স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি পর্ব-০৩

0
915

#স্নিগ্ধ প্রেমের অনুভূতি
#পার্টঃ০৩
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

১৫.

ফোনের রিংটোন বাজতেই একটি সুন্দর রমণীর পাশ থেকে উঠে কাব্য বিরক্তিতে কল ধরে।

‘হেই ইচ্ছে বেবি কি করো?.

‘কি আর করবো? তুমিতো নিজে থেকে একটা কলও দাওনা৷ ভালো লাগে বলো?

‘ওফ সরি জান। আই’এম এক্সট্রেমলি সরি।
এইটা বলতে বলতে কাব্য কিছু টাকা তার
বিছানায় এলোমেলো ভাবে অর্ধনগ্ন মেয়েটিকে ছুড়ে দিয়ে ইশারায় বেড়িয়ে যেতে বললো।

‘এতো সরি টরি বুঝিনা। তুমি কালই অফিসে না গিয়ে সারাদিন আমার সাথে টাইম স্পেন্ড করবে।

‘ওকে মাই বেবি।

‘আচ্ছা কাব্য আমি এখন রাখছি। অয়নি আমার জন্য কলেজে ওয়েট করছে।

‘ওকে বেবি।

১৬.

আদ্র সাদা শার্টের সাথে ব্লেজার, হাতে ঘড়ি, হাতে ফাইল নিয়ে নিচে নামতেই…রুপকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,”তুই এইখানে?

“কোনো? তোর বাড়িতে আসতে তোর পারমিশন লাগবে নাকি?

” ওহু তা নয়। সাডেনলি আসলি তাই বললাম।

‘তোর সাথে আজ তোর অফিসে যাবো। ভালো লাগছেনা কিছু।

‘বুঝেছি। বাসায় কিছু হয়েছে রুপ?

রুপ কিছু বলতে যাবে তার আগেই..মিসেস আনেয়া নীড় এসে বললেন,

‘হেরে রুপ,”অয়নিকে একবার নিয়ে আসতে পারিসনা? অয়নির কথা শুনতেই মিটমিট করে হাসে আদ্র।

আর এইদিকে রুপ মনে মনে আদ্রকে একশত একটা বকা দিয়ে জোরপূর্বক মুখে হাসি এনে বললো,

“না মানে আন্টি এখনোতো আমাদের বিয়ে টিয়ে হয়নি তাই আর কি। তবে হ্যাঁ একদিন তোমার কাছে না হয় নিয়েই আসবো।

মিসেস আনেয়া নীড় হেসে বললেন, ” আচ্ছা ঠিক আছে খেতে বস তোরা।

১৭.

হাতে একটা ফটো এলবাম নিয়ে কান্না করতে করতে ইচ্ছে বলছে,

‘কেনো চলে গেলে তুমি উচ্ছাস কেনো? আমাদের ছাড়া কি খুব বেশি ভালো আছো তুমি?

হঠাৎ রুমে কারো প্রবেশ অনুভব করে চোখের পানি মুছে তড়িঘড়ি করে ছবি এলবামটা আড়াল করে নেয় ইচ্ছে। ইচ্ছে পিছু ফিরে দেখে তার বাবা।

‘বাবা তুমি?

‘কি করছো তুমি?

“আসলে বাবা..

” অয়নি কল করেছে তোমার জন্য অনেক্ষন অব্দি বসে আছে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।

ইচ্ছে বাবাকে এড়াতে তাড়াতাড়ি আলমারিতে ফটো এলবামটা লুকিয়ে সাইড ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। নিহাল চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললেন, “উচ্ছ্বাস নামের আমাদের কেউ কখনো ছিলোনা।

১৮.

ড্রাইভ করতে করতে রেগে মুখ দিয়ে বিড়বিড় করছে আদ্র। তার রাগ করার যথেষ্ট ওয়ে আছে। রুপ তাকে অর্ধেক পথ এনেই গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে। অয়নির জন্য। হঠাৎ আদ্র দেখে তার ইচ্ছে পরী এদিক ওদিক তাকাচ্ছে গাড়ির জন্য। আদ্র গাড়ি থামিয়ে দেয়। একটু ভাব নিয়ে বলে, ” আমি চাইলে তোমাকে ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিতে পারি ইচ্ছে পরী।

‘হঠাৎ এমন কথাশুনে সামনে তাকায় ইচ্ছে। আদ্রকে দেখে অনেকটা চমকে উঠে। আদ্র গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আড়চোখে ইচ্ছের দিকে দৃষ্টিপাত করছে। ইচ্ছে কোনো কথা না বলে নাক বেংচি কেটে হাঁটা শুরু করে আর মনে মনে এই শহরের সব ড্রাইভারদের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করছে৷

‘আদ্র মিটিমিটি হেসে পেছন থেকে বললো, “ইচ্ছে পরী’ ভেবে দেখো। সামনে কিন্তু বৃষ্টিপাতের জন্য হাঁটু গেড়া পানি।

‘আদ্রের কথা শুনে ইচ্ছে থেমে যায়। মনে মনে কিছু একটা ভেবে আদ্রের সামনে যায়। আদ্রের দিকে এক পলক তাকিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে বসে। আদ্র আলতো হেসে ড্রাইভিং সিটে বসতে যায়।

১৯.

” অয়নি আর রুপ দুজন হাত মিলিয়ে বললো,

‘হেই রুপ তুমি আদ্র ভাইয়াকে একা রেখে চলে আসছোতো?

‘আরে হে। মিস্টার আদ্র নীড়তো রেগে পুরাই বম। ইচ্ছে যদি আদ্রের সাথে না এসে কোনো গাড়ি পেয়ে যায়?

“আরে রুপ তুমি যে কি বলোনা। আমাদের ক্যাম্পাসের দিকে কোনো রিকশাওয়ালা আসবে বলে তোমার মনে হয়? বৃষ্টিতেতো রাস্তা ঘাটের যা তা অবস্থা।

হঠাৎ রুপ গেইটের দিকে তাকিয়ে বললো,

” প্ল্যান সাকসেসফুল মেরা জান..

রুপের কথা শুনে অয়নিও গেইটের দিকে নজর রাখলো। চোখ চড়গাছে অয়নির। নরমাল প্ল্যান করতে গিয়ে যে এতো বড় ওভার প্ল্যান হয়ে যাবে তা অয়নি বুঝতে পারেনি।

২০.

অদ্রি মন খারাপ? অদ্রির পেছন থেকে কোমড়ে জড়িয়ে ধরে কথাটা বললো উচ্ছ্বাস। অদ্রি পেছনে না তাকিয়েই বেলকনির গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, “জানো উচ্ছ্বাস? আদ্র ভাইয়াকে আমার ভীষণ মনে পড়ছে। ভাইয়াকে ছাড়া যেই আমি খাবার খেতে টেবিলে পর্যন্ত বসতাম না। সেই আমি আজ ভিন্ন শহরে..এইটা বলেই বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয় অদ্রিতা। উচ্ছ্বাস অদ্রিতার মাথা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে আছে। কারণ সে জানে, এখন অদ্রিতাকে কান্না থেকে থামানো বড় দায়। মনে মনে ভাবতে লাগলো উচ্ছ্বাস, ” অদ্রি না হয় কেঁদে কষ্ট কমাতে পারে। কিন্তু আমি! আমিতো তাও পারিনা।

২১.

আদ্রের কোলে ইচ্ছে! বিষয়টা অয়নি আর রুপকে সপ্তম আকাশে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আদ্র অয়নি আর রুপের সামনে ইচ্ছেকে পাজা কোল থেকে নামাতেই ইচ্ছে নাক মুখ ফুলিয়ে অয়নিকে বললো, “অয়নি আমাকে ক্লাসে নিয়ে চল।

আদ্র পাশ থেকে ফোড়ন কেটে বললো,

” ইচ্ছে পরী তুমি বললে, “আমি ক্লাসে দিয়ে আসতে পারি। আফটার অল আমার বাবার কলেজ কিনা! কেউ কিছু বলতে পারবেনা।

‘আদ্র ভাই আমার পথ আমি সারাজীবন নিজেই চলতে পারবো আপনার কোনো দরকার পড়বেনা।

” আমি একা থাকতে দিলেতো।

“মানে?

ইচ্ছের কথায় আদ্র কোনো উত্তর না দিয়ে রুপকে বললো, ” রুপ চল।

“আরে এইইই আনসারতো দিয়ে যান। মামু কা ভাগ্নে।

নিজের কথার পাত্তা না দেওয়ায় ইচ্ছের কিছুটা ইগোতে লাগলো। ইচ্ছে চোখ রাঙিয়ে অয়নির দিকে তাকিয়ে বললো,” বললাম না আমাকে ক্লাসে নিয়ে যেতে?

“তোর পায়ের কি হয়েছে মনু?

‘অয়নি…

ইচ্ছের রাগের গতিভেদ বুঝে অয়নি চুপসে গিয়ে বললো, ” আরে রাগ করছিস কেনো? আমিতো জাস্ট এমনি জানতে চাচ্ছিলাম আর কি।

আদ্র গাড়ির সামনে গিয়ে একবার পেছনে তাকায়। ইচ্ছে আর অয়নি ক্লাসে ডুকছে। আদ্র মনে মনে বললো,”ইচ্ছে পরী”তুমিতো জানোইনা মামু তোমার সাথে আমার বিয়ে আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগেই ঠিক করে রেখেছে।

২২.

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখশ্রীতে হাত বুলাচ্ছে ইনশিয়া জান্নাত। হঠাৎ ফোনে টুং শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি ফোনটা হাতে নেয়। ফোনটা হাতে নিতেই মুখে ফুটে উঠে তার হাসি। ফোনটা রেখে…আবার আয়নার সামনে যায় ইনশিয়া। আজ ৩ বছর একটা কাক ‘ও” তাকে দেখেনি। নিজেকে গভীর আড়াল করে রেখেছে সে। হঠাৎ খেয়াল করে চোখের কোণে পানি। ইনশিয়া জান্নাত কাঁদছে! কান্না করে আয়নায় নিজেকে দেখে বার বার ইনশিয়া বলছে,”আমি তোমার ওয়াইফ ছিলাম কাব্য। ওয়াইফ। তবুও তুমি আমাকে ছাড়োনি! এইরকম স্বামী যেনো আর কখনো না হয় কারো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে