সে প্রেমিক নয় পর্ব-৪৫

0
561

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ৪৫

এক সপ্তাহে চলে যায়। সামনেই শীতকালের আগমন। সকাল সকাল শীতল হাওয়া মন মস্তিকে রিফ্রেশ করে দেয়। রোদের উত্তাপ তেজ মলিন হয়ে পরে এসময়। বাগানবাড়িতে আরো গাছপালা হওয়ায় সবসময়ই ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে। আনাবিয়া সেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মালিদের সাথে ফুল গাছের পানি দিচ্ছে। আনাবিয়ার এখানে আসার পর থেকে পুরো বাড়ির সৌন্দর্য জানো দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে। বাড়ির ভিতরের সব কিছু পরিবর্তন করিয়েছে সে। বাহিরে ফুল গাছের বাগান করেছে। একদম নিজ মনের মতো বাড়িকে সাজিয়ে নিয়েছে। দিনরাত বাবা মায়ের সেবা করে। মায়ের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে। আর তাজীব তো আছেই। আনাবিয়ার
ডানহাত!

হাত ভর্তি বাজার নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকছে তাজীব। আনাবিয়া তাকে দেখে শাড়ী ঠিক করে এগিয়ে যায়। হাসি মিশ্রিত মুখে বলে,

-তাজীব ব্রো এতো সকাল সকাল বাজারে গিয়েছে!

-হ্যাঁ। আসলে ম্যাম কাল রাতে আপনি কাঁচা আম খেতে চেয়েছিলেন কিন্তু বেশি রাত হয়ে যাওয়ার কারণে আনতে পারিনি। তাই আজ সকাল সকালই আপনার জন্য কাঁচা আম নিয়ে এসেছি।

-উইযে আপনি আবারও ম্যাম কেনো বললেন?

-সরি বোন।

-গুড। আপনার স্যার কল দিয়েছিল আজ? কাল রাতে আমাকে কল দেয়নি যার দরুন আমাদের কোনো যোগাযোগও হয়নি।

-না দেয়নি। গতকাল স্যার অনেক ব্যস্ত ছিল আবার আজও ব্যস্ত থাকবে তাই হয়তো কল দেয়নি। চিন্তা করো না বোন।

-এতো কিসের ব্যস্ততা উনার? আমার সাথে একটু কথা বললে বুঝি তার সবসময় অপচয় হয়ে যাবে!

উদাসীন হয়ে কথাটা বলে অনাবিয়া। তাজীব মুখ ছোট করে ফেলে আনাবিয়াকে দেখে। মালিদের কাজ বুঝিয়ে দিতে থাকে আনাবিয়া।

-আনাবিয়া,

কাজ শেষ করে অন্দরের ভিতরে যেতে উদ্যত হয়েছিল আনাবিয়া। এমন সময় পিছন থেকে অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে থেমে তার পা জোড়া। চমকিত হয়ে পিছনে ফিরে তাকায় সে। হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে ইরান। আনাবিয়া শাড়ী ধরে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে যায় ইরানের কাছে। অবাক হয়ে বলে,

-আপনি এখানে!

-হুম। শুভ কাজে যাওয়ার আগে তোমার সাথে কিভাবে দেখা করতে ভুলে যাই আমি!

-আমি আরো তাজীব ব্রো কাছে আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিলাম।

-আই নো। এখন ভিতরে যাবে নাকি এখানে দাঁড়িয়েই আমাকে বিদায় দিবে?

-আসুন।

ইরান বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে একে একে আনাবিয়ার মা বাবার সাথে দেখা করে নেয়। তারপর রুমে এসে বিছানায় বসে পরে। আনাবিয়া ইরানের পাশেই বসে। আনাবিয়া মুগ্ধ হয়ে ইরানকে দেখছে। সম্পূর্ণ সাদা রঙের পাঞ্জাবীতে তার শ্যাম বর্ণের স্বামীকে অপূর্ব লাগছে। তার ওপর সেট করা চুল, গালে চাপ দাঁড়ি, মুখে এক চমৎকার হাসি সব মিলিয়ে আসলেই ইরান সুদর্শন। আনাবিয়ার চাহনি দেখে ইয়ান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-এভাবে কী দেখছো? আমাকে ভালো লাগছে না!

আনাবিয়া গালে হাত দিয়ে বসে ভাবুক হয়ে বলে,

-দেখছি এক বুড়ার সাথে বিয়ে হয়েছিল আমার! বেচারা আমার বেবি এক বুড়ো ফাদার পাবে!

-কে বুড়ো?

-আপনি। আর কে?

-তোমার চোখ নষ্ট তাইতো আমার মতো হ*ট, হ্যান্ডসাম, চার্মিং, কিউট বালককে বুড়ো বলছে! আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার ওয়াইফের এই বয়সেই চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে!

অনেকটা নাটকীয় ভঙ্গিতে কথাটা বলে ইরান। আনাবিয়া গাল ফুলিয়ে ইরানের দিকে তাকায়। ইরান আনাবিয়ার রিঅ্যাকশন দেখে হাসতে হাসতে শেষ। আনাবিয়া ইরানের বুকে কিল দিয়ে অন্যদিকে ফিরে বসে থাকে। ইরান হাসতে হাসতে আনাবিয়াকে জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলে,

-তোমার এই নরম হাতের কিল ঘুষিতে আমার কিছুই হবে না ডিয়ার। বাট এভাবে গাল ফুলিয়ে রাখলে অনেক কিউট দেখা যায় তোমাকে। লাইক এ ক্যাট।

আনাবিয়া ভোঁতা মুখে ইরানের দিকে তাকিয়ে তেজি কণ্ঠে বলে,

-আমাকে ক্যাটের মতো দেখা গেলে আপনাকে এলিফ্যান্টের মতো দেখা যায়।

-সিরিয়াসলি! এলিফ্যান্ট আমার মতো হ্যান্ডসাম হয় জানতাম না আমি!

আনাবিয়া কোনো উত্তর দিলো না। ইরান হাসি থামিয়ে আনাবিয়ার কাঁধে মাথা রেখে শান্ত স্বরে বলে,

-শশুর-শাশুড়ি এখন কেমন আছে?

-মম একটু একটু নরমাল হলেও ডেডি সেই আগের মতোই।

-আমার ঐখানের কাজ শেষ হলে তাঁদের বাহিরের দেশে নিয়ে যাবো চিকিৎসার জন্য। চিন্তা করো না সুস্থ হয়ে যাবে।

-হ্যাঁ।

-আজ হটাৎ আম্মা আমার সাথে যাওয়ার বায়না ধরেছে। তার নাকি সম্মেলন দেখার ভীষণ ইচ্ছে। ইসরাফের কোনো খবর নেই দেখে কিছুদিন ধরে আম্মার মন ভালো নয়। এখন আমার আম্মাকে নিয়ে যেতে ভয় করছে।

-মম যেহেতু যেতে যাচ্ছে নিয়ে যান তাকে। হতে পারে একটু ঘুরেফিরে এলে মুড ভালো হয়ে যাবে।

-হ্যাঁ আপাও এটাই বললো।

-সেও যাবে?

-হুম। আজ বিকেলে আসতে পারে তোমাকে দেখতে। গতকাল আম্মার থেকে বেবির কথা শুনেছে।

-ওকে।

ইরান উঠে দাঁড়ায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে থাকে। হটাৎ করেই আনাবিয়ার মন বিচলিত হয়ে পরে। ভিতর ভিতর অস্থির অনুভব করে সে। এক অন্যরকম অনুভূতি হতে থাকে মনে। ঘড়িতে সময় দেখে ইরানকে জিজ্ঞেস করে,

-কয়টা বের হবেন?

-সবাই আসবে বারোটায় কিন্তু আমার এক ঘন্টা আগে যেতে হবে।

-বলি কী তাজীব ব্রো কে সাথে নিয়ে চলুন ইরান।

-না। ও এখানেই থাকুক।

-প্লিজ নিয়ে যান। তাকে নিয়ে গেলে আমার আর কোনো চিন্তা হবে না।

ইরান আনাবিয়ার পাশে এসে বসে। আনাবিয়াকে অস্থির হতে দেখে আনাবিয়ার দু গাল ধরে শান্ত স্বরে বলে,

-কী হয়েছে আনাবিয়া? এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?

-জানি না। বাট আমার কেমন জানো লাগছে। মনে হচ্ছে আপনি আমার থেকে দূরে গেলে আর ফিরে আসবেন না!

-মনকে শান্ত করো। যাও আজ রাত আমি এখানেই থাকবো।

ইরান আনাবিয়ার মাথা বুকে চেপে ধরে। আনাবিয়া ইরানকে জড়িয়ে ধরে মৃদু কণ্ঠে বলে,

-ফাঙ্কশন থেকে সোজা এখানে আসবেন?

-হ্যাঁ ডিয়ার। বাট আমার একটা শর্ত আছে।

আনাবিয়া মাথা তুলে ইরানের দিকে তাকায়। ইরান ঠোঁট কামড়ে হাসছে। আনাবিয়া ভ্রু নাড়িয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ইরানের দিকে তাকিয়েই আছে। ইরান মাথা নিচু করে আনাবিয়ার নাকে নিজের নাক ঘষে। তারপর টুপ করে আনাবিয়ার অধরে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়। আনাবিয়া কিছু বলে না দৃষ্টি নত করে ফেলে। ইরান স্মিত হেসে বলে,

-তোমার হাতের পাস্তা এন্ড চিলি চিকেন চাই আমার। রাতে যদি এই দুইটা জিনিস স্পেসিয়ালি আমার জন্য রান্না করো তাহলে আমি আজ রাত এখানে থাকবো। এটাই আমার শর্ত।

আনাবিয়া মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

-ওকে, আই এম এগ্রি। তবে জলদি আসতে হবে।

-অবশ্যই। অসুস্থ হয়ে পরবে না তো আবার?

-একদমই না। আপনার জন্য কিছু করলে আমি আরো বেটার অনুভব করি।

-তাই! শাড়ীতে অসুবিধা হয় না চলাফেরা করতে?

-হয় মোটামুটি।

-প্লিজ তুমি এখন শাড়ী পরিও না। নরমাল ড্রেস পরবে আমি চাই না কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাক!

-ওকে ওকে ওকে।

ইরান হাতের ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আনাবিয়াও ইরানের সাথে দাঁড়িয়ে যায়। ইরান আনাবিয়ার কপালে গভীর ভাবে চুম্বন করে। আনাবিয়া মৃদু হেসে বলে,

-পিকচার তুলে আমাকে পাঠাতে ভুলবেন না কিন্তু।

-ইয়েস। আসি তাহলে?

-জি। আমিও আপনাকে দেখবো নিউজ চ্যালেনে।

-ঠিক আছে।

___________________🌸

রাজকীয় চেয়ারে আয়েস করে বসে আছে হাসিব আলী। তার ঠিক সামনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার কিছু চেলা-পেলারা। সি*গা*রেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে হাসিব বলে,

-কাজ কত দূর?

-সবই হয়ে গিয়েছে স্যার। আরেকটা ভালো খবর আছে।

-কী ভালো খবর?

-আমরা তো শুধু ইরান শেখকে মারতে চেয়েছিলাম তবে কিছুক্ষন আগে শুনলাম তার পুরো পরিবার নাকি আসবে।

-কী বলিস! এ তো আসলেই সুখবর। এক তীরে পুরো শেখ পরিবার খতম। বাহ্ বাহ্!

নিকৃষ্ট ভঙ্গিতে হাসতে থাকে হাসিব। তার জন্য জানো আজ উৎসব! মরণখেলায় মেতে উঠেছে সে। একজন এগিয়ে এসে ফোন ধরিয়ে দেয় হাসিবের হাতে। ফোন কানে দিতে হাসিব বলে,

-কোনো খবর জানাচ্ছিস না কেনো বেটা?

ঐপাশের জন চাঁপা কণ্ঠে বলে,

-স্যার আমাকে বারে বারে কল করবেন না। আশা রাখুন আপনার কাজ হয়ে যাবে।

-আইচ্ছা।

কল কেটে দেয় হাসিব আলী। মুখ থেকে হাসি সরছে না তার। অনেকদিনের স্পৃহা আজ পূরণ হবে। মেয়ের খুনিকে কিভাবে ছেড়ে দেবে সে! অসুস্থের বাহানা দিয়ে সম্মেলনে যাবে না সে। নিজের করা তান্ডব দেখতে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সামনের বড় টেলিভিশনটি অন করে দেয়।

__________________🌸

ড্রইংরুমের সোফায় বসে আনাবিয়া, তাজীব, আনাবিয়ার মা একসাথে টিভি দেখছে। টান টান উত্তেজনা আনাবিয়ার মধ্যে। কিছুক্ষন আগেই অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। বড় বড় খবরের চ্যালেনে দেখানো হচ্ছে সেটা। বিশাল বড় ময়দানের মতো জায়গায় ডেকোরেশন করা হয়েছে। সবাই একসাথে আসন গ্রহণ করেছে। সাংবাদিকরা একে একে সকলের ছবি তুলছে। আনাবিয়া রাকিয়া ও তনুসফাকে দেখতে পায়। ইরান ব্যস্ত হয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে। সাংবাদিকদের সম্পূর্ণ ফোকাস জানো ইরানের ওপরেই। বড় বড় মন্ত্রী মিনিস্টাররা আসলে তাঁদের ফুলের তোরা দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। আনাবিয়া খেয়াল করে ইরানের পাশে একজন অচেনা ছেলে। ইরান যেখানে যাচ্ছে এই ছেলেও সেখানেই যাচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে আনাবিয়া জিজ্ঞেস করে,

-তাজীব ব্রো ইরানের পাশের ছেলেটা কে? আগে তো দেখিনি!

-স্যারের নতুন পিএ।

-আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে একে আমি আগেও দেখেছি!

-অনেক ভালো ছেলেটা। আমিই স্যারের পিএ হিসেবে সিলেক্ট করেছি তাকে।

-ওহ।

শত চেষ্টা করেও আনাবিয়া মনে করতে পারলো না এই ছেলেটাকে সে কোথায় দেখেছে। নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হয় আনাবিয়া। পুনরায় চোখ স্থির করে টিভির স্ক্রিনে। সব গণমান্য ব্যক্তি একে একে নিজেদের ভাষণ দিচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও সবাই ইরানের তারিফে পঞ্চমুখ। তাজীব ভীষণ আগ্রহ নিয়ে দেখছে। ইরান মাইকের সামনে আসতেই তাজীব বলে,

-বোন এখন দেখো স্যার কী সুন্দর ভাষণ দেয়! প্রতিবার তার ভাষণের অনেক তারিফ হয়।

আনাবিয়া স্মিত হাসে তাজীবের কথা শুনে। আনাবিয়ার মা ইরানকে দেখে খুশিতে হাতে তালি দিতে থাকে। আনাবিয়ার খুশি জানো উপচে পরছে। ইরান মৃদু কাশি দিয়ে গলা ঠিক করে নেয়। হাসি মুখে যেই ভাষণ শুরু করতে যাবে হটাৎই ময়দান কাঁপিয়ে শব্দ করে বিস্ফোরণ হয়। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশে। কিছুক্ষন আগেই যেখানে খুশির উল্লাস ছিল এখন সেখানে হাহাকার।
টিভির পর্দায় এতক্ষন সবই দেখছিল আনাবিয়া। কিঞ্চিৎ সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানো তার মাথার ওপর দিয়ে গেলো। নিজ অস্তিত্বে ফিরে আসতেই জোরে চিৎকার করে উঠে আনাবিয়া। আনাবিয়ার মা ভয় পেয়ে যায়। দুইজন ভৃত্য মিলে আনাবিয়ার মাকে তার রুমে নিয়ে যায়। তাজীব নিজেও হতবাক। আনাবিয়া কোনোদিক না তাকিয়ে দৌড়ে বাড়ির বাহিরে চলে আসে। তাজীবও আনাবিয়ার পিছু পিছু আসে। তাজীব আনাবিয়া গাড়িতে বসে পরে। সাথে আরো কয়েকজন বডিগার্ড নিয়ে নেয়। তাজীব জ্ঞান শূন্য হয়ে ড্রাইভ করছে। আনাবিয়া শাড়ীর আঁচল দিয়ে চেহারার ঘাম মুচছে। তাজীব লুকিং গ্লাসে আনাবিয়াকে দেখে অবাক হয়। এইরকম একটা অবস্থায় কোনো মেয়ে এতো শক্ত কিভাবে থাকে!

নিদিষ্ট স্থানে এসে গাড়ি থামতেই আনাবিয়া দ্রুত নেমে পরে। এখনও চারপাশে ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছে না স্পষ্ট ভাবে। মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে। কেউ নিজের জান বাঁচিয়ে পালাচ্ছে তো কেউ অন্যের। স্টেজে ধাঁও ধাঁও করে আগুন জ্বলছে। আনাবিয়ার পা থেমে যায়। আগে বাড়ার মতো শক্তি পাচ্ছে না সে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা চলে এসেছে। মানুষকে সাহায্য করছে তারা। আগুন নিভানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। আনাবিয়া সবাইকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যেতে নেয়। আচমকা তাজীব বলে উঠে,

-বোন তুমি যেও না এখানে দাঁড়াও। তোমার কিছু হলে আমি স্যারকে কী জবাব দেবো। প্লিজ দাঁড়াও।

আনাবিয়া দমে গেলো। তাজীব কয়েকজন মানুষ নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না আনাবিয়া। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় সে। মনে মনে প্রাথনা করছে তার পরিবারের যাতে কিছু না হয়। পাশে তাকাতেই আনাবিয়া দেখে সাহায্যকারীরা একজন একজন করে আহত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলছে। কী বীভৎস অবস্থা তাঁদের শরীরের। আগুনে পুড়ে গিয়েছে শরীর। জায়গা জায়গার চামড়া উঠে গিয়েছে। এইরকম দৃশ্য দেখে বমি চলে আসে আনাবিয়ার। গলগল করে বমি করে দেয় সে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ফিরে আসে তাজীব। স্বাভাবিক ভাবে গেলেও ফিরে আসে অস্বাভাবিক ভাবে। শ্বাস নিতে নিতে আনাবিয়াকে বলে,

-বোন স্যার এবং সবাইকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। আমাদেরও সেখানে যেতে হবে।

>>>চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে