয়েছে কি আম্মু শিশির আমাকে একটা ধাঁধা দিয়েছিলো ওই ধাঁধা নাকি অনেককে দিয়েছে ও কেউ পারে নাই বাট আমি একমাত্র ব্যাক্তি যে কিনা পেরেছি তাই আর কি নিজেকে নিয়ে নিজের গর্ব বোধ হচ্ছে আর এই জন্যই বলছি আমাকে নোবেল দেওয়া উচিত”(দাঁত বের করে হেসে দিলো)

“ওহহ ভালো আমি আরো কি না কি বুঝেছি। আচ্ছা শুন অর্ণব আজ বিয়ের ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ও নাকি তোর পড়ালেখা শেষ হলে বিয়ে করবে এতে ওর মা কিছুটা অভিযোগ ছিলো পরে ছেলেটা বলেছে ও হলো এত বড় বিজনেসম্যান পাশাপাশি ভার্সিটির সভাপতির ছেলে তাছাড়া ওদের নামডাক ও তো কম না । তাই ও চাচ্ছে বিয়েটা ধুমধাম করে হোক লোকে দেখে যেনো বলে এইরকম বিয়ে ওরা দেখেছে কি না কোনোদিন।”

“ওহহহহহ।”

“হুম”

“এত দেখছি আমার সাথে থেকে থেকে কত বুদ্ধি অর্জন করে ফেলেছে সবই এই তিতির গুন”(মনে মনে)

“অর্ণব চেয়েছিলো আজ এনগেজমেন্টটা হয়ে যেতে বাট ওর মা ধুমধাম করে নাকি পার্টি করে বড় করে এনগেজমেন্ট করাবে তাই ওরা এখন চলে গিয়েছে। এখন যা তুই ফ্রেশ হয়ে আয় সকালে তো কিছু খাছ নাই খাবি আয়”

তিতিরের আম্মু চলে গেলো। তিতি খুব জোড়ে একটা শ্বাস ফেললো মনে হচ্ছে কত বছর সে এইভাবে শ্বাস নেয় নি। গতকাল রাতে যেহেতু ওর ঘুম হয় নাই আর এত চিন্তা করেছে এখন ওর মাথা কিছুটা ধরেছে তার উপর এখন ওর তুতুলি আর তিতলির কথা মনে পড়ছে । তিতির চোখ ভিজে যাচ্ছে ওদের কথা মনে পড়াতে । তাই ও গিয়ে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো। খাটে শুয়ে পড়লো আর তলিয়ে পড়লো গভীর ঘুমে। এই ফাঁকে ওর আম্মু অনেক ডাকাডাকি করেছে কিন্তু ও ঘুমে এতটাই আচ্ছন্ন তাই আর ডাকলো না…….

অন্যদিকে অর্ণব বসে বসে ভাবছে…..

“কি বোকা মেয়ে ও ভেবেছে আমি হয়তো ওর প্ল্যান বুঝতে পারবো না হাহাহা। যে মেয়ে সকাল থেকে বলছে আমায় বিয়ে করবে না সেই মেয়ে কিনা এখন আমাকে জান বেবি বলে ডাকছে হাউ ফানি। তিতির পাখি তোমার মনে কি চলছে তা সবটা না বুঝতে পারলেও কিছুটা অনুভব করতে পেরেছি। তুমি ভাবছো তোমার কথায় আমি বিয়ে কেন্সেল করেছি তাই না আসলে বেবি তুমি যদি চলো ডালে ডালে আমি যে চলি পাতায় পাতায়। তোমার ভালোবাসায় পাগল আমি। তোমাতে আমি দিওয়ানা এই জন্য এইটা ভাববে না তোমাকে সহজে ছেড়ে দিবো বা তোমার ভাগ কাওকে কে দিবো। তুমি তো শুধুই আমারি। অন্য কারো হওয়ার ভাবলে ওইটা হবে তোমার জীবনের কঠিন ভুল। তার মাসুল ও হবে ভয়ানক।”

রাত বারোটা শিশির বসে বসে গল্পের বই পড়ছে। ও হুমায়ন আহমেদ স্যারের খুব ভক্ত। মেঘের ছায়া উপন্যাসটি পড়ছে তখন ওর কানে দুর থেকে গিটারের সুর বাজতে লাগলো। শিশির বইটা টেবিলে রেখে ওর রুমের সাথে থাকা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো আর খুঁজতে লাগলো কোথা থেকে আসছে এই গিটারের সুর।

“লোকটি মনে হয় খুব এক্সপার্ট গিটার বাজানো তে। এত সুন্দর মনটা ভরে গেলো। লোকটিকে সামনে পেলে কয়েকটা পিক তুলা যেতো পরে ফেসবুকে আপলোড দিতে পারতাম।”

মন খারাপ করে শিশির কথাগুলো বললো….

এইবার গিটারের সুর এক খুব স্পষ্ট ভাবে ভেসে আসতে লাগলো শিশিরের কানে। সুরটা মূলত একটা গানের সুর আর গানটি হলো……

“আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক , খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।

ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউলের এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে………”

শিশির গিটারের সুরের সাথে নিজেও গানটি বলতে লাগলো…

হটাৎ গিটার সুর অফ হয়ে গেলো। শিশির ও রুমে এসে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো….

গরম আর ঠান্ডা নাই শিশির সব সময় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। শিশিরের মতে রাতে ভুত আসলে কম্বল মুড়ি দেওয়া দেখে চলে যাবে তাই ও কম্বল মুড়ি দিয়েই ঘুমায়…..

সকালে কারো স্পর্শে তিতির ঘুম ভেঙে যায় ও চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ওর সামনে……

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে