একরাতেরবউ পর্ব ৯ 

0
3432

একরাতেরবউ পর্ব ৯
Written by Avantika Anha
বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো। ফোটা ফোটা বৃষ্টি ছিটকে আসতে লাগলো আমাদের দিকে। অনুভূতি টা ভিন্ন। মনে হচ্ছে প্রকৃতি নতুন ভাবে উজ্জীবিত হচ্ছে।
আরাভ- আনহা একটু চেপে দাড়াও বৃষ্টি বেড়ে যাচ্ছে।
আমি- কেন সুযোগ কাজে লাগাবেন?
আরাভ- (জবাব দিলাম না)
.
আমি আরাভের দিকে তাকালাম। সে চুপ করে অন্য দিকে ঘুরলো। আরো বেড়ে গেলো বৃষ্টির বেগ।
.
আরাভ- এগিয়ে এসো এদিকটায়। বৃষ্টি কম পড়বে। আমি সরে যাচ্ছি।
আমি- না।
আরাভ- আসো আমি তো যাচ্ছি। (আরাভ সরতে লাগলো)
আমি- দাড়ান।
আরাভ- কেন? তোমার সমস্যা হবে না।
আমি- থাক যাইয়েন না আমি আসছি আপনার ওদিক।
আরাভ- না।
আমি- যা বলছি শুনলে প্রব্লেম?
.
আমি আরাভের দিকে এগিয়ে গেলাম। বেশি না শুধু আমার হাত তার হাত স্পর্শ করছিলো। আরাভ আড়চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগলো, যদিও আমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি। বৃষ্টির চেয়েও বেশি আরাভের ভালো লাগছে আনহার দিকে তাকিয়ে থাকতে। প্রকৃতির মতো আনহাকেও সজীব লাগছিলো। বৃষ্টির মাঝে আনহার চুলও অনেকটা ভিজে গিয়েছে। কিছু চুল সামনে চলে আসলো। আরাভের প্রচুর ইচ্ছা হচ্ছে চুল গুলো কানের পাশে আটকে দিতে। মনে হচ্ছে এক ঘোর আরাভকে আনহার দিকে টানছে। নিজের অজান্তেই আরাভ আনহার চুল গুলো সরিয়ে দিলো। হঠাৎ স্পর্শে কিছুটা চমকে উঠলাম।
.
আমি- আ.
.
কিছু বলতে যাবো কিন্তু আরাভ ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বললো। আরাভের মাথায় এখন কিছু কাজ করছে না। শুধুই আনহা তার মাথায়। আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আরাভের চোখের দিকে তাকিয়ে আমিও কিছুটা ঘোরে জড়াতে লেগেছিলাম। হঠাৎ জোড়ে একটা বিদ্যুৎ চমকালো। ঘোর কেটে গেলো দুজনেরই।
.
আরাভ- সরি।
আমি- ইটস ওকে।
.
মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ বেড়ে গেলো।
আমি- ভয় করছে?
আরাভ- হুমম কিছুটা।
আমি- চিন্তা করবেন না কিছু হবে না। ক্ষুধা লাগছে?
আরাভ- নাহ।
আমি- কেমনে কি আমারই তো কতো ক্ষুধা লাগছে।
.
আমি একটা চিপসের প্যাকেট বের করলাম। ছিঁড়ে খেতে লাগলাম।
আমি- খাবেন?
আরাভ- না।
আমি- হুসস খান বৃষ্টি কখন যে থামবে কে জানে?
আরাভ- আচ্ছা।
.
আমি আর আরাভ শেয়ার করে খেলাম। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়।
আমি আরাভকে পানি খেতে দিলাম কিন্তু সে বোতলে মুখ লাগালো।
.
আমি- ওইইইই বান্দর পোলা।
আরাভ- মানে?
আমি- শয়তান, ইতর।
আরাভ- কিহ?
আমি- তুই আমার বোতলে মুখ লাগাইলি কেন?
আরাভ- সরি ভুলে গেছিলাম।
আমি- আমার বোতল।
আরাভ- প্রব্লেম কই?
আমি- আমার একটা মাত্র বোতল আনছি।
আরাভ- ধুয়ে নিও।
আমি- ইউ ধর্ষণ করলেন আমার বোতলকে।
আরাভ- কিহ? বোতল ধর্ষণ?
আমি- ইউ রেপিস্ট। আমারে তো করলেনই আমার বোতল রেও। আমার বোতল রে।
আরাভ- আনহা বাচ্চামীর লিমিট আছে।
আমি- আপনার লিমিটের গুষ্টি কিলাই। আনার বোতলে মুখ লাগাইলেন কেন?
আরাভ- চুপ একদম চুপ। ভুলে যাবা না। ধর্ষণ হোক আর যাই হোক। আমার ঠোঁট তোমার ঠোঁটকে এমনিও স্পর্শ করছে।
.
আমি ভুলে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য বিষয়টা। আমি চুপ করে গেলাম। কিছুটা সরে দাড়ালাম আরাভের থেকে। আরাভ বিষয়টা লক্ষ্য করলো কিন্তু কিছু বললো না। কিছু সময় পর বৃষ্টি থেমে গেলো। আনহা বা আরাভ কেউই এতোক্ষণ একে অপরের সাথে কথা বললো না।
.
আরাভ- আনহা থেমে গেছে বৃষ্টি।
আমি- হু চলুন।
আরাভ- তোমার কাছে এক্সট্রা কাপড় নাই?
আমি- ইয়ে মানে না ভুলে গেছি।
আরাভ- এখানে দাড়াও আমি বাহিরে একটা কাপড়ের দোকান দেখেছি কিছু আনছি কিনে।
আমি- না মানে একা থাকবো আমি?
আরাভ- কেন? ভয় পাও?
আমি- না না একদম না। আনহা কিছু ভয় পায় না। (যদিও ভয় পাচ্ছি)
আরাভ- তা তোমার চেহারা দেখেই বুঝা যায়। যাই হোক বাইরে কিছু লোক দেখলাম। আর তোমার জামা অনেকটা ভিজে গেছে। যা অনেকের নজর কেড়ে নিবে তাই বলেছি।
আমি- (আর কোনো কথা বললাম না)
.
আরাভ আগাতে লাগলো।
.
আমি- মি. আরাভ।
আরাভ পিছন ফিরে- কি?
আমি- তাড়াতাড়ি আসিয়েন।
.
আরাভ তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলো। কিছু সময় পর আরাভ ফিরে এলো। এসে ওই জায়গায় আর আনহাকে খুঁজে পেলো না। আরাভের চিন্তা বেড়ে গেলো। আরাভ আনহাকে খুঁজতে লাগলো। ওর চিন্তা বেড়ে গেলো। আনহা.. আনহা..বলে ডাকতে লাগলো।
.
কিছুদূর এগিয়ে আরাভ আনহাকে খুঁজে পেলো। ও একা ছিলো না। ওর কোলে ছিলো একটা খরগোশের বাচ্চা। আরাভ বুঝে গেলো আনহা কি কারণে ওখান থেকে এদিকে আসলো। আরাভের প্রচুর রাগ হলো। ও গিয়েই,
আরাভ- প্রবলেম কি তোমার হা? মাথায় কি সমস্যা আছে? পাগল তুমি?
আমি- না মানে।
আরাভ- চুউউউউপ।
আমি- আরে।
আরাভ- কেন আসছো এখানে? বেশি ঢং? অল টাইম বাচ্চামি আজব।
আমি- হইছে?
আরাভ- না।
আমি- হুসসস। গালি দিচ্ছেন ভালো করে দেন। পাগল না পাগলি হবে।
আরাভ- দূররররর।
আমি- ওকে।
.
কিছু সময় আরাভ চুপ করে দাড়িয়ে থাকলো আমার দিকে। কিন্তু আমি খরগোশের বাচ্চাটার সাথে খেলতে লাগলাম। আরাভ ভালো করেই বুঝলো আমাকে বকেও লাভ নাই। তাই জামাটা এগিয়ে দিলো।
আরাভ- নাও এটা পড়ে নেও।
আমি- এডি কি?
আরাভ- গাউন একটা সুতি।
আমি- ওড়না আনছেন?
আরাভ- হনা স্কার্ফ পাইছি। নেও।
আমি- বাহ আপনার তো চয়েজ আছে। কই শিখলেন? (গাউনটা দেখে)
আরাভ- এতো গফ ছিলো। শিখা কোনো ব্যাপার?
আমি- ওহো ভুলে গেছিলাম সরি সরি।কিন্তু…
আরাভ- কি?
আমি- পাল্টামু কোনে?
আরাভ- এখানেই কোনো গাছের আড়ালে।
আমি- থাক কাপড় শুকিয়ে গেছে প্রায়।
আরাভ- যা বলছি করো।
আমি- না।
আরাভ- যদি না করো আমি জোর করে পড়িয়ে দিবো।
আমি- এ্যা।
আরাভ- জ্বী আর এটা কোনো ব্যাপার না আমার কাছে।

.
.
আর কিছু বললাম না কারণ সত্যি ভরসা নাই ভাবলাম। তাই জামাটা হাতে নিয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে চেঞ্জ করে নিলাম। বের হয়েই,
আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ আনহাকে মেরুন রংটা মানিয়েছে।
.
আমি- হইছে? সবসময় এক রকম।
আরাভ- যাই ভাবো। কিন্তু ভালোই চাই তোমার।
আমি- যদি তা হতো আমাকে এমন পরিস্থিতিতে আনতেন না। আর আজ আমার ইজ্জত রক্ষিত থাকতো।
.
আরাভ জবাব দিলো না। তাই আমিই বললাম, “চলুন যাওয়া যাক।”
.
.
কিছু দূর গিয়ে ওদের সবাইকে পেলাম। বৃষ্টির জন্য তারাও আগাতে পারে নি। আর সবার ক্ষুধা লাগছিলো বলে খাচ্ছিলো। তাই ধরতে পেরেছিলাম। আমরাও কিছুটা খেয়ে নিলাম। অনেক বকা শুনতে হলো দুজনকেই।
.
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে