#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_33
#Sabrina_Summa
তারা প্রথমে হসপিটালে গেল। তারপর মাহিরের বাসায়।
সুপ্তি মাহিরের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো, ” আমরা এখানে কেন আসছি? ”
মাহির ওয়ার্ড্রপ থেকে একটা ড্রেস বের করে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আল্লাদী কন্ঠে বললো, ” কারণ তুমি আমাকে সময় দিবে। নাও এখন চেঞ্জ করে এসো। ”
সুপ্তি চেঞ্জ করে এসে শাড়িটা মাহিরের হাতে দিলো। মাহির শাড়িটা তানিশাকে দিলো।
তানিশা : ক্লিন করে রাখবো?
মাহির : না, যেভাবে আছে সেভাবেই প্যাকেট করে রাখবে।
তানিশা চলে যেতেই সুপ্তি বললো, ” আমরা এখন কি করবো? ”
মাহির : যা তুমি চাবে।
সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” আচ্ছা, মাহির। এইটা তো আপনার মাস্টার বেড তাই না? ”
মাহির মাথা নাড়িয়ো হ্যাঁ বললো। সুপ্তি আবারো বলা শুরু করলো, ” কিন্তু এটা নরমাল মাস্টার বেডের তুলনায় কিছুটা ছোট না? ”
মাহির হ্যাঁ বলতেই সুপ্তি প্রশ্ন করলো, ” কেন? ”
মাহির শয়তানি হাসি দিয়ে বললো, ” আসলে আমি আর আমার বউ তো আলাদা থাকরো বাবা মার থেকে। সো, আমার বউ মানে তুমি যেন আমার সাথে রাগ করে বেশি দূরে থাকতে না পারো, তাই বেড ছোট করা ৷ ”
আশেপাশের সার্ভেন্টরা মিটিমিটি হাসছে। তানিশা এসে এ কথা শুনে সকলকে বাহিরে যেতে বললো। সবাই চলেও গেল।
সুপ্তি এতক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। সকলের যাওয়ার পর বললো, ” আসলে আপনার কাছে ভালো কথা আশা করাই আমার ভুল। ”
মাহির মুচকি হাসছে। সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো, ” আমি এখন ঘুমাবো। ”
বলতে বলতেই বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
মাহির : তোমার এ বাসায় থেকে যা করার ইচ্ছা হয় তাই করতে পারো।
বলতে বলতে একটা চেয়ার টেনে বেডের পাশে বসলো।
মাহিরকে বসতে দেখে সুপ্তি অন্যদিকে ঘুরতেই যাবে তার আগেই মাহির বললো, ” ভদ্রভাবে চেয়ারে বসে আছি। অন্যদিকে ঘুরলে ভদ্রতা ভুলে বেডে শুতে বেশি সময় লাগবে না! ”
শান্ত হুমকিতে সুপ্তি ভয় পেল কিনা জানি না। তবে চুপচাপ মাহিরের দিকে ঘুরে শুয়ে রইলো।
মাহির : তুমি এখন ঘুমাবে?
সুপ্তি : না ঘুমালে, আমি শুধু শুধু শুয়ে আছি?
মাহির : দুপুর তো হয়ে গেছে ৷ খেয়ে ঘুমাও?
সুপ্তি : না, আমি অনেক টাইড। ঘুমাবো আগে।
মাহির আর কিছুই বললো না। সুপ্তিও চোখ বন্ধ করে ফেললো।
দুজনে কখন ঘুমের অতল গভীরে হারিয়ে গেল কেউই জানতে পারলো না।।
বিকেল চারটা।
হঠাৎ সুপ্তির ঘড়ি ভাইব্রেট করে উঠলো। সেই শব্দে সুপ্তির ঘুম ভাঙলো।
ঘুম ঘুম ভাব নিয়েই কল রিসিভ করলো। অপর পাশের ব্যক্তিটির সাথে কয়েক সেকেন্ড বোধয় কথা হলো। তারপর সুপ্তি বলে উঠলো, ” ওকে, আমি আসছি। ”
কল কেটে দিলো। তার নজর গেল ঘুমন্ত মাহিরের দিকে ৷ মাহির বেডের উপর দুই হাত রেখে তার উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । সুপ্তির খুব মায়া হলো।
তাই তো মাহিরের গালে হাত দিয়ে বললো, ” আমাকে যেতে হবে। টাটা জানেমান। ”
তানিশা দরজায় হেলান দিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
সুপ্তির সেদিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুচকালো। তানিশা নিজের ভ্রু দুইবার নাচালো।
সুপ্তি স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” তুমি কিন্তু কিছু শুননি, আপু । ”
তানিশার ঠোঁট আরও প্রশস্ত হলো। তারপর বললো, ” আচ্ছা, ঠিকাছে। ”
সুপ্তি : ঘুম থেকে উঠলে বলে দিও আমি চলে গেছি।
তানিশা : তা তো যাচ্ছো। তবে গাড়ি নিয়ে যেও নাহয় কিন্তু রাগ করবে!
সুপ্তি বের হয়ে যেতে যেতে বললো, ” ওকে, নিয়ে যাবো। ”
মিস সিক্রেট অরপে সুপ্তি ইরফানকেই বিশ্বাস করে না সেখানে মাহিরকে কিভাবে!
যতই হোক না প্রেমিক। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রেমিককেও ধোঁকা দিতে হয় তার ভালোর জন্য!
সুপ্তিও এই উক্তিটিকেই প্রমাণ করলো। নেমে গেল গাড়ি থেকে শপিং মলের সামনে।।
রাতে মাহিরের সাথে কথা বলে, সকল কাজ শেষ করে প্রায় ২ টার দিকে ঘুমিয়েছে সুপ্তি।
এমনিতেই তার ঘুম ভালো। তারমধ্যে আবার দেরিতে ঘুম, সহজে তা কি ভাঙ্গে!!
#চলবে.,.
#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_34
#Sabrina_Summa
সকাল ৮ টা ছুঁই ছুঁই।
সুপ্তির মুখের উপর কারো ভারি নিঃশ্বাস পড়তেই মুচকি হেসে বালিশের নিচে থেকে একটা গান বের করে সেই ব্যক্তির কপালে তাক করলো।
ট্রিগারে চাপতেই যাবে, পরিচিত একটা ঘ্রাণ পেয়ে চোখ খুললো সুপ্তি। চোখ খুলে সামনের মানুষটিকে দেখে আঁতকে উঠলো।
এতক্ষণে ব্যক্তিটি সুপ্তির উপর থেকে সরে গেছে।
সুপ্তি তাড়াতাড়ি উঠে বসে বললো, ” মাহির আপনি? ”
মাহির : তুমি গানও চালাতে পারো?
সুপ্তি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো। তারদিকে সকলে গান তাক করে আছে।
সুপ্তি বেড থেকে উঠে রাগী স্বরে বললো, ” আপনি এখানে কেন? ”
মাহিরের কোনো উত্তর নেই। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।
সুপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ” আরেকটু হলে আপনি মরে যেতেন! আমি গুলি প্রায় চালিয়েই দিয়েছিলাম। ”
মাহির : তোমার কাছে গানের লাইসেন্স আছে?
সুপ্তি : না। এমনিতেই চালাই। ( রেগে )
আচ্ছা এগুলো বাদ দেন। আগে বলেন আপনি আমার বাসায় আসলেন কিভাবে?
মাহির : এটা বলা যাবে না সিক্রেট। তবে এসেছি কোনো একভাবে।
” এত সহজ তো না আমার এপার্টমেন্ট খুঁজে পাওয়া! কিভাবে এলেন তিনি! ” ( মনে মনে )
মাহির : আমার খিদে পেয়েছে। সকালের নাস্তা নিয়ে এসো।
সুপ্তি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো, ” কেন এসেছেন আপনি? ”
মাহির : ঘুরতে, খেতে আর দেখতে কি গুপ্তধন লুকাইয়া রাখছো যে কাউকে নিজের এপার্টমেন্টে আসতে দেও না।
কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো, ” যাও নাস্তা নিয়ে এসো। ”
সুপ্তি : নাস্তা…. আমি তো রান্নাঘরে জীবনে পাও রাখি না।
” ঠেকাই না পড়লে! ” ( বিড়বিড় করে )
মাহির : যাও৷
সুপ্তি গান টেবিলের উপর রেখে আবারো আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনো সবাই গান তাক করে আছে ৷
সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো, ” গান মানাতে বলুন। আর যদি আমাকে বিশ্বাস না করতে পারেন তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যান। ”
মাহির ইশারা দিতেই সকলে গান নিচে নামালো।
সুপ্তি রান্নাঘরে গেছে দেখে মাহির সম্পূর্ণ এপার্টমেন্ট ঘুরলো। তবে তার চোখে তেমন কিছুই পড়লো না। একটা সাধারণ মেয়ের রুমের মতোই সুপ্তির রুম কিন্তু এত দামী এপার্টমেন্টে থাকে কিভাবে সুপ্তি! আবার ফ্যামিলি থেকেও কোনো টাকা নেই না। এগুলো প্রশ্নই মাহিরের মনে আসছে।
সে আরও খেয়াল করেছে সুপ্তির রুমের সামনে আরও দুইটা রুম আছে তবে সেগুলোতে তালা মারা। সে শুনেছে এখানে নাকি সেলিব্রেটিদের জিনিস আছে তাই তালা দেওয়া! তাই বেশি মাথা ঘামালো না মাহির।
এরই মাঝে সুপ্তি একটা ট্রে এনে মাহিরের সামনে রাখলো।
মাহির অবাক হয়ে বললো, ” এগুলো কি? ”
সুপ্তি : জ্যাম পাউরুটি, কফি আর কিছু ফল এবং শাকসবজি।
মাহির : এই ঘাস পাতা তুমি খাও?
সুপ্তি : এগুলো ঘাস পাতা না শাকসবজি।
আর হ্যাঁ এগুলো আমি খাই। তাইতো আমি এত সুন্দর দেখেন না!
মাহির : জ্যাম পাউরুটির সাথে কফি কে খাই?
সুপ্তি : কেন আমি! আমি ফুটস এর সাথে কফি খাই অর জ্যাম পাউরুটি দিয়ে কফি খাই। এগুলো খুবই নরমাল।
মাহির অনেক কষ্টে খাবারগুলো গিললো। এরই মাঝে সুপ্তিও খেয়ে নিয়েছে আর বাকিদেরও খাবার দিয়েছে।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল। তবে মাহির সুপ্তির গল্প শেষ হচ্ছে না।
আজ মাহিরের যাওয়ারও তাড়া নেই আর সুপ্তির বিদায় করাও তাড়া নেই।
বিকেল ৩ টার দিকে মাহির চলে গেছে।
যাওয়ার আগে বলে গেছে, ” সুপ্তি যেন এখান থেকে অন্য কোথাও শিফট করার চিন্তা না করে! ”
কিন্তু সুপ্তি তো শুধু সুপ্তি নই মিস সিক্রেটও। তাকে এ এপার্টমেন্ট ছাড়তেই হবে। সুপ্তি জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো গার্ড পাহাড়া দিচ্ছে। এটা দেখে সুপ্তি মুচকি হাসি দিলো।
এতক্ষণে তার অনেকটা বোঝা হয়ে গেছে মাহির কিভাবে তার এপার্টমেন্ট চিনেছে!
সুপ্তি নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কাউকে কল করলো।
কল রিসিভ করতেই সুপ্তি বললো, ” আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল। ”
অপর পাশ থেকে, ” ওয়ালাইকুম আসসালাম , মামনি। কেমন আছো? ”
সুপ্তি : আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
— ” আলহামদুলিল্লাহ। তা হঠাৎ আমাকে কল করলে যে? ”
সুপ্তি : আপনার এপার্টমেন্ট ছেড়ে দিবো, এটা বলার জন্যই কল করলাম।
লোকটা হুঙ্কার দিয়ে বললো, ” তুমি এভাবে এপার্টমেন্ট ছাড়তে পারো না! ”
সুপ্তি : আপনিও এভাবে আমার ইনফরমেশন অন্যকে দিতে পারেন না।
” এত এত সরকারের দেওয়া এপার্টমেন্ট রেখে আমি ভাড়া থাকছি। আমার তথ্য মানুষকে দেওয়ার জন্য! ” ( সুপ্তি রেগে মনে মনে )
লোকটা ঢোক গিলে বললো, ” আমি কাকে……”
সুপ্তি কথা শেষ করতে না দিয়ে বললো, ” একদম মিথ্যে বলবেন না। আপনি কাকে বলেছেন সেটা খুব ভালো করেই জানেন। আমি এপার্টমেন্ট ছাড়বো মানে ছাড়বোই। ”
— ” মামনি এমন করো না প্লিজ। আচ্ছা আমার এই কলোনিতে আরেকটা নতুন বিল্ডিং আছে সেখানে একটা এপার্টমেন্টে উঠো। ”
সুপ্তি : হ্যাঁ আমি ওখানে উঠি তারপর আপনি আবারও বলে দেন!
— ” না না, মামনি। আমি আর বলবো না। বুঝোই তো এত পাওয়ারফুল একজন ব্যক্তির কাছে তো আর মিথ্যে বলা যায় না। তবে নেক্সট টাইম আর বলবো না প্রমিস। ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ” উঠতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে। ”
— ” তোমার সব শর্তে রাজি। ”
সুপ্তি : আমার জিনিসপত্র আপনি শিফট করে দিবেন।
লোকটা রাজি হওয়ায় সুপ্তি আর কিছু না বলে কেটে দিলো। তাকে সবকিছু প্যাকিং করতে হবে।
কিছুক্ষণের মাঝেই সবকিছু শিফট করার কাজ শুরু হলো। সুপ্তি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো কাটুনে রেখে ভালো করে কসটিপ দিয়ে দিয়েছে।
আর মাহির এ বিষয়ে জেনেছে, সেলেব্রিটির জিনিসপত্র সরানো হচ্ছে । ফলশ্রুতিতে মাহির একটু তেই তা বিশ্বাস করে নিয়েছে।
সবকিছু শিফট করার পর মিস সিক্রেট ইরফানকে কল করে ৫০ জন বডিগার্ড আনতে বললো। ইরফান প্রথম দিকে অনেক প্রশ্ন করলেও পরে মেনে নিয়েছে।
কিছুক্ষণের মাঝেই বডিগার্ডসহ ইরফান চলে এলো। সাথে ১২ টা গাড়ি।
মিস সিক্রেট ভিআইপিদের মতো এন্ট্রি নিলো। মূলত সে মাহিরের আইডিয়াই কাজে লাগাচ্ছে।
অনেকক্ষণ পুরো কলোনি চক্কর দিয়ে একটা জায়গায় থামলো। সকলকে চলে যেতে বললে সকলে চলে গেলো।
নির্জন জায়গায় হাঁটতে হাঁটতে মিস সিক্রেট বললো, ” আমি তো এখানে মিস সিক্রেট রূপেও ঢুকতে পারবো না আবার সুপ্তি হিসেবেও না। তাহলে আমি যাবো কিভাবে? ”
কিছুক্ষণ ভেবে হুডিটা খুললো। এরপর তাড়াতাড়ি হেঁটে নিজের নতুন এপার্টমেন্টে চলে গেলো।
রাতে মাহিরের কানে খবর গেল সুপ্তি এপার্টমেন্টে নেই। সুপ্তিকে কল করলেও সুপ্তি রিসিভ করে নি।
মিস সিক্রেট মাহফুজ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছে।
মিস সিক্রেট ভিতরে প্রবেশ করতেই মাহফুজ চৌধুরী রেগে বললেন, ” তাশরিফকে ভালো বানানোর জন্য কাকে আনছো, হ্যাঁ? এখন আমার ছেলে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। ”
মিস সিক্রেট চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মাহফুজ চৌধুরী কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো, ” এখন কাজ শেষ। মেয়েটাকে তাশরিফের জীবন থেকে চলে যেতে বলো। ”
মিস সিক্রেটের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে এমন অবস্থা। তবুও স্বাভাবিক ভাবেই বললো, ” এরজন্যই ডেকেছিলেন? ”
মাহফুজ চৌধুরী : হ্যাঁ।
মিস সিক্রেট : আচ্ছা। এখন আমি আসি।
মাহফুজ চৌধুরী : এখনই চলে যাবে! বসলেও তো না!
মিস সিক্রেট : পরে আরেকদিন আসবো। বলে হাঁটা শুরু করলো। নিজের মনকে বুঝানোর চেষ্টা করছে।।
#চলবে.,.