স্তব্ধের স্নিগ্ধতা পর্ব-০৪

0
1107

#স্তব্ধের_স্নিগ্ধতা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৪

‘এসব কি রান্না করেছিস? তুই জানিস না বাড়িতে কেউ এসব খায় না।

– আমি কেন রাঁধতে যাব? এগুলো তো নতুন বউ রান্না করেছে।

– ওই মেয়েটা এসব করেছে! বাড়িতে কি এখন ওর নিয়ম চলবে নাকি?

সবাই সকালে নাস্তা করার জন্য খাবার টেবিলে বসলেন। রাহেলা বেগম বললেন,
– কি হয়েছে বউমা সকাল সকাল রাগারাগী করছো কেন?

– দেখুন তো মা এসব কি রান্না করেছে আমরা কি সকালে কেউ এসব খাই?

– আসলে আমি জানতাম না আপনারা এগুলো খান না।(স্নিগ্ধতা)

– জানো না যখন রান্নাঘরে গেলে কেন?

স্নিগ্ধতা মাথা নিচু করে আছে,স্তব্ধ বিরক্ত হয়ে বলল,
– মম খাবার নিয়ে বকাঝকা করার কি দরকার ভুল করে যেহেতু রান্না করেই ফেলেছে খেয়ে নাও বেশি সমস্যা হলে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে নিও।

অরিত্রি শিকদার খেয়ে ফেলবো লুকে ছেলের দিকে তাকালেন স্তব্ধ শুকনো ঢুক গিলে নিজেই বেরে খাওয়া শুরু করলো আর রাতুল শিকদার মুখ টিপে হাসছেন।

রাহেলা বেগম খাবারের দিকে চোখ বুলিয়ে,
– রুটি,কয়েক পদের বাজিও আছে দেখছি বেশ তো অনেকদিন হলো এগুলো খাই না স্যান্ডউইচ খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি নাত বউ আমায় দে।

স্নিগ্ধতা রাহেলা বেগম এবং রাতুল শিকদারকে বেরে দিল তারা অনেক প্রশংসা করলো। রাতুল শিকদার অরিত্রি শিকদারকে বললেন,
– অনেক মজাদার খাবার অরিত্রি তুমি বসো স্নিগ্ধতা তোমার শাশুড়িকে দাও।

– আমি খাবো না।

– বউমা খেতে বসো (রাহেলা বেগম)

অরিত্রি শিকদার বাধ্য হয়ে খেতে বসলেন। রাতুল শিকদার খাওয়া শেষ করে বললেন,
– স্তব্ধ নাস্তা সেরে রেডি হয়ে নে আজ থেকে তুই অফিসে যাবি।

– এই বছর কোনো অফিসেই আমি যাচ্ছি না।

– অফিসে না গেলে তোর একাউন্ট বন্ধ করে দিব গাড়ির চাবিগুলোও সিন্ধুকে তালা দিয়ে রেখে দিব।

স্তব্ধ অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো কিন্তু অরিত্রি শিকদার কিছু বললেন না তাই স্তব্ধই বলল,
– ব্ল্যাকমেইল ছাড়া আর কিছু পারোনা?

– তোমাকে সোজা করতে এছাড়া তো কোনো উপায় দেখছি না।

– আজ নয় কাল থেকে যাব।

– আচ্ছা আমার ঘরে এসো কথা আছে অরিত্রি তুমিও এসো ছেলের গুনের খবর জানাবো।

– কেন কি করেছে স্তব্ধ?(অরিত্রি শিকদার)

– বলবো মা-ছেলে উপরে আসো।

রাতুল শিকদার ঘরে চলে গেলেন অরিত্রি শিকদার চোখ পাকিয়ে,
– কি করেছিস?

স্তব্ধ মাথা নাড়িয়ে,
– উহু কিছু করিনি।

– তোর ড্যড যে বলে গেল?

– তোমার হাজব্যান্ড তো হুদাই আমার পেছনে লেগে থাকে এই লোকটাকে বিয়ে করলে কেন? আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিচ্ছে।

স্তব্ধ রাতুল শিকদারের ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো।অরিত্রি শিকদার মৃদু হেসে,
– মা আপনি খান আমি শুনে আসি আপনার নাতি আবার কি করলো।

– হুম যাও।

রাহেলা বেগম স্নিগ্ধতাকে বললেন,
– দাঁড়িয়ে আছিস কেন তুইও খেতে বস।

– পরে খাবো এখন আপনি খান।

– চুপ করে বস এখানে।

স্নিগ্ধতা চেয়ার টেনে বসলো, রাহেলা বেগম মৃদু হেসে বললেন,
– বুঝলি নাত বউ তোর এই জামাইকে আগে মানুষ বানাতে হবে তারপর সংসার করতে হবে।

– উনি কি মানুষ না!

– উহু একটা বান্দর ছেলে সবসময় বাইরে বাঁদরামি করে বেড়াবে আর ভুগতে হবে তোর শশুরকে।

স্নিগ্ধতা মুচকি হাসলো। রাতুল শিকদার গম্ভীর মুখে বিছানায় বসে আছেন তার সামনে সোফায় ভাবলেশহীন ভাবে স্তব্ধ বসে আছে অরিত্রি শিকদার রাতুল শিকদারের পাশেই বসে আছে।স্তব্ধ জানতে চাইল,

– কেন ডেকেছ বলছো না কেন?

– ফাহাদ হোসেনের মেয়ে জেসিকে তুই মে’রেছিস?

স্তব্ধ চমকায়িত দৃষ্টিতে,
– তোমায় কে বললো?

– জেসি তার বাবাকে বলেছে আর তার বাবা ফাহাদ হোসেন আমাকে ফোন করে জানালো।

– ওহ।

– তোর জন্য আমার মান সম্মান কিছুই থাকবে না দেখছি শেষ পর্যন্ত মেয়েদের গায়ে হাত তুলিস।

– আমাকে সবার সামনে টাচ করেছিল তাই মে’রেছি এতে দোষের কি আছে?

– অরিত্রি আরো আশকারা দাও ছেলেকে বাড়িতে তোর বউ আছে তার কানে গেলে কি ভাববে?

– তুমি ওর কানে না দিলেই হবে কিছুই জানবে না ভাববেও না।

– অন্যায় করেও মুখে মুখে কথা বলিস লজ্জা করে না?

– আমি কোনো অন্যায় করিনি তাই লজ্জাও করছে না এবার বলো তোমার কথা শেষ হয়েছে?

– হুম।

– তাহলে বসে আছো কেন অফিসে যাও আমিও ঘুরতে যাই বাই বাই টাটা।

বলেই স্তব্ধ শিস বাজিয়ে চলে গেল রাতুল শিকদার রাগে ফুঁসছেন,
– দেখলে আমায় অপমান করে চলে গেল।

– ছেলের পেছনে এত লেগো না তো ও বড় হয়েছে।

– বড় হয়েছে বলেই সমস্যা ছোট থাকতেই ভালো ছিল যা বলতাম তাই শুনতো।

– অফিসে যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে।

– যেমন মা তেমন ছেলে।

রাতুল শিকদার রাগ দেখিয়ে রেডি হতে চলে গেলেন।
______________

দুপুর পাড় হয়ে গেছে রাহেলা বেগম দুপুরের খাবার খেয়ে ভাত ঘুম দিয়েছেন সালেহাও কাজ শেষে ঘরে গিয়েছে,অরিত্রি শিকদারও নিজের ঘরে।স্নিগ্ধতা হল ঘরে বসে আছে একা একা ভালো লাগছে না বসা থেকে উঠে ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই সদর দরজার বেল বেজে উঠল। স্নিগ্ধতা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই একটা মেয়েকে দেখতে পেল মেয়েটার হাত ধরে আড়াই তিন বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মেয়েটি তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
– তুমি কে?

স্নিগ্ধতাও পাল্টা প্রশ্ন করল,
– আপনি কে?

– রাতুল শিকদারের একমাত্র মেয়ে স্তব্ধ শিকদারের বড় বোন আরিয়া।

স্নিগ্ধতা কিছুটা অবাক হলো দু’দিন বাড়িতে এসেছে অথচ জানেই না স্তব্ধের বড় বোন আছে।স্নিগ্ধতা মৃদু হেসে দরজার কাছ থেকে সরে গিয়ে বলল,
– আসসালামু আলাইকুম আপু ভেতরে আসুন।

– ওয়া আলাইকুমুসসালাম।

আরিয়া বাড়ির ভেতরে ঢুকে সোফায় বসলো।স্নিগ্ধতা রান্নাঘরে চলে গেল দুয়েক মিনিট পর দুই গ্লাস শরবত হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। টেবিলের উপরে রেখে,
– শরবত খেয়ে নিন আপু ভালো লাগবে।

আরিয়া এক চুমুকে শরবত শেষ করে ফেলল আরেকটা গ্লাস বাচ্চা মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– নৌসিন খেয়ে নাও মামনি।

নৌসিন ছোট ছোট চুমুক দিয়ে শরবত খাচ্ছে, আরিয়া স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে,
– তোমার পরিচয় তো পেলাম না? কে তুমি?

স্নিগ্ধতা বলতে যাবে তখনি অরিত্রি শিকদার নিচে নেমে এলো আরিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আরিয়া বাবু কতদিন পর দেখলাম তোকে।

– মম গত সপ্তাহেই তো এসে গেলাম।

– তাতে কি হয়েছে নৌসিন নানু এদিকে আসো।

নৌসিন গ্লাস রেখে দৌড়ে অরিত্রি শিকদারের কাছে চলে গেল।অরিত্রি শিকদার নাতনিকে কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেলেন। আরিয়া বলল,

– মম এই মেয়েটা কে?

অরিত্রি শিকদার একবার স্নিগ্ধতার দিকে তাকালেন তারপর বললেন,
– স্তব্ধের বউ।

– ওহ এর সঙ্গেই ড্যড ভাইয়ের বিয়ে দিয়েছে তো মেয়ে তোমার নাম কি?

– স্নিগ্ধতা।

– আচ্ছা নৌসিনকে নিয়ে ঘরে যাও ও কিন্তু অনেক দুষ্টু দেখে রেখো।

– আচ্ছা আপু।

স্নিগ্ধতা নৌসিনকে কোলে তুলে নিলো ছোট নৌসিন মায়ের ইশারায় স্নিগ্ধতার সঙ্গে গেল।

স্নিগ্ধতা চলে যেতেই অরিত্রি শিকদার মেয়ের দিকে তাকিয়ে,
– আরিয়া যা করার তোকেই করতে হবে স্তব্ধের সঙ্গে এই মেয়ের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স করাতে হবে স্তব্ধের বিয়ের কথা জানাজানি হলে তোর আন্টির কাছে আমি মুখ দেখাতে পারবো না।

– মম স্তব্ধের তো নাতাশাকে পছন্দ নয়।

– তোর এসব ভাবতে হবে না তুই ডিভোর্সের ব্যবস্থা কর।

– তুমিও তো করতে পারো।

– তোর দিদান আর বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি কিভাবে করবো তবে তুই যদি চাস তাহলে সম্ভব তোর কথা কেউ ফেলতে পারবে না স্তব্ধও তোকে ভালোবাসে আর যাই হোক বোনের কথা কখনও অমান্য করবে না।

– ড্যড,স্তব্ধ কোথায়?

– তোর ড্যড অফিসে আর স্তব্ধ মনে হয় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়েছে।

– দিদান?

– মা ঘরে আছেন ঘুমাচ্ছে।

– ওহ আমি ফ্রেশ হয়ে আসি পরে কথা হবে।

– যা তাহলে।

আরিয়া নিজের ঘরে চলে গেল।আরিয়া স্তব্ধের বড় বোন, স্তব্ধের থেকে পাঁচ বছরের বড় সে বিয়ে হয়ে গেছে ছোট একটা মেয়েও আছে নৌসিন।

স্নিগ্ধতা নৌসিনের সঙ্গে খেলছে, নৌসিন অনেক মিশুক এই কয়েক মুহূর্তেই স্নিগ্ধতার সঙ্গে মিশে গেছে।নৌসিন খেলা রেখে স্নিগ্ধতার গলা জড়িয়ে ধরে,
– আমি তুমাকে কি বলে ডাকব?

স্নিগ্ধতার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল ভাবতে লাগলো, ‘সত্যিই তো কি বলে ডাকবে?’

– মামী বলে ডাকবে।

আচমকা এমন একটা কথা শুনে স্নিগ্ধতা এবং নৌসিন দরজার দিকে তাকিয়ে স্তব্ধকে দেখতে পেল।নৌসিন দৌড়ে গিয়ে স্তব্ধকে ধরলো,স্তব্ধ নৌসিনকে কোলে নিয়ে বিছানায় বসতেই নৌসিন জানতে চাইলো,

– মামা কুতায় গেথিলে?

স্তব্ধ চকলেট বের করে,
– আমার নৌসি পরীর জন্য চকলেট আনতে গিয়েছিলাম।

– এত্তগুলা তকলেট!

– হুম।

– তেংকিউ মামা।

– ওয়েলকাম নৌসি পরী।

নৌসিন স্তব্ধের কোল থেকে নেমে স্নিগ্ধতার কাছে গিয়ে একটা চকলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
– এই নাও তুমিও খাও।

– খাব না মামণি তুমি খাও।

বিছানার এক পাশে বসে চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো নৌসিন।স্নিগ্ধতা উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল স্তব্ধ স্নিগ্ধতার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নৌসিনের সঙ্গে দুষ্টুমি করতে লাগলো। আরিয়া ভেতরে এসে ভাইয়ের পাশে বসলো স্তব্ধ বোনকে দেখে হেসে,

– কেমন আছিস আপু।

– ভালো,তুই কেমন আছিস?

– আমিও ভালো।

– এভাবে বিয়ে করার পরেও ভালো আছিস?

– এখন কি মেয়েদের মতো কান্না করবো?

– তা নয় তবে জোর করে ড্যড তোকে বিয়ে করিয়ে দিল এত সহজে মেনে নিয়েছিস? আবার ওই মেয়েটা আই মিন স্নিগ্ধতা তোর ঘরেই থাকে শুনলাম।

– আমি মানলেই কি না মানলেই কি বিয়ে তো হয়ে গেছে এছাড়া ওর আমার ঘরে থাকাটাই স্বাভাবিক।

– হুম মম চাইছে তোদের ডিভোর্স করাতে তুই কি বলিস?

স্তব্ধ ব্রু নাচিয়ে,
– ওহ এই কারণেই এখানে এসেছিস।

– এই কারণে আসতে যাব কেন? আমার বাড়িতে আমি আসতে পারি না?

– পারবি না কেন কিন্তু তুই তো বছরে সম্ভবত দুই থেকে তিন বার আসিস কিন্তু গত সপ্তাহে বেড়িয়ে গেলি আবার এই সপ্তাহে আসলি এমনিতে তো বললেও আসিস না।

– ছোট থেকেই আমরা দু’জন বেস্ট ফ্রেন্ডের মতো ছিলাম দু’জন দু’জনের সব সিক্রেট কথা শেয়ার করতাম নুহাশের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তুই সবাইকে বুঝিয়ে বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিস তোর জন্যই আমি নুহাশকে পেয়েছি কিছু ভুলিনি।

– এসব কথা এখন কেন আসছে?

– কারণ আছে তাই আসছে। দেখ মম যখন নাতাশাকে তোর জন্য পছন্দ করেছে নাতাশার সঙ্গেই তোর বিয়ে দিয়ে ছাড়বে মমকে তুই তো চিনিস।

– কিন্তু আমার নাতাশাকে পছন্দ নয়।

– জানি এখন তুই এটা আমায় বল তুই কি এই বিয়েটা মেনে নিয়েছিস? যদি মেনে নিস তাহলে আমি মমকে বুঝাবো যদি না নিস তাহলে বাবাকে বুঝিয়ে তোদের সম্পর্কের ইতি টেনে দিব।

স্তব্ধ কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
– আমার সময় লাগবে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই না আমার জন্য কারো জীবন নষ্ট হোক তাও চাই না।

আরিয়া স্তব্ধের কাধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে,
– সময় নে ভালো করে ভেবে সিদ্ধান্ত নে তোর সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবো তোর মন যা বলবে তাই করবি কারো কথা ভাবার দরকার নেই কারণ জীবনটা তোর।

স্তব্ধ বোনের দিকে একবার তাকালো আরিয়া নৌসিনকে নিয়ে স্তব্ধের ঘর থেকে চলে গেল।স্তব্ধ সোজা হয়ে শুয়ে পড়লো আর সবটা ভাবতে লাগলো।
___________

‘রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে কে রেঁধেছে?’

স্নিগ্ধতা মৃদু হেসে জবাব দিল,
– আমি।

আরিয়াও হেসে বলল,
– তোমার রান্নার হাত অনেক ভালো।

রাতে সবাই খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে একসঙ্গে, সবাই থাকলেও স্তব্ধ আসেনি সে নাকি রাতে খাবে না।

রাহেলা বেগম বললেন,
– আরিয়া দিদা কতদিন থাকবে?

– দেখা যাক দিদান ইচ্ছে আছে কিছুদিন বেড়ানোর।

– নুহাশকেও নিয়ে আসতে পারতি।

– দিদান ওর প্রচুর কাজের চাপ তাই আসতে পারবে না।

– ওহ।

অরিত্রি শিকদার আরিয়াকে ইশারা করছে আরিয়া ইশারার মানে বুঝতে পেরে,
– স্নিগ্ধতা তোমার আর স্তব্ধের খাবার নিয়ে ঘরে যাও একসঙ্গে গিয়ে খাও।

অরিত্রি শিকদার কিছুটা রেগে গেলেন কি বলতে বলেছে আর মেয়ে বলছে কি কপাল কুঁচকে বললেন,
– স্তব্ধ খাবে না বলেছে।

– রাতে না খেয়ে থাকতে নেই স্নিগ্ধতা যা বলছি তাই করো খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াবে।

রাতুল শিকদার এবং রাহেলা বেগমও আরিয়ার সঙ্গে তাল মিলালেন।স্নিগ্ধতা বাধ্য মেয়ের মতো খাবার বেরে ঘরে গেল। আরিয়া একটু কেশে বলল,

– ড্যড সবটা শুনলাম কাজটা কি ঠিক করলে?

– বাবা হিসেবে সবসময় তোদের ভালো চাই আমি, তোর আর নুহাশের কথা জানতে পেরেই নুহাশের খোঁজ খবর নিয়েছিলাম যখন নুহাশকে তোর জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছে তখন তোদের বিয়ে দিলাম, স্তব্ধেরও ভালো চাই তাই সুযোগ পেয়ে বিয়েটা দিয়ে দিলাম।

– তুমি তো মেয়েটার উপকার করার জন্য এটা করলে।

– এটা তো স্তব্ধ এবং স্নিগ্ধতা জানে।

– তার মানে অন্য কোনো কারণ আছে! কি কারণ ড্যড? আমাদেরকে বলো।

রাতুল শিকদার হাতটা ধুয়ে নিলেন বসা থেকে উঠতে উঠতে মুচকি হেসে বললেন,
– খাওয়ার সময় এত কথা বলতে নেই আমি গেলাম আমার ওষুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

রাতুল শিকদারের কথাগুলো এবং হাসির মধ্যে রহস্য রয়েছে যা আরিয়া বুঝতে পেরেছে।

স্তব্ধ উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে আছে ঘর অন্ধকার।স্নিগ্ধতা ভেতরে এসে লাইটটা জ্বালাতেই স্তব্ধ চেঁচিয়ে বলল,
– লাইট জ্বালালো কে?

– আমি।

স্তব্ধ পাশ ফিরে স্নিগ্ধতাকে দেখে আবারো আগের ন্যায় শুয়ে রইল।স্নিগ্ধতা খাবারের প্লেট নিয়ে বিছানায় বসে,
– আবার শুয়ে রইলেন কেন উঠুন।

– কেন কি দরকার?

– আগে উঠুন তো।

স্তব্ধ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসলো,স্নিগ্ধতা খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে,
– খেয়ে নিন।

– আমি তো বলেই দিয়েছি খাবো না।

– মানুষ কত কথাই বলে সব কি শুনতে হয় আমাকেও গতকাল জোর করেই খাইয়েছেন হুহ।

– আমি তোমার মতো অজ্ঞান হয়ে যাই না।

– অজ্ঞান না হলেই ভালো।

– কেন?

– আমি অজ্ঞান হলে আপনি আমায় কোলে নিতে পারলেও আমি তো আর আপনার মতো এত ভারি লোককে কোলে নিতে পারবো না।

– আমি ভারি লোক!

– হুম।

– মোটেও না বরং তুমি দুর্বল।

– আচ্ছা খেয়ে নিন।

– খাবো না বলেছি।

– আপু বলেছে রাতে না খেয়ে থাকতে নেই।

– ওহ তোমাকে আপু খাবার আনতে বলেছে।

– জ্বি।

– আপু না বললে আনতে না?

স্নিগ্ধতা চুপসে গেল আমতা আমতা করে,
– মা…নে?

– কিছু না।

দু’জনেই খাবার খেয়ে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়লো।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে