Dark Mystery পর্ব-৩২

0
45

#Dark_Mystery ( কালো রহস্য )
#Part_32
#Sabrina_Summa

কয়েকদিন কেটে গেছে।
সময়ের চাকা থেমে থাকেনি এক মুহূর্তের জন্যও। ঘনিয়ে এসেছে বছরের শেষ প্রান্ত, চারপাশে হালকা কুয়াশার আস্তরণ। শীত ধীরে ধীরে শহরের দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে নামছে। এই কয়েকদিনে সুপ্তি আর মাহিরের দেখা হয়েছে বেশ কয়েকবার – অন্য পাঁচ দশটা দিনের মতোই স্বাভাবিক ভাবে। দু’জনের মধ্যকার সম্পর্কটা যেন এখন এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শব্দের চেয়ে চাহনির গভীরতা অনেক বেশি।।

শীতের এই অনুষ্ঠানমুখোর পরিবেশে আজ মাহির, মাহফুজ চৌধুরী এসেছে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে । আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ আছে। মিস সিক্রেটকে ইনভাইট করা হলেও সে আসবে না বলে জানিয়েছে।
নরমালি প্রতিবছর যে অ্যান্কারিং করে আজও সেই করছে তবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকার কাজটা অন্য একজনকে দেওয়া হলো ৷

মানুষটিকে দেখে মাহির রেগে গেল। কেননা হালকা গোলাপি রঙের গর্জিয়াস গোল্ডেন পাড়ের জর্জেট শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে খুব সুন্দরভাবে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকছে সুপ্তি।
খুবই সুন্দর লাগছে তাকে। গর্জিয়াস সাজ, হাতে ভারি চুরি আর খোলা চুলে ফুল দেওয়া।

মাহিরের সাথে সুপ্তির চোখাচোখি হতেই সুপ্তি মুচকি হাসলো। তবে মাহির রাগী চোখেই তাকিয়ে রইলো। মাহফুজ চৌধুরী মাহিরকে বললেন, ” এই মেয়েই বুঝি সুপ্তি? ”

মাহির চমকে উঠে বললো, ” হুম। তুমি কিভাবে জানলে? ”

মাহিরের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে নিজের মনে মনে বললো, ” মেয়ে তুমি অনেক সুন্দর। মাহিরের পছন্দ ভালো বলতে হবে। কিন্তু সোন্দর্য্যের চেয়ে ক্ষমতাটা যে বেশি দরকার! ”

কিছুজনকে বক্ততা দেওয়ার জন্য ডাকার পর মাহিরকে ডাকা হলো। সে কোনো মতে কিছু কথা বলে চলে আসলো।

মাহির অনবরত সুপ্তিকে মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু সুপ্তি দেখছে না। আর সহ্য করতে না পেরে মাহির কিছুটা পিছনে চলে আসলো। যেখানে কেউ বসে নি। সেখানে দাঁড়িয়ে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে একটা ছুড়ি খুব শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো।

সুপ্তি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকলো। হয়তো মাহিরের মতি গতি বুঝার চেষ্টা করলো।। তারপর হঠাৎ করেই স্টেজ থেকে নেমে পড়লো। একজনকে এদিক সামলাতে বলে মাহিরের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

সুপ্তিকে আসতে দেখে মাহির উল্টো দিকে দ্রুত হাঁটা শুরু করলো । তাদের এ কর্মকান্ড কারোরই বোধয় নজরে পড়লো না নিজেদের কাজে ব্যস্ততার জন্য।

মাহির দ্রুত হেঁটে একটা রুমে গিয়ে দরজা লাগাতে নিলে সুপ্তি দৌড়ে এসে অনেক কষ্টে রুমে প্রবেশ করলো। তারপর দরজা বন্ধ করে দিলো।

সুপ্তি : শাড়ি পড়ে এভাবে দৌড়ানো যায়! ( রেগে )

অন্যদিকে মাহির নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জিনিস ভাংচুর করছে। মাহিরকে থামানোর জন্য সুপ্তি ব্যাথা না পাওয়া স্বত্তেও ‘আহ’ করে চিৎকার করে উঠলো।

মাহিরের কানে শব্দ যেতেই সাথে সাথে পিছে ঘুরলো। দ্রুত সুপ্তির কাছে গিয়ে বললো, ” কি হয়ছে? অনেক লাগছে তোমার? ব্যাথা পাইছো? ”

সুপ্তি : না। ছুড়িটা দিন।

মাহির মুখ ঘুরিয়ে শক্তকন্ঠে বললো, ” না।”

সুপ্তি : বুঝেছি। সোজা আঙুলে কাজ হবে না।

বলতে বলতে আঁচলটা কোমড়ে গুজে আশেপাশে খুঁজে নিজেও একটা ছুড়ি নিয়ে আসলো।

মাহির ছুড়িটা দেখেই কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বললো, ” ছুড়িটা রাখো অথবা আমাকে দাও। ” ( দাঁত চেপে )

সুপ্তি ভ্রু কুচকে বললো, ” আপনি দিয়েছেন? ” কিছুক্ষণ পর আবারও বললো, ” হাত আমিও কাটতে পারি! ”

মাহির : একদম না।

এরপর কিছুটা শান্ত হয়ে সুপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলো, ” দেখো, যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমি ছুড়িটা রেখে দিচ্ছি ( বলেই রেখে দিলো ) তুমিও রেখে দাও। ”

বলতে বলতেই সুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। তার হাত দিয়ে অঝোরে রক্ত পড়ছে। এগোতে এগোতে হঠাৎ করে মাহির সুপ্তির হাতের ছুড়িটা টান দিতে নিলে সুপ্তি দ্রুত হাত সরিয়ে নিলো। ফলশ্রুতিতে তারও ভালোই গভীরভাবে কেটে গেলো।

সুপ্তি : প্রেমে পড়তে পারি তবে দক্ষতা হারাই নি! ( রেগে )

মাহিরের সে দিকে কোনো খেয়াল নেই। সে হাত দেখতে দেখতে রেগে বললো, ” এটা কি হলো? ”

সুপ্তি : আমি কিছুই করি নি। আপনি নিতে আসলেন কেন?

মাহির : এখন সব দোষ আমার না? তোমাকে শাড়ি পড়তে বলছিল কে?

সুপ্তি : এটাও আপনার জন্যই!

মাহির ভ্রু কুচকে, ” মানে? ”

সুপ্তি : সবাই আমাকে আপনার খাতিরা লোক ভাবে তাই আমাকে আনছে।

মাহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ” কি শাড়ি কিনছো! জর্জেটের। সবই বোঝা যায়!” ( বলেই আঁচল খুলে দিলো) তারপর আবারো ভ্রু কুচকে বললো, “এখন তো আরও বোঝা যায়। ”

এরই মাঝে সুপ্তির ফোনে কল আসলো। ফোনে নামটা দেখে সুপ্তি মাহিরের দিকে তাকালো।

মাহির : লাউডস্পিকার দেও।

সুপ্তি কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো, ” কি হলো সুপ্তি? কোথায় উধাও হয়ে গেলে? ”

মাহির ফোনটা নিয়ে বললো, ” সুপ্তি কোথাও যাবে না। সুপ্তি আমার সাথে যাবে। ”

বলেই কল কেটে দিয়ে ফোনটা নিজের পকেটে রাখলো।।

সুপ্তির কাছাকাছি এসে বললো, ” আমারই এই অবস্থা। না জানি বাকিদের কি অবস্থা! যদি কোনো নেতা ফেতার ছেলে বা উপস্থিত বড় পদের মানুষের ছেলের বউ বা নিজের বউ হিসেবে তোমাকে পছন্দ হয়ে যায় তখন আমার কি হবে? ”

সুপ্তির হঠাৎ যেন কি হলো। মাহিরের গলা জড়িয়ে বললো, ” এগুলো বাদ। এখন আমরা একটু ব্যান্ডেসের দিকে আসি! ”

মাহিরের আবারও সুপ্তির হাতের কথা মনে পড়লো। দ্রুত গিয়ে ব্যান্ডেসের যাবতীয় জিনিস নিয়ে এসে সুপ্তির হাতে ব্যান্ডেস করে দিলো।

সুপ্তি : আমারটা না হয় গভীর হয় নি কিন্তু আপনারটা তো সেলাই করতে হবে।

মাহির নিজের হাতের দিকে তাকালো। এখনও রক্ত লেগে আছে। রক্তটা সুপ্তির আঁচলে মুছে দিলো।

এতে অবশ্য তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না সুপ্তি। মাহিরের হাত কিছুটা ক্লিন করে দিয়ে বললো, ” চলুন, হসপিটালে যাই। ”

মাহির : দাঁড়াও, তানিশাকে কল করি আগে।

৫ মিনিটের মাঝে তানিশা আবার কল করে বাহিরে যেতে আসতে বললো তাদের।

সুপ্তি বাহিরে যেতেই অনেকটা অবাক হলো। সে হাঁটছে। তার ডান পাশে মাহির আর বাম পাশে তানিশা। সাথে আরও ২০/২৫ জন গার্ড। শুধু তাকেই কভার করছে তাও আবার অন্যদিকে মুখ করে।

মাহিরের কড়া নিষেধ কেউ সুপ্তির দিকে তাকাতে পারবে না।।

#চলবে.,.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে