হঠাৎ হাওয়া (১২)

0
1337

হঠাৎ_হাওয়া (১২)

—আবির ভাই আমি তোর বাড়ির সামনে গেট টা কি খুলবি?
—আপনি কে ভাই?!
—শ্বশুরের বাচ্চা শালা আমি হিমালয় আমার নম্বর সেভ নাই তোর কাছে?
—কোন হিমালয়?
—ভাই প্লিজ আমার সাথে মায়া আছে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে
—ওয়েট।

আবির বাইরে এসে মায়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেলেই হিমালয় বললো
—তুই কি আমায় চিনতে পারছিস না!
আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
—তুমি জানো মায়া এই যে আমাদের প্রায় ৮/৯ বছরের সম্পর্ক এর মধ্যে এই ছেলে ৮/৯ বার আমার বাসায় এসেছে কি না সন্দেহ, আজও নিশ্চয়ই তুমি বলেছ বলেই এসেছে।
মায়া হাসলো,হিমালয় মিনমিন করে বলল,
—ধুর তাইলে থাক আমি গেলাম
আবির মায়ার হাত খপ করে ধরে বললো
—ওকে রেখে যেতে পারলে যাবি, আলবিদা কাল হসপিটালে দেখা হবে।
আবির আর মায়া ভেতরে ঢুকে গেলো, হিমালয় কতক্ষন অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখল মিষ্টি আসছে,মিষ্টি হালকা হেসে বলল
—হিমালয় ভাইয়া চলুন।
—মিষ্টি…
—হ্যা বলুন?
—তোমার কপাল কিসে কাটলো?!
মিষ্টি হেসে বলল,
—হঠাৎ হাওয়ায়।
হিমালয় কিছুক্ষণ মিষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
—তুমি কিছু লাগাও নি কেন!
—চলুন ভাইয়া আব্বু আম্মু আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ভেতরে।
—আবির আর তোমার মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
—আমার তার সাথেই কোনো সমস্যা হয় হিমালয় ভাইয়া যার সাথে সখ্যতা হয়।আপনার বন্ধুর সাথে আমার কোনো সখ্যতা নেই তাই সমস্যা হচ্ছে না। আপনার বন্ধু অতি উচ্চ মানের সাধু ব্যাক্তি সবার বাহবা নেওয়ার জন্য সে আমাকে বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু আমায় সহ্য করতে পারেন না আমাকে দেখলেই তার আকাশ পাতাল উল্টে যায় সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করে রাত পার করে,আচ্ছা ভাইয়া আমি কি আপনার বন্ধুর পা ধরে বসে ছিলাম বিয়ে করব বলে বলুন?
হিমালয় মাথা নিচু করে ফেলল,মিষ্টি হেসে বললো
—আপনি ভাববেন না আমি জানি না যে সে জীবনে ভালোবেসে খুব বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে, সে তা নিজেই স্বীকার করেছে, তার জীবনের চরম বিপর্যয়ের কথা সে আমায় বলেছে,আমি বলছি না সে খারাপ মানুষ, তবে তাকে আমি বুঝে উঠি না সে মুহুর্তেই তরল হয়ে যায় আবার তক্ষুনি কঠিন থেকে কঠিনতম হয়!তার সুন্দর একটা পরিবার আছে আমার শ্বশুর আমায় এত আহ্লাদ করে যা আমার বাবাও করে না, আমার শ্বাশুড়ি পারলে তিন বেলা মুখে খাবার তুলে আমায় খাইয়ে দেয় কেন জানেন? কারণ তাদের ছেলে তাদের সাথে ঠিকমত কথাও বলে না তাদেরও ইচ্ছে করে সন্তান কে স্নেহ করতে।এনিওয়ে ভাইয়া চলুন ভেতরে যাই।
হিমালয়ের মনটা একটু খারাপই হয়ে গেলো এখানে না আসলে সে জানতই না আবিরের বাসায় এরকম পরিস্থিতি।

হিমালয় উত্তেজিত হয়ে মায়াকে ফোন করে বলল,
—এই মায়া তুমি কি জানো আবির মিষ্টির বৌভাতের জন্য রাজি হয়ে গেছে?
মায়া হাই তুলতে তুলতে বললো মিনিট দশকের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে দেখবেন আমি আপনার ড্রয়িং রুমে আপনার আব্বু আম্মুকে মিষ্টির বৌভাতের জন্য ইনভাইট করতে এসেছি।
মায়া ফোন কেটে দিলো, হিমালয় হা হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো বিড়বিড় করে বলল,
—এই মেয়ে বলে টা কি! মা যদি মায়ার কথা জানে,সিরিয়ালের ন্যাকা মা দের মত বাসায় কি সিন ক্রিয়েট করবে আল্লাহই জানে!
হিমালয় ড্রয়িং রুমে এসে দেখে মায়া হিমালয়ের মা রেহেনা আহমেদ কে কদমবুসি করছে পাশেই আবির দাঁড়িয়ে, হিমালয় নিচে নামার সাহস পাচ্ছে না সিড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে, দেখলো মায়া রেহেনা আহমেদ কে বলছে
—আন্টি জানেন হিমালয় আপনাকে কত ভালোবাসে? আমি ওকে আড়াইবার প্রপোজ করেছি আর ও কি না বলে ওর মা ই ওর কাছে সব ওর মা যদি আমাকে পছন্দ না করে তাহলে যতই ওর আমাকে একটু একটু পছন্দ হোক ও ওর ভালোলাগা বিসর্জন দিয়ে দেবে ওর মায়ের পছন্দমত মেয়েকেই ও বিয়ে করবে, আন্টি বলুন আমি কি অসুন্দর আন্টি আপনিই বলুন?
আবির পানি খেতে খেতে বিষম খেলো, হিমালয় হা করে তাকিয়ে আছে,হিমালয়ের মায়ের চোখ ছলছল করছে তিনি অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে বললেন,
—হিমালয় এই কথা বলেছে?
—আন্টি আপনার কি আমাকে দেখে মিথ্যেবাদী মনে হচ্ছে?কোনো মেয়ে কি একটা ছেলের কাছে রিজেক্ট হওয়ার কথা কাউকে বলতে পারে?এর চেয়ে অপমানের কিছু আছে? আন্টি আমার মত একটা ইনোসেন্ট মেয়ে কি মিথ্যে বলতে পারে?বলুন?আপনি আপনার ছেলে কে চেনেন না?
—না না মা আমি তো জানি আমার হিমালয় আমাকে কত ভালোবাসে,
—আন্টি আমি যে আড়াইবার আপনার ছেলেকে প্রপোজ করলাম তা কি বৃথা যাবে আন্টি?
হিমালয়ের বাবা এতক্ষণ অবাকের চরম মাত্রা থেকে বের হয়ে বললেন,
—মা সবই তো বুঝলাম কিন্তু আড়াইবার কি করে প্রপোজ করলে?
—আরে আঙ্কেল দুইবার আমি ডাইরেক্ট প্রপোজ করলাম আর প্রথমবার আমার বান্ধবীকে দিয়ে করালাম হলো না?আড়াইবার?
হিমালয়ের বাবা মাথা ঝাকিয়ে বলল,
—হ্যা তাই তো তাই তো।
—আন্টি,আমার আম্মু নেই আন্টি ইচ্ছে হলেই আমি কাউকে মা বলে ডাকতে পারি না এইটা ওইটা রান্না করে খাওয়ার বায়না করতে পারি না, আমি হিমালয়ের মত ভাগ্যবান নই আন্টি, বলুন আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়নি?
হিমালয়ের মা কেদেই ফেললো তিনি পরম মমতায় মায়াকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন
—খুব পছন্দ হয়েছে মা। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
—আর আঙ্কেল আপনার?
হিমালয়ের বাবা আমতা আমতা করে বললো,
—আমারো পছন্দ হয়েছে আর যাইহোক তুমি সরাসরি আমাদের প্রপোজ করেছো আমরা দুজন যদি এখন তোমাকে রিজেক্ট করি তুমি তো সাড়ে চতুর্থ বারের মত রিজেক্ট হবে সেটা কি ভালো দেখায়!?
—ওয়াও আঙ্কেল আপনি তো খুব ব্রিলিয়ান্ট আমার এরকম ব্রিলিয়ান্ট শ্বশুর এমন সুন্দর শাশুড়ি হবে ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
—আমারো খুব আনন্দ হচ্ছে মা আমার বৌমা এত ইনোসেন্ট ভেবেই আনন্দ হচ্ছে
মায়া মুখ টিপে হাসলো,হিমালয় উলটো পথে উপরে চলে গেলো এখানে থাকা মোটেই সুবিধের না।
—আঙ্কেল এবার কাজের কথায় আসি
—ও এতক্ষণেও তুমি তাহলে কাজের কথা বলোনি মা?
—না না সেটা তো আবির ভাইয়া বলবে,আন্টি হিমালয় মনে হয় বাসায় নেই তাই না?
হিমালয়ের মা চোখ মুছতে মুছতে বলল,
—আছে তো মা ও, উপরের ঘরে।
—ওহ থাক আমি আপনার পারমিশন ছাড়া ওর সাথে আর কথা বলব না ও আবার আমায় রাগ করবে
—সেকি! তুমি এবাড়ির হবু বউ তুমি ওর সাথে দেখা করবে না কি করে হয়!
হিমালয়ের মা তার অনামিকায় থাকা একটা আংটি খুলে মায়ার মধ্যমায় পড়িয়ে বলল,
—পাশের আঙুলে আমার ছেলে পড়িয়ে দেবে তুমি উপরে উঠে ডান দিকে গেলেই হিমালয়ের ঘর পেয়ে যাবে যাও মা।আমি চা নাস্তা নিয়ে আসি।
মায়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে, রেহেনা আহমেদ রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।মায়া উপর তলায় উঠে গেলো।
এতক্ষনে হিমালয়ের বাবা সোফায় বসতে বসতে বললেন
—কি হলো বলোতো আবির?এটা কি মেয়ে নাকি তেজস্বী?
—তেজস্বী ই বলতে পারেন আঙ্কেল আপনার বরফের মত কঠিন ছেলে এর প্রেমে গলে পুরো বাষ্প হয়ে উড়ছে, রাতদুপুরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।
—কয়েকদিন যাবত আমিও হিমালয়ের পরিবর্তন লক্ষ্য করছি!সিলেট থেকে ফেরার পরই, তা একে তোমরা পেলে কই?
—ট্রেনে বিয়ে থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলো
—হোয়াট?!
—আঙ্কেল,এই মেয়ে একটা হীরে একে ধারণ করার ক্ষমতা সবার নেই হিমালয়ের আছে, আপনারা যে কি পেতে চলেছেন আপনারা নিজেও জানেন না।
—মেয়েটা বুদ্ধিমতী
—উহুহ আঙ্কেল ওর সাথে মিশে দেখবেন মেয়েটা অলরাউন্ডার আর এটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না।আঙ্কেল আমি এখানে কেন এসেছি জানেন?আমি বিয়ে করেছি বৌভাতের দাওয়াত দিতে।
—হোয়াট, সত্যি আবির!
—অবাক হচ্ছেন আঙ্কেল?ভাবছেন ড্রাগ এডিক্টেড সেই ছেলে টা সংসার করবে কি করে?
—আমি তোমার জন্য খুবই খুশি মাই সন।ইটস ফিল লাইক এ ম্যাজিক
—এন্ড মায়া ইজ দ্যা ম্যাজিশিয়ান হু হ্যাভ ডান দিস।ইওর ফ্যামিলি ইজ সো লাকি আঙ্কেল,হিমালয় চুজ দা রাইট লাইফ পার্টনার।

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে