#হৃদয়ের_ঠিকানা
৭ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
কাইফের সেদিনের ঘটনার পর প্রায় তার সাথে ১৪ দিন কথা বলিনি। আসলে ১৪ দিন এই জন্য কথা বলিনি যে তার উপর রাগ। এই ঘটনার পর তার প্রতি একটা ঘৃনা জন্মে গেছিলো৷
সে যদি বলতো তার জন্য আমার জীবন দিয়ে দিতে হবে তবুও আমি ২য় বার ভাবতাম না। আর সে সামান্য একটা বিয়ের জন্য আমার সাথে এতো বড় নাটক করলো।
১৪ দিন সেও আমার সামবে আসেনি ঠিক মত। আমি মামীর কাছেই শুয়েছি এই দিনগুলোই। কিন্তু মামী আজকে তার বাবার বাড়িতে গেছে তাই কাইফ আমার দিকে নজর দিয়ে আছে। সে আমার সাথে কিছু বলতে চাচ্ছে, তার হাবভাব দেখে এটাই মনে হলো আমার।
আমিও কম যাইনা, তাকে পাত্তা দেওয়ার মত সময় বা মন আমার নেই। রান্না করে ডাইনিংএ রেখে আমি চলে এসেছি মামীর ঘরে৷ একটু পর কাইফ এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকলো। আমি আড় চোখে দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলাম।
সে বলে উঠলো,
– সাওদা তুমি। এক বালিশ বারবার ঝাড়ু দিচ্ছো কেন?
আমি চাইলেই ওর কথার উত্তর দিকে পারি কিন্তু আমার মোটেও সে ইচ্ছা নেই।
ওর সাথে কথা বলবোনা এই জন্যই যে এক বালিশ বারংবার মুছে চলেছি এটা কি ও বুঝতে পারছেনা! নাকি বুঝতে পেরেও আমার মুখ থেকে কথা শোনার জন্য এটা বলল। যায়হোক, এতো ভেবে কাজ নেই, আমি বরং বরাবরের মত বালিশ ঝাড়ু দিই। কিন্তু এবার এসে দরজা থেকে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার হাত চেপে ধরলো। আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই সে হাত সরিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। আমার চোখে চোখ রাখার মত শক্তি সে হারিয়েছে। এর মানেই হলো সে অপরাধী।
অনেক্ষণ পুতুলের মত চুপচাপ থেকে এবার আমি উঠতে উদ্দ্যত হলান। কিন্তু সে আমার পথা আগলে বলল,
– একটা ছোট্ট মিথ্যার জন্য তুমি আমার সাথে এমন করবে সাওদা? আমি কি পারিনা আমার ভালোবাসাকে পরীক্ষা করতে!
আমি অবহেলার শুরু বললাম,
– সরে দাড়ান আমি আমার ঘরে যাবো।
মামীর সাথে মিতু আপু চলে গেছে তাই আজকে আমি মিতু আপুর ঘরেই যাবো। এ কয়দিন মিতুর সাথে আমার ঘরে থাকিনি কারণ এই লোকটা এসে ন্যাকামো জুড়তো প্রতিদিন প্রায়। মামীর সামনে অবশ্য এটা করতে পারতোনা।
এখন বুঝতে পারছি মামীকে যেতে দেওয়ায় আমার ভুল হয়েছে। নতুন করে এখন এসব ন্যাকামো দেখা লাগতো না।
কাইফ আবার বলল,
– সাওদা দেখো, আমি তোমার সাথে তুমি বলে কথা বলছি। তুই বলা বন্ধ করে দিয়েছি। শুনেছি স্বামী-স্ত্রী তুমি সম্মোধন করলে সম্পর্কে ভালোবাসা বেসি থাকে। আমি তোমার কাছে মাফ চেতে চাই সাওদা। প্লিজ এবারের মত মাফ করে দাও। এমনতো না যে আমি অনেক বার ভুল করেছি তাই বারবার মাফ চাচ্ছি। একবার ভুলের মাফ তুমি করবেনা?
-হ্যা মাফ করবো। একদিন না একদিন আমাকে এসব ভুলতেই হবে। কারণ আমি আপনার সাথে পবিত্র সম্পর্কে বন্দী হয়ে আছি। তবে কবে মাফ করবো সেটা জানিনা। হয়তো মরার আগে আপনাকে মাফ করে দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবো।
আমার কথা শুনে কাইফ বেশ আহত হলো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। কিন্তু এবার সে যেটা করলো আমাকে সত্যিই চিন্তায় ফেলে দিলো। সে হুট করে আমার পা ধরার জন্য হাত বাড়ালো আমি তাড়াতাড়ি পিছিয়ে গেলাম। যাতে সে হাত না বাড়াতে পারে।
এবার যেন একটু রাগ বেড়েই গেলো। আমি বললাম,
– অন্যায় করে পা ধরবেন আর আমি মাফ করে দেবো? এতোটাও বোকা নই আমি। যারা পা ধরে নাফ চাইতে যায় তাদের উদ্দেশ্য কখনো ভালো হয়না।
সে বলল,
– সাওদা তুমি আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। আগে তুই বলতাম এখন তুমি বলতে শুরু করেছি, আগে তুমি আমার উপর রাগ করলে আমি কিছুই ভাবতাম না৷ কিন্তু দিন পাল্টেছে সম্পর্কও পাল্টেছে। তুমিতে যেমন ভালোবাসা বাড়ে তেমনি দুঃখিত, সরিতে সম্পর্কের মধ্যে ছোটো ছোটো দ্বিধা কেটে যায় এবং সম্পর্ক মজবুত হয়। শুধু একবার বিশ্বাস করো আমাকে।
আমি বললাম,
– আপনাকে আমি খুব বিশ্বাস করি। সেজন্য আপনার ক্যান্সার শুনেই সারারাত উপরওয়ালার কাছে চেয়েছি আপনি যেন সুস্থ হয়ে যান আর আমার যেন আপনার রোগ চলে আসে। কিন্তু আপনি কি করলেন। যেদিন আপনাকে আমি মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে শুরু করলাম সেদিনই আপনি এমন মিথ্যা বলে আমাকে কষ্ট দিলেন? কি হয়তো যদি আপনি মরে যাবেন ভেবে আমি ওই রাতেই নিজেকে শেষ করে দিতাম? কার উপর রাগ করতেন তখন, আমি মারা গেছি এজন্য আমার উপর নাকি আপনার জন্য মারা গেছি এ কারণে আপনার নিজের উপরই রাগ করতেন!
অনেক্ষণ দুইজনই চুপ থাকার পর আমিই বললাম,
– যান আপনাকে মাফ করে দিলাম। প্লিজ আপনি জীবন মরণ নিয়ে এমন মজা করবেন না। আমি হাত জোড় করে বলছি। আমার একটা মন আছে। আমি নির্দয়া নই। আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনাকে হারানোর কষ্ট যে কিভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলো সেটা শুধু আমি জানি আর আল্লাহ জানে।
কাইফ মাথা নিচু করে বলল,
– আমাকে একবার জড়িয়ে ধরবে সাওদা? তুমি সত্যিই আমাকে মাফ করে দিয়েছো কিনা আমার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে।
আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরবো এখনই! এটা কি সম্ভব নাকি? তাই আমি ওনাকে বললাম,
– আমাকে কিছুদিন সময় দিন প্লিজ। স্বাভাবিক হতেও তো কিছুদিন সময় লাগবে। এরপর আপনার সব চাওয়া পাওয়া আমি আমার সাধ্য মত পুরোন করার চেষ্টা করবো।
– সব মেনে নেবো তবে তুমি দয়া করে আমাকে আপনি বলে সম্মোধন করো না।
– সেটাও চেষ্টা করবো।
এই বলে আমার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। হয়তো কষ্ট ভুলে যাবো একদিন। তাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসবো। মনের সংকোচ দূর হওয়াও অনেক জরুরী।
গোসল সেরে বের হতেই দেখলাম কাইফ আমার খাটের উপর বাবু হয়ে বসে আছে। যেন মনে হচ্ছে ছোট্ট বাচ্চা কেবল বসা শিখেছে। নিজের হাসিকে কোনোরকম লুকিয়ে বললাম,
– মাফ করেছি বলে আদিখ্যেতা দেখাবেন সেটা কিন্তু আমি মেনে নেবোনা একদম।
– তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে সাওদা। তার আগে আমাকে তুমি বলো। সারাজীবন তো বলতে এখন হঠাৎ কি হয়ে গেলো?
– বলেছিতো সময় লাগবে। আর আপনি এখনই চলে আসলেন এখানে? রাতেও কি এখানেই শোয়ার প্লান করছেন নাকি? যদি তাই করে থাকেন তাহলে সেই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে নিজের ঘরে যান।
– আরে না। আগে আমার কথা শেষ করতে দাও। তুমি গোসল শেষ করলে, এখন আমরা একসাথে খাবো। তার আগে তোমার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ আছে।
– আপনার সারপ্রাইজ আমাকে কাদায়। আমি চাইনা আপনার সারপ্রাইজ।
কাইফ আর কথা না বাড়িয়ে আমার হাতে একটা পেপার দিলো। ডিভোর্স পেপার নয়তো? আমি ঢোক গিলে পেপারটা হাতে নিতেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো। কিন্তু সে খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না। আমি এখান থেকে যাবোনা কোথাও। ইংল্যান্ড কেন, আমেরিকাতেও যাবোনা। তাকে ছাড়া কোথাও গিয়ে আমি থাকতে পারবোনা।
আমার বিষন্নতা দেখে কাইফ বলল,
– তুমি তো সব সময় চাইতে বাইরে পড়াশোনা করবে কিন্তু এখন স্কলারশিপ লেটার পেয়ে এতো চিন্তায় কেন পড়লে?
– আমি এই বাসা ছেড়ে কোথাও যাবোনা। কখনো না৷ মামীকে ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি। আপনাকে। তোমাকে ছাড়াও আমি থাকতে পারবোনা কাইফ। আমার সমস্ত স্বপ্ন আমি শেষ করে দিতে শুধু তোমার ভালোবাসার স্পর্শ পাওয়ার জন্য। আমার জীবনকে অর্থহীন করে দিতে চাই তোমাকে প্রাপ্ত দেওয়ার জন্য।
কাইফ একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
– অন্যদের মত তোমাকে আমি বলবোনা যে যাও তোমার স্বপ্ন পূরণ করো। আমিও চাই তুমি আমার ছায়া হয়ে থাকো আজীবন। শুধু তোমার কাছে খবর টুকু পৌঁছে দিলাম।
সে আমার হাতে একটা চাবি দিয়ে বলল,
– এই চাবিটা তোমার কাছেই রাখো। এটা আমার লকারের চাবি। যেদিন তোমার ইচ্ছা হবে আমাকে বলবে, আমি তোমার যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দেবো। এই লেটারের এখনো তিন বছর মেয়াদ আছে। তোমার মন পাল্টাতেও তো পারে তাইনা!
– আমার মন কখনোই পাল্টাবে না। এটাই ফাইনাল। আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবোনা।
তবুও চাবিটা তুই রাখ। এমনিতেও কয়দিন পর তো আমার সব কিছুই তোর হবে।
,
,
বিঃদ্রকেও দয়া করে বলবেন না গল্পটা ছোটো হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় লিখলাম। আপনাদের অপেক্ষা করাতে ভালো লাগছেনা তাই কষ্ট করেও লিখলাম। এই গল্পের আর মাত্র দুই পর্ব বাকি আছে। আগামীকাল এক পর্ব দেবো আর মঙ্গলবার শেষ পর্ব দেবো ইনশাআল্লাহ, সব ঠিক থাকলে।
আর হ্যা পরীর কার মেয়ে সেই ব্যাখ্যাও দেওয়া হবে। আপাতত পরীকে ভুলে গল্পটা ইনজয় করুন। নাহলে গল্পের মজা হারাবেন। পরীর ব্যাখ্যা অবশ্যই দেবো।
কি মনে হয় সাওদা কেন কাইফ কে রেখে ইংল্যান্ডে চলে গেছিলো, আর কেই বা তাকে যেতে সাহায্য করছিলো!?। গেস করুন। পরীকে ভুলুন আপাতত। ধন্যবাদ।
চলবে..
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন