স্পর্শ পর্ব-০৭

0
852

#স্পর্শ
#part_7
#sarika_Islam

সেদিনের পর গুনে গুনে দুইদিন পার হয়ে গেল আরমানের না কোন কল না ঠিকঠাকভাবে কথা বলা কিছু বললে ইগনোর,দিয়া যত এগুতে চায় আরমানের দিকে আরমান ততই শুধু দূরে যায়, দিয়া ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না তাও সে আরমানকে কিছুই বলেনি কোন কিছুরই জবাব চায়নি,
সকালে দিয়া রেডি হয়ে প্রতিদিনের মতোই আজও অফিসে যাচ্ছে তখনি দিতি তার রুমে প্রবেশ করলো।দিতিকে দেখে দিয়ার হাসি কিছুটা মলিন হয়ে গেল।ড্রেসিংটেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে বের হতে নিলে দিতি আটকে দেয়।
-দিয়া,,

দিয়া মুখে কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে ঘুরে তাকায়,
-ডলিরা কিছুদিন পর আসছে ডেট ফিক্সড করতে,

দিয়া খানিকটা চিল্লিয়ে বলল,
-মানি কি?কেন পিছে পরেছ আমার?আমি রায়ানকে বিয়ে করবো না ব্যাস,

দিতি মেয়ের এমন বিহেভিয়ার অনেক সহ্য করেছে এখন আর নয় দিয়ার সামনে গিয়ে দারালো,
-কেন বিয়ে করবে না?অন্য কাউকে ভালোবাসো?
-হ্যা, (অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল)
-ওই আরমানকে?যার সাথে তুমি রুম ডেট করেছ?

দিতির মুখে এই কথা শুনে বেশ অবাক হলো দিয়া।দিতির দিকে অবাক নয়নে তাকালো,হুট করেই দিয়ার গালে পরলো এক চর,
-লজ্জা করেনা এইসব কিছু করতে?কখনো ভাবতেও পারিনি তুমি এমনটা করবে দিয়া,

দিতির চরে দিয়া কিছুটা দূরে সরে যায় কাধ থেকে ব্যাগ পরে গেল এতটা জোরে লেগেছে,, থাপ্পরটা সাথে সাথে চোখ বেয়ে পানি গরিয়ে পরলো,দিয়া রাগের মাথায় চিল্লিয়ে দিতিকে বলল,
-তোমার লজ্জা করেনি এই বয়সে বিয়ে করতে?
-নাহ আমার করেনি কারন একটা সাপোর্ট লাগতো আমার।আমার বয়সে আসলে তুমি ঠিক বুঝতে।
-আমারও সাপোর্ট লাগবে,
-তাহলে রায়ানকে বিয়ে করো,
-আমি আরমানকেই বিয়ে করবো,আরমান নেই তাহলে কেউ নেই,

বলে কাধের ব্যাগটা তুলে বের হয়ে গেল বাসা থেকে।
দিয়া শ্রেয়ার বাসায় গেল শ্রেয়া দিয়াকে দেখে খুব বেশি খুশি হয়ে গেল বেস্ট ফ্রেন্ডকে সে কতদিন পর দেখছে।কিন্তু দিয়ার এই মলিন চেহারা দেখে কিছুটা চিন্তিত শব্দে বলল,
-কি হয়েছে দিয়া?

দিয়া ছলছল চোখে শ্রেয়ার দিকে তাকালো শ্রেয়াকে এইকয়দিন তার সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা খুলে বলল।শ্রেয়া খুশিও হয়েছে আরমানের সাথে প্রেমের কথা শুনে কিন্তু পরক্ষনেই চিন্তিত হয়ে পরেছে দিতির কথা শুনে।
-তাহলে তুই এখন কি করবি দিয়া?
-আমি আজিই আরমানকে বলবো বিয়ের কথা,আমাকে বিয়ে করতে,
-যদি না করে?

দিয়া কান্নাভেজা চোখেই রাগী হয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
-হোয়াট ডু ইউ মিন যদি না করে?আরমান আমাকে ভালোবাসে ও অবশ্যই আমাকে বিয়ে করবে কেন করবে না?

শ্রেয়া দিয়াকে শান্তনা দিয়ে বলল,
-ওকে ওকে ওকে আম সরি,

দিয়া শ্রেয়ার সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে বের হয়ে গেল সেখান থেকে।আরমানকে সেই কখন থেকে ফোন করেই যাচ্ছে আরমান ফোনই তুলছে না।দিয়া বুঝতে পারছে না আজ কি এমন হলো সকাল থেকে তার কল এভোয়েড করছে।দিয়ার এইবার আরমানের প্রতি বেশ রাগ লাগছে মন চাইছে সামনে পেলে খুনই করে দিবে।তখন দিয়ার ফোন আসলো ভেবেছে আরমান খুশি মনে ফোন মুখের সামনে নিয়ে দেখলো দিতি ফোন করেছে রাগের মাথায় কেটে দিল।দিতি আবার ফোন করেছে দিয়া এইবার ধরলো,
-কি হয়েছে?
-কোথায় তুমি?
-জাহান্নামে তাতে তোমার কি?

দিতি মেয়ের এমন রাগীভরা কথা শুনে উত্তেজিত না হয়ে বরং শান্তভাবে বলল,
-দেখ দিয়া তুমি যার জন্য অপেক্ষা করছো এমন রাস্তার মাঝে দারিয়ে সেকি আদো তোমার চিন্তা আছে?
-আছে তা তোমার বলতে হবে না,
-তাহলে গিয়ে দেখ তোমার আরমান কি করছে,সে মোটেও ভালোনা তোমার জন্য,
-মানি?
-তার বাড়ি যাও তার খোজ নাও,
-সেটা আমি বুঝে নিব তোমার সো কল্ড চিন্তা তোমার কাছেই রাখো,

বলে ফোন কাট করে দিল দিয়া,দিতি কেন বলল তার বাড়ি যেতে?তার কি সত্যিই আরমানের বাড়ি যাওয়া উচিত?যেই ভাবা সেই কাজ দিয়া আরমানের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই আরমানের বাড়ি পৌছে গেল কলিং বেল ইচ্ছেমতো চাপছে কিন্তু কেউই দরজা খুলছে না।দিয়ার এইবার রাগ সপ্তম আসমান। আরমানের কি এমন জরুরি কাজ যা দিয়ার থেকে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট??গার্ডেন সাইড থেকে উকিঝুকি দিয়ে দেখতে লাগলো আরমান কি আদো ভিতরে আছে কি না?এই দারোয়ান টাকেও খুজে পাচ্ছে না অসময় সব কিছুই খারাপ হয়।দিয়া কাউকে পেয়ে বাড়ি থেকে বের হতে নিলে মেউন গেটে দারোয়ান এসে দারায়। তাকে দেখে দিয়া তারাতারি করে তার সামনে গিয়ে বলে,
-আংকেল আরমান কোথায়?

দারোয়ান আংকেল পান চিবুতে চিবুতে বলল,
-কেন স্যার তো বাড়িতেই সাথে একটা মেডামও আছে,

মেডাম কথাটা শুনে দিয়ার মনে কেমন যেন একটা খটকা লাগলো আরমানের তো মা বাবা নেই তাহলে মেডাম?দিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
-কোন মেডাম?
-সে আমি কেমনে বলতে পারুম,দেখে তো মনে হচ্ছিল প্রেমিকা,মানি গার্লফ্রেন্ড আপনারা যা বলেন আরকি,

বলেই দাত কেলালো দিয়া অবাকের সপ্তম চুরায় প্রেমিকা?গার্লফ্রেন্ড? তাহলে দিয়া কি?দিয়া এইবার রাগের মাথায় আরমানের বাড়ির দরজা আরো ইচ্ছামতো পেটাতে লাগলো ইচ্ছেমতো কলিং বেল চাপতে লাগলো।
একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল দিয়া মেয়েটাকে দেখে আর অবাক হলো না কারন আংকেল তো বলেই দিয়েছে।কিন্তু মেয়েটার ড্রেসাপ দেখে বেশ অবেকটা অবাক হলো।ছোট একটা টপ্স আর জিন্স পরে আছে।আরমানের তো এইসব ড্রেসাপ পছন্দ না তাহলে?আবার আরমানের বাড়িতে মেয়ে?দিয়া মেয়েটির দিকে কিছুক্ষন চোখ বুলালো তারপর জিজ্ঞেস করলো,
-আরমান কোথায়?

সে নিজেই মেয়েটিকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল তাকে আর কিছু বলার সুযুগ দিল না।উপরে গিয়ে আরমানের রুমে গেল দেখলো আরমান বিছানায় শুয়ে আছে ওপাশ হয়ে। গায়ের শার্ট বিছানায় পরানো দিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই এইসব কি হয়েছে দিয়া আরমানের কাছে গিয়ে ডাক দিল,
-আরমান

আরমান ঘুরে তাকালো দিয়াকে দেখে উঠে বসলো,দিয়া আরমানের সামনে গিয়ে সজোরে তার গালে এক থাপ্পর বসিয়ে দিল।আরমান জিদ্দে উঠে দারালো,আরমান বলল,
–how dare you,
-এইসব কি আরমান?কে ওই মেয়েটা?বলো আমি যা দেখেছি সব মিথ্যে,

আরমানের সামনে গিয়ে তার হাত ধরে বলল দিয়া।আরমান দিয়ার হাত ছারিয়ে বিছানা থেকে শার্ট পরতে পরতে বলল,
-কি মিথ্যে?

দিয়া আরমানের শার্টের কলার ধরে চিল্লিয়ে বলল,
-এইসব করার ছিল তাহলে সেই রাতে কি ছিল?

আরমান নিজের কলার ছারিয়ে দিয়াকে কিছুটা দূরে দার করালো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
-তুমিই এসেছিল নিজেকে বিলীন করতে আমি যাইনি,
-বিকস আই লাভ ইউ,ডোন্ট ইউ লাভ মি?
-কখনো বলেছি ভালোবাসি?

দিয়া অবাক হয়ে বলল,
-মানি কি আরমান?এইসব কি বলছো আরমান?আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি প্লিজ এমন করো না প্লিজ,

আরমানকে রিকুয়েষ্ট করতে করতে বলল আরমান দিয়ার দিকে কোন ধরনের মায়া না দেখিয়ে ডিরেক্ট বলল,
-সে রাতে যা হয়েছে তুমিও উপভোগ করেছো আমিও।এর থেকে বেশি আর কিছুই নেই তুমি ভুলে যাও সব।

দিয়া এইবার রেগে গেল আরমানকে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,
-সেরাত শুরু মাত্র একটা রাত ছিল তোমার জন্য?সব মেয়ের সাথেই তুমি ছলনা করো?তোমার কেরেক্টার চিনতে আমার ভুল হয়েছে সেই প্রথম দেখায় চোখ মারা ধীরে ধীরে এত কাছে আসা আমি সেটাকে ভালোবাসা ভেবে নিয়েছি, সেটাই আমার সব চেয়ে বড় ভুল ছিল তোমার মতো ক্যারেক্টারলেস মানুষকে চিনতে আমি খুব বড় ভুল করেছি।

আরমান চিল্লিয়ে দিয়ার দিকে আংগুল তুলে বলল,
-শাট আপ,আমার ক্যারেক্টর নিয়ে কিছু বলার তোমার কোন অধিকার নেই জাস্ট শাট আপ,

দিয়া অবাক হয়ে শুধু আরমানের কথা শুনছে কি বলছে এইসব আরমান?আদো কি এইটা দিয়ার সেই আরমান যাকে সে কতটা ভালোবেসেছে নাকি এইটা আরমানের কোন প্রতিচ্ছবি??দিয়ার মাথা কাজ করছে না দিয়া কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে সব কিছু গুলিয়ে ফেলছে সব কিছু।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে