হঠাৎ হাওয়া (১৩)

0
1105

হঠাৎ_হাওয়া (১৩)

মায়াকে নিজের ঘরে দেখে হিমালয় সরু চোখে তাকালো,
—তুমি এখানে বৌভাতের দাওয়াত দিতে এসেছ?
মায়া হিমালয়ের সাথে ঘেষে বলল,
—নাহ নিজে বউ হয়ে আসার ফাদ পাততে এসেছি, বৌফাদ।
হিমালয় একটু দূরে বসতে বসতে বলল,
—এত ফাদ পাদ করে কোনো লাভ হবে না,আমি পিএইচডি করতে কানাডা তে যাচ্ছি, সো এত শীঘ্রই তোমার বউ হওয়া হচ্ছে না সবে ইউনিভার্সিটি গেছো বই পড়ো কাজে দেবে,
মায়া থমকে গেলো
—কি বললেন?
—শুনতেই তো পেলে,
মায়া হিমালয়ের কোলের উপর গিয়ে বসে দুহাতে হিমালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—ভালোবাসি আমি আপনাকে, আপনাকে ছাড়া আমি একটুও থাকতে পারব না অল্প একটুও না, আর আপনি বলছেন আপনি বিদেশ যাচ্ছেন?
হিমালয় অবাক হয়ে গেলো এই মেয়েতো পুরো মাথা খারাপ!হিমালয় নিজেকে সংযত রাখার চেষ্টা করল,
—বিদেশ না কানাডা
মায়া মুখ ছোট করে ফেলল,হিমালয় অনুভব করল মায়ার হাত ঠান্ডা হয়ে এসেছে খুব মায়া হলো ওকে দেখে এর সাথে কঠিন গলায় কথা বলা যায় না একে শুধু ভালোইবাসতে হয় একটু নরম কন্ঠে বলল,
—শোনো মায়া তোমার নিজেরও এখনও অতটা ম্যাচুরিটি আসে নি আর আমার তো খুব বেশিদিনের কোর্স নয় মাত্র ১ বছর, ফিরে এসেই আমরা বিয়ে করব?ততদিন আমরাও নিজেদের সম্পর্ক কে সময় দিতে পারব।
মায়া উঠে দাড়ালো, ওর কিছুক্ষণ সময় লাগলো নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকালো,তারপর হাওয়ার বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, হিমালয় ওর যাওয়ার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা আসলেই পাগল!এ তো ভালোবাসা ছাড়া কিছুই বোঝে না।ঠোঁট বাকিয়ে হেসে ভাবলো রাতে ফোন করে মান ভাঙাবে।

রাতে হিমালয় মায়াকে অনেক বার ফোন করলেও রিসিভ করলো না,বাধ্য হয়ে ল্যান্ডলাইনে কল করলে মায়ার বাবা ফোন রিসিভ করে বলল,
—মায়া দরজা আটকে সেই যে রুমে ঢুকে ডোন্ট ডিস্টার্বের সাইন ঝুলিয়েছে আর খোলার নাম নেই, আমি নক করার সাহস পাচ্ছি না।
হিমালয় ছোট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
—আমি কি একবার বাসায় আসতে পারি আঙ্কেল?
মায়ার বাবা হেসে বললেন,
—সে তো রোজই আসো জিজ্ঞেস করছ কেন!
হিমালয় একটু লজ্জাই পেয়ে গেলো।
মায়ার রুমের সামনে গিয়ে দেখলো একটা প্লাকার্ডে “ডোন্ট ডিস্টার্ব আই এম এংরি নাউ এন্ড রিডিং অলসো হু উইল নক আই উইল ডেফিনিটলি পানিশ হিম/হার।থ্যাংক ইউ।”লিখে টানিয়ে রেখেছে। মোটামুটি একটা থ্রেট আর কি!
হিমালয়ও যথেষ্ট আতঙ্ক নিয়ে দরজায় নক করতেই দাড়াম করে দরজায় কিছু আছড়ে পড়ার আওয়াজ হলো, ভেতর থেকে চিৎকার করে শব্দ এলো,
—বাবাই তুমি বলে দাও সে যে দেশের মহারাজই হোক এক্ষুনি যাতে বিদেয় হয়।আমি পড়ালেখা করছি কোনো ডিস্টার্ব হবে না, অদ্ভুত! মানুষ অশিক্ষিত নাকি!লেখাপড়া করতে পারে না?দরজায় লেখা পড়তে পারে না! নাকি?!
মায়ার বাবা অসহায় ভঙ্গিতে তাকালো,হিমালয় বুঝলো এ যে সেই রাগ নয়, আবার হালকা করে নক করে বলল,
—ম্যাডাম আই এম রিয়েলি সরি ক্যান আই হ্যাভ পানিশমেন্ট প্লিজ?
—গেট লস্ট
মায়ার বাবা এবার বললেন
—আম্মু ও মা একটু দরজা খোলো আম্মু,তুমি তো কিছুই খাও নি সারাদিন
হিমালয় চকিত হয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
—কিচ্ছু খায় নি?
—তুমি তো চেনো না ওকে কিছু হলেই সেই রাগ খাওয়ার ওপর ঝাড়ে,
—আঙ্কেল এই দরজাটার কত দাম পড়েছিল?
—মানে!
—এটা আমি যদি ভেঙে ফেলি তাহলে কি আপনি খুব রাগ করবেন?
মায়ার বাবা হাসলো,
—এক্সট্রা চাবি দিলে হবে?ওর রুমের দরজায় আমি কোনো ছিটকিনি দেই নি,সব লক সিস্টেম।
হিমালয়ও হাসলো।মায়ার বাবা চাবি পকেটে নিয়েই ঘুরছিলেন হিমালয়ের হাতে দিয়ে চলে গেলেন সেখান থেকে।

হিমালয় দেখলো সারাঘর এলোমেলো জিনিসপত্র এদিকওদিক ছড়ানো ছিটানো, মায়া অন্যদিকে মুখ করে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,হিমালয় আস্তে করে মায়ার কোমড় পেচিয়ে ওকে তুলে কোলের উপর বসিয়ে ঘাড়ের উপর থুতনি রেখে বলল,
—এরকম করলে আমি কি করে যাব?মায়া?তুমি কি ভাবো তোমার একারই কষ্ট হয়?আর কারো কষ্ট হয় না?হুম?
মায়া চুপ করে রইলো,
—খাও নি কেন?
—কাল মিষ্টির বৌভাত তো এজন্য পেট খালি রাখছি বেশি করে খাবো,
—আমিও পেট খালি রাখব?
—আপনার ইচ্ছা
—আঙ্কেলেরও পেট খালি
—তার ইচ্ছা
—এটা কি মায়া?মায়া কি এরকম কখনো বলে?
মায়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
—আপনি যান তো
—সত্যি?
মায়া এবার হিমালয়ের দিকে মুখ করে ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেললো, শব্দ করে কাদতে কদতে বলল,
—আমি তো বলেছিলাম আপনাকে বলি নি? একবার আমি আপনাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেলে পাগল হয়ে যাব, আপনি এখন আমার সাথে এমন করছেন কেন?হোয়াই?
হিমালয় মায়ার মাথায় হাত রেখে বলল,
—সরি
মায়া চেচিয়ে বলল,
—রাগ করি নি আমি কষ্ট পেয়েছি,রাগ করলে সরি বলতে হয়
হিমালয় হেসে ফেলল,
—ও আচ্ছা!আর কষ্ট পেলে কি করতে হয়?
মায়া চেচিয়ে চেচিয়ে বলল
—আদর করতে হয়, কষ্ট দিলে আদর দিতে হয়
হিমালয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এই মেয়ে তো মানসম্মান কিছুই রাখবে না বাইরে যে ওর বাবা থাকতে পারে সে খেয়াল কি ওর আছে!?
হিমালয় ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,
—আচ্ছা আচ্ছা,আর খিদে লাগলে?
মায়া ঝট করে উঠে দাড়ালো এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতের কাছে কিচ্ছু পাচ্ছে না হিমালয় আতঙ্কিত গলায় বলল,
—মারবে নাকি মায়া!
—আপনি এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বের হবেন কি? না?
—ডিনার করে যাবো তোমার আর আঙ্কেলের সাথে।
—ডিনার করে বিদেয় হবেন তো?
—হ্যা।
মায়া সবাইকে খাবার বেড়ে খাওয়ালো নিজেও খেল তবে হুলস্থূল কান্ড তরকারির ঝোল, ডাল ফেলে হিমালয় আর ওর বাবার পাঞ্জাবি মাখামাখি হয়ে একাকার দুজনেই হেসে খাবার পর্ব সারলেন। হাত ধোয়া হতে না হতেই মায়া বলল,
—এবার যান।
হিমালয় বলল,
—এগিয়ে দিবে না!
মায়া গটগট করে গেইট পর্যন্ত এসে বুকে হাত বেধে দাড়িয়ে রইলো,হিমালয় গাড়িতে ওঠার আগে মায়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
—বিয়েটা একবার হোক দেখি কত আদর তুমি নিতে পারো।
বলেই শা করে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো মায়া বেশ কিছুক্ষণ হিমালয় যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলো ওর বুকের মধ্যে খালি খালি লাগছে কেন যে সবসময় হিমালয়ের সাথে থাকতে পারে না ও!

বাসায় গিয়ে সবার আগে হিমালয় যেটা করলো তা হলো ওর বাবা মাকে বলল,মায়ার সাথে বিয়ের কথা ওর বাবা মা তেমন কোনো আপত্তি করল না শুধু হিমালয়ের বাবা কে একটু চিন্তিত দেখালো,আর রেহেনা আহমেদ তো কেদেই ফেললেন খুশিতে মায়াকে তার খুব মনে ধরেছে,হিমালয় বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—বাবা তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?ইউ আর নট লুকিং হ্যাপি
—আই এম হ্যাপি মাই সন ভেরি হ্যাপি ফর ইউ।মায়া খুবই সুন্দর একটা মেয়ে, চঞ্চল আর মিষ্টি আর সবচেয়ে বড় কথা তুমি ওকে পছন্দ করছ আর যেই সেই পছন্দ না আমার আপত্তি থাকলেও তুমি মানবে না এরকম পছন্দ এম আই রাইট?
হিমালয় হাসলো,
—আই লাভ হার, ওকে ছাড়া আমার থাকা অসম্ভব এরকম টাইপের ভালোবাসা আমার দেখা সবচেয়ে চমৎকার একটা মেয়ে, মায়া।
—অবশ্যই সে যথেষ্ট গুণবতী, যে তোমার মনে দাগ কাটতে পেরেছে।
—বাবা আমি যদি কালই আবিরের অনুষ্ঠানে এইংগেজমেন্ট টা করি?
—তুমি তো মে বি কানাডা যাওয়ার আগে বিয়েটা ই করতে চাইছো সিদ্ধান্ত কি নেওয়া হয় নি এখনো?
হিমালয় হেসে ফেললো
—তুমি সব বুঝে যাও বাবা
—এক্সাক্টলি আমি তোর বাপ মাথায় রাখিস।

এর মধ্যে হিমালয় আর মায়ার সাথে যোগাযোগ করলো না,মায়ার খুব অভিমান হলো,বৌভাতে মায়া এলো মিষ্টি আর সাদা কালারের শেডের একটা গাউন পরে আর সাথে মায়ার আব্বুও সাদা রঙের ম্যাচিং ব্লেজার,মায়া অবাক হয়ে দেখলো সেম ব্লেজার হিমালয় পড়ে আছে!ও একবার হিমালয় আর একবার ওর বাবার দিকে তাকালো,তারপর মুখ ভেংচি দিয়ে গিয়ে মিষ্টির কাছে গিয়ে দাড়ালো।

চলবে…..
সামিয়া খান মায়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে