হৃদয়াক্ষী পর্ব-১৭(শেষ পর্ব)

1
1817

#হৃদয়াক্ষী
#পর্ব_১৭
#সারিফা_তাহরিম

উৎফুল্ল হয়ে মিফতার দিকে এগিয়ে গেল পূর্ণতা। দিনার মুখেও হাসি ফুটল তৎক্ষনাৎ। মিফতাও এক পা বাড়াবে সে সময় ব্যাথার কারণে পড়ে যেতে নিতেই একজোড়া পুরুষালি হাত তাকে আঁকড়ে ধরল। পূর্ণতা মিফতাকে ধরার জন্য দ্রুত তার দিকে যাচ্ছিল কিন্তু ব্যক্তিটিকে দেখে থেমে গেল। ধূসর রঙের টি শার্ট পড়া ব্যক্তিটি মিফতাকে সন্তপর্ণে সোফায় এনে বসাল। নিজেও অপর পাশের সোফায় গিয়ে বসল। সবাই চুপচাপ দেখল দৃশ্যটি। কোনো কথা বলল না। মিফতা বসার পর সবার দিকে নজর বুলিয়ে নিল। সবাইকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

‘কিরে, এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? মনে হচ্ছে আমাকে কখনো দেখিসনি বা বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য দেখছিস।’

ততক্ষণে পূর্ণতা দিনার পাশে এসে বসেছে। সে দিনার কানে বিরবিরিয়ে বলল,

‘বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্যই তো মনে হলো। দেখে মনে হচ্ছিল কাব্য ভাইয়া আর মাফিনের রোমান্টিক দৃশ্য। যারা সারাদিন ঝগড়া করতে থাকে তাদের এত কাছাকাছি থাকার ব্যাপারটা দেখলে তো অষ্টম আশ্চর্যই মনে হবে তাই না?’

দিনা ‘হুম’ বলে চাপা হাসলো। মিফতা ভ্রুযুগলকে আরও খানিকটা কুচকে বলল,

‘এই এই তোরা কী নিয়ে ফিসফিস করছিস বল তো? তোদের মতলব তো ভালো ঠেকছে না। কী নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিস বল তো?’

পূর্ণতা পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,

‘আসবি যখন আরেকটু তাড়াতাড়ি আসলেই পারতি। সারাজীবনই লেট লতিফ রয়ে গেলি। এই শাস্তিতে তোর সাথে কথা বলার প্রশ্নই আসে না। আমাদের মেহমানের সাথে কথাবার্তা বলতে হবে। তা, কেমন আছেন কাব্য ভাইয়া? অনেকদিন পর দেখা মিলল আপনার। আমাদেরকে তো ভুলেই গেছেন।’

কাব্য নামক সুদর্শন পুরুষ এক গাল হেসে বলল,

‘এই তো আছি বেশ ভালোই। তোমাদের কী অবস্থা? সবাই বিয়ে টিয়ে করে একদম ব্যস্ত হয়ে পড়েছ। একবার খোঁজও নাও না এই ভাইটার। আরও বলো, আমি ভুলে গেছি!’

পূর্ণতা মিফতার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

‘ভালো যে আছেন, তা তো আবহাওয়ার অবস্থা দেখে বুঝতেই পারছি। তা বয়স তো কম হলো না। আপনার ছোট বোনদের বিয়ে হয়ে গেল অথচ আপনি বিয়ে করলেন না! আপনার বিয়ে কবে খাচ্ছি সেটা বলেন।’

কাব্য মিফতার দিকে একবার বাঁকা চোখে তাকিয়ে নিয়ে আফসোসের অভিনয় করে বলল,

‘কি আর করার বলো! এতকাল ধরে অপেক্ষা করছিলাম আমার স্বপ্নের সেই নিষ্পাপ, শান্ত, কোমল সেই রাজকুমারীর জন্য। কিন্তু তার পরিবর্তে যে আমার মা আমার জন্য এমন এক ঝগড়াইট্টা মহিলাকে আমার বউ বানাতে চাইবেন তা তো জানা ছিল না। অদৃষ্টের লিখন না যায় খণ্ডন। এখন আমি চাইলেও আমার সেই স্বপ্নের রাজকুমারীকে বিয়ে করতে পারব না। আমার মতো সুপুরুষের কপাকে জুটবে এক ঝাগরুটে নারী। হায় আফসোস!’

মিফতা এবার গর্জে উঠলো,

‘এ্যাহ! ওরে আমার সুপুরুষ রে! যে মানুষ এখনো প্রতি শুক্রবারে ফুটবল খেলে এসে বালি আর কাঁদামাটি নিয়ে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়, মায়ের কাজ বাড়ায়, শান্তশিষ্ট মেয়ের সাথে ঝগড়া করতে থাকে সে নাকি সুপুরুষ। ভাই রে ভাই, তুমি যদি সুপুরুষ হও, তাহলে সুপুরুষদের তো এক বিন্দু পানিতে ডুবে মরে যাওয়া উচিত। আর আমার আম্মুও তোমাকে পছন্দ করেছে তাই বিয়ে করছি। নাহলে মার বয়েই গেছে তোমার মতো আজাইরা পাবলিককে বিয়ে করতে।’

কাব্য চোখ ছোট ছোট করে বলল,

‘ভাই কাকে বলো? কিছুদিন পর এঙ্গেজমেন্ট হলে আমি তোমার ফিয়ান্সে। তাহলে কিসের ভাই ডাকাডাকি?’

কাব্য-র কথায় দিনা আর পূর্ণতা ঠাট্টার সুর তুলে বলল,

‘ঘটনা এতদূর গড়ালো আর আমরা জানিই না! মাফিন আমাদেরকে বলতা তুমি, আর এখন নিজেই তলে তলে টেম্পু এ্যারোপ্লেন সব চালাইতেসো!’

মিফতা থতমত খেয়ে বলল,

‘আরে কী বলিস এগুলা! আমি কিছুই চালাই নাই।’

‘তাহলে এংগেজমেন্টের কথা জানালি না কেন?’

‘আরে ঐটা তো আম্মু গতকালকে আমাকে জানালো যে এই আপদের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চায়। বাবা আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে কিছুদিনের মধ্যে এংগেজমেন্টের ডেট ফিক্সড করবে। দিনার বিয়ের ঝামেলা শেষ হলেই জানাবো ভেবেছি। তাই বলা হয়নি।’

এভাবে তাদের মধ্যে টুকটাক কথা আর দুষ্টুমি চলতে লাগলো। একটু পরে অরিত্র তার মেয়ে অরুনিমাকে নাস্তা খাওয়ানো শেষ করে তাকে কোলে নিয়ে বসার ঘরে উপস্থিত হলো। পূর্ণতা অরিত্র আর কাব্যকে পরিচয় করিয়ে দিল। তাদের কথার রেশ আরও কয়েক ধাপ বাড়লো। কাব্য মূলত মিফতাদের প্রতিবেশী। সেই ছোটবেলা থেকে তারা একসাথে ছিল। তাদের দুই পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কাব্য মিফতার চেয়ে তিন বছরের বড় হলেও ছোট থেকে একসাথে থাকার কারণে তারা দুজন ছিল একে অপরের খেলার সাথী। ছোট থেকে কখনো ‘তুমি’ কখনো ‘তুই’ সম্বোধনে চলতে থাকতো অসংখ্য খুনশুটি। দিনা আর পূর্ণতাও কাব্যকে চিনতো আর তাদের বাসায় যেতো। সবসময় কাব্য আর মিফতার ঝগড়া তাদের চোখে আটকে থাকতো। এখনো অবধি তাদের প্রচুর ঝগড়া হয়। কিন্তু সবকিছুর অন্তরালে দুজনের মনেই এক অদ্ভুত মায়া কাজ করে। হারিয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে, খুব ব্যাকুলতা কাজ করে। মিফতার আম্মু তাঁর মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার কারণে খুব সহজেই মেয়েকে পড়তে পারেন। এই বিষয়টাও বোধগম্য হতে খুব একটা দেরি হলো না। একসময় দেখা গেল, দু পরিবারের ইচ্ছাই একই সূত্রে গাঁথা। তাদের সিদ্ধান্তে মিফতা আর কাব্য উপর থেকে দায় সাড়া ভাব দেখালেও মনে মনে ভীষণ খুশি।

বসার ঘরে আড্ডা জমে উঠেছে বেশ। দু জোড়া কপোত-কপোতী উপস্থিত থাকলেও নব বিবাহিত দিনার বর অনুপস্থিত। অরিত্র তা খেয়াল করে বলল,

‘ দু বান্ধবীর লাইফ পার্টনার উপস্থিত আছে। আরেকজন অনুপস্থিত থাকবে কেন? উনি আসলে আড্ডা আরও ভালো জমবে। কী বলো পূর্ণতা?’

‘ হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। কিন্তু উনি কোথায়?’

‘একটু বিজি ছিল। আমি দেখলাম কর্নারের রুমটাতে ফোনে কথা বলছে। আমরা যাওয়ার চেয়ে নববধূ গেলে ভালো হবে। শ্যালিকা, যান আপনার বরকে ডেকে নিয়ে আসুন।’

সবাই অরিত্রের কথায় সম্মতি জানালো। দিনা অস্বস্তিতে পড়ে গেল। যেতে ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু সবার বলার পরেও না গেলে বিষয়টা খারাপ দেখায়। তাই হাজারো দ্বিধা নিয়ে ভারি হয়ে আসা পা এগিয়ে দিল সেই রুমটার দিকে। দরজা হালকা ভেড়ানো। ভেতরে ঢুকবে নাকি ঢুকবে না এই নিয়ে হাজারবার ভেবে অবশেষে ঢুকেই গেল। খুব সাবধানে রুমে ঢুকল সে। শুভ্র রঙের পাঞ্জাবী পড়ে তার সদ্য বিবাহিত বর অপর পাশে ফিরে ফোনে কথা বলছে। কারও উপস্থিতি টের পেয়ে অপর পাশের ব্যক্তিকে বলল,

‘জ্বি আচ্ছা, আমি পরশু ফাইলটা রেডি করে পাঠিয়ে দিব। আমি পরে কথা বলছি।’

ফোন রেখে পেছনে ফিরল। এক পলক চোখাচোখি হতেই দিনা চোখ নামিয়ে নিল। তার চোখ পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নব বিবাহিত স্ত্রীকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইরাফ। এত বছর পর তাদের সাক্ষাৎ! তাও আবার একদম নিজস্ব মানুষ হিসেবে! কেউ কোনো কথা বলতে পারলো না। দিনার গলা কাঁপছে। ইরাফ নিরবতা ছাপিয়ে বলল,

‘এখনো ভুল বুঝে যাচ্ছো?’

দিনা কান্না সংবরন করে বলল,

‘সেদিন সবটা বললেই পারতেন। এতটা কষ্ট পেতে হতো না।’

ইরাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘সুযোগ বা ইচ্ছে কোনোটাই ছিল না। তোমার ভাইয়া আমাদেরকে একসাথে দেখে সন্দেহ করেছিলেন। একদিন খোঁজ নিয়ে যখন জানতে পারলেন তার সন্দেহটা ঠিক তখন তোমার বাবাকে নিয়ে আমার বাসায় গেলেন। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব বেশি উন্নত ছিল না তখন। বাবা মারা যাওয়ার কারণে আমারই সংসার চালাতে হতো। তোমার বাবা আর ভাই আমাদের অবস্থা দেখে শর্ত দিয়েছিলেন তোমার পড়াশোনা শেষ হওয়া অবধি আমি যদি একটা ভালো ক্যারিয়ার গঠন করতে পারি তাহলে তোমাকে আমার সাথে বিয়ে দিবে। আমার মায়ের তোমাকে ভীষণ পছন্দ হয়েছিল। তাঁরও জেদ চেপে বসে তোমাকেই ছেলের বউ করবে। আমি যদি ভালো ক্যারিয়ার গঠন করতে না পারতাম তাহলে তোমাকে হারাতে হতো। এই নিয়ে আমি খুব ভেঙে পড়েছিলাম। আমি চাইলে সেদিন তোমাকে বলতে পারতাম। কিন্তু তোমার বাবার আরেকটি শর্ত ছিল, তোমার সাথে বিয়ের আগে যেন আর কোনো সম্পর্ক না রাখি এবং প্রথম শর্তের ব্যাপারে যাতে তুমি না জানো। যেন আমার সাথে যদি তোমার বিয়ে নাও হয়, তবুও তুমি পরবর্তী জীবনে আমাকে ভালোবাসার কথা স্মরণ করে কষ্ট না পাও। এজন্যই বলা হয়নি।’

একটু থেমে ইরাফ আবারও বলল,

‘কথার মর্মার্থ প্যাঁচানো হলেও কথাগুলো মিথ্যে ছিল না। আসলেই তখনকার প্রেমকে প্রাধান্য দিতে গেলে আমি সারাজীবনের জন্য আমার মূল ভালোবাসাকে হারাতাম। আমার ক্যারিয়ারেই আমার সার্থকতা লুকিয়ে ছিল। আমার ক্যারিয়ারের সাথে তুমি জড়িয়ে ছিলে। আমার মায়ের ইচ্ছে জড়িয়ে ছিল। আমার সবচেয়ে বড় চাওয়া পাওয়া জড়িয়ে ছিল। এজন্যই সবকিছু ছেড়ে ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটেছি।’

দিনা শ্লেষাত্মক কণ্ঠে বলল,

‘আমি আসলেই বুঝতে পারিনি। আজ ভাইয়া আমাকে বলার পরে বুঝতে পেরেছি।’

ইরাফ আবেগ জড়ানো গলায় বলল,

‘এখন আর আগের মতো গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। অনুভূতিগুলো গাঢ় থেকে আরও গাঢ় হয়েছে। কিন্তু তা আর ঠিকঠাক প্রকাশ করতে পারি না। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করে অপরূপ প্রেমের পাহাড় গড়তে পারি না। আমার এই প্রেমহীন শহরে এক পশলা প্রেমে বৃষ্টি ঝড়াবে মেয়ে? আমায় তোমার জীবনে প্রবেশের অধিকার দিবে?’

দিনা কোনো কথা বলল না। ইরাফের বুকে মিশে গেল। অজস্র অনুভূতি মেশা অশ্রু বিসর্জন দিল। ইরাফও তাকে জড়িয়ে ধরল। অনেক সাধনার পরে মেয়েটিকে পেয়েছে সে। বুকের ভেতর সুখের এক চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। দিনা বলল,

‘প্রেমের শুরুটা তুমি করেছ, শেষটা নাহয় আমি করি? ভালোবাসার দায়িত্ব আমি নিলাম, আর তা অনুভব করার অধিকার তোমার।’

আরও কিছুক্ষণ একান্ত সময় কাটিয়ে তারা বসার ঘরে গেল। ছোট বেলার তিন বান্ধবী আর তাদের সুখের সংসার নিয়ে জমে ওঠা আড্ডার দৃশ্যটা সত্যিই নয়নাভিরাম।

___

অরুনিমাকে ঘুম পাড়িয়ে পূর্ণতা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। আজ অনেকদিন পর বান্ধবীদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিয়েছে। দিনার বাসা থেকে আসার পর দৃশ্যগুলো বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ছোটবেলার সেই তিন বান্ধবী আজ কত বড় হয়ে গেছে! প্রত্যেকেই সুখ দুঃখের সময় কাটানোর জন্য প্রিয়তম জীবনসঙ্গী পেয়েছে। জীবনসঙ্গীর কথা মনে হতেই পূর্ণতা ছয় বছর আগের স্মৃতির অতলে হারিয়ে গেল আবারও।

হুট করেই তার জীবনে এক অচেনা পুরুষের আগমন হলো। বাবার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে হলো। কিন্তু বাবা মায়ের ভুল বুঝার কারণে রাগটা সেই নির্দোষ মানুষটার উপর ঝাড়লো। কিন্তু ব্যক্তিটা একটাবারের জন্যও বিরক্ত হয়নি। বরং পূর্ণতাকে সময় দিয়েছিল। সর্বোচ্চ সম্মানটুকু নিশ্চিত করেছে সে। রাগটা কমতেই পূর্ণতা অনুতপ্ত হলো, মানুষটাকে বুঝতে শুরু করল। অবশেষে সেই ব্যক্তির প্রেমজালে ফেঁসে গেল! হালাল প্রেম।

পূর্ণতার পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাস পরেই তাদের রিসিপশন হয়। পূর্ণতা আর অরিত্র আরও কাছাকাছি এলো। অনুভূতিগুলো জোড়ালো হতে থাকলো। পূর্ণতার স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে ছিল প্রবল। এই ক্ষেত্রে অরিত্র আর তার পরিবারকে সবসময় পাশে পেয়েছে পূর্ণতা। তিন বছর পর পূর্ণতার কোল করে আসে ছোট্ট ‘অরুনিমা’। অরুনিমাকে পেয়ে তাদের খুশির অন্ত ছিল না। অরিত্র খুশি ছিল তার রাজকন্যাকে পেয়ে। পূর্ণতাও আল্লাহর কাছে চাওয়া জিনিস পেয়ে খুব খুশি ও কৃতজ্ঞ। সে সবসময়ই দোয়া করতো আল্লাহ যেন তাকে মেয়ে সন্তান দেয়। সে তার মেয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে চাপহীন জীবন দিতে চাইতো। সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাইতো অবিশ্বাস, চাপ, জোর দিয়ে মেয়েকে বড় করে তার কাছে যাওয়া যায় না, বরং দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তার মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করে সবাইকে এটাও শেখাতে চায়, মেয়েদেরকে অবজ্ঞা নয় বরং সম্মান করতে হয়।

পূর্ণতার বাবার ইচ্ছে ছিল পূর্ণতা একজন ভালো সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবে। পূর্ণতা তার বাবার ইচ্ছে পূরণ করেছে। সে আপাতত একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি চাকরি করে বেশ সফলতা অর্জন করেছে। এর পেছনে অরিত্রের অবদান অবর্ণনীয়। একটা সুন্দর পরিবার, একটা ভালো ক্যারিয়ার আর একজন ভালো জীবনসঙ্গী পেয়েছে সে। নামের মতো জীবনেও পূর্ণতা পেয়েছে সে। সে সবসময় স্বীকার করে,

‘আসলেই বাবা মায়েরা সবসময় সবকিছুর বিনিময়ে সন্তানের সর্বোচ্চ মঙ্গল কামনা করেন।’

পূর্ণতার ভাবনায় ছেদ পড়লো উষ্ণতার ছোঁয়ায়। অরিত্র পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখেছে। অরিত্রের গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে কেঁপে উঠলো পূর্ণতা। অরিত্র সেই স্নিগ্ধ কণ্ঠে বলল,

‘কী ভাবছো হৃদয়াক্ষী?’

‘তেমন কিছু না। এই ছয় বছরের স্মৃতিচারণ করছিলাম। ঘুমাবে না?’

‘তোমার কথার ছন্দপতনে আমার
রাত কাটে নির্ঘুম,
তোমার মাদকমন্ত্র আঁখিতে হয়
আমার অন্যরকম খুন!

আজ আমার হৃদয়াক্ষীর সাথে জোছনাবিলাস করব। একটু প্রেমালাপ করে, তোমার চোখে চোখ রেখে আরও একটা রাত্রিকে সাক্ষী করতে চাই।’

পূর্ণতা হাসলো। এই মানুষটার প্রতিটি কথায় প্রগাঢ় অনুভূতি হয় তার। ‘আমি চা নিয়ে আসি’ বলে নিজেকে ছাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে ধোঁয়া ওঠা চা নিয়ে অরিত্রের কাছে এসে দাঁড়ালো। বারান্দার দোলনাটায় পাশাপাশি বসলো দুজন। অরিত্র পূর্ণতাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল। পূর্ণতাও পরম আবেশে অরিত্রের কাঁধে মাথা রাখল। অরিত্র বলল,

‘এভাবে অজস্র জোছনা তোমার সাথে কাটাতে চাই হৃদয়াক্ষী। স্বপ্নের মতো অনুভূতি দিয়ে সাজানো থাকবে প্রত্যেকটা জোছনা। সাথে থাকবে এক পেয়ালা প্রেমের পরশ, এক চিমটি নেশা।’

___সমাপ্ত___

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে