Monday, October 6, 2025







সে প্রেমিক নয় পর্ব-০৪

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ০৪

রাতে শেখ বাড়ির সকলে একসাথে ডিনার করছে। খাওয়ার মাঝে মাঝে টুকটাক কথা হচ্ছে। সবাই ইসরাফের বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। ইসরাফ নিজেই বেশরমের মতো নিজের বিয়ে থেকে শুরু করে বাসরঘর কিভাবে সাজাবে সবটা বলছে। জেসিকা মুখ চেপে হাসছে। ইরান ছোট ভাইয়ের লাজহীন কথা শুনে কিছুক্ষন পর পরই কেশে উঠছে। তনুসফা মায়ের দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে। ইরান এবার বিরক্ত হয়ে বলে,

-তোর তো আর বিয়ে করার প্রয়োজন হচ্ছে না ইসরাফ!

ইরানের কথায় ভড়কে যায় ইসরাফ। ভ্রু কুঁচকে বলে,

-কেনো?

-তুই তো মনে মনে বিয়ে, বাসর সবই সেরে ফেলেছিস! এখন কী আর বিয়ের প্রয়োজন পরে? শুধু শুধু টাকা অপচয় তাই না?

রাকিয়া খাওয়া শেষ করে দ্রুত উঠে যায়। এখন ছেলেদের মধ্যে থাকলে সরমে তার মাথা কাঁটা যাবে! দুইটাই একদম ঠোঁট কাঁটা হয়েছে। কার সামনে কী বলতে হয় এইটুকু জ্ঞানও নেই!

-মনে মনে আর রিয়েল একটা পার্থক্য আছে না! অপ্স সরি আপনি তো আবার সন্ন্যাসী! আপনি এইসব বুঝবেন না ভাই।

-বেশি বুঝদার হয়ে গিয়েছিস নাকি?

-আমি বুঝদার জন্মের পর থেকেই।

ইরান গম্ভীর মুখে বাঁকা হাসে। খাওয়া শেষ করে হাত মুছতে মুছতে বলে,

-এতোই বুঝদার হলে আজ আমার স্থানে তুই থাকতি আর তোর স্থানে আমি। বয়স তো কম না তোর! ২৭ বছর বয়স। এখনও অনার্সই শেষ করতে পারলি না জীবনে আগে কিভাবে বাড়বি?

তেঁতো হয়ে উঠে ইসরাফ। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,

-আমি পড়াশোনায় কেনো পিছিয়ে আছি এটা আপনি ভালো করেই জানেন। আর রইলো জীবনে আগে বাড়া? সত্যি বলুন তো আমি আপনার আগে বিয়ে করছি বলে হিংসে হচ্ছে নাকি?

তনুসফা একটু ভীত হয়ে যায়। এই দুইজন যখনই একসাথে থাকে তাঁদের ঝগড়া লাগেই! সবসময়ই ঝগড়ার মূর্খ কারণ হয় ইসরাফের বেশি বলা। তনুসফা দুইজনের উদ্দেশ্যে বলে,

-থামো তোমরা। বড় হয়েও কী বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছো! আর ইসরাফ এখন তো মানুষ হো। কিছুদিন পর বউ আসবে এভাবে ঝগড়া করলে কেমন দেখায়?

-দাঁড়ান আপা তোর প্রশ্নের উত্তরটা আগে দিয়ে নেই। হিংসে কেনো হবে আমার? বিয়ে চাইলে আরো বছর আগে করতে পারতাম আমি। কিন্তু আমার মতে বিয়ের থেকে নিজের ক্যারিয়ার গোড়া বেশি ইম্পরট্যান্ট। যেটা তোর ছোট মস্তিকে ঢুকবে না।

-সত্যি বলেন না? ছয়বছর ধরে ছ্যাঁকা খেয়ে বেঁকা হয়ে আছে এমপি ইরান শেখ।

তনুসফা এবার আর সয্য করতে পারলো না। ধমক দিয়ে উঠে দুইজনকে। ইসরাফকে বলে,

-সবসময় অতিরিক্ত বলিস তুই। বড় ভাই একটু বলতেই পারে কিন্তু না তুই ছোট হয়েও চুপ থাকিস না!

রাগ দেখিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ইসরাফ। পা দিয়ে চেয়ার ধাক্কা দিয়ে বলে,

-আপনি তো শুধু আমার দোষই দেখেন নিজের ভাইয়ের দোষ কী আপনার এই জনমে চোখে পরেছে? আসলেই সৎ ভাইবোন সৎই হয়।

কথা শেষ করে ওপরে চলে যায় ইসরাফ। তনুসফা মনে ভীষণ আঘাত পায় ইসরাফের কথা শুনে। হ্যাঁ ইসরাফ তাঁদের সৎ ভাই। তাঁদের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীয় সন্তান ইসরাফ। ইসরাফের যখন তিন বছর তখন ক্যান্সারে মারা যায় ইসরাফের মা। তখন থেকে রাকিয়া শেখই ইসরাফকে নিজের ছেলের মতো আদর যত্ন দিয়ে বড় করে। কিন্তু কথায় আছে না সৎ কখন আপন হয় না। তেমনই ইসরাফ বড় হওয়ার পর যখন শুনলো সে রাকিয়ার নিজের ছেলে না তখন থেকে সে পরিবর্তন হয়ে যায়। ইরানকে দু চোখে সহ্য করতে পারে না। প্রথম প্রথম ইরান বিষয়টা বুঝে ম্যানেজ করে চলত। কিন্তু এখন ইরানও ইসরাফের ব্যবহার পছন্দ করে না। তাই তাঁদের এতো ঝগড়া লাগে।

ইসরাফ আর ইরান হলো দুই প্রকৃতির মানুষ। ইসরাফ যেমন অগ্নিগোলা তেমনই ইরান হলো ঠান্ডা বরফ। ইসরাফ সবটা মাথা গরম করে ম্যানেজ করে। আর ইরান নিজের বুদ্ধি দিয়ে সকল সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করে। কিন্তু ঠান্ডা মানুষ রাগলে ভয়ংকর এক দানব হয়ে যায়! ইরানের সহজে রাগ জেদ উঠে না আর যখন উঠে তখন বাড়ির ওপর দিয়ে এক ভয়ংকর তান্ডব চলে। ছয় বছর আগে ইরান ভালোবাসার মানুষ নামক একজন থেকে ধোঁকা নামের একটি শব্দের সাথে পরিচিত হয়। সেই ধোঁকাই ইরানের সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বকে চেঞ্জ করে দেয়। ধীরে ধীরে হয়ে উঠে একজন গম্ভীর ও কঠোর এমপি। বর্তমান তার জীবনে একমাত্র ভালোবাসা হলো তার মা আর তার কর্ম রাজনীতি।

নিজ রুমে এসে ইরান কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করে। কিছু একটা মনে পরতেই ফোন বের করে কাউকে কল দেয়। ঐপাশের জন কল রিসিভ করার সাথে সাথেই ইরান রাশভারি কণ্ঠে বলে,

-কাল মিটিং কয়টায়? এখন এটা কী আমারই ফোন করে জেনে নিতে হবে? কাজের প্রতি হেরফের কিন্তু আমি পছন্দ করি না।

ঐপাশের জনের কোনো কথা শোনা গেলো না। ইরান একটু রাগী স্বরে বলে,

-কাল আমি চেয়ারম্যানদের সাথে দেখা করতে পারব না। তাঁদের এতোই যখন দরকার মন্ত্রী মিনিস্টারের কাছে যাক। আমার কাজের রুটিন কী আমি এখন তাঁদের জন্য পরিবর্তন করব!

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-হ্যাঁ পরশুদিনের কথা বলে দেও। আর কালকের মিটিংটা কোথায় হবে লোকেশনটা আমাকে সেন্ড করো। কুইক।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-তারা কী ভুলে যাচ্ছে এমপি আমি! তাঁদের আমার কথায় উঠতে বসতে হবে নাকি আমার! দ্বিতীয়বার কল করলে আমাকে বলবে। তার আসল জায়গা তাকে দেখিয়ে দেবো।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-ঠিক আছে নাম্বার দিও আমাকে। তাঁদের একটু মনে করিয়ে দিতে হবে ইরান শেখ এক পিস্ আর এক পিস্ই থাকবে। আমার সাথে কথা বলতে এলে ভেবে শুনে আসতে হবে। যতটা ভালো আমি দেখতে ততটা ভালো আমার আচরণ নয়।

___________________🖤

সকালে দ্রুত তৈরি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে আনাবিয়া। আজ সঠিক সময়ে এসেছে। কিছু একটা ভেবে মনে মনে হাসলো আনাবিয়া। এই বুড়ো বয়সে এসে সে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ছে! হাও চিপ! ক্লাসের সামনে এসে দেখে প্রফেসর অলরেডি ক্লাস রুমের ভিতরে চলে গিয়েছে। হাত ঘড়িতে দেখে আনাবিয়া এখনও পাঁচ মিনিট বাকি আছে। তাহলে আজ প্রফেসর জলদি কেনো চলে গেলো! আনাবিয়া ভীত হয়ে বলে,

-স্যার মেই আই কামিং?

প্রফেসর রাগী চেহারা করে এগিয়ে আসে আনাবিয়ার কাছে। চেঁচিয়ে বলে,

-লাট করে কেনো এসেছো মেয়ে? এখন শাস্তিসরূপ বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকো দশ মিনিট।

-কিন্তু স্যার আমি তো,,,,,,,,,,,,,

-আবার আমার ওপরে কথা বলছো! বেয়াদপ মেয়ে গেট আউট।

মলিন মুখে ক্লাস রুমের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে আনাবিয়া। অনেক সরম লাগছে তার এইরকম বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে।
ইসরাফ বন্ধুদের নিয়ে তার ক্লাস রুমে চাচ্ছিলো। হাসাহাসি করতে করতে তার সামনে নজর পরে। কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য নজর সেখানেই আটকে যায়। ইকরা আনাবিয়াকে দেখে বলে,

-এটা আমাদের ভাবী না ইসরাফ?

-হ্যাঁ ভাবীই তো। কার এতো বড় সাহস তাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখছে। (উমৎ)

মুহূর্তেই ইসরাফের চোখ মুখে রাগের আভাস দেখা যায়। একবার হাতের ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে আনাবিয়ার কাছে এগিয়ে যায়। আকস্মিত ইসরাফকে দেখে একটু বিরক্ত হয় আনাবিয়া।

-এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

-মনের সুখে দাঁড়িয়ে আছি। ইফ ইউ ওয়ান্ট ইউ ক্যান জয়েন মি।

-মানে?

-দেখতেই পারছেন প্রফেসর শাস্তি দিয়েছে দেরিতে আসায়।

-দেরিতে আসায় মানে? দাঁড়াও এখনই এই প্রফেসরের গুষ্টি উদ্ধার করছি।

ইসরাফ বুকে দুই হাত গুঁজে ক্লাস রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রফেসরকে প্রথমেই ভদ্র সেজে সালাম দেয়। ইসরাফের সালামে প্রফেসর জানো একটু ঘাবড়ে গেলো। ইসরাফ আনাবিয়াকে দেখিয়ে বলে,

-মিস্টার প্রফেসর উনাকে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখার মানে কী?

-আসলে ইসরাফ বাবা ও লেট্ করে এসেছে।

-লেট্ করে এসেছে? নাকি আপনি আজ জলদি ক্লাসে এসে পরেছেন? প্লিজ একটু কষ্ট করে নিজের ঘড়িটা দেখুন।

ইসরাফের কথা মতো প্রফেসর ঘড়ির দিকে তাকায়। হ্যাঁ সে জলদি এসে পরেছে। কপাল বেয়ে ঘাম পরছে প্রফেসরের। ইসরাফ রাগী কণ্ঠস্বরে বলে,

-ও আমার উল্ড বি ওয়াইফ। দ্বিতীয়বার ওকে কোনোরকম শাস্তি দিতে দেখলে আপনাকে একদম যম্মের শাস্তি দেওয়া শিখিয়ে দেবো।

-আর হবে না এইরকম বাবা। মা ভিতরে এসো।

আনাবিয়া রাগী চোখে ইসরাফের দিকে তাকিয়ে ভিতরে চলে যায়। প্রতিদিনের মতো দিলরাবার পাশে বসে পরে। ইসরাফের আচরণ দেখলে আনাবিয়ার শুধু ঘৃণা হয়। বাবার বয়সী একজনের সাথে এভাবে কথা বলে! চরিত্রও নষ্ট ব্যবহারও নষ্ট! আনাবিয়া ব্যাগ থেকে বই বের করতে করতে বিড়বিড় করে বলে,

-ফা*কিং ব্লা*ডি বা*স্টে*ড।

🌸🌸🌸

ক্লাস শেষ হলে আনাবিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসে। এখন তার ইসরাফের বদসুরত খোঁমা দেখার একটুও ইচ্ছে নেই। বাতাস বইছে। আজ আবারও বৃষ্টি হতে পারে। একটা রিকশা করে ভার্সিটি থেকে অনেক দূরে এসে পরে। নিজ মনে হাঁটতে হাঁটতে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে। কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুম যায়। এই নকল রূপ,পর্দা, বোরখা পরে ঘুরতে ঘুরতে বিষিয়ে উঠেছে আনাবিয়ার মন। ওয়াশরুমের দরজাটা লাগিয়ে প্রথমে নেকাব খুলে। তারপর হেজাব। খুবই সাবধানে চোখের লেন্স গুলো খুলে ফেলে। সবসময় লেন্স পরে থাকতে থাকতে তার চোখে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। মুখে পানি দিয়ে সুন্দর মতো ধুয়ে ফেলে মুখ। ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে ভালো করে মুছে নেয় চেহারা। নেকাব ব্যাগে ভরে নেয়। হেজাবটা পুনরায় সুন্দর করে বেঁধে নেয়। আজ সে নিজের আসল চেহারা নিয়ে একটু ফ্রি টাইমস্পেন্ড করবে। চোখে কালো রঙের সানগ্লাস পরে বের হয়ে যায় ওয়াশরুম থেকে।

নিজের টেবিলে এসে বসে পরে। কিছু সময়ের মধ্যেই ওয়েটার তার খাবার দিয়ে যায়। আনাবিয়াকে দেখে ওয়েটার ছোটোখাটো একটা ধাক্কা খায়। কোনোরকম নিজেকে সামলে চলে যায়। আনাবিয়া আইসক্রিম খাচ্ছে আর ফোন টিপছে। আশেপাশের মানুষজন যে তাকে ভুতের মতো দেখছে এতে বিন্দুমাত্র বিরক্ত হয় না আনাবিয়া। নিজ দেশে অন্যরকম, অন্যদেশের মানুষের মুখ দেখলে অবাক তো হবেই! খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে যায় আনাবিয়া। বাসায় যাওয়ার জন্য আবারও একটি রিকশায় উঠে বসে। এই দেশে এসে সে রিকশার প্রেমে পরে গিয়েছে। অনেক ভালো লাগে তার রিকশায় উঠতে। কিন্তু জ্যাম সবচাইতে বোরিং জিনিস। এখন যেমন আনাবিয়া জ্যামের মধ্যে বসে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে।

ইরান বার বার হাতের ঘড়ি দেখছে আর জালানা দিয়ে সামনে জ্যাম দেখছে। আজ ড্রাইভার ড্রাইভিং করছে সে পিছনে বসেছে। অনেক জরুরি মিটিং আছে তার। এই জ্যামে বসে থেকে তার অর্ধেক সময় পাড় হয়ে যাচ্ছে। গম্ভীর হয়ে ড্রাইভারকে বলে,

-এই রোড ছাড়া আর কোনো রোড নেই?

-না স্যার।

-এখানে একজন ভালো ট্রাফিক পুলিশ দিতে পারে না। জ্যাম জুটানোর বদলে আরো লাগাচ্ছে!

কথা বলতে বলতে ইরান মাথা ঘুরিয়ে জালানার বাহিরে তাকায়। হঠাৎ একটি রিকশায় বসা রমণীর দিকে তার নজর আটকে যায়। থমকে যায় ইরান। একদম পুতুলের মতো মেয়েটি কালো রঙের বোরখা আর হেজাব পরনে। ইরানের দেখে মনে হচ্ছে না মেয়েটা বাংলাদেশি। বাংলাদেশের মেয়েরাও এইরকম অপরূপ হয় কিন্তু এই মেয়েটার ফেইস কাটিংই একটু বিদেশীদের মতো। কী মনে করে ইরান লুকিয়ে একটি ছবি তুলে নেয় মেয়েটির।
বেচারি আনাবিয়া, এই জ্যামের মধ্যেও যে কেউ একজন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকে দেখছে এটা সম্পূর্ণ অজানাই রয়ে গেলো তার।

__________________🖤

আনাবিয়ার বাসায় আসার সাথে সাথেই জয়তি বলে,

-তোর জন্য গুড নিউজ আছে আর আমার জন্য বেড নিউজ।

-যে নিউজই হোক আগে বলো?

-বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে। সামনের ফ্রাইডে।

-ভালোই তো। আর মাত্র তিনদিন পর।

-হুম। কাউকে ইনভাইট করব না?

-কোনো প্রয়োজন নেই খালামুনি।

-তোর দাদা দাদিকেও একবার বলবি না?

সোফায় বসে পানি খেতে খেতে আনাবিয়া বলে,

-আমি কল করে বলে দেবো তাঁদের। আর শুধু আমার চারজনই থাকবো বিয়েতে কোনো বাড়তি মানুষের প্রয়োজন নেই।

-ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে।

-স্যার আসবো?

অফিসের ক্যাবিনে বসে কিছু কাজ করছিল ইরান। হঠাৎ তার পিএ তাজীবের ডাক শুনে কাজ থেকে অমনোযোগী হয়। পুরুষালি ভরাট কণ্ঠে বলে,

-এসো তাজীব।

তাজীব ভিতরে ঢুকে। ইরানের ইশারায় চেয়ারে বসে পরে। তাজীব কিছু ফাইল বের করে চেক করতে থাকে। দরকারি ফাইল পেতেই বের করে ইরানের সামনে রাখে।

-স্যার এখানে আপনার সাইনের প্রয়োজন।

-দেও।

-স্যার আগে পড়ে নিন।

ইরান হালকা হেসে তাজীবের দিকে তাকায়। মুহূর্তেই আবার চোখ স্থির করে ফাইলের দিকে।

-আম্মার পর সব থেকে বেশি বিশ্বাস আমি তোমাকে করি তাজীব।

-অনেক ধন্যবাদ স্যার। তাহলে তনুসফা ম্যামকে বিশ্বাস করেন না আপনি?

ইরান সাইন করতে করতে শান্ত স্বরে বলে,

-আপাকে বোন হিসেবে বিশ্বাস করি তবে ব্যবসা নিয়ে নয়।

তাজীব কিছু বললো না। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকে। ইরান সাইন করে দিতেই সে ফাইল গুলো নিয়ে বসা থেকে উঠে যায়। ইরান রাশভারি গম্ভীরতা নিয়ে সটান হয়ে বসে। তাজীব যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই ইরান বলে,

-তোমাকে আমি যেতে বলিনি তাজীব।

-জি স্যার কোনো কাজ ছিল?

-হ্যাঁ।

ইরান তার সেলফোন বের করে একটা মেয়ের ছবি দেখায় তাজীবকে। তাজীব কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে লক্ষ্য করছে। আশ্চর্য হয়ে বলে,

-স্যার এটা তো কোনো বিদেশী মেয়ে!

-জানি। এই মেয়ের ফুল ডিটেলস আমার চাই।

-কিন্তু স্যার শুধু একটি ছবি দেখে কিভাবে মেয়েকে খুঁজে বের করব?

-যেহেতু আমি মেয়েটাকে ধানমন্ডির রোডে দেখেছিলাম সেহেতু মেয়েটা হতে পারে সেখানেই থাকে। তুমি আগে ধানমন্ডিতে সব জায়গায় খোঁজ নেও।

-জজজি স্যার।

-এভাবেই হোক তাকে খুঁজে বের করো। ওকে?

-স্যার আপনি এই মেয়েকে দিয়ে কী করবেন?

তাজীবের এইরকম আহাম্মক মার্কা কথা শুনে কপালে ভাঁজ পরে ইরানের। বিরক্ত হয়ে বলে,

-বাসার কাজের মেয়ে হিসেবে রাখবো। পেয়েছো তোমার প্রশ্নের উত্তর?

-হ্যাঁ স্যার।

তাজীব আর কিছু না বলে চলে যায়। আজ অনেক বছর পর তার স্যার কোনো মেয়ের খোঁজ নিতে বলছে। বিষয়টা ভাবার মতো! তাজীব বিড়বিড় করে বলে,

-তাজীব রে এখন যেভাবেই হোক এই মেয়েকে খুঁজে বের করতে হবে। হয়তো স্যার মেয়েটার প্রেমে পরে গিয়েছে!

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ