প্রিয় রাগান্বিতা পর্ব-৪৮

0
350

#প্রিয়_রাগান্বিতা🩷
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🩷
পর্ব-৪৮(প্রথম অংশ)
________________
স্তব্ধ চারপাশ। ছ্যাত ছ্যাত শব্দ করে গাছের পাতা নড়ছে। রাগান্বিতা এখনও পাথর হয়ে বসে ইমতিয়াজকে বুকে জড়িয়ে। ঘন্টা দুই তো হবেই ইমতিয়াজ মারা গেছে। তার নিশ্বাস চলছে না। রবিন দুয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে, চোখ বেয়ে অজস্র পানি পড়ছে। শেষমেশ তাই ঘটলো পোলাডা যা ভাবছিল! রবিনের গোংরানির শব্দ কানে আসতেই রাগান্বিতা রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,“হুস কাঁদে না। আমার ইমতিয়াজের কিছু হয় নি।”

রবিনের অন্তর দিয়ে যেন আরো কঠিন ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। রাগান্বিতা কথাটা বলেই আবার কেঁদে ওঠে। নয়নে ভরা অশ্রু নিয়ে বলে,“চাচাজান আমার ইমতিয়াজ শেষমেশ মইরাই গেলো।”

ইস! কি যন্ত্রণাদায়ক লাগলো কথাটা রবিন চাচার বুকে। কি উত্তর দিবে তিনি রাগান্বিতার। মিনিট পাঁচ যেতেই পুলিশ আসলো। তারা ইমতিয়াজকে নিয়ে যাবে। রাগান্বিতা নিতে দিবে না। তার একটাই কথা, সে ইমতিয়াজকে নিতে দিবে না। কিন্তু পুলিশ শুনলো না রাগান্বিতাকে ছুঁতে যাবে। তার আগেই রবিন চাচা বারণ করলেন। তারা থেমে যায়। রবিনের বউ আসে রাগান্বিতাকে ধরে। পুলিশ টেনে ছিঁচড়ে ইমতিয়াজকে নিয়ে গেল। রাগান্বিতা চিৎকার দিয়ে কাঁদলো। বললো,“আমার ইমতিয়াজকে নিবেন না।”

রবিন কাঁদলো। তার বউও কাঁদলো রাগান্বিতাকে ধরে। রাগান্বিতা তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,“চাচি আম্মা আমার ইমতিয়াজরে রাইখা যাইতে কন!”

চাচি কি বলবে ভেবে পায় না। সময় গড়ায় ইমতিয়াজ চলে যায়। হঠাৎই বাতাসের ধাক্কায় টেবিলের উপর থেকে একটা চিরকুট পড়ে। যেখানে লেখা ছিল,“আমি তোমাকে খুন করতে এসে, নিজেই খুন হয়ে গেলাম বউ!”

রাগান্বিতা চিরকুট জড়িয়ে ধরে কাঁদে নিরালায় উঠে দাঁড়ায়। টেবিলের কাছে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। চাচা চাচি তখন নিচে। রাগান্বিতা ভাবে কাঁদছে কেন? তার তো কাঁদার কথা নয়। গত তিনটে দিন সে নিজেকে বুঝিয়েছে যাই হোক না কেন সে কাঁদবে না। অথচ সে কি না পাগলের মতো কাঁদছে। ইমতিয়াজ নেই ভাবতেই পারছে না। অথচ রাগান্বিতা এসেইছিল ইমতিয়াজকে খুন করতে। খুনটা তার করার কথা ছিল কিন্তু ইমতিয়াজ নিজেই নিজেকে মেরে ফেলেছে ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসছে রাগান্বিতার। রাগান্বিতা জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো। হঠাৎ তার চোখ যায় কালো রঙের ডাইরিটার দিকে। ইমতিয়াজের ডাইরি। রাগান্বিতা পৃষ্ঠা উল্টায়। একদম শেষের পৃষ্ঠায় লেখা থাকে। তোমার যত কৌতুহল, যত যা জানার ইচ্ছে সব আমি পাতাল সেই কক্ষে রেখে যাচ্ছি। সময় করে পড়ে নিও কেমন! এবারের মতো বিদায় বউ, তবে আমি চাইবো আমাদের আবার দেখা হোক। ভুল করে হলেও আমাদের আরেকবার দেখা হোক। এ জন্মে না হোক পরজন্মে। আমি জানি এ চাওয়ার কোনো অর্থ নেই। তবুও আমি চাইলাম। পাবো না জেনেও চাওয়ার মাঝে একটা শান্তি আছে। আমি সেই শান্তি নিয়ে গেলাম। তুমি খুব ভালো থেকো।”

ইতি,
~ তোমার নিষ্ঠুর এক প্রেমিক পুরুষ
“ইমতিয়াজ সিকদার”

রাগান্বিতা ইমতিয়াজের ডাইরিটা বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। তার আপন বলতে কেউ রইলো না। এ জীবনে তবে কি রইলো তার। কেউ না।”
—–
নিশিরাত। গা ছমছমে পরিবেশ তখন। ইমতিয়াজের পুরো বাড়িটা তখন নির্জীব। ইমতিয়াজ নেই, আর আসবেও না। রাগান্বিতার আর অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে না। কেউ ঘুম থেকে জাগিয়ে বলবে না ‘বউ, উঠো দ্রুত খাবে জলদি’। হঠাৎই রাগান্বিতার কি যেন মনে পড়লো ইমতিয়াজ তাকে সেদিন খাবার খাইয়ে দেয়ার রাতে কি যেন বলেছিল। একটু চিন্তা করতেই মনে পড়লো রাগান্বিতার ইমতিয়াজ তাকে বলে ছিল,শোনো না বউ কাল তোমায় একটা উপহার দিবো বিশেষ উপহার।”

কিন্তু সেই কাল তো আর এলো না কি দিতে চেয়েছিল ইমতিয়াজ। রাগান্বিতা উঠে দাঁড়ালো। নিজেকে কেমন যেন লাগছে। তার শরীরে এখনো ইমতিয়াজের গায়ের রক্ত মাখানো। রাগান্বিতা এলেমেলো পায়ে হেঁটে গেল বাহিরে। গায়ের গহনাগাঁটি সব এলেমেলো ভাবে পড়ে রইলো নিচে। খোঁপা চুল খুলে গেছিল। চাচি কোনোরকম বেনুনি করে দিয়েছে। রাগান্বিতা এলেমেলোভাবে চললো। সদর দরজা খুললো। চাচি দেখলো রাগান্বিতাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,“কই যাও?”

রাগান্বিতা এক নির্বিকার চোখে তাকায় চাচির দিকে। তবে কিছু বলে না নিজ মনে চলে যায়। চাচির বুকটা দক করে ওঠে সেই মিষ্টি স্বভাবের রূপসী মেয়েটা কেমন হয়ে গেল। বড্ড মায়া লাগছে চাচির। তিনি শাড়ির আঁচল মুখে চেপে কাঁদলেন।

রাগান্বিতা হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে সেই পাতালকক্ষের দুয়ারের কাছে। এই কক্ষই যেন তার পুরো জীবনটা তছনছ করে দিলো। কিন্তু কি করার সত্য তো সত্যই আজ নয় কাল তা প্রকাশ পেতই। কতকাল আর লুকিয়ে রাখতো ইমতিয়াজ। জোরে নিশ্বাস ছাড়লো। রাগান্বিতার আন্দাজ অনুযায়ী এই কক্ষ এখন খোলা। রাগান্বিতা নিচে বসে ডালপালা সরালো। ভাবা অনুয়ায়ী ছোট দুয়ারটা খোলাই পেল টেনে খুললো দুয়ার। বেশি কিছু না ভেবেই ঢুকে পড়লো ভিতরে। একটুও ভয় লাগছে না রাগান্বিতার সে সেদিনের মতো একটা মশাল হাতে ভিতরে ঢুকলো। অনুভূতি শূন্য, তবে জানার কৌতূহল অনেক। সেও তো জানতে চায় কেন ইমতিয়াজ এত কিছু করলো।

রাগান্বিতা সুরঙ্গের নিচে নেমেই বিশাল সেই কক্ষ আবার চোখ বুলালো। আজও চারপাশে আগুন জ্বলছে। নিভু নিভু আগুন। রাগান্বিতা পুরো জায়গাটাকেই উপেক্ষা করে ছুটে গেল টেবিলের কাছে। খোঁজার প্রয়োজন পড়ে নি আর টেবিলের উপরই দুটো সাদা খামে ছিল দুটো চিঠি। যার একটার উপরে লেখা ছিল প্রেমপত্র। অন্যটা ফাঁকা কিছু লেখা নেই। রাগান্বিতা বুঝে ফাঁকাটাতেই সব রহস্য লেখা। রাগান্বিতা কাঁপা কাঁপা হাতে সেই খামটাই হাতে নেয় আগে। স্তব্ধ হয়ে চেয়ারে বসে হাতের মশাল রাখে টেবিলের পাশেই লোহা দিয়ে তৈরি দেয়ালের সাথে আটকে রাখা চক্রের মতো একটা জিনিসে। নামটা ঠিক জানা নেই। রাগান্বিতা কাঁপা কাঁপা হাতে খাম থেকে চিঠিটা বের করলো। বড় বড় পুরো দুটো পৃষ্ঠায় এপিট ওপিট করে লেখা। বোঝাই যাচ্ছে অনেক বড় কাহিনী। রাগান্বিতা পড়া শুরু করে। যেখানে প্রথমেই লেখা ছিল,

“কোথা থেকে কি শুরু করবো বুঝতে পারছি না। শুরু থেকে শুরু করলেই বোধহয় ঠিক হবে। এটাকে ছোট খাটো জীবনের গল্পও বলা যায়। এক নিষ্ঠুর প্রেমিক পুরুষের গল্প। তার জন্মই হয়েছিল বোধহয় নিষ্ঠুরতার জন্য। তোমার কি মনে আছে রাগান্বিতা সেদিন রাতে তোমায় আমি একটা গল্প বলেছিলাম। এক রাজা আর তার দুই রানীর গল্প। সেই গল্পের শেষে আমি তোমায় বলেছিলাম রাজার ছেলে পালিয়ে আসে শুরু করে একার জীবন। কিন্তু সেই গল্পের শেষটা সত্যি ছিল না। রাজার ছেলে ফিরে তো আসে কিন্তু সঙ্গে নিয়ে একটি মেয়ে আর দুটো খুনের বোঝা। রাজার সেই দ্বিতীয় স্ত্রীর কন্যা তার নাম ছিল মৃন্ময়ী। আমি ওকে ডাকতাম মিনু বলে। আমার সৎবোন ছিল। সৎবোন হলেও একটা আশ্চর্যের বিষয় হলো মৃন্ময়ী আমায় ভালোবাসতো আপন ভাইয়ের মতো, সম্মান করতো বড় ভাইয়ের মতো। আমাকে যখন প্রায় রাতে খেতে দেয়া হতো না ও লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে আসতো আমার জন্য খাবার। প্রায় রাতে বায়না করতো। ভাইয়া আমায় তোমার কোলে করে রাতের চাঁদ দেখাবে। আমি দেখাতাম। এমন অনেক রাত গেছে বাড়ির সবাইকে লুকিয়ে আমরা রাতের আধারে বাহিরে ঘুরতে গেছি। কতশত আনন্দ করেছি। জীবন চলছিল, বাবার লাঞ্ছনা, সৎমায়ের অত্যাচার, এর-ওর কথা, মার, ক্ষুধার যন্ত্রণা তবে দিন শেষে বোনটার ভালোবাসা ছিল আমার একমাত্র বেঁচে থাকার কারণ। সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ একরাতে বোনটা হন্তদন্ত হয়ে কক্ষে এসে বললো,“ভাইয়া ওঠো আর ঘুমানোর প্রয়োজন নেই তুমি এক্ষুণি এখান থেকে দূরে কোথাও পালিয়ে যাবে।”

আমি হতভম্ব হয়ে যাই বোনের সেই কথা শুনে। আমি ভীতু স্বরে বলি,“কেন কি হইছে মিনু?”

ও তখন ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বলে,
“এত কথা বলো না ভাইয়া যা বলছি তাই করো।”
“কিন্তু আমি যামু কই?”

মিনু কি যেন ভাবে তারপর আমাকে নিয়ে যায় ওর কক্ষে। আমাকে লুকিয়ে রাখে ওর পালঙ্কের নিচে। আমি তিনদিন ছিলাম ওর পালঙ্কের নিচে লুকিয়ে। সেই তিনদিন সবাই খুঁজে আমাকে কিন্তু পায় না। কারণ কেউ ভাবতেও পারে না আমি মিনুর কক্ষে থাকতে পারি। সবাই ভেবে নেয় আমি পালিয়ে গেছি। পরে শুনেছিলাম সেদিন রাতে নাকি আমারই বাপ আর তার দ্বিতীয় বউ ফন্দি আটে আমায় খুন করার। আর তা আড়াল থেকে শুনে ফেলে মিনু। তিনদিন পর, মিনু বলে আমায় এক ভয়ংকর কথা, বলে,“শান্তি মতো বাঁচতে হলে খুন করতে হবে ভাইয়া। তুমি খুন করবা তোমার বাপরে আর আমি খুন করবো আমার আম্মারে। এরা দুজনেই খারাপ।”

সেই ১৪ বয়সী এক কন্যার মুখে এমন কথা শুনে আমি তো বিমোহিত। আমি খুব ঘাবড়ে যাই এতে। ও নিজের মাকে খুন করার কথা বলে। মিনু বয়সে ছোট হলেও তোমার মতো জেদি আর ন্যায়বান ছিল। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করতো না। ও সব শোনে ওর নানা আর ওর মা কিভাবে আমার মাকে ঠকিয়ে আমার বাবাকে বিয়ে করে। তার সাথে আমার মায়ের করা অন্যায় সব জানে। আর একটা কথা জানো আমার আম্মা আত্মহত্যা করে নি। তার খাবারে বিষ মিশিয়ে খুন করে আমার সৎমা। এটাও আমি মিনুর মুখ থেকেই শুনি। এ কথা শোনার পরই অজানা শক্তি পাই। সেই রাতেই বাবার রাজকীয় তলোয়ার দিয়ে খুন করে ফেলি বাবাকে। সে ছিল আমার জীবনের প্রথম খুন। আর মিনু খুন করে একসাথে ওর আম্মাকে। আমরা দুজন সে রাতেই কিছু সোনাগয়না টাকাপয়সা নিয়ে পাড়ি জমাই ঢাকাতে। কি করবো, কোথায় থাকবো কিছু জানি না। কিন্তু ছোট বোনটা আমায় সাহস দেয়। সঙ্গে বলে,“আজ থেকে আমরা খুব ভালো থাকবো ভাইয়া, তুমি আর কখনো কষ্ট পাবে না। আজ থেকে তুমি মুক্ত। আমরা ভালো থাকবো একসাথে আর কোনো দুঃখই আমাদের ছুঁতে পারবে না।”

এখান থেকেই মোড় নিয়েছিল আমাদের জীবন। আমরা ঢাকা এসে বাঁচার চেষ্টা করি। কখনো গাছের নিচে, কখনো বসতি ঘরে, কখনো ফুটপাতে। এমন কোনো কাজ নেই যা আমি করি নি। সোনাগয়না আনলেও সেগুলো বিক্রি করার সাহস হয় নি। কে কি ভেবে বসে। এটাও মিনুর কথা ছিল। ছোট ছিল। মানুষ কিভাবে নিতো। চুরি করে এনেছি এসব ভেবে না আবার জেলে ভরে দেয়। ধীরে ধীরে ঠিক হলো সবটা। ছোট বোনটাকে স্কুলে ভর্তি করি। ও পড়াশোনাতেও খুব ভালো ছিল। আমি পড়াশোনা করি নি। আমি সবসময় অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলতাম কিন্তু মিনু আমায় শিখিয়েছে, সব সময় শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবে ভাইয়া। রোজ রাতে ওকে স্কুলে যা পড়াতো ও সেগুলো আমায় পড়াতো। আমি ভার্সিটি,কলেজ কোথাও যাই নি। তবে এসবের পড়াশোনা আমি করেছি আমার বোন আমায় শিখিয়েছে। আমার বোনের ইচ্ছে ছিল সে বড় হয়ে ভালো কিছু করবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে।

জীবন চলছিল শুরুর দিকে বিষাদ থাকলেও পরে সব ঘুচে গেল। এর মাঝে দেখা হলো রবিন চাচার সঙ্গে উনি অত্যন্ত ভালোমানুষ আজ আমার যা হয়েছে এত বড়বাড়ি, ব্যবসা বানিজ্য সব ওনার জন্য। বাবার মতো স্নেহ করতেন আমায় আর মৃন্ময়ীকে। সব ঠিক ছিল। তবে হঠাৎ এসবের মাঝে ঘটে গেল এক ভয়ানক ঘটনা। আমার বোনের সাথে পরিচয় হয় তোমায় ভাই রেজওয়ান তালুকদারের। তারা একই ভার্সিটিতে ছিল। আমার বোন এক ক্লাস নিচে। তাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। এসব আমি কিছু জানতাম না। তারা গোপনে বিয়ে করে একসাথে থাকতো। বোনটা বিয়ের পরে জানে তোমায় ভাই ছিল নারীতে আসক্ত, সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র পাচারে নিযুক্ত। আমার বোনকে সে ভালোবাসে নি। শুধু ব্যবহার করে তার শরীরটাকে। তাও সে নিজে একা করে নি ভোগ করিয়েছে আরো অনেকজনকে।

রাগান্বিতার নিশ্বাস আঁটকে আসলো এগুলো সে কি পড়ছে। তার দাদাভাই এত ঘৃণ্য ব্যক্তি ছিল। রাগান্বিতা বিশ্বাস করতে পারছে না। রাগান্বিতা আবার পড়তে শুরু করলো,

“আমার বোন হঠাৎ ১০দিন যাবৎ নিখোঁজ হয়। খুঁজে পায় নি কোথাও। আমি দিশেহারা হয়ে পরি। দশদিন পর বিপদগ্রস্ত অবস্থায় তাকে পাই একটা ছোট্ট কুটির ঘরে। পুরোই পাগল। আমার বোনের পুরো শরীরটাকে গরম ছু*রি দিয়ে বহুবার আঘাত করা হয় তার পিঠেও চাবুকের আঘাত থাকে। কি নির্মম ছিল সেই দৃশ্য যদি তুমি দেখতে। আমার বোন এত সাহসী ছিল তাও তোমায় ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার জন্য হেরে গেল। মিনু সব জেনে যাওয়ার পর ফিরে আসতে চাইলেই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সমানে কয়েকজন মিলে গনধর্ষন চালায়। রাগান্বিতা খেয়াল করলো এখানে চোখের পানির জন্য ফুলে আছে পৃষ্ঠাটা। রাগান্বিতা বুঝেছে ইমতিয়াজ লিখতে লিখতে কেঁদে ফেলেছিল রাগান্বিতার রুহু কেঁপে উঠলো। এত নির্মম ছিল তার ভাই।

“সে ঘটনার দুইদিন পরই আমার বোন বিষ খেয়ে মারা যায় তার নিথর দেহের কথা ভাবলেই আমার কলিজা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় বউ, আমি নিতে পারি না। যন্ত্রনায় আমার সারা অঙ্গ বুঝি ঝলসে যায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেই ধ্বংসের পরিবর্তে ধ্বংস চাই। খুন নয় মানসিক যন্ত্রনা। আমি যে যন্ত্রণা পেয়েছি সেই যন্ত্রণা আমি দিতে চাই রেজওয়ানকে। তখনই রেজওয়ান সম্পর্কে সব জানি। জানার মাঝেই বেরিয়ে আসে রেজওয়ানের দুই বোনের নাম রাগান্বিতা আর কুহেলিকা। ক্রোধে ফেটে দুজনকেই মেরে ফেলার ফন্দি আঁটি আমি।”

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে