Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"প্রিয় রাগান্বিতাপ্রিয় রাগান্বিতা পর্ব-২৬+২৭

প্রিয় রাগান্বিতা পর্ব-২৬+২৭

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২৬
________________
থমথমে চেহারা নিয়ে বসে আছে রাগান্বিতা। মুখে কথা নেই। নির্জীব চুপচাপ পরিবেশ। রাতের আকাশটাও বুঝি গেল থমকে। রাগান্বিতার পানে তাকালো দাদিমা। অশ্রুভেজা চোখ নিয়েই বললেন তিনি,
“রাগান্বিতা,

রাগান্বিতা ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো দাদিমার পানে। চোখদুটোতে কেমন পানি টলমল করছে। দাদিমা বললেন,
“কাইন্দো না রাগান্বিতা।”

রাগান্বিতা আরো অনেকক্ষণ চুপ থাকলো। কিছু ভেবে প্রশ্ন করলো,
“আপার কার সাথে সম্পর্ক ছিল?”
“জানি না।”
“আপারে তো কখনো সেইভাবে কোনো মানুষের সাথে কথা বলতে দেখি নি। আপা তো ঘর থেকেই বের হতো না। গ্রামের অনেক মানুষই তো আপারে ঠিকভাবে চিনতো না। তাহলে?”
“এগুলান কিছু জানি না।”

রাগান্বিতা আবার চুপ হয়ে গেল। তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। রাগান্বিতা নিজের চোখ মুছলো। শান্ত গলায় বললো,
“এগুলো সব মিথ্যে আমার আপা পবিত্র ছিল। তুমি মিথ্যে কথা বলছো।”
“মিথ্যে কইলেই সব সত্য মিথ্যে হইয়া যায় না রাগান্বিতা।”

রাগান্বিতা দমে গেল সত্য এত কঠিন কেন। রাগান্বিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রশ্ন করলো,
“আর শাপলার সাজ।”

এবার যেন থমকে গেলেন দাদিমা এই কথা কি রাগান্বিতাকে বলা ঠিক হবে। মোতালেব তো বারণ করেছিল।’

“কি হলো কথা বলছো না কেন?”
“হাপলার লগে কুনো কতা আছিল না।”
“তুমি ভয় কেন পেয়েছিলে সত্যি করে বলো?”
“তুমারে কইছিলাম তো ওসবে পোকামাকড় সাপকোপ থাহে।”

রাগান্বিতার কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ হলো। সে জোরালো গলায় বললো,“মিথ্যে বলো না দাদিমা।”

দাদিমা তাও চুপ করে রইলেন। ভিতরে ভিতরে কি যেন ভাবছেন। রাগান্বিতা দাদিমার হাবভাব প্রখর করলো। বললো,
“তুমি আজও ভয় পাচ্ছো কি লুকাচ্ছো আমার থেকে বলো দাদিমা, আপার সাথে জড়িত নয় তো।”

এবার যেন আরো ঘাবড়ে গেলেন দাদিমা। এবার কি বলবেন তিনি। রাগান্বিতা দাদিমার হাত ধরে বসলো। নিজেকে ধাতস্থ করে প্রশ্ন করলো,
“আমি জানি বাবাও কোনো এক ভয়ের কারণে আমায় দ্রুত বিয়ে দিতে চেয়েছিল বাবার সেদিনকার থাপ্পড় দেয়াটা আমায় নিশ্চিত করেছে তা। আমি জানি তুমি সব জানো আমায় বলো দাদিমা।”

দাদিমা ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলেন,“তুমার আব্বায় না করছে।”

রাগান্বিতা এবার পুরোপুরি নিশ্চিত হলো তার মানে এদের মাঝে সত্যি কোনো কথা লুকানো আছে। রাগান্বিতা বললো,“তার মানে আমি যা ভেবেছিলাম তাই সত্যি তোমরা আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো।”

দাদিমা নিজের কথার জালে যেন নিজেই ফেঁসে গেলেন। আজ বোধহয় কোনো কথাই আর লুকানো যাবে না। রাগান্বিতা আবারও প্রশ্ন করলো,“আমায় সবটা খুলে বলো দাদিমা, আমি বাবাকে কিছু বললো না।”

দাদিমা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,“একদিন কু..

আর কিছু বলার আগেই সদর দরজার সামনে দিয়ে এক বিকট শব্দ আসলো দাদিমা রাগান্বিতা দুজনেই যেন চমকে উঠলো। দাদিমা বললেন,“এত জোরে শব্দ আইলো কিসের কেউ পইড়া গেল নাকি।”

রাগান্বিতা দাদিমা দুজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। দরজার সামনেই ইমতিয়াজকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে দুজনেই থমকে গেলেন। রাগান্বিতা তো স্তব্ধ হয়ে ছুট্টে গেল সামনে ইমতিয়াজের মাথাটা নিজের কোলে রেখে উত্তেজিত কণ্ঠে বললো,
“এসব কি করে হলো?”

তখনই দাদিমা দেখলেন ইমতিয়াজের কপাল চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। দাদিমা ঘাবড়ে গেলেন। বললেন,
“এহনো রক্ত পড়তাছে রাগান্বিতা হয়ালে কবিরাজ গো ডাহা লাগবো তুমি নাতজামাইরে নিয়া কক্ষে যাও আমি এখনই মোতালেবরে ডাকতাছি।”

দাদিমা থরথর করে বেরিয়ে গেলেন। আর রাগান্বিতার শরীর কাঁপছে। বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে। ইমতিয়াজের এমন অবস্থা হলো কি করে? কে মারলো তাকে।”
——
রাত জুড়ে বিষণ্ণতা। পালঙ্কে শুয়ে আছে ইমতিয়াজ তার পাশেই কবিরাজ হাকিব বসা। ইমতিয়াজের কপালের অংশটায় বেশ খানিকটা জায়গায় জখম হয়েছে কেউ ভাড়ি কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করেছে। কবিরাজ তার হাতে বানানো কিছু জড়িবুটি দিয়ে মাথায় পট্টি বেঁধে দিল ইমতিয়াজের। সাথে ঔষধ দিলেন কিছু। ক্ষত স্থানে পানি লাগাতে বারণ করেছেন। ইমতিয়াজের পাশেই মোতালেব তালুকদার, কাশেম আর দাদিমা বসা। রাগান্বিতা কিছুটা দূরে আর দুয়ারের কাছ দিয়ে রেজওয়ান দাঁড়ানো তাদের কারো মাথাতেই আসছে না ইমতিয়াজের এমন অবস্থা হলো কি করে! কবিরাজ উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,
“কপাল দিয়া অনেকখানি রক্ত পড়ছে। ফাইট্টাও গেছে অনেকখানি শহরে নিলে মনে হয় বেশি ভালো হইতো। আমার যা দেওয়ার দিলাম আজ রাতে এমনই থাকুক পারলে কাইলগো শহরে নিয়া দেখাইয়েন।”

কবিরাজের কথা শুনে চিন্তিত হয়ে গেলেন সবাই। মোতালেব কাশেমরে ইশারায় কবিরাজকে বাহিরে নিয়ে যেতে বললো। কাশেমও তাই করলো। ওনারা যেতেই মোতালেব প্রশ্ন করলো,
“এসব কি করে হলো জামাই?”

ইমতিয়াজ রাগান্বিতার দিকে তাকালো মেয়েটার চোখ ছলছল করছে। ইমতিয়াজ দৃষ্টি সরালো মোতালেবের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি জানি না কে করলো। কিছুক্ষণ আগে আমি বাড়ির দিকেই ফিরছিলাম রাস্তায় হঠাৎই কে জেনো সামনে এসে ভাড়ি কিছু দিয়ে কপালে আঘাত করলো। আমি বুঝে ওঠার আগেই পালিয়ে গেল রাস্তায় অন্ধকার থাকায় আমি তার মুখ দেখতে পায় নি। তবে মনে হয় গায়ে চাদর জড়ানো ছিল।”

এবার যেন রেজওয়ানের খটকা লাগলো তার সাথেও তো এমন ঘটনা ঘটেছিল। তবে কি সেই চাদর পড়া ব্যাক্তিটি ইমতিয়াজকেও আঘাত করলো। কিন্তু কেন! যদিও তাকে আঘাত করার কারণটাও আজও জানে নি রেজওয়ান।’

ইমতিয়াজের কথা শুনে চিন্তিত হলেন রাগান্বিতার বাবা। এর আগে রেজওয়ানের সাথেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। কে যে পিছন থেকে আঘাত করছে কে জানে। রাগান্বিতার বাবা ভাবছেন মেয়ে জামাইকে এখানে বেশিদিন রাখাটা বোধহয় ঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং কালই এরা চলে যাক। রাগান্বিতার বাবা কিছু বলবেন তার আগেই রাগান্বিতা বললো,
“বাবা তুমি অনুমতি দিলে আমরা কালই চলে যাই। কবিরাজ দাদু তো বললেন ওনাকে শহরের ডাক্তার দেখালে ভালো হবে।”

রাগান্বিতার বাবা বুঝলেন। নির্বিকার হয়ে বললেন,
“হুম তাই করো। সাবধানে থেকো।”

শেষের কথাটা ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললেন মোতালেব তালুকদার। অতঃপর রাগান্বিতার বাবা উঠে দাঁড়ালেন কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে গেলেন কক্ষ থেকে রেজওয়ানও তার পিছু পিছু গেল। একটু এগিয়েই বাবার মুখোমুখি হয়ে বললো,
“বাবা এবার আমাদের বিষয়টা খুঁটিয়ে দেখা উচিত। আমার মনে হচ্ছে আমায় আর ইমতিয়াজকে আঘাত করা ব্যক্তিটি একজনই।”

রাগান্বিতার বাবা ছেলের কথার গুরুত্ব দিলেন কাঁধে হাত দিয়ে আশ্বাস দিয়ে বললেন,“দেখছি।
—–
কক্ষে দাদিমা ইমতিয়াজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,“চিন্তা কইরো না সব ঠিক হইয়া যাইবো।”

উত্তরে শুধু শুঁকনো হাসলো ইমতিয়াজ। দাদিমা বেরিয়ে গেলেন ইশারায় রাগান্বিতাকে বুঝালাম নাতজামাইর খেয়াল রাখতে। সবাই চলে যাওয়ার পরও রাগান্বিতা বেশ কিছুক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। ইমতিয়াজ দৃষ্টি রাখলো রাগান্বিতার দিকে। শীতল সুরে বললো,
“বউ,

রাগান্বিতা জবাব দিলো না সে এগিয়ে গিয়ে নিজেদের কক্ষের দুয়ার দিলো। তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো ইমতিয়াজের দিকে। পুরোটা সময় রাগান্বিতার দিকেই তাকিয়ে ছিল ইমতিয়াজ। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের কাছ দিয়ে বসলো। কপালে হাত ছুঁয়ে বললো,
“খুব জ্বলছে তাই না।”
“একটু।”
“আপনি এতো রাতে বাহিরে কেন গিয়েছিলেন?”
“মোকলেসের সাথে কথা বলতে।”
“এই রাতের বেলা।”
“ও ডেকেছিল।”
“কেন?”
“বললে তুমি রাগ করবে।”
“করবো না বলুন।”
“তুমি রাগ করবেই।”
“বললাম তো করবো না বলুন,
“তাস খেলা দেখতে।”

সঙ্গে সঙ্গে রাগান্বিতা রেগে উঠলো। উচ্চস্বরে বললো,
“আপনি এই রাতের বেলা তাস খেলতে গেছিলেন।”
“উম না খেলতে নয় শুধু দেখতে আমি ওসব খেলি না।”

রাগান্বিতা রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো আয়নার কাছে যেতে যেতে বললো,
“আপনি কি পাগল এই রাতের বেলা তাস খেলা দেখতে গেছিলেন।”
“তুমি বলেছিলে রাগ করবে না তাও করছো।”

রাগান্বিতা একে একে তার গায়ের অলংকার খুলতে লাগলো। তীক্ষ্ণ স্বরে সুধালো,
“আপনি বলুন এটা কি রেগে যাওয়ার মতো কথা নয়।”

ইমতিয়াজ মাথা নিচু করলো অপরাধী সুরে বললো,
“ভুল হয়ে গেছে, এমনটা আর হবে না। আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কখনো ওসব দেখতে যাবো না।”

রাগান্বিতা মনে মনে খুশি হলো নিজের খোঁপা করা লম্বা চুলগুলো খুলে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে বেনুনী করলো। ইমতিয়াজ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখলো তা। কেমন যেন নেশালো গলায় শুধালো,“তুমি এত সুন্দর কেন বউ?”

ইমতিয়াজের নেশা লাগানো কথাটা কানে বাজতেই কেমন এক শীতল হাওয়া বয়ে গেল রাগান্বিতার মাঝ দিয়ে। সে এগিয়ে আসলো পালঙ্কে বসলো। ইমতিয়াজের চোখে চোখ রেখে আদুরে গলায় বললো,
“আপনার চোখ দুটো সুন্দর তাই সুন্দর লাগে।”

ইমতিয়াজ হাসে। বলে,
“তোমাকে দেখতে দেখতেই কবে যেন আমি পাগল হয়ে যাই।”
“উম! মিষ্টি মিষ্টি কথাতে রাগান্বিতা কিন্তু ভুলবে আজ আপনি অন্যায় করেছেন আমায় না বলে তাস খেলা দেখতে গেছেন।”
“তুমি ঘরে ছিলে না তার জন্যই তো।”
“আমায় ডাকা যেত না।”
“ডাকলে আমায় যেতে দিতে বুঝি।”
“অন্যায় করে মুখে মুখে তর্ক করা ঠিক না।”
“আমায় কি ক্ষমা করা যায় না?”
“ঠিক আছে করে দিলাম তবে আর যেন এই ভুল না হয়। এবার ঘুমিয়ে পড়ুন। মাথা ব্যাথা করছে নিশ্চয়ই।”
“তুমি আমার পাশে থাকলে এসব ব্যাথা আমার অনুভব হয় না বউ।”

আচমকা কেঁদে ফেললো রাগান্বিতা। ইমতিয়াজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল এতে। বললো,
“আরে আরে তুমি কাঁদছো কেন?”
“আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম জানেন,
“কি ভেবে ছিলে মরে…

কথাটা শেষ করতে পারলো না ইমতিয়াজ তার আগেই ইমতিয়াজের মুখ চেপে ধরলো রাগান্বিতা। বললো,
“এভাবে বলবেন না। আপনি কেনো বুঝেন না আপনার এসব কথায় আমার বড্ড আঘাত লাগে, যন্ত্রণা হয়।”

ইমতিয়াজ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু রাগান্বিতার চোখের দিকে। মেয়েটা দিনে দিনে তার প্রতি বড্ড আবেগী হয়ে যাচ্ছে। এটা কি ঠিক হচ্ছে! ইমতিয়াজ মনে মনে আওড়ালো,“আমায় এতো ভালোবেসো না বউ, কখনো বড় আঘাত দিলে সইবে কেমন করে।”

#চলবে…

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-২৭
________________
সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে পুরো কক্ষ জুড়ে। রাতের আকাশের জোৎস্না ভরা আলো ছুঁচ্ছে খুব করে। পালঙ্কে চুপচাপ শুয়ে আছে ইমতিয়াজ। তার পাশে রাগান্বিতা বসা। কথা নেই কারো মুখে। রাগান্বিতা ইমতিয়াজের ক্ষত স্থানে হাত ছোঁয়ালো। বললো,
“কেন যে আপনি যেতে গেলেন বাহিরে?”

ইমতিয়াজ চুপ সে নির্বিকার ভংগিতে আস্তে করে তার মাথাটা রাগান্বিতার কোলে রাখলো শীতল সুরে বললো,
“মাথায় হাত বুলিয়ে দেও বউ বহুদিন কেউ হাত বুলায় না।”

রাগান্বিতা একটু দোনামনা করলো। বললো,
“আপনার ব্যাথা লাগলে?”
“লাগবে না।”

রাগান্বিতা শুনলো আস্তে আস্তে ইমতিয়াজের চুলগুলোতে বিলি কাটতে লাগলো। ইমতিয়াজ রাগান্বিতার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। খুব আদুরে সুরে বললো,
“একটা গল্প শুনবে বউ?”

রাগান্বিতা তখন শীতল অনুভূতিতে পঞ্চমুখ। চোখ বন্ধ করছিল আচমকাই। ইমতিয়াজের স্পর্শ বরাবরই তাকে ভিন্ন রকম অনুভূতি দেয়। সে চোখ খুললো। বললো,
“জি বলুন,

ইমতিয়াজ তার চোখ বন্ধ করে শান্ত স্বরে বলতে লাগলো,
“এক দেশে এক রাজা ছিল তার ছিল দুই বউ। বড় বউয়ের কোনো সন্তান ছিল না। সে ছিল একটু বোকা টাইপের যে যা বলতো তাই বিশ্বাস করে নিতো, এক কবিরাজ ছিল সে বলেছিল রানীর দোষেই নাকি রাজা কখনো বাবা হতে পারবে না। রানী ভেঙে পড়ে রাজাকে বললো আরেকটা বিয়ে করতে। রাজা প্রথমে রাজি না হলেও পরবর্তীতে রানীর চাপে পড়ে বিয়ে করেন। নিয়ে আসেন অসম্ভব সুন্দরী এক রানীকে। রানী দেখতে যত সুন্দর ছিল মনটা ছিল তার চেয়েও বিষে ভরা। পরে জানা যায় কবিরাজের মেয়েই ছিল রাজার দ্বিতীয় রানী। রাজা বুঝতে পারে নি দ্বিতীয় রানীর ভিতরে কি চলছে। রাজা বিয়ে করার দু’সপ্তাহের পরই জানা গেল রাজার প্রথম স্ত্রী মা হতে চলেছেন। রাজপ্রাসাদ জুড়ে সে কি উৎসব। মাতামাতি, রাজা তো খুব খুশি। রাজা রানীকে বোঝালেন তুমি খামোখায় আমায় আরেকটা বিয়ে করালে। কিন্তু রানীর কোনো আফসোস ছিল না এতে সে রাজার দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসতেন। কিন্তু রাজার দ্বিতীয় রানী সেভাবে বাসতে পারলেন না। রানীর এত আনন্দ সে দেখতে পারতো না। কিভাবে রাজার সন্তান সম্ভবা বউকে মেরে ফেলবে সেই ফন্দি আটতো। কিন্তু সফল হতে পারলো না একবারও। দেখতে দেখতে রাজার প্রথম রানীর সন্তান হলো একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান। সবাই বলতে লাগলো ছেলে নাকি হুবহু রাজার মতো দেখতে হয়েছে। এ কথা শুনে রাজার দ্বিতীয় রানী ক্রোধে ফেটে গেল রাজপ্রাসাদের এত সুখ তাও আবার রাজার প্রথম রানীকে নিয়ে তার সহ্য হলো না। ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক হলো ক্ষিপ্ত। সে ফন্দি আটলো রানীর খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলবে। তার সন্তানকে গলা চেপে মেরে ফেলার ফন্দি আটলো। কিন্তু তাতেও অসফল হলো। তখন রাজাকে বোঝালো রানীর সন্তান তার নয় অন্যকারো। সে নাকি প্রায়শই রাজার প্রথম স্ত্রীকে রাতের আধারে বাহিরে যেতে দেখতো। প্রথম প্রথম এ কথা রাজা বিশ্বাস না করলেও পরে সত্যি সত্যিই একদিন রাতের আধারে প্রথম রানীকে বাহিরে যেতে দেখে রাজা ক্ষিপ্ত হলো। প্রথম রানীকে তিনি ভালোবাসতেন খুব কিন্তু কথায় বলে না,“সব সম্পর্কেই তৃতীয় ব্যক্তিটি খুব ভাগ্যবান হয়। এখানেও তাই হলো।”

ইমতিয়াজের গলা আঁটকে আসলো। রাগান্বিতা নিশ্চুপে প্রশ্ন করলো,
“তারপর কি হলো?”
“রানীকে নির্যাতন করা শুরু করলো তার ওতটুকু সন্তানকেও ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলো রাজা। বিষ খাওয়ার ফন্দি করার কথা বললে রাজা রাজি হয় না। বলে এভাবে মেরে দিলে তার নাকি শরীরের জ্বালা মিটবে না। রাজা প্রায়শই প্রথম রানীর সাথে ঝগড়া করে। রানী এত বলে সে রাতে কারো সাথে দেখা করে নি তাও রাজা বিশ্বাস করে না। সেদিন রাতে তাদেরই কাজের লোক মজনু নামের এক লোকের সাথে দেখা করে সে বলে তার মা খুব অসুস্থ তাকে যেতে হবে রানী বিশ্বাস করে কিছু পয়সা কড়ি গুজে খানিকটা এগিয়ে দেয় তখনই রাজা দেখে। পরে মজনুকে ডাকা হলে উল্টো কথা বলে,প্রথম রানীর নামে আগে বসে যায় চরিত্রহীনের দাগ। রানীকে করা হলো এক ঘরে। রানী ধরতে গেলে এতিম ছিল বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করে ছিল রাজাকে। রানীর বাবা এটা মেনে না নিয়ে ত্যাগ করলো তার কন্যাকে। তাই কোথাও যাওয়ার মতো জায়গা ছিল না। রাজপ্রাসাদেই পড়ে রইলো সন্তানকে নিয়ে।

সময়ের সাথে সাথে ছেলে বড় হয়। কিন্তু রানীর প্রতি অত্যাচার কমলো না। রানীকে অর্ধনগ্ন করে মারতো তারই ছেলের সামনে। এত জ্বালা রানী আর সহ্য করতে পারলো না সে ছেলের মায়া ত্যাগ করে বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করলো। ছেলে কাঁদলো তার জন্য কিন্তু রাজা সে যেন খুব খুশি হলো। এরপর শুরু হলো রানীর সন্তানের উপর অত্যাচার। রাজা আর রাজার দ্বিতীয় রানী দুজন মিলে মারতো, ঠিক মতো খেতেও দিতো না,কনকনে শীতেও খালি গায়ে শুয়ে কাঁপতো ছেলে। সে যে কি যন্ত্রনার বলে বোঝানো যাবে না। তাও সহ্য করতো। এতিম ছেলে কোথায় যাবে তাই কষ্ট সহ্য করেই রাজপ্রাসাদে পড়ে থাকতো। বাবা থাকতেও তার অধিকার ছিল না তাকে বাবা ডাকার। রাজার ছেলে মেনে নিলো। এরই মধ্যে রাজার দ্বিতীয় রানীর মেয়ে সন্তান হলো। সবাই খুশি হলো। রাজা দিনরাত পার করে সেই সন্তানের সেবা করতো। আর ছেলে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতো। ভাবতো তাকেও কবে তার বাবা এভাবে আদর করবে কিন্তু করতো না। তারপর ছেলে একদিন সিদ্ধান্ত নিলো সে আর রাজার প্রাসাদে থাকবে না তাই পালিয়ে আসলো ওখান থেকে। শুরু করলো নতুন জীবন। একার জীবন। একার জীবন খুব সুখের হয় তাই না বউ?”

রাগান্বিতার চোখ ভেসে উঠলো। দু’ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়লো ইমতিয়াজের গালে। ইমতিয়াজ বুঝলো সে রাগান্বিতাকে ছেড়ে চাইলো রাগান্বিতার মুখের দিকে। বললো,
“তুমি কাঁদছো?”

রাগান্বিতা নির্বিকার স্বরে বললো,
“রাজার ছেলেটা আপনি ছিলেন তাই না?”

ইমতিয়াজ জবাব দেয় না। তবে রাগান্বিতা ইমতিয়াজের চোখ দেখেই বুঝলো সবটা। যে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইমতিয়াজকে। চোখে মুখে ঠোঁট ছোঁয়ালো বারংবার। বললো,
“জীবন খুব ব্যাথা দিয়েছে আপনায় তাই না।”

ইমতিয়াজ মৃদু হাসলো। বললো,
“মাত্র যে তুমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলে এতবার ভালোবাসার পরশ দিলে এতেই সব ব্যাথা কমে গেছে আমার।”

রাগান্বিতা তার চোখের পানি মুছলো। ছলছল নয়নে বললো,
“আপনায় আর কোনোদিন ব্যাথা পেতে দিবো না আমি। দেখবেন আমরা এখন থেকে খুব সুখে থাকবো। গুছিয়ে একটা সুন্দর সংসার গড়বো।”

ইমতিয়াজ কিছু বলে না। সে থাকে চুপচাপ। চেয়ে চেয়ে দেখে শুধু রাগান্বিতার পাগলামি, বার বার পলক ফেলার মুহুর্তটা। হঠাৎই রাগান্বিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ইমতিয়াজ,
“এই যে আমি প্রতিনিয়ত তোমায় দেখছি, তোমাতে হারিয়ে যাচ্ছি, অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে ,নিজের সর্বনাশ দেখতে পাচ্ছি এটাকে কি প্রেম বলে না।”

রাগান্বিতা থমকে গেল। ইমতিয়াজ কি তার প্রেমে পড়ার কথা বললো। রাগান্বিতা কোনো প্রশ্ন করলো না। ইমতিয়াজ আবার বললো,
“আমি ভেবেছিলাম তোমায় ভালোবাসবো না কিন্তু আজ দেখছি তোমায় ভালো না বেসে থাকা যাবে না।”

রাগান্বিতা লাজুক হাসলো। নতুন করে আবার যেন প্রেমে পড়লো ইমতিয়াজের। লোকটা ভাড়ি বদমাশ। তাকে লজ্জায় না ফেলে ছাড়বে না। ইমতিয়াজ আর একটু লজ্জা দিতে বললো রাগান্বিতাকে,
“তোমাকে লজ্জায় পড়তে দেখলে না আরো দারুণ লাগে বউ।”
“আপনি এবার থামুন তো।”
“না থামবো না কাছে আসো চুমু দিবো।”

খানিকটা কেঁপে উঠলো রাগান্বিতা। বললো,
“না লাগবে না।”

ইমতিয়াজ চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
“বারে তুমি যদি আমায় হুটহাট চুমু দিতে পারো আমি দিলে লাগবে না কেন?”

রাগান্বিতা কিছু বলে না। সে চুপ করে থাকে। লোকটা বুঝি আজ লজ্জায় ফেলেই মেরে ফেলার ফন্দি আটছে। ইমতিয়াজ হাসলো। মনে মনে আওড়ালো,“তোমার লাজুক মুখে এত বেশি মায়া কেন বউ, আমি বুঝি সত্যি সত্যিই পিছলে গেলাম। মরণ দুয়ারে বোধহয় পা বাড়ালাম।”
—–
ফজরের ধ্বনি শোনা গেল রাগান্বিতা আস্তে করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ইমতিয়াজকে উঠাবে ভেবেও আবার উঠালো না। রাগান্বিতা কক্ষ থেকে বের হলো, সোজা চলে গেল কলপাড়ে সেখানে দাদিমাও ছিলেন। বাবা আর রেজওয়ান বেরিয়ে গেলে মসজিদের উদ্দেশ্যে।

রাগান্বিতা ওজু করে নামাজ আদায় করলো। ইমতিয়াজের জন্য দু’হাত তুলে দোয়া চাইলো আল্লাহর দরবারে। ইমতিয়াজ তখনও ঘুমিয়ে ছিল মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে তার। রাগান্বিতা কি ভেবে যেন নামাজ সেরে আবার কক্ষ থেকে বের হলো। সে সোজা চলে গেল কুহুর কক্ষে। রাগান্বিতা আর কুহুর কক্ষ ছিল আলাদা। রাগান্বিতার কেন যেন মনে হলো কুহুর কক্ষে গেলে সে জানতে পারবে কুহুর কার সাথে সম্পর্ক ছিল। কুহু ডাইরি লিখতে খুব ভালোবাসতো কে জানে হয়তো ডাইরির ভাঁজেই পেতে পারে কুহুর কিছু অজানা তথ্য।

#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ