হৃদপূর্ণিমা পর্ব-৩+৪

0
1105

#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ০৩ |

আমি ভাবীর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। ভাবী আর ভাইয়া ডিনার করছে। ভাইয়া একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে আর ভাবী? সে মাঝেমধ্যে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন আমায় চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে। আমি তাদের নাটক সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলাম,

-‘আমায় কী প্রয়োজনে ডেকেছেন বলুন নয়তো আমি চলে যাচ্ছি। এভাবে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয় না!’

-‘সাইফ, এতো রাতে তোমার বোন কই থেকে মেলা বাঁধিয়ে আসলো জিজ্ঞেস করো তো? আবারও কী পূর্বের ন্যায়?’

সাইফ মাঝপথে মার্জানকে থামিয়ে বললো,’চুপ করো তুমি!’

-‘বাহ! ভালো কথা বললেই দোষ হয়ে যায় নাকি তোমার বেশি ফাটে? এই রথি, সত্যি করে বল তো তুই কোথা থেকে ফিরলি?’

-‘সেটা নিশ্চয়ই তোমাকে বলবো না ভাবী? যার যার ব্যক্তিগত জীবন তার তার!’

মার্জান সটাং করে চামচটা রেখে কপাট রেগে বলে,

-‘ভুলে যাস না তুই আমাদের কারণেই ওই বাড়িতে থাকতে পারছিস!! আবার ব্যক্তিগত বাহিরগত বুঝাস আমায়?’

-‘ভুল বললে। আমি আমার বাবার বাড়িতে থাকি। তোমার এই ইটের আবর্জনায় নয়। আর নিজে উপার্জন করেই মায়ের চিকিৎসা করছি।’

-‘দেখেছো তোমার বোন আমাদের বাড়িকে ইটের আবর্জনা বলেছে? এসবের মানে কী সাইফ? তুমি কেন কিছু বলছো না?’

-‘ভাইয়া কী বলবে? তুমিই তো যা ইচ্ছা করছো। ভাইয়া যদি বলারই হতো তাহলে তাতানকে তো হোস্টেল পাঠাতে না?’

-‘মুখ সামলে কথা বল রথি! আমার ছেলের জন্য যেটা ভালো হয়েছে আমি সেটাই করেছি। আর আমার ছেলেকে নিয়ে বলার তুই কে? হু আর ইউ?’

আমার আর তর্ক করার ইচ্ছে হলো না। এই মেয়ের সাথে কথা বললে কথা বাড়বেই। ভাবী চরম রেগে আছে দেখে ভাইয়া তাকে সামলাতে সামলাতে আমায় হাঁক ছেড়ে বলে,

-‘বাড়ি যা রথি।’

আমি আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে পরলাম। ভাইয়ারা তিন তলায় থাকে। গ্রাউন্ড ফ্লোর ফাঁকা। ২য় তলায় কোন এক সময় আমরা ছিলাম, তবে এখন সেখানে ভাড়াটিয়া ঢুকিয়েছে ভাবী। ভাবী তো আমাদের সহ্যই করতে পারে না। তার এক কথা, শ্বাশুড়ি আর ননদ থাকলে খরচ বেশি লাগবে তাই সে আলাদা থাকবে। কিন্তু সাইফ ভাইয়া কিছুতেই আমাদের ছাড়তে চাচ্ছিলো না। এ নিয়ে ভিষণ ঝামেলা হয়। এসব ঘটনা ঘটে বাবা মারা যাওয়ার পরেই। মার্জান ভাবী বলেছে বাবা নাকি তাকে এই বাড়ি লিখে দিয়েছে ইভেন কাগজও দেখিয়েছে যেখানে বাবার নামের বড় বড় অক্ষরের সাক্ষরও ছিলো। সেই কাগজ দেখে মা অনেকটা অসুস্থ হয়ে যায়। ভাইয়া চেয়েছিলো মার্জান ভাবীকে ডিভোর্স দিতে কিন্তু তাদের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আমার মা। আমার মা সাইফ ভাইয়াকে কসম কাটিয়ে বলে,

-‘ভুলে যাবি না তোদের সন্তান আছে আর এই বাড়ি মার্জানের নামে লিখানো। তোদের সুখে যদি আমরা বাঁধা হয়ে যাই তাহলে আমরা আলাদা থাকবো। তাই বলে ওই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে মা/বাবা হারা হতে দিস না।’

এই বলে মা আমার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পেছনের দুইরুম ওয়ালা টিনের ঘরে নিয়ে যায়। ওখান থেকেই আমার আরেক জীবনের সূচনা হয়।

চোখের জল ভালো করে মুছে বাইরের একটা কল থেকে মুখ ভালো ভাবে ধুঁয়ে, ওড়না দিয়ে মুছতে মুছতে বাসায় আসলাম। ভেতরে গিয়ে দেখি মা ভাত বেড়ে আমার জন্য বসে আছে। আমি কোন কথা না বলে খেতে বসে পরলাম। মা আমায় জিজ্ঞেস করলো না কেন ভাবী ডেকে পাঠিয়েছে। সে ভাত বাড়তে বাড়তে বললো,

-‘কেমন বিয়ে বাড়িতে গেলি যে এত খেয়েও এখন আবার খিদে পেলো?’

-‘সন্ধ্যায় খেয়েছি মা তাও অল্প। এখন খিদে পেয়েছে তো। আর তোমার হাতের আলুর ভর্তার জন্য তো আমার পেট আজীবন খালিই থাকবে।’

আমি হালকা হেসে বলি। শেষোক্ত কথায় মাও হালকা হাসলো। এবার আম্মু হাত ধুঁয়ে এসে নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো,

-‘তাহলে নাফিসাকে বলতি আমায় রাঁধুনি করে নিয়ে যেতে!’

-‘আমার বিয়েতে তুমিই সব রাঁধবা!’

-‘পাঁজি। খা তো!’ বলেই আরেক লোকমা মুখ পরে নিলো। আমি খেতে খেতে পুরানো দিনগুলোর কথা ভাবছি, কোনো এক সময় ভাইয়া আর আমি ঝগড়া করতাম মায়ের হাতে খাওয়ার জন্য। মা আমাদের ঝগড়া না থামাতে পেরে দুজনকে একসাথে খাইয়ে দিতো। একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম,

-‘ভাইয়া, মা নামক মূল্যবান সম্পদের হেফাজত করতে তুই ব্যর্থ হলি রে। তোর এক বউ-ই সব তছনছ করে দিলো, সাথে সুখটাও কেড়ে নিলো। তবে আমি ভাগ্যবতি, মায়ের খেদমত করতে পেরে।’

-‘কী ভাবছিস?’

-‘কই কিছু না তো! খাবার দাও!’

-‘খাওয়া তো শেষ। আমি আমার আঁচল দিয়ে তোর মুখও তো মুছে দিলাম। তোর খেয়াল নেই? এর মানে নির্ঘাত কিছু ভাবছিস?’

ছোট্ট বিছানায় গিয়ে বসতে বসতে বললাম,
-‘নাফিসারা কতো বড়লোক সেটাই ভাবছিলাম। আল্লাহ আমায় এতো বড়লোক বান্ধুবি কেন দিলো, বলো তো মা?’

-‘হঠাৎ এ কথা বলছিস কেন?’

-‘জানি না। তবে এই “বড়লোক” শব্দটা কেন যেন সহ্য করতে পারি না!’

মা ঔষধ খেতে খেতে বলে,
-‘হয়েছে এসব কথা ছাড় আর ঘুমা। কাল তো তোর কোচিং-ও আছে নাকি?’

আমি আর কিছু বললাম না। শুয়ে পরলাম। মাও লাইট অফ করে আমার পাশে শুয়ে পরলো।

নাফিসা তার ভাবীকে নেওয়াজের ঘরে দিয়ে আসতেই নাশিদ বললো,

-‘অনেক তো খাটলি এখন ফ্রেশ হয়ে আয়।’

-‘যাচ্ছি ভাইয়া।’

বলেই নাফিসা চলে গেলো। নাশিদ এবং তার কিছু কাজিনরা মিলে নেওয়াজকে খেপিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দেয়। নাশিদ নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তার ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে যায়। গতকাল এমনেই যেতে পারেনি আর আজ সারাদিন ডিউটি করেনি। তাই আজকের রাতটা ডিউটি করে কাটাবে। থানায় যাওয়ার পূর্বে কী মনে করে সে নাফিসার ঘরে চলে গেলো। নাফিসা তখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। নাশিদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

-‘আসবো?’

নাফিসা দরজায় তার ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অস্ফুট সুরে বলে,

-‘আরে ভাইয়া! এসো, পারমিশন নেও কেন বুঝি না!’

নাশিদ মুচকি হেসে বিছানায় গিয়ে বসলো। নাশিদের গায়ে ইউনিফর্ম খেয়াল করতেই নাফিসা মুখ কালো করে ফেললো এবং গম্ভীর সুরে বলে উঠলো,

-‘সারাদিন খেটে এখন না ঘুমিয়ে চোরের পিছে দৌড়াবি।’

-‘কে বললো? অনেক ফাইলস জমা আছে। সেগুলো আমি ছাড়া কে চেক দিবে হু? বাদ দে, তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।’

-‘হুম বলো কি বলবে?’

-‘তোর বান্ধুবি রথির ব্যাপারে! ও এমন পুরাতন শাড়ি পরে এসেছিলো কেন? ওর তো থাকার জায়গা ভালোই!’

মুহূর্তেই নাফিসা মুখ গোমড়া করে বলে,’ওখানে ও থাকে না ভাই!’

-‘মানে?’

-‘ওটা ওর ভাবীর বাড়ি। আর রথির ভালো ড্রেস বা শাড়ি নেই তো তাই ওভাবে এসেছে। আসতে চায়নি আমি জোর করে আনিয়েছি। জানিস মেয়েটার জীবনে অনেক কষ্ট!’

নাফিসার থেকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই ওদের মা এসে হাজির হয় এবং নাশিদের উদ্দেশ্যে বললো,

-‘এই রাত-বিরেতে ভাইবোন মিলে কী গল্প করা হচ্ছে শুনি? আর নাশিদ! তুই ইউনিফর্ম পরে আছিস কেন? আবার কাজের ডাক পরেছে নাকি?’

-‘অনেকটা সেরকমই মা। যেতে হবে, আর্জেন্ট!’

-‘দেখো ছেলের কান্ড। পুলিশ হয়েছিস দেখে কী দিন-রাত ওই থানায় পরে থাকবি? নিজের দিকে খেয়াল করতে নেই বুঝি?’

-‘উফ মা, করতে হবেই তো নাকি? এতো চিন্তা করো কেন?’

-‘ঠিক আছে করবো না চিন্তা। নাফিসা, তাকে বলে দিস, না খেয়ে বাড়ির বাইরে এক পা রাখলেও তার পায়ে আগুন লাগবে, মারাত্মক আগুন!’

বলেই মা রেগে হনহন করে চলে গেলো। নাফিসা নাশিদের দিকে তাকিয়ে বলে,

-‘ভাইয়া মা ক্ষেপেছে। ভুলেও না খেয়ে বের হইও না নয়তো কপালে দুঃখ আছে।’

-‘খেয়েই যাবো, এখন আসি? তুই ঘুমিয়ে পর।’

বলেই নাশিদ লাইফ অফ করে বেরিয়ে গেলো। নিচে গিয়ে কাজের মেয়ে খাবার বেড়ে দিলে সেটা খেয়ে বেরিয়ে গেলো। মা আগেই রুমে চলে গেছেন তাই তাকে আর নাশিদ কিছু জানাতে পারেনি!

-‘হ্যাঁ গো শুনছো? তোমার এই ছেলেকে পুলিশ কী আমাকে ধরার জন্য বানিয়েছো?’

নাশিদের বাবা ফোন রেখে মনিকার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো,

-‘মানে?’

-‘নাহ কিছু না। তোমার ছেলেকে সিলেট থেকে টেনে এখানে জায়গা দেয়ার কী দরকার ছিলো হ্যাঁ? সেখানে মরতে গেছিলো মরতো তারে আবার ঘাড়ে চাপাতে গেলে কেন?’

নাশিদের বাবা কপাট রেগে বলে,
-‘মুখ সামলে কথা বলো মনিকা! আমার ছেলে এ-বাড়িতে থাকলে তোমার কী আসে যায়? আমার ছেলে নিজে কামাই করে, তোমার কামাইয়ে চলছেও না ফিরছেও না!’

-‘তাহলে তার খরচেই সে চলবে। আমার নেওয়াজের টাকার দিকে যেন ফিরেও না তাকায়!’

-‘তোমার সমস্যা কী হ্যাঁ? কেন নাশিদকে সহ্য করতে পারো না?’

-‘কারণ, নীলিমা মারা যাওয়ার পর থেকে তুমি আমার নেওয়াজকে দূরে সরিয়ে দিয়েছো। সারাদিন শুধু নাশিদ নাশিদ করো তুমি! আর আমিও হাঁপিয়ে গেছি ওর সাথে অভিনয় করতে করতে। নীলিমাকে কথা না দিলে নাশিদ আমার আসল দেখতো।

-‘নাশিদই তোমার সমস্যা, তাহলে নাফিসাকে কেন মাথা চড়িয়ে রাখো হু? নাশিদ আর নাফিসার মাঝে পার্থক্য কোথায়?’

-‘আমার মেয়ের সখ ছিলো সেটা তুমি ভালো করেই জানো, তাই নাফিসাকে নিজের মেয়ের মতোই রাখি। আর তুমি তোমার ঝামেলা সামলাও, নেওয়াজের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলেই আমি আমার বাপের বাড়ি চলে যাবো।’

বলেই নাশিদের বাবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মনিকা অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পরলো। আর নাশিদের বাবা করুণ চোখে একটা ছবির ফ্রেমের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো মেয়ে তার মৃত বোনকে নিয়ে এতটা ঈর্ষান্বিত হয় তা এই প্রথম দেখলো সে। মানুষ পরিবর্তনশীল। সময়ের ব্যবধানে চেনা মানুষ চোখের পলকেই অচেনা হয়ে যায়।

নাশিদ অফিস পৌঁছাতেই দেখলো তার এসিস্ট্যান্ট নয়ন দাঁত কেলিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নাশিদ তার এই হাসির মানে টা নাশিদ বুঝলো না। নাশিদ তার কপালে পরা চুল ঠিক করে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-‘কী ব্যাপার নয়ন এভাবে হাসছো কেন?’

নয়ন আবারও দাঁত কেলালো। নাশিদ নয়নের ভাব-গতি লক্ষ করতে করতে ঢেকে রাখা পানির গ্লাসটা নিয়ে পানি খেতে লাগলো। নয়ন তখনই দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো,

-‘আপনি এতো কিউট কেন স্যার?’

নয়নের এহেম কথায় কিছু পানি নাশিদের গলায় আটকে গেলো আর বাকিটা মুখে ছিলো যা নাশিদ ফ্রুত করে ফেলে দেয় এবং খাঁকখাঁক করে কাশতে থাকে। নাশিদের কাশি দেখে নয়ন দাঁত বন্ধ করে ঠোঁটজোড়া মিলিত করে ফেললো। মিনিটখানেক বাদে নাশিদের কাশি থামলো অতঃপর নয়নের উদ্দেশ্যে বললো,

-‘হোয়াট দ্য হেল নয়ন? এমন হুটহাট কথা বলো কেন যেসব কথার কোনো ভিত্তি নেই?’

-‘আমাকে বললো আপনাকে জিজ্ঞেস করতে তাই করেছি, স্যার!’ গোমড়ামুখে বললো নয়ন।

-‘কে?’

নয়ন এবার দাঁত বের করে উত্তর দিলো,’মেয়ে!’

এবার নয়নের কোন কথা নাশিদ কানে নিলো না। সে জানে নয়ন কাজের চেয়ে অকাজ করে বেশি। তার উল্টো পাল্টা বকবকে মন না দিয়ে বলে উঠলো,

-‘যেসব ফাইল জমা আছে সেগুলো নিয়ে এসো!’

-‘ওকে স্যার!’

বলেই নয়ন চলে গেলো। কিছুক্ষণ বাদে হাতে ২-৩টা ফাইল নিয়ে নাশিদের সামনে আসলো। নাশিদ ফাইল চেক করে ফেললো মাত্র তিনটা ফাইল তাও বেশি মোটা নয়। নাশিদ নয়নের দিকে তাকিয়ে বললো,

-‘তুমি না জানিয়েছো অনেকগুলো ফাইল? তো এখানে এই তিনটা কেন?’

-‘অনেকগুলো না বললে তো আপনি আসতেন না।’

-‘এগুলা তো এতো ইম্পর্টেন্টও না!’

-‘কমিশনার স্যার তো আজকের মাঝেই কাজ সারতে বলেছিলো।’

-‘জমা তো কালকে?’

-‘হ্যাঁ।’

-‘তো ফাইলগুলো আমার বাসায় পাঠানো যেত না?’

নয়ন মাথা চুলকাতে লাগলো। এদিকে নাশিদ চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে কপালে হাত লাগিয়ে চোখ বুজে রইলো। এর সাথে থাকলে তার পাগল হতে বেশি দেরী নেই! নয়ন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,

-‘তাহলে এখন কী করবো স্যার?’

-‘কিছু করা লাগবে না। বাসায় গিয়ে নাক টেনে ঘুম দাও!’

-‘আচ্ছা।’ বলে সত্যি সত্যিই নয়ন চলে গেলো।

নাশিদ তিনটা ফাইল নিয়ে নিজেও বেরিয়ে পরলো। রাস্তা দিয়ে ড্রাইভিং করতে যেতে যেতেই দেখলো অদূরে কিছু কালো মুখোশ পরা লোক এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা বাড়িতে ঢুকতে চলেছে। নাশিদ তার ফোর্সকে ইনফর্ম করে কোমড় থেকে রিভলবার হাতে নিয়ে হাই স্প্রিডে ড্রাইভ করে ওদের পিছে চলে আসে এবং জোরে জোরে হর্ন বাজাতে থাকে। ডাকাতগুলো দৌড়ে গাড়ির সামনে এসে খেকিয়ে বলে,

-‘আস্তে হর্ন বাজা শালা! নয়তো এই ছুঁরি দিয়ে তোর খুলি উড়ায় দিবো। আমাগো লগে মাতলামি করোস?’

হর্ন বন্ধ হয়ে গেলো। নাশিদ তার পেছন সিট দিয়ে আস্তে করে ডোরটি খুলে ডাকাতের মেইন লিডারকে পেছন থেকে গলা চেপে মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে বলে,

-‘আমি মাতলামি করি?’

ঘটনা এতই দ্রুত ঘটলো যে ডাকাতের চ্যালাগুলা বেক্কল বনে গেলো। অতঃপর তাদের হুঁশ ফিরলে তারা নাশিদের উপর ঝাঁপিয়ে পরার আগেই নাশিদ ওদের লিডারকে নিয়ে দূরে সরে গিয়ে বলে,

-‘উহুহু হু! এই ভুল একদম করতে যাবি না। আর এইযে শয়তানির মাস্টার(ডাকাতের প্রধান) তোর চ্যালাদের বল আমাদের থেকে দূরে থাকতে নয়তো আমি-ই তোরে গুলি করে খুলি উড়ায় দিবো!’

ডাকাত ভয় পেয়ে যায় এবং জলদি ওদের ইশারা করলো থামতে। এবার নাশিদ ডাকাত গুলোর উদ্দেশ্যে বললো,

-‘অস্ত্র নামা নয়তো তোদের বস এখানেই খতম।’

ডাকাতগুলো বসের ইশারায় অস্ত্রগুলোও নামিয়ে ফেললো। কিছুক্ষণের মাঝেই নাশিদের ফোর্স চলে আসে এবং সব ডাকাতকে অ্যারেস্ট করলো। নাশিদ এক ফোর্সকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-‘এই বাড়িতে কে থাকে এবং ভেতরে কারা বসবাস করছে তাদের ডিটেইলস বের করো। ফাস্ট!’

কর্মী তার আদেশ পেয়ে খবর বের করতে চলে গেলো। কিছুক্ষণ বাদে খবর নিয়ে এলো এই বিল্ডিং এ কেউ-ই থাকে না। মালিকের নাম আর ডিটেইলস এর একটা ফাইল নাশিদের হাতে ধরিয়ে দেয়। নাশিদ সবটা চেক করতে করতে বললো,

-‘তালা ভাঙ্গো ভেতরে তল্লাশি চালাতে হবে।’

বলেই সে ফাইল রাখলো। এই মালিককে সে বেশ ভালো করেই চিনে। ইতিমধ্যে আশেপাশের মানুষজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিকে এসেছে। কিছু ফোর্স তাদের জিজ্ঞেস করেছে এই বাড়ি থেকে কাউকে আসতে বা যেতে দেখেছে কি না। কিন্তু কেউই দেখেনি। তবে একজন বলে উঠলো,

-‘একদিন রাতে কালো কাপড় পরা কিছু লোককে দেখেছিলাম খুবই সাবধানে ওই বিল্ডিং এ ঢুকতে। কিছুক্ষণ পরে একটা ভ্যান আসলে কিসব ওই বিল্ডিং এর থেকে বের করে ভ্যানে ভরছিলো।’

নাশিদ পাশ থেকে সবটা শুনতে পেরে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বললো,

-‘তাহলে পুলিশকে আগেভাগে ইনফর্ম করোনি কেন?’

-‘বাবা-মা নিষেধ করেছিলেন, বলেছিলো এসবে আমি ঝামেলায় পরতে পারি তাই আর যেতে দেয়নি!’

নাশিদ বুঝলো এবং বললো, “তোমায় ধন্যবাদ। তুমি এখন যেতে পারো!” বলেই আরেকজন ফোর্সকে বললো,

-‘এখন আমি ১০০% নিশ্চিত হলাম যে ভেতরে কিছু না কিছু আছে। জলদি তালা ভাঙ্গো, ফাস্ট!’

তখনই আরেক ফোর্স এসে বললো,’তালা ভাঙ্গা হয়ে গেছে স্যার!’

নাশিদ তার ফোর্সকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো এবং ৩য় ফ্লোরে গিয়ে দেখলো এখানে নানান ধরণের বেআইনি অস্ত্র দিয়ে ভরা। এগুলো দেখে নাশিদ মনের মাঝে নয়নকে ১০০ বার ধন্যবাদ দিলো কারণ, নয়ন যদি আজ তাকে বাড়ির বাইরে বের না করতো তাহলে এতো বড় একটা কেস সে কোনদিনও পেত না! নাশিদ মিনমিন করে বললো,

-‘মূসা! এবার তোকে কে বাঁচাবে?’

~চলবে।

#হৃদপূর্ণিমা
লাবিবা_ওয়াহিদ
| পর্ব ০৪ |

সকাল নয়টার মধ্যেই আমি কোচিং এ পৌঁছালাম। কোচিং এর একজন টিচার হিসেবে জব করছি। পড়াশোনা ছেড়েছি আরও আগে। পড়ালেখার খরচ চালানোর কেউ-ই নেই আমার। এতদিন টিউশনি করিয়ে চলতাম এখন কোচিং-এর টিচার হিসেবে আছি গত দেড় মাস। মা হার্টের রোগী। প্রতি মাসে ওষুধ এবং খাওয়ার খরচেই সব বেতন চলে যায়। এখন মাসের বাকি দিনগুলা টিউশনির টাকাতেই কোনরকমে চালাচ্ছি। কোচিং সেন্টারের টিচার্সরুমে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করার পরমুহূর্তেই আতিক স্যারের সাথে দেখা। উনি জীব-বিজ্ঞানের টিচার এবং আমার বাবার মতোই আমায় স্নেহ করেন। আতিক স্যার হেসে বললেন,

-‘গুড মর্নিং ইংলিশ মম!’

আমি হাসলাম। হেসেই উত্তর দিলাম,
-‘ইংলিশ পড়ালেও আমি কিন্তু পাক্কা বাঙালি, স্যার। তাই ওই নাম না দিলেই পারতেন!’

-‘মাঝেমধ্যে পেশাকে ঘিরে নাম রাখলে মন্দ হয় না!’

-‘মাঝমধ্যে আপনার মুখে “মা” ডাক শুনলেও কিন্তু মন্দ হয় না!’

আতিক স্যার হাসলেন। অতঃপর বলে উঠলেন,
-‘নতুন টিচার আসছে জানো?’

-‘না, আমি তো সবেই এলাম!’

-‘আমি শুনেছি। আচ্ছা, আমার ক্লাস আছে আমি গেলাম!’

-‘ঠিক আছে স্যার।’

আতিক স্যার চলে গেলেন। আমিও কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেলাম। ক্লাসে যেতে যেতেই ব্যাগের ফোন হঠাৎ বেজে উঠলো। ইশ! ফোন সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছি। ভাবতে ভাবতেই নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে করতে হাঁটছিলাম তখনই কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলাম। আমি দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেশ পরিপাটি। হয়তো কোনো স্টুডেন্টের গার্জিয়ান। আমি তাকে ছোট করে ‘সরি’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।

ক্লাস শেষ করে অফিসরুমে আসতেই দেখলাম আমাদের কোচিং সেন্টারের যে হেড সেই তারিক স্যার কারো সাথে সকলকে পরিচিত করিয়ে দিচ্ছে। একজন টিচার আমায় দেখতে পেয়ে ইশারায় জলদি তাদের সঙ্গে দাঁড়াতে বললো। আমিও দেরী না করে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং তারিক স্যারের নোটিশ শুনতে লাগলাম। কিন্তু স্যারের পাশের ব্যক্তিটিকে দেখে আমি চমকে উঠলাম। এই লোকটি সেই লোক না যার সাথে আমি কিছুক্ষণ পূর্বে ধাক্কা খেয়েছিলাম? আমার ভাবনার মাঝেই তারিক স্যার বলে উঠলো,

-‘উনি হচ্ছেন আমাদের মাঝে আরেকজন টিচার। ওনার নাম ফাহাদ এবং মাধ্যমিক শ্রেণির গণিত শিক্ষক। আপনারা তাকে স্বাগতম জানান!’

ফাহাদ সকলকেই প্রথমে সালাম জানালেন। আমাদের মাঝে মধ্যবয়সী টিচাররা সালামের উত্তর নেন আবার কেউ কেউ মনে মনে। তারিক স্যারের আরও কিছু ভাষণ শোনার পরপরই যে যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আমিও আমার ক্লাসের জন্য যেতে নিলে পেছন থেকে ফাহাদ স্যার ডাকলো। আমি ভদ্রতার খাতিরে দাঁড়িয়ে গেলাম।
ফাহাদ স্যার আমার সামনে এসে বলে,

-‘আপনিও কী শিক্ষক?’

-‘জ্বী।’

-‘প্রথম যখন দেখেছিলাম তখন মনে হয়নি। আপনার নাম কী? আর আমার ইন্ট্রোডাকশন তো কিছুক্ষণ আগে তারিক স্যারের থেকেই পেলেন! আপনি চাইলে আমি আবারও দিতে পারি।’

-‘আমার ক্লাস আছে স্যার, ক্লাস সেরে কথা হবে।’

বলেই আমি চলে আসলাম, ফাহাদ স্যারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই। এখন ক্লাস সিক্সের ইংরেজী ক্লাস আছে। ক্লাস শেষ হলে আর অফিসরুমে গেলাম না, পরপর ক্লাস সেরে ব্রেকের সময়ই অফিসরুম আসলাম। অফিসরুম যাওয়ার পথেই ফাহাদ স্যারের সঙ্গে দেখা। উনি আমার সাথে যেতেই যেতে বলে,

-‘আপনি কী আমার তখনকার ব্যবহারে রাগাম্বিত? না মানে হুট করে চলে গেলেন?’

-‘ক্লাস ছিলো স্যার, দেরী হচ্ছিলো তাই চলে এসেছি। আর আমিও তখনকার জন্য দুঃখিত, একচুয়ালি আমি আমার চাকরি নিয়ে খুবই সেন্সিটিভ।’

-‘ও আচ্ছা। এখন তো জানতে পারি আপনার নাম?’

-‘জ্বী। রথি।’

-‘বাহ খুব সুন্দর নাম আপনার।’

-‘ধন্যবাদ।’ মিষ্টি হেসে বললাম।

অতঃপর দুজনেই টুকটাক পরিচিত হলাম। একপর্যায়ে বলা চলে ফাহাদ স্যার এবং আমার মাঝে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ফাহাদ স্যার বড়ই মিশুক মানুষ। তবে আজ আতিক স্যারের কথায় অসন্তুষ্ট হলাম।

-‘ফাহাদকে এতোটাও ভরসা করিও না। তুমি তো জানো কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক।’

আমি স্যারের কথায় ছোট করে শুধু ‘জ্বী’ উত্তরই দিয়েছিলাম। পরমুহূর্তে অসন্তুষ্টি কেটে গেলো। আমি জানি স্যার আমায় কোনদিকে ইঙ্গিত করেছে। বর্তমান সময়ে মেয়েদের নানান ঝামেলা হয় সেখানে আমি নিজে রোজগার করে মাকে চালাচ্ছি। আমার জন্য তো সেফটি দেয়ার কেউ নেই, তাই নিজের রক্ষা নিজেকেই করতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই আমার আজকের মতো শেষ ক্লাসটা করতে চলে গেলাম।

নাশিদ কপালে হাত দিয়ে নিজের কিছু ফাইলস চেক করছিলো তখনই নয়ন লাল, লাল চোখে এলোমেলো ভাবে নাশিদের কেবিনে প্রবেশ করলো। নাশিদ কারো উপস্থিতি টের পেতেই মাথা উঠিয়ে নয়নের দিকে তাকালো। নয়নের অবস্থা দেখে নাশিদ সামান্য হেসে বলে,

-‘কী অবস্থা ঘুম হলো?’

-‘হয়েছে স্যার, তবে আমি নাক টানিনি।’

-‘মানে?’

-‘আপনি তো আমার ঘুমানোর সাথে সাথে নাকও টানতে বলেছিলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে আপু জানালো আমি নাক টানিনি। এর জন্য কী আমায় শাস্তি দিবেন?’

নয়নের বাচ্চামো কথায় নাশিদ নিঃশব্দে হেসে উঠলো। হাসার এক পর্যায়ে বলে উঠে,

-‘আল্লাহ জানে তোমায় পুলিশের চাকরি কে দিয়েছে। যাইহোক, এখন আমার জন্য এক মগ কফির ব্যবস্থা করো এটাই আপাতত তোমার শাস্তি।’

-‘আচ্ছা, স্যার।’

বলেই নয়ন চলে গেলো। আর নাশিদ আবারও তার ফাইলে মনোযোগ দেয়। এর মাঝে একজন পুলিসজ কর্মকর্তা হাতে লাঠি নিয়ে আসলেন। নাশিদ ফাইল রেখে তার উদ্দেশ্যে বললো,

-‘কিছু বের করতে পারলে?’

-‘না স্যার। একটাও ঠিকমতো কিছু বলেনি। এতো কেলালাম ব্যাটারা তাও কিছুই বলছে না।’

নাশিদ চুপচাপ শুনলো কিন্তু কিছুই বলে না। তখনই নয়ন নাশিদের কফি নিয়ে প্রবেশ করলো। নয়নের দেয়া কফি শেষ করেই নাশিদ বললো,

-‘চলো কিছু মশলা মাখামাখি করি!’

-‘মানে?’

নাশিদ হেসে সেই কর্মকর্তার থেকে লাঠিটা নিজের কাছে নিয়ে অতঃপর নয়নকে নিয়ে লকাপে চলে গেলো। নাশিদও ওদের মেরে কথা বের করতে পারেনি। অতঃপর নাশিদকে কিছু অর্ডার করতেই নয়ন চলে গেলো। নাশিদ একটা লম্বা শ্বাস ফেলে ওদের সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে বলে,

-‘আমি জানি তোদের মেরেও কথা বের করতে পারবো না। এখন ছুঁরি এবং লবণ আনতে পাঠিয়েছি। যার জন্য এতো মার সহ্য করছিস সে কী একবারও জিজ্ঞেস করেছে, তোরা কেমন আছিস? করেনি। তাও তোরা মরেও চুপ করে আছিস। রিযিকের মালিক আল্লাহ! তার প্রতি ইমান যদি কঠোর করতি? নবীজিকে নিয়ে কঠিন আন্দোলনে যদি এমনভাবে শক্ত থাকতি, জীবন পাল্টে যেতো।’

ডাকাতগুলো কিছুক্ষণ এগুলো শুনলেও পরমুহূর্তে তাদের আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে গেলো। এর মাঝে একজন ছেলে বলে উঠলো,

-‘তোরা চুপ থাকলে আমি আর চুপ থাকবো না, অনেক হয়েছে আর মার খেতে চাই না!’

ডাকাতের বস তাকে ধমক দিয়ে বলে,
-‘ওই চুপ কর ব্যাটা! মুখ খুললে নিজে তো এমনেই বাঁচবি না সঙ্গে পরিবারও হারাবি। পরিবারের জান বাঁচাইতে হইলে চুপ মাইরা থাক। এই পুলিশরা দুইদিন পর এমনেই ছাইড়া দিবো, পকেট ভরাইলে!’

সাথে সাথে বসের গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় নাশিদ। এতই জোরে ছিলো থাপ্পড়টা বস তাল সামলাতে না পেরে ধুরুম শব্দে পরে যায়। বলা চলে সিমেন্টের মেঝের বারিতে কপাল ফেটে রক্ত বেরিয়ে যায়। নাশিদের এমন শক্তি দেখে বাকি ডাকাত তো হা করে বসে আছে। তাদের মারের কাছে এই আঘাত তো কিছুই না। নাশিদ চরম রেগে চোখ-মুখ লাল করে আঙুল হুংকারের সুরব বলে,

-‘নাশিদকে মোটেও এতটা সহজ ভাবিস না। আমি যে কী ভয়ংকর তার নমুনা আমি এখনো তোদের দেখাইনি। আর এটা তোর শ্বশুড়বাড়িও না যে পকেটে টাকা ভরলেই কাড়ি কাড়ি খাবার আর আদর-যত্ন পাবি। এই থানা শুধুমাত্র আমার স্টাইলে চলে। তাই যতো যাই করিস না কেন তোদের আমি ছাড়া কেউই বের করতে পারবে না। অত্যাচার সহ্য করতে না পারলে এখানেই মরে পচবি! শালা জানোয়ার!’

বস ব্যথায় মেঝেতে কাঁতড়াচ্ছে। বাকি ডাকাত’রা একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাদে নয়ন হাতে করে একটা বড় পাথর আনে। নাশিদ তখন ভয় দেখাতেই ছুঁরি এবং লবণের কথা বলেছিলো। সেই পাথর আলগাতে নয়নের অবস্থা খারাপ। নাশিদ উঠে সেই পাথরটা নিয়ে একদম বসের সামনে নিয়ে যায়। এর জ্ঞান হারানোর অবস্থা এখন। নাশিদ সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

-‘তোরা যদি পরিবার হারানোর ভয়ে কিছু বলতে না চাস তাহলে আমিও বলছি, তোদের মূসার বাপেরও শক্তি নেই ওদের কিছু করার। মূসার চেয়েও বড় বড় কেস আমি একা হাতে সামাল দিয়েছি। তাই ভালোই ভালোই বল নয়তো তোরা প্রত্যেকেই চরম কষ্টে ভুগবি যা আমি দিতে যাই না!’

মেঝেতে পরা অর্ধমৃত অবস্থায় বস বলে উঠে,

-‘কখনোই না।’

নাশিদ পাথরটা পাশে রেখে তার পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করলো যেটায় লবণ-মরিচের গুঁড়ো। নাশিদ হাতে গ্লাবস পরে সেগুলো হাতে নিয়ে বসের কপালের ক্ষততে লাগিয়ে দেয়। এই বসের প্রতি নাশিদ চরম বিরক্ত হয়ে আছে। এবার বস আরও জোরে আর্তনাদ করে উঠলো যা দেখে বাকি চ্যালারাও আঁতকে উঠলো।

-‘এবার তোদের ডিসিশন। কী করবি? আমি কিন্তু এতো ভালো মানুষও নই!’

সবাই রাজি না হলেও দুজন রাজি হলো। তারা গড়গড় করে মূসা সম্পর্কে সব প্লাস মূসার লোকেশনও বলে দিলো। আর ওরা এটাও জানালো ওরা কোনো ডাকাত না, ওরা এক সন্ত্রাসীর আওতাধীনে আছে। সেদিনই বাইরের দেশের সঙ্গে বড়রকম বেআইনি অস্ত্রের ডিল হবার কথা ছিলো কিন্তু নাশিদ সময়মতো যাওয়ায় সব ভেস্তে যায়!

সব তথ্য পেয়ে নাশিদ বাঁকা হাসি দিলো। তার ভেতরের ভয়াবহতা খুব শীঘ্রই মূসা দেখতে চলেছে।

বাড়িতে ফিরে খেয়াল করলাম একজন লোক আমাদের বাড়িতে ঢোকার মাঝারো সাইজের স্টিলের সদর গেটের সামনে উঁকিঝুঁকি মারছে। কিছুটা এগিয়ে যেতেই বুঝলাম এই গর্ধব কে? কালো কোর্ট পরিহিত, বোগলতলায় একটা ছাতা নিয়ে এবং মুখে পান চিবুতে চিবুতে এদিকে সেদিক তাকাচ্ছে। উনি হলেন আমাদের এলাকার সব থেকে নিকৃষ্ট ঘটক(আমার ব্যক্তিগত মতামত) যে কিনা অভাবী পরিবারে গিয়ে গিয়ে কচি মেয়েদের ভালো ছেলের নাম করে বুড়ো আঙ্কেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। এই গর্ধবটার নজর আমার উপরেও পরেছে গত ৬ মাস আগে থেকে। সেই যে আমার পিছু লেগেছে এখনো ছাড়েনি। এ যেন আমায় বিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হবে। বুঝি না, যেখানে আমার ঘরের মানুষই আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তা করে না আর এই লোকের এতো কিসের সমস্যা? এরে যে কতবার ঠেঙ্গিয়ে বিদায় করেছি হিসাব নেই। আবারও এসেছে ঠেঙ্গানি খেতে।

কোমড়ে দু’হাত রেখে বলে চেঁচিয়ে বললাম,

-‘ও বুড়ো! আবার আমার বাড়ির সামনে এসেছেন কী করতে?’

ঘটক হুড়ঁমুড় করে পিছে ফিরে আমার দিকে তাকালো। উনি তার বড় মোটা ফ্রেমের চশমাটি ঠিক করতে করতে বলে,

-‘তোমার আম্মার সাথে কথা বলতাম, বাড়ি আছেন নাকি?’

আমি এবার পায়ের জুতোটা খুলে হাতে নিলাম এবং বলে,

-‘যদি এর মার খেতে না চান তাহলে এক্ষুনি বাড়ির সামনে থেকে চলে যান। যদি না যান আপনার ঘটকালি আমি চিরজীবনের মতো বুঝায় দিবো। যাবেন নাকি এইটার স্বাদ নিবেন?’

-‘মায় কী শিক্ষা-দীক্ষা দেয় নাই? বড় গো লগে এমনে কথা কস আবার জুতা দেখাস?’

এবার আমি জুতা নিয়ে ওনার দিকে ছুটলাম। ঘটক কয়েকটি শুকনো ঢোক গিলে সাদা লুঙ্গি হাত দিয়ে খানিক উঁচু করে উল্টোদিকে দৌড় দিলো।

~চলবে।

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে