স্পর্শ পর্ব-০৫

0
786

#স্পর্শ
#part_5
#sarika_Islam

লিফট পাচ তালায় এসে থেমে গেল দিয়া তারাতারি করে আরমানের হাত ধরেই বের হয়ে গেল,আরেকহাত বুকে দিয়ে জোরে নিশ্বাস নিল।
-উফফফ বেচেছি,
-এত্ত ভয় পাও লিফটে?
-আসলে তেমন কিছুনা,

আরমান দিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার হাতের দিকে তাকালো দিয়া আরমানের দৃষ্টি অনুসরন করে তাকিয়ে দেখলো সে আরমানের হাত ধরে আছে তা দেখে বড় বড় চোখ করে একবার আরমানের দিকে তাকিয়ে হাত ছেরে কিছুটা দূরে গিয়ে দারালো,
-আ,,আম সরি
-ইটস ওকেহ, এখন কি বাহিরেই দার করিয়ে রাখবে?

দিয়া আবার আরমানকে দেখে হারিয়ে গিয়েছিল।তারাতারি করে ব্যাগ থেকে চাবি বের করতে গিয়ে চাবিটা পরে গেল।আরমানের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসির চেষ্টা করে উঠাতে নিলে আরমান উঠিয়ে দিয়ার হাতে দিল,
-রিলেক্স এত্ত হাইপার হওয়ার কি আছে?

দিয়া লক খুলে ভিতরে ঢুকে সব লাইট অন করে নিল।টেবিলে কফির মগ সোফার কুসুন কিছুটা আগোছালো দিয়া তারাতারি করে সব ঠিক করতে লাগলো।আরমান সোফায় বসতে বসতে বলল,
-ইটস ওকেহ এত্ত ফরমালিটির কিছুই নেই।তুমি একজন working women ঘর এমন থাকাটাই স্বাভাবিক।

দিয়া হাল্কা হাসলো কাধের ব্যাগটা রাখলো,
-কি খাবেন?
-যা খাওয়াবে,
-আসলে আমার ঘরে তো তেমন কিছু নেই গেস্টদের জন্য,

সেড হয়ে বলল,একটু ভাবার ভংগি করে বলল,
-হ্যা নুডলুস আছে বানাবো?

আরমান এতক্ষন দিয়ার কান্ড দেখছিল সেড হয়ে ঠোঁট উলটানো ভংগি কিছু ভাবার ভংগি আরমান যেন আরো বেশি আসক্তি হয়ে যাচ্ছে দিয়ার প্রতি।আরমান দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে দিয়া পালটে উত্তর না পেয়ে আরমানের মুখের সামনে তুড়ি বাজালো,
-কি হলো বললেন না যে বানাবো?খাবেন?

আরমান হচকচিয়ে উঠলো সে ভাবতে পারেনি এমনটা হবে তার সাথে দিয়ার প্রতি এত এত ফিলিংস জমা হবে তার মনের কোনে।আরমান এখন এখানে থাকলে কিছু একটা করে বসবে তাই চটজলদি উঠে দারালো,
-আমি এখন যাই,
-সেকি বৃষ্টি তো,
-এখন থাকলে কিছু একটা হয়ে যাবে,

বলেই চলে গেল দিয়া আহাম্মকের মতো দারিয়ে রইলো কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না সে।কিছু হয়ে যাবে?মানি কি ছিল?

সকালে দিয়া ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে অমনি তার মার ফোন।রিসিভ করে কিছুটা বিরক্তি স্বরে বলল
-বলো,
-বাড়ি আয়
-কেন?

দিতি আর কিছু নিজেও বলল না দিয়াকেও সুজুগ দিল না ফোন কেটে দিল।দিয়া না চাওয়া স্বত্তেও যেতে হলো।খান বাড়ির সামনে দারিয়ে আছে ভিতরে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার বাবার পদবিতে আজো আছে কিন্তু অন্য পুরুষের সাথে তা দিয়া কখনোই মেনে নিতে পারছে না।জোর পুর্বক বাড়ির কলিং বেল বাজালো বুয়া এসে খুলে দিল।দিয়া ধীরপায়ে ভিতরে ঢুকছে দিতি সোফায় বসা ছিল দিয়াকে দেখা মাত্রই ডাক পরলো,
-দিয়া,

দিয়া পাশ ফিরে মায়ের দিকে তাকালো তার সামনে গিয়ে পাশের সোফায় বসলো,
-আমাকে কেন ডেকেছ?
-আজ থেকে তুমি এই বাড়িতেই থাকবে এন্ড দেটস ফাইনাল নো মোর talk..
-এইসব বলতে ডেকেছ?
-আরো কিছু কথা আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো,

এমনটা নয় দিয়া আজ প্রথম এই বাড়িতে এসেছে ছোট থেকে এই বাড়িতেই বড় হয়েছে কিন্তু দিতির বিয়ের কথা চলা কালিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যেখানে সেই সো কল্ড হাসবেন্ড থাকবে সেখানে সে মোটেও থাকতে চায়না।কিন্তু আজ কয়েকমাস পর আবার সেই না চাওয়া বাড়িতেই থাকতে হবে।
দিয়া নিজের ঘরে গিয়ে কাবার্ড থেকে ড্রেস নিবে ফ্রেশ হওয়ার জন্য সেখনে অনেক ধরনের জামা কাপর দিয়ে ভরা আর বেশির ভাগ জিন্স টপস গেঞ্জি লেডিস শার্ট এইসব।যা এখন দিয়া পরা ছেরে দিয়েছে।খুজে টুজে একটা লং টপ্স আর জিন্স বের করে ওয়াশ্রুমে গেল শাওয়ারের জন্য।শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে নিচে নামলো আজ আর অফিস যাওয়া হবে না তার।নিচে গিয়ে দিতির সামনে বসলো। দিতি পেপার পরতে পরতে বলল,
-তুমি এত আলিশান বাড়িঘর ছেড়ে কেন সেই ভাড়াটিয়াতে থাকো?
-তোমার কুকর্মের জন্যই যেতে বাধ্য হয়েছিলাম ভুলে যেওনা,

পেপার থেকে মুখ তুলে মেয়ের দিকে এক নজর তাকালো পুনরায় পেপারে মুখ গুজে বলল,
-রায়ানের সাথে তোমার বিয়ে ফিক্সড করেছি,

এই কথা শুনা মাত্রই দিতি বেশ হাইপার হয়ে গেল,খানিকটা চিল্লিয়ে বলল,
-আমার লাইফের ডিসিশন তুমি আমার পার্মিশন ছারাই নিয়েছ?কেন?
-চিল্লিয়ো না,,

পেপার থেকে মুখ তুলে দিয়ার সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে নরম সুরে বলে,
-আমি তোমার মা দিয়া তোমার ভালোমন্দ আমি বুঝি কখনো তোমার খারাপ চাইবো না,

দিয়া এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে নিল।দারিয়ে পরলো,
-এতই যখন আমার ভালোমন্দ বুঝো তাহলে এই বয়সে কেন আরেকটা বিয়ে করেছ?আমার ফিউচারে কি হবে সেটা ভাবোনি একবারের জন্যও?আমার বাবার সারনেমে বেচে আছো এখন পর্যন্ত,,

হাত দুটো উচু করে চেংরানো টাইপ করে বলল,
-তোমার সো কল্ড স্বামির কি কোন সারনেম নেই নাকি?তোমার বাড়িতে থাকে তার বাড়ি নেই তোমাকে রাখার?আবার আমার ভালো চায় সে,,

বলে দৌড়ে উপরে চলে যায় নিজের রুমে।দরজা আটকে বিছানায় শুয়ে পরে উপর হয়ে কান্না করতে থাকে আজ সব মনের কথাগুলো বলতে পারলো সে এতদিনের জমানো কথাগুলো আজ সে বলল।দিতি মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।

সকাল পেরিয়ে বিকেল পেরিয়া সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে দিয়া নিজের রুম থেকে আর এক মুহুর্তের জন্যও বের হয়ে আসেনি।হঠাৎ সন্ধ্যার দিকে আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো।দিয়া বারান্দায় রকিং চেয়ারে দুলছিল ফোন আনতে মোটেও ইচ্ছে করছে না বারবার বেজেই চলছে বেজেই চলছে।বিরক্তি হয়ে উঠে দিয়া রুম থেকে ফোন আনলো আননোন নাম্বার দেখে আরো রাগ লাগলো।ধরতে ধরতে ফোন কেটে গেল সাথে সাথেই আবার বেজে উঠলো।দিয়া রিসিভ করে বিরক্তি স্বরে বলল,
-কে?

অপর পাশ থেকে কিছুটা চিন্তিত শব্দে বলল,
-কি হয়েছে তোমার আজ আসোনি কেন?

দিয়া গলার আওয়াজ বেশ চিনতে পেরেছে।এখন তার কান্না পাচ্ছে গলা ধরে আসছে কথাগুলো গলায় যেন আটকে আছে মুখ দিয়ে বের হতে চাইছে না।ভাংগা ভাংগা গলায় বলল,
-আরমান,,

বলেই কেদে ফেলল,অপর পাশ থেকে আরমান আরো চিন্তিত হয়ে উঠলো।বেশ বিচলিত হয়ে বলল,
-দিয়া কি হয়েছে তোমার?কান্না করছো কেন?বলো আমায়,

দিয়া একাধারে কান্না করেই যাচ্ছে।আরমান কিছুটা শান্তনা দিল দিয়া কিছুটা শান্ত হয়ে হেচকি তুলতে তুলতে বলল,
-আরমান আমার মা আমাকে বিয়ে দিতে চায়,

বলে কান্না করতে লাগলো।আরমান আশা করেনি এমন কিছু কথা শুনার জন্য কিছুক্ষন চুপ থেকে নিচু স্বরে বলল,
-আর তুমি?
-আমি আমি চাইনা এই বিয়ে,, আমি তো তোমাকে,,

‘ভালোবাসি’ সেই অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিসটা আর বলা হয়ে উঠলো না দিয়ার ফোন বন্ধ হয়ে গেল।কান থেকে এনে দেখলো বেটারি লো অফ হয়ে গেছে দিয়া রাগে জিদ্দে ফোনটা বিছানায় ছুরে মারলো।

সকালে
দিয়া নিত্যদিনের মতো আজও অফিসে গেল, অন্যদিন অফিসে যাবে এই কথাটা ভাবলেই চেহারায় এক আলাদা আভা ফুটে উঠতো আজ সেটা নেই।কেবিনে মুখ ভার করে বসে আছে আজ নাকি তাদের কাম্পানি অনেক বড় একটা প্রজেক্ট সাইন করেছে পুরো অফিসে লোকজন হৈচৈ করছে কিন্তু দিয়ার মনে খুশির এক ছিটেফোটাও নেই।কেমন যেন খালি খালি লাগছে।আরমান ঠোঁটের কোনে এক ফালি হাসি ঝুলিয়ে দিয়ার কেবিনে ঢুকলো দিয়ার গম্ভির চেহারা দেখে মুহুর্তেই ঠোঁটের হাসি মিহিয়ে গেল।দিয়ার কাছে গিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল,
-কি হয়েছে?

দিয়া আরমানের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে হাসির রেখে ফুটিয়ে বলল,
-কই কিছু নাতো।
-সিওর?
-হুম

আরমান দিয়ার হাত ধরে বাহিরে সবার সামনে আনলো।দিয়া না চাওয়া স্বত্তেও আরমানে সাথে আসতে হলো আরমানকে তো আর সে না করতে পারেনা।সবাই একসাথে প্লান করেছে আজ রাতে পার্টি করবে তারা এই খুশিতে।।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে